পথে প্রবাসে Pothe probase

পথে প্রবাসে Pothe probase يٰۤـاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اصْبِرُوْا وَصَابِرُوْا وَرَابِطُوْاوَاتَّقُوا اللّٰهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ

31/12/2024
বাবা
31/12/2024

বাবা

23/11/2024

paris

08/04/2024

সুরার পরিচয় :

সূরার নাম :সূরা নাসর (তাওদী)
সুরার অর্থ : সাহায্য করা।
সূরা নং : ১১০ রুকু সংখ্যা : ১
আয়াত সংখ্যা : ৩ সিজদার সংখ্যা : ০
শব্দ সংখ্যা : ১৯ শ্রেণি : মাদানী
অক্ষর সংখ্যা : ৭৯ পারার সংখ্যা : ৩০
সূরা নাসর سورة النصر sura Nasor এর তাফসির ও শানে নুযূল
بسم الله الرحمن الرحيم

শুরু করছি আল্লাহর নামে; যিনি পরম করুণাময় অতি দয়ালু।
(١). اِذَا جَآءَ نَصۡرُ اللّٰهِ وَ الۡفَتۡحُ

(১) যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে;
(٢)- وَ رَاَیۡتَ النَّاسَ یَدۡخُلُوۡنَ فِیۡ دِیۡنِ اللّٰهِ اَفۡوَاجًا

(২) এবং আপনি মানুষকে দেখবেন দলে দলে আল্লাহর ধর্মে প্রবেশ করছে।
(٣).- فَسَبِّحۡ بِحَمۡدِ رَبِّکَ وَ اسۡتَغۡفِرۡهُ اِنَّهٗ کَانَ تَوَّابًا

(৩) তখন আপনি প্রশংসার সাথে আপনার রবের পবিত্রতা বর্ণনা করুন এবং তার কাছে ক্ষমা চান। নিশ্চয়ই তিনি বড় ক্ষমাশীল।
শাব্দিক বিশ্লেষণ
اِذَا جَآءَ : (যখন আসবে), অতীতকালীন ক্রিয়া, প্রথম পুরুষ, একবচন, পুংলিঙ্গ। শুরুতে اِذَا সংযোজক অব্যয় আসার কারণে ভবিষ্যৎমূলক অর্থ হয়েছে।

نَصۡرُ : (সাহায্য, সহযোগিতা, পৃষ্ঠপোষকতা), বিশেষ্য, النصر ক্রিয়ামূল হিসেবে অর্থ হবে, সাহায্য করা, সমর্থন করা, পৃষ্ঠপোষকতা করা, সহায়তা করা ইত্যাদি।

الۡفَتۡحُ : (বিজয়, সফলতা, ভিক্টরি), ক্রিয়ামূল, অর্থ হলো খোলা, প্রকাশ করা, উন্মুক্ত করা, শুরু করা, জয় করা ইত্যাদি।

یَدۡخُلُوۡنَ : (তারা প্রবেশ করবে), ভবিষ্যৎকাল, ক্রিয়া, প্রথম পুরুষ, বহুবচন, পুংলিঙ্গ । الدخول ক্রিয়ামূল, অর্থ হলো প্রবেশ করা, অনুপ্রবেশ করা, ঢোকা, অন্তর্ভুক্ত হওয়া, আগমন করা, ভর্তি হওয়া, যোগদান করা ইত্যাদি।

اَفۡوَاجًا : (দলে দলে), বিশেষ্য, একবচন فوخ (দল, বাহিনী), এর বহুবচন افواج ।

فَسَبِّحۡ : (আপনি তাসবীহ পাঠ করুন), আদেশ/অনুরোধসূচক ক্রিয়া, একবচন, পুংলিঙ্গ । (التسبيح) ক্রিয়ামূল, অর্থ হলো পবিত্রতা বর্ণনা করা, প্রশংসা করা, তাসবীহ পাঠ করা, মহিমাকীর্তন করা ইত্যাদি।

اسۡتَغۡفِرۡهُ : (আপনি ক্ষমা প্রার্থনা করুন), আদেশ/অনুরোধসূচক ক্রিয়া, একবচন, পুংলিঙ্গ।

تَوَّابًا : (অধিক তাওবা কবুলকারী), تَوبًا ক্রিয়ামূলের অর্থ হলো তাওবা করা, অনুশোচনা করা, অনুতপ্ত হওয়া, প্রত্যাবর্তন করা, ফিরে আসা ইত্যাদি।

আলোচ্য বিষয়
সূরা নাসরে ইসলামের শক্তি বৃদ্ধি ও বিজয়ের ওপর রাসূলুল্লাহ স.-এর প্রতি আল্লাহর পবিত্রতা ও গুণ বর্ণনা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা ও পরকালের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের আদেশ বিধৃত হয়েছে।

সূরা নাসর এর শানে নুযুল ও নামকরণ
সর্বসম্মতিক্রমে সূরাটি মদীনায় অবতীর্ণ। এই সূরায় মানুষ দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করার সুখবর প্রদান করা হয়েছে। মুসলমানদের বিজয়ের ঘোষণা প্রদান করা হয়েছে। মক্কা বিজয় এর অন্যতম। ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে নুসরত ও সহযোগিতার বর্ণনা হয়েছে। তাই এর নাম সূরা আন নাসর। এই সূরায় রসূলুল্লাহ স.-এর ওফাতের নিকটবর্তী হওয়ার ইঙ্গিত আছে তাই এর একটি নাম ‘তাওদী’ (বিদায়) ও আছে ।

সূরা নাসরের সংক্ষিপ্ত তাফসীর
আয়াত-১. ২.
(১) যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে; (২) এবং আপনি মানুষকে দেখবেন দলে দলে আল্লাহর ধর্মে প্রবেশ করছে। নির্ভরযোগ্য মতানুসারে এই সূরায় আলোচিত বিজয় বলে মক্কা বিজয় বোঝানো হয়েছে। মক্কা বিজয়ের দিকে অধিকাংশ গোত্রের দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল। অনেক গোত্র ইসলামের সৌন্দর্যে মোহিত হলেও মক্কার মুশরিকদের কারণে ইসলাম গ্রহণ করতে সাহস পায়নি। কিন্তু যখন এই মক্কা ইসলামের ছায়াতলে আসে তখন আরব উপদ্বীপের গোত্রগুলো দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করতে থাকে। ইসলাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ইয়ামেন থেকে সাতশত লোক ইসলাম গ্রহণ করে পথিমধ্যে আযান দিতে দিতে ও কুরআন পাঠ করতে করতে মদীনায় উপস্থিত হয়। সাধারণ আরবরাও এমনিভাবে দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করে।

আয়াত-৩.
(৩) তখন আপনি আপনার প্রতিপালকের প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করুন। দ্বীন ইসলামের পূর্ণতা এবং আল্লাহর নবুওয়াত রিসালত তথা খিলাফতের যে দায়িত্ব আপনার ওপর অর্পিত ছিল, তা পূর্ণতা লাভ করেছে। তাই এখন আপনি আখিরাতের জন্য প্রস্তুতি নিন। অতএব আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি মনোনিবেশ করুন। আগের তুলনায় তাসবীহ, তাহলীল, আল্লাহর গুণকীর্তন ও তাওবা বৃদ্ধি করুন। আল্লাহ আপনাকে যে সাহায্য করেছেন এবং বিজয় দান করেছেন তার জন্য আল্লাহর প্রশংসা করুন।

উল্লেখ্য যে, উল্লিখিত আয়াতে নবীজি স.-কে তাওবা করার যে নির্দেশনা দিয়েছে তা এ জন্য নয় যে, তিনি কোনো অপরাধ বা গুনাহ করেছেন বরং এ জন্য যে, তার মাধ্যমে উম্মতগণ তাওবার পদ্ধতি শিখবে। মৃত্যু নিকটবর্তী হলে বেশি বেশি পরিমাণে তাসবীহ ও ইস্তিগফার করা উচিত। আর তা ছাড়া তাওবা করা বান্দাদের, বিশেষত তাঁর প্রিয় হাবীবের জন্য মর্যাদাপূর্ণ বিষয়। এর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য বৃদ্ধি হয়। আয়েশা রা. বলেন, এই সূরা অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ স. প্রত্যেক নামাযের পর এই দোয়া পাঠ করতেন-سبحانك ربنا ويحميك اللهم اغفرلي (সহীহ বুখারী-৪৯৬৭)

হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, এই সূরা অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ স. আপ্রাণ চেষ্টা সহকারে ইবাদতে মনোনিবেশ করেন। ফলে তাঁর পা দুটি ফুলে যেত। (কুরতুবী)

নির্দেশনা
১. এ সূরায় রাসূলুল্লাহ স.-এর রিসালতের দায়িত্ব পূর্ণতা পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তিনি অচিরেই ইহকালীন জীবন শেষ করে অপার জগতে পাড়ি দেবেন তার ইঙ্গিত রয়েছে।

২. তাওবার মাধ্যমে গুনাহ মাফ হয়, বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। সুতরাং সর্বদা তাওবা ইস্তিগফারের মধ্যে রত থাকা উচিত। বিশেষ করে যারা বার্ধক্যে উপনীত হয়েছে, মৃত্যু নিকটে এসে পড়েছে তাদের জন্য আরো উত্তমভাবে আল্লাহমুখী হওয়া উচিত।

30/03/2024

সুরাঃআদ দোহা
আয়ত নংঃ১১
নাজিলের সময়কালঃ মক্কী

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِবিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।

