22/06/2024
টাইম মেশিন
২য় অংশ
----------------
জেনিফার আর আমি হাটা শুরু করলাম। ও দেখতে অনেকটা আমেরিকানদের মতো। চুল গুলো সম্পূর্ণ লালচে কালো। শরীরের রঙ ফর্সার মধ্যে হালকা হলদে ।
ঃ আমরা কোথায় যাচ্ছি এখন?
ঃআমার বাসায়।
ঃ তোমার বাসায় মানে ?
ঃ গেলেই বুঝতে পারবা।
ঃ তোমার বাসা কোথায় ?
ঃ এইতো ভেজওড রোড এর সাথেই।
ঃ ওখানে আমার জানামতে দেখার মতো কোনো জায়গা আছে বলে মনে হয় না।
ঃ তুমি কি সব সময় এতো প্রশ্ন করো?
ঃ না , আসলে নতুনতো এখানে তাই।
ঃ বুঝলাম, আমরা যেখানে যাবো সেই জায়গায় গাড়ী নিয়ে যেতে হবে । তাই বাসায় যাচ্ছি আগে গাড়ী নেওয়ার জন্য।
ঃ কেনো বেশি দূর নাকি জায়গাটা?
ঃ উফফ, গেলেই দেখতে পারবা । আর একটা প্রশ্নও না ।
ঃ হুম ওকে।
ওর বাসাটা কাঠের একটা ডুপ্লেক্স বাড়ী ছিল । বাসাটা বাহির থেকেই দেখতেই কেমন যেনো অদ্ভুত ছিল।
ও চাবি দিয়ে বাসার দরজা খুললো-
ঃ বাসায় কেও নেই?
ঃ না, বাবা- মা ভেনকুয়েভারে থাকে। আমি একা থাকি এখানে।
ঃ ও আচ্ছা,
ঃ ভিতরে আসো।
ঃ না না, আমি বাহিরেই ঠিক আছি।
ঃ হাহাহা, ভয় পাচ্ছো নাকি?
ঃ না, এমনিই।
ঃ আচ্ছা , এক কাজ করো, চাবিটা নিয়ে যাও। ওই গ্যারেজ থেকে গাড়ী বের করো। আমি আসতেছি।
ঃহুম সেটা করা যায়।
গ্যারেজে গিয়ে দেখলাম আদিকালের একটা কেডিলেক গাড়ী। আদিকালের হলেও সেটা কেডিলেক।
যাইহোক, আমি গাড়ী বাহিরে বের করে দাঁড়িয়ে রইলাম। ১০ মিনিট পর জেনি বের হলো । ড্রাইভ ও করবে কেননা আমার কাছে কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই।
ঃ আচ্ছা এখন তো বলা যায় আমরা কই যাচ্ছি।
ঃ আমরা ব্লেকডেল যাবো ।
ঃ চিনি না, যেতে কতক্ষন লাগবে?
ঃ এই ১ ঘন্টা।
আমরা পাম্বিনা হাইওয়ে দিয়ে যাওয়া শুরু করি। রাস্তা পুরো খালি ছিল । জেনি , যতটা দ্রুত সম্ভব গাড়ী চালাচ্ছিল।
ঃ আচ্ছা জেনি একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
ঃ হ্যা, কিন্তু একটাই।
ঃ তুমি তো আমাকে চিনো না, বা আমিও তোমাকে চিনি না। এখন যদি কিছু একটা হয়ে যায়।
ঃ হাহাহা, যে ছেলে একা একটা মেয়ের ঘরে ঢুকার সাহস করে না সে করবে আবার কিছু একটা। হাহাহা।
যাইহোক, আমি জানি আমি তোমার সাথে নিরাপদ এবং তুমিও আমার সাথে নিরাপদ।কিভাবে সেটার বর্ণনা এখন দিতে পারছি না ।
ঃ বুঝলাম।
ঃ সত্যি বলতে গেলে আমি তোমাকে পছন্দও করি বটে.
ঃ অহ! তোমরা কানাডিয়ানরা কি সব ক্ষেত্রেই এরকম সোজাসাপটা কথা বলে দেও?
ঃ হুম, বলতে পারো।
ঃ আর কতক্ষন লাগবে?
ঃ সেন্ট পোউল এসে পরছি। আর ১০ মিনিট লাগবে।
তারপর , পড়াশুনারপর প্লানিং কি ? এখানে থাকবা নাকি নিজের দেশে চলে যাবা?
