Reporters Club SOMC

Reporters Club SOMC রিপোর্টার্স ক্লাব সিওমেক

১৮ জুলাই ২০২৪যাত্রাবাড়ীর এক গলি থেকে ফজর নামাজ পড়ে ৩/৪ টা ছেলে মেইন রোডের দিকে যাচ্ছিল। তাদের উদ্দেশ্য, ভোর হবার আগেই যা...
06/12/2024

১৮ জুলাই ২০২৪

যাত্রাবাড়ীর এক গলি থেকে ফজর নামাজ পড়ে ৩/৪ টা ছেলে মেইন রোডের দিকে যাচ্ছিল। তাদের উদ্দেশ্য, ভোর হবার আগেই যাত্রাবাড়ী চিটাগং রোড হাইওয়ে দখলে নেয়া।

আর মাত্র ৫ টা বিল্ডিং পরে গলি শেষ, সামনে মেইন রোড। হঠাৎ গুলির শব্দ, তাদের একজন সঙ্গী লুটিয়ে পড়ল। ছেলেটার নাম মারুফ। হতবিহ্বল বাকীরা বুঝতে পারছিল না কোথা থেকে গুলি এসেছে, কে গুলি করেছে। এদিকে লুটিয়ে পড়া সঙ্গীর শরীর থেকে গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে। তার দিকে ভালো ভাবে তাকাতেই ২য় গুলির শব্দটা শোনা গেল। উপস্থিত সবাই মাটিতে শুয়ে পড়ল। এদের গায়ে গুলি লাগে নি। এরা নিরাপত্তার জন্য শুয়েছে৷ আহত মারুফকে টেনে হিঁচড়ে গলির ভেতরে নিয়ে যাওয়া হলো। মারুফের কাঁধ ছুয়ে গুলি বেরিয়ে গেছে। রাবার বুলেট না। এটা স্নাইপার বুলেট। এগুলো যুদ্ধে ব্যবহার করা হয় আরেক দেশের সৈন্য হত্যা করতে।

এদিকে যাত্রাবাড়ী বাসী গত ৩ দিন গুলির শব্দ শুনে অভ্যস্ত তবে এখন ভোর হওয়ায় শব্দের মাত্রাটা বেশি ছিল। এলাকার সবার ঘুম ভেঙে গেল। অনেকে বাসা থেকে নেমে গেল। বাইরে কী হচ্ছে জানার জন্য।

গুলির শব্দের উৎস নিয়ে আলোচনা করে বের করা হলো গলির মাথায় কোনো বাড়িতে স্নাইপার আছে। গলি থেকে বের হলেই গুলি করবে। কিন্তু কোন বিল্ডিং এ স্নাইপার সেটা জানে না কেউ। আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে হলে মেইন রোডে যেতে হবে। যদিও এটা যাত্রাবাড়ী। মেইন রোডে যাওয়ায় অনেকগুলো রাস্তা আছে। আশেপাশের গলি থেকেও সেইম তথ্য এলো। গলি থেকে বের হতেই অদৃশ্য স্থান থেকে তাদের উপর গুলি করা হয়েছে।

এলাকাবাসী সিদ্ধান্ত নিল যে করেই হোক স্নাইপারের লোকেশন বের করতে হবে। এটা বের করার জন্য জানবাজ কিছু লোক দরকার যার গুলি খাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কয়েকজনকে আগে গলি থেকে বের হতে হবে। পেছনে পেছনে কিছু লোক দেখবে কোন বাসা থেকে গুলি করছে। কে হবে সেই জানবাজ?

ইন্টার পড়ুয়া একটা ছেলে আগে যেতে রাজি হলো। সে একা একা আগে যাবে।

ছেলেটার নাম অনিক। সে বন্ধুর সাথে কোলাকুলি করল। এক বন্ধুর কানে কানে বলল "আমার কিছু হলে মাকে সান্ত্বনা দিস।" বন্ধু দুস্টামি করে উত্তর দিল "আর তোর ক্রাশ?" অনিক উত্তর দিল "তাকে আমার কথা বলিস।'

হাসিমুখে অনিক গলির মুখের দিকে এগোলো। তার চোখে সতর্ক দৃষ্টি। আগে যেখানে মারুফ গুলি খেয়েছে ঠিক সেই স্থানে আসার সাথে সাথে গুলির শব্দ শোনা গেল। এদিকে অনিক আগে থেকেই একে বেঁকে চলছিল। গুলি তার গায়ে লাগে নাই। তবে গুলিটা আশেপাশের কোথাও দিয়ে গেছে বোঝা গেছে। অনিক পেছন দিকে না গিয়ে সামনের দিকে দৌড় দিল। এবার আরেকটা গুলি হলো। এটাও অনিকের গায়ে লাগে নাই। এদিকে অনিকের পেছন পেছন আরো ২ টা ছেলে এলোমেলো ভাবে দৌড়াচ্ছিল। পেছন থেকে শরীফ আর শাহাদাৎ ভাই মোটামুটি একটা ধারনা পেলেন কোন বিল্ডিং থেকে গুলি করেছে। এদিকে অনিক ও ২ টা ছেলে গলির মাথায় পৌঁছে গেছে। তারা একটা বিল্ডিং এর ঠিক নিচে অবস্থান করছে। এখানে উপর থেকে কেউ গুলি করতে পারবে না। এদিকে শরীফ আর শাহাদাৎ আগের জায়গায় ফিরে গেল। সেখানে এখন মিনিমাম ১০০ জন আন্দোলনকারী। আরো অনেকেই জড়ো হচ্ছে।

