Elucidation

Elucidation The authenticity of information is in question nowadays. The decision is yours. Elucidation will only provide food for thought.

Elucidation is working to gather correct and authentic information and distribute them with every sphere of analysis.

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বি এম কন্টেইনার ডিপোতে হঠাৎ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দমকল বাহিনীর কর্মীরা আগুন নিভাতে শুরু করেন। ত...
08/06/2022

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বি এম কন্টেইনার ডিপোতে হঠাৎ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দমকল বাহিনীর কর্মীরা আগুন নিভাতে শুরু করেন। তাদের জানানো হয় কন্টেইনারে রেডিমেড গার্মেন্টস পণ্য। কিন্তু হঠাৎ বিস্ফোরণে টনক নড়ে উঠে সবার।
পরে জানা যায় কন্টেইনারগুলোতে রয়েছে কেমিক্যাল। চট্টগ্রামসহ পুরো দেশ স্তব্ধ হয়ে যায়।

নিমতলী ট্র‍্যাজেডী থেকে সীতাকুণ্ডের অগ্নিকান্ড বিশ্লেষণ করা হয়েছে আসল কারণগুলোকে৷

বিস্তারিত লিঙ্ক কমেন্টে।

ইতোমধ্যে রাশিয়া তেলের মূল্য ইউয়ানে নিচ্ছে চীনের থেকে। রাশিয়া আর ইউক্রেনের যুদ্ধই কি এই সিদ্ধান্তের পিছনে দায়ী?সৌদি আর মা...
01/05/2022

ইতোমধ্যে রাশিয়া তেলের মূল্য ইউয়ানে নিচ্ছে চীনের থেকে।
রাশিয়া আর ইউক্রেনের যুদ্ধই কি এই সিদ্ধান্তের পিছনে দায়ী?
সৌদি আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৭০ বছরের বন্ধুত্ব কি ভেঙে যাচ্ছে?

১.
১৯৪৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের মধ্যে চুক্তির মধ্য দিয়ে পেট্রোডলারের সূচনা হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সবচেয়ে বেশী স্বর্ণের মজুদ ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্বর্ণের বিনিময় হিসেবে ডলারকে মেনে নিতে আশ্বস্ত করে। অর্থাৎ কেউ তাকে ডলার দিলে তার বিনিময়ে সে ওই দেশকে স্বর্ণ দিবে। কিন্তু ওই দেশকে ডলারের সাথে তার নিজস্ব মুদ্রার একটি নির্দিষ্ট বিনিময় মূল্য থাকতে হবে। ১৯৪৪ সালে “ব্রেটন উডস” কনফারেন্স মধ্য দিয়ে অন্যান্য রাষ্ট্রগুলো যুক্তরাষ্ট্রের এই শর্ত মেনে নিতে সম্মত হয়।
পরে ১৯৪৫ সালে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল রপ্তানীকারক রাষ্ট্র সৌদি আরবের সাথে আলাদা একটি সমঝোতা হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। সেইখানে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তার বিনিময়ে সৌদি থেকে ডলারের বিনিময়ে তেল ক্রয়ের প্রস্তাব দেয়। তৎকালীন সৌদি বাদশাহ আব্দুল আজিজ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের সাথে সমঝোতায় পৌঁছে।

২.
যেহেতু কোম্পানীগুলো তেল বিক্রি করে ডলারে পেমেন্ট নিচ্ছে সেহেতু তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের থেকে কোন পণ্য কিনতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। যেমন সমরাস্ত্র, প্রযুক্তিপণ্য বিবিধ। এতে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বিক্রির একচেটিয়া বাজার তৈরি হয়।
এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি ঘটার সম্ভাবনা হ্রাস পায়। কারণ এই ডলার পুনরায় বাজারে আবার রিসার্কুলেট হয়। কারণ দেশগুলো নিজেদের মধ্যে বানিজ্য করতে এই ডলারকেই ব্যবহার করে। এতে ডলারের চাহিদা আরো বৃদ্ধি পায়।

৩.
এর আগেও তেলের বিনিময়মূল্য হিসেবে ভারতের রূপি বা ইউরোপের মুদ্রা ইউরোর আলাপ আসলেও তা আসলে কখনোই খুব বেশী একটা আলোচিত হয় নাই।

৪.
১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত The Central Bank of People’s Republic of China (PBOC) এর নিয়ন্ত্রিত মুদ্রা হচ্ছে ইউয়ান। যার মূল উদ্দেশ্য ছিল চীনের বিপ্লব হওয়ার আগের সরকারের আমলে ঘটে যাওয়া “Hyperinflation” কে নিয়ন্ত্রনে রাখা। যা পরবর্তীতে চীনের মুদ্রা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বর্তমান বিশ্বে হয়ে উঠে বহুল আলোচিত একটি শব্দ।

বিশ্ব অর্থনীতিতে চীন এক মহা বিস্ময়। মাত্র ২৫ বছরে মাথাপিছু আয় ২৫০০ গুণ বৃদ্ধি করা এই রাষ্ট্র সারাবিশ্বে তার উৎপাদনশীলতার জন্য অনন্য অবস্থান তৈরি করেছেন। ১৯৯৪ সালে মাত্র ৪৭৩ ইউএস ডলার মাথাপিছু আয় ছিল যা বর্তমানে ৮৮৪০ ইউএস ডলারে এসে পৌছেছে। নিজেদের মুদ্রাকে অবমূল্যায়নের জন্য ১৯৯৪ সাল থেকে বেশ কিছু নীতি চীন সরকার গ্রহণ করে চলেছেন। তারা ইউয়ানের মূল্য কম রাখার চেষ্টা করেন যেন রপ্তানীতে তারা একটু বেশি সুবিধা পায়।

পণ্য আমদানীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চীনের উপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পাওয়া চীনের মুদ্রা ইউয়ানও বিশ্ব অর্থনীতিতে নিজের আলাদা গুরুত্ব বৃদ্ধি করেছে।

করোনা পরবর্তী বিশ্বে যখন বিশ্ব অর্থনীতিতে অন্যান্য রাষ্ট্রগুলো হিমশিম খাচ্ছিলো তখন চীন দ্রুত করোনা মোকাবেলা ও প্রযুক্তির ব্যবহার, রাষ্ট্রের সঠিক ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে দ্রুত নিজেদের সামলে নেয় এবং অন্যদের পিছিয়ে পড়ার সুযোগের সাথে নিজেরা বিশ্ব অর্থনীতিতে অনেকদূর এগিয়ে যায়।

চীনের ইউয়ানের আন্তর্জাতিক মুদ্রা ইনডেক্স এখনো বাকি মুদ্রাগুলো থেকে কম হলেও এর দ্রুত উন্নতি একে নিয়ে নতুন করে ভাবতে শেখাচ্ছে। এছাড়াও চীন যে পরিমাণ জ্বালানী তেল ব্যবহার করে তার পুরোটাই যদি সে ইউয়ানে পরিশোধ করে তাহলে এই ইনডেক্সে ইউয়ানের মান আরো দ্রুত উন্নতি করা শুরু করবে। চীন সৌদির উৎপাদিত মোট তেলের প্রায় এক চতুর্থাংশ (৬.২ মিলিয়ন ব্যারেল প্রতিদিন) ক্রয় করে।