ঃদেখা যাক কি হয় । ভবিষ্যত কে দেখেছে বলো।
ঃ হয়তোবা আমরাই কোনো একদিন দেখতে পারি।
ঃ অতীতকে নিয়ে যদি কিছু করা সম্ভব হয় তাহলে ভবিষ্যত কে নিয়েও কিছু একটা করা সম্ভব হবে।
ঃ যেমন?
ঃ যেমন পরে বলবো। এখন এই বিষয়ে আলাপ করতে ইচ্ছা করছে না।
ঃ এসে পরছি আমরা।
ঃ এটাই ব্রেকডেল?
ঃ হুম,
ঃ এটা শহর কোথায়? এখানে তো একটা মানুষকেও দেখা যাচ্ছে না। শুধু পাহাড় আর পাহাড়।
ঃ আরে বাবা আসোই না।
ঃ চলেন-
গাড়ী থেকে নেমে পাহাড়ের দিকে এগিয়ে যেতেই দেখলাম একটা কাঠের ঘর।
ঃ ওই ঘর কার জেনি?
ঃ ওটা আমার, ওখানে আমার দুইটা বন্ধু থাকে।
ঃ এই জায়গায় তোমার বন্ধু?
ঃ হ্যা।
গিয়ে দেখি ঘরের ভিতর দুইটা হাস্কি কুকুর ঘুমাচ্ছে। হাস্কি আমি এই প্রথম দেখি। জেনি কে দেখেই কুকুর গুলো ওর কোলের উপর উঠে পরে।
ঃ এই দুইটা তোমার?
ঃহ্যা !, এগুলো এখানেই থাকে গরমের সময়। এখন ঠান্ডা বেশি পরা শুরু হয়েছে , তাই ওদেরকে নিতে আসলাম।
ঃ ও, এই বাহিরে ওইটা হরিণ না?
ঃ হ্যা, এখানে অনেক জীব- জন্তু আছে।
ঃ তুষার পরতে শুরু করেছে। ৮ টা বাজে, একটু পর সন্ধ্যা হয়ে যাবে।
ঃসন্ধ্যা হতে এখনো ২ ঘন্টা। তবে আমাদের যাওয়া উচিত। তুষার বেশি পরলে গাড়ী চালানো যাবে না।
গাড়ীতে করে ওয়েস্ট সেইন্ট পোউল আসতেই দেখলাম রাস্তা তুষারে ঢাকা পরে গেছে। গাড়ির চাকা বার বার স্লিপ করছিল। একসময় জেনি গাড়ী থামিয়ে দিল।
ঃ কি হলো?
ঃ সামনে ব্রিজ , গাড়ী স্লিপ করলে আমরা সোজা গিয়ে ওই ঠান্ডা পানিতে পরবো।
ঃ তুষার পরবে জেনেও আজকে আশার কি দরকার ছিল?
ঃ আমার স্নো আর আইস ঠান্ডায় কষ্ট পেতো নাহলে।
ঃ ও আচ্ছা সেটাও তো কথা । এখানে স্নো কোনটা আর আইস কোনটা? দুইটা তো একি রকম।
(জেনি আইস বলে ডাক দিতেই একটা সামনে আমাদের দিকে ঘুরে তাকায়।)
বুঝে গেছি এটা আইস আর ওটা স্নো।
ঃ জ্বি না, এটা স্নো আর ওটা আইস। স্নো কে ডাক দিলে আইস তাকায় আর আইস কে ডাক দিলে স্নো।
ঃ খুব কনফিউজিং। আচ্ছা আমরা এখানে কতক্ষন এভাবে বসে থাকবো?
ঃ যতক্ষন না কেও আমাদের উদ্ধার করতে আসে।
ঃ বলো কি! যদি কেও না আসে?
ঃ তাহলে এখানে এভাবেই কালকে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
ঃ মনে হচ্ছে তোমার কপাল ভালো, একটা গাড়ী আসতেছে ।
গাড়িটার সামনে বরফ সরানোর জন্য স্টিলের পাত লাগানো ছিল।
ঠিক আমাদের গাড়ির সামনে এসে থামে গাড়ীটা।
গাড়ির ভিতর থেকে যে নেমে আসে তাকে দেখে আমি একটু অবাক হয়ে যাই। কেননা , উনি আর কেও না, প্রফেসর স্টিভ ছিলেন।
আমার মাথায় তো আকাশ ভেঙ্গে পরলো তখন যখন জেনি, গাড়ী থেকে নেমে গ্রেন্ডপা বলে উনার দিকে দৌড়ে গেলো।
আমিও মাথা চুলকাতে চুলকাতে গাড়ী থেকে বের হয়ে দাড়াই।
ঃ এখানে কতক্ষন ধরে ?
