17/01/2024
***তপু খান-ই লিডার এবং আপাত সর্বশেষ উদাহরণ ***
যে ভয়ঙ্কর বিপর্যয় এবং লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে তপু খান নামের ছোটখাটো মানুষটা রীতিমতো যুদ্ধ জয় করেছে, তা অন্য কারো জীবনে হলে হয়ত উন্মাদ হয়ে জীর্ণভাবে রাস্তায় ঘুরে বেড়াতো। এই মানুষটা কিভাবে সামাল দিয়েছে তা উপরওলাই জানে, আর জানে সে নিজে।
বাংলাদেশের প্রায় সকল নির্মাতারই স্বপ্ন বড় পর্দা। তারচেয়েও দু:সাহসী স্বপ্ন শাকিব খান। ছোট পর্দার গুণী নির্মাতা তপু খান দুটোই পেয়েছেন একসাথে। কিন্তু ভাগ্য যে বলে অন্য কথা! শাকিব-বুবলি তাণ্ডব, বিদেশ থেকে ধ র্ষ ণের অভিযোগ ও মামলা, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান/কর্তাব্যাক্তিদের সাথে শাকিবের দূরত্ব ইত্যাদি নানা করণে শাকিবের নানাভাবে দীর্ঘ সময় আমেরিকা অবস্থান ইত্যাদি নানাভাবে একটি স্বপ্ন রীতিমতো দু:স্বপ্নে পরিণত হয়।
সে সময়টাতে শাকিবের ক্যারিয়ার যেমন ভয়াবহ হুমকির মুখে, তেমনি নানাভাবে শাকিব হয়ে উঠেন হাস্যরসের উপাদান। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নানান মাধ্যম শাকিবকে নিয়ে নানাভাবে অসুস্থ আলাপনে ভরে যায়। জীবনের সবচেয়ে বড় ইমেজ সংকটে পড়ে যায় শাকিব। এমনকি শাকিবের ডাইহার্ট ফ্যানবেজও বিশাল ধাক্কা খেয়ে দিশেহারা হয়ে যায়।
এমতাবস্থায় একজন তপু খান দীর্ঘ অনিশ্চিত পথেও নিশ্চয়তার ভরসা কিভাবে রেখেছিলেন, তা গবেষণার দাবী রাখে। সিকি ভাগ, অর্ধেক, আরেকটু, এইতো শেষ প্রায় ইত্যাদি নানান সমীকরণে তার সিনেমাটি আটকে থাকে। অবশেষে একদিন ভাগ্যবিধাতার মন সুপ্রসন্ন হয়। অসম্ভবকে সম্ভব করে দ্বন্দের চূড়ান্তে থাকা নায়ক-নায়িকাকে এক পর্দায় আনলেন। রোমান্টিক গানের শুটিং হলো, পরস্পরকে স্পর্শ না করে, পাশাপাশি না দাঁড়িয়ে।
সিনেমাটি মুক্তির সময় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, দর্শক কি শাকিবের সিনেমা দেখতে হলে আসবে! জ্বি, দর্শক এলো এবং আবিস্কার করলো, এতদিনে চিরচেনা পর্দার শাকিবকে ভেঙ্গেচুরে, লাউড-ওভার এক্টিংয়ের শাকিবকে ন্যাচারাল অভিনয়ের দুনিয়া টেনে নিয়ে এসেছে চলচ্চিত্রের এক নবীন নির্মাতা। সিনেমাটি টানা হাউসফুল চললেও পুরানো সেই দ্বন্দে, চাহিদা থাকলেও সিনেমাটিকে দীর্ঘদিন হলে চালানো হয় নি।
কিন্তু দর্শক পেয়ে গেছে নতুন করে জন্ম নেয়া নতুন এক শাকিবকে। দর্শক ভুলে গেছে বিগত লম্বা একটা সময় কি কি ঘটেছে শাকিবকে ঘিরে। সে ঘটনা ভাল নাকি মন্দ, সত্য নাকি মিথ্য সে বিচার এখানে করছি না। তো সেই পূনর্জন্ম দিয়ে বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাষ্ট্রি যে ঝাঁকিটা দিলো তারই ফল পরবর্তীতে 'প্রিয়তমা'।
যার হাত ধরে, যার ধৈর্য্য-শ্রম-নতুনত্বের দু:সাহস আগুন পাখির মতো রক্ষা করেছিল বাংলা সিনেমার আপাতত সর্বশেষ সুপার স্টার শাকিব খান এবং বাংলা সিনেমাকে, আজ সেই তপু খানের জন্মদিন। আমি জানি না, শাকিবের মতো নায়ককে 'লিডার আমিই বাংলাদেশ' সিনেমাটির জন্য কিভাবে রাজি করিয়েছিলেন তিনি। কারণ শাকিব ডাউন টু আর্থ টোন এবং অভিনয়ে সিনেমা করা বা করার চেষ্টা আরো ১০/১৫ বছর আগে ছেড়ে দিয়েছে।
শুধু তা-ই না, এখনো যদি এমন চরিত্র/গল্পের সিনেমা নিয়ে যায়, আমার ধারণা শাকিব সেটা বাতিল করবে। অন্যদিকে কোন পরিচালক শাকিবকে নিয়ে সিনেমা বানাতে চাইলে, সে চাইবে সেফজোনে থেকে কাজটি করতে। শাকিবের স্টারডম, চিরচেনা স্টাইল এটা দিয়েই সে নিজের বৈতরণী পার করার চেষ্টা করবে। সেখানে তপু খান কিভাবে সাহস করলো, শাকিবকে নিয়ে শাকিবের বাইরের সিনেমা বানাবার! তপু খানের ক্যারিয়ার শেষও হয়ে যেতে পারতো, সেখানে কোন ভুল হলে।
তাহলে কি এমন ম্যাজিক ছিল সেখানে! শাকিব কেন রাজি হলো! নেতৃত্ব! লিডারশীপ! ইয়েস, ক্যাপ্টেন অব দ্যা শীপ। ইয়েস দ্যা ডিরেক্টর। ইয়েস দ্যা লিডার। যে সাহস করে, যে লড়াই করে, যে পরাজয়ে ভয় করে না এবং যে পুড়ে ছাই হয়ে আবারো উড়ে যেতে পারে আগুন পাখি হয়ে।
সেই সাহসী লিডার আপাতত একজনই। তপু খান-ই লিডার। যার একটু সাহসে এবং ধৈর্য্যে দম পেয়েছে বাংলাদেশের সিনেমা।
জন্মদিনে শুভকামনা জানাই তপু খান, দ্যা লিডারকে।