29/10/2024
এক মিনিট সময় দিয়ে পড়ুন প্লিজ!
লন্ডন বাংলা পাড়ায় বাংলা স্কুল। এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয় ২০২৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর। গোলাপগঞ্জ উপজেলা সোশ্যাল ট্রাস্ট ইউকের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। এটির পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে লন্ডন বাংলা স্কুল ম্যানেজমেন্ট কমিটি।
অত্যন্ত ব্যয়বহুল স্কুলটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে শিক্ষা কার্যক্রম প্রদান করে আসছে। এরই মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলা স্কুলটি পরিচালনায় বছরে খরচ হচ্ছে ৭ থেকে ৮ হাজার পাউন্ড। আমাদের এই উদ্যোগে কমিউনিটির ব্যবসায়ী ও নেতৃবৃন্দের সাহায্য ও সহযোগিতা কামনা করছি। এ পর্যন্ত আমরাই এটির ব্যয় ভার বহন করে যাচ্ছি।
সপ্তাহে যেকোনো শনিবার আমাদের এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসে দেখুন, আপনাদের সন্তানরা বাংলা ভাষা শেখার জন্য কতটা পরিশ্রম করছে। তারা এরই মধ্যে বাংলা ভাষায় কথা বলছে, লিখছে। এসব দেখলে আপনিও অনুপ্রাণিত হবেন।
বিশাল অঙ্কের ব্যয়ভার মিটিয়ে স্কুলটি পরিচালনায় আমাদের জন্য ভীষণ অসুবিধা হচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা সকলের সাহায্য ও সহযোগিতা চাই। আগামী বছরের ১৩ জানুয়ারি স্কুলের জন্য ফান্ড রাইজিং করার লক্ষ্যে চ্যারিটি ডিনার ও নেটওয়ার্কিং ইভেন্টের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানটিকে সফল করার দায়িত্ব ব্যবসায়ী ও নেতৃবৃন্দের। কেননা অর্থাভাবে বাংলা স্কুলটি বন্ধ হয়ে গেলে ভবিষ্যতে আর কেউ এ কাজে এগিয়ে আসবেন না।
চ্যারিটি ইভেন্টে আমরা কমিউনিটির ৫-৬ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সংবর্ধনা দেব। তাঁদের সহযোগিতায় আগামী এক বছর স্কুলটি পরিচালিত হবে। আমাদের ২০ জন কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন, যাঁরা স্পন্সর হিসেবে এই চ্যারিটি ইভেন্টের ব্যয়ভার পরিচালনা করবেন। আপনাদের এই সহযোগিতা অবশ্যই লন্ডন বাংলা স্কুল কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করবে। তাই আমরা আপনাদের খুঁজছি আমাদের সহযোগিতা করার জন্য।
অসংখ্য ধন্যবাদ
আনোয়ার শাহজাহান
চেয়ারম্যান- লন্ডন বাংলা স্কুল।
#নিচের_অংশ_সময়_থাকলে_পড়বেন।
খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়!
প্রায় দেড় কোটি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করেন। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যের লন্ডন অন্যতম, যেখানে কয়েক প্রজন্মের বাংলাদেশি রয়েছেন শতাব্দী কালব্যাপী। গতিময় প্রবাসজীবনে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশে নানা রকম উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও আমাদের নতুন প্রজন্ম মাতৃভাষার চর্চা থেকে অনেকটাই বিচ্যুত। যেহেতু আমাদের নতুন প্রজন্ম একসময় প্রবাসে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে, তাই বাংলাদেশি-অধ্যুষিত পূর্ব লন্ডনে নতুন প্রজন্মের মাঝে বাংলাদেশের ইতিহাস, ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশে বাংলা স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে গোলাপগঞ্জ উপজেলা সোশ্যাল ট্রাস্ট ইউকে। ট্রাস্টের চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট লেখক-সাংবাদিক আনোয়ার শাহজাহান এবং তার টিমের অক্লান্ত পরিশ্রমে গত ১৬ সেপ্টেম্বর পূর্ব লন্ডনের চিলডেন এডুকেশন সেন্টারে এটির কার্যক্রম শুরু হয়।
বাংলা স্কুলে ৬ থেকে ১৬ বছর বয়সের যে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবে। লন্ডনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তত্ত্বাবধানে বাংলা স্কুলে শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। স্কুল পরিচালনায় যাবতীয় খরচ বহন করছে যুক্তরাজ্যের চ্যারাটি রেজিস্ট্রার সংগঠন 'গোলাপগঞ্জ উপজেলা সোশ্যাল ট্রাস্ট ইউকে'।