ঃ এইতো ১ ঘন্টার মতো হবে, তুমি আসতে এতো দেরি করলা যে?
ঃ কাজে ফেসে গেছিলাম, হায় অনুরাগ! বেশি ঠাণ্ডা লাগছে নাকি?
ঃ না, আমার শরীরতো গরম হয়ে উঠছে।
ঃ তাহলে তো ভালোই। গাড়িতে বসো। তুষারপাত আরো বাড়তে পারে। এখান থেকে তাড়াতাড়ি কেটে পরাই ভালো।
ঃ হুম, বাড়বেই মনে হচ্ছে।
ঃ তোমরা আমার গাড়ির পিছনে পিছনে আসো।
আমরা গাড়িতে করে প্রফেসরের গাড়ির পিছনে পিছনে যেতে থাকি।
ঃ তুমি আমাকে আগে বলো নাই কেনো যে তুমি প্রফেসরের নাতনি।
ঃ হাহাহা, বললে কি হতো?
ঃ বললে কিছু হতো না অবশ্য।
ঃ উহু, তোমাকে চেক করা হতো না তাহলে।।
ঃ মানে?
ঃ কিছু না।
ঃ আচ্ছা আমার মাথায় একটা ব্যাপার ঢুকছে না।
ঃ কি ব্যাপার?
ঃ তুমি বয়সে এতো বড়, প্রফেসরের নাতনি কিন্তু উনি দেখতে এতো ইয়াং কিভাবে? মানে উনাকে দেখলে মনে হয় উনার বয়স ৩০-৩২ হবে।
ঃ আসলে এই রহস্য টার উত্তর আমার কাছেও নেই। কিন্তু উনি আমার আপন দাদা।
ঃ তোমরা এতো অদ্ভুত কেনো?
ঃ হাহাহা, তোমার কাছে মনে হচ্ছে তাই।
ঃ না আসলেই, উনি তোমার আপন দাদা?
ঃ হ্যা, সত্যিই উনি আমার আপন দাদা। আর আমার জ্ঞ্যান হওয়ার পর থেকেই উনাকে এভাবেই দেখে আসছি।
ঃভাল, খুব ভালো শরীর মেইনটেইন করেছেন উনি মনে হচ্ছে,
ঃ হতে পারে। আমরা চলে আসছি প্রায় ।
ঃ ব্লেকমোরে নামায় দিও আমাকে।
ঃ আচ্ছা ঠিক আছে
বাসায় ঢুকারপর দেখলাম ৩টাই আমার দিকে টেড়া চোখে তাকায় আছে ।
ঃ কিরে এমনে তাকায় আছোস কেন তোরা?
ঃ আগে বল ওই মেয়ের সাথে কি করলি এতোক্ষন? (কার্লো)
ঃ ওই মেয়ের বাসায় গেছিলাম।
ঃ কি বলিস দোস্ত ! সোজা বাসায় ? তোরা না কোন শহর ঘুরতে যাস? (জিসান)
ঃ আগে আমাকে বলতে দিবি?
ঃ হ্যা বল, আমরা সবাই চুপ।
ঃ ওর বাসায় যাই গাড়ী নিতে। আমরা ব্ল্যাকডেল গেছিলাম দুইজন।
ঃ ব্ল্যাকডেল তো সেই অনেক দূর, আর ওখানে পাহাড় ছাড়া তেমন কিছুই নেই। ( ফেদ্রিখ)
ঃ হ্যা, ওখানে ওর দুইটা হাস্কি ছিল, ওগুলোকে আনতে গিয়েছিলাম।
ঃ যাক ভালোই ।
ঃ এই ও কিন্তু প্রফেসরের নাতনি ।
ঃ কোন প্রফেসর?
ঃ আরে স্টিভের।
ঃ আহাহাহাহাহাহা,
ঃ হাসিস কেন?
ঃ প্রফেসরেরতো বউ ই নাই, নাতনী কোথা থেকে এলো?
ঃ মানে?
