Lifeosophy Blaster

Lifeosophy Blaster জীবন যার দান তাঁর দেয়া জীবন দর্শন প্রযোজ্য, সৃষ্ট জীবের নয় !

একমাত্র প্রযোজ্য, শুধুই একটি মাত্র জীবন দর্শন প্রয়োগযোগ্য। সেই জীবন দর্শনে মানব জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য সেইসাথে উদ্দেশ্য...
24/12/2024

একমাত্র প্রযোজ্য, শুধুই একটি মাত্র জীবন দর্শন প্রয়োগযোগ্য। সেই জীবন দর্শনে মানব জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য সেইসাথে উদ্দেশ্য পর্যন্ত পৌঁছার A টু Z নির্দেশিকা , আকা-বাকা পথে করণীয় , প্রতিটি যুগের মানব জীবনের প্রতি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ক্ষেত্রের সফলতার সূত্র, যা কিছুর মুখোমুখি মানুষকে হতে হয় সেসব পরিস্থিতিতে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সেই গুণাবলী ধরে রাখার, এককথায় মানব জীবন পরিচালনার পাই to পাই বিবরণ সংবলিত পূর্ণাঙ্গ তথ্য বিদ্যমান ! এমন কোনো সেক্টর নাই যা নিয়ে সেখানে আলোচনা নেই ! এটাই এই জীবন দর্শনের অনন্য বৈশিষ্ট্য একই সাথে একমাত্র প্রযোজ্য হওয়ার যথেষ্ট কারণ। এর সমতুল্য দ্বিতীয় কিছু আপনি পাবেন না !

সেই দর্শনের রূপরেখা ❔

উৎস : মহাপরাক্রমশালী একক সত্তা যিনি মানুষের স্রষ্টা, চিরন্তন ও অপরিবর্তনীয় ।

উদ্দেশ্য : মানবজাতির ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি।

মূলনীতি : একমাত্র সেই সত্তার প্রতি পরিপূর্ণ আনুগত্য, ন্যায়বিচার ও সততা, দয়া ও মানবিকতা, সামগ্রিক
ভারসাম্য।

পরিণতি : পরম করুণাময় সেই একমাত্র সত্তার সন্তুষ্টি অর্জন, চূড়ান্ত জবাবদিহিতার মাধ্যমে ন্যায়বিচার, সফলদের শান্তি আর ব্যর্থদের শাস্তি ।

এই দর্শনের আলোকে জীবন পরিচালনার জন্য সে পথে সহায়ক অনুপ্রেরণা , যারা এ পথে চলতে পেরেছেন তাদের জীবন থেকে শিক্ষণীয় দিকগুলো, বিভিন্ন আধুনিক, প্রাচীন, বিশ্বসেরা বই থেকে কিছু অংশ হুবহু তুলে ধরে সংশ্লিষ্ট সব বিষয়গুলো জানাতে, বইয়ের পাতায় থেকে যাওয়া অজানা বিষয়গুলোকে জানাতে, যারা এ পথে মানুষকে ডেকে গেছেন ও যে দার্শনিকরা সেক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন তাদের উক্তিসমূহ বিশ্লেষণ করে তাদের বাণীটুকু আপনাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা করার উদ্দেশ্যে এই Page টি ওপেন করা ।

এটাই মিশন। একটি আয়াতের মাধ্যমে হলেও যদি আপনাদের দ্বীনের বুঝ কিঞ্চিৎ পরিমাণ বাড়াতে পারি, যদি অনুপ্রাণিত করতে পারি চূড়ান্ত গন্তব্যের দিকে, এই আশা রেখে চেষ্টা করে যাব। ইনশাআল্লাহ্ ।

এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা যদি আপনাকে জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবায় , সেটাই হবে সার্থকতা।

🔳 আমি এ পথে যাত্রা শুরু করেছি মাত্র। তাই আমি যা প্রচার করবো সেই সবকিছুর উপর আমলকারী আমাকে মনে করবেন না।

এই দর্শন VS মনুষ্য সৃষ্ট জীবন দর্শনের স্বরুপ তুলনা করা প্রয়োজন ।

উৎস: মানুষের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও সীমাবদ্ধ চিন্তা।

উদ্দেশ্য: সাময়িক সুখ ও প্রয়োজন মেটানো।

মূলনীতি: সময় ও সংস্কৃতির উপর নির্ভরশীল।

পরিণতি: পরিবর্তনশীল ও সীমিত।

That's it ❕কোনটা অনুসরণীয় তা ভেবে দেখা মানুষের অনন্য বৈশিষ্ট্যের দাবি ❕

উদ্দেশ্যহীন জীবন যারা পার করছেন তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই ,
মানুষকে এমনি এমনি ' অস্তিত্ব ' দেয়া হয়নি ❕
প্রতিনিয়ত সেই অন্তিম গন্তব্যের দিকে আমাদের যাত্রা এগিয়ে যাচ্ছে, খুব দ্রুত গতিতে !

চিন্তাশক্তি মানুষকে এমনি এমনি দেয়া হয়নি❕
সেটা ব্যবহার করে সেই ' দাতাকে ' চেনার জন্যই, শুধুমাত্র সেজন্যই দেওয়া হয়েছে !

অন্তর মানুষকে এমনি এমনি দেয়া হয়নি ❕
উপলব্ধি করার এবং শুধুই সেটা উপলব্ধি করার জন্য দেওয়া হয়েছে !

মহাবিশ্বের এত আয়োজন এমনি এমনি নয় ❕
এর প্রতিটি বস্তু এক একটি নিদর্শন। নিদর্শন সেই সত্তার বড়ত্বের ! নিদর্শন সেই সত্তার সৌন্দর্যের ! নিদর্শন সেই সত্তার মহামহিমার ! নিদর্শন সেই সত্তার ক্ষমতার ! তাঁর দাপটের !

