04/09/2024
একজন ব্যখা দিলেন এই বিতর্ক নিয়ে....
ধ্বজভঙ্গ জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে আমার প্রতিবাদ অনেক পুরোনো। এই লেখা 2019 সালের। আরো বেশ কিছু লেখা আছে এই বিষয়ে।
"গুরুত্বপুর্ন এবং ঐতিহাসিক ভাবে সফল এমন কিছু দেশের জাতীয় সঙ্গীত এর লিরিকস পড়লাম ।
পৃথিবীর সব চাইতে স্বাধীনচেতা, ঐতিহাসিক ভাবে যারা পরাশক্তি ছিল, তাদের জাতীয় সঙ্গীত গুলো হচ্ছে এক্কেবারে রণসঙ্গীত বলতে বাংলায় যা বোঝানো হয় সেই জিনিস।
পৃথিবীর ইতিহাসের প্রথম পরাশক্তি হচ্ছে পারসিয়ান সাম্রাজ্য, যার আজকের মূল ধারক বাহক হচ্ছে ইরান। ইরানের জাতীয় সঙ্গীত বাংলায় তরজমা করলে এমন শোনাবেঃ
"দূর আকাশে উঠছে পূর্বের সূর্য
বিশ্বাসীর চোখে আলো হয়ে জ্বলছে সুবিচার।
ও ইমাম, তোমার স্বাধীনতা আর মুক্তির বানী আমাদের অন্তরে গাথা
ও শহীদ, তোমাদের হাতের ঝনঝনি আমাদের সময়ের কানে বাজছে
সহিন্সু, বহমান, ও চিরকালীন [হয়ে টিকে আছে]
ইসলামিক প্রজাতন্ত্রী ইরান।"
অটোম্যান সাম্রাজ্যের এখনকার রূপ হচ্ছে আধুনিক রাষ্ট্র তুরস্ক। তাদের জাতীয় সঙ্গীত বাংলায় তরজমা করলে শুনাবে এমনঃ
" ভয় পেয় না। কেননা আমাদের ক্রিমসন রঙের পতাকা উড়বে আজকের ভোরে। মলীন হবে না কখনো।
যতদিন আমাদের জাতির শেষ অগ্নী কুণ্ডে আগুন জ্বলবে
ততদিন (চিরকাল) আমাদের তারাটা জ্বলজ্বল করবে।
এই তারা শুধু আমার, এবং এই তারার মালিক শুধু আমার দেশ।..
আমরা স্বাধীন ছিলাম সময়ের শুরু থেকে, স্বাধীন থাকবো চিরকাল।
কোন পাগল আমাদের পায়ে শিকল পড়াতে আসবে?
আমরাতো শেকল বলতে কি বুঝায় সেটাই জানি না?
আমরা ধাবমান বন্যার মতো, আমরা শক্তিশালী ও স্বাধীন।
আমরা পাহাড় ভেঙ্গে চুরমার করি, আমরা আকাশ ভেদ করে ফেটে পড়ি।
..আমাদের পশ্চিমের সীমানা (ইউরোপের) হতে পারে লোহার বর্মে ঢাকা,
কিন্তু আমাদের দেশের সীমানা পাহাড়া দিচ্ছে বিশ্বাসীর পরাক্রম শালী বুক..."
খেয়াল করেন কিভাবে একজন তুর্কী নাগরিক তার দেশের স্বাধীনতা, ইতিহাস, মুক্তির কথা গরগর করে বলে চলছে রক্ত গরম করে।
আগামীর পরাশক্তি গণ চীনের জাতীয় সঙ্গীতটা তরজমা করলাম এভাবেঃ
"উঠে দাড়াও তোমরা।
দাড়াও তোমরা যারা আর দাস থাকতে চাও না।
নিজের শরীরের মাংস দিয়ে একটা নতুন চীনের প্রাচীর বানাও।
আমাদের মানুষেরা এখন পৌছে গেছে খুব বিপদের এক সময়ে
তাই আমাদের প্রত্যেককে বাধ্য হয়ে দিতে হবে শেষ হুঙ্কার ।
উঠে দাড়াও, উঠে দাড়াও, উঠে দাড়াও।
আমরা শত কোটি, কিন্তু আমাদের হৃদয় শুধু এক্টাই।
শত্রুর গুলি উপেক্ষা করে, ঝাপিয়ে পড়।
ঝাপিয়ে পড়, ঝাপিয়ে পড়, ঝাপিয়ে পড়।"
এর পরে আসেন আমেরিকার জাতীয় সঙ্গীতে। এই জাতীয় সঙ্গীত হচ্ছে একে বারে অন্য লেভেলের মার-দাঙ্গা। পুরাই মিলিটারিলিস্টীক। কিছু লাইনের তর্জমা করছিঃ
" তুমি কি দেখতে পাও, ভোরের ক্ষীণ আলোতে
দেখতে কি পাও আমাদের পতাকার সাদা-নীল দাগ আর উজ্জ্বল তারা? যা জলছে সাঙ্ঘাতিক যুদ্ধের ডামাডলে?
