12/06/2023
"অ্যান্টি-ডাম্পিং" ডব্লিউ টি ও এর রুলস বিরোধী। পূনবিবেচনার দাবী জানায় HRA - Human Rights Activities.
বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যে আরোপিত অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্কের মেয়াদ পাঁচ বছর বাড়িয়েছে ভারত। গত ৩০ ডিসেম্বর ২০২২ এ-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়। বিজ্ঞপ্তির নতুন নীতিমালা অনুযায়ী বাংলাদেশের উৎপাদকদের পাটপণ্য রফতানিতে ভিন্ন ভিন্ন হারে শুল্ক প্রযোজ্য হবে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখ থেকে পাঁচ বছর মেয়াদে (যদি না এ সময়ের আগে তা প্রত্যাহার, বাতিল বা সংশোধন করা হয়) কার্যকর হবে এ শুল্ক, যা ভারতীয় মুদ্রায় পরিশোধ করতে হবে।
২০১৭ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ থেকে পাটপণ্য রফতানির ক্ষেত্রে পাঁচ বছর মেয়াদে প্রতি টনে ১৯ দশমিক ৩০ থেকে ৩৫১ দশমিক ৭২ ডলার পর্যন্ত অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্কারোপ করে ভারত। গত ৩১ ডিসেম্বর মেয়াদ শেষ হওয়ার একদিন আগে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নতুন করে মেয়াদ বাড়ানো হয়। এবিষয়ে ঘোরতর আপত্তি জানিয়ে হিউম্যান রাইটস একটিভিটিস। শুল্কারোপের ৬ মাস পর বিষয়টি পুণরায় আলোচনার জন্য বিজনেস সিন্ডিকেট এনালিস্ট জনাব ইফতেখার হাসান জনির প্রতিক্রিয়া জানতে শীঘ্রই প্রতিবেদন প্রকাশ করবে এইচ আর এ।
ভারতের দিল্লিতে ২২-২৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের সভা। সেখানে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সেখানে অ্যান্টি-ডাম্পিং ডিউটির মেয়াদ যেন না বাড়ে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি শুল্ক প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানোর পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় সমাধান না হলে ডব্লিউটিও বা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার দ্বারস্থ হওয়ার সতর্কবার্তাও দিয়েছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও এর মেয়াদ ৫ বছর বাড়ালো ভারত, যা অনভিপ্রেত।
ভারত সফর শেষে গত ২৭ ডিসেম্বর ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের সভায় অ্যান্টি-ডাম্পিং ডিউটির বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছিলেন, ‘আলোচনার একটা বড় বিষয় ছিল জুট গুডসের ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং। সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অ্যান্টি-ডাম্পিং একটা টেকনিক্যাল বিষয়। এতে ওদের স্বার্থ জড়িত আছে। আমরা যেটা স্ট্যান্ড নিয়েছিলাম সেটা হলো ডব্লিউটিওর নিয়ম অনুসরণের। পাঁচ বছর মেয়াদ ডিসেম্বরেই শেষ হবে। চেষ্টা করেছিলাম যেন বাড়ানো না হয়। এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব পাঠায় ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অনুমোদন করে অর্থ মন্ত্রণালয়। দুই জায়গাতেই আমরা অনুরোধ করেছি। তারা বলেছে, পুরো ব্যাপারটা দেখবে। তাদের দেশের ব্যবসায়ীদের কিছু সমস্যার কথা বলেছেন তারা। সেসব কনসিডারেশনে নেবেন। আমরা বলেছি ডব্লিউটিওর রুলস অনুযায়ী অ্যান্টি-ডাম্পিং তোমরা করতে পারো না। আমরা এটাও বলেছি, আমাদের ২৫ হাজারের মতো শ্রমিক কর্মহীন হয়ে যাচ্ছেন।’
টিপু মুনশি আরো বলেন, ‘পশ্চিম বাংলার ব্যবসায়ীদের কিছু পর্যবেক্ষণ আছে অ্যান্টি-ডাম্পিং বিষয়ে। তার পরও তারা ইতিবাচকভাবে চিন্তা করবে। অ্যান্টি-ডাম্পিং নিয়ে তারা বলেছে, এটা তাদের জুট মিল মালিকদের কিছু সমস্যা। আমরা অনুরোধ করে বলেছি, ডব্লিউটিওর রুলস অনুযায়ী তোমরা এটা আটকাতে পারো না। আমরা চেয়েছি যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করে বিষয়টির সমাধান হোক। সে অবস্থায় ছেড়ে দিয়ে এসেছি। আমরা এ কথাও বলেছি, যদি আপনারা এ রকম করে আটকে দেন, তাহলে আমরা হয়তো বাধ্য হব ডব্লিউটিওতে যেতে। তবে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী খুব ইতিবাচক। তিনি আমাকে অনুরোধ করেছিলেন বিষয়টি নিয়ে তাদের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও কথা বলতে। আমরা সেখানেও অনুরোধ জানিয়েছি।’
