19/04/2021
হাকিকি শয়তানের পরিচয় ¡
************************
খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে আজকের পোস্ট
উচ্চতর চৈতন্য সাধকদের জন্য একটু মনোযোগ দিন!
""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
এখন আমরা হাকিকি শয়তান তথা-----
আসল শয়তানের পরিচয় ও ব্যাখ্যা সামান্য দিতে চাই ।
হাকিকি শয়তান তথা আসল শয়তান ,
পবিত্র কোরান অনুসারে , চার প্রকার :---
১/ ইবলিশ , ২/শয়তান , ৩/মরদুদ, এবং ৪/খান্নাস।।
এই চার প্রকার শয়তানকে আল্লাহ্ পাক মাত্র দুইটি স্থানে থাকবার অনুমতি দিয়েছেন । এই দুইটি স্থান ছাড়া এই চার প্রকার শয়তানকে আর কোথাও থাকার অনুমতি দেওয়া হয় নি , এমনকি আল্লাহ্র সমগ্র সৃষ্টিরাজ্যের আর কোথাও থাকার অনুমতি দেওয়া হয় নি । যে দুইটি নির্দিষ্ট স্থানে এই চারটি শয়তানকে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে সেই স্থান দুইটির নাম হল : জিনের অন্তর এবং মানুষের অন্তর ।
জিনের অন্তর এবং মানুষের অন্তর ছাড়া এক পা - ও বাহিরে যাবার ক্ষমতা শয়তানের নাই ।
সুতরাং জিনের অন্তর এবং মানুষের অন্তর ছাড়া এই চারটি শয়তানের থাকবার আর কোন বিন্দুমাত্র স্থান নাই । আকাশ হতে শয়তানেরা যে আগুনের গােলা নিক্ষেপ করতে থাকে তথা ফেলতে থাকে , উহা পৃথিবীর আকাশ নয় , বরং প্রতিটি মানুষের মনের আকাশ । এই মনের আকাশ হতেই শয়তান মানুষকে বিভ্রান্ত করার তরে , দিশেহারা করার তরে , বিপথে নেবার তরে , অনবরত আগুনের গােলা নিক্ষেপ করতে থাকে ।
চরম সত্যে মানুষের মনের আকাশে শয়তান যে আগুনের গােলা নিক্ষেপ করে , ইহা শয়তানের ডিউটি ।
মানুষটি দুনিয়াই চায় , না আল্লাহকে চায় , এই পরীক্ষা করার জন্যই এহেন আগুনের গােলা নিক্ষেপ করার কথাটি আসে । যদি পরীক্ষা করার প্রশ্নটি না থাকত তাহলে মনের আকাশে আগুনের গােলা নিক্ষেপ করার প্রশ্নই উঠত না । সুতরাং শয়তান বাহিরে থাকে না , থাকবার বিধান নাই । দুধ আর মাখন যেভাবে দুধের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে , এবং দুধের মাঝে যে মাখন আছে ইহা বুঝবার উপায় থাকে না , সে রকম মানুষের অন্তরে যে শয়তান অবস্থান করছে ইহাও বুঝবার উপায় থাকে না । সুতরাং প্রতিটি মানুষ মনে করে যে সে একা ,
কিন্ত আসলে সে মােটেই একা নয় । যেহেতু প্রতিটি মানুষের সঙ্গে শয়তানকে পরীক্ষা করার জন্য দেওয়া হয়েছে সেই হেতু মানুষ দুইজন , অনেকটা একের ভিতরে দুইয়ের মত ।> কিন্তু ইহাও সত্য নহে ।
কারণ জীবাত্মার সঙ্গে খান্নাসরূপী শয়তান পাশাপাশি অবস্থান করছে , সে রকমভাবে আরেকজন অবস্থান করছে । সেই আরেকজনের নাম হল রূহ তথা পরমাত্মা তথা স্বয়ং আল্লাহ । তাই প্রতিটি মানুষের শাহারগের নিকটেই আল্লাহ আছেন বলে ঘােষণাটি দেখতে পাই । অন্য কোনাে জীব - জানােয়ারের শাহারগের নিকটে আল্লাহ্র অবস্থানটির ঘােষণা কোরানে পাই না । এখানে একটি কথা বলে রাখা ভাল যে , যেহেতু জিন নিয়ে আমাদের কোন কাজ কারবার নাই , তাই আমরা ইচ্ছা করেই জিন বিষয়টিকে বাদ দিলাম , যদিও জিন এবং মানুষকেই আল্লাহর ইবাদত করার কথাটি বলা হয়েছে ।
সমস্ত সৃষ্টিরাজ্য আল্লাহর ইবাদতে ডুবে আছে , তাই ইবাদত করার আদেশ দেবার প্রশ্নই আসে না । যেহেতু মানুষ এবং জিনকে সীমিত স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দেওয়া হয়েছে , সেহেতু ইবাদত করার উপদেশটি প্রযােজ্য ।
