16/03/2024
বউকে আমি বউ হতে দেই নি। দীর্ঘ ৭ বছরের প্রেমের পর বিয়ে।। এই তো মাস দুয়েক আগে বর্ষাকে ধুমধাম করে বিয়ে করলাম।। বর্ষা আমাকে আমার দু:সময়ে যে পরিমান সহযোগিতা করেছে মানসিক ভাবে, আর্থিক ভাবে তার প্রতিদান হিসেবে এই বিয়ে, বলা যায়।। একসময় অন্য মেয়ের দিকে মন ঘুরে গেছিলো, বর্ষা সব জেনেও সেদিন চুপ ছিলো।। বছর খানেক অই মেয়ের সাথে খাবি খেয়ে যখন বর্ষার কাছে ফিরে এলাম, আর ভাবলাম বর্ষা হয়তো কিছুই জানে না।। যদিও মনে মনে অনুতপ্ততা কাজ করছিলো।। বর্ষাকে একদিন সব খুলে বলতে চাইলাম, বর্ষা আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললো- আমি সব জানি রায়হান।। শুধু জানি না, বলতে পারো কাজটা আমিই করিয়েছি।। আসলে কি জানো রায়হান, পুরুষ মানুষ যাচাই করতে চাওয়াটাই ভুল।। তোমরা পুরুষরা খুব ভালোবাসতে পারো, কেয়ার করতে পারো- কিন্তু তা বিলিয়েও দিতে পারো জনাখানেকের মধ্যে।।......
আজ বর্ষার ভীষণ রকম মন খারাপ।। মন খারাপের দিনগুলি আমি বুঝতে পারি।। ঘুম ভেঙে উঠে ওর চোখের দিকে তাকিয়েই বুঝে গেছি, আজ সারাদিন ওর মন খারাপের সাথেই সখ্যতা হবে।। আমার সেই মানসিকতা কাজ করে না, ওর মন ভালো করার।। তবু দায়সারাভাবে দু' একবার চেস্টা করি।। শুকনো হাসিতে বর্ষা তা উড়িয়ে দেয়।।.....
তেমনি এক মন খারাপের দিনে বর্ষাকে নিয়ে বের হলাম।। উদ্দেশ্য আজ রাস্তার পাশের আবিজাবি যা পাবো দু'জন চেখে দেখবো।। আমাদের চেয়ে বর্ষাদের আর্থিক অবস্থা বেশ ভালো, সম্পর্কের শুরুতে আবিষ্কার করি- বর্ষার রাস্তার খাবারে এলার্জি আছে।। শুধু রাস্তার খাবার না কোন লোকাল পার্ক কিংবা সস্তা হোটেলে বসে থাকতেও সে অপারগ।। সেই মেয়ে বদলে গেছে, আমাকে ভালোবেসে কিংবা ছন্নছাড়া কারো সঙী হবার অপরাধে।।.....
বর্ষা দেখতে বেশ রূপবতী, ওকে আমার ভালোবাসার সাথী বানাতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিলো।। মাঝে মাঝে ভাবি- আমার যে চেহারা, বর্ষাকে বউ করে ফেলেছি মানে জিতে গেছি।। এই জয় আজীবনের।।
শাহাবাগ মোড়ে আজ লোকসমাগম তুলনামূলক বেশি।। প্রতি শুক্রবার এমনি হয়।। বর্ষাকে বললাম, চলো দই চিড়া খাবো।। বর্ষা মিস্টি একদমি পছন্দ করতো না, আমার পাল্লায় পড়ে খাওয়া শিখে গেছে- খাবার সময় ওর চেহারা দেখে বোঝার উপায় নেই, মিস্টি আসলে মিস্টি কিনা।। এক নির্লিপ্ততা নিয়ে আস্তে আস্তে তা গ্রহণ করে।।
দই চিড়া আমার অন্যতম প্রিয় খাবার।। দুটো বাটিতে দই চিড়া কলা মাখিয়ে আমাদের হাতে দিলো।। আমি গপাগপ খাচ্ছি, আহা মধু।। বর্ষা সামান্য দূরে তাকিয়ে এক বাচ্চাকে দেখছে।। পথ শিশুর প্রতি বর্ষার মায়া যেনো আজন্ম।। ওর একটা সংগঠন ছিলো, পথ শিশুদের নিয়ে।। শুরুতে এইগুলোই আমার বর্ষার প্রতি ভালোলাগা ছিলো, পরে এইসব কাজ আমার কাছে আদিক্ষেতা ছাড়া কিছুই মনে হয় নি।। আমার বাটি প্রায় খালি হবার জোগাড় আর বর্ষা এক চামচ চিড়াও মুখে তুলে নেয় নি।। বাচ্চাটার দিকে তাকিয়েই আছে, বাচ্চাটাও যেনো তার সব করুণ চাহনি, মায়ার মুখ দিয়ে বর্ষাকে দেখছে।। আমি জানি বর্ষা চাইছে, বাচ্চাটাকে দই চিড়া কিনে দিতে, কিংবা নিজেরটা দিয়ে দিতে।। আমি সাথে আছি তাই সাহস পাচ্ছে না।।.....
