26/01/2024
নব্বইয়ের দশকের একদম শুরুর দিকের কথা। জার্মানির দুই অভিজ্ঞ পর্বতারোহী ইতালির আল্পস পর্বতমালায় গিয়েছেন হাইকিং করতে। পর্বতের চূড়া থেকে নামার সময় তারা প্রচলিত পথ থেকে একটু দূরে সরে গিয়েছিলেন। নিচের দিকে নামতে নামতে হঠাৎ তারা বরফ গলিত পানির মধ্যে একটি নগ্ন মৃতদেহ দেখতে পান। প্রথমে কিছুটা ভয় পেলেও তারা ছিলেন মূলত অভিজ্ঞ পর্বতারোহী। তাই তারা এগিয়ে গিয়ে ঘটনাটা বোঝার চেষ্টা করলেন। আল্পসের বরফের মধ্যে এমন একটা দেহ খুজে পাওয়া যে একটা বিরল ঘটনা, সেটা তারা জানতেন। অনেক সময় বিশাল বিশাল বরফের খণ্ডে ফাটল তৈরি হয়। আর সেই ফাটলের মধ্যে কোন মানুষ পড়ে গেলে আর উঠতে পারেনা। তারা ধারণা করলেন যে- এই দেহটা হয়ত পাঁচ বা দশ বছরের পুরনো হবে। এখন তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়াতে বরফ গলে দেহটা হয়ত বছর দশেক পরে বাইরে বেরিয়ে এসেছে।
পরের দিন আরও দুইজন পর্বতারোহী ঐ জায়গাটা ঘুরে দেখতে আসেন। এই নতুন দুই ভদ্রলোক ঐ দেহটার পাশে খুবই অদ্ভুত একটি জিনিস দেখতে পান। জিনিসটার নাম আইস-পিক। ইউরোপে প্রায় ২০০ বছর আগে লোহার তৈরি ছুঁচালো এই জিনিসটা খুব প্রচলিত ছিল। বিশাল বিশাল বরফের চাই ভাঙ্গতে এগুলো ব্যবহার করা হতো। পুরনো আমলের আইস-পিকের মত একটা জিনিস মৃতদেহের পাশে দেখতে পেয়ে তারা বেশ অবাকই হয়েছিল। এরপর এই ঘটনা পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ তাদের ফাইল-পত্র চেক করে আন্দাজ করেন যে- এই দেহটা সম্ভবত কার্লো কাপসোনি নামের এক ইতালীয় প্রফেসরের। তিনি ১৯৪১ সালে এই অঞ্চলের কাছাকাছি হারিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পরেই ঘটনা অন্যদিকে মোড় নিলো। ধীরে ধীরে সবাই বুঝতে পারলেন যে, ঐ লোহার বস্তুটা আসলে কোন আইস-পিক জাতীয় কোন জিনিস নয়। এটা মূলত প্রাগৈতিহাসিককালের একটা কুঠার।
দেহটার পাশে ঐ কুঠার ছাড়াও আরেকটি জিনিসও পাওয়া গিয়েছিল। কিছুদিন পর সবাই বুঝতে পারল যে, সেটা বার্চ গাছের বাকল দিয়ে তৈরি একটা পাত্র। এই ধরনের জিনিস আধুনিককালের কোন মানুষ ব্যবহার করে না। ধীরে ধীরে এটা স্পষ্ট হয়ে গেল- এই দেহটি শত বছর আগের নয়, বরং মানুষটি হয়ত হাজার বছর আগের। এই পর্যায়ে এসে ঘটনাটা প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটা আন্তর্জাতিক খবর হয়ে দাঁড়ালো।
এরপর গবেষণার জন্য দেহটিকে অষ্ট্রিয়ার একটি ফরেনসিক গবেষণাগারে নিয়ে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। বিজ্ঞানীরা চেয়েছিলেন দেহটি থেকে DNA নিয়ে তা বিশ্লেষণ করে দেখতে। পুরনো কোন দেহ থেকে DNA বের করে গবেষণার ব্যাপারে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিসিস্ট ব্রায়ান সাইকস ছিলেন ঐ সময়ের সবচেয়ে বিখ্যাত বিজ্ঞানী। ফলে তার ডাক পড়ল। কিন্তু এত পুরনো একটি দেহ থেকে DNA সংগ্রহ করে সেটা বিশ্লেষণ করা খুব কঠিন একটি কাজ। সেসময় বিজ্ঞানের এই শাখাটা সবেমাত্র শুরু হয়েছে। তাই কাজটি আসলেই করা সম্ভব হবে কিনা সেটা নিয়েও একটা সন্দেহ ছিল। কারন এর মধ্যে দেহটির কার্বন ডেট টেস্ট করা হয়ে গেছে। আর ফলাফল যা জানা গেছে, তা এক কথায় অবিশ্বাস্য। এই মানুষটি আসলে ৫০০০ থেকে ৫৩৫০ বছর আগে বেঁচে ছিলেন!