ঃ মানে আমরা তার পরিবারের কথা আজ পর্যন্ত শুনি নাই।
ঃও আচ্ছা, তাহলে মনে হয় মজা নিছে আমার সাথে।
ঃ যাই বলিস, জেনিফার কিন্তু বেশ সুন্দর। ও কিন্তু সচারাচর ছেলেদের সাথে তেমন কথা বলে না। তোর সাথে আজকে একা এতো দূর কিভাবে গেলো বুঝতেছি না।
ঃ জানিনা কিছু, বাদ দে।
ঃ ও আচ্ছা আরেকটা কথা,
ঃ কি?
ঃমনিকা ওর একটা বান্ধবীকে নিয়ে আমাদের এখানে শিফট হতে চাচ্ছে।
ঃ কেন, ওদের ওখানে কি হইছে?
ঃ ওদের ওখানে ভাড়া বেশি। আর একা থাকতে নাকি ভয় লাগে ওদের ।
ঃ তাহলে আর কি, জিসান রে নিচে ড্রয়িং রুমে ট্রান্সফার করে ওদের দুজনকে জিসানের রুমে শিফট হতে বল।
ঃ আমি রাজি দোস্ত, ( জিসান)
ঃ জানতাম তুই রাজি হবি , তাই তোর কথা বলছি।
যাইহোক, মজা করছিলাম। আমাদের এখানে মেয়ে ঢুকানো যাবে না। পরে ঝামেলা হতে পারে।
ঃ কি ঝামেলা হবে, তুই তো আমাদের ভালো করেই জানিস। ওরাও চিনে। তাইতো আসতে চাচ্ছে। আর তাছাড়া , আমাদের রান্না যে বাজে , ওরা আসলে তো একটু ভালো ভাবে খাওয়া যাবে।
ঃ আমাদের ৪ জনের ৪ টা রুম, ওরা কই থাকবে?
ঃ জিসান আর আমি এক রুমে থাকবো। (কার্লো)
ঃসিউর?
ঃ ১০০%
ঃ তাহলে আমার কোনো সমস্যা নেই। সকালে কাজ আছে। ঘুমাতে গেলাম আমি।
ঃ গুড নাইট।
ঃ গুড নাইট ফ্রেন্ডস
আমি প্রত্যেকদিন সকাল ৮ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত ভার্সিটির পাশে একটা রেস্টুরেন্টে পার্ট টাইম কাজ করি।
আর তারপর ২ টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত ভার্সিটিতে ক্লাস করতে হয়।
পরেরদিন সকালবেলা যথারীতি আমি আমার কাজে চলে আসি। গ্রাহক দের অর্ডার নেওয়াই আমার কাজ ছিল।
সকাল ১১ টার দিকে জেনিফার এসে রেস্টুরেন্টে ঢুকে।
ঃ তুমি এখানে?
ঃ হ্যা, তোমার বন্ধুরা বললো তুমি এখানে জব করো। তাই এসে পরলাম দেখা করতে।
ঃ ওদের কই পাইছো তুমি?
ঃ তোমার বাসায় গিয়েছিলাম।
ঃ আর আমার বাসা কিভাবে চিনলা?
ঃ এতো প্রশ্ন কেনো? যেভাবেই হোক চিনেছি তো।
ঃহুম,
ঃ নাস্তা করছো?
ঃ না করিনি, একটু পরে করবো।
ঃ আমিও করিনি। এক কাজ করো, দুইটা ডাবল চিকেন সেন্ডইচ আর কফি দুইটা।
ঃ দুইটা দিয়ে কি হবে?
ঃ আমি অর্ডার করেছি, প্রশ্ন করতে বলিনি।
ঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
কিছুক্ষনপর আমি ওর টেবিলে খাবার দেওয়া হয়। আমি অন্য টেবিলে অর্ডার নিচ্ছিলাম।
ঃ হে অনুরাগ!
ঃ জ্বি বলো।
ঃবসো, কথা আছে। নাস্তা করতে করতে বলবো।
ঃ আমার working hour চলতেছে। বসলে প্রবলেম হবে।
এই কথা শুনে ও উঠে সোজা আমার ম্যানেজার এর কাছে গিয়ে আমার দিকে ইশারা করে কথা বলছিল। একটু পর ম্যানেজার এসে আমাকে চাকরি থেকে বের করে দিল।
কারন জানতে চাইলে কাস্টমার কমপ্লেইন বলে চলে যায় উনি।
ঃ এবার তো বসতে আর কোনো সমস্যা নেই?
ঃএটা কি হলো?
ঃ যা হওয়ার হইছে। এখন নাস্তা করো। আর তাছাড়া এর চেয়ে আরো অনেক ভালো ভালো চাকরি তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
ঃ আর সেই চাকরি গু্লো আমাকে কে দিবে শুনি, তোমার দাদা?