বর্তমানে সপ্তাহের প্রতি শনিবার স্কুলের কার্যক্রম চালু রয়েছে। প্রবাসে বেড়ে ওঠা তৃতীয় প্রজন্মের কাছে শুধু বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সংস্কৃতিকে তুলে ধরাই নয়, একটি বাংলা স্কুল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলা ভাষায় তাদের দক্ষ করে গড়ে তোলা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন লন্ডনে বসবাসরত বাংলাদেশি জনগোষ্ঠী।
প্রবাসে আমাদের সন্তানরা বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতি জানবে লন্ডন বাংলা স্কুলের মাধ্যমে। এটা অবশ্যই আনন্দের বিষয়। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, তারা যেন কোনোভাবেই নিজের শেকড়কে ভুলে না যায়; আমাদের শিশুরা যেন বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি হৃদয়ে লালন করে। কেননা বিদেশি ভাষায় পড়ালেখার কারণে শিশুদের বাংলা ভাষা শেখার সুযোগ তেমন হয়ে ওঠে না। একটি দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি জানার অন্যতম মাধ্যমই হচ্ছে তার ভাষা। তাই বাংলাদেশকে পুঙ্খানুপুঙ্খ জানতে তাদের বাংলা ভাষা শেখানোর বিষয়ে উদ্যোগী হতে হবে আমাদের।
বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি তথা বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্যকে বহমান রাখতে গোলাপগঞ্জ উপজেলা সোশ্যাল ট্রাস্ট নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে গোলাপগঞ্জ উৎসব, পিঠামেলা, কেরাত প্রতিযোগিতা, ফুটবল টুর্নামেন্ট, প্যারেন্টস কনফারেন্সসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য সংগঠনটি ব্রিটেনে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে যথেষ্ট আস্থা অর্জন করেছে।
এসব অনুষ্ঠানে আমাদের নতুন প্রজন্ম কতটুকু স্বতঃস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করে, তা দেখার প্রয়োজন আছে। যদি বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে তাদের পরিচয় না থাকে এবং একটি শব্দও বাংলায় বলতে না পারে, তাহলে তাদের কাছে এসব মেলা, উৎসব ও দিবস উদযাপন বিরক্তিকর বিষয় ছাড়া আর কিছুই হবে না। অনেকে নতুন প্রজন্মের জন্য বিভিন্ন দিবসে অংশগ্রহণমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেনচ, বিশেষ করে বাংলা ভাষাচর্চা-বিষয়ক। এতে কিছু কিছু পরিবারের সন্তানেরা অভাবনীয় সাফল্য প্রদর্শন করলেও বেশির ভাগই দেখা যায় শুধু মঞ্চে ওঠা এবং পরের দিন তা পত্রিকার পাতায় খবর ও ছবি ছাপানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
প্রবাসে বাংলাদেশের কৃষ্টি-কালচার তুলে ধরার জন্য আমাদের শিশুদের জন্য নানা ধরনের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে, কিন্তু এসব আয়োজন মূলত কাদের জন্য? আমাদের মধ্যবয়সী আর প্রবীণদের পদচারণে মুখর থাকে অনুষ্ঠানগুলো। এসব অনুষ্ঠানে আসতে নতুন প্রজন্মের আগ্রহ খুবই কম, এমনকি নেই বললেই চলে। ওরা যেহেতু বাংলা ভাষায় কথাই বলতে পারে না, তাই তাদের আমরা বাংলা সংস্কৃতির কতটুকু ধারণাই-বা দিতে পারব?
লন্ডনে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে প্রতিবছর বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে প্রবাসে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে মহৎ। কিন্তু এ বই কারা কেনে, নিশ্চয়ই আমাদের সন্তানরা নয়? বাংলা ভাষার জন্য যাঁরা জীবন দিয়েছিলেন, তাঁদের সম্মানে একুশের প্রথম প্রহরে শোভাযাত্রা এবং শহিদ মিনারে পুষ্পার্ঘ দেয়া হয়, সেখানেও আমাদের সন্তানরা অনুপস্থিত। পিঠামেলা, বৈশাখী মেলা কোথাও নেই এ দেশে জন্ম ও বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহণ। এই যদি হয় অবস্থা, তাহলে আগামী ৫০ বা ১০০ বছর পর প্রবাসে কি আমাদের বাংলা ভাষা সগৌরবে টিকে থাকবে?