এত পুরনো একটি দেহ থেকে এর আগে DNA বের করে বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু এই দেহটার ক্ষেত্রে ব্রায়ান সাইকস অনেক আশাবাদী ছিলেন। কারন দেহটা পুরোটা সময়ই অনেক গভীর বরফের নিচে ঢাকা ছিল, ফলে তরল পানি দেহে প্রবেশ করতে পারেনি। তাই কাজটা সফল হওয়ার বড় ধরনের সম্ভবনা আছে। পানি আর অক্সিজেনই মূলত DNA টা নষ্ট করে ফেলে।
শেষ পর্যন্ত ব্রায়ান সাইকসের ধারণাই সঠিক প্রমাণিত হলো। মৃতদেহটির হাড় থেকে তারা যথেষ্ট পরিমাণ DNA বের করতে পারলেন। সাইকসের টিমের পাশাপাশি মিউনিখ থেকে আসা আরকেটি বিজ্ঞানীদের দলও একই DNA নিয়ে বিশ্লেষণ করলেন। আর দুই টিমের বিশ্লেষণ থেকেই একই ফলাফল পাওয়া গেল। সেই ফলাফল তখন “সায়েন্স” জার্নালে প্রকাশ করা হলো।
কিন্তু কি পাওয়া গিয়েছিল সেই DNA বিশ্লেষণ করে?
অবিশ্বাস্য! মৃতদেহটির DNA সিকোয়েন্স বর্তমানে ইউরোপে বাস করা মানুষদের DNA সিকোয়েন্সের সাথে একদম হুবহু মিলে যায়। তার অর্থ হলো- এই লোকটি নিশ্চিতভাবেই ইউরোপিয়ানদের সরাসরি পূর্বপুরুষ। এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় খবর বের হতে থাকল। আর সাংবাদিকরাও এসে গবেষক দলকে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে থাকলেন। সাইকসের কাছে যেসব সাংবাদিক এসেছিলেন তিনি তাদের যথসম্ভব সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এই সাংবাদিকদের মধ্যে সানডে টাইমসের লোইস রজার্স একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করে বসলেন।
তার প্রশ্নটা ছিল, “আপনারা তো বলছেন যে বরফের মধ্যে পাওয়া মানুষটার DNA আজকের দিনের ইউরোপিয়ানদের সাথে হুবহু মিলে যায়, কিন্তু কারা এই ইউরোপিয়ান?”
এই কথা শুনে সাইকস একটু ভরকে গেলেন। এ আবার কেমন প্রশ্ন! সাইকস বললেন, “কারা বলতে আপনি আসলে কি বোঝাতে চাইছেন? আমাদের কাছে যেসব ইউরোপিয়ানদের DNA স্যাম্পল আছে আমি তাদের সাথে মিলের কথা বলেছি। এই কালেকশনে ইউরোপের সব অঞ্চলের মানুষের DNAই আছে।”
এই উত্তর দিয়েও সাংবাদিক সাহেবকে সন্তুষ্ট করা গেল না। তার পালটা প্রশ্ন, “সে না হয় বুঝলাম, কিন্তু কার DNA এর সাথে মিলেছে, তার নাম বলেন, আমরা জানতে চাই!”
এবার সাইকস বললেন, “সে বিষয়ে আমার কোন ধারণা নেই। কারন এইসব DNA স্যাম্পল দেওয়ার সময় প্রত্যেকটা মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য আলাদা আলাদা ফাইলে রাখা হয়। আর সেই তথ্যগুলো গোপনীয়। সবার কাছে উন্মুক্ত করে দেওয়া মত নয়।”
লোইস চলে গেলে সাইকস তার কম্পিউটারটা দ্রুত চালু করলেন। ঠিক কোন কোন স্যাম্পল এই বরফ মানবের DNA এর সাথে ম্যাচ করে সেটা দেখার জন্য তার খুব কৌতূহল হচ্ছিল। সার্চ করে দেখা গেল বেশ কয়েকটি ফাইলের সাথে LAB 2803 নামের একটি ফাইলও এই বরফ মানবের DNA এর সাথে ম্যাচ করছে। ফাইলের নামের আগে “LAB” থাকার অর্থ হলো- এই ফাইলের DNA ডোনার হয় সাইকসের ল্যাবেই কাজ করেন, নয়ত এই ল্যাবেরই কোন এক কর্মকর্তার কোন বন্ধু বা আত্মীয়। ফাইল খুলে দেখা গেল LAB 2803 নমুনার ডোনারের নাম মেরি মোজলি। এই মেরি সাইকসেরই বন্ধু, ম্যানেজমেন্ট কনসাল্টেন্ট হিসেবে কাজ করেন। তবে অবাক হওয়ার আরও বাকি ছিল। মেরির DNA এর সাথে এই বরফ মানবের DNA একদম হুবহু ম্যাচ করে। তার একটাই অর্থ দ্বারায়- পাঁচ হাজার বছর পুরনো এই মানুষটি আক্ষরিক অর্থেই মেরির আত্মীয়। এই বরফ মানবের মায়ের থেকে শুরু করে মেরি পর্যন্ত একটা আনব্রোকেন জেনেটিক লিঙ্ক আছে। অর্থাৎ বরফ মানব আক্ষরিক অর্থেই মেরির পূর্বপুরুষ। আরও নির্দিষ্ট করে বললে বলা যায় যে- এই বরফ মানব মেরির মায়ের দিকের পূর্বপুরুষ। DNA বিশ্লেষণের সাহায্যে মায়ের দিকের বংশধারা বের করার একটা দারুণ পদ্ধতি আছে। এজন্য মাইট্রোকন্ড্রিয়ার মধ্যে থাকা DNA বিশ্লেষণ করতে হয়।