ঃ হিহিহিহি, দিতেও পারে।
ঃ ও আচ্ছা ভালো কথা , তুমি আমাকে কালকে মিথ্যা বললা কেনো যে প্রফেসর তোমার দাদা?
ঃ আরে বাবা সত্যিই উনি আমার দাদা।
ঃ আমার বন্ধুরা যে বললো উনার কোনো পরিবার নেই!
ঃআসলে কেও জানে না এখানে, আমরা ভেনকুয়েবারে ছিলাম।
ঃ ও আচ্ছা, আমারতো কোনো একটা পেচ আছে মনে হচ্ছে ।
ঃ ভার্সিটিতে যাবা না?
ঃ আজকে আমার বন্ধ।
ঃগ্রেট, চলো এক জায়গায় যাই।
ঃ কালকের মতো আবার?
ঃ নাহ, আগে চলোই না।
ঃ বেশি দূরে কিন্তু যাবো না।
ঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
ও আমাকে একটা বাসায় নিয়ে যায়। পুরানো বাসা, গেটে জং পরা, ঘরের সামনে একটা ছোট বাগান। জেনিফার দরজার সামনে গিয়ে দারাতেই দরজা একা একাই খুলে যায়। বাড়ির নিচতালায় ড্রয়িং রুম আর কিচেন , সম্পূর্ণ পরিস্কার। জেনি নিচে না দারিয়ে আমাকে নিয়ে সোজা উপরে চলে যায়। উপরে গিয়েই আমার মাথা ঘুরানো শুরু করে,
এ যেনো এক যন্ত্র পাতির মেলা । ওখানে এমন এমনও জিনিসপত্র ছিল যা আমি আগে কখনো দেখিনি।
ঃ হায় অনুরাগ, কেমন আছো?
ঃ এইতো ভালো আছি মি স্টিভ। আপনার কি অবস্থা?
ঃ আমার অবস্থাতো দেখতেই পাচ্ছো। ভিতরে আসো।
ঃ এটা কি বানাচ্ছেন?
ঃ স্কেটিং করতে যাবো আমরা , তাই অটোমেটিক স্কেটিং বোট বানাচ্ছি। প্রায় হয়ে গেছে। জেনি, আমাদের জন্য কফি আনা যায়?
ঃ অবশ্যই, আমি নিয়ে আসছি।
ঃ আচ্ছা কাচের বড় এই জিনিষ টা কি ?
ঃ তোমার সাফল্য ।
ঃ মানে?
ঃ না মানে আমার একটা প্রোজেক্ট।
ঃ কিসের প্রোজেক্ট?
ঃ টাইম মেশিন।
ঃ Really? i mean seriously বলছেন?
ঃহ্যা, কিন্তু আমি সময় কে কন্ট্রোল করার ব্যাপারটা এখনো ঠিক করতে পারিনি।
ঃচিন্তা নেই, হয়ে যাবে । সব কিছুতো আর একবারেই হয় না, একটু সময় লাগে ।
ঃ সময় এবং সঠিক মানুষ দুটোকেই লাগে ।
ঃ আচ্ছা আপনার এতো সুন্দর শরীর মেইন্টেইন এর রহস্য টা জানতে পারি।
ঃ রহস্য যেহেতু নিজেই বের করে নেও। তবে একটা clue দিতে পারি।
ঃ আর সেটা কি?
ঃ আমার বয়স এখন ৮১ চলছে।
ঃ হাহাহাহাহাহাহা, বেশ ভালো মজাই করতে পারেন। আপনার বয়স বেশি হলে ৪০ হবে।
ঃ গ্রেন্ডপা ঠিকি বলছে , উনার এখন ৮১ চলতেছে।
ঃ একটু ঠান্ডা পানি হবে?
ঃ এই ঠান্ডায় , ঠান্ডা পানি?
ঃ খাবো না , তোমাদের মাথায় ঢালবো।
ঃ হাহাহা, আচ্ছা বিশ্বাস না হলে কি করার।
ঃ কিন্তু এই রহস্য তো আমি উদঘাটন করেই ছারবো।
ঃ শুভ কামনা রইলো, এই নিউজ পেপার গুলো নিয়ে যাও, বাসায় গিয়ে পড়বা।
ঃ অনেক আগের নিউজ পেপার মনে হচ্ছে।
ঃ হুম , এখন চলো স্কেটিং করতে যাবো।
ঃ চলেন যাই।
স্কেটিং করার জন্য আলাদা জামা-কাপড় দরকার ছিলো। কেননা , আমার গায়ে পরা জাম্বু জ্যাকেট পরে তো আর স্কেটিং করতে পারতাম না।
ঃ স্কেটিং আগে করেছো কখনো?
