14/12/2023
কেউ যখন বই পড়ার প্রতি আগ্রহ নিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করে কিছু ভালো বইয়ের নাম বলতে আমি তখন নির্দ্বিধায় 'মা' উপন্যাসটা প্রথমে বলি।
বইটি পড়ার সময় প্রায় চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছে।
একজন ছেলে হারা মায়ের গল্প। গল্প না মূলত বাস্তব কাহিনীর পটে লেখা ।
"বাবারে, যখন মারবে, তুমি শক্ত হয়ে থেকো। সহ্য করো। কারো নাম যেন বলে দিও না।"
যদি বলি এই কথাটা একজন মা তার ছেলেকে বলছে, আপনার বিশ্বাস হবে?
হ্যাঁ আমি শহিদ আজাদের মায়ের কথাই বলছি।
হানাদারদের হাতে ধরা পরার পর তিনি তার সন্তান কে দেখতে গিয়েছেন, তাকে বলা হলো, আজাদ যদি তার সহযোদ্ধাদের নাম বলে দেয়, তাহলে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে। তিনি দেখলেন যে সন্তানকে তিনি জীবনে একটুখানি আচড় পর্যন্ত দেননি, তাকে কি নৃশংস্র ভাবেই না মেরেছে এই পশুরা। রক্তাক্ত শরীর, সারা শরীর ফোলা, ভ্রুয়ের কিছুটা অংশ ঝুলছে চোখের ওপর। এসব দেখেও তিনি তার স্নেহাধন্য পুত্রকে কি বললেন?
"বাবা, শক্ত হয়ে থেকো, কারো নাম বলে দিও না।"
কোন মা কি একথা কতবড় হৃদয় হলে বলতে পারে, ভাবুন তো।
"মা, ভাত খেতে ইচ্ছা করে। দুইদিন ভাত খাই না। কালকে ভাত দিয়েছিল, আমি ভাগে পাই নাই।"
আজাদের মা তাকে অভয় ও সান্তনা দিয়ে বলেছিলেন, "কালকে আমি ভাত নিয়ে আসবো।" কথামতো ভাত সকালে ভাত নিয়ে গিয়েছিলেনও তিনি। কিন্তু আজাদ নেই, আজাদকে আর কোথাও পাওয়া যায়নি। ওইদিন ছেলেকে খুজতে খুজতে টিফিনকারিতে ভাত পচে যায় কিন্তু ছেলেকে আর কোথাও তিনি খুজে পান না। সেইদিন তারিখটা ছিল ৩০ আগষ্ট, ১৯৭১।
আজাদের গল্প এখানেই শেষ হলেই ভালো হতো। কিন্তু শেষ হয়না, এই তারিখের পর ১৪ বছর পর একই তারিখে এই মা মৃত্যু বরন করেন। এই মা আমৃত্যু ১৪ টি বছর আর ভাত খান নি।
চিন্তা করার যায় বুকের এই হাহাকারের কথা, আহা মা।
এমনটা শুধু একজন মা 'ই করতে পারেন।
আজাদ একদিন বলেছিল সে বিখ্যাত হলে তার মায়ের গল্প সে সবাইকে বলবে। 'শহীদ মুক্তিযুদ্ধা আজাদ'। এর থেকে ভালো আর কি পরিচয় হতে পারতো বিখ্যাত হওয়ার জন্য। আজাদের বিখ্যাত হয়ে উঠার সাথে তার আম্মার গল্প সবাইকে জানাতে না পারলে এই দেশমাতা যে অকৃতজ্ঞ থাকতো। আনিসুল হক সেই দায়িত্ব পালন করে ঋণ কিছুটা কমিয়েছে, এই জন্য তাঁর জন্য ভালোবাসা!
By MeheDy HaSan JoY