আমাদের DNA থাকে কোষের নিউক্লিয়াসের মধ্যে। তবে নিউক্লিয়াস ছাড়াও মাইট্রোকন্ড্রিয়ার মধ্যেও ছোট এক টুকরো DNA থাকে। এই DNA টা আমরা শুধুমাত্র মায়ের কাছ থেকে পাই। ফলে এই মাইট্রোকন্ড্রিয়াল DNA এর সাহায্যে মায়ের দিকের পূর্বপুরুষ বা বংশধারা নির্নয় করা যায়।
মাইট্রোকন্ড্রিয়াল DNA টা সন্তানেরা শুধুমাত্র মায়ের কাছ থেকেই পায়। শুক্রাণু এবং ডিম্বানু দুটোর মধ্যেই মাইট্রোকন্ড্রিয়া থাকে। তবে ফার্টিলাইজেসন বা নিষিক্তকরনের সময় একটি বিশেষ ঘটনা ঘটে। শুক্রাণুর মধ্যে cps-6 নামে একটি জিন থাকে, আর এই জিনটির কাজ হলো একটি রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শুক্রাণুতে থাকা মাইট্রোকন্ডিয়াটা ভেঙ্গে ফেলা। ফলে সন্তান আর বাবার মাইট্রোকন্ড্রিয়াল DNA টা পায় না। আর ঠিক এই কারনেই মাইট্রোকন্ড্রিয়াল DNA থেকে মায়ের দিকের বংশের ধারাবাহিকতা বের করা যায়।
বরফ মানবের সাথে মেরির এই আত্মীয়তার সম্পর্ক বের হবার পর সেই নিউজ প্রথমে সানডে টাইমসে প্রকাশিত হয়। আর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই মেরি রীতিমত আন্তর্জাতিক সেলিব্রিটিতে পরিণত হন। কিন্তু প্রফেসর অবাক হলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন আরেকটা জিনিস লক্ষ্য করে। তিনি খেয়াল করেছিলেন যে, জেনেটিক লিঙ্ক বের হবার পর থেকে মেরি এই পাঁচ হাজার বছর আগের নামহীন একটা মানুষকে বলতে গেলে তার নিকট আত্মীয় ভাবতে শুরু করেছে। তিনি বুঝতে পারলেন যে- এই বংশের বিষয়টি মানুষের মনে কতটা প্রভাব ফেলে। এরপর তার মাথায় আরও একটি চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল। যদি পাঁচ হাজার বছর আগের একজন মানুষকে মেরির পূর্বপুরুষ হিসাবে চিহ্নিত করা যায়, তার মানে আমাদের প্রত্যেকরই এমন হাজার হাজার বছর আগের পূর্বপুরুষদের খুজে বের করা যাবে ! কথাটা অসম্ভব শোনালেও তাত্ত্বিকভাবে কাজটা খুবই সম্ভব।
এই বিষয়টা তিনি তখন তার কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক বন্ধুদের সাথে শেয়ার করেছিলেন। কিন্তু তারা তার কথার অর্থই সে অর্থে বুঝতে পারেনি। কিন্তু প্রফেসর সাইকস কিন্তু থেমে থাকলেন না। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, প্রাচীনকালের মানবদেহ যেমন এই গবেষণায় কাজে আসবে, তেমনি বর্তমানের জীবিত মানুষদের DNA’ও এই গবেষণায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এরপর তিনি প্রায় দশ বছর ধরে এই বিষয়টা নিয়েই গবেষণা করে গেছেন। তার গবেষণায় যে ফলাফল পাওয়া গিয়েছে তা এক কথায় অবিশ্বাস্য! প্রাচীনকালের বিভিন্ন নমুনা এবং আজকের দিনের হাজার হাজার মানুষের DNA নিয়ে বিশ্লেষণ করে তিনি দেখতে পেলেন যে- আজকের দিনে যে ৬৫০ মিলিয়ন ইউরপিয়ান বেঁচে আছে, তারা প্রত্যেকেই সাতজন মহিলার বংশধর। আপনি যদি ইউরোপের যেকোনো দেশ থেকে যেকোনো র্যানডম একজন মানুষের DNA নিয়ে পরীক্ষা করেন, তাহলে দেখতে পাবেন যে- তিনি এই সাত জনের যেকোনো একজনের বংশধর! অর্থাৎ এরাই হলেন ইউরোপের সকল মানুষদের আদিমাতা। প্রফেসর সাইকস এদের নাম দিয়েছেন “The Seven Daughters of Eve”।
এই যে সাতজন মহিলার কথা বলা হচ্ছে, যাদের বংশধারা থেকেই আজকের দিনের সব ইউরোপীয় মানুষদের জন্ম হয়েছে- তাদেরকে প্রফেসর সাইকস নাম দিয়েছেন ক্ল্যান মাদার বা গোত্রমাতা। জেনেটিক্সের ভাষায় এই গোষ্ঠীদের বলা হয় মাইট্রোকন্ড্রিয়াল হ্যাপলোগ্রুপ। সহজে মনে রাখার জন্য প্রফেসর সাইকস এই হ্যাপলোগ্রুপগুলোর আদিমাতাদের একটি করে নাম দিয়েছেন। যেমন হ্যপলোগ্রুপ ইউ (Haplogroup U) এর আদিমাতার নাম দিয়েছেন উরসুলা, হ্যাপলোগ্রুপ এইচ (Haplogroup H) এর আদিমাতার নাম দিয়েছেন হেলেনা, হ্যপলোগ্রুপ টি (Haplogroup T) এর আদিমাতার নাম দিয়েছেন টারা। প্রফেসর সাইকসে নিজে হলেন টারার বংশধর।
এই টারা নামের ভদ্রমহিলা বাস করতেন উত্তর ইতালীতে, আজ থেকে প্রায় ১৭ হাজার বছর আগে।