বাংলাদেশ বইমেলা এখন লন্ডনে বৃহত্তম সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। দেশীয় সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখতে এই মেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ ছাড়া ব্রিটেনের বিভিন্ন শহরে আমাদের নতুন প্রজন্মকে শেকড়ের সন্ধান দিতে নানা রকম অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়।
প্রতিবছর মহান ভাষা দিবস উদ্যাপনের সময় আলতাব আলী পার্কে অবস্থিত কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এলে আমরা অনেক আবেগমিশ্রিত কথা বলি, কিন্তু পরের দিন ঠিকই সবকিছু ভুলে যাই। আসুন, আবেগতাড়িত হয়ে যেসব কথা বলি, সেগুলো বাস্তবে প্রয়োগ করি। সেই সাথে খেয়াল রাখতে হবে, আমাদের সন্তানরা দুই পরিবেশে বড় হচ্ছে। ঘর থেকে বেরোলেই তাদের সামনে আলাদা জগৎ। আমাদের কাজ হবে এ দুই ভুবনের মাঝে সুন্দর এক সেতুবন্ধ রচনা করা, যাতে করে সে অনায়াসে নিজের দেশ ও প্রবাসের সংস্কৃতি সমভাবে হৃদয়ে ধারণ করতে পারে। কোনোভাবেই যেন নিজের দেশের সংস্কৃতিচর্চাকে আরোপিত মনে না করে; দুই ভুবনে তাদের বিচরণ যেন হয় স্বতঃস্ফ‚র্ত। সবাই যদি প্রতিজ্ঞা করি, আমরা সন্তানদের সাথে বাসায় শুদ্ধ বাংলায় কথা বলব, ঘরের পরিবেশ হবে পুরোপুরি বাংলাদেশি, ঘরটাকে বানিয়ে ফেলব একখণ্ড বাংলাদেশ এবং সেই সাথে সন্তানদের প্রচুর সময় দেব, তবেই আমাদের এসব মেলা, উৎসব উদযাপন ও সাহিত্যচর্চা সার্থক হবে।
এগিয়ে যাওয়ার পথে ব্রিটেনে বসবাসরত বাংলাদেশীদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। তাই আগামী দিনের সব চ্যালেঞ্জ ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হবে। সবার সম্মিলিত উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় সেটা অবশ্যই সম্ভব। বিবর্তনের গড্ডলিকা প্রবাহে বাঙালি হিসেবে আমাদের অহংকারের জায়গা থেকে নতুন প্রজন্মকে হারিয়ে যেতে দিতে পারি না। আমাদের চ্যালেঞ্জ, আমাদের ভাষা, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখার এবং পরবর্তী প্রজন্মকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার পাশাপাশি তাদের মধ্যে স্বদেশ-স্বজন ভাবনাচিন্তা জাগ্রত করাতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশের সুযোগ তৈরি করা। আমাদের জন্মভিটা প্রিয় বাংলাদেশের সংস্কৃতির সাথে প্রবাসের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে শেকড়সমৃদ্ধ মনন-মেধায় প্রজ্বলিত করার ক্ষেত্র সৃষ্টি করতে হবে। পূর্বপুরুষদের গৌরবসমৃদ্ধ শেকড় থেকে তারা যেন কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন হয়ে না পড়ে।
পরিশেষে বাংলাদেশী কমিউনিটি সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। আমি মনে করি সম্মিলিতভাবে সকলের প্রচেষ্টায় সফল হবে লন্ডনে বাংলা স্কুল প্রতিষ্ঠার মহতী উদ্যোগ। সেই সাথে সবার সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করে মাতৃভাষা বাংলাতেও সুদক্ষ করে গড়ে তুলতে সকলে এগিয়ে আসবেন। আমি আশা করি ভবিষ্যতে এ প্রজন্মই প্রবাসে বাংলাদেশের অব্যাহত অগ্রযাত্রা সমুন্নত রাখতে এবং দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে সচেষ্ট থাকবে। হৃদয়ে ধারণ করবে রক্তঝরা ইতিহাসের মাধ্যমে অর্জিত একটি নাম ‘বাংলাদেশ’।
সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ
আনোয়ার শাহজাহান
চেয়ারম্যান, লন্ডন বাংলা স্কুল।