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যাওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ নিয়েছে কিনা সংবাদ সম্মেলনে বণিক বার্তার পক্ষ থেকে এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এসব ক্ষেত্রে কেবল এ কথাই শেষ কথা নয়। যাওয়ার জন্য ডব্লিউটিও শেষ কর্তৃপক্ষ, যেখানে যাওয়া যেতে পারে। ১০০ ভাগ নিশ্চিত নয় যে আমরা পারব, কিন্তু আমরা মনে করি ঠিক আছে। তার আগে আমরা চাই যে আমরা দুই পক্ষ অন্যান্য বিষয় যেভাবে বিবেচনায় নিই, এ বিষয়ও নেব। আমরা ডব্লিউটিওতে যেতে পারি, কিন্তু আমরা যেতে চাই না। আমরা চাই কথা বলে বিষয়টি শেষ করতে।’
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার দ্বারস্থ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন বাংলাদেশের পাটপণ্য-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরাও। তারা জানিয়েছেন, বাণিজ্যমন্ত্রীর সফরে বিষয়টির সুরাহা হওয়ার বিষয়ে তারা আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু মেয়াদ বাড়ানোয় এখন বিকল্প ভাবতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা এটাও বলছেন, শুল্কারোপের মেয়াদ বৃদ্ধিতে দুই দেশের ব্যবসায়ীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এই তথ্য পত্রিকার সুত্র মতে দেশের স্বার্থবিরোধী, আমরা এই সিদ্ধান্তকে বিরোধীতা করছি বলে মন্তব্য করেছেন রাজু আহম্মদ খান প্রধান উপদেষ্টা এইচ আর এ - হিউম্যান রাইটস একটিভিটিস।
জনতা জুট মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ বশির উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেছিলেন, ‘পাটজাত পণ্যের বড় গ্রাহক দেশ ভারত। আরোপিত শুল্কে ভারতের গ্রাহকরা ন্যায্যমূল্যের পণ্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত দুই দেশেরই স্বার্থ পরিপন্থী বলেও আমি মনে করি।’
তারা জানতে চাইলে বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএসএ) ভাইস চেয়ারম্যান মৃধা মনিরুজ্জামান মনির সংবাদ মাধ্যমে বলেন, ‘বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, সম্ভবত বিষয়টি সমাধান হবে। আমরা আশাবাদী ছিলাম, শুল্ক প্রত্যাহার হবে। ভারতীয় কাউন্টার পার্টে যারা আমদানিকারক তারাও মনে করেছিল প্রত্যাহার হবে। কিন্তু যা ছিল তাই। কাউন্টার পার্টে দুটি পক্ষ আছে। যারা আমদানি করে, তারা চাচ্ছে শুল্ক প্রত্যাহার হোক। কিন্তু মিল মালিকরা চাচ্ছে শুল্ক আরোপিত থাকুক। আমরা খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করছি। দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমাধান না হলে ডব্লিউটিওর কাছে যাওয়ার বিষয়ে চিন্তা করছি।’
জানা গেছে, ভারতে উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে পাটপণ্য রফতানি করে আসছিলেন বাংলাদেশের রফতানিকারকরা। এ পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নেন দেশটির পাটপণ্য উৎপাদনকারীরা। আনুষ্ঠানিক অভিযোগের পর এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করে ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব অ্যান্টি-ডাম্পিং অ্যান্ড অ্যালাইড ডিউটিজ (ডিজিএডি)। প্রায় এক বছর তদন্তের পর ২০১৫ সালের অক্টোবরে চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেশ করে সংস্থাটি। এতে অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপের সুপারিশ করা হয়। এ সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন রাজস্ব বিভাগ শুল্কারোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ডিজিএডির সুপারিশের আলোকে বাংলাদেশ ও নেপাল থেকে রফতানি হওয়া জুট ইয়ার্ন/টোয়াইন, হেসিয়ান ফ্যাব্রিক ও জুট স্যাকস—ডাম্পিং হচ্ছে। ভারতের অভ্যন্তরীণ শিল্পের চেয়ে কম দামে এসব পণ্য আমদানি করা হচ্ছে। এতে অভ্যন্তরীণ শিল্পের মুনাফা ও বিনিয়োগে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এজন্য এসব দেশ থেকে পাটপণ্য রফতানিতে অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপের সুপারিশ করছে রাজস্ব বিভাগ। গেজেট প্রকাশের দিন থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর এটি কার্যকর থাকবে। এ শুল্ক দিতে হবে ভারতীয় মুদ্রায়।
গত ৩০ ডিসেম্বরের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বাংলাদেশের রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের ওপর প্রতি টন পাটপণ্যে সর্বনিম্ন ১৯ দশমিক ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫১ দশমিক ৭২ ডলার অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে হাসান আলী জুট মিলস লিমিটেড, আলীজান জুট মিলস, সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ, সিডল টেক্সটাইলস, সাগর জুট স্পিনিং মিলস, জনতা জুট মিলস, আশা জুট ইন্ডাস্ট্রিজ, প্রাইড জুট মিলস, বগুড়া জুট মিলস, এএম জুট ইন্ডাস্ট্রিজ, হাসান জুট অ্যান্ড স্পিনিং, রানু অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, নওহাটা জুট মিলস, মাওনা জুট মিলস, রাবেয়া জুট মিল, ওরিয়েন্টাল জুট মিলস, নওয়াব আব্দুল মালেক জুট মিলস, রহমান জুট মিলস, রাজবাড়ী জুট মিলস, ঊষা জুট স্পিনার্স, মদীনা জুট ইন্ডাস্ট্রিজ, মির্জা জুট মিলস, জেম জুট, আফজাল ফাইবার প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিজ, আনাম জুট প্রডাক্টস, বোনানজা জুট কম্পোজিট অ্যান্ড ডাইভার্স ফ্যাক্টরি, যমুনা জুট ইন্ডাস্ট্রিজ, জয় জুট মিলস, জুট টেক্সটাইল মিলস, গোল্ডেন জুট ইন্ডাস্ট্রিজ, হাসেন জুট ইন্ডাস্ট্রিজ, মাজেদা জুট ইন্ডাস্ট্রিজ, রিলায়েন্স জুট মিলস, সেলিম অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, শমসের জুট মিলস, ওয়াহাব জুট মিলস, আকিজ জুট মিলস, লাভলি জুট মিলস ও গ্লোরি জুট।
পত্রিকাকাটি বলেছে, জানা গেছে, পাটপণ্য রফতানিতে বাংলাদেশের শীর্ষ গন্তব্য ছিল ভারত। দীর্ঘদিন ধরে দেশটিতে পাট রফতানি করে আসছিলেন এখানকার রফতানিকারকরা। আর ভোক্তা চাহিদা থাকায় দেশটিও বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণে পাট আমদানি করত। তবে প্রতিযোগিতা সক্ষমতার দোহাই দিয়ে ভারতের পক্ষ থেকে পাটপণ্যে এ ধরনের কোনো আইনি পদক্ষেপের ঘোষণা ২০১৭ সালেই প্রথম।
সরকার পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানিতে ব্যবসায়ীদের নগদ অর্থ সহায়তা দেয়। এতেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাটপণ্যে ভর্তুকির মাধ্যমে ডাম্পিংয়ের অভিযোগ তোলেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। পরে ২০১৪ সালে ভারত সরকারের অনুমতি নিয়ে মামলা করেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এ প্রসঙ্গে সে সময় ভারতের পাট ব্যবসায়ীদের সংগঠন ইন্ডিয়ান জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (আইজেএমএ) পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশের রফতানিকারকরা ভর্তুকি মূল্যে ভারতে পাট রফতানি করছেন। ফলে বাংলাদেশ থেকে আমদানিও অনেক বেড়েছে। এর প্রভাবে স্থানীয় শিল্পসংশ্লিষ্টরা ব্যবসার ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ পাচ্ছেন না। স্থানীয় শিল্প সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই অ্যান্টি-ডাম্পিং মামলা।