৫.
বিশ্ব বাজারে তেলের মূল্য উর্ধ্বগামী থাকায় (প্রতি ব্যারেল ১৩০ ডলার) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র OPEC+ কে তেলের উৎপাদন বাড়ানোর কথা বললেও তারা সেই সম্ভাবনা নাকচ করে দেন। এর মধ্য দিয়ে সৌদি আর যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের শিথিলতা আবারো আলোচনায় আসে।
এর পেছেনের কারণসমূহঃ
ক) ইরানের পরমাণু অস্ত্রের বিষয়ে যে অর্থনৈতিক অবরোধ ছিল তা কিছুটা শিথিল করার আলোচনা চলছে যদি ইরান ওবামার সময় হওয়া পরমাণু গবেষণার নীতিমালায় ফেরত যায়।
খ) সৌদি আরবের ইয়েমেনের হামলায় যুক্তরাষ্ট্র পর্যাপ্ত সামরিক সহায়তা না দেয়া।
গ) হুতিদের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত না করা।
ঘ) জামাল খাসোগী হত্যাকান্ডে প্রিন্স সালমানের জড়িত থাকার ব্যাপারে সোচ্চার থাকায়।

https://youtu.be/FMAYN7i96bA

Oil Price Paid In Yuan (2022) | B**g পদচাস্তThe B**g Podcast Team tried to find out the root causes of the incidents. We also discussed the rationality of th...

কিছুদিন পূর্বেই আমরা দেখেছি কিভাবে সয়াবিন তেল বাজার থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিলো। প্রতিটি ভোজ্য তেলের দাম বাড়ছিলো হুহু করে। সর...
25/04/2022

কিছুদিন পূর্বেই আমরা দেখেছি কিভাবে সয়াবিন তেল বাজার থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিলো। প্রতিটি ভোজ্য তেলের দাম বাড়ছিলো হুহু করে। সরকারের বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের পর সেই তেলের মূল্য আবার কমেও গেলো। ঈদকে সামনে রেখে নতুন করে আবার বাজার থেকে সয়াবিন তেলে উধাও হয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। প্রতিটি সংবাদে আর আলোচনায় অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটকে বারংবার এর জন্য দায়ী করা হচ্ছে। শুধু অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটই এর পিছনে দায়ী কিনা আর কি কি কারণগুলো তেলের এই মূল্যবৃদ্ধির সাথে জড়িত আর সমাধানই বা কি হতে পারে সেসব আলোচনা করা হয়েছে এই ভিডিওতে।

দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির জন্য সম্পর্কিত ফ্যাক্টরসমূহঃ
১. স্টক করা
২. ভ্যাট ও ট্যাক্স এর পরিমাণ
৩. আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য
৪. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা
৫. মুদ্রাস্ফীতি

সয়াবিন তেলের দুর্মূল্যের পিছনে দায়ী কোন ফ্যাক্টরসমূহ?
১. স্টক করা
২. ভ্যাট ও ট্যাক্স এর পরিমাণ
৩. আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য

সয়াবিন তেলের দুর্মূল্যের পিছনে দায়ী নয় কোন ফ্যাক্টরসমূহ?
১. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা
২. মুদ্রাস্ফীতি

https://youtu.be/KdIaw0Zv9Yg

Now a days Price Hike of essential products is the burden issue of Bangladesh. The prices of edible oils are out of hands. The government agencies also fail ...

"পানডোরা পেপার্স-অপরাধ আর বাণিজ্য"বিশ্বজুড়ে তোলপাড় তোলা নতুন নাম পানডোরা পেপার্স। এর আগে প্রকাশিত গোপন তথ্য প্রকাশ হওয়ার...
09/10/2021

"পানডোরা পেপার্স-অপরাধ আর বাণিজ্য"

বিশ্বজুড়ে তোলপাড় তোলা নতুন নাম পানডোরা পেপার্স। এর আগে প্রকাশিত গোপন তথ্য প্রকাশ হওয়ার অনেকগুলো ঘটনা বিশ্বজুড়ে তোলপাড় তুললেও এইবারের প্রকাশিত তথ্যাদি সবচেয়ে বিস্তারিত ও বেশি সংখ্যক মানুষকে নিয়ে। রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে গায়িকা কিংবা খেলোয়াড় বিপুল জনসমর্থন থাকা প্রায় প্রতিটি পেশার মানুষের নাম রয়েছে এইবারের প্রকাশিত রিপোর্টে।

পানডোরা পেপার্স কি?
International Consortium of Investigative Journalism (ICIJ) বিভিন্ন কোম্পানীর গোপন নথি সংগ্রহের মধ্য দিয়ে একটি পর্যালোচনা প্রকাশ করেন। তারা প্রতিটি নথি বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করেন। নথিগুলো বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্র কেন্দ্রিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে গোপনে সংগ্রহ করা। এই নথিগুলোতে তাদের সাথে সংযুক্ত থাকা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করা যাবে। বিশ্বজুড়ে প্রায় ৬০০ সাংবাদিকের অংশগ্রহণে চলা এক বিশাল তদন্তের ফলাফল হিসেবে পানডোরা পেপার্স প্রকাশ করা হয়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে তারা আসলে কি প্রকাশ করেছেন?
এইখানে আসলে বিভিন্ন ভিনদেশি কোম্পানী যারা ব্যক্তি পরিচয় গোপন রেখে অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করে তাদের বিভিন্ন গোপন নথি প্রকাশ করা হয়। কোপানীগুলোর স্প্রেডশীট, বিভিন্ন মেমো, ইমেইল বা বিনিয়োগের চুক্তিপত্র প্রকাশ করা হয়। এই কোম্পানীগুলো মূলত ক্ষমতাশীল বা বিত্তশীল মানুষদের অর্থ তাদের পরিচয় গোপন রেখে নিজেদের কোম্পানীর নামে অর্থ বিনিয়োগ করেন।

এই সময়ে জানা দরকার কেন এইসব কোম্পানীর মাধ্যমে মানুষ এত এত অর্থ বিনিয়োগ করে?
প্রথমত, এই প্রতিষ্ঠানগুলো ট্যাক্স ফ্রি কিংবা নামমাত্র ট্যাক্সে বিনিয়োগ করা যায় এমন দেশগুলোতে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করেন। ফলে ওই কোম্পানীর মাধ্যমে বিনিয়োগ করলে কম টাকা ট্যাক্স দিতে হবে বা ট্যাক্সের প্রয়োজনই পড়বে না।
দ্বিতীয়ত, অনেক ব্যক্তি রয়েছেন বিশেষ করে রাজনীতিবিদরা যারা নিজেদের বিশাল অর্থবিত্ত প্রকাশ করতে চান না। কারণ এসব অর্থের অনেক বড় একটা অংশ অনৈতিক ও আইন বহির্ভূত উপায়ে আয় করা। এবং বিপুল অর্থবিত্তের প্রকাশ বিভিন্ন রাষ্ট্রে বিশেষ করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে ওই রাজনীতিবিদদের জন্য বুমেরাং হিসেবে কাজ করে।
তৃতীয়ত, যেহেতু অর্থগুলো দেশের বাইরে বিনিয়োগ করা হয়, সেহেতু রাজনৈতিক বা সামাজিক পট পরিবর্তনে অর্থ বাজেয়াপ্তের কোন সম্ভাবনা থাকে না।
চতুর্থত, এই কোম্পানীগুলো তাদের শুধু গোপন বিনিয়োগের সুযোগই করে দেন না; একইসাথে সঠিক ও লাভজনক বিনিয়োগের পন্থা তৈরি করে দেন। কোম্পানীগুলো নিজেরাই সেই ব্যবসাগুলো বা বিনিয়োগকৃত অর্থ পরিচালনার মধ্য দিয়ে তার গ্রাহককে সর্বোচ্চ লাভটি পৌছে দেয়।