وَالضُّحَىٰঅদ্ব্দ্বুহা১) উজ্জ্বল দিনের কসম।وَاللَّيْلِ إِذَا سَجَىٰঅল্লাইলি ইযা- সাজ্বা২) এবং রাতের কসম যখন তা নিঝুম হয়ে যায়।مَا وَدَّعَكَ رَبُّكَ وَمَا قَلَىٰমা অদ্দা‘আকা রব্বুকা অমা- ক্বলা৩) ( হে নবী !) তোমার রব তোমাকে কখনো পরিত্যাগ করেননি এবং তোমার প্রতি অসন্তুষ্টও হননি।وَلَلْآخِرَةُ خَيْرٌ لَّكَ مِنَ الْأُولَىٰঅলাল্ আ-খিরাতু খাইরুল্লাকা মিনাল্ ঊলা৪) নিসন্দেহে তোমার জন্য পরবর্তী যুগ পূর্ববর্তী যুগের চেয়ে ভালো।وَلَسَوْفَ يُعْطِيكَ رَبُّكَ فَتَرْضَىٰঅলাসাওফা ইয়ু’ত্বীকা রব্বুকা ফার্তাদ্বোয়া৫) আর শীঘ্রই তোমার রব তোমাকে এত দেবেন যে , তুমি খুশী হয়ে যাবে।أَلَمْ يَجِدْكَ يَتِيمًا فَآوَىٰআলাম্ ইয়াজ্বিদ্কা ইয়াতীমান্ ফাআ-ওয়া৬) তিনি কি তোমাকে এতিম হিসেবে পাননি? তারপর তোমাকে আশ্রয় দেননি?وَوَجَدَكَ ضَالًّا فَهَدَىٰঅওয়াজ্বাদাকা দ্বোয়া-ল্লান্ ফাহাদা৭) তিনি তোমাকে পথ না পাওয়া অবস্থায় পান, তারপর তিনিই পথ দেখান।وَوَجَدَكَ عَائِلًا فَأَغْنَىٰঅওয়াজ্বাদাকা ‘আ-য়িলান্ ফাআগ্না৮) তিনি তোমাকে নিঃস্ব অবস্থায় পান, তারপর তোমাকে ধনী করেন।فَأَمَّا الْيَتِيمَ فَلَا تَقْهَرْফাআম্মাল্ ইয়াতীমা ফালা-তাক্বরর্হা৯) কাজেই এতিমের প্রতি কঠোর হয়ো না।وَأَمَّا السَّائِلَ فَلَا تَنْهَرْঅআম্মাস্ সা-য়িলা ফালা-তার্ন্হা১০) প্রার্থীকে তিরস্কার করো না।وَأَمَّا بِنِعْمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّثْঅ আম্মা-বিনি’মাতি রব্বিকা ফাহাদ্দিছ্১১) আর নিজের রবের নিয়ামত প্রকাশ করো।

বিষয়বস্তু :
এই সূরাতে দু’টি বিষয়বস্তু রয়েছে।
(১) দিবস ও রাত্রির কসম করে আল্লাহ বলছেন যে, তিনি তাঁর রাসূলের সাথে কখনোই সম্পর্কচ্ছেদ করেননি বা তাঁর প্রতি রুষ্ট হননি। বরং আশ্বাস রয়েছে এই মর্মে যে, পূর্বের চাইতে আগামীতে তাঁর প্রতি অনুগ্রহ এবং অহি-র অবতরণ আরও বৃদ্ধি পাবে এবং তাতে তিনি আরও খুশী হবেন (১-৫ আয়াত)।
(২) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপরে বিগত দিনে কৃত কয়েকটি অনুগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রমাণ পেশ করা হয়েছে যে, আগামী দিনেও তা অব্যাহত থাকবে। অতঃপর রাসূল (ছাঃ)-কে উক্ত নে‘মতসমূহের শুকরিয়া আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে (৬-১১ আয়াত)।

গুরুত্ব :
একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মু‘আয বিন জাবালকে বলেন, তুমি কি ছালাতে সূরা আ‘লা, ফজর, শাম্স, লায়েল, যোহা পড়তে পারো না’? [1]

শানে নুযূল :
হযরত জুনদুব বিন আব্দুল্লাহ বিন সুফিয়ান আল-বাজালী (রাঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অসুস্থতার কারণে দু’রাত বা তিনরাত তাহাজ্জুদের জন্য উঠতে পারেননি। তাতে জনৈকা মহিলা[2] এসে বলল,يَا مُحَمَّدُ مَا أَرَى شَيْطَانَكَ إِلاَّ قَدْ تَرَكَكَ ‘হে মুহাম্মাদ! আমি মনে করি তোমার শয়তানটা তোমাকে ছেড়ে গেছে’। তখন এই সূরাটি নাযিল হয়’।[3] উল্লেখ্য যে, জুনদুব বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) মাদানী ছাহাবী ছিলেন। এখানে বর্ণিত ঘটনাটি মক্কার। তিনি এটি অন্য ছাহাবী থেকে শুনে বর্ণনা করে থাকবেন। হাদীছের পরিভাষায় একে ‘মুরসাল ছাহাবী’ বলা হয়। যা গ্রহণযোগ্য। কেননা হাদীছ বর্ণনার ক্ষেত্রে সকল ছাহাবী ন্যায়নিষ্ঠ।

একটি প্রথা :
ক্বিরাআত শাস্ত্রের ইমাম বলে খ্যাত আবুল হাসান আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ ইবনু কাছীর আবু বাযা আল-মুক্বরী হ’তে একক সূত্রে বর্ণিত একটি প্রথা এই যে, সূরা যোহা থেকে আম্মাপারার সর্বশেষ সূরা নাস পর্যন্ত ক্বারী প্রতিটি সূরা শেষে ‘আল্লাহু আকবর’ বলবেন। কেউ বলেছেন ঐ সাথে যোগ করবেন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবর’। কেউ বলেছেন, সূরা লায়েল-এর শেষ থেকে তাকবীর বলতে হবে।[4]
ক্বারীগণ বলে থাকেন, সাময়িক বিরতি শেষে জিব্রীল যখন এই সূরাটি নিয়ে আগমন করেন এবং শেষ পর্যন্ত পাঠ করেন, তখন আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) খুশীতে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে ওঠেন’। ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, এই বর্ণনার পক্ষে তাঁরা কোন সনদ উল্লেখ করেননি, যার ভিত্তিতে ছহীহ বা যঈফ নির্ধারণ করা যেতে পারে (তাফসীর ইবনু কাছীর)।[5]
ইমাম কুরতুবী বলেন, কুরআনের প্রতিটি সূরা, আয়াত ও বর্ণ মুতাওয়াতির যা অবিরত ধারায় বর্ণিত হয়েছে। তাতে কোনরূপ কমবেশী হওয়ার সুযোগ নেই। অতএব বর্ণিত ‘তাকবীর’ কখনোই কুরআনের অংশ নয়। ‘বিসমিল্লাহ’ যেখানে প্রতি সূরার শুরুতে প্রথম থেকেই লিখিত থাকা সত্ত্বেও তা কুরআনের অংশ নয়। তাহ’লে ‘তাকবীর’ কিভাবে কুরআনের অংশ হবে, যা লিখিত নেই? এটি এককভাবে বর্ণিত একটি প্রথা হিসাবে চালু হয়েছে, যা ক্বারী আব্দুল্লাহ ইবনু কাছীর পসন্দ করেছেন। তিনি এটাকে ওয়াজিব বলেননি, যা পরিত্যাগ করা অন্যায় হবে (কুরতুবী)।

তাফসীর :
(১-২) وَالضُّحَى، وَاللَّيْلِ إِذَا سَجَى ‘শপথ পূর্বাহ্নের’। ‘শপথ রাত্রির, যখন তা নিথর হয়’।
আরবদের পরিভাষায় সূর্যোদয়ের স্বল্পকালীন পরবর্তী সময়কে ‘যোহা’ বলা হয় (কুরতুবী)। অনেকে পুরা দিবসকে ‘যোহা’ বলেছেন (কুরতুবী, ইবনু কাছীর, তানতাভী)। যেমন আল্লাহ বলেন, أَوَ أَمِنَ أَهْلُ الْقُرَى أَنْ يَّأْتِيَهُمْ بَأْسُنَا ضُحًى وَّهُمْ يَلْعَبُوْنَ- ‘আর জনপদের লোকেরা কি নিশ্চিন্ত হয়ে গেছে যে, তাদের উপর আমার আযাব এসে পড়বে দিনের বেলায়, যখন তারা থাকবে খেলাধুলায় মত্ত’ (আ‘রাফ ৭/৯৮)।
سَجَا يَسْجُوْ سَجْوًا ‘রাত্রি নিথর হওয়া’।إِذَا سَجَى অর্থ إذا سكن أهله وأصواتهم فيه ‘যখন এর অধিবাসীগণ ও তাদের আওয়াযসমূহ নীরব হয়ে যায়’ (তানতাভী)। অর্থাৎ রাত্রি যখন গভীর হয়। যেমন অন্যত্র আল্লাহ বলেন, وَجَعَلَ اللَّيْلَ سَكَنًا ‘এবং রাতকে করেছেন নিথর’ (আন‘আম ৬/৯৬)।
আল্লাহ এখানে সূর্য করোজ্জ্বল দিবসের এবং তার বিপরীত নিকষ কালো আঁধারে ঢাকা নিষুতি রাতের শপথ করার মাধ্যমে একদিকে যেমন তাঁর অসীম কুদরত ও ক্ষমতার পরিচয় তুলে ধরেছেন, অন্যদিকে তেমনি বান্দাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, তোমার শব্দমুখর যবান ও কর্মমুখর জীবনের যখন অবসান হবে, তখন নীরব ও নিঃশব্দ রাতের মত তোমার শক্তিহীন, শব্দহীন ও প্রাণহীন লাশটি পড়ে থাকবে অসহায়ভাবে দাফনের অপেক্ষায়। অতএব হে বান্দা! প্রতিদিন সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত এবং দিবস ও রাত্রির আগমন ও নির্গমন থেকে শিক্ষা নাও। মহাশক্তিধর আল্লাহকে ভয় কর ও তাঁর উপরে মিথ্যারোপ বন্ধ কর।