এতকিছু কি মানুষকে ভাবায় না ❔মানুষের চিন্তা করার জন্য কি এই নিদর্শনগুলো যথেষ্ট নয় ❔

সেই চূড়ান্ত সত্য, সেই অন্তিম গন্তব্যের দিকেই তো মানুষ এগিয়ে যাচ্ছে। তবে কি তারা এমন কিছু পেয়ে গেছে যা তাদের সেই গন্তব্যের দিকে যাত্রা থামিয়ে দিবে❔সেজন্যই কি তারা এতো উদাসীন❔

' Remind ' করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবো মানুষের গন্তব্যের দিকে যাত্রার গতিশীলতা । অনুরোধ ভেবে দেখার , চিন্তা করার।

বিশেষ দ্রষ্টব্য : এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা যদি আপনাকে ভাবায় আর উপলব্ধিহীন অন্তর , চিন্তাহীন মস্তিষ্ক, উদ্দেশ্য ভুলে যাওয়া কোনো মানব হৃদয়ে যদি পৌঁছে দেওয়া যায় , যদি কাউকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া যায় তাদের সংক্ষিপ্ত পথের শেষ ঠিকানা, তাদের অস্তিত্বের কারন, তাহলে তাদের কাছে কি পৌঁছে দেওয়া যায় না ?

যদি একটু হলেও ভাবায় , যদি একটু হলেও মনে করিয়ে দেয় আপনাকে তবে পরিচিত কোনো উপলব্ধিহীন অন্তরের কাছে, উদ্দেশ্য ভুলে যাওয়া অন্তরকে মনে করিয়ে দিতে পৌঁছে দিন তাদের কাছে। হয়তো কোনদিন তাদেরও ভাবনা জাগবে ! হতে পারে তারা চিন্তা করে দেখবে !

এগুলো তো সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়!' শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ইমাম গাজ্জালীর খোলা চিঠি ' থেকে নেয়া।🔲পেজ সম্পর্কে ম...
24/12/2024

এগুলো তো সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়!

' শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ইমাম গাজ্জালীর খোলা চিঠি ' থেকে নেয়া।

🔲পেজ সম্পর্কে মতামত জানাতে পারেন রিভিউ সেকশনে।

🔳 শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ইমাম গাজ্জালীর খোলা চিঠি :আল্লাহ তাআলার সাথে তোমার কাজকর্ম ও লেনদেন এমন হতে হবে যে, তোমার কোনো...
23/12/2024

🔳 শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ইমাম গাজ্জালীর খোলা চিঠি :

আল্লাহ তাআলার সাথে তোমার কাজকর্ম ও লেনদেন এমন হতে হবে যে, তোমার কোনো গোলাম যদি তোমার সাথে এমন কাজ করত তাহলে তুমি সন্তুষ্ট হয়ে যেতে। আর তার প্রতি তোমার মনে কোনো ক্ষোভ থাকতো না বা তুমি সংকীর্ণতা বোধও করতে না । আরে ! একজন কৃত্রিম গোলামের যেই কাজ তোমার মনের কাছে সন্তোষজনক হবে না, সে কাজ তুমি তোমার সত্যিকার মনিবের ক্ষেত্রে মেনে নিতে পারো না !

— ইমাম গাজ্জালী (রঃ)

আমার পেজ সম্পর্কে আপনার মতামত জানাতে পারেন রিভিউ সেকশনে ।

পানি নামক যে উপাদান আমাদের জীবন বাঁচিয়ে রাখার জন্য অপরিহার্য, সেই পানিতেই ডুবে গেলে আমাদের জীবন লীলা সাঙ্গ হতে পারে। যে ...
19/12/2024

পানি নামক যে উপাদান আমাদের জীবন বাঁচিয়ে রাখার জন্য অপরিহার্য, সেই পানিতেই ডুবে গেলে আমাদের জীবন লীলা সাঙ্গ হতে পারে। যে সমুদ্র জাহাজকে ভাসিয়ে রাখে, সেই সমুদ্রই পারে জাহাজকে ছিন্নভিন্ন করে দিতে।

এই পার্থিব জীবন, এই দুনিয়া, ঠিক সমুদ্রেরই মতো। আমাদের অন্তরগুলো জাহাজের মতো। সমুদ্রকে আমরা নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে ব্যবহার করতে এবং আমাদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছানোর মাধ্যম হিসেবে কাজে লাগাতে পারি। কিন্তু এই সমুদ্র একটা মাধ্যম মাত্র। আহার সংগ্রহের জন্য সমুদ্র একটা মাধ্যম। এটা ভ্রমণের এক মাধ্যম। উচ্চতর লক্ষ্য পূরণের এটা এক মাধ্যম। তথাপি এটা এমন এক জিনিস, যেটা আমরা অতিক্রম করতে চাই, এতে থেকে যাওয়ার কথা কখনো চিন্তা করি না। একবার ভাবুন তো, সমুদ্র যদি আমাদের মাধ্যম হওয়ার বদলে হয়ে যায় আমাদের শেষ ঠিকানা, তবে কেমন হবে?