এই ধরনের কোম্পানীতে বিনিয়োগ করা অপরাধ কিনা?
বিদেশের কোন ব্যাংকে অর্থ রাখা বা বিদেশে অর্থ বিনিয়োগ করা কোন অপরাধ নয়। কিন্তু সেই অর্থ জমা রাখা বা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যক্তির নাম, তার দেশসহ বিস্তারিত থাকতে হবে। কিন্তু তথ্য গোপন রেখে কিংবা অর্থের উৎস নিশ্চিত না করেই অর্থ জমা রাখা বা বিনিয়োগ করা সকল দেশে আইনত বৈধ নয়। তবে অনেক দেশেই এই ধরনের আর্থিক প্রক্রিয়া অবৈধ নয়। “সুইস ব্যাংক” -এ নিরাপদে ও তথ্য গোপন রেখে টাকা রাখার যে কথা আমরা শুনে থাকি, তা সম্ভব হয়ে থাকে রাষ্ট্র হিসেবে সুইজারল্যান্ডের "ব্যক্তিগত তথ্য অধিকার সংরক্ষণ নীতিমালা” -এর কল্যাণে। আবার কিছু রাষ্ট্র বড় কোম্পানীগুলোর জন্য 'বিশেষ কর সুবিধা' দিয়ে থাকে, যা ব্যক্তি পর্যায়ে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না। তাই এসব কোম্পানীর মাধ্যমে বিনিয়োগে সেই বিশেষ কর সুবিধা পাওয়া যায়। এসবক্ষেত্রে এই ধরনের কোম্পানীর মধ্য দিয়ে বিনিয়োগ করা কোন অপরাধ নয়।
কিন্তু দুর্নীতি বা বিশেষ সুবিধার মধ্য দিয়ে আয় করা অর্থ দিয়ে বিনিয়োগটি করা হচ্ছে কিনা তা যাচাইয়ের কোন সুযোগ এই পদ্ধতিতে নেই। তাই এই পদ্ধতির মধ্য দিয়ে অর্থ পাচার, মাদক বা অস্ত্র ব্যবসার মধ্য দিয়ে উপার্জিত অর্থ বিনিয়োগ, বিনিয়োগকৃত কর্থের লভ্যাংশ দ্বারা জঙ্গিবাদে অর্থায়নের নানাবিধ সুযোগ রয়ে যায়। অর্থাৎ অপরাধ জগতে অর্থের প্রবাহ বন্ধ করার কোন বিশেষ উপায় এই আর্থিক কাঠামোতে নেই। যার ফলে অপরাধীরা বিশেষ সুবিধা পায়। এছাড়াও এইসব অর্থ যেসব দেশে বিনিয়োগ করা হয়, সেইসব দেশের স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হোন। এই প্রতিযোগিতা তাদের আর্থিক ক্ষতির দিকে ঠেলে দেয় ও বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করে। ফলে সেই রাষ্ট্রে টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়। কারণ এসব বেনামী বিদেশী বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান যতদিন “বিশেষ কর সুবিধা” পায়, ততদিন তাদের বিনিয়োগ অব্যাহত রাখেন। কর সুবিধা কমে গেলে বা প্রত্যাহারিত হলে, তারা আর সেই দেশে বিনিয়োগ করেন না। অপরদিকে স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা ততদিনে দুর্বল হয়ে পড়েন ও বিনিয়োগ বিমুখ হয়ে পড়েন। এতে সেই রাষ্ট্রগুলোর সার্বিক অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হোন ও দুষ্টচক্রে বাধা পড়ে যান।
এর বাইরেও যেসব রাজনীতিবিদ বা সেলিব্রিটি সবসময় সত্য, ন্যায় ও দেশপ্রেমের কথা বলেন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান দেখান, তারাই দেশের কর ফাঁকি দিতে বিদেশী বেনামী কোম্পানীর মধ্য দিয়ে বিনিয়োগের মাধ্যমে নৈতিকভাবে সাধারণ মানুষের কাছে প্রশ্নের সম্মুখীন হোন। কারণ তাদের এই ধরণের কার্যক্রম তাদের হঠকারীতা প্রকাশ করেন।

যাদের নাম এসেছে সকলেই অপরাধী কিনা?
না, যাদের নাম এসেছে তারা সকলেই অপরাধী না। যেমন ব্লেয়ার দম্পত্তি এই পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করে স্থাবর সম্পদ কিনে, তা তারা বানিজ্যিকভাবে ইতোমধ্যে ব্যবহার করছেন এবং এই কাজটি করেছেন তারা স্রেফ কর অব্যাহতি পাওয়ার উদ্দেশ্যে। এছাড়াও অনেক নাম এসেছে স্রেফ কোম্পানীর তৈরি করা স্প্রেডশীটে। তাই সেই ব্যক্তি আদৌ অর্থ লেনদেন করেছেন কিনা তা তদন্ত সাপেক্ষ।

রিপোর্ট প্রকাশের প্রভাবগুলো তবে কেমন?
এর আগেও একই সংস্থা থেকে ‘পানামা পেপারস’ ও ‘প্যারাডাইস পেপারস’ নামে সাড়া জাগানো আরো দুইটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। পানামা পেপারস প্রকাশের পর বিশ্বের প্রভাবশালী দুইজন সরকার প্রধান পদত্যাগ করতে বাধ্য হোন। অনেক প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। পরবর্তীতে বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া বিপুল অর্থ উদ্ধারে সক্ষম হোন বিভিন্ন রাষ্ট্র। যুক্তরাজ্য ও জার্মানী সবচেয়ে বেশী পরিমাণ পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ উদ্ধারে সক্ষম হোন। তার মানে দাড়াচ্ছে এই ধরনের রিপোর্টগুলো অনেকগুলো মানুষকে তদন্তের অধীনে নিয়ে আসে এবং অনেককে নজরদারীতে রাখে। ফলে দুর্নীতি ও অবৈধ অর্থ উপার্জনের পথে তা বাধা সৃষ্টি করেন। এছাড়াও অর্জিত অর্থগুলোও ফেরত আনতে বিরাট ভূমিকা পালন করেন এই ধরনের রিপোর্টগুলো। এছাড়াও বিশ্বব্যাপী কর ব্যবস্থাপনা ও অবাধ কর অব্যাহতির মত ধারণাগুলো আরো বেশী আলোচিত হয়, তা নিয়ে আরো বেশী বিশ্লেষণ হয়। যা ভবিষ্যতের জন্য নিরাপদ ও গণমুখী বৈশ্বিক অর্থনীতি গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেন।