(৩) مَا وَدَّعَكَ رَبُّكَ وَمَا قَلَى ‘তোমার পালনকর্তা তোমাকে ত্যাগ করেননি বা তোমার উপরে বিরূপ হননি’।
অর্থাৎ কাফেরদের মিথ্যাচার ও অপপ্রচার অনুযায়ী তোমার প্রভু তোমাকে পরিত্যাগ করেননি বা তোমার উপরে রুষ্ট হননি। এখানে ইবনু আববাস ও ইবনু যুবায়ের (রাঃ) ‘তাশদীদ’ ছাড়াই مَا وَدَعَكَ পড়েছেন। যার অর্থ مَا تَرَكَكَ ‘তোমাকে পরিত্যাগ করেননি’। তবে অন্য সবাই ما وَدَّعَكَ তাশদীদযুক্ত পড়েছেন। যার অর্থ مَا قَطَعَكَ قَطْعَ المودِّع ‘তোমাকে ছাড়েননি বিদায় দানকারীর বিদায়ের ন্যায়’ (কুরতুবী)।
وَماَ قلَى অর্থ وما أبغضك ‘তোমার প্রতি রুষ্ট হননি’। আসলে হওয়া উচিত ছিল وَمَا قَلاَكَ কিন্তু পূর্বের ক্রিয়ায় كَ উল্লেখিত হওয়ায় এবং আয়াতের শেষে হওয়ায় অলংকার শাস্ত্রের বিধি অনুযায়ী এখানে كَ কর্মপদ বিলুপ্ত করা হয়েছে। যেমন অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, وَالذَّاكِرِيْنَ اللهَ كَثِيْراً وَّالذَّاكِرَاتِ ‘আল্লাহকে স্মরণকারী পুরুষ ও নারীগণ’ (আহযাব ৩৩/৩৫)। এখানে শেষে اللهَ কর্মপদ উল্লেখ করা হয়নি পূর্বে উল্লেখিত হওয়ার কারণে।
এ আয়াত নাযিলের মাধ্যমে রাসূল (ছাঃ)-কে এ বিষয়ে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, যখন থেকে আল্লাহ তোমাকে ভালবেসেছেন এবং তোমার উপরে ‘অহি’ নাযিল শুরু হয়েছে, তখন থেকে আল্লাহ কখনোই তোমার উপরে রুষ্ট বা বিরূপ হননি। বরং সর্বদা তোমার উপরে তাঁর অনুগ্রহ বর্ষিত হ’তে থাকবে। দিবস ও রাত্রির শপথের মধ্যে এ গূঢ় রহস্য লুকিয়ে রয়েছে যে, যে রাসূল সারা দিন কঠিন বিরোধিতার মুখে তাওহীদের দাওয়াত দেন এবং রাতের বেলায় আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে তাহাজ্জুদের ছালাতে মগ্ন থাকেন, দয়ালু আল্লাহ কি কখনো সেই রাসূলকে পরিত্যাগ করতে পারেন?

(৪) وَلَلْآخِرَةُ خَيْرٌ لَّكَ مِنَ الْأُولَى ‘নিশ্চয় পরকাল তোমার জন্য ইহকালের চাইতে শ্রেয়।
এটি পৃথক বক্তব্য হিসাবে এসেছে এবং শুরুতে لام تاكيد এনে বাক্যটিকে নিশ্চয়তা বোধক করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, আখেরাত নিশ্চিতভাবে দুনিয়ার চাইতে উত্তম। কেননা আল্লাহ বলেন, أَعْدَدْتُ لِعِبَادِى الصَّالِحِيْنَ مَا لاَ عَيْنَ رَأَتْ، وَلاَ أُذُنَ سَمِعَتْ، وَلاَ خَطَرَ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ، فَلاَ تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ‘আমি আমার নেককার বান্দাদের জন্য এমন সব পুরস্কার প্রস্তুত করে রেখেছি, যা কোন চক্ষু কখনো দেখেনি, কর্ণ কখনো শোনেনি, মানুষের হৃদয় কখনো কল্পনা করেনি’। ‘কোন মানুষ জানেনা তার কৃতকর্মের পুরস্কার হিসাবে তার জন্য চক্ষু শীতলকারী কত বস্তু লুক্কায়িত রয়েছে’।[6] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, জান্নাতের একটি চাবুক রাখার স্থান দুনিয়া ও তার মধ্যকার সবকিছুর চাইতে উত্তম’।[7]
মিথ্যারোপ, অপবাদ, গালি, ছিদ্রান্বেষণ- এগুলি সব ইহকালীন জীবনের অনুষঙ্গ। এগুলিতে ধৈর্য ধারণের বিনিময়ে পরকালে রয়েছে অফুরন্ত শান্তি। ইহকালের ক্ষণস্থায়ী কষ্টকর জীবনের বিপরীতে পরকালের চিরস্থায়ী শান্তির জীবন নিঃসন্দেহে উত্তম। অতএব আল্লাহ সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, হে রাসূল! কাফেরদের দেয়া অপবাদে দুঃখিত ও মর্মাহত হবেন না।
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একটি চাটাইয়ের উপরে শুয়েছিলেন। তাতে তাঁর পিঠে দাগ পড়ে যায়। তিনি জেগে উঠলে আমি তাঁর পিঠে হাত বুলাতে লাগলাম এবং বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! যদি আপনি আমাদের অনুমতি দিতেন, যাতে আমরা আপনার চাটাইয়ের উপর (নরম) কিছু বিছিয়ে দেই। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, مَا لِيْ وَلِلدُّنْيَا مَا أَنَا وَالدُّنْيَا إِنَّمَا مَثَلِي وَمَثَلُ الدُّنْيَا كَرَاكِبٍ ظَلَّ تَحْتَ شَجَرَةٍ ثُمَّ رَاحَ وَتَرَكَهَا- ‘আমার জন্যই বা কি? আর দুনিয়ার জন্যই বা কি? আমিই বা কি? আর দুনিয়াই বা কি? আমার ও দুনিয়ার তুলনা তো একজন সওয়ারীর ন্যায়, যে গাছের ছায়াতলে আশ্রয় নিল। অতঃপর রওয়ানা হ’ল ও তাকে ছেড়ে গেল’।[8]

(৫) وَلَسَوْفَ يُعْطِيْكَ رَبُّكَ فَتَرْضَى ‘তোমার পালনকর্তা সত্বর তোমাকে দান করবেন। অতঃপর তুমি সন্তুষ্ট হয়ে যাবে’।
سوف তাকীদ ও নিশ্চয়তার জন্য এসেছে। যা আখেরাতে হবে। ইবনু কাছীর বলেন, আখেরাতে তাঁকে উচ্চ সম্মান প্রদান করা হবে এবং তাঁর উম্মতের ব্যাপারে তাঁকে সন্তুষ্ট করা হবে’। আখেরাতে দেওয়া সম্মানসমূহের মধ্যে প্রধান হ’ল হাউয কাওছার দান ও সমগ্র মানবজাতির জন্য শাফা‘আতের অনুমতি প্রদান। যাকে কুরআনে ‘মাক্বামে মাহমূদ’ বা ‘সর্বোচ্চ প্রশংসিত স্থান’ বলা হয়েছে।[9]
ইবনু ইসহাক বলেন, যার অর্থ হ’ল الفَلْج فى الدنيا والثواب فى الآخرة ‘দুনিয়াতে সফলতা ও আখেরাতে উত্তম প্রতিদান’ (কুরতুবী)। বস্ত্ততঃ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জীবনে দুনিয়াতেও সফলতা ছিল এবং আখেরাতে তো সফলতা আছেই।

(৬) أَلَمْ يَجِدْكَ يَتِيْماً فَآوَى ‘তিনি কি তোমাকে ইয়াতীমরূপে পাননি? অতঃপর তিনি আশ্রয় দিয়েছেন’।
এখান থেকে পরপর তিনটি আয়াতে আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে সান্ত্বনা দিয়েছেন এবং তাঁকে দুনিয়াতে যেসব নে‘মত ইতিমধ্যে দান করেছেন, সেগুলি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। প্রথম যে বড় অনুগ্রহ তাঁর উপর তিনি করেছিলেন, সেটি এই যে, তিনি পিতৃহীন ইয়াতীমরূপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। অতঃপর মাতৃহারা হন। সেই অসহায় অবস্থায় আল্লাহ তাঁর বৃদ্ধ দাদা ও পরে তাঁর চাচা আবু তালেবের আশ্রয়ে তাঁকে লালন-পালন করেন। দাদা ও চাচার অন্তরে আল্লাহ এমন মহববত ঢেলে দিয়েছিলেন যে, নিজের সন্তানের চাইতে ইয়াতীম মুহাম্মাদের প্রতি তাদের স্নেহ ছিল অপার ও অপরিসীম। এমনকি নবুঅত লাভের পরে প্রচন্ড বিপদ-মুছীবতের মধ্যেও বৃদ্ধ চাচা আবু তালেব-এর মধ্যে সেই স্নেহের সামান্যতম ঘাটতি দেখা যায়নি। কেবলমাত্র ভাতিজার মহববতে চাচা আবু তালেব তিনটি বছর কুরায়েশদের কঠিন বয়কট ও অন্নবস্ত্রের কষ্ট সহ্য করেছেন। তথাপি ভাতিজাকে ছাড়েননি। সেই সাথে বনু হাশেম গোত্র ইসলাম কবুল না করা সত্ত্বেও রাসূল (ছাঃ)-এর নিরাপত্তায় তারা ছিল অটুট দেওয়ালের মত। বস্তুত এসবই ছিল আল্লাহর অদৃশ্য ব্যবস্থাপনার ফল। এখানে কোন যুক্তি বা বস্তুগত ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব নয়।

