07/04/2022
তারাবীহ নামায (২০) রাকাত-ই সূন্নাত
-------------------------------------------------
আব্দুল করীম বিন আবু হানিফ
-------------------------------------------------
তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার ও জ্ঞানপ্রাপ্ত, আল্লাহ তাদের মর্যাদা উঁচু করে দিবেন। তোমরা যা কিছু কর আল্লাহ তা খবর রাখেন’ (মুজাদালাহ ১১)।
হোম তারাবির নামাজ ২০ ( বিশ) রাকাতই সুন্নাত
তারাবির নামাজ ২০ ( বিশ) রাকাতই সুন্নাত
তারাবির নামায রাসুলুল্লাহ (দঃ) র ৪ জন প্রধান খলিফা সাহাবীদের তাবেয়ীদের ৪ মাযহাবের ইমামগণ এর মত।
রামাদান মাসের রাতে ইশার নামাযের পর এবং বিতর নামাজের আগে দুই দুই রাকাত করে ১০ সালামে যে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করা হয়, একে তারাবী নামাজ বলা হয়। আরবী ‘তারাবিহ’ শব্দটির মূল ধাতু ‘রাহাতুন’ অর্থ আরাম বা বিশ্রাম করা। বিশেষ করে প্রতি চার রাকাত পর একটু বসে বিশ্রাম করতে হয় এবং দোয়া ও তসবিহ পাঠ করতে হয়। এ জন্য এই নামাজকে ‘সালাতুত তারাবিহ’ বা তারাবি নামাজ বলা হয়।
রামাদান মাসের নির্দিষ্ট নামাজ হচ্ছে সালাতুত তারাবিহ। তারাবি নামায জামাতে পড়া (মহিলাদের বাসায় পড়তে হবে) ও সম্পূর্ণ কোরআন শরিফ একবার খতম করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। রাসুলুল্লাহ (দঃ) নিজে তারাবির নামায পড়েছেন এবং সাহাবায়ে কিরামকেও পড়ার জন্য আদেশ দিয়েছেন। তারাবির নামাযের রাকাতের বিষয়ে বিভিন্ন সংখ্যা পাওয়া যায়।তবে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য, সর্বজন সমর্থিত হলো ২০ রাকাত।
তারাবীহ এর নামায ৮ রাকায়াত মনে করাটাই বেদায়াত। আর ৮ রাকায়াত মনে করে এর উপর আমল করা হল বেদায়াতের উপর আমল করা। ১৪০০ বছর পর পথভ্রষ্ট ব্যক্তির ফতোয়ার উপর ভিত্তি করে ৮ রাকায়াত তারাবীহ এর সূচনা ঘটে মুসলিম উম্মাহের কিছুর মধ্যে। যখন এই বেদায়াত আমলের দলিল বুখারী থেকে দেওয়া হয় তখন অবশ্যই এর বিরোধিতা ব্যাপক ভাবে হওয়া চাই। সাধারণ মানুষ যেন গুটি কয়েক লোকের কথার দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অবস্থান থেকে ছিটকে না পড়ে।
২০ রাকাত তারাবী নামাযের ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (দঃ) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে পুণ্য লাভের আশায় রামাদানের রাতে তারাবী নামায আদায় করে, তার অতীতে কৃত পাপগুলো ক্ষমা করা হয়।"
(বুখারি ও মুসলিম)।
মাহে রামাদানে রোযা, তারাবী নামায, কোরআন তিলাওয়াত ও অন্যান্য ইবাদতের দরুন আল্লাহ তাআলা রোযাদার ব্যক্তির আগের সব গুনাহ মাফ করে দেন। রাসুলুল্লাহ (দঃ) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে পুণ্য লাভের আশায় রোযা রাখে, তারাবি নামায পড়ে এবং কদরের রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত করে, তার জীবনের পূর্বের সব গুনাহ মাফ করা হবে।’
(বুখারি ও মুসলিম)
রাসুলুল্লাহ (দঃ) সর্বদা তারাবি নামায জামাতে পড়েননি। কারণ, নবীজি(দঃ)ﷺ মনে করেছিলেন যে যদি তিনি সর্বদা জামাতে তারাবী নামায আদায় করেন, তাহলে তার উম্মতের উপর এটি যে এটা ফরজ হয়ে যেতে পারে। এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (দঃ) আরোও ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা রামাদানের রোযা গুলো ফরজ করেছেন এবং এর রাতে তারাবী নামাযের জন্য দণ্ডায়মান হওয়াকে অশেষ পুণ্যের কাজ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।’
আল্লাহ আমাদের তারাবির নামাযের অপরিসীম ফজিলত এবং জামাতে খতম তারাবি আদায়ের মাধ্যমে অধিক পুণ্য লাভের তাওফিক দান করুন! আমিন!!
সাহিহ হাদিসে তারাবির নামায।
১.
ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺍﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻛﺎﻥ ﻳﺼﻠﻰ ﻓﻰ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ ﻭﺍﻟﻮﺗﺮ
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (দঃ) রমজান মাসে বিশ রাকাত এবং বিতির পড়তেন।
{মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা -২/২৯৪, হাদীস নং- ৭৬৯২, মুসনাদে আব্দবিন হুমাইদ-২১৮, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-১২১০২, মাজমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৭২, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৪৩৯১}
এবার দেখার বিষয় হল, উম্মতের ঐক্যমত্বের আমল এর উপর আছে কি নেই? যদি দেখা যায় যে, উম্মতের আমল এর উপরই। তাহলে আমল হিসেবে গ্রহণযোগ্য হওয়ার দ্বারা উক্ত হাদীস সহীহ হয়ে যায়।
হযরত ওমর (রাঃ)র আদেশঃ
২.
ﻋﻦ ﻳﺤﻴﻰ ﺑﻦ ﺳﻌﻴﺪ ﺍﻥ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﺍﻣﺮ ﺭﺟﻼ ﻳﺼﻠﻰ ﺑﻬﻢ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ
হযরত ইয়াহইয়া বিন সাঈদ থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ) এক ব্যক্তিকে বিশ ৩ পড়ার হুকুম দিলেন।
{মুসান্নাফে ইবনে আবীশাইবা-২/২৯৩}
হযরত ওমর(রাঃ)র শাসনামল
৩.