15/08/2020
শাহজাহান সিরাজ: স্বাধীনতার ইশতেহার থেকে জাতীয় রাজনীতি।বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের ইতিহাস লিখতে গেলে সুকৌশলে যে ইতি...
13/08/2020

শাহজাহান সিরাজ: স্বাধীনতার ইশতেহার থেকে জাতীয় রাজনীতি।

বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের ইতিহাস লিখতে গেলে সুকৌশলে যে ইতিহাসটি ওয়ান লাইনার কয়েকটা কথাবার্তা দিয়ে রেটোরিকাল পরিসমাপ্তি টানা হয় তা হলো ষাট এবং সত্তর দশকের প্রারম্ভের গৌরবোজ্জ্বল ছাত্র রাজনীতির ইতিহাস।বোধকরি পৃথিবীর ইতিহাসে প্রাচীন গ্রীক,ফরাসি কিংবা হালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা চীনের মতো 'সভ্যতার কারিগর' রাষ্ট্রগুলোর স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস ঘাটলে ছাত্র রাজনীতির এমন প্রকট প্রভাব খুঁজে পাওয়া বেশ দুষ্কর হবে।ছাত্র,জনতার সম্মিলনের এহেন বিজয়কে 'জনযুদ্ধ' বলা হলেও অনেক অসমাপ্ত ঘটনায় ইতিহাস ভর্তি হয়ে থাকার দরুণ প্রজন্মান্তরে জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জনটি ক্রমেই 'সামরিক যুদ্ধে' পরিণত হচ্ছে।একক ব্যক্তি দিয়ে ইতিহাস গঠনের চেষ্টাই হয়তো এর পেছনের বড় কারণ।ইতিহাস বইয়ের বড় অংশটি যেমন একজন ব্যক্তির হাত ধরে লিখা হতে পারে তেমনি অনেকগুলো মানুষের অবদানের সমন্বয় ওই ব্যক্তির লিখা বইটির পূর্ণাঙ্গ সমাপ্তিতে সহায়তা করে।

এমনই এক উত্তাল সময়ে এদেশের ছাত্ররাজনীতিতে ইতিহাসের নায়ক বনে যাওয়া একজন হলেন শাহজাহান সিরাজ।

১৯৪৩ সালের ১ মার্চ টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে জন্ম নেওয়া শাহজাহান সিরাজ গত শতকের ষাটের দশকে ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতিতে যুক্ত হন।
যমুনার কোল বিধৌত টাঙ্গাইল এমনকি দেশের অন্যতম ছাত্ররাজনীতি অন্যতম তুখোড় আঁতুড়ঘর টাঙ্গাইলের করোটিয়া সাদত কলেজ ছাত্র সংসদের ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে ভি.পির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্জনের জন্য ভর্তি হয়ে ছাত্ররাজনীতি চর্চাকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পান।

স্বাধীনতার প্রশ্নে তখন ছাত্রলীগের মধ্যে চলছিলো সুপ্ত এবং সময়ে অসময়ে প্রকাশ্য দুই গ্রুপের ভিন্ন অবস্থান।
যদিও একাত্তরের মুক্তিসংগ্রামের প্রশ্নে উভয় গ্রুপই ছিলো নিবেদিত এবং একাত্ম অবস্থানে।
১৯৬২ সালে যখন কিনা কেউ চিন্তা করেনি পূর্ব পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের অদূর ভবিষ্যত কি হবে কিংবা এই অঞ্চলের নির্যাতিত,নিষ্পেষিত মানুষগুলোর আদৌ স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত হবে কিনা কিংবা ফাইনাল রেজাল্ট হিসেবে আলাদা একটি ভূখন্ড হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে কিনা তখন ঠিক এই চিন্তাগুলোই ছাত্রলীগের মাঝে তিনজন ব্যক্তি করেন এবং তাঁদের চিন্তাপ্রসূত ফলাফল হয় 'স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস'।যার কাজ ছিলো ছাত্রলীগ এবং আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরে সশস্ত্র সংগ্রামের মানসিকতা তৈরী করে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য একটি শক্ত বাহিনী গড়ে তোলা।
সে তিনজন ছিলেন সিরাজুল আলম খান,আব্দুর রাজ্জাক এবং কাজী আরেফ আহমেদ।

পরবর্তীতে এই অংশটি নিজেদের বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র,স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ এবং শ্রেণীসংগ্রাম বিপ্লবের মতো তৎকালীন বিশ্বের জনপ্রিয় মতবাদগুলোর সাথে নিজেদের সমন্বয় ঘটান।

অন্যদিকে, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ ফজলুল হক মনি শুরুতে কিছুটা নিষ্ক্রিয় থাকলেও এই গ্রুপ বা উইংটিকে প্রতিবিপ্লবী আখ্যা দিয়ে স্বায়ত্তশাসন এবং শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে স্বাধীনতার পথ ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানান।

বলাই বাহুল্য তখন ছাত্রলীগে সিরাজুল আলম খান পন্থী তথা নিউক্লিয়াস পন্থী এই বলয়ের প্রভাব স্পষ্টতই বেশ গাঢ় ছিলো।এই যখন বিভক্তি তখন শাহজাহান সিরাজ
নিউক্লিয়াস পন্থী হিসেবে ছাত্রলীগে রাজনীতি শুরু করেন।

ঢাকার অদূরে টাঙ্গাইল থেকে ছয়দফা আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৎকালীন ইকবাল হলে থেকে ঊনসত্তরের গণআন্দোলনের পর উত্তাল সময়ে ছাত্রলীগের নেতৃত্বের পর্যায়ে চলে আসেন।

সত্তরের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের হয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর মাধ্যমে টাঙ্গাইলে আওয়ামীলীগকে শক্ত অবস্থান এনে দিতে সহায়তা করেন।

ছাত্ররাজনীতির জীবনে সবচেয়ে বড় স্বীকৃতিটি পান ১৯৭০ সালের।মুক্তিযুদ্ধের অদ্যাবদি সময়ে তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।সত্তরের ১৮-১৯ মার্চ এক সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন নূরে আলম সিদ্দিকী।ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে প্রকাশ্য এই গ্রুপিংয়ের ফল হিসেবে সিরাজুল আলম খান গ্রুপ হতে শাহজাহান সিরাজ সেক্রেটারি এবং শেখ মনি গ্রুপ হতে সিদ্দিকী সভাপতি নির্বাচিত হন।ঐতিহাসিকভাবে এই কমিটি ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠার পেছনে অন্যতম কারণ হলো পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সর্বশেষ এবং স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রথম কমিটি ছিলো এটি।

