30/11/2024
শনির সাড়েসাতি ও ঢাইয়া নিয়ে কিছু কথা :-
শনির সাড়েসাতি বা ঢাইয়া শুনলে অনেকই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন। জাতক/জাতিকাকে যখন জ্যোতিষী জানান যে তার সাড়েসাতি বা ঢাইয়া চলছে বা শুরু হতে চলেছে তখন ভয়, হতাশা ও চরম অনিশ্চয়তা গ্রাস করে তাকে। যদিও এর জন্য শ্রোতার অজ্ঞতাই দায়ী। তবে এ যাবৎকাল চলে আসা ভুল তথ্য পরিবেশনের রীতিটিকেই মূল দায়ী বলা চলে যার পিছনে আবার একশ্রেণীর জ্যোতিষীদের ভীতিপ্রদর্শনকারী ভূমিকাও অস্বীকার করা যায় না।
হ্যাঁ, একথা নিশ্চিত যে শনির সাড়েসাতি বা ঢাইয়ার সময়টা অবশ্যই গোলাপের পাপড়ি বিছানো পথ দিয়ে হাঁটার সঙ্গে তুলনীয় নয়। কিন্তু সাড়েসাতি বা ঢাইয়া মানেই যে আপনার জন্য ফাঁসির দড়ি অপেক্ষা করে আছে এমনটাও নয়।
ডাক্তারবাবুদের দুর্বোধ্য মেডিকেল টার্মিনোলজি বুঝে উঠতে রোগীর যেমন নাভিশ্বাস উঠে তেমনই জ্যোতিষীর টেকনিক্যাল টার্মিনোলজি ট্রাইন, লর্ড , সাবলর্ডের গোলকধাঁধায় নাকানিচোবানি খান সাধারন পাঠককুল। এই লেখায় আমি আ্যাস্ট্রোলজিক্যাল টার্মিনোলজি যথাসম্ভব বাদ দিয়ে সহজ ভাষায় সাধারণ পাঠককুলকে বোঝাতে চেষ্টা করব শনির সাড়েসাতি বা ঢাইয়া কি এবং কি নয়। আর সাড়েসাতী বা ঢাইয়া চলাকালীন কি কি প্রতিকার করলে আপনি অপেক্ষাকৃত ভালো থাকবেন সে বিষয়েও আলোকপাত করার চেষ্টা করব।
শনির সাড়েসাতি ও ঢাইয়া কি:-
দ্বাদশ রাশি চক্রের প্রতিটি রাশিতে পরিভ্রমণ করতে এক একটি গ্রহ এক এক রকমের সময় নিয়ে থাকেন। শনি মহারাজ একেকটি রাশিতে গড়ে আড়াই বছর অবস্থান করেন। গ্রহগুলির গোচর জাতক জাতিকার জন্মছকের চন্দ্রের অবস্থানের সাপেক্ষে বিবেচনা করা হয়। এক একটি গ্রহ জন্মছকের চন্দ্রের সাপেক্ষে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে ভিন্ন ভিন্ন রকমের ফল প্রদান করে থাকেন। রাহু ও কেতু ঘড়ির কাঁটার দিকে বা ক্লক-ওয়াইজ পরিভ্রমণ করে থাকেন এবং বাকি সাতটি গ্রহ ঘড়ির কাঁটার উল্টোদিকে বা এন্টি ক্লক-ওয়াইজ পরিভ্রমণ করে থাকেন। যখন শনি মহারাজ জাতক/জাতিকার জন্ম রাশির দ্বাদশে, জন্মরাশিতে এবং জন্ম রাশির দ্বিতীয়ে প্রতিটিতে গড়ে আড়াই বছর করে মোট সাড়ে সাত বছর পরিভ্রমণ করেন, তখন এই মোট সময় কালকে ওই জাতক/জাতিকার "শনির সাড়েসাতি" বলা হয়ে থাকে। আর যখন শনি মহারাজ রাশির চতুর্থ ও অষ্টম পরিভ্রমণ করে তখন "শনির ঢাইয়া " বলা হয়ে থাকে।
যদিও দ্বাদশে, রাশিতে এবং দ্বিতীয়ে চতুর্থে ও অষ্টমে অবস্থানকালীন শনি মহারাজ প্রতিটিতে পৃথক পৃথক ফল দিয়ে থাকেন। তবে রাশিভিত্তিক সে ফলাফলও আবার বদলে যায়। যেমন মেষ রাশির আর মকর রাশির সাড়েসাতীর বা ঢাইয়ার ফলাফল ভিন্ন হবে তা বলাই বাহুল্য। তাই দ্বাদশ রাশির ক্ষেত্রে সে ফলাফল লিখতে গেলে অত্যন্ত বিস্তারিত হয়ে যাবে। (ভবিষ্যতে এ নিয়ে পৃথকভাবে লেখার ইচ্ছে রইল)।