তবে নগদ অর্থসহায়তার মাধ্যমে ডাম্পিং হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশের রফতানিকারকরা। একই মত ব্যক্ত করেছেন পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তাদের মতে, সরকার পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানিকারকদের নগদ সহায়তা দিচ্ছে সত্য। তা দেয়া হচ্ছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বিধি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থেকেই। তবে কোনো সুরাহা নেই।
২০২৩ এর মে মাসের এক পত্রিকার সূত্রমতে নীতিমালার কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে জানা যায়। তা হুবহু নীচে তুলে ধরা হলো।
ভারতের অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহার চায় বাংলাদেশি পাট ব্যবসায়ীরা:
নিয়মানুযায়ী, কোনো পণ্যের উপর পাঁচ বছরের বেশি মেয়াদে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করা যায় না।
পাটপণ্যের উপর আরোপিত অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহার করতে ভারতকে চিঠি দেওয়ার পর নিজেদের পাটশিল্প রক্ষা ও রপ্তানি বাড়াতে এই শুল্ক অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।
ভারতীয় পাটকল সমিতির (আইজেএমএ) দাবি, বাংলাদেশ সরকারের প্রণোদনা ভারতের পাটশিল্পের জন্য হুমকিস্বরূপ।
তবে এ খাতের বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা বলছেন, ২০১৭ সাল থেকে কার্যকর অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক বহাল রাখতে ভারত সরকারের উপর চাপ সৃষ্টিতেই তারা এমনটা বলছে।
নিয়মানুযায়ী, কোনো পণ্যের উপর পাঁচ বছরের বেশি মেয়াদে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করা যায় না।
বাংলাদেশের পাটপণ্যের উপর আরোপিত অ্যান্টি ডাস্পিং শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য গত মাসে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
বাংলাদেশি পাটপণ্যের উপর ভারতের আরোপিত এন্টি ডাম্পিং শুল্কের মেয়াদ পাঁচ বছর হয়ে যাওয়ায় এর মেয়াদ বাড়াতে সানসেট রিভিউ শুরু করছে দেশটি।
রোববার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডাব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান জানান, ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রীকে লেখা চিঠির কোনো উত্তর আসেনি এখনো।
ভারতীয় সংবাদপত্র দ্য হিন্দুর এক প্রতিবেদনে ভারতীয় পাটকল সমিতির এক বিবৃতির উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, "ভারত সরলার অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ না করলে এতোদিনে দেশের পাত খাত ধ্বংস হয়ে যেত"।
বাংলাদেশের পাট খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, এই শুল্ক আরোপের কারণে রপ্তানি কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের পাট শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএসএ) ভাইস-চেয়ার ও গোল্ডেন জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মৃধা মনিরুজ্জামান মনির বলেন, "অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্কের কারণে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি ক্রমান্বয়ে কমছে। একই দেশের পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে দুই ধরনের নীতি থাকতে পারে না। ফিনিশড গুডসে অ্যান্টি-ডাম্পিং ডিউটি দেওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি কিন্তু নিজেদের মিলগুলোর জন্য তারা র'জুট নিয়ে যাচ্ছে। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি, অ্যান্টি-ডাম্পিং তুলে দেওয়া হোক অথবা র'জুট আমদানির ওপর কর বাড়ানো হোক।"
ভারতীয় পাটকলগুলোর স্বার্থেই বাংলাদেশ থেকে পাট ও পাটপণ্য আমদানিতে দ্বৈতনীতি বাস্তবায়ন করা হয়েছে উল্লেখ করে এই দ্বৈতনীতি প্রত্যাহার অথবা বাংলাদেশে থেকে কাঁচাপাট আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্ক ট্যাক্স বসানোর দাবি জাানিয়েছেন তিনি।