(৭) وَوَجَدَكَ ضَالاًّ فَهَدَى ‘তিনি তোমাকে পেয়েছিলেন পথ সম্পর্কে অনবহিত। অতঃপর তোমাকে পথ প্রদর্শন করেছেন’।
এখানে ضَالاًّ অর্থ غير عالم ‘অনবহিত’। কেননা অহি নাযিলের পূর্বে রাসূল (ছাঃ) শরী‘আতের কিছুই জানতেন না। যেমন আল্লাহ বলেন, وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ ‘এবং তিনি তোমাকে শিখিয়েছেন, যা তুমি জানতে না’ (নিসা ৪/১১৩)। فَهَدَى অর্থ فَأَرْشَدَكَ ‘অতঃপর তোমাকে পথ প্রদর্শন করেছেন’ (কুরতুবী)।
অর্থাৎ ইতিপূর্বে তুমি ইসলামী শরী‘আত বিষয়ে অবগত ছিলে না। অতঃপর আল্লাহ তোমাকে নবুঅতের মাধ্যমে পথ প্রদর্শন করেছেন। যেমন অন্যত্র আল্লাহ বলেন,مَا كُنْتَ تَدْرِيْ مَا الْكِتَابُ وَلاَ الْإِيْمَانُ ‘তুমি জানতে না কিতাব কি বা ঈমান কি?’ (শূরা ৪২/৫২)। মক্কায় অবতীর্ণ সূরা ইউসুফের শুরুতে উক্ত কাহিনী বর্ণনার সূচনায় আল্লাহপাক স্বীয় রাসূলকে বলছেন, وَإِن كُنْتَ مِنْ قَبْلِهِ لَمِنَ الْغَافِلِيْنَ ‘যদিও তুমি ইতিপূর্বে ছিলে এ বিষয়ে অনবহিতদের অন্তর্ভুক্ত’ (ইউসুফ ১২/৩)। অর্থাৎ তুমি এ বিষয়ে কিছু জানতে না।
অনুরূপভাবে আলোচ্য আয়াতে وَوَجَدَكَ ضَالاًّ অর্থ তিনি তোমাকে পেয়েছিলেন সঠিক পথ সম্পর্কে অনবহিত। অতঃপর তিনি তোমাকে ইসলামের পথ প্রদর্শন করেন।
এখানে ضَالاًّ অর্থ ‘পথভ্রষ্ট’ নয়। কেননা পথভ্রষ্ট সেই ব্যক্তিকে বলা হয়, যিনি পথ পেয়েও পথ হারান। কোন রাসূলের জীবনে এমন কিছু ঘটার প্রশ্নই ওঠে না।
فَهَدَى অর্থ فَهَدَاكَ ‘অতঃপর তোমাকে পথ প্রদর্শন করেছেন’। তবে এর অর্থ আরও ব্যাপক। فَهَدَاكَ وَهُدِىَ بِكَ ‘তিনি তোমাকে পথ প্রদর্শন করেছেন ও তোমার মাধ্যমে অন্যকে পথ দেখিয়েছেন’। ফলে তিনি هَادٍ وَمَهْدِىٌ ‘পথ প্রদর্শক ও পথপ্রাপ্ত’।

(৮) وَوَجَدَكَ عَائِلاً فَأَغْنَى ‘তিনি তোমাকে পেয়েছিলেন নিঃস্ব। অতঃপর অভাবমুক্ত করেছেন’।
অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে রিক্তহস্ত পেয়েছিলেন। অতঃপর তোমাকে অভাবমুক্ত করেন। প্রথমে খাদীজার ব্যবসায়ে অংশীদারী কারবারের মাধ্যমে এর সূচনা হয়। অতঃপর বিবাহের পর খাদীজা (রাঃ)-এর সমস্ত ধন-সম্পদ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর খিদমতে উৎসর্গিত হয়।
ক্বাতাদাহ বলেন, উপরে বর্ণিত তিনটি অবস্থা ছিল রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নবুঅত-পূর্বকালের তিনটি স্তর বিশেষ (ইবনু কাছীর)। তবে নবুঅত-পরবর্তীকালে জিহাদে গণীমত লাভের ফলে তিনি ও মুসলমানগণ অভাবমুক্ত হয়েছিলেন।

(৯) فَأَمَّا الْيَتِيْمَ فَلاَ تَقْهَرْ ‘অতএব তুমি ইয়াতীমের প্রতি কঠোর হবে না’।
قَهَرَ يَقْهَرُ قَهْرًا অর্থ ‘বিজয়ী হওয়া’। যেমন আল্লাহ বলেন, وَهُوَ الْقَاهِرُ فَوْقَ عِبَادِهِ وَهُوَ الْحَكِيْمُ الْخَبِيْرُ ‘তিনি তাঁর বান্দাদের উপরে পরাক্রান্ত। তিনি প্রজ্ঞাময় ও সর্বজ্ঞ’ (আন‘আম ৬/১৮)। এখানে فَلاَ تَقْهَرْ অর্থ لاَ تَسَلَّطْ عَلَيْهِ بِالظُّلْمِ وَلاَ تَحْتَقِرْ ‘যুলুমের মাধ্যমে তার উপর চেপে বসো না বা তাকে লাঞ্ছিত করো না’ (কুরতুবী)। আদব শিক্ষা দেওয়ার জন্য কঠোরতা এই নিষেধের অন্তর্ভুক্ত নয়।
পূর্বের তিনটি আয়াতে তিনটি নে‘মতের বর্ণনা দেওয়ার পর এক্ষণে রাসূল (ছাঃ)-কে তিনটি বিষয়ের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।
যার প্রথমটি হ’ল, তুমি কোন ইয়াতীমের উপরে কঠোর হবে না। কেননা তুমি নিজেই ইয়াতীম ছিলে। বস্তুত আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) মা-বাপ হারানোর শূন্যতা ভালভাবে বুঝতেন। যদিও এর বেদনা তাঁকে বুঝতে দেননি তাঁর স্নেহময় দাদা ও চাচাগণ। সাহল বিন সা‘দ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, أَنَا وَكَافِلُ الْيَتِيمِ لَهُ وَلِغَيْرِهِ كَهَاتَيْنِ فِى الْجَنَّةِ ‘আমি ও ইয়াতীমের অভিভাবক, তার বা অন্যের, জান্নাতে পাশাপাশি থাকব এই দু’টি আঙ্গুলের মত। এসময় তিনি শাহাদাত ও মধ্যমা আঙ্গুলী দু’টি পাশাপাশি রেখে ইশারা করেন।[10]
আবুদ্দারদা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট জনৈক ব্যক্তি নিজের কঠোর হৃদয়ের অভিযোগ পেশ করলে রাসূল (ছাঃ) তাকে বলেন, إِنْ أَرَدْتَ أَنْ تَلْيِيْنَ قَلْبَكَ فَأَطْعِمِ الْمِسْكِينَ وَامْسَحْ رَأْسَ الْيَتِيمِ ‘যদি তুমি তোমার হৃদয়কে নরম করতে চাও, তাহ’লে মিসকীনকে খাওয়াও এবং ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলাও’।[11] ইবনু ওমর (রাঃ) কোন ইয়াতীমকে দেখলে মাথায় হাত বুলাতেন এবং তাকে কিছু উপহার দিতেন (কুরতুবী)। ক্বাতাদাহ বলেন, كُنْ لِلْيَتِيْمِ كَالْأَبِ الرَّحِيْمِ- ‘ইয়াতীমের জন্য তুমি হও দয়াশীল পিতার মত’ (ইবনু কাছীর)।

