23/02/2022
___"দিনশেষে"___
আমি শুধু অসহায়ের মতো দেখেছিলাম সে চলে যাচ্ছে, একবারের জন্যও পিছনে ফিরে তাকায়নি,আমাকে কিছু বলার সুযোগও দেয়নি।
***
কলেজের একটা অনুষ্ঠানে প্রথম দেখা আমাদের।সে আমাকে দেখেছিলো কিনা জানিনা তবে আমি তাকে দেখে চোখ ফেরাতে পারিনি সেদিন।অসম্ভব ভালো লেগে গেছিলো।
অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর খুঁজেছিলাম,পায়নি!কোথায় যে হারিয়ে গেলো বুঝলাম না।পরেরদিন কলেজে তাড়াতাড়ি চলে যায় এই আশায় যে,যদি তাকে দেখতে পায়।নাহ পেলাম না সেদিন দেখা!
পরপর তিনদিন দেখা হলো না।চতুর্থ দিন দেখেছিলাম নীল একটা ড্রেসে হৈমন্তীকে।আমার মনে হয়েছিলো এতো সুন্দর মেয়ে আমি আগে কখনো দেখিনি!আমিতো চেয়েছিলাম কথা বলতে কিন্তু সেদিন কি যে হলো শুধু চেয়ে রইলাম তার দিকে।তারপরু হুট করেই ক্লাসে ঢুকে গেলো সে।
কি আর করার আমিও ক্লাসে চলে গেলাম।ক্লাসে মন বসছিলো না।বসবেই বা কেমনে?
আমার দু'জন কাছের বন্ধু ছিলো ওদেরকে জানালাম বিষয়টা।পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম আমাদের সাথেই পড়ে তবে অন্য গ্রুপে।
আমার এক বান্ধবীর থেকে ওর ফেসবুকের আইডিটা নিয়েছিলাম।
ভাবছিলাম রিকুয়েষ্ট দেবো কিনা?দিলেও একসেপ্ট করবে কিনা?যদি না করে তখন?
কি করবো ভাবতে ভাবতে হুট করে রিকুয়েষ্টটা দিয়ে "Hi হৈমন্তী" লিখে মেসেজ করে দিলাম।
মনের ভেতর একটা ভয় কাজ করছিলো!রাত তখন ১০টা বেজে ৪০মিনিট হবে মন হয়,মেসেঞ্জারে টুং করে একটা শব্দ হলো।ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলাম হৈমন্তী মেসেজ দিয়েছে,"কে আপনি?"
মনে মনে বলতে ইচ্ছা করছিলো তোমাকে ভালবাসা এক পাগল।
কি করার তাড়াহুড়ো করলে তো কিছু হবেনা।নিজের আসল নামটাই বলে দিলাম,"রূপম সরকার"
তারপর ধীরে ধীরে পরিচয় হয় আমাদের। কথা বলতে বলতে প্রায় ৫মাস পরে তাঁর জন্মদিনের দিন তাকে একটা বেলীফুলের মালা আর একটা গোলাপ ফুল দিয়ে উইশ করেছিলাম,আর যাওয়ার সময় বলেছিলাম "ভালবাসি!"
তারপর হৈমন্তী কিছু বলার আগেই চলে এসেছিলাম কারণ তখন ও যদি না বলতো হয়তো আমি সহ্য করতে পারতাম না।সারাদিন অনলাইনে যায়নি, বাইরেও যায়নি, বাসায় চুপচাপ বসে ছিলাম।আমি কখনো এরকম থাকিনা,আম্মুও হঠাৎ এরকম দেখে একবার জিগ্যেস করেছিলো,"কিরে তোর কি হয়ছে?আজ বাসায় বসে আছিস যে চুপচাপ?"
আম্মুকে তো সবটা খুলে বলতে পারতাম না,তাই বলছিলাম কিছু না আম্মু এমনিতে ভালো লাগছেনা তাই।
রাতে ঘুমানোর আগে ভাবলাম অনলাইনে যায়,ইন্টারনেট অন করতেই দেখি হৈমন্তী একটি ছবি পাঠিয়েছে,কোনো মেসেজ নেই।আমি ক্লিক করতেই ভেতরে গিয়ে যা দেখলাম তার জন্য হয়তো প্রস্তুত ছিলামনা।
ছবিটা ঠিক এরকম ছিলো-
"বেলিফুলের মালাটা চুলে পড়া আছে,শুধু চুল আর ফুলটাই দেখা যাচ্ছে, আর বেলিফুল দিয়ে লাভ সার্কেল বানিয়ে তার ভেতর একটা গোলাপ!"
আমার আর কিছু বুঝতে বাকি ছিলোনা।আমি এতোটা খুশি ছিলাম যে রাত বারোটার সময় গান ছেড়ে নাচানাচি করতে লাগলাম।
এরপর থেকে আমাদের রিলেশন শুরু।
দেখতে দেখতে এইচএসসি পরীক্ষা,পরীক্ষা শেষে এডমিশন দিতে চলে আসলাম ঢাকা।হৈমন্তীও এসেছিলো।
রেজাল্টের দিন খুব টেনশনে থাকলেও দু'জন দু'জনকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলাম।
ভালোবাসার হয়তো এটাই স্বার্থকতা!