একই বছর ডাকসুর ইতিহাসের প্রথম প্রত্যক্ষ নির্বাচনে ছাত্রলীগ নিরঙ্কুশ জয় পায়।ভি.পি,জি.এস সহ বেশিরভাগ পদেই ছাত্রলীগ সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়।ছাত্রলীগ বা অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ে এখনো এই ডাকসু নির্বাচনটিকে মাপকাঠি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।এই নির্বাচনে ভি.পি নির্বাচিত হন এর আগের কমিটিতে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা আ স ম আব্দুর রব এবং জিএস নির্বাচিত হন আব্দুল কুদ্দুস মাখন।

তবে, ইতিহাসে যে পৃষ্ঠাটি মুছে দেয়ার মাধ্যমে তাৎপর্যপূর্ণ অনেকগুলো বিষয়কে মুছে দেয়ার অপপ্রয়াস করা হয় তা হলো ১৯৭০ সালের ৬ জুন তৎকালীন ইকবাল হল বর্তমান জহুরুল হক হলে বসে ডিজাইন হওয়া জাতীয় পতাকার ইতিহাস।শাহজাহান সিরাজ এই হলেরই ১১৬ নম্বর রুমে থাকতেন।একই রুমে ডাকসু ভিপি আ স ম রবও থাকতেন।ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে সিরাজ পন্থী নেতা মনিরুল হক মার্শাল মনি,হাসানুল হক ইনু,কাজী আরেফ আহমেদ,সালাউদ্দিন সহ বেশ কিছু ছাত্রলীগ নেতা সেদিন উপস্থিত ছিলেন।কে জানতো সেদিন তৎকালীন ছাত্রনেতা রফিক আর খসরুর নবাবপুর চষে বন্ধ থাকা নিউমার্কেটের দোকানিকে তুলে কেনা কাপড় আর রং তুলি বিশ্ব মানচিত্রে জন্ম নেয়া নতুন একটি দেশের জাতীয় পতাকা ডিজাইনে কাজে লাগতে চলেছে!
তৎকালীন সময়ে ছাত্রলীগের মাঝে ব্যানার,ফেস্টুনে আঁকাআকি করা কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শিবনারায়ণ দাশ কে ডেকে আনা হলো পতাকা আঁকার জন্য।
নিউক্লিয়াসের পরামর্শে এবং বঙ্গবন্ধুর সম্মতিক্রমে জাতীয় পতাকায় লাল এবং সবুজ রং যুক্ত করার পাশাপাশি সোনালী আঁশ পাটের রঙে এখনো স্বাধীনতার ঘোষণা না পাওয়া দেশটির মানচিত্র সমেত নির্দিষ্ট করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।অতঃপর শাহজাহান সিরাজে রুমের মেঝেতে আঁকা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা।যেটি পাক ফ্যাশন টেইলার্সে প্রথম সেলাই করা হয়।

একাত্তরের শুরুতে স্বাধীনতা সংগ্রামের আন্দোলনকে বেগবান করতে ডাকসুর ভিপি-জিএস এবং ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদকের সমন্বয়ে গঠিত হয় 'স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ'।ইতিহাসে যে পরিষদের ৪ নেতা সর্বজনবিদিত হয়েছেন 'বঙ্গবন্ধুর চার খলিফা' নামে।
শাহজাহান সিরাজ এদেরই একজন ছিলেন।

১৯৭১ সালের ২রা মার্চ ঢাবির বটতলায় এক ছাত্র জমায়েতে লক্ষ ছাত্রজনতার উপস্থিতিতে আ স ম আব্দুর রব ডিজাইনকৃত জাতীয় পতাকাটি প্রথমবারের মতো উত্তোলন করেন এবং নেড়ে দেখান।সেখানে 'স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ' এর বাকি ৩ নেতা ও উপস্থিত ছিলেন।
সেদিনই বিকেলে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে কবিগুরুর 'আমার সোনার বাংলা',জাতির পিতা এবং মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক হিসেবে শেখ মুজিবের নাম নিউক্লিয়াস ও ছাত্রলীগের এক সভায় নির্ধারিত হয়।

এ সকল ম্যান্ডেটকে একটি খসড়া ম্যানিফেস্টো আকারে প্রকাশ করার লক্ষ্যে ৩রা মার্চ পল্টনে 'স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদে'র আরেকটি জনসভা ডাকা হয়।যার খসড়া প্রণয়নের পর 'জয় বাংলা ইশতেহার নং-১' এবং ব্র্যাকেটে 'স্বাধীন সার্বভৌম বাঙলাদেশের জন্ম ও কর্মসূচি' হিসেবে প্রচারপত্রের আকার দেন রায়হান ফেরদৌস মধু এবং মহিউদ্দিন আহমেদ।
বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন এবং সংক্ষিপ্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চের ভাষণে বিস্তারিত ঘোষণা দেয়ার কথা বলেন।
সেই ইশতেহার পাঠের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার কর্মসূচি ও আন্দোলন কীভাবে পরিচালিত হবে, সেটাও তিনিই পাঠ করেন। মুহুর্মুহু করতালি আর জনতার শ্লোগানে মুখর হয়ে গিয়েছিল পল্টন ময়দান।
এভাবেই, টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে বেড়ে উঠা কিশোর শাহজাহান সিরাজ হয়ে যান এই ভূখণ্ডের স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠক।

এরপর ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে গঠিত বিএলএফ তথা মুজিব বাহিনীর হয়ে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণের পাশাপাশি প্রবাসী সরকারের সাথে সমন্বয় রক্ষার কাজ করেন শাহজাহান সিরাজ।

স্বাধীনতার পর 'স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ' এবং শ্রেণীসংগ্রাম আন্দোলনকে সামনে রেখে জাতীয় বিপ্লবী সরকার ইস্যুতে সিরাজুল আলম খানের দেয়া ১৫ দফা দাবী শেখ মুজিবুর রহমান মেনে নিতে অপারগ হলে ছাত্রলীগের মাঝে চলতে থাকে বিভাজন।সমাজতন্ত্রী ছাত্রলীগ এবং মুজিববাদী আওয়ামী ছাত্রলীগ নামে দুটো গ্রুপ তৈরী হয়।যার প্রথমটির নেতৃত্বে ছিলেন আ স ম রব,শাহজাহান সিরাজ এবং পেছনে সিরাজুল আলম খান আর দ্বিতীয়টির নেতৃত্বে ছিলেন নূরে আলম সিদ্দিকী,আব্দুল কুদ্দুস মাখন এবং পেছনে শেখ ফজলুল হক মনি,তোফায়েল আহমেদ আর আব্দুর রাজ্জাকরা।
১৯৭২ এর ২৩ জুলাই স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রথম সম্মেলন ডাকা হয়।দুটো গ্রুপ দুটো আলাদা জায়গায় সম্মেলন আহ্বান করেন।