কিন্তু এই সাড়েসাতী ও ঢাইয়া চলাকালীন শনি মহারাজ মূলতঃ কিছু শিক্ষা দিয়ে থাকেন। জাতক/জাতিকা কে আরো খাঁটি করে তোলেন। পরিশ্রমী, সত্যবাদী ও ঈশ্বরবিশ্বাসী করে তোলেন। আসল ও নকল মানুষগুলোকে চেনার যথাযথ যোগ্যতা জন্মায়। আর এই শিক্ষাই তাকে আগামী দিনের পথ চলতে শেখায়। এককথায় সাড়েসাতীর বা ঢাইয়া সময়টা প্রকৃতপক্ষে আপনার জীবনের একটা কমান্ডো ট্রেনিংয়ের মত পর্যায় যা আপনাকে ইস্পাত-কঠিন করে তোলে। আগামী দিনগুলো অনেক ভাল কাটে এ শিক্ষার ফলে। তবে কমান্ডো ট্রেনিং বলে কথা। একটু তো গায়ে লাগবেই। রেড কার্পেট বিছানো পথে হাঁটার মত অনুভূতি নয় নিশ্চয়। এর জন্য আপনার মুলধন লাগবে সততা, আত্মনির্ভরতা, ঈশ্বর বিশ্বাস ও পরিশ্রমী জীবন শৈলী।
অনেক কৃতী ব্যক্তি এই সাড়েসাতী বা ঢাইয়ার সময়ে জীবনের চরমতম সাফল্য পেয়েছেন। রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন বা কালজয়ী আবিষ্কারও করেছেন। আপনার জীবনের সাফল্যের টার্গেট যদি এর থেকে বেশী না হয় (বা ধরে নিন এর থেকে কমই হয়) তাহলে সাড়েসাতী বা ঢাইয়া নিয়ে আপনার ভয় পাবার তেমন কোনও কারন নেই। (তাই বলে আনন্দে নাচবেন না।) সরল ভাষায় মূলতঃ এই হল শনির সাড়েসাতী বা ঢাইয়া ।
এবার আসুন দেখে নিই শনির সাড়েসাতী বা ঢাইয়া কি নয়:-
★ শনির সাড়েসাতী বা ঢাইয়া মানে আপনাকে ভুগিয়ে মারার চক্রান্ত নয়।
★ শনির সাড়েসাতী বা ঢাইয়া মানে আপনার সাফল্যকে আটকে দেবার চক্রান্ত নয়।
★শনির সাড়েসাতী বা ঢাইয়া মানে আপনার সাংসারিক সুখ সুবিধাকে ভেঙে তছনছ করে দেবার কোনও অশুভ প্ল্যান নয়।
★ শনির সাড়েসাতী বা ঢাইয়া মানে কোনও মহাজাগতিক অভিশাপও নয়।
★শনির সাড়েসাতী বা ঢাইয়া মানে শনি মহারাজের পরশ্রীকাতরতাও নয়।
★শনির সাড়েসাতী বা ঢাইয়া মানেই জীবনের সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়া নয়।
মনে রাখতে হবে পূর্বজন্মে কৃতকর্মের এবং বর্তমান জন্মের ইতিমধ্যে কৃত দুষ্কর্মের বিচার করে শনি মহারাজ তার মহাদশায় এবং সাড়েসাতি বা ঢাইয়াতে দণ্ড দিয়ে থাকেন।
প্রতিকার:-
প্রতিকার মূলতঃ তাদেরই লাগে যারা পূর্বজন্মার্জিত কর্মফলের কারনে বা বর্তমান জন্মের কুকর্মের জন্য শাস্তি পাচ্ছেন।
যারা সাত্বিক প্রকৃতির মানুষ, চরিত্রবান, সত্যবাদী, পরিশ্রমী, পরোপকারী, ঈশ্বর বিশ্বাসী এবং অপরের ক্ষতি করা থেকে ও হিংসা করা থেকে বিরত থাকেন, মিথ্যাকথা দ্বারা অপরের ক্ষতি করেন না, তাদের ভক্তি ও প্রার্থনা ছাড়া বিশেষ কিছু প্রতিকারের প্রয়োজন হয় না। তবে নীচে লেখা এক ডজন প্রতিকারের যেকোনও এক বা একাধিক প্রতিকার তারাও গ্রহণ করতে পারেন।
১) প্রতি শনিবার অশ্বত্থ গাছে জল অর্পন করতে পারেন। জলে দুধ আর কালো তিল মিশিয়েও নিতে পারেন। সরষের/তিলের তেলের প্রদীপ এবং ধুপ দিতে পারেন। শনি মহারাজের মন্দিরে ধুপ প্রদীপ অর্পন করতে পারেন। সদক্ষিণা পূজাও দিতে পারেন।
