Pushpo Tv

Pushpo Tv এই পেজটা খোলা হচ্ছে ইসলাম প্রচার এর জন্য এবং কুরআন সুন্নাহকে সর্বস্তরে পৌঁছানোর জন্, সাথেই থাকুন।

16/03/2023

যুগে যুগে তারাবীহ ও বিশ রাকাআতের প্রামাণিকতা
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬

১. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে তারাবীহ
_____________________________________

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (রমযানের) এক রাতে মসজিদে তারাবীহ পড়লেন। সাহাবায়ে কেরামও তাঁর সাথে নামাযে শরীক হলেন। এ বিষয়ে লোকদের মাঝে আলোচনা হল। ফলে (দ্বিতীয় রাতে) মুকতাদীর সংখ্যা বেড়ে গেল। আরো আলোচনার ফলে তৃতীয় রাতে মসজিদ ভর্তি মুকতাদী হল। চতুর্থ রাতে মসজিদের ধারণ-ক্ষমতার চেয়ে বেশি লোক হল। (তবে এ রাতে তারাবীহর জন্য তিনি মসজিদে আসলেন না।)
ফজরের নামাযের জন্য মসজিদে এসে নামায শেষে বললেন, রাতে আমার জন্য তোমাদের অপেক্ষার বিষয়ে আমি অবগত। কিন্তু (না আসার কারণ হল) আমার আশংকা হয়েছে যে, তোমাদের উপর তারাবীহ ফরয হয়ে যাবে। আর তোমরা তা পালনে অক্ষম হবে। (বুখারী ২০১২; মুসলিম ১৭৮)

২. ছা’লাবা বিন আবু মালেক কুরাযী রাহ. বলেন, রাসূল রমযানের এক রাতে বের হয়ে কিছু সাহাবাকে মসজিদের এক কর্ণারে নামায পড়তে দেখলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তারা কী করছে? একজন উত্তর দিলেন, হে আল্লাহর রাসূল ! তাদের কুরআন বেশি মুখস্থ নেই। আর উবাই ইবনে কা’ব রা. ভাল কারী ও হাফেজ। তাই তাঁর পিছনে তারা তারাবীহ পড়ছেন। রাসূল বললেন, তারা ভালো কাজ করেছে বা সঠিক করেছে। (আস-সুনানুল কুবরা, বায়হাকী ৪৬১১, ৪৬১২; হাদীসটি প্রমাণযোগ্য।)

এভাবে আরো কিছু হাদীস থেকে অনিয়মিত ও সুনির্দিষ্ট কোন নিয়ম ব্যতীত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম তারাবীহর নামায জামাআতের সাথে আদায় করার যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে একেবারে বিশুদ্ধ সনদ দ্বারা তিনি বিশ রাকাআত বা কোন নির্দিষ্ট সংখ্যায় তারাবীহ পড়ার কথা প্রমাণিত নয়।

এছাড়া বুখারী-মুসলিমসহ প্রায় হাদীসের কিতাবে রয়েছে যে, ইমাম যুহরী রাহ. বলেছেন, তারাবীহর বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুনির্দিষ্টভাবে কোন নিয়ম ও জামাআতের ব্যবস্থা করা ছাড়া দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। (বুখারী ২০০৯)

হযরত আবু বকর রা.-এর যুগে তারাবীহ
___________________________

হযরত আবু বকর রা.-এর খিলাফতকাল মাত্র দু’বছর। এ স্বল্পতম সময়ে বিভিন্ন ফিতনা মুকাবালায় বেশি ব্যস্ত ছিলেন তিনি। তারাবীহর বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ হয়ে উঠেনি বা এ বিষয়ে কোন চিন্তা তাঁর মনে আসেনি। কাজেই তাঁর খিলাফতকালেও বিষয়টি আগের মতই থেকে যায়। (বুখারী ২০০৯)

হযরত উমর রা-এর যুগে তারাবীহ
_______________________

এভাবে হযরত উমর রা.-এর সাড়ে দশ বছর খিলাফতকালের শুরুতেও (এক রমযান) পূর্বের অবস্থাই ছিল। (প্রাগুক্ত) অতপর হযরত উমর রা. ১৪ হিজরীতে অসংখ্য সাহাবায়ে কেরামের জীবদ্দশায় তারাবীহর বিষয়ে দু’টি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

