15/12/2024
সাক্ষাৎকার
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে অনলাইন পোর্টাল আমার কণ্ঠ-এ প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের লেখক আনোয়ার শাহজাহান এর বিশেষ সাক্ষাৎকার।
https://amarkantho.com/%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%87%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B8-%E0%A6%A4%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A7%87-%E0%A6%A7%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A7%87%E0%A6%87-%E0%A6%86%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%96%E0%A6%BF-%E0%A6%86%E0%A6%A8%E0%A7%8B%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%A8
।।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতেই আমার লেখালেখি: আনোয়ার শাহজাহান
বিজয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখক, সাংবাদিক ও প্রবাসী কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব আনোয়ার শাহজাহানকে নিয়ে #আমার_কন্ঠ'র এবারের আয়োজন।
আনোয়ার শাহজাহান একজন খ্যাতিমান লেখক, গবেষক এবং মুক্তিযুদ্ধের লেখক। তিনি মুক্তিযুদ্ধের উপর ৪টি বাংলা এবং ২টি ইংরেজি বই লিখেছেন, যার মধ্যে "স্বাধীনতাযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা" বইটি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা লাভ করেছে। তার গবেষণাগুলি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করেছে এবং দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো সবার সামনে তুলে ধরেছে।
১৯৭৩ সালে জন্মগ্রহণ করা আনোয়ার শাহজাহান ১৯৯৫ সাল থেকে ব্রিটেনে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। ১৯৯৭ সাল থেকে তিনি লন্ডন বিচিত্রা এবং ২০১০ সাল থেকে আমাদের প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সমাজসেবা, সাহিত্য এবং সংস্কৃতির প্রতি তাঁর গভীর আগ্রহ রয়েছে, এবং তিনি মুক্তিযুদ্ধের বীরত্ব, সংগ্রাম, আত্মত্যাগ ও বিজয়ের চিত্র তুলে ধরে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বিরল অবদান রেখে চলেছেন।
এখানে তুলে ধরা হলো আনোয়ার শাহজাহানের সাক্ষাৎকার:
#প্রশ্ন ১: আপনি কীভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের প্রতি আগ্রহী হলেন?
আনোয়ার শাহজাহান: আমার মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আগ্রহ জন্মেছে মূলত সাংবাদিকতার মাধ্যমে। আমি যখন সাংবাদিকতা শুরু করি, তখন বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার নেয়ার সুযোগ পেতাম। তাদের মুখ থেকে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার গল্প শুনে এক ধরনের অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল। তাদের ত্যাগ, সাহসিকতা এবং সংগ্রামের গল্পগুলো আমাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। আমি তাদের গল্পে মানবিকতা, স্বাধীনতার প্রতি ভালোবাসা এবং দেশপ্রেমের একটি গভীর চিত্র দেখতে পেতাম। অনেক মুক্তিযোদ্ধা তাদের জীবন, পরিবার, এবং সর্বস্ব ত্যাগ করে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন। তাদের বীরত্ব, সংগ্রাম এবং আত্মত্যাগের কথা শুনে আমার মনে হচ্ছিল, এই ইতিহাস যেন কখনো ভুলে না যায়। আমি জানতাম, যদি আমরা এই ইতিহাসগুলো সংরক্ষণ না করি, তবে ভবিষ্যত প্রজন্ম হয়তো জানবে না কীভাবে আমাদের পূর্বপুরুষরা তাদের জীবনের সবকিছু ত্যাগ করে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছিলেন। সেদিন থেকে আমার মনে হয়েছে, এই অমূল্য ইতিহাসকে সংরক্ষণ করা এবং চিরকাল স্মরণে রাখার জন্য আমাকে কিছু করতে হবে। এই ভাবনা থেকেই আমি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখালেখি শুরু করি, যাতে এটি ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি শিক্ষামূলক উৎস হয়ে ওঠে।
#প্রশ্ন ২: আপনি প্রথম মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখালেখি কীভাবে শুরু করলেন? প্রথম বইটির নাম কী?