ﻭﺭﻭﻯ ﻣﺎﻟﻚ ﻣﻦ ﻃﺮﻳﻖ ﻳﺰﻳﺪ ﺑﻦ ﺧﺼﻴﻔﺔ ﻋﻦ ﺍﻟﺴﺎﺋﺐ ﺑﻦ ﻳﺰﻳﺪ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ
হযরত সায়েব বলেনঃ হযরত ওমর (রাঃ)র সময়কালে বিশ রাকাত তারাবীহ ছিল।
{ফাতহুল বারী-৪/৪৩৬} যার সনদ বুখারীতে দুই স্থানে আছে।
৪.
ﻋﻦ ﺍﻟﺴﺎﺋﺐ ﺑﻦ ﻳﺰﻳﺪ ، ﻗﺎﻝ : ﻛﻨﺎ ﻧﻘﻮﻡ ﻓﻲ ﺯﻣﺎﻥ ﻋُﻤَﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﺑﻌﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ ﻭﺍﻟﻮﺗﺮ
হযরত সায়েব বিন ইয়াজিদ (রাঃ) বলেনঃ আমরা হযরত ওমর (রাঃ)র শাসনামলে বিশ রাকাত তারাবীহ ও বিতির পড়তাম।
{সুনানে সুগরা লিল বায়হাকী, হাদীস নং-৮৩৩, মারিফাতুস সুনান ওয়াল আসার, হাদীস নং-১৪৪৩}। ইমাম নববী রহঃ, সুবকী (রাঃ) [শরহুল মিনহাজ], মোল্লা আলী কারী (রাঃ) [শরহুল মুয়াত্তা] ও সুয়ুতী (রাঃ)
এ বর্ণনাকে সহীহ বলেছেন।
৫.
ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻛﻌﺐ ﺍﻟﻘﺮﻇﻰ ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻳﺼﻠﻮﻥ ﻓﻰ ﺯﻣﺎﻥ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﻓﻰ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ ﻭﻳﻮﺗﺮﻭﻥ ﺑﺜﻼﺙ
মুহাম্মদ বিন কাব কুরজী বলেনঃ ওমর ফারুক (রাঃ)র শাসনামলে লোকেরা রমজান মাসে বিশ রাকাত তারাবীহ ও তিন রাকাত বিতির পড়তো।
৬.
ﻋﻦ ﻳﺰﻳﺪ ﺑﻦ ﺭﻭﻣﺎﻥ ، ﺃﻧﻪ ﻗﺎﻝ : « ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻳﻘﻮﻣﻮﻥ ﻓﻲ ﺯﻣﺎﻥ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺑﺜﻼﺙ ﻭﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ »
হযরত ইয়াজিদ বিন রূমান বলেনঃ লোকেরা হযরত ওমর (রাঃ)র শাসনামলে বিশ রাকাত তারাবীহ এবং তিন রাকাত বিতির রমজান মাসে আদায় করতো।
{মারিফাতুস সুনান ওয়াল আসার, হাদীস নং-১৪৪৩, মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-৩৮০, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৪৩৯৪}
৭.
ﻋﻦ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﺍﻥ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﺟﻤﻊ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻋﻠﻰ ﺍﺑﻰ ﺑﻦ ﻛﻌﺐ ﻓﻜﺎﻥ ﻳﺼﻠﻰ ﺑﻬﻢ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ
হযরত হাসান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হযরত ওমর (রাঃ) লোকদেরকে হযরত উবায় বিন কাব (রাঃ)র কাছে একত্র করে দিলেন। আর তিনি লোকদের বিশ রাকাত তারাবীহ পড়াতেন।
{সুনানে আবু দাউদ-১/২০২, সিয়ারু আলামিন নুবালা-১/৪০০}
৮.
ﻋﻦ ﺍﺑﻰ ﺑﻦ ﻛﻌﺐ ﺍﻥ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﺍﻣﺮﻩ ﺍﻥ ﻳﺼﻠﻰ ﺑﺎﻟﻴﻞ ﻓﻰ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻓﺼﻠﻰ ﺑﻬﻢ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ
হযরত উবায় বিন কাব (রাঃ) বলেনঃ হযরত ওমর (রাঃ) আমাকে এই মর্মে আদেশ দিলেন যে, আমি যেন লোকদেরকে তারাবীহ পড়াই। তখন বিশ রাকাত পড়া হতো।
{কানযুল উম্মাহ- ৮/২৬৪}। ইমাম বায়হাকী, আল্লামা বাজী, কাশতাল্লানী, ইবনে কুদামা, ইবনে হাজার মক্কী, তাহতাবী, ইবনে হুমাম, বাহরুর রায়েক প্রণেতা (রাঃ) প্রমুখগণ এ ব্যাপারে একমত হয়ে বলেনঃ হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) এর শাসনামলে বিশ রাকাত তারাবীহের উপরই সকলের সিদ্ধান্ত স্থির হয়। এবং এভাবেই চলতে থাকে।
ইংরেজ আমলের পূর্বে ও কোন একজন মুহাদ্দিস বা ফক্বীহ এটাকে অস্বীকার করেননি। আর সুন্নত হওয়ার জন্য সেটির নিরবচ্ছিন্ন হওয়া শর্ত। তাই এই বিশ রাকাত তারাবীহ সুন্নতে ফারূকী হয়েছে। এ সেই ওমর (রাঃ) যার ব্যাপারে রাসূল (দঃ) এরশাদ করেছেন যে, যদি আমার পর কোন নবী হতো তাহলে নবী হতো ওমর রাঃ। তিনি আরো বলেছেনঃ দ্বীনের ব্যাপারে সবচে’ মজবুত হলেন ওমর রাঃ। রাসুল ﷺ আরও বলেছেন, ওই সত্ত্বার কসম, যার আয়ত্বে আমার প্রাণ, শয়তান কখনো তোমার (ওমর রাঃ) চলার পথে তোমার সঙ্গে মিলিত হয় নি। বরং তোমার রাস্তা ছেড়ে অন্য রাস্তায় চলে গেছে। মুসলিম শরীফ, ৭ম খণ্ড-হাদিস নম্বর-৬০২৫। সুবহানআল্লাহ
এছাড়া ওমর ইবনে খাত্তাবকে (রাঃ) রাসুল (দঃ) তত্ত্ব জ্ঞান সম্পন্ন বলেছেন। যার অর্থ- গোপন প্রত্যাদেশ প্রাপ্ত। তত্ত্ব জ্ঞানকে আরবীতে ইলহাম বলা হয়। মহান আল্লাহ্ রব্বুল আ’লামিন হযরত ওমরকে (রাঃ) এমন সুক্ষ জ্ঞান দান করেছেন যে তিনি বিভিন্ন সময় যে মতামত ও সিদ্ধান্ত দিয়েছেন পরে তা সঠিক সিদ্ধান্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে। প্রিয় নবী করিম (দঃ)তার পরে হজরত আবু বকর (রাঃ) ও হজরত ওমরে (রাঃ)র অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