একটা জিনিস জেনে রাখা দরকার- এই আদিমাতারা কিন্তু একই সময়ে জীবিত ছিলেন না। কেউ হয়ত ১৭ হাজার বছর আগের মানুষ, আবার কেউ হয়ত জীবিত ছিলেন আজ থেকে ২৫ হাজার বছর আগে।
শুধু এই সাত জন গোত্রমাতাই নয়, আমরা চাইলে মাইট্রোকন্ড্রিয়াল DNA থেকে আরও আগের ইতিহাস বের করতে পারি। পরবর্তীতে জেনেটিসিস্টরা হিসাব করে দেখেছেন যে, আজ থেকে প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার বছর আগে আফ্রিকার দক্ষিণ অঞ্চলে এক মহিলা বাস করতেন, তিনি হলেন আজকের পৃথিবীর জীবিত সব মানুষের আদিমাতা। জেনেটিক্সের ভাষায় এই আদিমাতাকে বলা হয় mt-MRCA, অর্থাৎ মাইট্রোকন্ড্রিয়াল মোস্ট রিসেন্ট কমন এনসিস্টর। কিন্তু সহজে বোঝার সুবিধার্থে এই আদিমাতা এখন মাইট্রোকন্ড্রিয়াল ইভ (Mitochondrial Eve) নামেই বেশি পরিচিত। বাইবেল অনুসারে “ইভ” যেহেতু পৃথিবীর সকল মানুষের আদিমাতা, তাই সহজে বোঝার স্বার্থে কোন এক সাংবাদিক এই “মাইট্রোকন্ড্রিয়াল ইভ” নামটি প্রথম ব্যবহার করেন। কিন্তু এই টার্মটি এখন এতই জনপ্রিয়তা পেয়েছে যে বিজ্ঞানীরাও mt-MRCA কে অনেক সময় মাইট্রোকন্ড্রিয়াল ইভ বলেই উল্লেখ করেন।
এটাতো গেল মায়ের দিকের বংশধারা। ম্যাটারনাল লাইনের মত বাবার দিকের অর্থাৎ প্যাটারনাল লিংকও কি বের করা সম্ভব? উত্তর হচ্ছে হ্যা।
মাইট্রোকন্ড্রিয়া যেমন আমরা শুধুমাত্র মায়ের কাছ থেকে পাই, তেমনি Y ক্রোমোজোমের DNA টা আমরা শুধু বাবার কাছ থেকেই পাই। Y ক্রোমোজোম শুধুমাত্র বাবা থেকে ছেলেরা পায়। Y ক্রোমোজোমের জেনেটিক লিঙ্ক থেকে যে আদিপিতা পাওয়া যায় তাকে বলা হয় “Y ক্রোমোজমাল এডাম”। এই লোকটিও বাস করতেন আফ্রিকাতে, আজ থেকে প্রায় ২ লক্ষ বছর আগে। এই লোকটি হলেন আজকের পৃথিবীতে বাস করা প্রতিটি লোকের আদিপিতা।
এই DNA বিশ্লেষণের সাহায্যে বিজ্ঞানীরা এমন একটা পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন, যার সাহায্যে আসলে হাজার বছর নয়, বরং লক্ষ বছরের অতীত ইতিহাসকে উদ্ধার করা যাচ্ছে। আমরা যদি মাত্র ৫০০০ বছর আগে চলে যাই, তাহলে লিখিত ইতিহাসের আর কোন অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যাবে না। তাই ৫০০০ বছর আগের যেকোনো কিছুকেই বলা হয় প্রাগৈতিহাসিক ঘটনা। এর আগের কোন কিছু জানতে হলে আমাদের প্রাচীন কালের মানুষদের ব্যবহৃত সরঞ্জাম, যন্ত্রপাতি, বাড়িঘরের ধ্বংসাবশেষ বা জিনিসপত্রের উপর নির্ভর করতে হবে। আর আমরা যদি আরও আগের কোন ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাই তাহলে সেক্ষেত্রে প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণের উপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু ১২০০০ বছরের আগে মানুষ স্থায়ীভাবে বসবাস করত না। ফলে এই সময়ের আগের তেমন কোন প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ খুজে পাওয়া খুব কঠিন। আমরা যদি ৪০ হাজার বছরের আগে চলে যাই, তাহলে আর গুহাচিত্র বা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনও তেমন একটা খুজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু আধুনিক জেনেটিক্স এমন একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে যার সাহায্যে হাজার নয়, বরং লক্ষ বছর আগের ইতিহাসও উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে। বিজ্ঞানের এই অগ্রগতিটা সম্ভব হচ্ছে মূলত “এনসিয়েন্ট ডিএনএ টেকনলজি” এবং “পপুলেশন জেনেটিক্স” নামে দুইটি শাখার দারুণ উন্নতির ফলে।
অবাক করার মত বিষয় হলো, এই দুই নতুন বিজ্ঞানের সাহায্যে কিন্তু শুধু পূর্বপুরুষদেররা কত দিন আগে বাস করত সেটাই জানা যায় না। বরং এই মানুষগুলো সংখ্যায় কত ছিল, তারপর ধরুন- তারা কোন অঞ্চল দিয়ে কোন অঞ্চলে প্রবেশ করেছিল সেটাও জানা যায়। আজ থেকে প্রায় ২ লক্ষ বছর আগে যখন “Y ক্রোমোজমাল এডাম” বেঁচে ছিলেন, তিনি কিন্তু একা বাস করতেন না। ঐ অঞ্চলে তখন যতজন প্রজননক্ষম মানুষ ছিলেন সেই সংখ্যাকে বলা হয় “এনসেস্ট্রাল পপুলেশন”। DNA বিশ্লেষণের সাহায্যে এই “এনসেস্ট্রাল পপুলেশন” এর সংখ্যাও বের করে ফেলা যায়। এমনকি প্রাচীন মানুষরা কত বছর আগে কোন অঞ্চল দিয়ে এশিয়া বা ইউরোপে প্রবেশ করেছিল DNA বিশ্লেষণের সাহায্যে সেটাও বের করা যায়।