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমার লেখালেখির শুরুটি সিলেটের খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনী নিয়ে। যখন আমি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের প্রতি আগ্রহী হই, তখন সিলেটে মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার সুযোগ পাই। তাদের জীবনযুদ্ধ এবং সাহসিকতার গল্পগুলো আমাকে গভীরভাবে স্পর্শ করে। একেকটি সাক্ষাৎকার ছিল একেকটি শিক্ষা এবং অনুপ্রেরণা। এসব সাক্ষাৎকারের মধ্যে আমি উপলব্ধি করি, মুক্তিযুদ্ধের অনেক অজানা দিক আজও অনেকের কাছে অজানা রয়ে গেছে। বিশেষভাবে সিলেট অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান অনেকটা উপেক্ষিত ছিল। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, রাষ্ট্রীয় খেতাবপ্রাপ্ত সিলেটের মুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা নিয়ে একটি বই লিখবো, যাতে তাদের সংগ্রাম এবং ত্যাগের কথা সঠিকভাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে যায়।
আমার প্রথম বইটি ছিল সিলেটের খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। এটি ২০১৮ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় পান্ডুলিপি প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়। বইটি সিলেট অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব এবং সংগ্রামকে চিরকাল স্মরণীয় করে রাখতে একটি ক্ষুদ্র পদক্ষেপ ছিল। এটি ছিল আমার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে লেখালেখি যাত্রার প্রথম বই।
---
#প্রশ্ন ৩: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের কোন দিকটি আপনার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যেসব সংগ্রাম, আত্মত্যাগ এবং বীরত্বের পথ পাড়ি দেওয়া হয়েছে, তা। মুক্তিযুদ্ধ শুধু একটি সময়কাল নয়, এটি আমাদের জাতির ইতিহাসের এক মহাকাব্য, যেখানে স্বাধীনের জন্য অসংখ্য মানুষের ত্যাগ, সংগ্রাম এবং সাহসের গল্প অমর হয়ে আছে। যারা নিজের জীবনের সর্বস্ব ত্যাগ করে, পরিবারের সুখ শান্তি বিসর্জন দিয়ে দেশের জন্য জীবন বাজি রেখেছেন, তাদের কাহিনীই মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তাদের এই বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। এ ইতিহাসের গভীরতা এবং গুরুত্ব প্রতিটি প্রজন্মের কাছে পৌঁছানো অত্যন্ত জরুরি, যাতে তারা জানে যে স্বাধীনতা সহজে আসে না, এটি অর্জন করতে অনেক ত্যাগ এবং সংগ্রাম প্রয়োজন। মুক্তিযুদ্ধের এই অনন্য চেতনা আমাদের স্মৃতিতে চিরকাল উজ্জ্বল থাকবে।
#প্রশ্ন ৪: আপনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কীভাবে সংরক্ষণ করেন?
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণে আমি দুইটি প্রধান পন্থা অনুসরণ করি। প্রথমত, আমি মুক্তিযুদ্ধের বীরদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করি, যাতে তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং সংগ্রামের গল্প তুলে ধরা যায়। এই সাক্ষাৎকারগুলো এক ধরনের জীবন্ত ইতিহাস, যা পাঠকদের মুক্তিযুদ্ধের বাস্তব অভিজ্ঞতার সাথে পরিচিত করিয়ে দেয়। আমি বিশ্বাস করি, সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে যেভাবে মানুষের ব্যক্তিগত অনুভূতি এবং সংগ্রাম উঠে আসে, তা ইতিহাসের একটি অমূল্য অংশ হিসেবে সংরক্ষিত হয়।
দ্বিতীয়ত, আমি বিভিন্ন গবেষণামূলক উৎস, পুরনো ডকুমেন্ট, আর্কাইভ এবং নথিপত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করি। এসব ঐতিহাসিক দলিল ও নথি মুক্তিযুদ্ধের বহু অজানা দিক উন্মোচন করতে সাহায্য করে। এগুলোকে সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে আমি মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করি। এর মাধ্যমে আমি চেষ্টা করি তরুণ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস তুলে ধরতে, যাতে তারা আমাদের স্বাধীনতার মূল্য এবং এর পেছনের সংগ্রাম বুঝতে পারে।
---
#প্রশ্ন ৫: মুক্তিযুদ্ধের সময়কার আপনার প্রিয় কোনো ঘটনা বা চরিত্র কি?