২) শনি মহারাজের কৃপা লাভে কবচ/যন্ত্র/পূজা/হবন ইত্যাদির ভুমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু এগুলি সবকটিই জ্যোতিষী/পুরোহিত নির্ভর প্রতিকার। একমাত্র বিদ্বান জ্যোতিষীই এবিষয়ে আপনাকে সঠিক পরামর্শ দিতে পারেন।
৩) কালো কাক ও কালো কুকুরকে খাবার দিতে পারেন। শনিবার খিচুড়ি রান্না করে কাক ও কুকুরকে খাওয়ালে শনির সাড়েসাতীতে বিশেষ সুফল আশা করা যায়। সম্ভব না হলে সামর্থ্যানুযায়ী খাবার দিন। কুকুরকে কখনও আঘাত করবেন না।
৪) শনি মহারাজের প্রিয় সামগ্রী সমুহ শনিবার গ্রহবিপ্রকে সদক্ষিণা দান করতে পারেন। এতে যথেষ্ট সুফল লাভ হয়।
৫) শাস্ত্রসম্মত ভাবে শোধিত ও প্রাণ প্রতিষ্ঠিত প্রকৃত নীলকান্তমণি ধারণ করলে অনেক উপকার পেতে পারেন। বয়স, দেহের ওজন, জন্মছকে শনিগ্রহের অবস্থান এবং আরও বেশ কিছু বিষয় বিবেচনা করেই একমাত্র বলা সম্ভব যে কত রতি/ক্যারেট নীলা আপনার ধারন করা উচিৎ। সেটা ইন্দ্রনীলা, নাকি রক্তমুখী নীলা, নাকি পীতাম্বরী নীলা নাকি নিতান্ত এমিথিস্টেই কাজ চলে যাবে তা একান্তই জ্যোতিষীর বিচার্য্য। আদৌ নীলা আপনার পক্ষে ধারণীয় কিনা তাও জ্যোতিষীর বিচার্য্য। তাই বিদ্বান জ্যোতিষীর সাথে পরামর্শ করেই একমাত্র এই প্রতিকারটি গ্রহন করতে পারেন।
৬) শনি মহারাজ নেশার বস্তু গ্রহণ মোটেই পছন্দ করেন না। তাই মদ্যপান বা অন্যান্য নেশার বস্তু গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।
৭) তামসিক আহার গ্রহন করা শনি মহারাজ পছন্দ করেন না। তাই সাত্ত্বিক আহার গ্রহণ করুন। মাছ মাংস ইত্যাদি আমিষ খাবার বর্জন করুন। একান্তই সম্ভব না হলে অন্তত শনিবার দিন নিরামিষ খাবার গ্রহণ করুন। শরীরের সামর্থ্য অনুসারে শনিবার উপবাস বা হবিষ্যান্ন গ্রহণ বা ফলাহার শনির সাড়েসাতি বা ঢাইয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ ফলদায়ী হয়ে থাকে।
৮) প্রতিবন্ধীদের, বিশেষতঃ অস্থি সংক্রান্ত প্রতিবন্ধীদের সহায়তা করুন, দান করুন ও সেবা করুন। এক্ষেত্রে শনি মহারাজ বিশেষ খুশী হয়ে থাকেন।
৯) শ্রমিক শ্রেণীর লোকেদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করুন। তাদের সহায়তা করুন। তাদেরকে খাবার দিন। আপনার সামর্থ্যমত অর্থ সাহায্য করুন (অন্ততঃ শনিবার এগুলো করুন)। নিজের বাড়ীর কাজের লোকের সাথে ভাল ব্যবহার করুন। কোনও কাজে শ্রমিক নিয়োগ করলে তাকে কোনমতেই ঠকাবেন না।
আপনি অবশ্যই সুফল পাবেন।
১০) হিজড়াদের সম্মান প্রদর্শন করুন। তাদেরকে সামর্থ্যমত দান করুন ও আশীর্বাদ গ্রহণ করুন।
