09/09/2023
আপনি যখন অনেককিছু পাওয়া শুরু করবেন, তখন ঐদিকেও খেয়াল রাখবেন কী কী হারাচ্ছেন।
ইদানীং সিলেটের অনেকেই ইউকে, ইউএসএ, কানাডাতে যাচ্ছে। বিগত সময়ের তুলনায় গতো ২-৩ বছরের বিদেশ যাবার হার অনেক বেশি।
'উন্নত' দেশগুলোতে গিয়ে মাসে ২৪০ ঘণ্টা ডিউটি করে ৩-৪ লক্ষ টাকা উপার্জন করছেন অনেকেই। এগুলো সবাই জানে। জানে বলেই বিদেশ যাবার হার এতো বেশি।
হঠাৎ করে মানুষ যখন অনেককিছু পাওয়া শুরু করে, তখন সে কী হারাচ্ছে সেটা ইগনোর করা শুরু করে।
যে ছেলে দেশে থাকাবস্থায় ছিলো ভবঘুরে, সেই ছেলে বিদেশ যাবার ২ মাসের মধ্যেই ২/৩ লক্ষ টাকা উপার্জন করছে, বাড়িতে মাস শেষে ৭০/৮০ হাজার টাকা পাঠাচ্ছে। এটা দেখে তো সবাই মহাখুশি।
কিন্তু, সেই ছেলেটা হারাচ্ছে কী?
আমার প্রায় ৯০% বন্ধু এখন ইউরোপ-আমেরিকায়। প্রায়ই কথা বলি।
তাদের কাছ থেকে প্রাপ্তির গল্পের পাশাপাশি তাদের হারানোর গল্পগুলোও শুনি আগ্রহ নিয়ে। তাদের ভাষায় সেগুলোর সামারি করলে এমন হয়:
১. আরিফ, গতো ৩ মাস ধরে এখনও জুমুআর নামাজ পড়িনি!
২. প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর কোনোদিন রোজা ভাঙ্গিনি। বিদেশে আসার পর এবার মাত্র ১০ টা রোজা রাখতে পেরেছি!
৩. শেষ কবে আযান শুনছি আমার মনে নেই!
৪. না, এবার ঈদের দিন ছুটি পাইনি। ঈদের নামাজ পড়েই ডিউটিতে চলে গেছি।
৫. ভাই, সবাই তো খালি দেখে ডলার/পাউন্ড উপার্জন করছি, কিন্তু কষ্টটা তো কাউকে বুঝাতে পারি না। ২৮/৩০ বছর হয়ে গেছে, বিয়ে করতে পারিনি। বিদেশের মেয়েরা যেসব পোশাক পরে কথা বলে, পোশাক পরা না পরা একই! না পারি তাকাতে, না পারি চোখ নামাতে! এমন এক জাহান্নামে আছি!
৬. মা মারা গেলো, শেষ দেখা দেখতে পারিনি। বাবা মারা গেলো, দেশে আসতে পারিনি। মা-বাবা কাউকে দেখতে পারি না, আদর পাই না, সেবাযত্ন করতে পারি না। টাকার মেশিনের মতো শুধু টাকা পাঠাচ্ছি!
উইথ ডিউ রিস্পেক্ট, যারা দেশে থাকে, যাদের ভাই/জামাই/বাবা বিদেশে থাকে, তারা সবচেয়ে সুখে থাকে। পরিবারগুলো দেখলে বুঝবেন, লন্ডনীর ভাই/আমেরিকানীর ভাই সবচেয়ে বড়ো লন্ডনী! দেশে থেকে সে ইচ্ছেমতো ভোগ-বিলাসিতা করতে পারে৷ কিন্তু, কষ্ট করে বিদেশে যে আছে সে।
সমাজ, পরিবার নিজেদের লিভিং স্ট্যান্ডার্ড এমন এক জায়গায় নিয়ে গেছে যে, তাদের এতো এতো টাকা দরকার, যা লন্ডনে যাওয়া, আমেরিকায় যাওয়া ছাড়া ম্যানেজ করা সম্ভব হচ্ছে না। পরিবারের বাকি সদস্য যারা দেশে থাকে, তাদের চাহিদা সীমাহীন। এই চাহিদার বলি হতে হচ্ছে তাদেরকে, যারা মন থেকে ঘৃণা করে মা-বাবাকে ছেড়ে বিদেশে যেতে।
মানুষ যখন 'টাকার গোলাম' হয়, তখন দুনিয়াটা তার জন্য জাহান্নাম হয়ে যায়। দুনিয়ায় বসবাসের জন্য টাকার দরকার, কিন্তু টাকাকেই কেন্দ্র করেই যদি আপনার দুনিয়াটা সাজিয়ে ফেলেন, আপনি তখন এই চক্র থেকে বের হতে পারবেন না।
টাকার পেছনে ছুটলে দুনিয়ার জীবনেই লাঞ্চিত হতে হবে। স্পিরিচুয়ালিটি নষ্ট হয়ে গেলে আপনি যতোই উপার্জন করুন না কেনো, দিনশেষে উপার্জিত অর্থ দিয়েই ঘুমের ওষুধ খেতে হবে, এন্টি-ডিপ্রেশন ট্যাবলেট খেতে হবে!
যেই লোক দীর্ঘদিন ধরে আযান শুনে না, জামআতে নামাজ পড়তে পারে না, মুসলিম সমাজে বসবাস করে না, তার স্পিরিচুয়াল কন্ডিশন ভালো হবার কথা না। আজ হোক বা কাল হোক, তার স্পিরিচুয়াল কন্ডিশনকে ভালো রাখতে হলে আইসিউতে পাঠাতে হবে।
হজ্জ ফরজ এমন অগণিত প্রবাসী হজ্জ করতে পারে না৷ দেশে থেকেও মক্কা-মদীনাপ্রেমী অনেকেই উমরাহ করেন। দুই, আড়াইলাখ টাকা হলেই যথেষ্ট।
কিন্তু, বিদেশে থেকে মাসে এমন টাকা উপার্জন করেও অনেকেই পারে না।
কেনো পারে না?
নিজেকে ব্যস্ততার বক্সে তারা এমনিভাবে বন্দী করে নেয়, আল্লাহর জন্য সময় বের করতে পারে না!
নিজের স্পিরিচুয়ালিটি এতোটাই ডাউন করে ফেলে, আল্লাহর ঘরে যাবার ইচ্ছে করার সময় অনেক হিশাব-নিকাশ করা শুরু করে!
আল্লাহ এমন জিল্লতির জিন্দেগী থেকে আমাদেরকে হেফাজত করুন।
©আরিফুল ইসলাম