শেষ অবধি তাতে তো আমাদের ডুবেই মরতে হবে।

সমুদ্রের পানি যতক্ষণ থাকবে আমাদের জাহাজের বাইরে, ঠিক ততক্ষণ জাহাজ নির্বিঘ্নে ভেসে চলবে এবং নিয়ন্ত্রণে থাকবে। কিন্তু যেইমাত্র পানি জাহাজে প্রবেশ করতে শুরু করে, তখন কি ঘটে? ঠিক তেমনি দুনিয়া যখন পানির মতো আমাদের অন্তররূপ জাহাজের বাইরে অবস্থান করে না, দুনিয়া যখন নিছক আর মাধ্যম থাকে না, পরিস্থিতি তখন কীরূপ ধারণ করে? দুনিয়া যখন আমাদের অন্তরে প্রবেশ করে, তখন কি ঘটে? জাহাজ তখনই ডুবে।

এমন পরিস্থিতিতে অন্তর জিম্মি হয়ে পড়ে এবং সেটা (দুনিয়ার) দাসে পরিণত হয়। আর তখনই যে দুনিয়া এক সময় ছিল আমাদের নিয়ন্ত্রণে, সেটা আমাদের ওপর নিজের কর্তৃত্ব ফলাতে শুরু করে। সমুদ্রের পানি যখন প্রবেশ করতে আরম্ভ করে এবং জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়ে নেয়, তখন জাহাজ আর [আমাদের] আয়ত্তে থাকেন না। জাহাজটির পরিণাম তখন সমুদ্রের কৃপার ওপর নির্ভর করে।

দুনিয়ারূপী সমুদ্রে ভেসে থাকার জন্য, দুনিয়াকে আমাদেরকে ঠিক সেভাবে দেখতে হবে, যেভাবে আল্লাহ আমাদেরকে দেখতে বলেছেন।

দুনিয়াতে আমাদের বসবাস। প্রকৃতপক্ষে, আমাদের ব্যবহারের জন্যই দুনিয়ার সৃষ্টি। দুনিয়ার প্রতি এই নিরাসক্তির (যুহৃদ) মানে কখনো এই নয় যে, এই দুনিয়ার সাথে আমাদের কোনো লেনাদেনা নেই। বরং কি করা আমাদের জন্য বাঞ্ছনীয়, নবি (সা.) আমাদেরকে সেটা শিখিয়ে দিয়েছেন।

দুনিয়া থেকে দূরে সরে থাকার জন্য আমাদের নবি (সা.) কখনো দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হননি, বরং তার এই নিরাসক্তি আরও গভীর। এটা ছিল অন্তরের নিরাসক্তি ও নির্লিপ্ততা। বস্তুত তার চূড়ান্ত অনুরাগ ও আসক্তি কেবল আল্লাহর সাথে ও আল্লাহর সান্নিধ্যে থাকার প্রতি। কেননা, তিনিই আল্লাহর বাণী সত্যিকারভাবে উপলব্ধি করেছেন:

“পার্থিব জীবন খেল তামাশা ছাড়া আর কি? বস্তুত আখিরাতের আবাসই প্রকৃত জীবন। কিন্তু হায়, যদি তারা জানতো।” (কুরআন, ২৯:৬৪)

দুনিয়া থেকে নির্লিপ্ত থাকার মানে এই নয় যে, আমরা দুনিয়ার কোনো জিনিসের মালিক হতে পারবো না। প্রকৃতপক্ষে, অনেক সাহাবিই বেশ সম্পদশালী ছিলেন। বরং
দুনিয়া থেকে নির্লিপ্ত থাকার মানে হচ্ছে:
দুনিয়া যা, আমরা সেটাকে সেভাবেই মূল্যায়ন করি এবং দুনিয়ার সাথে আমরা সেভাবেই সম্পর্ক রাখি - দুনিয়াকে আমরা কেবল একটি মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করি।

[দুনিয়া থেকে] নির্লিপ্ত থাকার মানে: দুনিয়া যেন আমাদের হাতে থাকে-আমাদের অন্তরে যেন প্রবেশ না করে যায়।

বিষয়টি আলি (রা.) অত্যন্ত চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন: "দুনিয়া থেকে নির্লিপ্ত থাকার মানে এই নয় যে, তুমি কিছুর মালিক হতে পারবে না, বরং এটার অর্থ হচ্ছে: দুনিয়ার কোনো কিছুই যেন তোমার মালিক হয়ে না বসে।"

জাহাজে সমুদ্রের পানি প্রবেশের ন্যায়, যখন আমরা দুনিয়াকে আমাদের অন্তরে প্রবেশ করতে দেবো, তখনই আমরা নিমজ্জিত হবো। জাহাজের মধ্যে সমুদ্রের পানি প্রবেশ করবে, এমনটি হওয়ার কথা ছিল না, বরং কথা ছিল সমুদ্র হবে গন্তব্যে পৌঁছানোর এক মাধ্যম এবং আবশ্যিকভাবে এটা জাহাজের বাইরে থাকবে। ঠিক একইভাবে আমাদের অন্তরে দুনিয়ার প্রবেশের কথা ছিল না। এটা কেবল এক মাধ্যম, যা কোনো অবস্থাতেই যেন আমাদের অন্তরে প্রবেশ না করে, আর না কখনো আমাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই কারণে আল্লাহ কুরআনে দুনিয়াকে 'মাতা'আ' হিসেবে উল্লেখ করেন। 'মাতা'আ' শব্দের অনুবাদ এমন হতে পারে: "ক্ষণস্থায়ী পার্থিব আনন্দের উপকরণ"। দুনিয়া এক উপকরণ মাত্র। এটা এক হাতিয়ার।

এটা( দুনিয়া) একটি পথ –এটা গন্তব্য নয় ❕

— ইয়াসমিন মুজাহিদ (রিক্লেইম ইওর হার্ট)

ভালো লাগলে পেজে রিভিউ দিতে ভুলবেন না ।

মনে রাখবেন, কোনো কিছু আঁকড়ে ধরার দুটো স্থান আছে হাত এবং অন্তর। উপহার আমরা কোথায় রাখি? উপহারকে অন্তরে ধরে রাখা হয় না। এটা...
19/12/2024