মানুষের DNA বিশ্লেষণ থেকে জানা গেছে যে- আজ থেকে প্রায় ৫০ হাজার বছর আগে ১ হাজার জনেরও কম মানুষের একটা দল আফ্রিকা থেকে বেরিয়ে পরে। পরবর্তীতে তারা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পরে। আজকের দিনে আফ্রিকার বাইরে যত লোক বাস করে, তারা সবাই ঐ ছোট্ট দলটিরই বংশধর। কথাটা শুনতে আশ্চর্য মনে হলেও এটাই আমাদের DNA বিশ্লেষণ থেকে জানা গিয়েছে। ৫০ হাজার বছর আগে কেউ ইউরোপিয়ানদের মত সাদা চামড়া বা নীল চোখের ছিল না। এই বৈশিষ্ট্যগুলো আরও পরে কিছু বিশেষ মিউটেশনের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে।
ইতালির সেই বরফ মানবের DNA বিশ্লেষণ করতে গিয়ে প্রফেসর ব্রায়ান সাইকস কিভাবে ইউরোপের সাতজন আদিমাতা সংক্রান্ত গবেষণায় জড়িয়ে গেলেন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করে সাইকস একটি বই লিখেছেন। এই বইতে জেনেটিক্স এবং DNA বিশ্লেষণের অনেক খুটিনাটি দিক উঠে এসেছে। আফ্রিকা থেকে প্রাচীন মানুষরা কিভাবে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ল, বা কিভাবে মাইট্রকন্ড্রিয়াল ইভের গবেষণা হলো- এসবও উঠে এসেছে এই বইতে। বইটির নাম - The Seven Daughters of Eve: The Science That Reveals Our Genetic Ancestry। জেনেটিকস এবং মানুষের আদিম ইতিহাস নিয়ে আগ্রহী যে কারও জন্য বইটি একটি অবশ্যপাঠ্য। এই বই পড়লে একদিকে যেমন বিজ্ঞান জানা হবে, তেমনি পাশপাশি প্রফেসর ব্রায়ান সাইকসের গবেষণার গল্পগুলোর সাথেও পরিচয় ঘটবে। বইয়ের শেষের দিকে এই সাতজন আদিমাতারা কিভাবে জীবনযাপন করতে সেই বিষয়টাও ফিকশনের মত করে তুলে ধরা হয়েছে। এই ধরনের বইকে তাই অনেক ক্ষেত্রে সেমি ফিকশনাল বই বলা হয়।
একসময় মানবজাতির ইতিহাস জানার জন্য শুধুমাত্র প্রত্নতাত্ত্বিক এবং ভাষাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের সাহায্য নেওয়া হত। কিন্তু DNA ভিত্তিক জ্ঞান, অর্থাৎ জেনেটিক বিশ্লেষণ করার প্রযুক্তি আসার পর এখন আর আমাদের শুধুমাত্র লিমিটেড তথ্য প্রমাণের উপর নির্ভর করতে হয় না। ফলে আমরা আরও বেশি পুরনো সময়ের ইতিহাসকে আরও অনেক বেশি সূক্ষ্মভাবে জানতে পারি। নতুন এই জ্ঞানের সাহায্যে ইতিহাস বিশ্লেষণের এক নতুন দিগন্ত খুলে গিয়েছে। জেনেটিক বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করে মানুষের ইতিহাস এবং মানুষের প্রাগৈতিহাসিক জীবনযাপন বিষয়ক দশটি বই নিয়েই আজকের আলোচনা। তবে সবগুলো বইই কিন্তু শুধুমাত্র জেনেটিক বিশ্লেষণ নিয়ে নয়। বইগুলোতে মানুষের প্রাচীনকালের ইতিহাসটাই হলো মূল বিষয়। বইগুলো হলো-
1. Ancient DNA- The Making of a Celebrity Science
2. After the Ice- A Global Human History 20,000-5000 BC
3. The Seven Daughters of Eve
4. Against the Grain- A Deep History of the Earliest States
5. The Lost Art of Scripture- Rescuing the Sacred Texts
6. Life on a Young Planet: The First Three Billion Years of Evolution on Earth
7. The 10,000 Year Explosion: How Civilization Accelerated Human
8. Adam's Curse- A Future without Men
9. Power and Progress- Our Thousand-Year Struggle Over Technology and Prosperity
10. Neanderthal Man- In Search of Lost Genomes- 450 BDT Hardcover
Adam's Curse- A Future without Men