(১০) وَأَمَّا السَّائِلَ فَلاَ تَنْهَرْ ‘এবং সাহায্যপ্রার্থীকে ধমকাবে না’।
نَهَرَ يَنْهَرُ نَهْرًا -السَّائِلَ ‘প্রার্থীকে ধমকানো’। সেখান থেকে لاَ تَنْهَرْ অর্থ لاَ تَزْجُرْ ‘ধমকাবে না’। এটি হ’ল দ্বিতীয় বিষয়।
সাহায্যপ্রার্থী ফকীর-মিসকীন অসহায় কিংবা বিপদগ্রস্ত যেই-ই হৌক না কেন, তার প্রতি কঠোর আচরণ করা যাবে না। সে মনে ব্যথা পায় এমন ব্যবহার করা যাবে না। সাহায্য দু’ধরনের হ’তে পারে জ্ঞানগত ও বস্ত্তগত। যদি কেউ শরী‘আত বা আখেরাতের বিষয় জানতে চায়, তাহ’লে তার প্রতি সদয় হওয়ার জন্য রাসূল (ছাঃ)-কে সূরা ‘আবাসায় বিশেষভাবে তাকীদ দেওয়া হয়েছে। ফলে রাসূল (ছাঃ)-এর চরিত্র এমনভাবে গড়ে উঠেছিল যে, চরম ক্রুদ্ধ অবস্থায়ও তিনি নিজেকে সংযত রাখতেন। আল্লাহ বলেন, وَلَوْ كُنْتَ فَظاًّ غَلِيْظَ الْقَلْبِ لاَنْفَضُّواْ ‘যদি তুমি কর্কশভাষী ও কঠোর হৃদয় হতে, তাহ’লে লোকেরা তোমার পাশ থেকে সরে যেত’ (আলে ইমরান ৩/১৫৯)।
অপারগ অবস্থায় কিছু দিতে না পারলে সে অবস্থায় আল্লাহ বলেন, وَإِمَّا تُعْرِضَنَّ عَنْهُمُ ابْتِغَاءَ رَحْمَةٍ مِّنْ رَّبِّكَ تَرْجُوْهَا فَقُلْ لَّهُمْ قَوْلاً مَّيْسُوْراً- ‘তোমার পালনকর্তার করুণার প্রত্যাশায় থাকাকালে যদি কোন সময় তাদেরকে বিমুখ করতে হয়, তা’হলে তাদের সাথে নম্রভাবে কথা বলো’ (বনী ইস্রাঈল ১৭/২৮)। ক্বাতাদাহ বলেন, আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে উপদেশ দিচ্ছেন যে, رد المسكين برحمة ولين ‘(বাধ্যগত অবস্থায়) মিসকীনকে ফিরাও দয়া ও নম্রতার সাথে’ (ইবনু কাছীর)। তবে সংশোধন ও কল্যাণের স্বার্থে কঠোর হওয়াটা এই নিষেধের অন্তর্ভুক্ত নয়।

(১১) وَأَمَّا بِنِعْمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّثْ ‘অতঃপর তুমি তোমার পালনকর্তার অনুগ্রহের কথা বর্ণনা কর’।
অর্থ اشكر لنعمة ربك عليك ‘তোমার উপর তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ সমূহের শুকরিয়া আদায় কর’। এটি হ’ল তৃতীয় বিষয়, যা আল্লাহ আদেশ করেছেন।
এখানে নির্দেশ নবীর প্রতি হ’লেও তা সকলের প্রতি প্রযোজ্য। আল্লাহর অনুগ্রহে মানুষ দুনিয়াতে এসেছে ও চলাফেরা করছে। মানুষের উপরে আল্লাহর অনুগ্রহের শেষ নেই। অতএব প্রত্যেক মানুষের উপরে অবশ্য কর্তব্য হ’ল প্রতি মুহূর্তে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা।
মুজাহিদ বলেন, এখানে রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি বিশেষ অনুগ্রহ হ’ল- নবুঅত ও কুরআন (ইবনু কাছীর), যা কেবল রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য নয়, সমগ্র মানবজাতির জন্য সর্বশেষ ও শ্রেষ্ঠতম নে‘মত। এই নে‘মতের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও প্রচার-প্রসার করাই হ’ল আল্লাহর সবচেয়ে বড় কৃতজ্ঞতা বর্ণনা। আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে বলেন, يَا أَيُّهَا الرَّسُوْلُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَّبِّكَ وَإِنْ لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ- ‘হে রাসূল! তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হ’তে তোমার নিকটে যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা তুমি পৌঁছে দাও। যদি তুমি তা না কর, তাহ’লে তুমি তাঁর রিসালাত পৌঁছে দিলে না’ (মায়েদাহ ৫/৬৭)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ ‘তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ সেই ব্যক্তি, যে কুরআন শিক্ষা করে ও অন্যকে শেখায়’।[12] তিনি আরও বলেন, بَلِّغُوا عَنِّى وَلَوْ آيَةً ‘একটি আয়াত জানলেও তা তোমরা আমার পক্ষ থেকে পৌঁছে দাও’।[13]
কুরআন ও হাদীছ ছাড়াও অন্যান্য নে‘মতের শুকরিয়া আদায় করা যরূরী। আমর বিন মায়মূন তার কোন বিশ্বস্ত ভাইকে পেলে বলতেন, গতকাল আল্লাহ আমাকে ছালাত আদায়ের তাওফীক দিয়েছেন বা অমুক নেকীর কাজ করার অনুগ্রহ দান করেছেন’। এমনিতরো অভ্যাস আবু ফেরাস আব্দুল্লাহ বিন গালিব সহ অনেক মনীষীর ছিল (কুরতুবী)। উদ্দেশ্য ছিল উক্ত আয়াতের হুকুম অনুযায়ী আল্লাহর নে‘মতের শুকরিয়া বর্ণনা করা।
মালেক বিন নাযলাহ (রাঃ) বর্ণিত একটি হাদীছে এসেছে যে, একদিন জনৈক ব্যক্তি জীর্ণবস্ত্র পরিধান করে রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে এলো। রাসূল (ছাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, أَلَكَ مَالٌ؟ ‘তোমার কি মাল-সম্পদ আছে’? লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! সকল প্রকারের মাল আছে। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে বললেন, إِذَا آتَاكَ اللهُ مَالاً فَلْيُرَ عَلَيْكَ ‘যখন আল্লাহ তোমাকে মাল দিয়েছেন, তখন তার নিদর্শন তোমার উপরে প্রকাশ পাওয়া উচিত’।[14]
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বর্ণিত অন্য একটি হাদীছে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنَّ اللهَ جَمِيْلٌ يُحِبُّ الْجِمَالَ وَيُحِبُّ أَنْ يَّرَى أَثْرَ نِعْمَتِهِ عَلَى عَبْدِهِ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সুন্দর। তিনি সৌন্দর্যকে পসন্দ করেন এবং স্বীয় বান্দার উপরে তাঁর নে‘মতের নিদর্শন দেখতে ভালবাসেন’।[15]
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لاَ يَشْكُرُ اللهَ مَنْ لاَ يَشْكُرُ النَّاسَ ‘যে ব্যক্তি মানুষের শুকরিয়া আদায় করে না, সে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে না’।[16] অর্থাৎ মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করাটা হ’ল আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকারের পূর্বশর্ত।
জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
مَنْ أُعْطِىَ عَطَاءً فَوَجَدَ فَلْيَجْزِ بِهِ وَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَلْيُثْنِ فَإِنَّ مَنْ أَثْنَى فَقَدْ شَكَرَ وَمَنْ كَتَمَ فَقَدْ كَفَرَ–
‘যে ব্যক্তি কিছু দান করল, অতঃপর সে তা পেল। তার উচিত হ’ল বিনিময়ে কিছু প্রদান করা (অর্থাৎ দো‘আ করা)। যদি কিছু না পায়, তাহ’লে তার উচিত প্রশংসা করা। কেননা যে ব্যক্তি প্রশংসা করল, সে ব্যক্তি শুকরিয়া আদায় করল। আর যে ব্যক্তি চুপ থাকল, সে অকৃতজ্ঞ হলো’

