04/09/2024
আয়নাঘর থেকে বেরুনো মাইকেল চাকমা এতো সুস্থ্য সবল নাদুসনুদুস কেন? এই সহজ প্রশ্নটি আপনার মনে কখনও এসেছে! যদি আপনার কিউরিয়াস মন জানতে চায় তবে নিচের লেখাটি পড়ুন---
আয়নাঘর সত্য যেভাবে ভূত সত্য!
-------------------------------------------------
এখন পর্যন্ত আমার কাছে আয়নাঘর আরেকটা ফাতরামির নাম। ফ্যাসিস্ট সমন্বয়কদের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় থেকেও এখন পর্যন্ত কুখ্যাত আয়নাঘর দেখাতে পারেনি কেন? ভেড়াকে ঘাস খাইয়ে বুঝ দেয়া যায়, মানুষকে না! আবেগ দেখিয়ে মূর্খদের ভুলিয়ে রাখা যায়, যুক্তিবোধ সম্পন্ন মানুষদের না।
আয়নাঘর সম্পর্কে যুক্তিসঙ্গত কোনো অস্তিত্ব, প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাইনি বলে আয়নাঘর নামে কিছু আছে আর ভুত আছে মেনে নিচ্ছি! যুক্তি, তথ্য, প্রমাণ ছাড়া একটা গোষ্ঠীর কাছে অস্তিত্বহীন ভূত যেভাবে সত্য আয়নাঘরও সেভাবেই সত্য!
আয়নাঘর নামক গুজবখানা থেকে যারাই আসতেছে তারাই উল্টাপাল্টা কথাবার্তা বলতেছে। অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতেছে। যত বেশি রোমাঞ্চিত, রোমহষর্ক বর্ণনা দিচ্ছে তত বেশি অসঙ্গতি ফুটে উঠেছে। নিজেদের বর্ণনায় নিজেরাই ফেঁসে যাচ্ছে। তাদের বক্তব্য, তাদের শরীরের গঠন, পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে মিল পাওয়া যায় না।
সাধারণ উদাহরণ- আয়নাঘর থেকে মুক্তি পাওয়া মাইকেল চাকমা'র বর্ণনা অনুযায়ী তাকে এমন অন্ধকারে রাখা হয় যেখানে দিনরাত বুঝা যায় না। বছরের পর বছর যদি এমন আলোবাতাস ছাড়া অন্ধকারে রাখা হয় বিশেষ করে সূর্যের আলো ছাড়া তাহলে তার শরীরের রঙে এমনিতেই কিছু না কিছু পরিবর্তন আসার কথা। সাদা/ফর্সা হয়ে যাবার কথা। কিন্তু তার গায়ের রঙ, গড়ন আর বক্তব্যে মিলে না। বুঝাই যাচ্ছে ঘুম, খাওয়াদাওয়া ঠিকঠাক ছিল।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে দন্ডিত মীর কাসেম পুত্র দাবি করেছে, ৮ বছর তার চোখ বাঁধা ছিল। ৮ বছর চোখ বাঁধা থাকলে খাওয়াদাওয়া করলো কীভাবে? স্নান+প্রাকৃতিক কাজ কীভাবে করলো? ৮ বছর চোখ বাঁধা থাকলে চোখে কি কোনো সমস্যা হতে পারে? লিস্টে চোখের ডাক্তার কেউ থাকলে কমেন্ট করুন প্লিজ। কাসিম পুত্রের গায়ের রঙেও কোনো পরিবর্তন নাই। তার চোখ বাঁধা থাকলে চোখের আশেপাশে কোনো দাগ নাই কেন? রক্ত জমাট বাঁধা বা রক্ত মরে যাওয়ার দাগ তো থাকার কথা। কিছু তো একটা থাকার কথা। অথচ তার কপালে কালো দাগ আছে যা নামাজ পড়লে হয়।
যে ক'জনকে মুক্তি দেয়া হয়েছে তাদেরকে মুক্তি দেয়ার সময় সাংবাদিক, লাইট, ক্যামেরা একশন নাই কেন? তাদের দাবি শেখ হাসিনা আয়নাঘর বানিয়েছে। এখন তো শেখ হাসিনা বিরোধী সরকার ক্ষমতায়। উপদেষ্টাদের সবার আগে উচিত ছিল সাংবাদিক ডেকে আয়নাঘর দেখানো। শেখ হাসিনার বিভৎসতা দেখানো। কারণ জনমনে কৌতূহল, সন্দেহ বিরাজ করছে। নানান প্রশ্ন ডালপালা মেলছে। উল্টো তাদের মুখে আয়নাঘর নিয়ে কোনো বক্তব্য নাই। কিন্তু কেন? আয়নাঘরের অস্তিত্ব থাকলে তো!