তখন রেসকোর্সের সম্মেলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ ফজলুল হক মণি, আবদুর রাজ্জাক ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তোফায়েল আহমেদের সমর্থনপুষ্ট তৎকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী এবং ডাকসুর জি.এস আবদুল কুদ্দুস মাখন গ্রুপ।আর পল্টনের সম্মেলনের পেছনে ছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল আলম খানের সমর্থনপুষ্ট ডাকসুর সাবেক ভি.পি. ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আ স ম আবদুর রব,তৎকালীন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ প্রমুখের গ্রুপ।দুটি সম্মেলনেই প্রধান অতিথি করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় অংশ পল্টনের সম্মেলনে যাননি বঙ্গবন্ধু। তিনি যোগ দেন রেসকোর্সের সম্মেলনে।

সম্মেলনের উদ্বোধন করে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘গণতন্ত্রের মাধ্যমে সমাজতন্ত্র কায়েম করতে হবে।’
বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা শেষে রেসকোর্স সম্মেলনের ছাত্রলীগ নেতারা স্লোগান দেন- ‘এক নেতা এক দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ, ত্যাগ কর সব বাদ, কায়েম কর মুজিববাদ।’

একই সময়ে পল্টনের সম্মেলনে আ স ম আবদুর রব,শাহজাহান সিরাজ ও অন্যান্য ছাত্রলীগ নেতারা বলেন, ‘গণতন্ত্র দিয়ে সমাজতন্ত্র হবে না। মার্কসবাদই হচ্ছে মুক্তির মতবাদ।’ তাদের কর্মীদের মাঝে স্লোগান ওঠে- ‘সামাজিক বিপ্লবের পথ ধর, বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র কায়েম কর।’

রেসকোর্সের সম্মেলনে শেখ শহীদুল ইসলামকে সভাপতি ও এম এ রশীদকে সাধারণ সম্পাদক করে আওয়ামীপন্থী ছাত্রলীগ কমিটি প্রদান করে।অন্যদিকে পল্টনের সম্মেলনে শরীফ নুরুল আম্বিয়াকে সভাপতি ও আ ফ ম মাহবুবুল হককে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রলীগের পাল্টা কমিটি গঠন করা হয়।যা পরবর্তীতে জাসদ ছাত্রলীগ নামে পরিচিত হয়।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এভাবেই দুই ভাগে বিভক্ত হয়।সবচেয়ে বড় অংশটি সমাজতন্ত্রী ছাত্রলীগদের পক্ষে যায়।

ছাত্রলীগের বিভাজনের পর শাহজাহান সিরাজকে আওয়ামীপন্থী ছাত্রলীগ তাদের কমিটি থেকে বহিষ্কার করে।

১৯৭২ সালের ৩১শে অক্টোবর সমাজতন্ত্রী ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার উদ্দেশ্যে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ গঠন করেন।সিরাজুল আলম খান এর নেপথ্যে থাকলে তিনি কোনো পদ গ্রহণ করেননি।সভাপতি হন মেজর জলিল এবং সাধারণ সম্পাদক হন আ স ম আব্দুর রব।প্রতিষ্ঠাকালীন ৭ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম নেতা হিসেবে শাহজাহান সিরাজ জাসদের প্রতিষ্ঠা লগ্ন হতে দলটির সাথে যুক্ত থাকেন।

১৯৭২-১৯৭৫ পর্যন্ত তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকারের একমাত্র বিরোধীদল হিসেবে জাসদ রাজপথ থেকে সংসদ সর্বত্র সরব ছিলো।ক্যাম্পাসগুলোতেও সমাজতন্ত্রী ছাত্রলীগের প্রচ্ছন্ন প্রভাব বিদ্যমান ছিলো।শাহাজাহান সিরাজ এই সময়ে সক্রিয়ভাবে জাসদ রাজনীতির নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখেন।

বিপ্লবী চেতনায় উজ্জীবিত লাখো মুক্তিযোদ্ধা এবং তরুণের রোমান্টিসিজমের কেন্দ্রে থাকা তুমুল জনপ্রিয় এই ছাত্রনেতা পরবর্তীতে জাসদ রাজনীতির সবচেয়ে বড় পটপরিবর্তনগুলোরও সাক্ষী।জিয়াউর রহমান ক্ষমতা নেয়ার পর কর্ণেল তাহেরের মৃত্যু এবং সামরিক শাসনের টালমাটাল পরিস্থিতিতে জাসদ ভাঙনের শিকার হয়।
জাসদে ভাঙনের শুরুতে শাহজাহান সিরাজের সঙ্গে ছিলেন হাসানুল হক ইনু; পরে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাঁধলে ইনু আলাদা জাসদ গড়েন। তখন অনেকটা একা হয়ে পড়েন শাহজাহান সিরাজ।এরপর মির্জা সুলতান রাজা সহ আরেকটি অংশ গড় তুললেও তা চিরস্থায়ী হয়নি।

ওই সময় সব দলের বর্জনের মধ্যে এরশাদের অধীনে ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে তার অংশগ্রহণও সমালোচনায় পড়ে। তার আগে ১৯৭৯ ও ১৯৮৬ সালে তিনি জাসদের হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

তবে, রাজনীতিবিদ শাহজাহান সিরাজকে নিয়ে আলোচনা সমালোচনার সবচেয়ে বড় কেন্দ্রবিন্দুর তৈরী হয় সম্ভবত ১৯৯৫ সালে।রাজনীতির শেষজীবনে বাম আদর্শের বিপরীতে হেঁটে বিএনপিতে যোগ দেন শাহজাহান সিরাজ।সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত যারা তাঁর নেতৃত্ব জীবনের যৌবন উৎসর্গ করেছিলেন বিপ্লবের উজ্জ্বল লেলিহান প্রজ্বলনীতে তাদের অনেকেই সেদিন আশাহত হলেও রাজনীতিক শাহজাহান সিরাজের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছাতে হয়তো এটি নিয়ামক ছিলো

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত সংসদ নির্বাচনে বিএনপির হয়ে অংশ নিয়েছিলেন তিনি, পরে ২০০১ সালে আবারও ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচিত হন।

জাসদ এবং বিএনপি মিলিয়ে নিজ আসন টাঙ্গাইল-৪(কালিহাতী) হতে সর্বমোট ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন শাহজাহান সিরাজ।

২০০১ সালে খালেদা জিয়া সরকার গঠন করলে বন ও পরিবেশমন্ত্রী করা হয় শাহজাহান সিরাজকে।তখনই বাংলাদেশে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। পরিবেশ রক্ষায় যে সিদ্ধান্তটি ছিল প্রশংসিত।বায়ু দূষণ কমাতে টু স্ট্রোক অটোরিকশা নগরীতে বন্ধ করাও হয়েছিল ওই সময়ে।এর পাশাপাশি বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন দীর্ঘদিন।
একটি বিশেষ ব্যাপার হলো, বিএনপি হতে সাংসদ কিংবা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পর কিংবা আমৃত্যু বিএনপির সাথেই থাকার পরেও শাহজাহান সিরাজ রাজনৈতিক মহলে 'জাসদ নেতা' হিসেবেই সমধিক সমাদৃত।