ঃ না করিনি প্রফেসর।
ঃ চিন্তা নেই, আমি যেই স্কেটিংবোড বানিয়েছি এটা দিয়ে সহজেই স্কেট করতে পারবা ।
ঃ দেখা যাক।
ঃ জেনি তোরা নিচে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে ফেল। আমি আসতেছি এগুলো নিয়ে।
ঃ ওকে গ্রেন্ডপা।
নিচে জেনি আমাকে ওদের স্টোর রুমে নিয়ে যায়, ওখানে আরো বেশি যন্ত্র -পাতির কারখানা। কিছু কিছু মেশিনে দেখলাম ট্রিপল-এ সাইন খোদাই করা।
ঃ জেনি!
ঃ হুম বলো-
ঃ ট্রিপল -এ দিয়ে কি বোঝায় ?
ঃ কোথায় দেখি!
ঃ এই যে-
ঃ গ্রেন্ড-পা বলতে পারবে। আমি জানিনা এটার ব্যাপারে।
ঃ ও আচ্ছা ,
ঃ দেখোতো এই স্কেট স্যুট আর গ্লাবস গু্লো হবে নাকি তোমার।
ঃ হুম একদম মাপ মতো।
ঃ আর এগুলা আমার।
এটা বলেই ও ওখানে ওর ড্রেস খোলা শুরু করে। আমি তা দেখে উল্টা দিকে ঘুরে যাই।
ঃ এটা কি করছো জেনি?
ঃ কেনো ড্রেস চেঞ্জ করছি।
ঃতাই বলে এভাবে আমার সামনে ?
ঃ হাহাহাহাহা, ভিতরে আমার শর্টস পরা আছে। আর তাছাড়া তোমার ব্যাপারে আমি ভালো ভাবেই জানি ।
ঃ কিভাবে জানো? পরিচয়ই হলো আজকে মাত্র ২ দিন।
ঃ ঘুরতে পারো , আমার ড্রেস চেঞ্জ করা হয়ে গেছে।
ঃ হুম এবার বলো- কিভাবে জানো?
ঃ গ্রেন্ড -পা এর রহস্য টা খুজে বের করো। সব জেনে যাবা।
ঃI hate puzzle ,
ঃ But am sorry to inform you that, this is the starting of puzzles . And you have to solve them all .
এমন সময় প্রফেসর এসে হাজির হয়-
ঃ কি কথা হচ্ছে?
ঃ এইতো এমনি কথা হচ্ছিল।
ঃআজকে আমরা স্টোনি মাউন্টেইন যাবো । অনুরাগের কোনো কাজ নেই তো?
ঃ আমার আর কি কাজ থাকবে! যে একটা কাজ ছিল সেটাও আপনার নাতনীর জন্য আজকে সকালে চলে গেছে ,
ঃব্যাপার না। জেনি গাড়িতে লাকড়ি আছে?
ঃ হ্যা আছে,
ঃ তোরা গিয়ে গাড়িতে বস।
গাড়িতে আসার পর-
ঃ আচ্ছা লাকড়ি দিয়ে কি হবে ?
ঃ ওখানে গিয়ে খাবো, কি শুনি?
ঃ লাকড়ি খাবো?
ঃ আরে নাহ, লাকড়ি পুড়িয়ে চিকেন আর ফিস বারবিকিউ করা হবে।
ঃ আমি এসে গেছে- এবার যাওয়া যাক।
ঃ আজকে প্রচুর ঠান্ডা ।
ঃ হুম, একটু পর গরম হয়ে যাবা।
ঃ প্রফেসরের টাইম মেশিন কত টুকু হয়েছে?
ঃ এইতো বললাম না সময়ে আটকে গেছি।
ঃএটা দিয়ে কি শারিরিক ভাবে টাইম ট্রাভেল করা যাবে?
ঃ না শুধু অতীতে ম্যাসেজ পাঠানো যাবে।
ঃ ভবিষ্যতে কেনো পাঠানো যাবে না?
ঃ কেনোনা ভবিষ্যত তো এখনো সৃষ্টিই হয়নি। আমরা যা করবো সেটাই তো ভবিষ্যত তাই না।
ঃ আচ্ছা বুঝলাম, কিন্তু একটা ব্যাপার আমার মাথায় পেচ খায় সব সময়।
ঃ কি ব্যাপার?