হুজাইফা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (দঃ) বলেছেন, আমার পরে তোমরা তাদের মধ্যে আবু বকর ও ওমরের অনুসরণ করবে। তিরমিজি,ষষ্ঠ খণ্ড-হাদিস নম্বর-৩৬০১।
হজরত ওমর ইবন খাত্তাব (রাঃ) যার এতো মর্যাদা, যিনি এতো জ্ঞানের অধিকারী সেই ওমরই (রাঃ) তারাবির নামাজ বিশ রাকআত জামায়াতে পড়ার প্রচলন করেন যদি বিশ রাকাত তারাবীহ নামায বিদআত হয়, তাহলে হযরত ওমর (রাঃ) সহ সে সময়কার সমস্ত আনসার ও মুহাজির সাহাবীগণের বিদআতি হওয়ার আবশ্যক হয়! নাউযুবিল্লাহ
হযরত উসমান (রাঃ)র শাসনামলঃ
হযরত সায়েব বিন ইয়াজিদ বলেনঃ হযরত ওমর (রাঃ)র শাসনামলে লোকেরা বিশ রাকাত তারাবীহ পড়তেন। আর হযরত উসমান (রাঃ)র শাসনামলে লম্বা কেরাতের কারণে লাঠির উপর ভর দিতেন।
{বায়হাকী -৪/২৯৬}।
হযরত উসমান (রাঃ)র শাসনামলের কেউ বিশ রাকাত তারাবীহকে বিদআত বলেছে এমন একজন ব্যক্তিও পাওয়া যাবে না।
হাযরাত আলী (রাঃ)র শাসনামল
ﻋﻦ ﺍﺑﻰ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺴﻠﻤﻰ ﻋﻦ ﻋﻠﻰ ﻗﺎﻝ ﺩﻋﻰ ﺍﻟﻘﺮﺍﺀ ﻓﻰ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻓﺎﻣﺮ ﻣﻨﻬﻢ ﺭﺟﻼ ﻳﺼﻠﻰ ﺑﺎﻟﻨﺎﺱ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ ﻗﺎﻝ ﻭﻛﺎﻥ ﻋﻠﻰ ﻳﻮﺗﺮ ﺑﻬﻢ
হযরত আবু আব্দুর রহমান সুলামী বলেনঃ হযরত আলী (রাঃ) রমজান মাসে কারীদের ডাকতেন। তারপর তাদের মাঝে একজনকে বিশ রাকাত তারাবীহ পড়াতে হুকুম দিতেন। আর বিতিরের জামাত হযরত আলী নিজেই পড়াতেন।
{বায়হাকী-৪/৪৯৬}
ﻋﻦ ﺍﺑﻰ ﺍﻟﺤﺴﻨﺎﺀ ﺍﻥ ﻋﻠﻴﺎ ﺍﻣﺮ ﺭﺟﻼ ﺍﻥ ﻳﺼﻠﻰ ﺑﺎﻟﻨﺎﺱ ﺧﻤﺲ ﺗﺮﻭﻳﺤﺎﺕ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ
হযরত আবুল হাসনা বলেনঃ হযরত আলী (রাঃ) এক ব্যক্তিকে বিশ রাকাত পড়াতে হুকুম দিয়েছেন।
{সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৪৮০৫, ৪৩৯৭, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-২৩৪৭৪}
এটাও মনে রাখতে হবে যে, এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হল যে, বিশ রাকাতওয়ালা নামাযের নাম তারাবীহ হযরত আলী (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। কোন খোলাফায়ে রাশেদীন বা কোন সাহাবী আট রাকাতের সাথে তারাবীহ শব্দ উচ্চারণ করেননি। হাদীস ভান্ডারে এর কোন প্রমাণ নেই।
ﻋﻦ ﺯﻳﺪ ﺑﻦ ﻭﻫﺐ ﻗﺎﻝ ﻛﺎﻥ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻳﺼﻠﻲ ﺑﻨﺎ ﻓﻲ ﺷﻬﺮ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻓﻴﻨﺼﺮﻑ ﻭﻋﻠﻴﻪ ﻟﻴﻞ ﻗﺎﻝ ﺍﻻ ﻋﻤﺶ ﻛﺎﻥ ﻳﺼﻠﻰ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ ﻭﻳﻮﺗﺮ ﺑﺜﻠﺚ
হযরত জায়েদ বিন ওহাব বলেনঃ হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ আমাদের তারাবীহ পড়িয়ে ফারিগ হতেন এমতাবস্থায় যে, তখনো রাত অনেক বাকি থাকতো, ইমাম আমাশ বলেনঃ তিনি বিশ রাকাত তারাবীহ আর তিন রাকাত বিতির পড়াতেন। {কিয়ামুল লাইল -১৫৭}।
জমহুর ও মশহুর সাহাবাগণ (রাঃ)
ﺍﺑﻮ ﺣﻨﻴﻔﺔ ﻋﻦ ﺣﻤﺎﺩ ﻋﻦ ﺍﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ﺍﻥ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻳﺼﻠﻮﻥ ﺧﻤﺲ ﺗﺮﻭﻳﺤﺎﺕ ﻓﻰ ﺭﻣﻀﺎﻥ
হযরত ইমাম আবু হানীফা (রাঃ) হযরত ইবরাহীম [ওফাত-৯৬হিজরী] থেকে বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয় লোকেরা [সাহাবী ও তাবেয়ীগণ] রমজান মাসে বিশ রাকাত তারাবীহ পড়তো।
{কিতাবুল আসার লিআবী ইউসুফ}
ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻌﺰﻳﺰ ﺑﻦ ﺭﻓﻴﻊ ﻗﺎﻝ ﻛﺎﻥ ﺍﺑﻰ ﺑﻦ ﻛﻌﺐ ﻳﺼﻠﻰ ﺑﺎﻟﻨﺎﺱ ﻓﻰ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺑﺎﻟﻤﺪﻳﻨﺔ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ ﻭﻳﻮﺗﺮ ﺑﺜﻼﺛﺔ
হযরত আব্দুল আজীজ বিন রফী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ হযরত উবায় বিন কাব (রাঃ) লোকদেরকে রমজান মাসে মদীনা মুনাওয়ারায় বিশ রাকাত তারাবীহ এবং তিন রাকাত বিতির নামায পড়াতেন।
{মুসান্নাফ ইবনে আবীশাইবা-২/৩৯৩}
ﻋﻦ ﻋﻄﺎﺀ ﻗﺎﻝ ﺍﺩﺭﻛﺖ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻭﻫﻢ ﻳﺼﻠﻮﻥ ﺛﻠﺜﺔ ﻭﻋﺸﺮﻭﻥ ﺭﻛﻌﺔ ﺑﺎﻟﻮﺗﺮ
হযরত আতা [ওফাত-১১৪হিজরী] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি লোকদের [সাহাবী ও তাবেয়ীগণ] বিশ রাকাত তারাবীহ এবং তিন রাকাত বিতির পড়তে দেখেছি। {মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-২/৩৯৩}
তাবেঈদের মতে তারাবির নামাযঃ-
হযরত সুয়াইদ বিন গাফালা যিনি বয়সে রাসূল স্বাল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মাত্র তিন বছরের ছোট ছিলেন। তিনি ইমামতি করাতেন। হযরত আবুল হাজীব বলেনঃ
ﻛﺎﻥ ﻳﺆﻣﻨﺎ ﺳﻮﻳﺪ ﺑﻦ ﻏﻔﻠﺔ ﻓﻰ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻓﻴﺼﻠﻰ ﺧﻤﺲ ﺗﺮﻭﻳﺤﺎﺕ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ
হযরত সুইয়াইদ বিন গাফালা রমজান মাসে আমাদের জামাতের সাথে পাঁচ তারবিহায় বিশ রাকাত নামায পড়াতেন। {বায়হাকী-২/৪৯}
ﻋﻦ ﺍﺑﻰ ﺍﻟﺒﺨﺘﺮﻯ ﺍﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻳﺼﻠﻰ ﺧﻤﺲ ﺗﺮﻭﻳﺤﺎﺕ ﻓﻰ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﻳﻮﺗﺮ ﺑﺜﻼﺙ
হযরত আবুল বুখতারী (রাঃ) বলেন তিনি রমজানে বিশ রাকাত তারাবিহ ও তিন রাকাত বিতির পড়তেন। {মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৭৬৮৬}
বাইতুল্লাহ শরীফে বিশ রাকাত তারাবীহ
মক্কা মুকাররমায় হযরত আতা বিন আবী রাবাহ (রাঃ) [ইন্তেকাল ১১৪হিজরী] বলেনঃ তথা আমি লোকদের [সাহাবা ও তাবেয়ীগণ] বিতির নামাযসহ ২৩ রাকাত পড়তে দেখেছি।
{মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-২/৩৯৩}।
আর ইমাম ইবনে আবী মালিকাহ [ইন্তেকাল ১১৭হিজরী] লোকদের মক্কায় বিশ রাকাত তারাবীহ পড়াতেন। {মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-২/৩৯৩}।
★ইমাম শাফেয়ী (রাঃ) [ইন্তেকাল ২০৪হিজরী] বলেনঃ আমি স্বীয় শহর মক্কায় লোকদের বিশ রাকাত তারাবীহ পড়া অবস্থায়ই পেয়েছি। {তিরমিজী-১/১৬৬}। আর আজ পর্যন্ত মক্কা মুকাররমায় বিশ রাকাত তারাবীহই পড়া হচ্ছে।
মসজিদে নববীতে বিশ রাকাত তারাবীহঃ
মদীনা তায়্যিবাহর মাঝে হযরত ওমর (রাঃ) হযরত উসমান (রাঃ) হযরত আলী (রাঃ) এর শাসনামলে বিশ রাকাত তারাবীহই পড়া হতো। আজো মদীনা মুনাওয়ারায় বিশ রাকাত তারবীহই পড়া হয়। হযরত আয়শা (রাঃ) ও মদীনা মুনাওয়ারায় অবস্থান করতেন। তিনিই রাসূলুল্লাহ (দঃ)র ফরমান বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার দ্বীনের মাঝে বেদআত বের করবে, তার কাজটি পরিত্যাজ্য। যদি বিশ রাকাত তারাবীহের নামায বিদআত ও নাজায়েজ হতো, তাহলে হযরত আয়শা (রাঃ) বছরের পর বছর এর উপর চুপ করে বসে থাকতেন না।
হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) ও মদীনায়
অবস্থান করছিলেন। তিনি ঐ হাদীসের রাবী। যাতে বলা হয়েছে যে, প্রত্যেকটি বিদআত গোমরাহী আর প্রত্যেক গোমরাহী জাহান্নামে নিক্ষেপকারী। অথচ তারই সামনে অর্থ শতাব্দী পর্যন্ত মসজিদে নববীতে বিশ রাকাত তারাবীহ জামাতের সাথে পড়া হচ্ছিল, অথচ তিনি এর বিরুদ্ধে কোন কথা বলেন নি। এটা হতেই পারে না।
বিশ্ববিখ্যাত চার ইমাম (রাঃ)এর বক্তব্যঃ
শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলবী (রাঃ) বলেনঃ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত চার মাযহাবে সীমাবদ্ধ। এ চার ইমামের মাঝে প্রথম ইমাম হলেন ইমাম আবু হানীফা (রাঃ) [ইন্তেকাল ১৫০ হিজরী], তিনি ও বিশ রাকাত তারাবীহের প্রবক্তা।
[ফাতাওয়া কাজীখান-১/১১২}
ইমাম মালিক (রাঃ) এর একটি বক্তব্য বিশ রাকাতের পক্ষে, দ্বিতীয় বক্তব্য ৩৬ রাকাতের পক্ষে। [যাতে বিশ তারাবীহ আর ১৬ রাকাত নফল]। হেদায়াতুল মুজতাহিদ-১/১৬৭)।
ইমাম শাফেয়ী (রাঃ) বিশ রাকাতের প্রবক্তা।
{আলমুগনী-২/১৬৭}।
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রাঃ) এর মুখতার বক্তব্যও বিশ রাকাতের পক্ষে। [আলমুগনী- ২/১৬৭}
চার মাযহাবের ফিক্বহের ইবারতের মাঝে কোন
একটি ইবারতেও শুধু আট রাকাত তারাবীহকে সুন্নত আর বিশ রাকাততে বিদআত বলা হয়নি।
#কেউ_কেউ_বুখারী_শরিফের_একটি_হাদিসেকে_ভুল_বুঝে_৮_রাকাত_তারাবির_কথা_বলে_থাকেন। কিন্তু হাদিসটি তাহাজ্জুদের নামাযের,তারাবির নয়।
