22/06/2024
একবার আল্লাহ তাআলা আজরাইল আ.-এর কাছে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি অদ্যাবধি কত লোকের জান প্রাণ সংহার করেছ, তার ইয়ত্তা নেই। এই প্রাণ সংহার করতে গিয়ে কোনো লোকের ব্যাপারে তোমার দয়া ও মায়া হয়েছে তিনি বললেন, হ্যাঁ, দুই লোকের ব্যাপারে আমি দয়া ও মায়ার বশবর্তী হয়েছি। তখন আল্লাহ তাআলা বললেন, কারা সেই দুই লোক?
তখন আজরাইল বললেন, একসময় সমুদ্রের মধ্যে প্রবল ঝড় ও তুফান চলছিল। ইতিমধ্যে একটি জাহাজ ডুবে গেল। অনেক নারী-পুরুষ যাত্রীও ডুবে গেল। কতক লোক জাহাজের চৌকাঠ ইত্যাদির ওপর ভর করে কোনোরকম জান বাঁচিয়ে রাখে।
তন্মধ্যে এক অন্তঃসত্তা নারীও ছিল, যার প্রস্রব বেদনা শুরু হয়ে গিয়েছিল। ইত্যবসরে তার সন্তানও ভূমিষ্ট হয়ে গেল। সেই নাজুক ও বেগতিক পরিস্থিতিতে সেই নারী তার সন্তানকে খুব যত্ন করছিলেন এবং বুকে আগলে রাখলেন। তখন ওই নবজাত শিশুটির জন্য কোনো আহার্য বন্দোবস্ত হলো না। এই মুহূর্তে আপনি আদেশ করলেন, এই মহিলার প্রাণ সংহার করো। তখন আমি দয়াপরবশ হলাম এবং ভাবলাম, তাকে যদি কবজা করে নিই, সন্তানে কী অবস্থা হবে!
তখন আল্লাহ তাআলা বললেন, দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি যার প্রাণ সংহার করতে গিয়ে তুমি দয়াপরবশ হয়েছ?
মালাকুল মওত উত্তর দিতে গিয়ে বললেন— দ্বিতীয় ব্যক্তি যার ব্যাপারে আমি দয়ার্দ্র হয়েছিলাম, সে হলো শাদ্দাদ। সে ছিল আপনার এক অবাধ্য বান্দা। যাকে আপনি অঢেল সম্পদ, বিত্ত-বৈভব ও প্রতিপত্তির অধিকারী করেছিলেন। সে একপর্যায়ে দুনিয়ার প্রতি মোহগ্রস্থ হয়ে জান্নাত বানানোর ব্যাপারে বদ্ধপরিকর হয়। অবশেষে অনেক কষ্টেসৃষ্টে একটি জান্নাত বানায় সে। দুনিয়ায় যাবতীয় সৌন্দর্য-সৌকর্যে ও বিস্ময়কর জিনিস উদ্ভাবনে অনন্যসাধারণ এক প্রাসাদ নির্মাণ করে। অবশেষে যখন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে এক পা মাড়িয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে লাগল, ঠিক সে মুহূর্তে তার প্রাণ সংহার করার ব্যাপারে আমি আদিষ্ট হই।
এ ঘটনা মনে পড়লে এখনো আশাবাদী হই, সে যদি একটুখানি তার নির্মিত জান্নাতে প্রবেশ করার সুযোগ পেত! তখন আল্লাহ তাআলা বললেন,
তুমি এক ব্যক্তির ব্যাপারে দুই বার দয়াপরবশ হয়েছ। শাদ্দাদ হলো সেই ছোট বাচ্চা, যার মাকে তুমি ঝড়- তুফানের সময় অন্ধকারাচ্ছন্ন রাতে প্রাণ সংহার করেছিলে। আমি তাকে যথাযথভাবে লালনপালন করেছি। তাকে অনন্য মেধা-মনন, প্রতিভা ও প্রজ্ঞার অধিকারী করেছি। একপর্যায়ে সে বড় হয়ে আমার অবাধ্য হয় এবং আমার মোকাবিলায় জান্নাত বানাতে প্রস্তুত হয়ে যায়।
তাহলে বুঝতে পারলাম, মৃত্যু একটি অনিবার্য পরিণতি।
আমাদেরকে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় অবশ্যই গ্রাস করে নেবে। জন্য প্রিয়নবি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যুকে অধিকহারে স্মরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন--
হজরত আবু হুরাইরা রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা বেশি করে স্বাদ হরণকারী বিষয়, অর্থাৎ মৃত্যুর স্মরণ করো।
মৃত্যু আমাদের ইচ্ছাধীন নয়। কিছু সুন্দররূপে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা আমাদের ইচ্ছার অন্তর্ভুক্ত।
তার পদ্ধতি হলো—নিজেকে সব ধরনের পাপাচার-দুরাচার থেকে নিবৃত্ত রাখা। কখনো শয়তাতের প্ররোচনায় গুনাহ হয়ে গেলে তাৎক্ষণিক তাওবা করে নেওয়া।
বই: জান্নাতে যাওয়ার সহজ পথ
বই ছবি ক্লিক পাঠকের।