রেজাল্ট দুজনেরই ভালো এসেছিলো।অনেক খুশি ছিলাম আমরা।
এডমিশনের সময় পড়ালেখা নিয়ে দু'জনে খুব ব্যস্ত ছিলাম তবে আমাদের কথা থেমে থাকেনি,সুযোগ পেলেই কথা বলতাম আমরা।
এরপর শুরু হয় এডমিশন পরীক্ষা। আমার কোথাও চান্স হচ্ছিলো না,শুধু ওয়েটিংয়ে।
হৈমন্তীর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স হয়ে গেছিলো।ওর আর পরীক্ষা দেওয়া লাগেনি,আর এদিকে আমি শুধু পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছিলাম।
শেষ অবধি আমার কোথাও চান্স হয়নি,ভেঙে পড়েছিলাম খুবই।রি-এডমিশনের জন্য চেষ্টা করছিলাম আমি,আর ওদিকে হৈমন্তী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।কেমন যেনো ফ্যাকাশে হয়ে যায় আমাদের ভালবাসা।হৈমন্তী আগের মতো কথা বলায় মনোযোগী ছিলে না।আমি ভাবতাম ব্যস্ততার জন্য হয়তো।আমি কিছু বলতাম না হৈমন্তীকে।কারণ আমি অনেক ভালবাসতাম পাগলীটাকে।কিছুদিন পরই কেমন যেন আমার কাছে হৈমন্তীকে অন্যরকম লাগতো।রাতে ফোন দিলে বেশিরভাগই ব্যস্ত দেখাতো,জিগ্যেস করলে বলতো ফ্রেন্ডের সাথে পড়ালেখার বিষয়ে কথা বলছে।
আমিও মেনে নিতাম সবটা,ভালবাসতাম যে পাগলের মতো।
প্রায় বছর শেষ হতে চললো,আমার পরীক্ষাও নিকটে।
এরই মধ্যে হৈমন্তীর সাথে আমার কেমন যেন দূরত্ব অনেক বেড়ে গেছে মনে হলো,ও আর আগের মতো কথা বলেনা,ফোনও দেয় না আমাকে,আমিই ফোন দিলে কথা হতো নাহলে হতো না।
এডমিশনের প্রায় একমাস বাকি,হঠাৎ একদিন হৈমন্তী বলে আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে,দেখা করো।
আমি কিছু না ভেবেই পরেরদিন চলে যায় রাজশাহী,আমার হৈমন্তীর কাছে!
একটা পার্কে আমরা দেখা করি,অনেক সুন্দর লাগছিলো হৈমন্তীকে দেখতে।তবে কেমন যেন লাগছিলো আমার তার মুখ দেখে!
পাশাপাশি বসে ছিলাম আমরা।আমি জিগ্যেস করেছিলাম কি হয়েছে?
সে বলেছিলো-
"আমি তোমার সাথে থাকতে পারবোনা,আমি অন্য কাউকে ভালবাসি,আমার সাথে আর যোগাযোগ করোনা,প্লিজ!"
আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই উঠে চলে গেলো।
আমি হতভম্ব হয়ে বসে ছিলাম আর আমার হৈমন্তীর চলে যাওয়া দেখছিলাম!ওর সরি,সে তো এখন অন্য কারো হৈমন্তী!🙂
আমি এক দৃষ্টিতে বসে ছিলাম ওখানে,আর আমার চোখ দিয়ে জল পড়ছিলো।
সন্ধ্যায় পার্কের কর্মীরা এসে ডেকে বললো মামা এখন এখানে থাকা যাবেনা,বাসায় যান।আমি চুপচাপ বের হয়ে আসি,রাতের গাড়িতেই বাসায় চলে আসি।বাসায় গিয়ে ফেসবুকে গিয়ে দেখি হৈমন্তী আমাকে ব্লক করে দিয়েছে।
ফোনটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলাম,কতক্ষণ কান্না করেছিলাম মনে নেই।যখন ঘুম থেকে উঠি তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চললো।
এরপর থেকে সারাদিন বাড়িতেই চুপচাপ বসে থাকতাম। এডমিশন আমার আর দেওয়া হয়নি।
সূর্যের আলো দেখিনি প্রায় মাস দুয়েক।
এরপর আস্তে আস্তে সবটা মেনে নিলাম।
তারপর বিদেশে পাড়ি জমালাম পড়ালেখার জন্য।
প্রায় ৪বছর হতে চললো আমাদের দেখা হয়নি!
আমি হয়তো এখনো আমার হৈমন্তীকে ভালবাসি!
তবে আমি জানি সে আমার নয়,অন্যকারো!💔🙂
দিনশেষে আপনার জন্য সাজগোছ করা মেয়েটাও আজ অন্যকারো জন্য সাজে,আপনাকে ভালবাসি বলা মানুষটাও আজ অন্যকাউকে ভালোবাসে!🙂
___মেহেদী হাসান লিংকন