সরকার কেন চাইবে আয়নাঘরে মানুষ আটকে রেখে নিজের বিপদ ডেকে আনতে? ক্ষতি করার ইচ্ছা থাকলে তো সরকার khun করে সাগরে ভাসিয়ে দিতে পারতো। সেটা না করে আয়নাঘর নামক বন্দিশালায় বন্দী করে রাখবে কেন? এগুলো তো কমনসেন্সের বিষয়। আমি সরকার হলে আর আমার মধ্যে আয়নাঘরের মতো জঘন্য কোনো চিন্তা আসলে আমি শত্রুদের বন্দী করে রেখে নিজের এবং অন্যদের বিপদ বাড়াতাম না। এটা উপলব্ধি করা বা বুঝার জন্য তো রকেট সায়েন্স পড়া লাগে না। কমনসেন্স ব্যবহার করলেই বুঝা যায়।
আয়নাঘর থেকে একজন একজন করে মুক্তি পাবে কেন? একসাথে সবাইকে ছেড়ে দিলেই তো পারে? কাহিনি কী? নাকি হাসিনা সরকারের নাম করে এমন কেউ এদেরকে লুকিয়ে রেখে রাজনৈতিক খেলা খেলেছিল? সরকারের পদত্যাগে এখন সুবিধা নিতে চাচ্ছে? তাছাড়া আয়নাঘর থেকে এদেরকে কারা মুক্ত করতেছে? তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে না কেন? ফ্যাসিস্ট সমন্বয়কদের নেতৃত্বাধীন ইউনূসের সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিক কাজ হওয়া উচিত ছিল আয়নাঘরের রহস্য উন্মোচন করা।
মীর কাসিম পুত দাবি করেছে তাকে আজান শুনতে দেয় নাই। এটাও একটা ডাহামিথ্যে কথা। ৮ বছর নিয়ম করে দিন ৫ বার এই কাজ কেউ করবে না এটা নিশ্চিত। আজান শুনলে সরকারের কী লাভ বা ক্ষতি হতে পারতো? আজান শুনতে না দেয়ার কথা বলায় আয়নাঘর সম্পর্কে যুক্তিবোধ সম্পন্ন মানুষের অবিশ্বাস আরও বেড়েছে। ধর্মীয় অনুভূতি ব্যবহার করে বিষয়টায় রঙ দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ফ্যাসিস্ট সমন্বয়কদের নেতৃত্বাধীন ইউনূসের সরকার এখন পর্যন্ত দেশবাসী তথা বিশ্ববাসীকে আয়নাঘর দেখাতে পারেনি। নাকি তারা নিজেরা আয়নাঘর বানাচ্ছে। বানানো শেষ হলে শেখ হাসিনার আয়নাঘর নামে চালিয়ে দেবে? আয়নাঘর নিয়ে আয়নাবাজি এখন পর্যন্ত এতটুকুই। পরবর্তী পর্বে আরও আসবে!
✍️জয়তূর্য চৌধুরী - আয়নাঘর - আগস্ট ১৯