মনে রাখবেন, কোনো কিছু আঁকড়ে ধরার দুটো স্থান আছে হাত এবং অন্তর।

উপহার আমরা কোথায় রাখি? উপহারকে অন্তরে ধরে রাখা হয় না। এটা হাতে ধরে রাখা হয়। আর তাই যখন উপহার কেড়ে নেওয়া হয়, তখন সেটা হারানোর যন্ত্রণা হাতে অনুভব হওয়া উচিত ওই যন্ত্রণা অন্তরে অনুভূত হওয়ার কথা নয়। এই পার্থিব জীবনে যিনি দীর্ঘ একটা সময় পার করেছেন, তিনি জানেন যে, হাতে অনুভূত হওয়া যন্ত্রণা এবং অন্তরে অনুভূত হওয়া যন্ত্রণা এক নয়। অনুরাগ, নেশা ও নির্ভরতার কোনো জিনিস হারালে অন্তরে যন্ত্রণা অনুভূত হয়। এই যন্ত্রণা অন্য কোনো যন্ত্রণা মতো নয়। এটা সাধারণ কোনো যন্ত্রণা নয়। এই যন্ত্রণা জানান দেবে যে, আমরা আমাদের আসক্তির কোন বস্তু হারিয়েছে। এটা ছিল এমন এক উপহার, যা ভুল জায়গায় রাখা হয়েছিল।

আমাদের সবারই প্রয়োজন আছে এবং আমাদের সবারই আছে চাহিদা। আমাদের সত্যিকার ভোগান্তি তখনই আরম্ভ হয়, যখন আকাঙ্ক্ষাকে আমরা নিজেদের অপরিহার্য প্রয়োজনে রূপান্তরিত করি এবং আমাদের সত্যিকার প্রয়োজন (তথা আল্লাহকে) এমন বস্তুতে রূপান্তরিত করি, যেটা না হলে আমাদের তেমন কিছু যায় আসে না।

আমাদের আসল ভোগান্তির সূচনা তখনই, যখন আমরা মাধ্যমকে গন্তব্যের সাথে গুলিয়ে ফেলি। আল্লাহই আমাদের একমাত্র গন্তব্য। অন্য সবকিছুই মাধ্যম। আমাদের ভোগান্তির সূচনা তখনই হবে, যখন আমরা নিজেদের চোখকে গন্তব্য থেকে সরিয়ে ফেলে, মাধ্যমের মাঝেই নিজেদেরকে হারিয়ে ফেলি।

প্রকৃতপক্ষে, উপহারের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদেরকে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে আনা। [আল্লাহর কাছে পৌঁছানোর] এক মাধ্যমে এই উপহার।

উদাহরণস্বরূপ, নবি (সা.) কি বলেননি যে, বিবাহ দ্বীনের অর্ধেক? কেন? কারণ জীবনের খুব কম ক্ষেত্রই আছে, যা বিবাহের মতো একজনের চরিত্র গঠনের ওপর সামগ্রিক প্রভাব বিস্তার করতে পারে। ধৈর্য, কৃতজ্ঞতা, দয়া, বিনম্রতা, উদারতা, আত্মত্যাগ এবং নিজের বদলে অন্যকে প্রাধান্য দেওয়ার গুণগুলো সম্বন্ধে আপনি পড়তে পারেন, কিন্তু আপনি কখনো এই গুণগুলোর বিকাশ সাধন করতে পারবেন না, যতক্ষণ না আপনি এমন পরিবেশে পড়ছেন, যে পরিবেশ এসব গুণের পরীক্ষা নেয়।

বিবাহের মতো একটা নেয়ামত আপনাকে আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক মাধ্যমে হতে পারে, যতক্ষণ এটা নিছক একটি মাধ্যম থাকে এবং এটা জীবনের লক্ষ্যে পরিণত না হয়। আল্লাহর দেওয়া এসব নেয়ামত তাঁর কাছে পৌঁছানোর এক মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে, যতক্ষণ এগুলোর অবস্থান অন্তরে না হয়ে [আমাদের] হাতে হবে।

মনে রাখবেন, আপনার অন্তরে যা বাস করে, সেটাই আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করে। অন্তরের ওই জিনিসটি তখন আপনার পরম আরাধ্য বস্তুতে পরিণত হয় এবং ওই জিনিসটি পেতে এবং ধরে রাখতে আপনি যেকোনো ধরনের কুরবানি পর্যন্ত দিতে প্রস্তুত থাকেন। ওই বস্তুটি তখন আপনার নির্ভরতার মৌলিক ভিত্তিতে পরিণত হয়। এটা এমন এক জিনিস হতে হবে, যা হবে চিরন্তন, যার শ্রান্তি বা অবসাদ হবে না এবং যা ভেঙে যাবে না। আর এটা এমন জিনিস হবে, যা কখনো ছেড়ে চলে যায় না।

কেবল একটি জিনিসই এমন হতে পারে: [এবং তিনিই]
স্রষ্টা।

যে জিনিস আমাদেরকে সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণা দেয় কিংবা (হারিয়ে ফেলার) ভীতি সৃষ্টি করে, সেই বিষয়গুলো যদি আমরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করি, তবে যে যে উপহারকে ভুল স্থানে রাখা হয়েছে, সেগুলো আমরা নির্ভুলভাবে খুঁজে বের করতে সক্ষম হবো। আমরা যদি বিবাহ করতে না পারি, নিজের মনের মানুষকে না পাই, চাকুরি খুঁজে না পাই, নিজেকে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করতে না পারি, ডিগ্রি অর্জন করতে না পারি কিংবা নির্দিষ্ট Status-এ উপনীত হতে না পারি এই সবকিছু যদি আমাদের গ্রাস করে ফেলে, তবে আমাদের নিজেদের পরিবর্তন করা জরুরি। উপহারটি যে স্থানে সংরক্ষিত আছে, সেখান থেকে এটাকে সরাতে হবে। ওই উপহারকে আমাদের অন্তর থেকে সরিয়ে এটাকে তার উপযুক্ত স্থান অর্থাৎ আমাদের হাতে ফিরিয়ে আনতে হবে।