সবাই ইতিমধ্যে জেনে গেছে গলির মুখে অদৃশ্য স্নাইপার অবস্থান করছে। কোন বিল্ডিং থেকে গুলি করা হয়েছে সেই ধারনাও পেয়ে গেছে। তারা এটা নিয়ে বলাবলি করল। এক পর্যায়ে তারা জানতে পারল ঐ বিল্ডিংটার মালিক এক আওয়ামীলীগ নেতা। তার মানে তাদের ধারণা সঠিক। আওয়ামীলীগ নেতার বাসায় পুলিশ অথবা আওয়ামীলীগের স্নাইপার অস্ত্র তাক করে বসে আছে।
বিল্ডিং টা ৬ তলা। গুলি করা হয়েছে ৩ থেকে ৬ তলার মধ্য থেকে যেকোনো একটা ফ্ল্যাট থেকে। গলির যে পয়েন্টে ভোরে মারুফ গুলি খেয়েছে সেখান থেকে ৪/৫/৬ তলা ভালো করে দেখা যায়। তার মানে ৩ তলা থেকে গুলি করা হয় নি। আবার ছাদ থেকেও গুলি করা হয় নি। এদিকে ২ টা করে মোট ৬ টা ফ্ল্যাট আছে। ৩ টা ফ্ল্যাট আগেই বাদ দেয়া হলো। কারণ এই ৩ টা ফ্ল্যাট থেকে মেইন রোডের দিকে গুলি করা যাবে, গলির ভেতরের দিকে নয়। ৪/৫ ও ৬ তলাকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা হলো কিন্তু কাউকে দেখা গেলো না। ৫ তলার একজন মহিলা বারান্দায় এসে কী যেন দেখে রুমে ঢুকে গেলেন। তার মানে ৫ তলাতেও স্নাইপার নেই। অর্থাৎ ৪ ও ৬ তলার এদিকের ফ্ল্যাটের যেকোনো একটায় স্নাইপার আছে। এখন আন্দোলনকারীরা টার্গেট নিয়েছে এই বিল্ডিং এর দখল নিবে। তারপর বিল্ডিং এ ঢুকে স্নাইপারকে বের করবে। কাজটা খুবই ভয়ানক কারণ আন্দোলনকারী কারো হাতে পিস্তল নাই। লাঠি ও ইটের টুকরাই একমাত্র ভরসা।

আন্দোলনকারীরা এক এক করে গলির বিল্ডিং গুলোর দেয়ালের সাথে গা ঘেঁষে ঘেঁষে মেইন রোডের দিকে এগোলো। একজন একজন করে আগানোর কারণে উপর থেকে কেউ দেখার সুযোগ নেই। তাই গুলিও হলো না।

৫ মিনিটের মধ্যে আওয়ামিলীগ নেতার বাড়ির সামনে প্রায় শ খানেক আন্দোলনকারী হাজির হয়ে গেল।

এদিকে দারোয়ান এত লোক দেখে ভয় পেয়ে গেল। তাকে হুমকি ধামকি দিতেই সে গেইট খ্যলে দিল। সবাই এলাকার স্থানীয় পোলাপান। এদেরকে ক্ষেপিয়ে দারোয়ানের চাকরি করা যাবে না। গেইট খোলা পেয়েই হুড়মুড় করে ছাত্ররা বিল্ডিং এ ঢুকে পড়ল। একদল ৪ তলার টার্গেটেড ফ্ল্যাটের দরজায় আরেকদল ৬ তলার ফ্ল্যাটের দরজা ধাক্কা দিতে লাগল। ৪ তলার দরজা খুলল না কিন্তু ৬ তলার দরজা খুলে ফেলল। ভেতরে ভয়ার্ত বাসার লোকজনকে দেখে বুঝল এখানে কোন স্নাইপার থাকার কথা না। ৪ তলার দরজা কেউ খুলছে না। শব্দ শুনে পাশের রুমের দরজা খুলে একজন দেখা দিয়ে বললেন "এই বাসাটা ফাঁকা।" ফাকা বাসার কথা শুনে পোলাপাইনদের উৎসাহ আরো বেড়ে গেল। এক পর্যায়ে তারা দরজা ভেংগে ফেলল। ভেতরে হুড়মুড় করে ঢুকেই তারা সেই কাঙ্ক্ষিত স্নাইপারের দেখা পেল। পুলিশের পোষাক পরা দুইজন লোক রাইফেল হাতে এই বাসায় অবস্থান করছে। এই বাসাটা আসলেই ফাঁকা। দুইজন পুলিশ প্রাণ ভিক্ষার উদ্দেশ্যে মাফ চাওয়ার ভঙ্গিতে হাত জোড় করে রাখল। উত্তেজিত জনতার এখন এসব দেখার সময় নেই। তারা পুলিশ দুইজনকে উত্তম মধ্যম লাগানো শুরু করল। একজন এক রুমে দুইটা রাইফেল খুজে পেল। রাইফেলের নল এখনো গরম। তার মানে এই রাইফেল থেকেই গুলি করা হয়েছে। পুলিশ দুইজনকে মারতে মারতে বিল্ডিং এর নিচে নামানো হলো। এদিকে শোরগোল টের পেয়ে বিল্ডিং এর মালিক পালিয়ে গেল। তাকে অবশ্য বিল্ডিং এ হামলাকারী আন্দোলনকারীরা চিনত না। চিনলে তার পালানোর সুযোগ হতো না।