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধের সময়কার অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গল্প শুনেছি, তবে এক বিশেষ চরিত্র আমার মনকে গভীরভাবে ছুঁয়ে গেছে। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা, যিনি যুদ্ধের সময় তার পরিবারকে হারিয়ে, নিজের জীবনকে বিপদে ফেলে দেশের জন্য লড়াই করেছিলেন। তার গল্পে ছিল না কোনো হীনমন্যতা, ছিল শুধু অদম্য আত্মবিশ্বাস এবং দেশপ্রেমের এক অমোঘ শক্তি। তার সাহসিকতা এবং আত্মত্যাগের মধ্যে আমি এমন এক অদ্ভুত শক্তি এবং দৃঢ়তা অনুভব করি, যা আমার লেখার প্রতি মনোভাবকে আরও শক্তিশালী করেছে। তার কাছে জীবন এবং দেশপ্রেমের সংজ্ঞা ছিল একেবারে আলাদা; তিনি জানতেন, স্বাধীনতা অর্জন করতে হলে কিছু একটা ত্যাগ করতে হয়। এই ঘটনা আমার জীবনে বিশাল অনুপ্রেরণা। মুক্তিযোদ্ধার এই আত্মত্যাগ আমাকে শিখিয়েছে যে, মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন হলো নিজের দেশের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করা। এমন বীরদের কথা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে জানানো উচিত, যেন তারা বুঝতে পারে, এই স্বাধীনতা আসেনি সহজে। তাদের সংগ্রাম এবং আত্মত্যাগকে স্মরণ রেখে, আমাদের উচিত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা এবং এই অমূল্য সম্পদকে সামনে নিয়ে আসা।
#প্রশ্ন ৬: মুক্তিযুদ্ধের বিষয়বস্তু নিয়ে লেখার সময় আপনার কী ধরনের প্রস্তুতি থাকে?
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধের বিষয়বস্তু নিয়ে লেখার সময় আমি খুবই মনোযোগ সহকারে প্রস্তুতি গ্রহণ করি। প্রথমত, আমি বিষয়টির ওপর বিস্তারিত গবেষণা শুরু করি। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, এবং বিশেষত মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাগুলো জানার জন্য আমি তাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করি। তাদের গল্প আমাকে আরো গভীরভাবে প্রভাবিত করে, কারণ এটি কেবল যুদ্ধের ঘটনা নয়, এটি মানুষের আত্মত্যাগ, সাহসিকতা এবং দেশপ্রেমের একটি বাস্তব চিত্র।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি হলো, মুক্তিযুদ্ধের সময়কার প্রামাণ্য দলিল, ডকুমেন্ট, ছবি এবং পত্রিকা সংগ্রহ করা। এই ঐতিহাসিক দলিলগুলো আমার লেখায় সত্যনিষ্ঠতা এবং গভীরতা আনতে সাহায্য করে। এসব তথ্য সংগ্রহ করার মাধ্যমে আমি সঠিক ঘটনা তুলে ধরার চেষ্টা করি এবং আমার লেখায় কোনও ধরনের বিভ্রান্তি এড়াতে পারি।
তাছাড়া, আমি মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্য, কবিতা এবং সাহিত্যিকদের রচনাও পড়ি, যা মুক্তিযুদ্ধের সময়কার মনোভাব এবং সংগ্রামের অনুভূতির সঙ্গে পরিচিত হতে সহায়তা করে। গবেষণার পাশাপাশি, আমি সময় কাটাই মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রামীদের পরিবার এবং সম্প্রদায়ের সঙ্গে, যাতে তাদের অভিজ্ঞতা আরও ভালোভাবে জানতে পারি এবং তা সঠিকভাবে লেখার মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে পারি।
এই ধরনের বিস্তারিত প্রস্তুতির মাধ্যমে আমি নিশ্চিত করি যে, আমার লেখাগুলো মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরবে, যা পাঠকদের জন্য শিক্ষামূলক এবং অনুপ্রেরণাদায়ক হবে।
---
#প্রশ্ন ৭: মুক্তিযুদ্ধে নারীদের ভূমিকা কীভাবে আপনি মূল্যায়ন করেন?