গবেষণা থেকে দেখা যাচ্ছে- পুরুষের শুক্রাণুর সংখ্যা মারাত্মক হারে কমছে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, ২০০০ সালের পর এই কমার হার আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে Y ক্রোমোজোম নিজেও দিন দিন ছোট হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ৫০০০ প্রজন্ম পর, অর্থাৎ আজ থেকে ১ লক্ষ ২৫ হাজার বছর পর পুরুষ জাতির কোন অস্তিত্বই থাকবে না। তখন মানব জাতিকে টিকে থাকতে হলে ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশনের মাধ্যমে নিউক্লিয়াসের X ক্রোমোজোম দিয়ে ডিম্বানুকে নিষিক্ত করতে হবে। এই বিষয়গুলো ছাড়াও, Y ক্রোমোজোমের কারনে পুরুষদের আচরণের বিভিন্ন আকর্ষণীয় বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এই বইতে উঠে এসেছে।
Neanderthal Man- In Search of Lost Genomes
নিয়ান্ডারথালরা আজ থেকে প্রায় ৪০ হাজার বছর আগে এই পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে আমরা কয়েক হাজার পুরনো একটি মৃতদেহ থেকেও DNA উদ্ধার করার প্রুযুক্তি তৈরি করতে পেরেছি। আর এই প্রযুক্তি আবিষ্কারের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন সুইডিস বিজ্ঞানী সাভান্তে পাবো। নিয়ান্ডারথালদের DNA বিশ্লেষণের জন্য তাকে ২০২২ সালে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
চল্লিশ হাজার বছরের পুরনো একটি নমুনা থেকে DNA উদ্ধার করা যে কি পরিমাণ চ্যালেঞ্জিং সেটা বিস্তারিত না বললে বোঝানো সম্ভব নয়। এই বইতে সাভান্তে পাবো নিয়ান্ডারথালদের নিয়ে তার কাজ এবং গবেষণার বিষয়টি বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। পাবো প্রথমে ছিলেন মিশর গবেষক। সেখানে মমি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে তিনি মমি থেকে DNA উদ্ধার করা নিয়ে আগ্রহী হয়ে পরেন। পরবর্তীতে তিনি এই ফিল্ডেই তার সারা জীবন ব্যয় করেছেন। নিয়ান্ডারথাল মানব এবং তাদের নিয়ে গবেষণা সম্পর্কে জানার জন্য এই বইটি হলো পৃথিবীর সেরা বই।
After the Ice: A Global Human History, 20,000–5000 BC
আজ থেকে প্রায় ১৭০০০ বছর আগে পৃথিবীর আবহাওয়া নাটকীয়ভাবে ১৫ ডিগ্রি কমে যায়। আর শেষ পর্যন্ত ১১৬০০ বছর আগে বরফ যুগ বিদায় নেয়। নতুন এই উষ্ণ পরিবেশে সব ধরনের গাছপালা দারুণভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। আর সেই সুযোগেই মানুষ স্থায়ীভাবে বসবাস এবং কৃষিকাজ শুরু করে। তবে বরফ যুগ শেষ হওয়ার আগেও মানুষের বসতি স্থাপন করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। মানুষের সবচেয়ে পুরনো বসতিটা সম্ভবত ২০ হাজার বছরেরও বেশি পুরনো। বরফ যুগ শেষ হলে আজ থেকে প্রায় ১২ হাজার বছর আগে মানুষ প্রথম দীর্ঘ সময় ব্যাপী স্থায়ীভাবে বসবাস করা শুরু করে। এই সময়গুলো হলো প্রাগৈতিহাসিক সময়। কারন মানুষের লিখিত ইতিহাস মাত্র ৫০০০ বছরের। এর আগে কোন লিখিত জিনিসের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। এই বইতে মানুষের প্রথম বসতি স্থাপন থেকে শুরু করে লিখিত ইতিহাস শুরুর আগ পর্যন্ত ঘটনাকে তুলে ধরা হয়েছে।
Against the Grain- A Deep History of the Earliest States
সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থাকে গভীরভাবে বুঝতে হলে তাকাতে হবে আমাদের কয়েক হাজার বছর আগের অতীতের দিকে। স্থায়ীভাবে বসবাস করার আগে হাজার হাজার বছর মানুষ যাযাবর হান্টার গ্যাদারার জীবন যাপন করেছে। কিন্তু কেন? এত দীর্ঘ সময় কেন মানুষ হান্টার গ্যাদারার জীবন কাটালো? প্রচলিত ন্যারেটিভে বলা হয় যে- মানুষ কৃষিকাজ এবং পশুপালন শেখার পর শেষ পর্যন্ত স্থায়ীভাবে বসবাস করেছে এবং রাষ্ট্র নির্মান করেছে। কিন্তু লেখক সেই আদিম রাষ্ট্রগুলোর আরও গভীরে প্রবেশ করতে বলছেন। রাষ্ট্র ব্যবস্থা তৈরি হলেও কেন যাযাবর গোষ্ঠীগুলো কয়েকশত বছর আগ পর্যন্ত রাষ্ট্রহীন থেকেছে? কেনই বা আজকের পৃথিবীতেও বহু হান্টার গ্যাদারার গোষ্ঠী রয়ে গেছে!