১/ইবলিশ----
যখন শয়তান অহংকার করে তখন শয়তানের রূপটির নাম হল ইবলিস । বালাসা শব্দটির অর্থ হল অহংকার । ইহা হিব্রু ভাষা , আরবি ভাষা নয় । বালাসা তথা অহংকার শব্দটি বিশেষ্য তথা নাউন , ইবলিস তথা অহংকারী শব্দটি বিশেষণ তথা এডজেকটিভ , সুতরাং শয়তানের আদিরূপ ইবলিস তথা অহংকারী । কারণ আদমকে সেজদা দিবার হুকুমটি সরাসরি অমান্য করার দরুণ সে অহংকারী হয়ে গেল , তথা ইবলিস হয়ে গেল ।
তাই ইবলিসই হল শয়তানের প্রথম এবং আদিরূপ ।
২/ শয়তান -----
মানুষ জীবনধারণের প্রশ্নে যখন বিভিন্ন প্রকার লােভ - লালসার খপ্পরে পড়ে যায় এবং জীবনধারণের প্রশ্নে বৈষয়িক বিষয়ের ঘাত - প্রতিঘাতের আঘাতে প্রতিনিয়ত জর্জরিত হতে থাকে , সেই আঘাত - খাওয়া অবস্থানটির নাম শয়তান । তাই পবিত্র কোরানের যে কোনাে পবিত্র সূরা পাঠ করার আগে আমাদের বলতে হয় যে , পাথরের আঘাত - খাওয়া শয়তান হতে আশ্রয় চাই । হাজিরা যে শয়তানকে পাথর ছুড়ে মারে সেই মেজাজি বিষয় হতেই হাকিকি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে । কেউ বুঝতে পারে , কেউ পারে না ।
বােঝাটাও তকদির , না বােঝাটাও তকদির ।
সুতরাং চরম পর্যায়ে , আল্লাহর সৃষ্টির মাঝে বিন্দুমাত্র ভুলের অবকাশ নাই । ইহাই পবিত্র কোরানের পবিত্র সূরা মুলকে বলা হয়েছে । কেউ বােঝেন , কেউ বােঝেন না । বােঝাটাও তকদির , না বােঝাটাও তকদির । তকদিরের বলয় হতে আল্লাহর বিশেষ রহমত ছাড়া বেরিয়ে আসা অসম্ভব ।
জিন এবং মানুষের অন্তর ছাড়া শয়তানের অবস্থানটির কথা যদি অন্য কোথাও আছে বলে কেউ লিখে তাে ধরে নিতে হবে যে , সে ইসলামের বিন্দু - বিসর্গও জানে না , কেবল হাউকাউ করে বড় বড় কথার ফুলঝুড়ি ছড়ায়ে , আরবি ব্যাকরণের তেলেসমাতি দেখিয়ে সরল মানুষগুলােকে লিখনির মাধ্যমে বিভ্রান্ত ,
দিশেহারা করে তুলছে ।
৩/ মরদুদ----
যে মানুষটি কেবলমাত্র দুনিয়াই চায় এবং যার দুনিয়া চাওয়া ছাড়া আর কোন চাওয়াই থাকে না ,
তাকে মরদুদ বলা হয় । মরদুদের স্থান হাবিয়া দোজখ । হাবিয়া দোজখের তলা থাকে না । যে মানুষটির দুনিয়া চাওয়ার সীমা থাকে না সেই মানুষটিকে তলা - ছাড়া হাবিয়া দোজখে যেতে হয় । এই মরদুদ শব্দটি পবিত্র কোরানে কয়েকবার পাওয়া যায় ।
৪/খান্নাস---
যে শয়তান সর্ববিষয়ে সর্বঘটনায় পিছু পিছু কুমন্ত্রণা দিতে থাকে তার নাম খান্নাস । শয়তানের এই খান্নাসরূপটি ভয়ংকর এবং বিপদজনক । তাই খান্নাসের কুমন্ত্রণা হতে পবিত্র কোরান মুক্তি চাইবার উপদেশ দিয়েছেন । অবাক লাগে যে , শয়তানের এই >খান্নাসরূপটি এত ভয়ংকর অথচ সমগ্র কোরানে মাত্র একবার উল্লেখ করা হয়েছে । >কাউসার শব্দটি এবং >আহাদ শব্দটি সমগ্র কোরানে মাত্র একবার করে উল্লেখ করা হয়েছে , তেমনি খান্নাস শব্দটিও একবার উল্লেখ করা হয়েছে । অথচ এই তিনটি শব্দের মাঝে গােপন রহস্য লুকিয়ে আছে । এই তিনটি শব্দের অর্থ ব্যাকরণ দিয়ে মােটামুটি একটি ধারণা জন্মাতে পারে , কিন্তু গভীর রহস্য অনুধাবন করতে হলে হৃদয় দিয়ে গবেষণা করতে হয় ।