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধে নারীদের ভূমিকা ছিল অবর্ণনীয় এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও অনেক সময় তাদের অবদান ছিল গোপন, তবুও তাদের সাহস, সংগ্রাম এবং ত্যাগ ছিল অসাধারণ। নারীরা শুধু যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণই করেননি, বরং মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তাদের অবদান ছিল নানা দিক থেকে। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা, চিকিৎসা, খাদ্য সরবরাহ এবং গুপ্তচরবৃত্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছিলেন। তাদের এই নিঃস্বার্থ অবদান মুক্তিযুদ্ধের সাফল্যের অংশ ছিল।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে নারীদের এই ভূমিকা সঠিকভাবে তুলে ধরলে, আমরা শুধুমাত্র তাদের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা পূর্ণ করতে পারব না, বরং তাদের সংগ্রামের শক্তি এবং ত্যাগের গল্পটি ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। নারীদের অবদান ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, এবং তাদের এই সাহসিকতা আমাদের সকলের কাছে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।
#প্রশ্ন ৮: মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং বীরদের আত্মত্যাগ নিয়ে আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হল রাষ্ট্রীয় খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনী এবং তাদের অবদান নিয়ে আরও বিস্তারিত, গবেষণাধর্মী বই লেখা। আমি সিলেটের জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাৎকার নিয়ে তাদের সংগ্রামের ইতিহাস লিখতে চাই, যাতে মুক্তিযুদ্ধের অজানা দিক এবং সিলেট অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা প্রকাশ করা যায়।
বর্তমানে, আমি খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন ও সংগ্রাম নিয়ে ৩টি বাংলা এবং ১টি ইংরেজি বই লিখছি। পাশাপাশি, সিলেটে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থান ও সৌধ নিয়ে একটি বই লিখেছি, যা পরবর্তীতে ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ ও প্রকাশিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সাহসিকতা ও ত্যাগের গল্প নিয়ে একটি প্রেরণাদায়ক গল্পের বইও লিখেছি, যা নতুন প্রজন্মের জন্য একটি মূল্যবান শিক্ষা হতে পারে।
ভবিষ্যতে, আমি এই বইগুলোকে আরও বিস্তৃতভাবে ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করার পরিকল্পনা করছি, যাতে প্রবাসী বাঙালি সন্তানরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং ইতিহাস সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে পারে। আমার মূল লক্ষ্য হল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা এবং এটি নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছানো, যাতে তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মহানত্ব এবং এর বীরদের অবদান সম্পর্কে আরও সচেতন হতে পারে।
---
#প্রশ্ন ৯: তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে কীভাবে আরো সচেতন করা যেতে পারে?
উত্তর: তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন করার জন্য আমাদের বিভিন্ন উপায়ে কাজ করতে হবে। প্রথমত, তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে, যাতে তারা বুঝতে পারে কীভাবে আমাদের পূর্বপুরুষরা ত্যাগ ও সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলেন। বই পড়া, বিশেষত মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা বইগুলো পড়তে তাদের উৎসাহিত করতে হবে। এছাড়া, চলচ্চিত্র, নাটক, এবং তথ্যচিত্রের মাধ্যমে ইতিহাসের অমূল্য গল্পগুলো তাদের কাছে পৌঁছানো যেতে পারে। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের উপর বিশেষ পাঠ্যক্রম চালু করা, সেমিনার ও আলোচনা আয়োজন করা তরুণদের মধ্যে এই বিষয়ে আগ্রহ সৃষ্টি করতে সাহায্য করবে। আমরা যদি তাদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের মহান সাহসিকতা, ত্যাগ এবং দেশপ্রেমের গুরুত্ব তুলে ধরতে পারি, তাহলে তারা নিজেদের ইতিহাস সম্পর্কে গর্বিত হবে এবং ভবিষ্যতে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ থাকবে।
#প্রশ্ন ১০: আপনি কী মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধের কোন দিকটি সবচেয়ে কম আলোচিত?