জীবনের শেষ ১০টি বছর স্ট্রোক,প্যারালাইসিস সহ নানাবিধ শারীরিক সমস্যায় ভুগেছিলেন।বিএনপি রাজনীতি করেও বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রধান এবং সর্বাধিনায়ক বলাতে তাঁর স্পষ্ট উচ্চারণ তাঁকে সাহসিকতার আসনে যেমন বসিয়েছে তেমনি রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এবং কৌশলের চাপাকলে পড়ে এদেশের ইতিহাস বিনির্মানের অন্যতম সারথী হয়েও পাননি তেমন কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি কিংবা আর্থিক/চিকিৎসা সহায়তা।

২০২০ সালের ১৫ জুলাই ঢাকার এ্যাপোলো হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের আগে বর্ণাঢ্য এই রাজনীতিবিদের বয়স হয়েছিলো ৭৭ বছর।

স্বাধীনতা পরবর্তী শাহজাহান সিরাজের রাজনৈতিক অবস্থান কিংবা দল পরিবর্তন বা সম্পূর্ণ ভিনধারার রাজনৈতিক দলে অভিযোজন কতটা ভুল কিংবা সঠিক সেটা ইতিহাসের বিচার্য।
তবে, বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডের জন্মলগ্ন এবং অভ্যুদয়ের পেছনে তৈরী হওয়া স্বর্ণোজ্জ্বল এবং বর্ণাঢ্য ইতিহাসের সোনালী অধ্যায়ের অন্যতম রূপকার শাহজাহান সিরাজের স্বীকৃতি অবশ্য প্রাপ্য।

এই স্বীকৃতির কতোটা দিতে আমরা পেরেছি তার হিসেব হয়তো ভবিষ্যত করবে কিন্তু এদেশের ছাত্ররাজনীতির যে শৈল্পিক এবং হীরকখচিত অধ্যায় ষাট,সত্তরের দশকে রচিত হয়েছিলো তার ধারাবাহিকতা রক্ষাও কি অন্তত হয়েছে?
প্রকাশ্য গ্রুপিংয়েরও মূল উদ্দেশ্য যেখানে ছিলো দেশ মাতৃকার স্বাধীনতা অর্জন সেখানে দেশ,জনতার স্বার্থে ছাত্র সংগঠনগুলোকে ছাত্রজনতার কাতারে দেখা হয়তো বা দূর্লভ বস্তুতেই পরিণত হবে।

একাত্তরের শাহজাহান সিরাজদের বাংলাদেশকে নিয়ে দেখা অসম্পূর্ণ স্বপ্নগুলো পূর্ণতা পাক।জাতীয় বীর শাহজাহান সিরাজ অন্তিম শয়ানে শান্তিতে থাকুন।

Elucidation is working to build an Enthusiastic Liberal United Collaborative Informative Diverse Nation.It is very easy ...
13/08/2020

Elucidation is working to build an Enthusiastic Liberal United Collaborative Informative Diverse Nation.

It is very easy now a days to have access in any information. But the authenticity of the information is in question, as misinformation are ruling the every surface of the media.
Elucidation is working to gather correct and authentic information and distribute them with every sphere of analysis. Decision is yours. Elucidation will only provide food for thought.

To expand our activity and reach to more young people with different types of activities, we are looking for some fresh young people.

Requirement:
1. You have to be a student of undergrade.
2. You have to be thirsty of knowledge.
3. You have to be friendly and more tolerable.

Opportunities:
1. You will get chance to participate different events without any fee.
2. Best ambassadors will be rewarded with gifts like books, t-shirts.
3. You may get chance to do internship in this start up.
4. You can share knowledge and ideas with some enthusiastic people which will help you to learn more.

Responsibilities:
1. You have to share the contents and event information with your institution people.
2. You have to lead some online events actively to ensure participation of your institution people.
3. You have to encourage more people to share authentic information with people using our platform.

Google Form Link:

https://forms.gle/23TVLE2mNs7HfpDx8

আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে সবাইকে জানাচ্ছি ঈদ মোবারক।
31/07/2020

আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে সবাইকে জানাচ্ছি ঈদ মোবারক।

সেব্রেনিকা গণহত্যা (পর্ব-০২):গত পর্বে এই গণহত্যার নৃশংসতার দিকটি আলোচনা করার পর আজকের লেখায় এই ধরনের একটি জঘন্য ঘটনা ঘটা...
29/07/2020

সেব্রেনিকা গণহত্যা (পর্ব-০২):

গত পর্বে এই গণহত্যার নৃশংসতার দিকটি আলোচনা করার পর আজকের লেখায় এই ধরনের একটি জঘন্য ঘটনা ঘটার পরে তার পরবর্তী ফলাফল ও প্রভাবগুলো আজকের লেখায় আলোচনা করা হচ্ছে।

হত্যাকান্ড ঘটানোর ৫ বছরের মাথায় এর সাথে সংশ্লিষ্টদের বিচারের মুখোমুখি করা হয়।

২০০১ সালে বসনিয়ান সার্ব বাহিনীর কমান্ডার, যিনি সরাসরি এই অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন ও অভিযানের নির্দেশ দেন, রেদিলাভ ক্রিসটিককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। এর মধ্য দিয়ে এই গণহত্যায় নীরব থাকা বিশ্ব সম্পদ্রায় নতুন করে আলোচনা শুরু করেন এবং সচেষ্ট হতে থাকেন।

২০০৩ সালে অভিযান পূর্ববর্তী সময়ে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ ও ক্ষমতার অপপ্রয়োগের অভিযোগে বাহিনীর প্রধান গোয়েন্দা কর্মকর্তা মমির নিকোলিককেও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। এর মধ্য দিয়ে উক্ত অভিযানে জড়িত সকলেই বুঝে যান তাদের সবাইকেই বিচারের মুখোনুখি হতে হবে।

২০১০ সালে এই ঘটনার আরো অধিকতর তদন্তের সাপেক্ষে সার্ব বাহিনীর প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ভুজাদিন পোপোভিক ও জুবিসা বেয়ারাকেও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।

এর মধ্যে দিয়ে ঘটনায় জড়িত বাহিনীর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা প্রায় সকলকে বিচারের সম্মুখীন করা হয়। যদিও এর চেয়েও অধিক সরকারী কর্মকর্তা এর সাথে জড়িত থাকা সত্ত্বেও তাদের সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হয়নি।

২০০৫ সালে দেয়া এক বিবৃতিতে সার্ব বাহিনী যদিও স্বীকার নেন যে ওই হত্যাকাণ্ডে ১৯,৪৭৩ জন ব্যক্তি সরাসরি জড়িত ছিলেন। তবে এই বিবৃতির পরেও তৎকালীন সময়ে ওই কর্মকর্তারা সরকারি উচ্চপদে বহাল ছিলেন। যদিও জাতিসংঘ অপরাধী ট্রাইবুনাল মূলত ২৫ জনকে অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করেন যারা মূলত নির্দেশদাতা হিসেবে কাজ করেন।

যদিও পরবর্তীতে জাতি হিসেবে সার্বিয়ানরা এই ঘটনাকে একটি নৃশংস ঘটনা হিসেবে স্বীকার করে নেয়। ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে সার্বিয়ান রাষ্ট্রপতি স্বপ্রণোদিত হয়ে এই ঘটনাকে একটি গণহত্যার সাথে তুলনা করেন। একইসাথে তিনি এই নৃশংসতম ঘটনার জন্য পুরো জাতির পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