হযরত আবু সালমা বিন আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত তিনি আয়েশা (রাঃ)র কাছে জানতে চান নবীজী (দঃ)র নামায রামাদান মাসে কেমন হতো? (উক্ত প্রশ্নকারী এই জন্য এই প্রশ্ন করেছিলেন যে রামাদান এ ২০ রাকাত তারাবি পড়ার পরেও কি রাসুলুল্লাহ (দঃ) রাতে তাহাজ্জুদের নামায সম্পুর্ন পরতেন নাকি কম?) তিনি বললেন-রাসূল (দঃ) রামাদান ও রামাদান ব্যতীত (মা আয়েশা (রাঃ) এমন নামাযের কথা বলছেন যেটা রমাদান বাদেও পড়া যায়,আর সেটাই হলো তাহাজ্জুদ যেটা ১২ মাসই পড়া যায়) ১১ রাকাত থেকে বাড়াতেন না। তিনি ৪ রাকাত পড়তেন তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জানতে চেওনা। তারপর পড়তেন ৪ রাকাত তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা বিষয়ে জানতে চেওনা, তারপর পড়তেন ৩ রাকাত। হযরত আয়েশা রাঃ বলেন-তখন আমি বললাম-হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি বিতর পড়ার পূর্বে শুয়ে যান? তিনি বললেন-হে আয়েশা! নিশ্চয় আমার দু’চোখ ঘুমায় আমার কলব ঘুমায়না।
(সহীহ বুখারী-১/১৫৪)।
আসল কথা হল এই যে, এই হাদিসটি তাহাজ্জুদ নামাযের সাথে সংশ্লিষ্ট। এতে তারাবীহের কথা বর্ণিত নয়। নিম্নে এ ব্যাপারে কিছু প্রমাণ উপস্থাপন করা হল।
হাদিসের শব্দ ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻳﺰﻳﺪ ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﻻ ﻓﻲ ﻏﻴﺮﻩ (নবীজী (দঃ) রামাদান ও রামাদান ব্যতীত অন্য সময় বাড়াননি) এটাই বুঝাচ্ছে যে, প্রশ্নটি করা হয়েছিল রামাযান ছাড়া অন্য সময়ে যে নামায নবীজী পড়তেন তা রামযানে বাড়িয়ে দিতেন নাকি কমিয়ে দিতেন? এই প্রশ্নটি এজন্য করা হয়েছে যেহেতু বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে রাসূল (দঃ) রামাদানে আগের তুলনায় অনেক নামায পড়তেন ও ইবাদত করতেন, তাই এই প্রশ্নটি করাটা ছিল স্বাভাবিক। আর রামদান ছাড়া কি তারাবীহ আছে? নাকি ওটা তাহাজ্জুদ? তাহাজ্জুদ হওয়াটাই কি সঙ্গত নয়? সুতরাং এটাই স্পষ্ট বুঝা যায় তারাবীহ নয় প্রশ্ন করা হয়েছে তাহাজ্জুদ নিয়ে যে, নবীজী তাহাজ্জুদের নামায রামাদান ছাড়া যে ক’রাকাত পড়তেন তা থেকে রামাদানে বাড়িয়ে পড়তেন কিনা? এর জবাবে আয়েশা রাঃ বললেন- ১১ রাকাত থেকে বাড়াতেননা তাহাজ্জুদ নামায।
এই হাদিস দ্বারা এটা প্রমাণিত হল নবীজী (দঃ) এক সালামে ৪, ৪ রাকাত করে তাহাজ্জুদ আর শেষে এক সালামে ৩ রাকাত বিতর পড়েছেন, অথচ ৮ রাকাতীদের আমল এর বিপরীত। তারা তারাবীহ দুই দুই রাকাত করে পড়ে। আর বিতর এক রাকাত বা তিন রাকাত দুই সালামে পড়ে। সুতরাং যেই হাদিস দলিল দাতাদের কাছেই আমলহীন, তাহলে এর দ্বারা দলিল তারা কিভাবে দিতে পারে?
এই হাদিসের শেষাংশে এই শব্দ আছে যে ﻗﺎﻟﺖ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﻓﻘﻠﺖ ﻳﺎﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﺗﻨﺎﻡ ﻗﺒﻞ ﺃﻥ ﺗﻮﺗﺮ ؟ (তারপর আয়েশা (রাঃ) বললেন-হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি বিতর পড়ার আগে ঘুমান?) এই বিষয়টি তারাবীহ এর ক্ষেত্রে কল্পনাতীত যে নবীজী (দঃ) তারাবীহ নামায পড়ে ঘুমিয়ে পড়েন আর সাহাবীরা বিতর পড়ার জন্য নবীজীর জন্য অপেক্ষমাণ থাকেন। বরং এটি তাহাজ্জুদের ক্ষেত্রে হওয়াটাই যুক্তিসঙ্গত নয়কি?
মুহাদ্দিসীনে কিরাম এই হাদিসকে তারাবীহ এর অধ্যায়ে উল্লেখ করেননি। বরং তাহাজ্জুদ অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। ইমাম মুহাম্মদ বিন নসর মারওয়াজী তার কিতাব “কিয়ামুল লাইল” এর “ ﻋﺪﺩ ﺍﻟﺮﻛﻌﺎﺕ ﺍﻟﺘﻰ ﻳﻘﻮﻡ ﺑﻬﺎ ﺍﻻﻣﺎﻡ ﻟﻠﻨﺎﺱ ﻓﻰ ﺭﻣﻀﺎﻥ ”(রামযানে ইমাম কত রাকাত তারাবীহ পড়বে) অধ্যায়ে অনেক হাদিস আনলেও আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত এই হাদিসটি সহীহ হওয়া সত্বেও তিনি আনেননি। সাথে এদিকে কোন ইশারাও করেননি।
মুহাদ্দিসীনে কিরাম এই হাদিসকে তারাবীহ এর রাকাত সংখ্যার অধ্যায়ের পরিবর্তে তাহাজ্জুদের অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। যেমন ইমাম বুখারী (রাঃ) তার প্রণিত বুখারী শরীফে এই হাদিসটি নিম্ন বর্ণিত অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন-
(ক) বিতর অধ্যায়-(১/১৩৫)
(খ) নবীজী (দঃ)র রাতে (নামাযের উদ্দেশ্যে)
দান্ডয়মানতা রামদানে ও রামদান ছাড়া-(১/১৫৪)
(গ) রামদানে (নামাযের উদ্দেশ্যে) দন্ডায়মানতার ফযীলত অধ্যায়-(১/২৬৯)। প্রথম অধ্যায়ে বিতরের রাকাত সংখ্যা আর দ্বিতীয় অধ্যায়ে তাহাজ্জুদ রামাদানে বেশি পড়তেন কিনা তা জানা আর তৃতীয় অধ্যায়ে রামাদানে বেশি বেশি নামাযের ফযীলত আর বর্ণনা জন্য হাদিস আনা হয়েছে। তারাবীহের রাকাত সংখ্যা বুঝানোর জন্য কোথায় এসেছে এই হাদিস?
