02/07/2024
সহশিক্ষা কেয়ামত পর্যন্ত হারাম। এরকম কত হাজার হাজার বোনের ঘটনা কোথাও লিপিবদ্ধ হয়নি তা আল্লাহ ভালো জানেন...
“অনুগ্রহ করে আমার নাম-পরিচয় হাইড রাখবেন। আসলে মানসিকভাবে পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে এটা লিখছি। আ'ত্ম'হ'ত্যা জায়েয হলে হয়তো এই পোস্ট লিখা হতো না আমার।
কীভাবে শুরু করবো বুঝতে পারছি না৷ আমি খুব রক্ষণশীল একটা পরিবারের একটা মেয়ে হিসেবে বেড়ে উঠেছি। ছোট থেকেই দ্বীনি তালিমের মাধ্যমে বড় হয়েছি। আমার পিতা-মাতা দুজনই ধর্মীয় দিক থেকে খুব প্র্যাক্টিসিং, আমিও সেই তরবিয়ত পেয়েই বড় হয়েছি। ধর্মীয় দিকে তালীম দেওয়ার পাশাপাশি দুনিয়াবী উপকারী শিক্ষাতেও আমাকে যোগ্য করে তুলেছিলেন। সেই লক্ষ্যে এইচএসসির পর ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে দেন। যদিও ইউনিভার্সিটির পর্দাহীনতার পরিবেশের কিছু ভয় প্রকাশ করেছিলাম আমার পিতা-মাতার নিকট, কিন্তু পরবর্তীতে সহপাঠী মেয়েদের মধ্যে দাওয়াতী কাজ চালানোর প্রয়াসে এডমিট হয়ে যাই। আব্বু-আম্মুও খুশি ছিলেন কারণ দেশের প্রথম সারির একটা ইউনিভার্সিটিতেই ভর্তি হয়েছিলাম।
প্রথম দিকে ভালোই যেতো, টুকটাক দ্বীনি দাওয়াতের কাজও করতাম সহপাঠী মেয়েদের উপর। কঠোরভাবে বাহ্যিক পোশাক ও কন্ঠের পর্দা করতাম, গাইরে মাহরম এভয়েড করে চলতাম। তবে সময়ের সাথে সাথে নিজের অন্তরের অবস্থায় পরিবর্তন আসে। কিছু কোর্সে গ্রুপ করে প্রেজেন্টেশন দিতে হয়। গ্রুপে ছেলেরাও পড়ে যেতো। এভাবে জড়তা কমে আসে অনেকটা নিজের অজান্তেই। তখনও পূর্ণ পর্দা করতাম বাহ্যিক পোশাকের, তবে কন্ঠের ও গাইরে মাহরম মেইন্টেইনে কঠোরতা কমে আসে আমার। এক সেমিস্টারে একটা প্রজেক্ট গ্রুপে মোটামুটি ভালো দ্বীনদার একটা ছেলে ছিল। প্রজেক্টের প্রয়োজনে অনলাইনে টুকটাক কথা হয়েছিল, সেই থেকে প্রজেক্টের প্রয়োজনের তাগিদেই কিছুটা কথা বাড়তে থাকে। অফলাইনেও দেখা যায় প্রজেক্ট নিয়ে কথা হতো। এছাড়া সে মুসলিম বিশ্বের দুরবস্থা নিয়ে আফসোস প্রকাশ করতো। এগুলো ভালো লাগতো আমার। এভাবে একসময় দুজনের মধ্যেই একটা দুর্বলতা, টান চলে আসে। দুজনই সেটা বুঝতে পারি। এর মধ্যে সে সাহস করে বলে যে আমাকে তার কাছে যোগ্য মনে হয় বিয়ের জন্য। এই কথা আমাকে আরো দুর্বল করে।
অনেক লম্বা হয়ে যাচ্ছে কথা, এরপর থেকে আসলে শয়তান আমাদের দুজনকেই কাবু করে ফেলে। বুঝেও দুজন না বুঝার মতো করে চলছিলাম। দেখা-সাক্ষাৎ হচ্ছিলো৷ যাইহোক, ইউনিভার্সিটি থেকে ভিজিট বা ট্যুর থাকে একটা নির্দিষ্ট সেমিস্টারের শেষে, স্পেসিফিক কোর্সে । আমাদেরকে শয়তান এতোটাই বিভ্রান্ত করে ফেলে যে তেমন একটা ম্যান্ডেটরি দুই ক্রেডিট এর একাডেমিক ট্যুরের শেষ দিন দুজনেই অনেক ডেসপারেট হয়ে পড়ি এবং সুযোগও তৈরি হয়ে যায়। জঘন্যতম কবীরাহ গোনাহ চূড়ান্ত যি'না হয়ে যায় দুজনের।
আল্লাহর কসম! এটা ঘটার পর থেকে আমি বাস্তবতায় ফিরে আসি। কী হয়ে গেলো হিসাব মিলাতে পারছিলাম না। সু'ই'সাইডাল চিন্তা আসতে থাকে। পুরোপুরি ভেঙে পড়েছি এক প্রকার। কাউকে বলতেও পারছি না, এই যন্ত্রণা সইতেও পারছি না। অপরাধবোধ আমাকে শেষ করে দিচ্ছে। বারবার মনে হচ্ছে যদি আমার উপর হদ প্রয়োগ হতো আর এতে আমি মারা যেতাম, তাহলে হয়তো স্বস্তি পেতাম। কিন্তু সেটারও সুযোগ নেই। সুইসাইড করলেও জাহান্নাম নিশ্চিত। সেই ভিজিট শেষে আমাদের ব্রেক চলছে, আমি বাসায়৷ আমার আব্বু-আম্মুও পেরেশান আমাকে নিয়ে, কিন্তু তাদের সাথে শেয়ার করারও কোনো সুযোগ নেই। এই অপরাধ আল্লাহ এবং আমরা দুজন ছাড়া আর কেউ জানে না। কিন্তু আমি ভিতরে ভিতরে শেষ হয়ে যাচ্ছি। হতাশা, নিজের প্রতি ঘৃণা আমাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
আমাকে আপনাদের বোন মনে করে পরামর্শ দিন, সু'ই'সাইড ছাড়া কীভাবে নিজেকে কঠিন শাস্তি দিতে পারি, কীভাবে আমার সেই পূর্বের 'আমি' কে ফিরে পেতে পারি? কীভাবে অন্তরকে প্রশান্ত করতে পারি? এই অশান্ত অবস্থা আর বরদাশত করতে পারছি না। পাগলের মতো হয়ে যাচ্ছি দিন দিন। আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে সুপরামর্শ দিন।
(অনেকে সেই ছেলেকে বিয়ের পরামর্শ দিচ্ছেন। উত্তম পরামর্শ । কিন্তু সমস্যা হলো সে বিয়েতে আর আগ্রহী না। সে বলেছে তাওবা করে নিজেকে শুধরে নিতে। আর যার যার মতো থাকতে। এতোকিছুর পর বিয়ের মাধ্যমে নতুন কারো সাথে নিজেকে জড়ানোর স্বপ্নও আর দেখি না, কেননা এতে নতুন মানুষটার সাথে প্রতারণা করা হবে। আমি নিজেকে চূড়ান্ত রকম শাস্তি দিয়ে এই গোনাহটার কাফফারা করতে চাই, তবে সেটা সু'ই'সাইডের মাধ্যমে না, আল্লাহর সীমারেখার ভিতরে থেকেই। সুতরাং সেই অনুপাতে নাসীহাহ দেওয়ার অনুরোধ)”
– (সংগৃহীত)
কার্টেসি - Nazmul Graphy ツ