এই বইতে তিনি দেখিয়েছেন যে, আমাদের অগ্রগতিকে মূলত প্রজননের উপর নিয়ন্ত্রণের ইতিহাস হিসাবে দেখা যায়। মানুষ প্রথমে আগুনের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছ, তারপর ক্রমান্বয়ে উদ্ভিদ, পশু, রাষ্ট্রের প্রজা, দাস এবং সবশেষে নারীদের একটি পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রনের মধ্যে এনে- আধুনিক রাষ্ট্র-কাঠামো গঠন করেছে।
বইটির লেখক James C. Scott হলেন পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সাইটেট রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে একজন। এই বইতে তিনি আমাদের সমাজ এবং রাষ্ট্রব্যবস্থার এমন কিছু জিনিস তুলে ধরেছেন যা একদম নতুন। মানব সমাজ এবং রাষ্ট্রের গঠন গভীরভাবে বুঝতে হলে এই বইটি একটি অবশ্যপাঠ্য।
Ancient DNA- The Making of a Celebrity Science
বহু বছর আগে মৃত কোন জীবদেহ থেকে DNA বের করে সেটাকে বিশ্লেষন করার প্রযুক্তিকে বলা হয় এনসিয়েন্ট ডিএনএ টেকনোলজি। সেটা হতে পারে কয়েক হাজার বছর আগের কোন মানবদেহ, বা হতে পারে লক্ষ বছর আগের কোন উলি ম্যমথের দেহ। এই কাজটি কয়েক দশক আগেও ছিল বিজ্ঞানের আওতার বাইরে, কিছুটা সায়েন্স ফিকশনের মত। কিন্তু বর্তমানে সময়ে নতুন এই প্রযুক্তি এতটাই উন্নত হয়েছে যে- হাজার বছর পুরনো সব জীবদেহ থেকে DNA বিশ্লেষণ করে এখন অতীত সম্পর্কে নানা অজানা তথ্য জানা সম্ভব হচ্ছে। সারা পৃথিবীতে প্রাচীন মানবরা কিভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল সেই ইতিহাস জানার জন্য এই এনসিয়েন্ট ডিএনএ টেকনোলজি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এই টেকনোলজি ব্যবহার করে আমরা নিয়ান্ডারথাল মানবদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। নিয়ান্ডারথালদের সাথে যে আধুনিক মানুষদের যৌনমিলন হয়েছিল সেটা পর্যন্ত জানা সম্ভব হয়েছে। তবে এই প্রযুক্তি কিন্তু এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। যদি সঠিকভাবে ডিএনএ উদ্ধার করা সম্ভব হয়, তবে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া কোন প্রজাতিকেও হয়ত নতুন করে আবার জন্ম দেওয়া যাবে। যেমন মাত্র কয়েক হাজার বছর আগে উলি ম্যামথরা এই পৃথিবীর বুকে ঘুরে বেড়াতো। কিন্তু আজ তারা বিপুপ্ত। ভাল একটি স্যাম্পল পেলে হয়ত বিজ্ঞানীরা কোনদিন উলি ম্যামথকে নতুন করে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনতে পারবেন।
এই বইতে লেখক এনসিয়েন্ট ডিএনএ টেকনোলজির সবগুলো দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। এই লেখার জন্য লেখিকা এই বিষয় নিয়ে যারা গবেষণা করছেন তেমন ৫০ জন বিজ্ঞানীরা সাক্ষাতৎকারও নিয়েছেন। বিজ্ঞানের এই নতুন শাখা সম্পর্কে আগ্রহী যে কারও জন্য বইটি হাইলি রিকমেন্ডেড।
The Lost Art of Scripture- Rescuing the Sacred Texts
বিভিন্ন পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলোতে অনেক রকম অলৌকিক কাহিনী উল্লেখ থাকে। আধুনিক পৃথিবীর অনেকের কাছেই হয়ত এই ধরনের কাহিনীগুলোকে গুরুত্বহীন মনে হতে পারে। কিন্তু এই প্রাচীন গ্রন্থগুলোর প্রতিটি শব্দই আসলে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি প্রাচীন আইন-কানুন, নিষেধাজ্ঞা, এবং কাহিনীর পেছনে রয়েছে একটি করে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। এই বইয়ের পরতে পরতে আপনি অবাক হবেন। প্রাচীন ব্যবিলনের দুর্ভিক্ষের সাথে যে বাইবেলের উল্লেখ করা বিভিন্ন মিথের সরাসরি যোগ থাকতে পারে, তা হয়ত আপনি কোনদিন কল্পনাও করেননি। এই বইতে পৃথিবীর প্রধান ধর্মগুলোর গড়ে ওঠা এবং প্রাচীন প্রেক্ষাপট দারুণভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এই বইটা ক্যারেন আর্মস্ট্রং এর সেরা কাজগুলোর একটি।