#আজকাল_কিছু_নব্য_ফিতনাকারী_বলে_থাকে_তাহাজ্জুদ_তারাবীহ_একই”!! তাদের এই দাবিটি সম্পুর্নরুপে ভুল নিম্নবর্ণিত কারণেঃ
১- মুহাদ্দিসীনে কিরাম তাহাজ্জুদ ও তারাবীহের অধ্যায় ভিন্ন ভিন্ন লিখেছেন। তাহাজ্জুদের মাঝে ডাকাডাকি জায়েয নয় তারাবীহতে জায়েয।
২- তাহাজ্জুদ নামাযের হুকুম কুরআন দ্বারা প্রমাণিত যথা সূরা ইসরার ৭৯ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন অর্থাৎ "আর রাতে তাহাজ্জুদ পড় এটি তোমার জন্য নফল, অচিরেই তোমাকে তোমার রব প্রশংসিত স্থানে অধিষ্ঠিত করবে" ও সুরা মুযাম্মিল ২ নং আয়াতে।
আর তারাবীহের ব্যাপারে আল্লাহর নবী (দঃ) বলেন- নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা রামযানের রোযা তোমাদের উপর ফরয করেছেন আর আমি তোমাদের উপর এতে কিয়াম করাকে সুন্নত করেছি।
(সুনানে নাসায়ী- ১/৩০৮,৩৩৯)।
সুতরাং বুঝা গেল তাহাজ্জুদ আল্লাহর আয়াত আর তারাবীহ নবীজীর (দঃ) বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত। তারাবীহের সময় ঘুমানোর আগে কিন্তু তাহাজ্জুদের সময় নির্ধারিত নয় তবে উত্তম ঘুমের পর।
৩-তাহাজ্জুদের হুকুম মক্কায় হয়েছে আর তারাবীহের হুকুম মদীনায় হয়েছে। বুখারী ও মুসলিমের দ্বারা বলা হয় হয় যে, নবী (দঃ) শুধুমাত্র মদীনায় তিনদিন জামায়াতে তারাবীহ পড়েছেন, তারপর তিনি এ ভয়ে আর পড়েননি যে তারাবীহ ওয়াজিব হয়ে যেতে পারে।
এখানে লক্ষ্য করুন তাহাজ্জুদের বাধ্যতামূলক ইতোমধ্যে মক্কায় রহিত করা হয়েছিল। কেননা মা আয়েশা (রাঃ) উল্লেখ করেছেন যে, আল্লাহ তাহাজ্জুদের (সূরা মোজাম্মিল যা মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে) এই নামায ঐচ্ছিক করে দিয়েছেন, প্রারম্ভে এটি বাধ্যতামূলক করেছিলেন। (মুসলিম, ১:২৫৬)
এখন, যদি তাহাজ্জুদ এবং তারাবীহ একই হতো, তাহলে কেনো রাসুলুল্লাহ (দঃ) মদিনায় তা বাধ্যতামূলক হওয়ার ভয় পেতেন? যখন এটি অনেক আগেই মক্কায় রহিত হয়ে গেছে?
এছাড়াও আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণীত, তিনি তাহাজ্জুদ সম্পর্কে বলেন, "তিনি যেই নামায আমাদের সাথে পড়তেন না।" বুখারী ১-১০১। এই হাদিসটি আরো স্পষ্ট করে দেয় যে, রাসুলুল্লাহ (দঃ) যে নামায জামাতে পড়তেনন তাহলো তারাবীহ, আর যেটা একাকী নিজ বাসায় পড়তেন তাহলো তাহাজ্জুদ।
৪-ইমাম আহমাদ (রাঃ) ও তারাবীহ তাহাজ্জুদ আলাদা বিশ্বাস করতেন
(মাকনা’-১৮৪)।
৫- ইমাম বুখারী (রাঃ)র ক্ষেত্রে বর্ণিত তিনি রাতের প্রথমাংশে তার সাগরীদদের নিয়ে তারাবীহ পড়তেন আর শেষ রাতে একাকি তাহাজ্জুদ পড়তেন। (ইমাম বুখারী রাঃ এর জীবনী)।
৬-তাহাজ্জুদ এর নির্দিষ্ট রাকাত সংখ্যা রাসূল স্বাল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত অর্থাৎ বিতর সহ বেশি থেকে বেশি ১৩ রাকাত আর কমপক্ষে ৭ রাকাত। আর তারাবীহ এর রাকাত সংখ্যার ক্ষেত্রে খোদ আহলে হাদিস ইমামদের স্বাক্ষ্য যে এর কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা
নবীজী (দঃ) থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত নয়।
কিছু মানুষ আপনাকে বলবে যে সৌদি আরবে অধিকাংশ মসজিদে ৮ রাকাত তারাবীহ হয়। তাকে বলুন যে ইসলাম চলে কোরআন ও সুন্নাহ দিয়ে, সৌদির সংবিধান দিয়ে নয়। এছাড়াও এমন একটিও আয়াত বা হাদিস নেই যেখানে আল্লাহ বা তার রাসুল (দঃ) সৌদিকে অনুসরণ করতে বলেছেন। ইসলামে সৌদি বা অন্য কোন দেশ অনুসরণ যোগ্য নয় শুধুমাত্র ক্বুরয়ান সুন্নাহ ব্যতীত। এছাড়াও মক্কা ও মদিনায় এখনোও ২০ রাকাত তারাবীহর প্রচলন আছে। আল্লাহ এই নব্য জন্ম নেয়া পথভ্রষ্ট দল থেকে ইসলাম ও মুসলিমদের হিফাযত করুন। আমিন
যে মাসে এক রাকাত নফল নামাযে এক রাকাত ফরজ নামাযের সাওয়াব পাওয়া যায়, সেই মাসে সুন্নতে মুয়াক্কাদা পরতে কেনো কাটাকাটি করবো? তাই আমরা সবাই আল্লাহ ও তার রাসুলেলর (দঃ)রয়সন্তুষ্টির জন্য, নিজের গুনাহ মাফ করানোর জন্য সম্পুর্ন ২০ রাকাত তারাবি পড়ে নিজের গুনাহের মাগফিরাত করিয়ে নিবো ইনশা আল্লাহ্।
রামাদান মাসের রাতে ইশার নামাযের পর এবং বিতর নামাজের আগে দুই দুই রাকাত করে ১০ সালামে যে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করা হয়, একে তারাবী নামাজ বলা হয়। আরবী ‘তারাবিহ’ শব্দটির মূল ধাতু ‘রাহাতুন’ অর্থ আরাম বা বিশ্রাম করা। বিশেষ করে প্রতি চার রাকাত পর একটু বসে বিশ্রাম করতে হয় এবং দোয়া ও তসবিহ পাঠ করতে হয়। এ জন্য এই নামাজকে ‘সালাতুত তারাবিহ’ বা তারাবি নামাজ বলা হয়।
