11/04/2024
ফিলিস্তিনিদের অনাহারে মারার পরিকল্পনা
ত্রাণ ব্যবস্থাকে লক্ষ্যবস্তু করছে ইসরাইল || MRA ميزان الرحمن أديب
অস্ত্র বিক্রি বন্ধে ব্রিটিশ সরকারকে ৬০০ বিচারক ও আইনজীবীর চিঠি
গাজায় গণহত্যার জন্য ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ ব্যবহার করা হচ্ছে
যুদ্ধবিরতি নিয়ে নিজেদের শর্তে অনড় হামাস
ড্রোন হামলায় ছয় বিদেশী ত্রাণকর্মী নিহত হওয়ার পর গাজা যুদ্ধে তাদের নৃশংসতাকে ন্যায্যতা দেয়ার জন্য ইসরাইল আন্তর্জাতিক চাপের সম্মুখীন হচ্ছে। সোমবার রাতে কেন্দ্রীয় শহর দেইর আল-বালাহতে ত্রাণবাহী কনভয়তে ইসরাইলের ড্রোন হামলার পর ওই ছয় বিদেশীসহ ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের (ডবিøউসিকে) সাত সদস্য নিহত হন।
ডবিøউসিকে এর প্রতিষ্ঠাতা, শেফ জোসে আন্দ্রেস বলেছেন, ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডএফ) তাদের বহরকে ‘পরিকল্পিতভাবে’ টার্গেট করেছিল, যদিও তারা ডবিøউসিকে এর সাথে যোগাযোগ করেছিল এবং সাহায্য কর্মীদের গতিবিধি সম্পর্কে সচেতন ছিল। তিনি রয়টার্সকে বলেন, ‘এটি এমন কোন দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি ছিল না যেখানে, ‘উফ’, আমরা ভুল জায়গায় বোমা ফেলেছিলাম। এমনকি যদি আমরা আইডিএফের সাথে সমন্বয় না করেও থাকতাম, তারপরেও কোন গণতান্ত্রিক দেশ এবং কোন সামরিক বাহিনী বেসামরিক এবং মানবিক সাহায্যকারীদের লক্ষ্যবস্তু করতে পারে না।’
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং আইডিএফ এই হত্যাকাÐের জন্য ক্ষমা চেয়েছে এবং বলেছে যে তদন্ত চলছে। ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী, ইয়োভ গ্যালান্ট মঙ্গলবার বলেছেন যে, ইসরাইল সাহায্য বিতরণের আরও ভাল সমন্বয় সক্ষম করতে আন্তর্জাতিক গ্রæপগুলির সাথে একটি ‘যৌথ পরিস্থিতি কক্ষ’ খুলবে। হত্যাকাÐের আশেপাশের পরিস্থিতি বিমান ও ড্রোন হামলার আদেশ দেয়ার ক্ষেত্রে ইসরাইলের লক্ষ্যবস্তু পদ্ধতি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ার নতুন করে যাচাই-বাছাই করেছে। ইসরাইলি সংবাদপত্র হারেৎজ-এর একটি প্রতিবেদন অনুসারে, কনভয়টিতে কোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তি ছিল না এবং সেটি ইসরাইলি সেনাবাহিনীর সাথে পূর্ব-অনুমোদিত এবং সমন্বিত একটি পথ ধরে ভ্রমণ করছিল।
প্রায় ছয় মাসের সংঘাতে ভুখন্ডে ২০০ জনেরও বেশি সাহায্য কর্মীসহ বহু চিকিৎসা কর্মী, সাংবাদিক এবং নাগরিক প্রতিক্রিয়া কর্মী নিহত হয়েছে। দ্য গার্ডিয়ান বুধবার রিপোর্ট করেছে যে, আইডিএফ কর্মকর্তারা এমনকি নিম্ন-স্তরের হামাস এবং ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে বোমা হামলার মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করার অনুমতি দিয়েছে।
অস্ত্র বিক্রি বন্ধে ব্রিটিশ সরকারকে ৬০০ বিচারক ও আইনজীবীর চিঠি : গাজ্জায় নৃশংস গণহত্যা পরিচালনা করা দখলদার রাষ্ট্র ইসরাইলের কাছে অস্ত্র বিক্রি না করতে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাককে চিঠি দিয়েছে দেশটির ৬০০ জনেরও বেশি আইনজীবী ও সাবেক বিচারক। বৃহস্পতিবার তাদের পক্ষ থেকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ চিঠি প্রেরণ করা হয়। চিঠিতে সতর্ক করে বলা হয়েছে, ইসরাইলে অস্ত্র পাঠিয়ে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে যুক্তরাজ্য। গাজায় ‘সম্ভাব্য গণহত্যার ঝুঁকি’র প্রেক্ষাপটে দেশটিতে অবশ্যই অস্ত্র বিক্রি করা বন্ধ করতে হবে। চিঠিতে বিশিষ্টজনেরা আরও বলেছেন, ইসরাইলের কাছে অস্ত্রশস্ত্র ও অস্ত্রব্যবস্থা (প্রতিরক্ষাব্যবস্থা) বিক্রি আন্তর্জাতিক আইন মানার ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের বাধ্যবাধকতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষুণœ করছে।