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধের বেশ কিছু দিক এখনও যথাযথভাবে আলোচিত হয়নি। বিশেষত, দেশের ভেতরের গোপন সংগ্রাম এবং স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান অনেক ক্ষেত্রে উপেক্ষিত থাকে। এমন অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছেন, যারা জনসমক্ষে পরিচিত না হলেও, তাঁদের সংগ্রাম ছিল অমূল্য। এই অজানা যোদ্ধাদের কাহিনী এবং তাদের আত্মত্যাগকে ইতিহাসে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন, যাতে মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ চিত্র উঠে আসে। এসব দিক নিয়ে আরও গবেষণা ও আলোচনা প্রয়োজন, যা পরবর্তী প্রজন্মকে আমাদের ইতিহাস সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা দেবে।
---
#প্রশ্ন ১১: মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আপনার লেখা বইগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে বেশি পাঠকপ্রিয়?
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমার লেখা বইগুলোর মধ্যে "স্বাধীনতাযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা" বইটি সবচেয়ে বেশি পাঠকপ্রিয় হয়েছে। বইটি মুক্তিযুদ্ধের বীর যোদ্ধাদের জীবনের সংগ্রাম, ত্যাগ এবং কীর্তির বিস্তারিত বর্ণনা নিয়ে লেখা হয়েছে, যা পাঠকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
এ বইটির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের অজানা অনেক দিক উন্মোচিত হয়েছে, বিশেষ করে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা ও তাঁদের অবদান। বইটিতে ৬৭৬ জন মুক্তিযোদ্ধার পরিচিতি রয়েছে, যার মধ্যে ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠ, ৬৮ জন বীর-উত্তম, ১৭৫ জন বীরবিক্রম এবং ৪২৬ জন বীরপ্রতীক মুক্তিযোদ্ধার নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই বইটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে বিবেচিত।
বইটি প্রকাশের পর, এটি বিশেষভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে আগ্রহী পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এটি কেবল মুক্তিযুদ্ধের যোদ্ধাদের কীর্তি তুলে ধরা নয়, বরং তাঁদের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের প্রতি জাতি হিসেবে আমাদের কৃতজ্ঞতা এবং শ্রদ্ধা জানাতে সহায়তা করেছে। আমি মনে করি, এই বইটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে নতুন প্রজন্মের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে এবং আগামী প্রজন্মের জন্য এটি একটি অমূল্য রেফারেন্স হিসেবে থাকবেই।
---
#প্রশ্ন ১২: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
উত্তর: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আমাদের জাতির এক অমূল্য সম্পদ, যা আমাদের গৌরব এবং আত্মপরিচয়ের প্রতীক। কিন্তু সময়ের সাথে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিক হারিয়ে যেতে থাকে, যা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছানো অত্যন্ত জরুরি। আমি বিশ্বাস করি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যদি সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও প্রচার না করা হয়, তাহলে তা কেবল কাহিনীতে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে। তাই, আমি মুক্তিযুদ্ধের অজানা দিকগুলো নিয়ে লেখালেখি ও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছি, যাতে এই অমূল্য ইতিহাস সকলের কাছে পৌঁছানো যায়।
আমার লক্ষ্য হলো মুক্তিযুদ্ধের গৌরব, সংগ্রাম, আত্মত্যাগ এবং বিজয়ের চিত্রগুলো ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা, যাতে তারা আমাদের পূর্বপুরুষদের ত্যাগ ও সংগ্রামের মূল্য বুঝতে পারে। আমি চাই, মুক্তিযুদ্ধের এই ইতিহাস যেন কখনো হারিয়ে না যায় এবং আমাদের জাতির ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে থাকে।
ভবিষ্যতে আমি আরও কিছু বই এবং গবেষণার কাজ করতে চাই, যা মুক্তিযুদ্ধের অজানা বা অপ্রকাশিত দিকগুলো উন্মোচন করবে। আমি বিশ্বাস করি, এসব কাজ ইতিহাসের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়াবে এবং দেশের জাতীয় ঐক্যের শক্তি হিসেবে কাজ করবে।
এছাড়া, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের উপর আরও গভীর গবেষণা এবং আর্কাইভ তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে, যা ভবিষ্যতে একটি মূল্যবান সম্পদ হয়ে উঠবে। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ ও সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া আমার জীবনের প্রধান লক্ষ্য।