সুতরাং পরিশেষে আবার একই পুরােনাে কথাটি বলতে চাই যে , জিন এবং মানুষের অন্তর ছাড়া শয়তানের থাকার আর একটি স্থানও নাই । এই খান্নাসরূপী শয়তানটি , যাহা প্রতিটি মানুষের অন্তরে অবস্থান করছে , উহাকে তাড়িয়ে দেবার বহু প্রকার উপদেশের আরেক নাম পবিত্র কোরান । যত প্রকার মােরাকাবা , মােশাহেদা , ধ্যানসাধনা , এবাদত বন্দেগি , কান্না ও বিলাপ , নফসকে ইচ্ছা করে নানা প্রকার কষ্ট দান করা , সবই এই খান্নাসরূপী শয়তানকে তাড়িয়ে দেবার একমাত্র উদ্দেশ্যে । আর দ্বিতীয় কোন উদ্দেশ্য নাই এবং থাকার কোন বিধান রাখা হয়নি ।
তাই পবিত্র কোরানের সূরা মােমিনের ষাট নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে যে , হে মানুষ , তুমি একা হও এবং একা হয়ে আল্লাহ্কে ডাক দাও , তাহলে ডাকের জবাব সঙ্গে সঙ্গে পাবে । আরবি ভাষায় দুইজনে ডাক দিলে বলা হয়> উদউনা , আর একজনে ডাক দিলে হয় >উদউনি । কোরান উদউনি তথা একা শব্দটি ব্যবহার করেছে । উদউনা তথা দুইজন থাকলে ডাকের জবাব পাওয়া যাবে না । আমি এবং খান্নাসরূপী শয়তান মিলে দুইজন । কারণ খান্নাসরূপী শয়তান বাহিরে থাকে না , বরং আমার অন্তরেই অবস্থান করছে । সুতরাং আমরা দুইজন । এই দুইজন থাকলে আল্লাহ্ ডাকের জবাব দেন না । এই দুইজনের অবস্থানটাকেই উদ্উনা বলা হয় খান্নাসরূপী শয়তানকে তাড়াও এবং তাড়াতে পারলে তুমি একা হবে , এবং একা হলে ডাকের জবাব সঙ্গে সঙ্গে পাবে ।
ইমামুল আউলিয়া বায়েজিদ বােস্তামি ( র . ) জাবরুত মােকামের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে বললেন , ‘ রব ( আল্লাহ্ ) , আমি তােমার প্রতি সন্তুষ্ট । ' রব বললেন , বায়েজিদ , তুমি মিথ্যুক । কেননা যদি তুমি সত্যিই সন্তুষ্ট থাকতে তাহলে সন্তুষ্ট থাকার কথাটি বলতে না । ' বায়েজিদ লজ্জায় মাথা নত করে পুনরায় কঠোর ধ্যানসাধনায় মগ্ন রইলেন । এভাবে দুই বৎসর ধ্যান সাধনায় মগ্ন থাকার পর বায়েজিদ একদিন বলে ফেললেন , ‘ আমিই সুবহানি , সব শান আমারই । ' ( আনা সুবহানি মাআজামু শানি । ' ) লা মােকামে প্রবেশ করতে পারলেই এই রকম কথা বলা যায় । সুতরাং ১/নাসুত ,২/ মালাকুত এবং ৩/ জাবরুত মােকামে সাধককে পীরের ধ্যানটি করতেই হবে এবং কোনাে রহস্যজনক বিষয় দেখতে পেলে আপন পীরের রূপেই দেখা যায় । কিন্তু সাধক যখন লা মােকামে প্রবেশ করেন তখন দেখতে পান , আপন পীর ডান দিক দিয়ে চলে গেছেন এবং বাম দিক দিয়ে খান্নাসরূপী শয়তানটি ভেগে গেছে । তখনই সাধক নিজের মধ্যে দেখতে পান যে , তার পীরও তিনি এবং তাঁর মুরিদও তিনি । এখানেই তৌহিদ ।
◆>সুতরাং পীর ধরাও শেরেক ,
কিন্তু ইহাই শেষ শেরেক ।
সুতরাং আপন পীরের অবস্থানটি জাবরুত মােকাম পর্যন্ত । লাহুত মােকামে পীর আর থাকেন না ।
সুতরাং লাহুত মােকামে সাধক যখন প্রবেশ করেন তখন দেখতে পান যে , আপন পীরের আধ্যাত্মিক মূল্য এক টাকাও নয় । সুতরাং আপন পীরের অবস্থানটি তিনটি মােকাম পর্যন্ত । লাহুত মােকামে প্রবেশ করলেই পীর আর থাকেন না এবং পীরের দাম আর এক টাকাও নহে । এই কথাগুলাে উঁচু স্তরের নীতিনির্ধারণের কথা । তাই অনেকের ভুল বােঝার সম্ভাবনাটি থেকে যায় । এখানে পীর ধরাটা মুখ্য বিষয় নহে , মুখ্য বিষয়টি হলাে আল্লাহ্র তৌহিদ সাগরে অবগাহন করা।।
সুত্রগ্রন্থঃ মারেফতের বানী পূষ্টা ৪৬ এবং ৪৭
লেখক ---
কালান্দার বাবা জাহাঙ্গীর আল সুরেশ্বরী(রহঃ)
___________________
@.Anower Hossain
ধৈর্য সহকারে পরার জন্য ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবনা
অফুরন্ত ভালবাসা রইল ঈস্বর সকলের মঙ্গল করুন।