Life on a Young Planet: The First Three Billion Years of Evolution on Earth
আজ থেকে প্রায় ৫৩০ মিলিয়ন বছর আগে ক্যামব্রিয়ান যুগের কথা। হঠাৎ করেই এই পৃথিবীতে প্রচুর পরিমাণ নতুন প্রজাতির আগমন ঘটতে থাকে। ঘটনাটা চলতে থাকে প্রায় ১৩ থেকে ২৫ মিলিয়ন বছর পর্যন্ত। এর আগে পৃথিবীর বেশিরভাগ জীবই ছিল অত্যন্ত সরল গঠনের। এই প্রথমবারের মত পৃথিবীটা জটিল প্রাণের প্রাচুর্যে ভরে উঠে। এই ঘটনাটিকে বলা হয় ক্যামব্রিয়ান বিস্ফোরণ। আজকের দিনে আমরা যেসব প্রাণী দেখি তাদের অনেকেই সেই আদিম পৃথিবীতে ছিলনা। আবার কোটি বছর আগের অনেকে প্রানি’ই আর আজকের পৃথিবীতে নেই। এই বই আপনাকে নিয়ে যাবে কোটি কোটি বছর আগের এক আদিম এবং অদ্ভুদ পৃথিবীতে।
The 10,000 Year Explosion: How Civilization Accelerated Human Evolution
আমরা বর্তমান কগনিটিভ এ্যাবিলিটি বা বলা যায় উন্নত মস্তিষ্ক পেয়েছি অন্তত ২ থেকে তিন লক্ষ বছর আগে। কিন্তু আমাদের প্রজাতির এই দীর্ঘ যাত্রার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর প্রায় সবকিছুই ঘটেছে বিগত ১০ হাজার বছরে। এইসময় বরফ যুগ শেষ হয়, মানুষ কৃষিকাজ শুরু করে, স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকে, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- জনসংখ্যার একটা বিস্ফোরণ হয়। আর এই ঘটনাগুলোর কারনে আমাদের প্রজাতির ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি জেনেটিক চেঞ্জগুলো হয়। আজকের দিনে আমরা যেমন দেখতে, আমাদের যে অভ্যাস, শারীরিক বৈশিষ্ট্য, এবং আমাদের যে চিন্তা করার পদ্ধতি- তার প্রায় সবকিছুই তৈরি হয়েছে এই বিগত দশ হাজার বছরে। এই দশ হাজার বছরের জেনেটিক ইতিহাস হলো আমাদের মানুষ হয়ে উঠার ইতিহাস। প্রচলিত মত অনুসারে মনে করা হত যে এই ধরনের পরিবর্তনগুলো মূলত প্রায় ৫০০০০ বছর বা এর কাছাকাছি সময় হয়েছে। কিন্তু লেখক আমাদের নতুন সব গবেষণার আলোকে দেখাচ্ছেন যে- এই প্রধান জেনেটিক পরিবর্তনগুলো মূলত বিগত ১০ হাজার বছরের মধ্যেই হয়েছে।
Power and Progress: Our Thousand-Year Struggle Over Technology and Prosperity
মধ্যযুগে ইউরোপে কৃষিক্ষেত্রে যে প্রযুক্তিগুলো আবিষ্কৃত হয়েছিল তার ফলে ব্যপক অর্থনৈতিক অগ্রগতি হয়। কিন্তু সেই অগ্রগতির প্রায় পুরোটাই ভোগ করত অভিজাত শ্রেণী। শিল্প বিপ্লবের প্রথম ১০০ বছরেও ঠিক তাই হয়। সব ছিল অভিজাত শ্রেণীর দখলে। ঠিক একই ঘটনা ঘটছে এখন ডিজিটাল যুগেও। বিশ্বের বড় কিছু টেক জায়ান্টরাই বিশ্বের অর্থনীতির বেশিরভাগ নিয়ন্ত্রণ করছে। কিন্তু এভাবে চললে মানব সভ্যতা দূর ভবিষ্যতে বিশাল কোন সংকটে পড়তে পারে। এই বইতে দুই অর্থনীতিবিদ বিগত ১০০০ বছরের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে বিশ্লেষণ করেছেন, পাশপাশি বর্তমান সংকট থেকে মুক্তি পাওয়ার রাস্তাও দেখিয়েছেন।