আমরা এসব জিনিসকে ভালোবাসতেই পারি। ভালোবাসাটা এক মানবীয় গুণ। কিন্তু আমাদের সমস্যা হচ্ছে, আমরা ওই উপহারকে আমাদের অন্তরে জমা করি, আর আল্লাহকে আমরা আমাদের হাতে স্থান দেই।

ফলস্বরূপ, সহজেই আমরা আল্লাহকে (আমাদের বাস্তব জীবন থেকে) একপাশে সরিয়ে রাখি কিন্তু আমাদের অন্তর ওই উপহার তথা আল্লাহর দেওয়া নিয়ামত ছাড়া এক বিন্দু নিঃশ্বাসও নিতে পারে না। বস্তুত উপহারের স্বার্থে আমরা আল্লাহকে পাশে সরিয়ে রাখতেও দ্বিধাবোধ করি না। তাই বিলম্ব করে সলাত আদায় করা, কিংবা সলাত আদায় না করাটা আমাদের জন্য বেশ সহজ ব্যাপার, কিন্তু আমার কাজের মিটিং বা সভা, আমার সিনেমা, আমার ছুটি কাটানো, আমার কেনাকাটা, আমার ক্লাস, আমার পার্টি কিংবা আমার খেলা দেখাটা কোনোভাবেই মিস করা বা যাবে না।

মনে রাখবেন, আপনার অন্তরে যা বাস করে, সেটাই আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করে।এটা এমন এক জিনিস হতে হবে, যা হবে চিরন্তন, যার শ্রান্তি বা অবসাদ হবে না এবং যা ভেঙে যাবে না। আর এটা এমন জিনিস হবে, যা কখনো ছেড়ে চলে যায় না।

কেবল একটি জিনিসই এমন হতে পারে: [এবং তিনিই]
স্রষ্টা।

আজ হোক বা কাল হোক নিজেদেরকে এই প্রশ্ন করা আবশ্যক যে,আমরা আসলে কার ইবাদত করি ?

উপহার না উপহার দাতার ❔

— ইয়াসমিন মুজাহিদ (রিক্লেইম ইওর হার্ট)

ভালো লাগলে পেজে রিভিউ দিতে ভুলবেন না ।

সবকিছুরই একটি উদ্দেশ্য আছে। আমি , আপনি কিংবা আমার বা আপনার মাঝে যা কিছু আছে, তার কিছুই উদ্দেশ্যহীনভাবে সৃষ্ট হয়নি। না আপ...
18/12/2024

সবকিছুরই একটি উদ্দেশ্য আছে।

আমি , আপনি কিংবা আমার বা আপনার মাঝে যা কিছু আছে, তার কিছুই উদ্দেশ্যহীনভাবে সৃষ্ট হয়নি। না আপনার জীবনের কোনো ঘটনা, না কোনো দুঃখ, না কোনো আনন্দ, না কষ্ট, না সুখ ... না কোনো ক্ষতি সর্বোপরি কিছুই উদ্দেশ্যবিহীন নয়। ঠিক সেজন্যই আমাদের জীবনের অভিজ্ঞতাগুলোর মাঝে যে বার্তা আছে, তাও পর্যালোচনা করে দেখতে হবে।

আমরা সর্বদাই নিদর্শন চাই। আল্লাহর কাছে আমরা সর্বদা এই প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদের সাথে 'কথা বলেন'। কিন্তু ওই নিদর্শনগুলো আমাদের চারদিকেই আছে। তারা সব কিছুর মধ্যেই বিদ্যমান। আল্লাহ প্রতিনিয়ত 'কথা বলেই যাচ্ছেন'। আসল প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কি [আল্লাহর ওই কথাগুলো] শুনতে পাচ্ছি?

আল্লাহ বলেন:

"যারা জানে না, তারা বলে, 'আল্লাহ কেন আমাদের সাথে কথা বলেন না কিংবা আমাদের কাছে কেন কোনো নিদর্শন আসে না? আর এদের পূর্বের লোকেরাও এরূপ কথা বলেছিল। এদের অন্তরগুলি একই রকম। দৃঢ়বিশ্বাসীদের জন্য আমরা নির্দশনাবলী স্পষ্টভাবে বিবৃত করেছি।" — (কুরআন, ২:১১৮)

আমরা যদি দৃষ্টি সীমা ছাড়িয়ে নেপথ্যে যেতে পারি এবং আমাদের এই জীবনে আমাদের সাথে যাই ঘটুক না কেন, যা কিছুই আমরা করি -কিংবা করতে ব্যর্থ হই- তার সবকিছু ভেদ করে যদি আমরা আল্লাহকে দেখি (অর্থাৎ আল্লাহর ইচ্ছা ও পরিকল্পনাকে), তবেই আমরা আমাদের [জীবনের সত্যিকার] উদ্দেশ্যকে পেয়ে যাবো। আপনি পছন্দ করেন এমন কিছু যদি আপনার জীবনে ঘটে, সাবধান থাকুন, এই ঘটনার আসল উদ্দেশ্য যেন আপনার দৃষ্টির আড়াল চলে না যায়। মনে রাখবেন, কোনো কারণ ছাড়া কিছুই ঘটে না। তাই ওই কারণ খুঁজে বের করুন। আল্লাহ আপনাকে যা দিয়েছেন, সেটার উদ্দেশ্য অনুসন্ধান করুন। আপনাকে দান করা জিনিসের মধ্য দিয়ে তিনি নিজ সত্তা বা যাতের কোন দিকটি তুলে ধরতে চাচ্ছেন? তিনি আপনার কাছ থেকে কি চান ❔