রামাদান মাসের নির্দিষ্ট নামাজ হচ্ছে সালাতুত তারাবিহ। তারাবি নামায জামাতে পড়া (মহিলাদের বাসায় পড়তে হবে) ও সম্পূর্ণ কোরআন শরিফ একবার খতম করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। রাসুলুল্লাহ (দঃ) নিজে তারাবির নামায পড়েছেন এবং সাহাবায়ে কিরামকেও পড়ার জন্য আদেশ দিয়েছেন। তারাবির নামাযের রাকাতের বিষয়ে বিভিন্ন সংখ্যা পাওয়া যায়।তবে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য, সর্বজন সমর্থিত হলো ২০ রাকাত।
তারাবীহ এর নামায ৮ রাকায়াত মনে করাটাই বেদায়াত। আর ৮ রাকায়াত মনে করে এর উপর আমল করা হল বেদায়াতের উপর আমল করা। ১৪০০ বছর পর পথভ্রষ্ট ব্যক্তির ফতোয়ার উপর ভিত্তি করে ৮ রাকায়াত তারাবীহ এর সূচনা ঘটে মুসলিম উম্মাহের কিছুর মধ্যে। যখন এই বেদায়াত আমলের দলিল বুখারী থেকে দেওয়া হয় তখন অবশ্যই এর বিরোধিতা ব্যাপক ভাবে হওয়া চাই। সাধারণ মানুষ যেন গুটি কয়েক লোকের কথার দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অবস্থান থেকে ছিটকে না পড়ে।
২০ রাকাত তারাবী নামাযের ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (দঃ) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে পুণ্য লাভের আশায় রামাদানের রাতে তারাবী নামায আদায় করে, তার অতীতে কৃত পাপগুলো ক্ষমা করা হয়।"
(বুখারি ও মুসলিম)।
মাহে রামাদানে রোযা, তারাবী নামায, কোরআন তিলাওয়াত ও অন্যান্য ইবাদতের দরুন আল্লাহ তাআলা রোযাদার ব্যক্তির আগের সব গুনাহ মাফ করে দেন। রাসুলুল্লাহ (দঃ) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে পুণ্য লাভের আশায় রোযা রাখে, তারাবি নামায পড়ে এবং কদরের রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত করে, তার জীবনের পূর্বের সব গুনাহ মাফ করা হবে।’
(বুখারি ও মুসলিম)
রাসুলুল্লাহ (দঃ) সর্বদা তারাবি নামায জামাতে পড়েননি। কারণ, নবীজি(দঃ)ﷺ মনে করেছিলেন যে যদি তিনি সর্বদা জামাতে তারাবী নামায আদায় করেন, তাহলে তার উম্মতের উপর এটি যে এটা ফরজ হয়ে যেতে পারে। এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (দঃ) আরোও ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা রামাদানের রোযা গুলো ফরজ করেছেন এবং এর রাতে তারাবী নামাযের জন্য দণ্ডায়মান হওয়াকে অশেষ পুণ্যের কাজ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।’
আল্লাহ আমাদের তারাবির নামাযের অপরিসীম ফজিলত এবং জামাতে খতম তারাবি আদায়ের মাধ্যমে অধিক পুণ্য লাভের তাওফিক দান করুন! আমিন!!
সাহিহ হাদিসে তারাবির নামায।
১.
ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺍﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻛﺎﻥ ﻳﺼﻠﻰ ﻓﻰ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ ﻭﺍﻟﻮﺗﺮ
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (দঃ) রমজান মাসে বিশ রাকাত এবং বিতির পড়তেন।
{মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা -২/২৯৪, হাদীস নং- ৭৬৯২, মুসনাদে আব্দবিন হুমাইদ-২১৮, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-১২১০২, মাজমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৭২, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৪৩৯১}
এবার দেখার বিষয় হল, উম্মতের ঐক্যমত্বের আমল এর উপর আছে কি নেই? যদি দেখা যায় যে, উম্মতের আমল এর উপরই। তাহলে আমল হিসেবে গ্রহণযোগ্য হওয়ার দ্বারা উক্ত হাদীস সহীহ হয়ে যায়।
হযরত ওমর (রাঃ)র আদেশঃ
২.
ﻋﻦ ﻳﺤﻴﻰ ﺑﻦ ﺳﻌﻴﺪ ﺍﻥ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﺍﻣﺮ ﺭﺟﻼ ﻳﺼﻠﻰ ﺑﻬﻢ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ
হযরত ইয়াহইয়া বিন সাঈদ থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ) এক ব্যক্তিকে বিশ ৩ পড়ার হুকুম দিলেন।
{মুসান্নাফে ইবনে আবীশাইবা-২/২৯৩}
হযরত ওমর(রাঃ)র শাসনামল
৩.
ﻭﺭﻭﻯ ﻣﺎﻟﻚ ﻣﻦ ﻃﺮﻳﻖ ﻳﺰﻳﺪ ﺑﻦ ﺧﺼﻴﻔﺔ ﻋﻦ ﺍﻟﺴﺎﺋﺐ ﺑﻦ ﻳﺰﻳﺪ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ
হযরত সায়েব বলেনঃ হযরত ওমর (রাঃ)র সময়কালে বিশ রাকাত তারাবীহ ছিল।
{ফাতহুল বারী-৪/৪৩৬} যার সনদ বুখারীতে দুই স্থানে আছে।
৪.
