04/01/2025
না বলা গল্প!
আকদের পর প্রথম আলাপ। বিবি বললেন, আপনি বিয়ের আগে দেখতে এসে বিদায় নেয়ার সময় বলেছিলেন,
-আমাদের বিয়ে হলে আমাকে একটি গল্প বলবেন। একথা শুনে আমি তো বটেই, আব্বু-আম্মু পর্যন্ত কৌতুহলী হয়ে পড়েছিলেন, কী এমন গল্প আছে আপনার কাছে? ভাইয়া শুনে বলেছেন, আপনি নাকি বিয়েটা নিশ্চিত করার জন্য গল্প বলার কৌশল অবলম্বন করেছেন। ভাইয়া অবশ্য আপনার সব কথাতেই ভেটো দেয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি চেয়েছিলেন, তার এক বন্ধুর সাথে আমার বিয়েটা হোক। আপনার গল্পের আকর্ষণে সব বাধা খড়কুটোর মতো ভেসে গেছে। বিষয়টা বিস্ময়কর হলেও সত্যি। ভাইয়ার বন্ধু নাকি সবদিক দিয়েই এগিয়ে ছিলেন। আপনি কিছু মনে করবেন না। ভাইয়ার বন্ধুকে আমি কখনো দেখিনি। ভাইয়া আর আব্বু এমন কথাই বলেছেন।
-না, সত্যি সত্যি একটা গল্প আছে। একেবারে ছোটবেলায় তুমি তোমার দাদির সাথে আমাদের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলে। তোমার হয়তো মনে নেই। আমি বৃহস্পতিবারে মাদরাসা থেকে এসে তোমাকে দেখেছিলাম। পরদিন তুমি চলে গেছ। সেই বয়েসেই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, জীবনে বিয়ে করলে, তোমাকেই করতে হবে। একথা আমি কাউকে বলিনি। একান্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধুদেরও না। আমার দাদু ছিলেন তোমার দাদুর খেলার সাথী। সেই সূত্রে আমাদের বাড়িতে আসা হয়েছিল। অনেক কসরত করে, দাদুর কাছ থেকে তোমাদের বাড়ির ঠিকানা উদ্ধার করেছি। ছুটিতে বাড়িতে এলে, একবার না একবার তোমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে ঘুরে এসেছি। মাদরাসায় নাশতা না খেয়ে আসা-যাওয়ার ভাড়া জমাতাম। হা, শুধু তোমার বাড়ি দেখতে যেতাম। যাক সে লম্বা কাহিনি।
বিয়ের কয়েকদিন আগের কথা বলি। জুমায় বয়ানের বিষয় ছিল ‘হালাল-হারাম’। আরবি খুতবাতেও একই বিষয়ে কথা বলেছি। প্রথম খুতবা দিয়ে বসেছি। হঠাৎ করে বিদ্যুচ্চমকের মতো মনের কোণে উঁকি মারল,
‘তোমাকেও কি আমি হালাল পন্থায় পেতে পারি না? আমি তো জানামতে কখনো হারামে জড়াইনি। তোমাকে নিয়েও কখনো হারাম চিন্তা করিনি। আল্লাহর কাছে তোমাকে চেয়ে দোয়া করলে, তিনি কি আমার জন্য তোমাকে হালাল করে দেবেন না? দুই খুতবার মাঝে দোয়া কবুল হয়। তখন দোয়া করলাম। দ্বিতীয় খোতবায় দোয়া করার সময় মুসল্লিগণ সবাই আমিন বলেন। হিম্মত করে এক ফাঁকে তোমার নাম উচ্চারণ করেই বিয়ের জন্য দোয়া করলাম। মুসল্লিগণ সবাই আমিন বললেন। জুমার পর মসজিদের মুতাওয়াল্লি ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের বাসায় খাবারের দাওয়াত ছিল। বিনয়ের সাথে এড়িয়ে গেলাম। সোজা তোমার আব্বুর মাদরাসায় চলে গেলাম। সাথে অবশ্য আমাদের মুয়াজ্জিন সাহেবকে নিলাম। তাকে সাথে নেয়ার প্রধান কারণ ছিল, তার বাইক আছে। দ্রুত ত্রিশ কিলোমিটার পার হয়ে যেতে পারব। পথে শুধু এটুকু বললাম, আমার হয়ে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে হবে।
আমার একিন ছিল, তরতাজা দোয়া করে এসেছি। হলে আজই হবে, না হলে আর কখনোই নয়। তোমার আব্বুর সাথে দেখা করলাম। আমি এক ছুতোয় বাইরে গেলাম। সেই ফাঁকে মুয়াজ্জিন সাহেব কথা সারলেন। তোমার আব্বু বললেন, এক জায়গায় বিয়ের কথাবার্তা চলছে। এখন বুঝতে পারছি, ভাইয়ার বন্ধুর সাথেই কথা হচ্ছিল।
বিদায়ী মুসাফা করার সময় খুবই বিনয়ের সাথে, কাতর কণ্ঠে বললাম,
-বড় আশা করে এসেছি। আপনার সাথে নিজেকে জুড়তে পারলে, নিজেকে ধন্য মনে হবে।
আমার কথা শুনে তোমার আব্বু কী যেন বলতে চেয়েছিলেন। পরে কী ভেবে আর বলেননি। শুধু বলেছেন,
-আচ্ছা, পরে জানাব। ইন শা আল্লাহ।
তোমার আব্বা বোধ হয় প্রশ্ন করতে চেয়েছিলেন, আমাদের বাড়ির খোঁজ কে দিয়েছে? এখানে সম্বন্ধ করার এত আগ্রহ কেন? যাক আল্লাহ বাঁচিয়েছেন। এরপরের ঘটনা তোমার জানা। বিশ্বাস করো, চারদিন পর তোমার আব্বার কল আসতে দেখে, অল্প সময়ের জন্য আমার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল প্রায়। আমি তখন দরসে ছিলাম। রিসিভ করতে পারিনি। কোনোমতে দরস শেষ করে কলব্যাক করেছি। এর আগে অবশ্য মনপ্রাণ উজাড় করে দুই রাকাত নামাজ পড়ে নিয়েছি। তোমার আব্বুর কথাটা এখনো কানে বাজে,
-মাওলানা, আমরা কি আগামী পরশু আসরের পর একসাথে নাশতা করতে পারি?
লেখা: শাইখ আতিকুল্লাহ হাফি.