ঃ আমরা যে তারা -নক্ষত্র গুলো দেখি সেগুলো ২-৩ শত বছর পুরনো । তাই না?
ঃহ্যা, কারন আলো আসতে এতো বছর লাগিয়ে দেয়।
ঃ তাহলে সেই নক্ষত্র গুলোর তুলনায় আমরা এখন তাদের অতীত। আর সেই হিসাব করলে ২-৩শত বছরের ভবিষ্যত আগেই ক্রিয়েট হয়ে গেছে।
ঃ তার মানে তুমি কি এটা বলতে চাও , ২-৩ শত বছর পর বা এর মধ্যে কি হবে সেটা আগেই নির্ধারণ হয়ে গেছে।
ঃ এক্সেক্টলি। এবং সেটা ঘটেও গেছে। তবে আমাদের গ্রহের জন্য না। অন্যান্য দূরে যে গ্রহ গুলো আছে সেগুলোর জন্য। এবং সে গ্রহ গুলো থেকে আমাদের গ্রহতে আলো আসতে যত সময় লাগে তারা আমাদের চেয়ে তত বছর এগিয়ে আছে।
ঃ আমার মাথা ঘুরাচ্ছে , তোমরা এখন আপাতত এই টপিক বন্ধ করো। ( জেনি)
ঃআচ্ছা ঠিক আছে , এই টপিক বাদ।
খেয়াল করলাম প্রফেসর আমার দিকে তাকিয়ে গাড়ির স্টেয়ারিং ছেড়ে দিয়েই কথা বলছিল। আর গাড়ী প্রায় ১০০ কিমি বেগে এগিয়ে চলছিল।
ঃ এক্সিডেন্ট করবে তো। গাড়ির স্টেয়ারিং ধরেন।
ঃ গাড়ী অটোমেটিক মুডে চলছে।
ঃ মানে?
ঃ মানে নিজে নিজেই। সেন্সরের মাধ্যমে। জিপিএস এ ডেস্টিনেশন দেওয়া আছে। ওখানে গিয়ে থেমে পরবে গাড়ী।
ঃ আর সামনে যদি কোনো গাড়ী বা অন্য কিছু এসে পরে?
ঃ সেন্সরের কারনে পাশ কাটিয়ে চলে যাবে নাহলে থেমে যাবে।
ঃ এরকম মডেলের কোনো গাড়ী বের হইছে বলে আমি শুনিনাই।
ঃ কেনোনা এরকম কিছু এখনো লঞ্চ হয়নি।
ঃএটা আপনি বানিয়েছেন?
ঃ নাহ, আমি বানাইনি।
ঃ তাহলে?
ঃ কেও একজন বানিয়ে আমাকে দিয়ে গেছে।
তখন হঠাত গাড়ী রাস্তার একপাশে এসে থেমে যায়।
ঃ কি হলো?
ঃ আমরা এসে পরছি। এই GPS tracker নিজেদের শরীরে লাগিয়ে নেও। যেনো একে ওপরকে সহজেই খুজতে পারি হারিয়ে গেলে।
ঃ ওকে,
ঃ আগে আমরা গিয়ে মাছ ধরবো, ( জেনি)
ঃ কোথায়?
ঃ নদী আছে সামনে একটা।
ঃ আমি গাড়ী থেকে বড়শি আর বরফ কাটার ব্লেড নিয়ে আসতেছি। তোরা গিয়ে দেখ নদীর পানি বরফ হয়েছে কিনা।
ঃ ডান দিক টায় যাবো?
ঃ হুম যেতে পারিস। ওদিকে ভালো মাছ পাওয়া যায়।
ঃ ওকে
আমি আর জেনি হাতে স্কেটবোড নিয়ে নদীর দিকে হাটা শুরু করি। কাছে গিয়ে দেখলাম নদীর উপরে একটা মোটা বরফের আস্তরন পরেছে।
ঃ এখানে কি মাছ পাওয়া যাবে?