একইভাবে, আপনি যেটা অপছন্দ করেন, আপনার সাথে তেমন কিছু যদি ঘটে কিংবা এমন কিছু যেটা আপনাকে কষ্ট দেয়, তবে ওই বেদনায় আপ্লুত হয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলবেন না। এই কষ্ট ভেদ করে দৃষ্টি নিক্ষেপ করুন। এসবের মাঝে যে বার্তা আছে, সেটা খুঁজে বের করুন। খুঁজে বের করুন এটার উদ্দেশ্য। এবং এটা যেন আপনাকে স্রষ্টার সত্তা ও পরিচয়ের দিকে আরেকটু ধাবিত করে।

যদি আপনার পা পিছলে যায়, এমনকি দ্বীনের কোনো বিষয়ে আপনি পতনেরও শিকার হন, তবুও আপনাকে প্রতারিত করার কোনো সুযোগ শয়তানকে দেবেন না। ওই পতন যেন আপনাকে স্রষ্টার রহমত আরও গভীরতার সাথে এবং পর্যালোচনার দৃষ্টিতে দেখতে সহায়তা করে। এরপর ওই রহমত কামনা করুন, যে রহমত আপনাকে আপনার পাপ ও নিজ সত্তার বিরুদ্ধে করা যুলুম থেকে আপনাকে রক্ষা করবে। বিষয়টি যদি সমাধানের অযোগ্য হয়ে থাকে, তবে হতাশ হবেন না। বরং যিনি তাঁর বান্দার জন্য যেকোনো জটিল ও আবদ্ধ বিষয়কে উন্মুক্ত করে থাকেন, সেই "আল-ফাত্তাহ'র (উন্মচনকারী) ঝলক প্রত্যক্ষ করুন। আর তা যদি ভয়াবহ ঝড় হয়ে থাকে, তবে নিজেকে তলিয়ে যেতে দেবেন না। যখন আপনার পাশে কেউই নেই, তখন ওই ঝড়ের কবল থেকে কিভাবে তিনি তাঁর বান্দাকে এককভাবে উদ্ধার করেন, এই বিপদ যেন আপনাকে সেটাই প্রত্যক্ষ করায়।

এবং স্মরণ রাখবেন, যখন সমস্ত সৃষ্টি ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে এবং যখন কোনো কিছুরই অস্তিত্ব থাকবে না, কেবল তিনি ছাড়া, তখন আল্লাহ জিজ্ঞাসা করবেন :

"রাজত্ব আজ কার হাতে ?" (কুরআন, ৪০:১৬)

"ওই দিন তারা বের হবে এবং তাদের কিছুই সেদিন আল্লাহর কাছ থেকে গোপন থাকবে না। আজকের এই দিনে সার্বভৌমত্ব কার হাতে? আল্লাহর, যিনি একক সত্তা ও প্রবল পরাক্রমশালী।" (কুরআন, ২:১১৮)

সার্বভৌমত্ব আজ কার হাতে? এই জীবনে ওই সত্যটার সামান্য একটি অংশ হলেও প্রত্যক্ষ করার চেষ্টা করুন। রাজত্ব আজ কার হাতে? আপনাকে রক্ষার ক্ষমতা কার আছে? কে পারে আপনাকে সুস্থ করতে? কে আপনার ভাঙা অন্তরকে জোড়া দিতে পারে? কে আপনাকে রিযিকের সন্ধান দিতে পারে? কার প্রতি আপনি ধাবিত হতে পারেন? কে তিনি? কর্তৃত্ব আজ কার হাতে? লি মানিল ফুলকু আল-ইয়াওম ?

লি ওয়াহিদিল কাহহার। (সার্বভৌমতু আজ তাঁরই হাতে, যিনি একক এবং অদম্য। আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর দিকে দৌড়ানো অনেকটা অপ্রতিরোধ্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার মতো। আল-ওয়াহিদ, একক সেই সত্তাকে বাদ দিয়ে অন্যকে অন্বেষণ করার পরিণতি ছিন্নভিন্ন হওয়া ছাড়া আর কিছু নয় এবং [ছিন্নভিন্ন ওই অন্তর কখনো পূর্ণতার দেখা পাবে না। আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুতে কিভাবে আমরা অন্তর বা আত্মা বা মনের ঐক্য ও পূর্ণতার সন্ধান পাবো?

যেখান থেকে আমরা এই পথের যাত্রা আরম্ভ করেছি, আল্লাহ ছাড়া সেখানে ফেরার জন্য আমরা আর কার কাছে ছুটে যাবো❔আমরা আর কি কামনা করতে পারি?

সর্বোপরি, আমরা সকলে এই একটি জিনিসই চাই। পূর্ণ হতে, সুখী হতে এবং চাই পুনর্বার এই কথা উচ্চারণ করতে :

"আমরা আপন নিবাসেই আছি।"


— ইয়াসমিন মুজাহিদ (রিক্লেইম ইওর হার্ট)

আপন নিবাস ! সেটা কোথায় জানেন ?