11/03/2024

সূরা আছর سورة العصر এর দারস

”শুরু করছি আল্লাহ তা’আলার নামে, যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।”
(١)- وَٱلْعَصْرِ
(১) কসম যুগের (সময়ের)।
(٢)- إِنَّ ٱلْإِنسَٰنَ لَفِى خُسْرٍ
(২) নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত।
(٣)- إِلَّا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّٰلِحَٰتِ وَتَوَاصَوْا۟ بِٱلْحَقِّ وَتَوَاصَوْا۟ بِٱلصَّبْرِ
(৩) কিন্তু তারা নয়; যারা বিশ্বাস স্থাপন ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের ও সবরের তাকিদ করে।
শাব্দিক বিশ্লেষণ
وَٱلْعَصْرِ : যুগ, কাল সময়। এর সঙ্গে নির্দিষ্ট অর্থ বোঝাতে ال (টি) শুরুতে কসম বা শপথ বোঝাতে و (শপথ) অব্যয় এসেছে। وَٱلْعَصْرِ অর্থ: কালের শপথ ।
خُسْرٍ : (ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, ধ্বংস হওয়া)। আর এর পূর্বে ل ক্রিয়া বিশেষণ এবং অব্যয় فى থাকায় অর্থ হয়েছে অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে আছে।
ٱلصَّٰلِحَٰتِ : বিশেষ্য, স্ত্রীলিঙ্গ বহুবচন। একবচন الصالحة (সৎকর্ম, নেকীর কাজ, কুরআন ও হাদীসের অনুমোদিত কাজসমূহ) এর মূল হলো صلح (সৎ হওয়া, সৎকর্মশীল হওয়া)।
وَتَوَاصَوْا۟ : শব্দটির মূল হলো وصى (যুক্ত করা, যুক্ত হওয়া) আর وَتَوَاصَوْا۟ অর্থ: পরস্পর পরস্পরকে পরামর্শ দেয়। ক্রিয়া, অতীতকাল, প্রথম পুরুষ, পুংলিঙ্গ, বহুবচন।
আলোচ্য বিষয়
সূরা আছরে মানুষের সাফল্য ও কল্যাণ এবং তার ধ্বংস ও সর্বনাশের পথ বর্ণনা করা হয়েছে। সফলতা অর্জনের উপায় হিসেবে চারটি বিষয় আলোচনা করা হয়েছে। ঈমান গ্রহণ, সৎ কর্ম, অপরকে সত্যের উপদেশ প্রদান এবং বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করা।
সুরা আছর এর শানে নুযুল
হাদীসের নির্ভরযোগ্য কোনো কিতাবে সূরা আছরের শানে নুযূল উল্লেখ নেই। এ বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা সমৃদ্ধ গ্রন্থ আসবাবে নুযূলেও কিছু উল্লেখ হয়নি। বস্তুত মানুষের পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে তা অবতরণ হয়েছে।
সূরা আছর এর শব্দ এবং অরত
আয়াত-১.
সময়ের শপথ করে আল্লাহ বলেন, উন্নত গুণ এবং সৌভাগ্য অর্জনের জন্য সময়কে মহামূল্যবান সুযোগ মনে করা উচিত। অথবা عصر দ্বারা এখানে আসর নামায উদ্দেশ্য وَٱلْعَصْرِ আসরের নামাযের সময়ের শপথ। কারণ শরীয়তের দৃষ্টিতে আছরের সময়টি কাজ-কারবারের সময় হওয়ায় আসরের নামায ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই এ সময়ের গুরুত্ব অনেক। অথবা আয়াতে রাসূলুল্লাহ স.-এর বরকতময় যুগের শপথ করা হয়েছে।
আয়াত-২.
যারা পরিণাম সম্পর্কে চিন্তা না করে কাজ করে ব্যর্থতা তাদের পিছু ছাড়ে না। মানুষের উচিত সময়ের মূল্য অনুধাবন করা এবং জীবনের মুহূর্তগুলোকে উদাসীনতায় নষ্ট না করা । যে সময়গুলো মূলত সম্মান লাভ এবং শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের সুযোগ সে সময়টিকে যদি অবহেলায় নষ্ট করা হয় তাহলে বুঝতে হবে মানুষের জীবনে এর চেয়ে বড় ক্ষতি আর কল্পনা করা যায় না। সুতরাং সৌভাগ্যবান তারাই যারা সফলতা অর্জনের চেষ্টায় তৎপর থাকে।
আয়াত-৩.
তবে যারা চারটি কাজ করতে পেরেছে তারা সফলকাম।
১. যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল স.-এর প্রতি এবং রাসূল স. যে হেদায়াত এনেছেন তাঁর প্রতি ।
২. নেক আমল তথা কথা ও কাজে কুরআন-সুন্নাহর পরিপূর্ণ অনুসরণ করেছে।
৩. একে অপরকে সত্য ও ন্যায়ের উপদেশ দিয়েছে।
৪. এবং পরস্পর সকল প্রকার বিপদাপদে এবং হারাম ও নিষিদ্ধ কাজ বর্জনে ধৈর্যধারণের উপদেশ দিয়েছে । যারা এই চারটি গুণ অর্জন করতে পারে তারাই সকল প্রকার ক্ষতি থেকে মুক্ত ।
সময়ের শপথ করার রহস্য :
وَٱلْعَصْرِ শব্দের অর্থ: সময় বা যুগ। এ তাফসীরই বেশি প্রাধান্যযোগ্য। মহান প্রভু যুগের শপথ করে বলেছেন উল্লিখিত চারটি গুণে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ব্যতীত সব মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। প্রশ্ন হয় যে, উল্লিখিত বিষয়বস্তুর সাথে যুগের কী সম্পর্ক, যার শপথ করা হয়েছে? অধিকাংশ তাফসীরবিদগন বলেন, মানুষের কর্ম গতিবিধি ও উঠা বসা ইত্যাদি সব যুগের মধ্যেই সংঘটিত হয়।
আর এ সূরায় যে চারটি বিষয়ের আলোচনা হয়েছে সেগুলোও এই যুগ-কালেরই দিবা-রাত্রিতে সংঘটিত। ভালো-মন্দ সব কর্মের সাক্ষী যেন এই যুগ কাল ও সময়। এই প্রেক্ষিতে যুগের শপথ করা হয়েছে আরেকটি বিষয় চিন্তা করলে দেখা যায়, সময় হলো মানুষের জীবনে ভালো-মন্দ সব অর্জনের মূল পুঁজি। মানুষ যাবতীয় ক্ষতি থেকে বাঁচা ও চারটি কাজ করে সফলতা অর্জনের জন্যে এই যুগ ও সময়কে অপচয় না করে পুঁজি হিসেবে মূল্যায়ণ করার প্রতি ইঙ্গিত করার লক্ষ্যে সময় বা যুগের শপথ করা হয়েছে।
আলোচ্য বিষয় :
মানুষের সফলতা বিফলতা এবং ধ্বংশের পথ কোনটি তাহা পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
নাজিলের সময় :
সুরাটি মক্কী জীবনে র প্রথম যুগে নাজিল।
ব্যাখ্যা :
والعصرশব্দটির প্রথম অক্ষর و (ওয়াও) শপথের অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। একে কসমিয়া বলা হয়। আল্লাহ তায়ালা কুরআন মজিদের বিভিন্ন স্থানে তারই কোন সৃষ্টির নামে শপথ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা কোন জিনিসের গুরুত্ব বুঝানোর জন্য শপথ করেন না। বরং তিনি যে কথা বলতে চান সেই জিনিস তার সত্যতা প্রমান করে বলেই তিনি তাঁর শপথ করেন।
সুতরাং এখানে কালের নামে শপথ করার অর্থ হলো এই সুরায় যে চারটি গুণের কথা বলা হয়েছে যাদের মধ্যে তা থাকবে সে সব লোক ছাড়া বাকি সবই সে মহাক্ষতি ও ধ্বংশের মুখোমুখি - কাল সময় ও স্রোত তার জন্য জলন্ত প্রমাণ। কাল সাইকেলের চাকার মত ঘূর্ণায়মান। এখানে বর্তমান ভবিষ্যত ও অতীত কালকেই বুঝানো হয়েছে।
চলমান সময় ও স্রোতের শপথ করার প্রকৃত তাৎপর্য বুঝানোর জন্য প্রথমতঃ যে বিষয়টি মনে রাখা দরকার তাহলো এই যে, কালের সে অংশটা এখন চলছে তা আসলে দুনিয়ার কাজ করার জন্য প্রতিটি ব্যক্তি এবং প্রতিটি জাতির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে দেওয়া সময় বা সুযোগ।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায় যে, পরীক্ষার হলে পরিক্ষার্থীকে প্রশ্নের দেবার জন্য সময় বেধে দেয়া হয়। যে সেই নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেবার জন্য প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগায়। ফলে সে ভাল ফলাফলের মাধ্যমে পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়।
অনুরুপ ভাবে আল্লাহ মানুষের হায়াত বা আয়ুষ্কাল নিদিষ্ট করে দিয়েছেন। সেই নির্ধারিত আয়ুষ্কালের মধ্যেই মানুষ যদি পরীক্ষারর্থীর মতো প্রতিটি মুহূর্তকে কল্যানকর এবং সঠিক পথে কাজে লাগায় তাহলে সে সফলতার মাধ্যমে আখেরাতের মহা ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারে।
সুতরাং মহাক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য সে ভালো কাজ কাজ করতে হবে তা বেঁধে দেওয়া আয়ুষ্কালের মধ্যেই করতে হবে। এতে বোঝা যায় সময়ই হলো আমাদের জীবনের আসল মূলধন।