ভর্তুকির বিষয়ে তিনি বলেন, "রপ্তানিতে সরকার যে প্রণোদনা দিচ্ছে, তা সহায়ক হয়েছে কিন্তু অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্কের কারণে ব্যয় বেশি হচ্ছে। এই প্রণোদনা যে বাংলাদেশ-ই শুধু দিচ্ছে এমনটা নয়, ভারত সরকারও তো দিচ্ছে। আমরা তো এটা নিয়ে কোনো অভিযোগ করছি না।"
রপ্তানি উৎসাহিত ও বাড়ানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার পাটসহ বিভিন্ন পণ্যে নগদ ভর্তুকি প্রদান করে।
২০১৭ সালে ভারত সরকার বাংলাদেশের পাটপণ্য রপ্তানির ওপর প্রতি টনে ১৯ ডলার থেকে ৩৫২ ডলার পর্যন্ত অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে।
ভারতের মিনিস্ট্রি অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের কমার্স ডিপার্টমেন্টের এক নির্দেশনায় বাংলাদেশ ও নেপাল থেকে রপ্তানি হওয়া পাটের সুতা, হেসিয়ান ফ্যাব্রিক, সেকিং ও সিবিসি এবং পাটের বস্তার উপর অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করা হয়।
প্রথম দফায় এই শুল্ক আরোপের ৫ বছর মেয়াদ গত জানুয়ারিতে শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় শুল্ক আরোপের মেয়াদ আগামী জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
বার বার অনুরোধ সত্বেও ভারত অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহার না করায় গত বছর ভারতে কাঁচাপাট রপ্তানির উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের পরিকল্পনা করছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে কাঁচাপাট রপ্তানির ক্ষেত্রে ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।
তবে পাটের উচ্চমূল্য এবং দেশীয় চাষীদের ক্ষতির আশঙ্কা থেকে সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে এই শুল্ক প্রত্যাহারের আবেদন জানানো হলেও ভারত সরকার কোনো উদ্যোগই নেয়নি। শুধুমাত্র পাটপণ্যের কাঁচামাল র'জুটকে এই শুল্কের বাইরে রাখা হয়েছে। কারণ ভারতীয় মিলগুলোর প্রয়োজনীয় কাঁচামালের একটি অংশের যোগান দেয় বাংলাদেশের পাটখাতের উদ্যোক্তারা।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই শুল্কের কারণে ভারতে পাটপণ্য রপ্তানিতে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে, পণ্য আমদানিতে খরচ বেশি হওয়ায় ভারতীয় ক্রেতা হারাচ্ছে দেশের পাট শিল্প।
এরফলে, ভারতে বাংলাদেশের পাটপণ্য রপ্তানি কমছে। অর্ডার না থাকায় অনেক মিল এখন বন্ধ ও কোথাও কোথাও সীমিত পরিসরে উৎপাদন চলছে বলে জানান তারা।
বাংলাদেশ পাটপণ্য রপ্তানিকারক সমিতি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ভারতীয় মিলগুলো চাহিদা অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন করতে না পারায় চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়। সরকার তো শুধু ভারতে পণ্য রপ্তানির জন্যই প্রণোদনা দিচ্ছে না। সব দেশের ক্ষেত্রেই দিচ্ছে, এতে ভারতের জুট মিলগুলো কোনো সমস্যা হওয়া কথা নয়।"
"জুট শিল্পের সাথে প্রায় চার থেকে সাড়ে চার কোটি মানুষের কর্মসংস্থান জড়িত। বিশাল সংখ্যক মানুষের জীবিকা ও পাট শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যই সরকার ইনসেনটিভ দিচ্ছে। ইনসেনটিভ না দিলে ফ্যাক্টরিগুলো চলানো যাবে না।"
তুলিকা ইকো লিমিটেডের প্রধান কার্য নির্বাহী ইসরাত জাহান চৌধুরী টিবিএসকে বলেন, "ভারত তার বিভিন্ন পণ্যের ওপর যেমন প্রণোদনা দেয়, তেমনি বাংলাদেশও রপ্তানি বৃদ্ধির ও শিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রণোদনা দিয়ে থাকে।"
পাট শিল্পকে আরো এগিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রণোদনা দেওয়া হয়, এটা কোন দেশের সাথে সম্পৃক্ত না। অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ককে ইস্যু করার জন্য এগুলো কেবল-ই অজুহাত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
✒️
Effect of Business Syndicate - HRA