ঃ সেলমন ফিস। প্রচুর আছে এখানে।
প্রফেসর এসে বরফে গোল গোল করে গর্ত করে সেখানে বড়শী দিয়ে রাখে। আর তারপর আমরা স্কেটিং শুরু করি। প্রফেসর আমাদের আগে আগে স্কেট করছিল। আর আমরা তার পিছে পিছে, জেনি আমার হাত ধরে ছিল , কেননা , শুরুতেই দুই একটা আছাড় খাওয়া শেষ আমার। জেনি খুব ভালো স্কেটিং পারে।
আর সেই সুবাদে আমার আস্তে আস্তে জেনিকে ভালো লাগতে শুরু করে।
কিছুক্ষন পর আমরা বড়শীর কাছে ফিরে যায় আর দেখি দুই বড়শী তে মোটামোটি বড় আকারেরই দুইটা মাছ ধরেছে।
আমি নদীর শক্ত বরফের উপর দিয়ে হাটতে হাটতে মাঝখানের দিকে যাচ্ছিলাম। জেনি আর প্রফেসর আগুন ধরানোতে ব্যাস্ত ছিল।
অনেকটা মাঝখানের দিকে চলে যাই তখন জেনি আমাকে পিছন থেকে জোরে ডাক দেয়-
ঃ অনুরাগ আর সামনে যেও না। বরফ ভেঙ্গে পানিতে পরে যাবা।
ও বলতে না বলতেই বরফ ভেঙ্গে আমার এক পা পানিতে , অন্য পাশের বরফ ফাটা শুরু করে এমন সময় দুইটা হাস্কি কুকুর আমার স্যুটের পিছনে কামড় দিয়ে টেনে আমাকে। শক্ত বরফে নিয়ে যায়। ততক্ষণে জেনি আর প্রফেসর আমার এদিকে চলে আসে।
ঃ ঠিক আছোতো তুমি?
ঃ হ্যা, কিন্তু এগুলা কোথা থেকে এলো?
ঃ আমার স্নো -আইস না এগুলা।
ঃ আগে এখান থেকে সাইডে চলো।
ঃ হুম।
ঃ এগুলোতো পোষা মনে হচ্ছে।
আমি ওদের গলায় হাত দিয়ে আদর করতেই চুপ -চাপ হয়ে আদর নিচ্ছিল। কিন্তু যখনি প্রফেসর ওগুলোকে ধরতে যায়, কুকুর গুলো সরে আমার দিকে চলে আসে।
ঃ একটা জিনিস বুঝলাম না, তোমাদের সাথে থাকলেই আমার সাথে এমন অদ্ভুত অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। তারউপর মনে হয় যে তোমাদেরকে নিয়ে হাজার হাজার বছর পুরানো কোনো রহস্য ঘিরে আছে।
ঃহাহাহাহাহা, রিলেক্স, এগুলো জংলি কুকুর, তোমাকে মনে হয় ভালো লাগছে। দেখো কিভাবে তোমার শরীরের ঘ্রান নিচ্ছে। ।
ঃ হুম জঙ্গলি কুকুর হলে চলে যাবে।
সেদিনকার মতো আমরা খাওয়া দাওয়া করে সেখান থেকে চলে আসি। কুকুর গুলোকে সেখানেই রেখে আসি।
গাড়ী যখন প্রায় আমার বাসার কাছে চলে আসে তখন-
ঃ অনুরাগ, I have an offer for you.
ঃ কি অফার?
ঃ আমার সাথে কাজ করবা?
ঃ ওই যন্ত্র পাতি নিয়ে? এসিস্টেন্ট হিসেবে ?
ঃ আরে না না, পার্টনার হিসেবে। মানে ৫০-৫০।
ঃ হাহাহাহা, কই আপনি একজন বিজ্ঞানী আর আমি সাধারন একজন ইলেক্ট্রিকেল ইঞ্জিনিয়ারিঙ্গের ছাত্র। আমিতো আপনার এসিস্টেন্ট হওয়ারও যোগ্য না। জেনির জন্য আমার চাকরিটা গেছে আর সেই জন্য মনে আমাকে অফার টা দিচ্ছেন।
ঃ আরে নাহ, তুমি ভুল বুঝতেছো ।
ঃ Don't worry. ওরকম চাকরি কত আসবে যাবে। কিন্তু এরকম বন্ধুতো আর কখনো পাবো না। আর তাছাড়া জেনির সাপেক্ষে ওই চাকরিটা অতি নগন্য।
ঃহুম। কিন্ত.....
ঃ আর কিন্তু না। আমি চলে আসছি। আমাকে ঐ মোড়ে নামায় দিলেই হবে।
ঃ হুম
ঃ আজকের জন্য ধন্যবাদ, শুভরাত্রি জেনি
ঃ কালকে দেখা হবে, bye। ( জেনি)
চলবে-