.. আকাশে উড়া রকেটের লাল আভা, আর বাতাসে উড়া বোমের মাঝে আমরা প্রমান পেয়েছি যে আমাদের পতাকাটা এখনো টিকে আছে..
সেই তারা খচিত পতাকাটা দেখো এখনো উড়ছে
এই মুক্ত এবং সাহসী মানুষের দেশে।"
..আমাদের মাটিতে যারা [শত্রুরা] তাদের ময়লা পায়ের পদধুলি দিয়েছিল
আমরা তাদের রক্ত দিয়ে তাদের সেই ময়লা ধুয়ে দিয়েছি।
[আমাদের যারা আক্রমন করবে] তাদের কোন ভাড়াটিয়া সৈনিক কিংবা দাস পালানোর জায়গা খুঁজে পাবে না।
পারবে না তারা পালাতে, পালানোর ভয় কিংবা মৃত্যুর দুঃখ থেকে।
যদি আমাদের কোন কিছু দখল করতে হয় আমরা করবো, যদি কিনা দখলের কারনটা সঠিক থাকে।
আর আমাদের নীতিই হচ্ছে, ঈশ্বরের উপরে বিশ্বাস রাখা। ..
এবং আমাদের তারকা খচিত পতাকাটা উড়বে বিজয়ীর বেশে
উড়বে এই মুক্ত এবং সাহসী মানুষের দেশে।"
জার্মানী হচ্ছে এক সময়ের পরাক্রমশালী দেশ, তাদের জাতীয় সংগীতেও স্বাধীনতা, মুক্তি, সমৃদ্ধির কথা।
ইংল্যান্ড ও জাপান হচ্ছে দুইটা পরাক্রম শালী, সমুদ্র পথে যুদ্ধের ওস্তাদ, দুইটি রাজতন্ত্রী দ্বীপ রাষ্ট্র, যারা এক সময়ে প্রচন্ড সাম্রাজ্যবাদী ছিল। তাদের উভয়ের জাতীয় সঙ্গীত হচ্ছে তাদের রাজা-রানীকে নিয়ে। তাদের রাজা রানীর রাজত্ব যেন চির কাল টিকে সেটা নিয়ে তাদের গান।
জাপানের জাতীয় সঙ্গীত হচ্ছে পৃথিবীর সব চাইতে পুরানা জাতীয় সঙ্গীত। আর ইংল্যান্ডের জাতীয় সঙ্গীত বেশ কয়েকবার পরিবরতন করে সেটার যুদ্ধাংদেহী কথাবারতা বাদ দেয়া হয়েছে।
আলোচিত শক্তিশালী রাষ্ট্র গুলোর মার-দাঙ্গা জাতীয় সঙ্গিতের মাঝে তাদের চিন্তাশক্তি, স্বাধীনচেতা মনোভাব পাওয়া যায়। নিজ দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্থ রক্ষায় যেকোন প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে ফেলার একটা মনোভাব প্রতিফলিত হয়।
যদিও "রাষ্ট্র গঠনে জাতীয় সঙ্গিতের ভুমিকা" সংক্রান্ত কোন রচনা বই খুঁজে পাই নাই এখনও। ফেইসবুকে কেউ খুঁজে পেলে জানাবেন।
যুদ্ধ-ফুদ্ধ বাদ দেন। মামুলি একটা খেলার শুরুতে এই দেশ গুলোর খেলোয়াররা তাদের মার-দাঙ্গা জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে খেলা শুরু করে। আর অন্য অনেক দেশের খেলোয়ার খেলা শুরু করে ফুল, পাতা, নদি নালা, মিষ্টি খই, আর সুমিষ্ট আখের গুড়ের নাড়ুর গুনাগুণ বর্ননা করে। পুরো খেলায় না হোক, অন্তত খেলার প্রথম ওভার কিংবা প্রথম হালফ পর্যন্ত হলেও গানের লিরিক্সের এমন তারতম্যের একটা কুপ্রভাব দ্বিতীয় বর্নীত দেশ গুলোর খেলায় পরার সম্ভাবনা প্রবল।"