১১) শনির সাড়েসাতী বা ঢাইয়া মূলতঃ চন্দ্র নির্ভর। তাই চন্দ্রের প্রতিকারের বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখবেন। সোমবার শিবের অর্চনা, জলাভিষেক বা দুগ্ধাভিষেক এক্ষেত্রে ভাল ফল দেয়। উপবাস বা নিরামিষ ভোজন বা হবিষ্যান্ন গ্রহণ বা ফলাহার বেশ ফলদায়ী বলা যায়। মাকে এবং মাতৃস্থানীয়াদেরকে যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন একটি বিশেষ প্রতিকার হিসেবে কাজ করে। নিখুঁত মুক্তা বা চন্দ্রকান্তমণি ধারণ বিশেষ ফলদায়ী। (একমাত্র বিদ্বান জ্যোতিষীর পরামর্শক্রমেই আপনি তা ধারণ করতে পারেন।)
১২) হনুমানজীর অর্চনাকে শনির সাড়েসাতী বা ঢাইয়ার এক মোক্ষম প্রতিকার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আপনার সুবিধামতো শনিবার ও মঙ্গলবার অথবা শুধু শনিবার অথবা প্রতিদিনই আপনি হনুমানজীর মন্দিরে পুজারীর নির্দেশিত সামগ্রীসহ পুজো দিতে পারেন। সামর্থ্যে না কুলালে শুধু ধুপ দীপ অর্পন করতে পারেন। ত্রি সন্ধ্যা হনুমান-চালীসা পাঠ করতে পারেন। তৎসহ বজরং বান পাঠ করতেও পারেন।
সর্বাপেক্ষা ফলদায়ী প্রতিকার হলো PPU টেস্ট করিয়ে সব গ্রহের প্রকৃতি বুঝে নিয়ে সেই অনুযাই আপনার জীবন শৈলী পরিবর্তন। মনে রাখবেন এসময় আপনার যে কোনো ভুল পদক্ষেপ আপনার শাস্তির কারণ হতে পারে।
জ্যোতিষী কেবল আপনাকে পথ প্রদর্শন করতে পারেন৷ বাকীটা আপনাকেই করতে হবে। তাই জ্যোতিষীর উপর ভরসা রাখুন।
সৎ হয়ে উঠুন। পরিশ্রমী হোন। আলস্য বর্জন করুন। মিথ্যা ভাষন বর্জন করুন। নেশার দ্রব্য বর্জন করুন। অর্থ অপচয় বন্ধ করুন। অপরের সমালোচনা ও ক্ষতি করা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। প্রতিহিংসাপরায়ণ হবেন না। কর্তব্যপরায়ণ হয়ে উঠুন। ক্লাবে আড্ডার সময় কমিয়ে পরিবারে সময় দিন। গুরুজনদের ও মহিলাদের যথাযোগ্য সম্মান দিন। মা বাবা জীবিত থাকলে অবশ্যই তাদের সেবা করুন। নিজের স্ত্রী/স্বামীর প্রতি সঠিক ভালোবাসা কর্তব্য পালন করুন। কোনোভাবেই কোনো অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়বেন না (এটা নিখুঁতভাবে খেয়াল রাখবেন)। সন্তানদের প্রতি ও ছোটদের প্রতি স্নেহশীল হোন এবং মিষ্টভাষী হোন। দেবদ্বিজে ভক্তি রাখুন। মন্দিরের পুজারীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন। এছাড়াও প্রতিদিন নিয়ম করে নির্দিষ্ট সময়ে জপ/প্রার্থনা/আরাধনা করুন। পারলে পরিবারের সকলে একসাথে।
এভাবে চলতে পারলে আপনি অবশ্যই শনির সাড়েসাতী বা ঢাইয়ার কুপ্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারবেন এবং শনি মহারাজের আশীর্বাদ লাভ করবেন।
বর্তমানে যেই তিন রাশির সাড়েসাতী চলছে :-
১) মকর।
২) কুম্ভ।
৩) মীন।
বর্তমানে যেই দুই রাশির ঢাইয়া চলছে :-
১) কর্কট।
২) বৃশ্চিক।
✍️𝗝𝘆𝗼𝘁𝗶𝘀𝗵𝗲𝗸𝗵𝗮𝗿𝗿 𝗠𝗶𝘁𝗿𝗮
🕉️Astrologer, জ্যোতিষ রত্ন, জ্যোতিষ সম্রাট, জ্যোতিষ আচার্য,
P.P.U Test Expert🕉️
(M.A.R.P) (M.A.R.O)(M.I.I.O.H)
(F. P. P. U. T).London
📱🅦︎🅗︎🅐︎🅣︎🅢︎🅐︎🅟︎🅟︎📱
👇
8️⃣7️⃣6️⃣8️⃣1️⃣8️⃣5️⃣8️⃣8️⃣1️⃣