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলায় সাত ত্রাণকর্মী নিহত হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন দলের চাপের মুখে আছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। এরই মধ্যে তাকে ওই চিঠি পাঠানো হলো। সুনাক গত মঙ্গলবার বলেছেন, অস্ত্র বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের কাছে ‘খুব সতর্কতামূলক’ একটি ব্যবস্থা রয়েছে। সংবাদপত্র সানের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি ইসরাইলি ওই হামলার ঘটনায় একটি নিরপেক্ষ তদন্তের আহŸান জানান। তবে ইসরাইলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করা বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি। সুনাক আরও বলেন, ইসরাইলের ব্যাপারে যুক্তরাজ্য ‘অব্যাহতভাবে এই পরিষ্কার’ অবস্থান বজায় রেখেছে যে দেশটিকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলতে হবে।
গাজায় গণহত্যার জন্য ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ ব্যবহার করা হচ্ছে : হামাদ বিন খলিফা ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক মার্ক ওয়েন জোনস বলেছেন, গাজা যুদ্ধে ইসরাইল অপরীক্ষিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সিস্টেম মোতায়েন করছে। ‘তারা এআই-সহায়তা নিয়ে গণহত্যা চালাচ্ছে, যুদ্ধে এআই ব্যবহার বন্ধ করার আহŸান জানানো দরকার,’ জোন্স বলেছিলেন। মানবাধিকার এবং সন্ত্রাস দমনের জন্য জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক বেন শৌল বলেছেন, ‘ইসরাইলি সেনাবাহিনী সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, প্রতিটি জুনিয়র হামাস যোদ্ধার জন্য ১৫ বা ২০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা যাবে। এটি অবশ্যই একটি ভয়াবহ যুদ্ধাপরাধ।’ ‘যদি সত্য হয়, গাজায় অনেক ইসরাইলি হামলা অসামঞ্জস্যপূর্ণ আক্রমণ শুরু করার যুদ্ধাপরাধ গঠন করবে,’ শৌল সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টে বলেছেন। শৌল প্লাস ৯৭২ ম্যাগাজিন এবং হিব্রæ-ভাষার মিডিয়া আউটলেটে একটি প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন, যা প্রকাশ করেছে যে, ইসরাইলি সেনাবাহিনী ‘ল্যাভেন্ডার’ নামক এআই টার্গেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে গাজায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে সম্ভাব্য লক্ষ্য হিসাবে চিহ্নিত করেছে।
যুদ্ধবিরতি নিয়ে নিজেদের শর্তে অনড় হামাস : গাজায় নতুন যুদ্ধবিরতি নিয়ে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে আলোচনা চলছে। মিশরের রাজধানী কায়রোতে মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর কাছে নিজেদের নতুন প্রস্তাব উত্থাপন করে ইসরাইল। এখন তারা হামাসের জবাবের অপেক্ষায় রয়েছে। বুধবার জেরুজালেম দিবসে এ বিষয়ে কথা বলেছেন হামাসপ্রধান ইসমাইল হানিয়া। তিনি জানান, যুদ্ধবিরতির জন্য তারা যে শর্ত দিয়েছেন, সেটিতে এখনো অনড় রয়েছেন। যুদ্ধবিরতি যদি হতে হয় তা হলে তাদের শর্ত অনুযায়ী হতে হবে।
হানিয়া বলেন, আগ্রাসন বন্ধে যে আলোচনা চলছে দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইল সেটি অব্যাহতভাবে এড়িয়ে যাচ্ছে। দখলদাররা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে তাদের আগ্রাসন চলবে। আর নেতানিয়াহু এবং তার সঙ্গে যারা রয়েছেন, তাদের লক্ষ্য হলো- যতদিন সম্ভব ক্ষমতায় থাকা। তিনি আরও বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলছি— আমরা আমাদের স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, গাজা থেকে ইসরাইলের সব সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়া, গাজার সব মানুষকে তাদের বাড়িঘরে ফিরতে দেয়া, আমাদের মানুষের সব প্রয়োজনীয়তা মেটানো, গাজাকে পুনর্গঠন, অবরোধ তুলে নেয়া এবং বন্দিবিনিময় শর্তে অনড় রয়েছি। গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় অবিরাম নৃশংস আগ্রাসন চালাচ্ছে দখলদার ইসরাইল। ছয় মাসের এই যুদ্ধে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রায় ৩৩ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ মানুষ, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক। সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান, নিউইয়র্ক টাইমস, আল-জাজিরা, রয়টার্স।