এক.
ফরয নামাযের মত এক ইমামের পিছনে তারাবীহর নামায জামাআতের সাথে আদায় করার ব্যবস্থা। যেমন সহীহ বুখারীতে এসেছে, রমযানের এক রাতে উমর রা. মসজিদে তাশরীফ নিয়ে যান এবং দেখতে পান যে, মসজিদের বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট জামাআত হচ্ছে। তিনি চিন্তা করলেন সকল নামাযীকে এক ইমামের পিছনে একত্র করে দেওয়া উচিত। অতপর তিনি এই আদেশ জারি করে দেন এবং উবাই ইবনে কা’ব রা.কে ইমাম বানিয়ে দেন। (বুখারী ২০১০)

দুই.
তারাবীহর রাকাআত সংখ্যা বিশ নির্ধারণ। যেমন ইমাম বুখারী (মৃত্যু ২৫৬ হি.) রহ.-এর শায়খ আলী ইবনুল জা’দ রহ. (মৃত্যু ২৩০ হি.) স্বীয় ‘মুসনাদে’ সহীহ সূত্রে বর্ণনা করেন,
عَنِ السَّائِبِ كَانُوا يَقُومُونَ عَلَى عَهْدِ عُمَرَ فِي شَهْرِ رَمَضَانَ بِعِشْرِينَ رَكْعَةً، وَإِنْ كَانُوا لَيَقْرَءُونَ بِالْمِئِينَ مِنَ الْقُرْآنِ
হযরত সাইব ইবনে ইয়াযীদ রা. বলেন, তাঁরা (সাহাবা ও তাবেয়ীন) উমর রা.-এর যুগে রমযান মাসে বিশ রাকাআত (তারাবীহ) পড়তেন এবং শতাধিক আয়াত বিশিষ্ট সূরাসমূহ পড়তেন। (মুসনাদে ইবনুল জা’দ ২৯২৬; আস-সুনানুল কুবরা, বায়হাকী ৪৬৭৯)

বর্ণনাটির সূত্র সহীহ। কেননা ইমাম বুখারীর উস্তাদ যাদের থেকে বর্ণনা করেছেন, তারা সবাই বুখারী-মুসলিমের বর্ণনাকারী। এছাড়া ইমাম বুখারীর উস্তাদের সূত্রে ইমাম বায়হাকী এটি বর্ণনা করেছেন। এ সূত্রটিও সহীহ। বেশ কয়েকজন মুহাদ্দিস সুস্পষ্টভাবে এটাকে সহীহ বলেছেন। যেমন ইমাম নববী (মৃত্যু ৬৭৬ হি.), ইবনুল মুলাক্কিন মিসরী (মৃ. ৮০৪ হি.), ওলীউদ্দীন ইরাকী (মৃ. ৮২৬ হি.), বদরুদ্দীন আইনী (মৃ. ৮৫৫ হি.), জালালুদ্দীন সুয়ূতী (মৃ. ৯১১ হি.), শায়খ আব্দুল হক দেহলভী (মৃ. ১০৫৮ হি.), শাহ আব্দুল আজীজ দেহলভী (মৃ. ১২৩৯ হি.) ও আল্লামা নিমাভী (মৃ. ১৩২২ হি.) রাহ. প্রমুখ। (দেখুন- আল-মাজমূ’, নববী ৩/৫২৭; আল-বদরুল মুনীর ১০/২৭৪, ইবনুল মুলাক্কিন; উমদাতুল কারী, আইনী ৫/৩৮৯; তরহুত তাসরীব, ইরাকী ৩/৯৭; আল-মাসাবীহ ফী সালাতিত তারাবীহ, সুয়ূতী পৃ. ২৮; মা সাবাতা বিস সুন্নাহ পৃ. ২১৭; ফাতাওয়া আজীজী পৃ. ৪৮৪ ও আসারুস সুনান, নীমাভী পৃ. ২৪৬।)