ﻋﻦ ﺍﻟﺴﺎﺋﺐ ﺑﻦ ﻳﺰﻳﺪ ، ﻗﺎﻝ : ﻛﻨﺎ ﻧﻘﻮﻡ ﻓﻲ ﺯﻣﺎﻥ ﻋُﻤَﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﺑﻌﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ ﻭﺍﻟﻮﺗﺮ
হযরত সায়েব বিন ইয়াজিদ (রাঃ) বলেনঃ আমরা হযরত ওমর (রাঃ)র শাসনামলে বিশ রাকাত তারাবীহ ও বিতির পড়তাম।
{সুনানে সুগরা লিল বায়হাকী, হাদীস নং-৮৩৩, মারিফাতুস সুনান ওয়াল আসার, হাদীস নং-১৪৪৩}। ইমাম নববী রহঃ, সুবকী (রাঃ) [শরহুল মিনহাজ], মোল্লা আলী কারী (রাঃ) [শরহুল মুয়াত্তা] ও সুয়ুতী (রাঃ)
এ বর্ণনাকে সহীহ বলেছেন।
৫.
ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻛﻌﺐ ﺍﻟﻘﺮﻇﻰ ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻳﺼﻠﻮﻥ ﻓﻰ ﺯﻣﺎﻥ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﻓﻰ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ ﻭﻳﻮﺗﺮﻭﻥ ﺑﺜﻼﺙ
মুহাম্মদ বিন কাব কুরজী বলেনঃ ওমর ফারুক (রাঃ)র শাসনামলে লোকেরা রমজান মাসে বিশ রাকাত তারাবীহ ও তিন রাকাত বিতির পড়তো।
৬.
ﻋﻦ ﻳﺰﻳﺪ ﺑﻦ ﺭﻭﻣﺎﻥ ، ﺃﻧﻪ ﻗﺎﻝ : « ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻳﻘﻮﻣﻮﻥ ﻓﻲ ﺯﻣﺎﻥ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺑﺜﻼﺙ ﻭﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ »
হযরত ইয়াজিদ বিন রূমান বলেনঃ লোকেরা হযরত ওমর (রাঃ)র শাসনামলে বিশ রাকাত তারাবীহ এবং তিন রাকাত বিতির রমজান মাসে আদায় করতো।
{মারিফাতুস সুনান ওয়াল আসার, হাদীস নং-১৪৪৩, মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-৩৮০, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৪৩৯৪}
৭.
ﻋﻦ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﺍﻥ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﺟﻤﻊ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻋﻠﻰ ﺍﺑﻰ ﺑﻦ ﻛﻌﺐ ﻓﻜﺎﻥ ﻳﺼﻠﻰ ﺑﻬﻢ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ
হযরত হাসান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, হযরত ওমর (রাঃ) লোকদেরকে হযরত উবায় বিন কাব (রাঃ)র কাছে একত্র করে দিলেন। আর তিনি লোকদের বিশ রাকাত তারাবীহ পড়াতেন।
{সুনানে আবু দাউদ-১/২০২, সিয়ারু আলামিন নুবালা-১/৪০০}
৮.
ﻋﻦ ﺍﺑﻰ ﺑﻦ ﻛﻌﺐ ﺍﻥ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﺍﻣﺮﻩ ﺍﻥ ﻳﺼﻠﻰ ﺑﺎﻟﻴﻞ ﻓﻰ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻓﺼﻠﻰ ﺑﻬﻢ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ
হযরত উবায় বিন কাব (রাঃ) বলেনঃ হযরত ওমর (রাঃ) আমাকে এই মর্মে আদেশ দিলেন যে, আমি যেন লোকদেরকে তারাবীহ পড়াই। তখন বিশ রাকাত পড়া হতো।
{কানযুল উম্মাহ- ৮/২৬৪}। ইমাম বায়হাকী, আল্লামা বাজী, কাশতাল্লানী, ইবনে কুদামা, ইবনে হাজার মক্কী, তাহতাবী, ইবনে হুমাম, বাহরুর রায়েক প্রণেতা (রাঃ) প্রমুখগণ এ ব্যাপারে একমত হয়ে বলেনঃ হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) এর শাসনামলে বিশ রাকাত তারাবীহের উপরই সকলের সিদ্ধান্ত স্থির হয়। এবং এভাবেই চলতে থাকে।
ইংরেজ আমলের পূর্বে ও কোন একজন মুহাদ্দিস বা ফক্বীহ এটাকে অস্বীকার করেননি। আর সুন্নত হওয়ার জন্য সেটির নিরবচ্ছিন্ন হওয়া শর্ত। তাই এই বিশ রাকাত তারাবীহ সুন্নতে ফারূকী হয়েছে। এ সেই ওমর (রাঃ) যার ব্যাপারে রাসূল (দঃ) এরশাদ করেছেন যে, যদি আমার পর কোন নবী হতো তাহলে নবী হতো ওমর রাঃ। তিনি আরো বলেছেনঃ দ্বীনের ব্যাপারে সবচে’ মজবুত হলেন ওমর রাঃ। রাসুল ﷺ আরও বলেছেন, ওই সত্ত্বার কসম, যার আয়ত্বে আমার প্রাণ, শয়তান কখনো তোমার (ওমর রাঃ) চলার পথে তোমার সঙ্গে মিলিত হয় নি। বরং তোমার রাস্তা ছেড়ে অন্য রাস্তায় চলে গেছে। মুসলিম শরীফ, ৭ম খণ্ড-হাদিস নম্বর-৬০২৫। সুবহানআল্লাহ
এছাড়া ওমর ইবনে খাত্তাবকে (রাঃ) রাসুল (দঃ) তত্ত্ব জ্ঞান সম্পন্ন বলেছেন। যার অর্থ- গোপন প্রত্যাদেশ প্রাপ্ত। তত্ত্ব জ্ঞানকে আরবীতে ইলহাম বলা হয়। মহান আল্লাহ্ রব্বুল আ’লামিন হযরত ওমরকে (রাঃ) এমন সুক্ষ জ্ঞান দান করেছেন যে তিনি বিভিন্ন সময় যে মতামত ও সিদ্ধান্ত দিয়েছেন পরে তা সঠিক সিদ্ধান্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে। প্রিয় নবী করি?