ইমাম রাযী (র) এ বিষয়ের উদাহরণ হিসাবে একজন মনীষীর উক্তি উল্লেখ করেছেন; তাহলো- “একজন বরফ বিক্রেতার কথা হতেই আমি সুরা আল আসরের অর্থ বুঝতে পেরেছি যে বাজারে জোর গলায় বলছিল- দয়া করো এমন এক ব্যক্তির প্রতি যার পূজি গলে যাচ্ছে। দয়া করে এমন ব্যক্তির প্রতি যার পূজি গলে যাচ্ছে। তার এ কথা শুনে আমি বললাম এইটিই হচ্ছে আসলে والعصر- إن الانسان لفى خسر- বাক্যের অর্থ।
মানুষকে যে আয়ুষ্কাল দেওয়া হয়েছে তা বরফ গলে যাওয়ার মতো দ্রুত অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে। একে যদি নষ্ট করে দেওয়া হয় অথবা ভুল কাজে ব্যয় করা হয় তাহলে সেটিই মানুষের জন্য ক্ষতি। কাজেই চলমান সময়ের কসম খেয়ে এই সুরায় যা বলা হয়েছে তার অর্থ এই যে, এই দ্রুত গতিশীল সময় সাক্ষ্য দিচ্ছে, এই চারটি গুণাবলী শূন্য হয়ে যে মানুষ যে কাজেই নিজের জীবনকাল অতিবাহিত করে- তার সবটুকুই ক্ষতির সওদা ছাড়া কিছুই নয়।
পরীক্ষার হলে যে ছাত্র প্রশ্ন পত্রের উত্তর দেওয়ার পরিবর্তে অন্য কাজে সময় নষ্ট করেছে, তাকে পরীক্ষার হলে টানানো ঘড়ির কাঁটা বলে দিচ্ছে তুমি নিজের ক্ষতি করছো। যে ছাত্র এই সময়ের প্রতিটি মুহূর্ত নিজের প্রশ্ন পত্রের জবাব দেবার কাজে ব্যয় করেছে একমাত্র সেই লাভবান। - إن الانسان لفى خسر “নিশ্চয়ই প্রতিটি মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে”।
এখানে ‘ইনছান’ শব্দটি একবচন হলেও এর অর্থ গোটা মানব জাতিকে বুঝাচ্ছে।
خسر শব্দটি মুনাফা (লাভ) এর বিপরীত শব্দ। خسر শব্দটি দুনিয়া থেকে আখেরাত পর্যন্ত মানুষের প্রকৃত ক্ষতি, ব্যর্থতা ও বঞ্চনাকে বুঝায়। মূলত এখানে যে ক্ষতি বা ধ্বংশের কথা বলা হয়েছে তা দুনিয়ায় ও আখেরাত উভয় জগতের ক্ষতির কথা বলা হয়েছে। আর এই ক্ষতি হচ্ছে বাঁচার জন্য যে চারটি গুণের কথা বলা হয়েছে সেখানে দুনিয়া আখেরাতের বাঁচার কথাই বলা হয়েছে।
দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষতি বা ধ্বংশ থেকে বাঁচার উপায়ঃ
মানুষের চরম ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায় হিসাবে আল্লাহ বলেছেন তাহলো,
الا الذين أمنوا وعملوا الصلحت وتواصوا بالحق وتواصوا بالصبر-
(১) ঈমান (২) সৎকাজ (৩) পরস্পরকে সত্য বা হকের উপদেশ দেয় (৪) সবরের উপদেশ দেয়।
এ চারটি কাজের মধ্যে প্রথম দুটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক এবং পরবর্তী দুটি সমাজ কেন্দ্রিক। অর্থাৎ প্রথম দুটি আত্মসংশোধন মূলক এবং পরের দুটি সমাজের অন্যান্য মানুষের হেদায়েত এবং সংশোধন মূলক।
ব্যক্তিগত কাজ দুটির প্রথম কাজটি হলো :
الذين أمنوا অর্থ ‘যারা ঈমান আনে’। এর শাব্দিক অর্থ ‘বিশ্বাস’ প্রকৃত অর্থ হলো খোলা মনে নেয়া এবং নিষ্ঠাও দৃঢ়তার সহিত বিশ্বাস করা। অতএব, ঈমানের মাধ্যম হলো তিনটি-
(১) তাশদিক বিল জিনান- অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস।
(২) ইকরার বিল লিসান- মুখে স্বীকৃতি তা বিশ্বাস অনুযায়ী মুখে প্রকাশ।
(৩) আমল বিল আরকান- বাস্তবে কাজে পরিণত।
অর্থাৎ অন্তরের বিশ্বাস অনুযায়ী মুখে প্রকাশ এবং সেই অনুযায়ী কাজের মাধ্যমে বাস্তবায়ন।
ঈমানের বিষয়:
ঈমানের প্রধান ও মূল বিষয় হলো তিনটি।
(১) তাওহীদে বিশ্বাস- অর্থাৎ আল্লাহর একক, তাঁর কোন শরীক নেই, তিনি জীবন-মৃত্যুর মালিক, রিজিক দাতা, আইন দাতা, ও সকল সৃষ্টি জীবের লালন পালন কারী। ভাগ্য নির্ধারণের মালিক তিনি। তাঁর ছাড়া আর কারোর কাছে কিছু চাওয়া যাবে না। সাহায্য তাঁর কাছেই চাইতে হবে।
(২) রিসালাতে বিশ্বাস- নবী-রাসুল কিতাব ও ফেরেশতা এই তিনের সম্বনয়ে হলো রিসালত । অথ্যাৎ জীবরাঈলফেরেশতার মাধ্যম রাসুলদের উপর ওহী বা কিতাব নাজিল হয় ।
(৩) আখেরাতে বিশ্বাস : মানুষের মৃত্যু র পর হতে যে জীবন আরম্ভ হয় যেমন - কবরের জওয়াল জওয়াব ,কবরের আযাব , কিয়ামত ,হাশর মিজান, আমল নামা ,পুলসিরাত , জান্নাত ও জাহান্নাম ইত্যাদির সমন্বয়ে আখেরাত ।
প্রকৃত ঈমান :
পবিত্র কুরআন মজীদেযে ঈমানের কথা বলা হয়েছে তা হলো সন্দেহ সংশয় মুক্ত ঈমান । বিনা প্রশ্নে মেনে নেয়ার এবং তার উপর দৃড়ভাবে টিকে থাকাকে প্রকৃত ঈমান বলেছে আল্লাহ পাক বলেন- إنما المؤمنون الذين أمنوا بالله ورسوله ثم لم يرتابوا অর্থ -সেই সব লোকই প্রকৃত পক্ষে মুমিন যারা আল্লাহ ওতার রাসুলের প্রতি ঈমান আনার পর আর কোন রকম সন্দেহে পড়েনি। (হুজরাত -১৫)
অন্য স্থানে ان الذين قالوا ربنا الله ثم استقاموا - অর্থ : নিশ্চয়ই যারা বলে আল্লাহই আমাদের রব । অত:পর এই কথার উপর দৃঢ় ও অবিচল থাকে । (হামীম - সিজদাহ :৩০)
মুমিনের পরিচয় দিতে গিয়ে আল্লাহ বলেন –
إنما المؤمنون الذي اذا ذكر الله وجلت قلوبهم واذا تليت عليهم أيته زادتهم ايمانا وعلى ربهم يتوكلون- অর্থ :“ প্রকৃত মুমিন তো হল সে সব লোক ,যাদের আল্লাহ তায়ালাকে সরণ করানো হলে তাদের হৃদয় কম্পিত হয় এবং যখন তাদের সামনে তার আয়াত সমূহ তেলায়াত করা হয় , তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং তারা সমসময় তাদের মালিকের উপর নির্ভর করে”(আনফাল-২)
উপরোক্ত আয়াত গুলিতে প্রমানিত হলো যে ,ঈমান আনার পর সন্দেহপোষন করা যাবেনা এবং তার উপর দৃঢ়ও অবিচল থাকতে হবে।
মানুষের চরম ক্ষতিথেকে বাঁচার জন্য যে ঈমানের কথা বলা হয়েছে তাহলো এধরনের ঈমান। এধরনের ঈমান যাদের মধ্যে নেই তারা কিছুতেই মহা ক্ষতি থেকে নিস্তার পেতে পারে না ।
দ্বিতীয় কাজ :
وعملوا الصلحتমহাক্ষতি থেকে বাচার দ্বিতীয় উপায় হলো আমলে সালেহা বা ভাল কাজ কংবা কল্যান কর কাজ করা । সব রকমের নেক বা ভালো কাজই হলো আমলে সালেহ। যেমন - আল্লাহ এবং বান্দার হক আদায় ,মা বাবার খেদমত করা , বড়দের সন্মান করা ,ছোটদের সেনেহ করা , আত্তীয় ,স্বজন এবং প্রতিবেশীর অধিকার আদায় করা চাষ বাস , ব্যবসা -বানিজ্য ,চাকরী বাকরীরক্ষেত্রে সততার পরিচয়দেয় । প্রতিটি কাজে কর্মে আল্লাহ ও রাসুলের বিধান মত চলা ।
নেক কাজ করা কবুলের জন্য ঈমান শর্ত :
কুরআন মজীদেসেখানেই আমলে সালেহ বানেক কাজের কথা বলা হয়েছেসেখানেই আগে ঈমানের শর্ত জুড়েদেয়া হয়েছে । কাজ টিদেখতে যতই সুন্দর, কল্যান কর এবংনেক মনেহোক নাকেন যদি তার মনে ঈমান সংযুক্ত না থাকে তাহলে আল্লাহর কাছে তা গ্রহন যোগ্য হবেনা কুরআন মজীদে যত সুসংবাদ দেয়া হয়েছে কেবল মাত্র তাদের জন্য যারা ঈমান আনার পরনেক আমল করে । ঈমান ও সৎকাজের সম্পর্ক বীজ ও বৃক্ষের মতো ।
তৃতীয় কাজ : وتواصوا بالحق
উপরোক্ত দুটি গুন হলো ব্যক্তি গত পর্যায় প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যে থাকতে হবে। যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে তাদের পরস্পরকে হক কথা বলার ও হক কাজ করা এবং ধৈর্য্যরে পথ অবলম্বন করার উপদেশ দিতে হবে।
এর অর্থ হচেছ
প্রথমত: ঈমানদার ও সৎ কর্মশীলদের পৃথক পৃথক ব্যক্তি হিসেবে অবস্থান না করা উচিৎ বরং তাদের সম্পিলনে একটি মুমিনও সৎ সমাজ দেহ গড়ে উঠতে হবে।
দ্বিতীয়ত: এই সমাজ যাতে বিকৃত না হয়ে যায়সে দায়িত্ব সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তিকে উপলদ্ধি করতে হবে। ‘হক’শব্দটি বাতিলের বিপরীত এর শব্দটি দুটি অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে ।
(১) হক অর্থ - সঠিক ,নির্ভুল ,সত্য , ন্যায় ও ইনসাফ ,সুবিচার।
(২) দ্বিতীয় অর্থ হল -অধিকার /এ অধিকার আল্লাহ হক বান্দার হক বা নিজের হক এর অংশ ।এমন এক গুরুত্ব পূর্ন বিষয় যা যথাযথ ভাবে আদায় করা মানুযের অবশ্যই কর্তব্য ।