সুতরাং উভয় সূত্রের মূল বর্ণনাটি বড় বড় দশ জন হাদীস বিশারদের দৃষ্টিতে সহীহ। কাজেই বার-তেরশ বছর পরে এসে আহলে হাদীস আলেম মাওলানা মুবারকপুরী (মৃত্যু ১৩৫৩ হি.) ‘তুহফাতুল আহওয়াযী’ গ্রন্থে ও শায়খ আলবানী (মৃত্যু ১৪২০ হি.) ‘সালাতুত তারাবীহ’তে যা বলেছেন, তা কর্ণপাতের অনপুযুক্ত।

বিগত শতাব্দির হিন্দুস্তানের বড় মুহাদ্দিস হাবীবুর রহমান আযমী (মৃত্যু ১৪১২ হি.) রাহ. ‘রাকাআতে তারাবীহ’ কিতাবে মুবারকপুরীর স্বরূপ উন্মোচন করেছেন। আর শায়খ আলবানী যে সব ত্রুটি-বিচ্যুতির শিকার হয়েছেন, তার মধ্যে বেশ কিছু বিষয় ধরে দিয়েছেন সৌদি আরবের কেন্দ্রীয় ইফতা বিভাগের সাবেক গবেষক মুহাদ্দিস ইসমাঈল ইবনে মুহাম্মদ আনসারী তাঁর ‘তাসহীহু সালাতিত তারাবীহ ইশরীনা রাকাআতান ওয়ার রদ্দু আলাল আলবানী ফী তাযয়ীফিহী’ কিতাবে।

বিশিষ্ট তাবেয়ী আবুল আলিয়া (মৃত্যু ৯০ হি.) রাহ. বর্ণনা করেন,
عَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ أَنَّ عُمَرَ أَمَرَ أُبَيًّا أَنْ يُصَلِّيَ بِالنَّاسِ فِي رَمَضَانَ، فَقَالَ: إِنَّ النَّاسَ يَصُومُونَ النَّهَار، وَلَا يُحْسِنُونَ أَن يَقْرَؤُوا، فَلَوْ قَرَأْتَ الْقُرْآنَ عَلَيْهِمْ بِاللَّيْلِ؟ فَقَالَ: يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ هَذَا شَيْءٌ لَمْ يَكُنْ! فَقَالَ: قَدْ عَلِمْتُ وَلَكِنَّهُ أَحْسَنُ، فَصَلَّى بِهِمْ عِشْرِينَ رَكْعَة. رواه الضياء في المختارة، إسناده حسن.
হযরত উমর রা. উবাই ইবনে কা’ব রা.কে রমযান মাসে লোকদেরকে নিয়ে নামায পড়ার আদেশ দিতে গিয়ে বলেন, লোকেরা দিনে রোযা রাখে; কিন্তু রাতের বেলা উত্তমরূপে কুরআন পড়তে পারে না। অতএব আপনি যদি রাতে তাদেরকে নিয়ে কুরআন পড়তেন। তখন উবাই রা. বললেন, আমীরুল মুমিনীন! এ বিষয়টি তো আগে ছিল না। উত্তরে তিনি বললেন, তা আমি জানি; কিন্তু এটা ভাল। অতপর হযরত উবাই ইবনে কা’ব রা. তাদেরকে নিয়ে বিশ রাকাআত নামায (তারাবীহ) পড়েন। (আল-আহাদীসুল মুখতারাহ, যিয়াউদ্দীন মাকদেসী ৩/৩৬৭ হাদীস ১১৬১, সূত্রটি নির্ভরযোগ্য; মুসনাদে আহমদ ইবনে মানী-সূত্রে কানযুল উম্মাল ২৩৪৭১।)

এছাড়াও তাবেয়ী ইয়াযীদ ইবনে রূমান (মৃত্যু ১৩০ হি.), আব্দুল আজীজ ইবনে রুফাই (১৩০ হি.), হাসান বসরী (১১০), ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ (১৯৮) ও মুহাম্মদ ইবনে কা’ব কুরাযী (১২০) রাহ. প্রমুখ থেকে হযরত উমর রা.-এর যুগে রমযান মাসে বিশ রাকাআত তারাবীহ পড়ার কথা প্রমাণিত হয়। (দেখুন, মারিফাতুস সুনান, বায়হাকী ৫৪১১; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ ৭৭৬৪, ৭৭৬৬; আবু দাউদ ১৪২৯; সিয়ারু আলামিন নুবালা, যাহাবী ১/৪০০; জামিয়ুল মাসানীদ, ইবনে কাসীর ১/৮৬; রাকাআতে তারাবীহ, আযমী পৃ. ৮০।)

