11/01/2025
ছিলেন মেডিকেল ছুটিতে,অব্যহতি দেওয়া হয়েছে নাস্তা না খেয়ে হইচই’ করার অভিযোগে
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাব–ইন্সপেক্টর (এসআই)। ‘নাস্তা না খেয়ে হইচই’ করার অভিযোগে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে তাকে। জানা গেছে, সেদিন ঘটনাস্থলেই উপস্থিত ছিলেন না আয়েশা।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বিভিন্ন অভিযোগে চার ধাপে ৩২১ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সাব–ইন্সপেক্টরকে (এসআই) অব্যাহতি দেয়। তাদেরই একজন আয়েশা সিদ্দিকা।
শেরপুর সদরের রফিকুল ইসলামের মেয়ে আয়েশা। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে তার অবস্থান দ্বিতীয়। এসআই পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে ২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর থেকে রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমিতে প্রায় ১ বছর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। প্রথম ধাপে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে দ্বিতীয় ধাপে ২০২৪ সালের ৪ নভেম্বর তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
আয়েশা এসআই পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পর প্রশিক্ষণের ডাক পান। সেই অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সেদিন ফলাফল দেখতে পেয়ে প্রথমে আমি আমার মাকে ফোন দেই। কিন্তু কিছুই বলতে পারছিলাম না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে মাকে বলি, তোমার মেয়ে আর বেকার নয়। এবার হয়তো তোমার সংগ্রামী জীবনের সহযোদ্ধা হতে পারব। তোমার মেয়ে বাংলাদেশ পুলিশের ক্যাডেট সাব ইন্সপেক্টর পদে চূড়ান্তভাবে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছে। আমি উপলব্ধি করতে পারছিলাম আমার মায়ের চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে।’
প্রশিক্ষণকালের কঠিন সংগ্রামের কথা জানিয়ে আয়েশা বলেন, 'কনকনে শীতের ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভোর ৪টায় ঘুম থেকে উঠতাম। রাত ৯টা পর্যন্ত চলত প্রশিক্ষণের বিভিন্ন কার্যক্রম। আবার গ্রীষ্মকালের ৪৪ ডিগ্রি তাপমাত্রায় রানিং ট্র্যাকে পরপর ১.৬২৫ কিলোমিটার দৌড় শেষ করে ছেলেদের সাথে সমান তালে প্যারেড কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হয়েছে। সারদার উত্তপ্ত রোদে বেশ কয়েকবার জ্ঞান হারিয়েছি। হাজার হলেও আমরা তো মেয়ে, আমাদের শরীরে তো আর ছেলেদের মত শক্তি-সামর্থ্য থাকে না। তারপরও হাজারটা কষ্ট করে মাঠে টিকে থাকতে হয়েছে শুধু মা বাবার মুখের দিকে চেয়ে থাকে। লং জাম্প, হাই জাম্প পুশ আপ, সীট আপ, র্যাম্বলিং কত কঠিন থেকে কঠিনতম ধাপ পার হলাম।’
প্রশিক্ষণের শেষ দিকে এসে অব্যাহতি পান আয়েশা। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এক বছর প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর হঠাৎ করে আমাকে শোকজ করা হয়। অভিযোগ, আমি নাস্তা না খেয়ে হইচই করেছি, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছি। অথচ আমি তো ওই দিন একাডেমিতে উপস্থিতই ছিলাম না। অসুস্থতার জন্য মেডিকেল ছুটিতে ছিলাম। আমার কাছে তার সমস্ত প্রমাণ আছে। তারপরও আমাকে মিথ্যা অভিযোগে অব্যাহতি দেওয়া হয়।’
আয়েশা সিদ্দিকা আরও বলেন, ‘আমি আমার মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে সান্ত্বনা দেওয়ার কোনো ভাষা খুঁজে পাই না। আমি নিজেই এখন হতাশার সাগরে ডুবে আছি। আমার কাছে মনে হয় আমাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি না দিয়ে গুলি করে মেরে ফেললেও তা আমার জন্য আনন্দের হত। আমার কারণে আমার বাবা-মা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমি তাদের চোখের দিকে তাকাতে পারি না। তাদের চোখের জলের মূল্য আমি কীভাবে দিব?’
তিনি আরও বলেন, ‘ভেবেছিলাম চাকরি পেয়ে পরিবারের হাল ধরব। ছোট বোনদের পড়ালেখার দায়িত্ব নিব। কিন্তু তা আর হল কই। দীর্ঘদিন প্রশিক্ষণে এক পয়সাও বেতন পাইনি, উলটো বাবা-মা ধার করে টাকা পাঠাত, সেই টাকায় প্রশিক্ষণ শেষ করেছি। অথচ চাকরি তো হলোই না বরং বাবা-মায়ের ওপর ঋণের বোঝা আরো বাড়িয়ে দিলাম। স্বপ্ন পূরণের দ্বারপ্রান্তে এসে, সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল।’
তিনি বলেন, ‘আমি তো ওই দিন অসুস্থতাজনিত কারণে ছুটিতে ছিলাম, তাহলে নাস্তা না খেয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলাম কীভাবে? আর না তো আমার বা আমার পরিবারের কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে। নিজের কঠোর পরিশ্রমে উত্তীর্ণ হয়েছিলাম বাংলাদেশ পুলিশের ৪০তম ক্যাডেট এসআই-২০২৩ এর চূড়ান্ত পরীক্ষায়। তাহলে আমাকে কেন এক বছর প্রশিক্ষণের পরে বাদ দেওয়া হল? এই প্রশ্নের উত্তর মেলাতে পারি না।’
#সোনাগাজী #সবাই #সারদাপুলিশএকাডেমি #পুলিশ
আবু রায়হান ফেনী সোনাগাজী Alhaz Shafiqur Rahman Shafique Younus Muhammed Rasel Helal Sonagazi Zahir Uddin Mahmood Lipton ওমৱ ফারুক Mijanur Rahoman Selim মোহাম্মদ ফারুক Abul Hossain Ripon Abdur Rahim M A H Sumon Billal Hossain