ভালো লাগলে পেজে রিভিউ দিতে ভুলবেন না ।

যারা চিন্তা করে......কিন্তু কিসের নিদর্শন বলতে পারেন ?আমরা জমিনে নেমে আসি। তাঁর থেকে আমরা বিচ্ছিন্ন হই। আর বিচ্ছেদের ওই ...
17/12/2024

যারা চিন্তা করে......
কিন্তু কিসের নিদর্শন বলতে পারেন ?

আমরা জমিনে নেমে আসি। তাঁর থেকে আমরা বিচ্ছিন্ন হই। আর বিচ্ছেদের ওই যন্ত্রণাতে আমরা রক্তাক্ত হই। এই প্রথমবারের মতো আমরা রক্তাক্ত হই। আমাদের সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ওই ঘটনা [আমাদের মাঝে] এক গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে। ওই গভীর ক্ষত সাথে নিয়েই আমরা জন্ম গ্রহণ করি। আর যখন আমরা বড় হতে থাকি, আমাদের ওই ক্ষতের যন্ত্রণা ততই তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। কিন্তু সময় যতই পার হতে থাকে, আমাদের ফিতরাত বা সহজাত প্রকৃতির মধ্যে নিহিত এর প্রতিষেধক থেকে আমরা কেবল দূরেই সরতে থাকি। আর সে এন্টিডোট বা প্রতিষেধক হচ্ছে: মন, অন্তর ও আত্মা দিয়ে তাঁর নিকট থেকে নিকটতর হওয়া।

আর যতই দিন পার হতে থাকে, আমরাও ওই শূন্যতা পূরণের জন্য ব্যাকুল থেকে ব্যাকুলতর হতে থাকি। কিন্তু শূন্যতা পূরণের এই অনুসন্ধানে আমরা হোঁচট খেয়ে বসি। আমাদের প্রত্যেকে বিভিন্ন জিনিসে হোঁচট খাই। আবার অনেকেই ওই শূণ্যতার অনুভূতিকে অসাড় করে দিতে চায়। আর তাই মানুষের মাঝে কেউ হোঁচট খায় মদ বা মাদকে, আবার কেউ হোঁচট খায় উত্তেজনা প্রশমনকারী ওষুধে। আবার কেউ হোঁচট খায় বস্তুগত ভোগ-বিলাসে বা প্রতিপত্তি ও অর্থের উপাসনায়। কেউবা আবার নিজ নিজ ক্যারিয়ারের আবর্তে নিজেকে হারিয়ে ফেলে। অথবা কেউ কেউ হোঁচট খায় অন্য মানুষে এবং সেখানেই নিজেদেরকে হারিয়ে ফেলে।

কিন্তু প্রতিটি হোঁচট, প্রতিটি চ্যালেঞ্জ, আমাদের জীবনের প্রতিটি অভিজ্ঞতার উদ্দেশ্যই যদি হয় আমাদেরকে আপন উৎসের নিকট ফিরিয়ে আনার জন্য? যদি প্রতিটি জয়, প্রতিটি পরাজয়, প্রতিটি সৌন্দর্য, প্রতিটি পতন, প্রতিটি নিষ্ঠুরতা ও প্রতিটি হাসির প্রকৃত উদ্দেশ্য হয় আমাদের ও মহান আল্লাহর মাঝে আরেকটি বাধা উন্মোচন করার জন্য? যদি এসবের উদ্দেশ্য হয় আমাদের ও আমাদের সেই উৎস, যেখানে ফেরার জন্য আমরা অবিরাম প্রচেষ্টা করে যাচ্ছি, তার পথে আরেকটি প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য?

এসব কিছুই যদি শুধুমাত্র তাঁকে দেখার জন্যেই হয়ে থাকে, তবে কেমন হবে ❔

আমাদের এটা জানা খুবই জরুরি যে, এই জীবনে আমরা যত অভিজ্ঞতাই লাভ করি না কেন, তাদের একটিও উদ্দেশ্যবিহীন নয়। আর ওই উদ্দেশ্য উপলব্ধি করবো কি করবো না, তার সিদ্ধান্ত আমরাই নিয়ে থাকি। উদাহরণ হিসেবে সৌন্দর্যের বিষয়টিই বিবেচনা করি। এমনও মানুষ আছে, যাদের চোখের সামনে সৌন্দর্য থাকলেও তারা সেটা উপলব্ধি করতে পারে না। তারা চমৎকার সূর্যোদয় কিংবা সৌন্দর্যে ভরপুর কমলা বাগানের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাবে, কিন্তু তারা এসব সৌন্দর্যের কিছুই খেয়াল করবে না। অন্যরা সৌন্দর্য দেখে এবং সেটার মূল্যায়ন করে। তারা সেখানে থামবে এবং সে সৌন্দর্য উপভোগ করবে। এমনকি তারা হয়তো ওই সৌন্দর্যে অভিভূতও হবে। কিন্তু সেটা সেখানেই শেষ।

এদের উপমা ওই লোকের মতো, যে শিল্পকে কদর করলেও শিল্পীর খোঁজ জানতে চায় না। বস্তুত শিল্পকর্ম এমন এক মাধ্যম, যার সাহায্যে শিল্পী কোনো বার্তা দিতে চায়, কিন্তু শিল্পের প্রেমিক যদি ওই শিল্পকর্মতেই হারিয়ে যান এবং ওই বার্তাকে কখনো চোখ মেলে না দেখেন, তবে ওই শিল্পকর্মটি তার প্রকৃত উদ্দেশ্যকে পূরণ করতে পারেনি।

আলোকজ্জ্বল সূর্য, প্রথম ঝরা তুষার, নবচন্দ্র এবং শ্বাসরুদ্ধকর সমুদ্র কেবল এই নিঃসঙ্গ গ্রহকে সজ্জিত করতে সৃজিত হয়নি। এগুলোর উদ্দেশ্য পৃথিবীকে সজ্জিতকরণের চেয়েও আরও গভীর ও তাৎপর্যমণ্ডিত। কুরআনে আল্লাহ আমাদেরকে এসবের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন:

