25/02/2025
আল্লাহর (ঈশ্বর) ধারণা একটি সামাজিক নির্মাণ (social construct), যা মানুষের সভ্যতা গঠনের জন্য তৈরি হয়েছে। ইতিহাসে ধর্মকে অনেক সময় ব্যবহার করা হয়েছে মানুষকে একত্রিত করার জন্য, নৈতিক নিয়ম প্রতিষ্ঠা করার জন্য, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, ক্ষমতাসীনদের কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্য।
একটি সহজ উদাহরণ দিয়ে বুঝি: ভাবুন, একটি নতুন দ্বীপে কিছু মানুষ বসবাস শুরু করল। তারা নিজেদের জীবনকে সংগঠিত করতে কিছু নিয়ম তৈরি করল—যেমন চুরি করা যাবে না, মিথ্যা বলা যাবে না, সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সবাই এই নিয়ম মানবে কেন? তখনই একজন বুদ্ধিমান নেতা বলল, “এই নিয়মগুলো শুধু মানুষের বানানো নয়, এগুলো একজন সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার (আল্লাহর) আদেশ। যদি কেউ না মানে, তিনি শাস্তি দেবেন।”
এইভাবেই অনেক প্রাচীন সভ্যতায় দেখা যায়, ধর্মীয় আদেশের মাধ্যমে সামাজিক শৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। মানুষ ভয় এবং বিশ্বাসের মিশ্রণে এই নিয়মগুলো মেনে চলে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যদি আল্লাহ (ঈশ্বর) সত্যিই থাকেন, তাহলে তিনি কি সত্যিই এত ছোটখাট বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাবেন?
উদাহরণ হিসেবে ধরুন, একজন বিজ্ঞানী একটি বিশাল রোবট তৈরি করলেন, যা নিজে থেকে চিন্তা করতে পারে এবং কাজ করতে পারে। বিজ্ঞানী কি সত্যিই সময় ব্যয় করবেন এই দেখে যে তার বানানো রোবট কোন রঙের জামা পরেছে, নাকি সে কোন হাতে খাবার খাচ্ছে? বরং বিজ্ঞানী হয়তো এই রোবটের বৃহত্তর কর্মক্ষমতা এবং ভবিষ্যৎ উন্নতি নিয়ে ভাববেন।
ঠিক তেমনি, যদি আল্লাহ (ঈশ্বর) সত্যিই থাকেন, তাহলে তিনি নিশ্চয়ই পুরো মহাবিশ্বের মতো বিশাল কিছু নিয়ে চিন্তিত থাকবেন, মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের ক্ষুদ্র বিষয়গুলো নিয়ে নয়। কিন্তু ইতিহাসের ধর্মগ্রন্থগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, সেখানে আল্লাহ (ঈশ্বর) প্রায়ই নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম তৈরি করেছেন, যেমন কী খেতে হবে, কীভাবে পোশাক পরতে হবে, কাকে বিয়ে করা যাবে ইত্যাদি।
এখানে মূল বিষয় হলো ভয় এবং নিয়ন্ত্রণ। ধর্মীয় গ্রন্থগুলোতে বারবার বলা হয়, “আল্লাহ (ঈশ্বর) তোমাকে শাস্তি দেবেন যদি তুমি তার নিয়ম না মানো।” জান্নাত ও জাহান্নামের ধারণাও এরই অংশ—যদি তুমি ভালো কাজ করো, তুমি পুরস্কৃত হবে; আর যদি নিয়ম ভাঙো, কঠিন শাস্তি পাবে।
এটা মূলত একটি সামাজিক কৌশল, যাতে মানুষ নিয়ম মেনে চলে। উদাহরণ হিসেবে ধরুন, একটি স্কুলে শিক্ষক যদি বলেন, “যদি ভালো নম্বর পাও, তাহলে পুরস্কার দেবে,” আর “যদি নিয়ম না মানো, তাহলে শাস্তি পাবে,” তাহলে শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিকভাবেই নিয়ম মেনে চলবে। ধর্মীয় শাসনব্যবস্থায়ও ঠিক এভাবেই কাজ করা হয়—ভয় এবং পুরস্কারের মাধ্যমে মানুষকে নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে রাখা।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, যদি কোনো সর্বশক্তিমান আল্লাহ (ঈশ্বর) সত্যিই থাকেন, তাহলে তিনি কেমন হবেন?
যদি তিনি সত্যিই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা হন, তাহলে তিনি নিশ্চয়ই বিশালতর বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন, যেমন মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ, নতুন নক্ষত্রের জন্ম, প্রাণের বিকাশ ইত্যাদি। মানুষের ছোটখাট ব্যক্তিগত বিষয়, যেমন পোশাক, খাবার, বা দৈনন্দিন অভ্যাস, তার কাছে তুচ্ছ মনে হওয়া স্বাভাবিক।
ধর্মের ইতিহাস দেখলে বোঝা যায়, অনেক সময় ধর্মীয় নেতা ও শাসকেরা সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করতে ঈশ্বরের ধারণাকে ব্যবহার করেছেন, যাতে মানুষ নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে থাকে এবং ক্ষমতার প্রতি বাধ্য থাকে।
সুতরাং, আসল প্রশ্ন হলো—আমরা সেই (ঈশ্বর) অনুসরণ করছি, যাকে মানুষ তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী গড়ে তুলেছে?
#বাংলাদেশ