এমনকি গত পর্বের আলোচনায় একটি জায়গায় আমরা দেখতে পাই ডাচ শান্তিরক্ষী বাহিনী কিরূপ নীরব ভূমিকা পালন করে হত্যাযজ্ঞ চলাকালীন সময়ে। ২০১১ সালের জুলাই মাসে, নেদারল্যান্ড আদালতের আপিল বিভাগ উক্ত ঘটনায় অন্তত ৩০০ জনের হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী হিসেবে নেদারল্যান্ডকে রাষ্ট্র হিসেবে অভিযুক্ত করে এক রায়ে মতামত দেন।

এই ঘটনাবলী বিশ্লেষণে আমরা বুঝতে পারি জাতিগত নিধনের অংশ হিসেবে এত বড় হত্যাকাণ্ডে সাময়িকভাবে বিশ্ব নীরব ভূমিকা পালন করলেও খুবই অল্প সময়ে তাদেরকে বিচারের সম্মুখীন করা হয়। এমনকি এই ধরনের হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে আক্ষরিকভাবে কোন জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা সম্ভব না। বরং এই ধরনের নৃশংসতা ইতিহাসের পাতায় যেকোন নেতাকেই একজন দুশ্চরিত্র হিসেবেই অন্তর্ভুক্ত করে। একইসাথে দীর্ঘ সময়ের জন্য তারা ঘৃণ্য ব্যক্তিতে পরিণত হোন। অথচ নিপীড়নের স্বীকার হওয়া সেই জনগোষ্ঠী অনেক ত্যাগের মধ্য দিয়ে গেলেও তাদের স্বীকৃতি মেলে। আত্মপরিচয়ে উদ্ভাসিত হোন তারা। রক্তের দাগে তারা এগিয়ে যান ইতিহাসের পরবর্তী অধ্যায়ে।

সেব্রেনিকা গণহত্যা (পর্ব-০১):শুধুমাত্র পুরুষ ও বালকদের বেছে বেছে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার শিকার প্রত্যেকেই একই জাতিস্বত্ত...
27/07/2020

সেব্রেনিকা গণহত্যা (পর্ব-০১):

শুধুমাত্র পুরুষ ও বালকদের বেছে বেছে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার শিকার প্রত্যেকেই একই জাতিস্বত্তার মানুষ। ইতিহাসের এত বড় হত্যাযজ্ঞ এত কম সময়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর খুব কমই দেখেছে বিশ্ব।

পূর্ব বসনিয়া ও হার্জগভিনা বসবাসকারী স্থানীয় গোষ্ঠীদের এইরকম একটি পরিবেশের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।

সময়টা ১৯৯৫। সীমান্ত বিরোধ, স্বাধীনতা ও গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত সার্বিয়া ও বসনিয়া জনপদ। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর পক্ষ থেকে ডাচ সেনাবাহিনী দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে পূর্ব বসনিয়াতে। সেই রকম পরিস্থিতিতেই বসনিয়ান সার্ব বাহিনী আক্রমণ করে পূর্ব বসনিয়া ও হার্জগভিনা অঞ্চলে। কোন রকম বাধা কিংবা যুদ্ধ ব্যতিরেকেই তারা ওই অঞ্চলে নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করে। কোন বিরোধীতা বা পাল্টা আক্রমণের আশংকা না থাকা সত্ত্বেও সার্ব বাহিনী স্থানীয় মহিলা ও শিশু ও বয়স্কদের জোর করে নিজ বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করে অন্যত্র প্রেরণ করেন। এই সময়ে অনেক নারীও ধর্ষণের স্বীকার হোন বলে অভিযোগ রয়েছে। নারী ও শিশুদের উচ্ছেদ করা হলেও পুরুষদের বন্দী করে রাখা হয়। এমনকি অপ্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ অর্থাৎ বালকদেরকেও তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে বন্দী রাখা হয়।

৬ জুলাই, ১৯৯৫। শত শত মানুষ জীবন বাচাতে ছুটে যায় ডাচ শান্তিরক্ষী বাহিনীর ক্যাম্পের দিকে। স্রেফ জীবন বাচানোর আকুতি নিয়ে ছুটে যাওয়া সেই মানুষগুলোকে নিরাশ করে ডাচ সেনাবাহিনী নীরব ভূমিকা পালন করেন। সার্ব বাহিনীর থেকে সাধারণ মানুষদের রক্ষায় কোন সামরিক পদক্ষেপ নেয়া তো হয়ই না বরং ক্যাম্পে কাউকে প্রবেশও করতে দেয়া হয় না।

সকল নারী, শিশু ও বয়স্কদের প্রতিস্থাপন শেষে শুরু হয় মূল হত্যাযজ্ঞ। ধারণা করা হয় ১২ ও ১৩ জুলাই এই নারকীয় হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হয়। বিভিন্ন সংস্থা ও ভুক্তভোগীদের দাবি অন্তত ৮০০০ লোককে হত্যা হয়। এদের প্রত্যেককে বন্দী অবস্থায় হত্যা করা হয়৷ বিশাল বিশাল গণকবর থেকে অনেক পরে লাশগুলো পাওয়া যায় হাত বাধা অবস্থায়। আর নিহত সকলেই ছিল নিরস্ত্র ও সাধারণ মানুষ। এদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের সামরিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণও পাওয়া যায় না। অর্থাৎ হত্যাকান্ডটি যে শুধুমাত্র জাতিগত বিদ্বেষ থেকে করা তা অনেকটাই স্পষ্ট। এমনকি শুধুমাত্র একটি জাতিস্বত্তাকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করার প্রয়াস থেকেই এই হত্যাকান্ডটি ঘটানো হয়। এমনকি এই অভিযানটি বসনিয়ান সার্ব বাহিনীর পূর্ব পরিকল্পিত ছিল। বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ মদদে ও পরামর্শে পুরো অভিযানটি পরিকল্পনা করা হয়।

তারা এত বড় হত্যাযজ্ঞ চালায় যে পুরো সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাস জুড়ে তারা লাশগুলোকে লুকানোর কাজ করে যায়। সার্ব বাহিনী এই নারকীয় ঘটনার সকল চিহ্ন মুছে ফেলার পূর্ণ প্রয়াস চালায়। বিশাল বিশাল গণকবর তৈরি করে লাশগুলোকে পুতে ফেলে তারা। লুটপাটের চিহ্ন মুছে দিতে শত শত ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। একজন পুরষকেও জীবিত রাখেননি সেদিনের সেই হত্যাকারীরা।

পরবর্তী পর্বে কে বা কারা জড়িত ছিল তাদের ভবিষ্যৎ কি দাড়ায় ও হত্যাকান্ড থেকে সামগ্রিক উদ্দেশ্যগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে। এই পর্বে কেবল নৃশংসতা ও ভয়াবহতা আলোচনা করা হলো এই ঘটনার।

Address

Wari

Telephone

+8801680762256

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Elucidation posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Elucidation:

Videos

Share