আধা ঘণ্টা পরে যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারে দুইটা উলঙ্গ লাশ ঝুলে রইল। তাদের পা উপরের দিকে আর মাথা নিচের দিকে। এদিকে সূর্য উঠে গেছে। রাস্তায় হাজার হাজার মাদ্রাসার ছাত্র তাকবির ধ্বনি দিচ্ছিল। আশেপাশের মাদ্রাসা থেকে পঙপালের মত ছাত্র আসছিল। খুনি পুলিশের এই পরিণতি দেখে সমবেত জনতার উৎসাহ বেড়ে গেলো। আজকে যাত্রাবাড়ীর বেরিকেড ভাঙতেই হবে। এমনিতেই যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর ব্রীজ ৩ দিন ধরে অচল৷ কয়েকশো গাড়ির চাকা পাংচার করে রাখা হয়েছে। চাইলেও এখান দিয়ে কোনো গাড়ি আসা যাওয়া করতে পারবে না। ১৮ জুলাই ২০২৪ ছিল আন্দোলনের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন।

-সাইফুল ইসলাম

এরকম রোমহষর্ক অভিজ্ঞতা বা স্মৃতিকথা বা দেশ নিয়ে ভাবনা পাঠাতে পারেন আমাদের ইনবক্সে বা নিচের ঠিকানায়।
Email: [email protected]
Whatsapp/Telegram: 01767592260
শেষ তারিখ:১০ ডিসেম্বর।

আসসালামু আলাইকুম,, আলহামদুলিল্লাহ জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কবল থেক...
23/11/2024

আসসালামু আলাইকুম,,

আলহামদুলিল্লাহ জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কবল থেকে দেশ ও ক্যাম্পাস মুক্তি পেয়েছে। দীর্ঘদিন সন্ত্রাসী নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত করেছে।ক্যাম্পাসের বৈচিত্র্য সৌন্দর্য ও মেধা বিকাশের অবিচ্ছেদ্য ক্লাবগুলো করে রেখেছিল কুক্ষিগত। বন্ধও করে দেয় কিছু ক্লাব কার্যক্রম।

তেমনি একটি ক্লাব রিপোর্টার্স ক্লাব সিওমেক।ঐতিহ্যবাহী এই ক্লাবটি সুদীর্ঘ সময় ধরে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সৃষ্টিশীল কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। ২০২২ সালে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কুখ্যাত সন্ত্রাসী নাজমুল ক্লাবরুমে ভাঙচুর ও ক্লাব সদস্যদের হুমকি দিলে এর কার্যক্রম স্থগিত থাকে। ফ্যাসিবাদের আক্রোশের শিকার এই ক্লাব দ্রুতই পুনর্গঠন করা হবে। এজন্য আপনার অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা প্রয়োজন। বিপ্লবের স্পিরিটকে ধারণ করে সবাইকে সাথে নিয়ে আদর্শ ক্যাম্পাস গঠনে কাজ করতে চাই আমরা।

জুলাই বিল্পবের স্মৃতিমূলক স্মারক ম্যাগাজিন প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছি আমরা।এতে স্মৃতি চারণ,প্রবন্ধ,আন্দোলনের চিত্রগ্রাফি,গ্রাফিতি,গান,কবিতা সহ আপনার বিপ্লবের দিনগুলোর গল্প থাকবে ইনশাআল্লাহ। সবাইকে লেখা জমা দেয়া ও ক্লাব সদস্য হতে আগ্রহীদের যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা যাচ্ছে।

Address

Sylhet MAG Osmani Medical College, Kajal Shah
Sylhet

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Reporters Club SOMC posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share