"বস্তুত আসমান ও জমিনের সৃষ্টি,রাত ও দিনের আবর্তন তাদের জন্য নিদর্শন, যাদের উপলব্ধি শক্তি রয়েছে।"

"যারা দাঁড়িয়ে বা বসে বা শায়িত অবস্থায় আল্লাহর যিকির বা স্মরণ করে এবং আসমান ও জমিনের সৃষ্টি
নিয়ে চিন্তা গবেষণা করে, (তারা বলে), "হে আমাদের প্রতিপালক, কিছুই আপনি উদ্দেশ্যহীনভাবে সৃষ্টি করেননি। (অর্থহীনভাবে কোনো কিছু করা থেকে) আপনি পবিত্র,আর আমাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন।" — (কুরআন, ৩:১৯০-১৯১)


সকল সৌন্দর্যকেই সৃষ্টি করা হয়েছে এক নিদর্শন হিসেবে। কিন্তু সেই নিদর্শন কেবল তারাই উপলব্ধি করে যারা চিন্তা শক্তিকে কাজে লাগায় ❕

এবং প্রতিটি মানবীয় অবস্থায় ( দাড়িয়ে,বসে,শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে।

তাই সূর্যাস্তের [সৌন্দর্য] ভেদ করে আমাদের দৃষ্টিকে প্রসারিত করতে হবে। এমনকি সেখানেও আমরা নিজেদেরকে হারাতো পারবো না। চোখ ঝলকানো সৌন্দর্য ও বর্ণচ্ছটার ওপারে তাকাতে হবে। কেননা, এসবের পেছনে যে সৌন্দর্য লুকায়িত, সেটাই প্রকৃত সৌন্দর্য, সকল সৌন্দর্যের উৎস। আমরা যা কিছুই দেখি, সেটা এক প্রতিফলন মাত্র।

আমাদেরকে তারকাপুঞ্জ, বৃক্ষরাজি, তুষারাবৃত পর্বতসমূহ নিয়ে চিন্তা- গবেষণা করতে হবে, যাতে করে এগুলোর অন্তরালে যে বার্তা নিহিত আছে, সেগুলো আমরা পাঠ করতে পারি। এমনটি না করলে আমাদের অবস্থা হবে ওই ব্যক্তির মতোই, যে সুন্দরভাবে সজ্জিত একটি বোতলে একটি বার্তা পায়, কিন্তু সে ওই বোতলের সৌন্দর্যে এতোটাই মোহিত হয় যে, বোতল খুলে সে আর ওই বার্তাটি পড়ার প্রয়োজন বোধ করে না।

তারকাপুঞ্জের আতিশয্যের মাঝে কি এমন বার্তা লুকিয়ে আছে? সেখানে একটা নিদর্শন রয়েছে, কিন্তু সেটা কিসের নিদর্শন?

এসব নিদর্শন তাঁর দিকে এক একটি নিদের্শক, এগুলো তাঁর বড়ত্ব, তাঁর পরাক্রমশীলতা, তাঁর সৌন্দর্যের দিকে ইশারা করে। এগুলো তাঁর শক্তি এবং তাঁর ক্ষমতার দিকে নির্দেশ করে। সৃষ্টির সৌন্দর্য ও মহিমা নিয়ে ভাবুন, গবেষণা করুন, তাতে গভীরভাবে নিমগ্ন হোন, কিন্তু সেখানে যেন আটকে যাবেন না। সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলবেন না। এগুলো অতিক্রম করে সামনে দেখুন এবং একবার ভাবুন তো, সৃষ্টি যদি এতো রাজকীয় হয়, সৃষ্টি যদি হয় এতো সুন্দর, তবে স্রষ্টা কতটা রাজকীয় হবেন, কতটা সুন্দর ও মহান হবেন তিনি।

সবশেষে, উপলব্ধি করুন, আত্মস্থ করুন [কুরআনের এই বাক্য]:

رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَذَا بَاطِلًا سُبْحَانَكَ “হে আমাদের প্রতিপালক, কিছুই আপনি উদ্দেশ্যহীনভাবে সৃষ্টি করেননি। মহিমা আপনারই।” (কুরআন, ৩:১৯১)

সবকিছুরই একটি উদ্দেশ্য আছে।
আমি ,আপনি , আসমান বা জমিন, কিংবা আমার বা আপনার মাঝে যা কিছু আছে, তার কিছুই উদ্দেশ্যহীনভাবে সৃষ্ট হয়নি। না আপনার জীবনের কোনো ঘটনা, না কোনো দুঃখ, না কোনো আনন্দ, না কষ্ট, না সুখ ... না কোনো ক্ষতি সর্বোপরি কিছুই উদ্দেশ্যবিহীন নয়। তাই সূর্য, চন্দ্র ও আসমানরূপী বোতলে মাঝে 'যে বার্তা দেওয়া হয়েছে', আমাদেরকে সে বার্তাগুলি যেমন পাঠ করতে হবে, তেমনিভাবে আমাদের জীবনের অভিজ্ঞতাগুলোর মাঝে যে বার্তা আছে, তাও পর্যালোচনা করে দেখতে হবে।

— ইয়াসমিন মুজাহিদ (রিক্লেইম ইওর হার্ট)

ভেবে দেখুন, " কি বার্তা দেওয়া হচ্ছে ?"

ভালো লাগলে পেজে রিভিউ দিতে ভুলবেন না ।

Address

Sylhet
3100

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Lifeosophy Blaster posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share