আমি ডাক দিলাম, অই শুনে যা।। বর্ষা ঝট করে আমার দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো।। নিজেই এগিয়ে গিয়ে, বাচ্চাটাকে এনে বললো, দই চিড়া খাবা?
বাচ্চাটা মাথা নাড়ায়, ভ্যান গাড়ির উপর কাঁচে ঘেরা দই এর ছোট্ট খুটির দিকে আঙুল নির্দেশ করে।।
আমি কইলাম, খালি দই খাবি?
বাচ্চাটা- হুউউ করলো।। এক অস্ফুট কন্ঠ।।
দইয়ের খুটি কিনে ওর হাতে দিলাম।। বর্ষার দই চিড়া আমি হাতে নিয়ে খাওয়া শুরু করলাম।। আমার বর্ষাটা হেসে হেসে বাচ্চাটাকে এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে।। বাচ্চাটা দোকানির দিকে তাকিয়ে চুপ মেরে আছে।। দোকানি বাচ্চাটাকে ধমক দিয়ে বললো, দই পাইছোস যা দূরে যা।। বাচ্চাটা এই কথা শুনেই দৌড়ে ভীড়ে মিশে গেলো।। আমি জানি আমার বর্ষার মনে আবার মেঘ উঁকি দিচ্ছে।।
আমি দোকানদারকে বিল পরিশোধ করতে করতে বললাম- বাচ্চাদের সাথে এমনন ব্যবহার করেন কেন?
লোকটা তিরস্কারের হাসি হেসে কইলো- ভাই এইগুলান ফাউল পুলাপান, এইসবরে আস্কারা দিলেই মাথায় উঠে।।.....
টিএসসিতে বসে আছি।। রাত সাড়ে আটটা বাজে।। বর্ষাকে বললাম চলো বাসায় যাই।। বর্ষা আর আমার পেট টইটম্বুর।। ভেলপুরি, পানিপুরি, হাকিম চত্বরের চিকেন ফ্রাই, চা, আইসক্রিম, দই চিড়া অনেক কিছু দিয়ে পেট ঠাসা।। হেঁটে হেঁটে দু'জন শাহাবাগের কাছে এলাম।। দই চিড়ার দোকান থেকে সামান্য দূরে, বাচ্চাটা ঠিক একই ভাবে দাঁড়িয়ে আছে।। দুইটা ছেলের দিকে আবার সেই অসহায় ভংগিমায় তাকিয়ে তাদের দই চিড়া খাওয়া দেখছে।।
ছেলে দুইটা, বাচ্চাটাকে ডাক দিলো।। অনেকটা আমাদের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো।। বর্ষার অবাক চোখ আমার দৃস্টি এড়ালো না, আমিও সাত পাঁচ ভেবে পাচ্ছিলাম না।।
ছেলেটা আবার দইয়ের খুটি নিয়ে হারিয়ে গেলো ভীড়ে।। আমরা বাসায় চলে যাবো।। ঠিক এমন সময় বাচ্চাটা আবার দোকানের কাছে এলো, ছেলেগুলোও চলে গেছে দোকান থেকে।।
বাচ্চাটা দোকানিকে বললো- আব্বা, নেও রাইখা দেও বলে দইয়ের খুঁটি এগিয়ে দিলো।। তোমার কিন্তুক ম্যালা লাভ করাইতাছি, এইবার আমাকে স্কুলে ভর্তি করান লাগবো কইলাম।।
দোকানি আশেপাশে তাকাইয়া, আচ্ছা বাপজান ভর্তি করামু- তুমি এইডা খাইলাও।। এইডা আর ফেরত নিমু না।।
#একটিদইএরগল্প