হক উপদেশদেবার অর্থ হল ঈমানদার লোকদের সমাজে বাতিল শক্তিকে কখনো মাথা তুলতেদেখে এবং হকের বিপরীতেকোন কাজ হতেদেখে মানুষ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে পারবেনা । বরংদেখা মাত্রই প্রতিরোধ করার জন্য দলবদ্ধ ভাবে সক্রিয় ভাবে ভূমিকা পালন করবে।
পক্ষান্তরে যেই সমাজেরলোকেরা এই ভূমিকা পালন করে নাসেই সমাজ ক্ষতি ও ধ্বংস হতে কিছুতেই রক্ষাপেতে পারে না । যারা নিজেদের জায়গায় হকের উপর প্রতিষ্টিত থাকবে কিন্ত নিজেদের সমাজে হককে বিধ্বস্ত হতেদেখে নিবর থাকবে তারাও একদিন এই ক্ষতিতে লিপ্ত হবে ।
এ কথা টি সুরা সায়েদায় বলা হয়েছে - হযরত দাউদ ও হযরত ঈসা ইবনে মারয়ামের মুখ দিয়ে বলা ইসরাঈলদের উপর লানত করা হয়েছে । আর এই লানতের কারন ছিল এই যে , তাদের সমাজেগোনাহ ও জুলুম ব্যপক ভাবে ছড়িয়ে পড়ছিল এবংলোকেরা পরস্পরকে খারাপ কাজে বাধাদেয়াথেকে বিরতথেকেছিল । (৭৮-৭৯,মায়েদা)
আবার এ কথাটি সুরা আরাফে বলা হয়েছে -বনী ইসরাঈলরা যখন প্রকাশ্যে শনিবারের বিধান অমান্য করে মাছ ধরতে শুরু করে তখন তাদের উপর আযাব নাজিল করা হয় এবং সেই আযাবথেকে একমাত্র তাদেরকেই বাচানো হয় যারালোকদেরকে এই গোনাহের কাজে বাধাদেবারচেষ্টা করতো ( ১৬৩-১৬৬ আরাফ)
সুরা আনফালে বিষয়টি এভাবে বলা হয়েছে واتقوا فتنة لاتصيبن الذين ظلموا منكم خاصة- واعلموا ان الله شديد العقاب-অর্থ: রক্ষাপেতেচেস্টা করোসেই বিপদ হতে যার আঘাত বিশেষ করে কেবলসেইলোকদের পর্যন্ত ই সীমবদ্ধ হয়ে থাকবে , এবংতোমাদের মধ্য হতেসে সব লোকসেইগোনাহ করেছে ,অথ্যাৎ সবাইকে আঘাত করবে। (আয়াত -২৫)
এ জন্যই সৎ কাজের আদেশ করা ও অসৎ কাজথেকে বিরত রাখাকে উম্মতে মুসলিমের দায়িত্ব ও কর্তব্য গন্য করা হেেয়ছে ।যেমন- ولتكم منكم امة يدعون الى الخيرويأمرون بالمعروفوبنهون عن المنكر – واولئك هم المفلحون তোমাদের মধ্যথেকে এমন একটি দল থাকা উচিত ,যারা কল্যানের দিকে ডাকবে , ন্যায়ের আদেশ দিবে , আর অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখবে । সত্যি কার অর্থে এরাই হচ্ছে সফল । (আলে ইমরান -১০৪)
উম্মতে মুসলিমাকে সবোত্তম উম্মত বলাহয়েছে যারা এই দায়িত্ব পালন করবে ।যেমন - আল্লাহ বলেছেন كنتم خير امة اخرجت للناس تأمرون بالمعروف وتنهون عن المنكر অর্থ -তোমরা হচ্ছো দুনিয়ার সবোত্তম জাতি সমগ্র মানব জাতির কল্যানের জন্যইতোমাদের আবির্ভাব ,তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে । (্আলে ইমরান-১১০)
এবিষয়টি হাদীছ শরীফে এ ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে -নবী করীম (স: ) সমাজে আল্লাহর নির্ধারিত আদেশ নিষেধ এর মধ্যে শিথিলতা প্রদর্শন কারীদের উদাহরন একটি দ্বিতল জাহাজের সাথীদের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
এক দললোক দ্বিতল জাহাজে আরোহনের জন্য লটারী করে কারো ভাগ্যে পড়লো জাহাজের নীচের তলা আর কারো ভাগ্যে উপর তলা । নীচের তলারলোকেরা পানির জন্য উপর তলারলোকদের কাছে যাওয়া আসা করতে থাকায় তাদের কষ্টের ও বিরক্তের কারন হয়ে দাড়ালো । তাই নীচ তলায় একজন ক্ষীপ্ত হয়ে একখানা কুড়াল নিয়ে পানির জন্য নৌকার তলা ছিত্র করতে শুরু করল । এদেখে উপর তলারলোকেরা এসে তাকে ধরলো ,তুমি এভাবে ছিত্র করছোকেন . ? সে জবাবে বললো আমাদের জন্য তোমাদের কষ্ট হয় অথচ পানি আমাদের একান্ত প্রয়োজন বিধায় ছিত্র করছি ।
রাসুল(স:) বলেন এখননৌকার সবাই যদি তাকে বাধা না দেয় তাহলে ঐলোকটাকে বাঁচাতে পারবে এবং নিজেরা ও ডুবে মরা হতে বাচবে। আর যদি তাকে যা ইচ্ছা তাই করতেছেড়েদেয়া হয় তাহলে ঐলোকটাকে ধ্বংস করবে এবং নিজেরা ও ধ্বংস হবে। (বুখারী ২৪৯১নং হাদীছ) ।
কোরআন ও হাদীছ থেকে একথাই বুঝানো হয়েছে সমাজের একশ্রেনীরলোক খারাপ কাজ করলে সবাই মিলে তাকে বাধা দিতে হবে । নচেৎ এ কাজের জন্য সবাই ক্ষতিগ্রস্থ বা ধ্বংস হবে।
চতুর্থ কাজ :
وتواصوا بالصبر সমাজেরলোকদের পরস্পরকে সত্য পথের উপদেশ দেওয়ার সাথে সাথে দ্বিতীয় যে জিনিস টিকে ঈমান দার গনকে ও তাদের সমাজকে ক্ষতি থেকে বাচার জন্য অপরিহার্য শর্ত হিসাবে গন্য করা হয়েছে তাহচেছ এইযে , সমাজের ব্যক্তি বর্গ পরস্পরকে সবর করার উপদেশ দিতে হবে।
কেননা সমাজেরকোনলোক যখনই সত্য দ্বীন মেনে চলতে চাইবে এবংএ পথের উপর চলা ও টিকে থাকার জন্য অন্যান্যলোকদেরকে নসিহত করবে , বাতিলের উত্থানকে দমনের জন্য সক্রিয় হয়ে উঠবে ,তখনই তাদেরকে বিপদ আপদ ও দ:খ কস্টে পড়তে হবে এবং বাতিলের পক্ষ হতে চরম বাধার সম্পুখীন হবে।
এমতাবস্থায় নিজেকে এপথে টিকে রাখার জন্যধের্য্য ধারন করতে হবে এবং সমাজের অন্যান্যদের ধৈর্য্য ধারনকরার উপদেশ দিতে হবে।এসব কিছুÍ বরদাশত করার জন্য তাদের প্রত্যেক ব্যক্তি অন্যকে সাহস যোগাতে থাকবে।
উপরে বর্নিত ব্যক্তিগত দুটি এবং সামষ্টিক ভাবে দুটিমোট চারটি গুন যদি কারো মধ্যে না থাকে তবে নিশ্চিত ভাবে দুনিয়া ও আখেরাতের চরম ক্ষতি বা ধ্বংসের মধ্যে নিপতিত হবে। হওয়া । পরকালে ক্ষতি মানেই হলো জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়া।
ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্থতা থেকে বাচতে হলে -
- সময়ের গুরুত্ব দিতে হবে।
- তাওহীদ ,রেসালাত ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখতে হবে ।
- ঈমানের তাকিদে আল্লাহও রাসুলের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে হবে ।
-আকিদা ,বিশ্বাস , দুনিয়ার কাজে যা সত্য সঠিক তাই গ্রহন করতে হবে।
-আল্লাহ ও তার বান্দার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
- বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে সত্যের পথে টিকে থাকতে হবে ।
- দুনিয়ায় সামাজিক ক্ষতি ও আখেরাতের স্থায়ী ক্ষতি জাহান্নাম থেকে বাচার জন্য নিচের ব্যক্তি গত দুটি এবং সামগ্রিক দুটি কাজ করতে হবে।
-ব্যক্তিগত কাজ দুটি হলো -
-নিষ্ঠাবান পূর্ন ঈমানদার হতে হবে।
-প্রতি মুহুতের্ নেক ও সৎ আমলের মাধ্যমে আল্লাহকে পাওয়ারচেস্টা করতে হবে।
-সামাজিক দুটি গুন হলো -
-১ । পরস্পরকে হক বা সত্য কাজ করার উপদেশ দিতে হবে।
-২। হক কাজ করতে যত দু:খ কস্ট ও বাধা বিপত্তি আসুক না কেন তার উপর টিকে থাকার জন্যধের্য্য অবলম্বন করতে হবে।
নির্দেশনা ইমাম শাফেয়ী রহ.-এর ভাষায় যেকোনো মানুষ এই সূরাটিকে চিন্তা-ভাবনা সহকারে আমলের নিয়্যাতে পাঠ করলে তার ইহকাল ও পরকাল সংশোধনের জন্য যথেষ্ট হয়ে যায় ।
২. মুসলমানদের পারস্পরিক সম্পর্ক সম্প্রতি পূর্ণ হওয়া উচিত যে, তারা একে অপরকে সদা সত্য ও ন্যায়ের উপদেশ এবং সকল প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ধৈর্যধারণের উপদেশ দেবে। কেননা নেক কাজে আল্লাহ ধৈর্যধারণকারীর সঙ্গী হওয়ার ওয়াদা করেছেন।

Adresse

Maxim Gorki
Stains
93240

Notifications

Soyez le premier à savoir et laissez-nous vous envoyer un courriel lorsque পথে প্রবাসে Pothe probase publie des nouvelles et des promotions. Votre adresse e-mail ne sera pas utilisée à d'autres fins, et vous pouvez vous désabonner à tout moment.

Contacter L'entreprise

Envoyer un message à পথে প্রবাসে Pothe probase:

Vidéos

Partager