শায়খ ইবনে তাইমিয়া রাহ. বলেন,
فَلَمَّا جَمَعَهُمْ عُمَرُ عَلَى أبي بْنِ كَعْبٍ كَانَ يُصَلِّي بِهِمْ عِشْرِينَ رَكْعَةً ثُمَّ يُوتِرُ بِثَلَاث.
যখন উমর রা. উবাই ইবনে কা’ব রা.কে লোকদের ইমাম বানিয়ে দিলেন, তিনি তাদেরকে নিয়ে বিশ রাকাআত তারাবীহ ও তিন রাকাআত বিতর পড়তেন। (মাজমূআতুল ফাতাওয়া ২২/১৬৪)

হযরত উসমান রা.এর যুগে তারাবীহ
_______________________
হযরত উসমান রা.-এর খিলাফতকাল বার বছর। এ বার বছরে কীভাবে তারাবীহ পড়া হত, সে সম্পর্কে কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না। তবে হ্যাঁ, হিজরী ১৪ সাল থেকে হযরত উমর রা.-এর শাহাদত পর্যন্ত মোট দশ বছর হযরত উসমান রা.-এর উপস্থিতিতেই বিশ রাকাআত তারাবীহ হয়েছে। তিনি এর উপর কোন আপত্তি করেননি। আর তিনি যদি তাঁর খিলাফতকালে নতুন কোন ফরমান জারি করতেন, তাহলে অবশ্যই ইতিহাসের পাতায় তা সংরক্ষিত থাকত।

হযরত আলী রা.এর যুগে তারাবীহ
_______________________

হযরত আলী রা.-এর পাঁচ বছর খেলাফতকালেও তারাবীহ বিশ রাকাআত পড়া হত। বিশিষ্ট তাবেয়ী আবু আব্দুর রহমান আস-সুলামী রাহ.-এর বিবরণ
عَنْ عَلِيٍّ دَعَا الْقُرَّاءَ فِي رَمَضَانَ فَأَمَرَ مِنْهُمْ رَجُلًا يُصَلِّي بِالنَّاسِ عِشْرِينَ رَكْعَةً، قَالَ: وَكَانَ اللهُ عَنْهُ يُوتِرُ بِهِمْ
আলী রা. রমযানে কারীগণকে ডাকলেন এবং তাঁদের একজনকে লোকদের নিয়ে বিশ রাকাআত তারাবীহ পড়তে আদেশ করলেন। আর তিনি বিতর পড়াতেন। (আস-সুনানুল কুবরা, বায়হাকী ৪২৯১)
তাবেয়ী আবুল হাসনা রাহ. বলেন, হযরত আলী রা. এক ব্যক্তিকে লোকদের নিয়ে বিশ রাকাআত তারাবীহ পড়তে নির্দেশ দিলেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ ৭৭৬৩)
এছাড়াও হযরত আলী রা.-এর বিশেষ ছাত্র শুতাইর ইবনে শাকাল, আলী ইবনে রাবীআহ, আব্দুর রহমান ইবনে আবী বাকরাহ, সাঈদ ইবনে আবীল হাসান ও সুয়াইদ ইবনে গাফালাহ রাহ. প্রমুখ স্ব স্ব স্থানে তারাবীহ বিশ রাকাআত পড়তেন। (ইবনে আবী শায়বাহ ৭৭৬২, ৭৭৭২; রাকাআতে তারাবীহ পৃ. ৯৮।)

তারাবীহ বিশ রাকাআত পড়তে হবে কেন?
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬

প্রশ্ন: যে বিষয়টি রাসূল নির্ধারণ করেননি, তা হযরত উমর বা কোন খলীফা নির্ধারণ করার কে? কেননা শরীয়ত রাসূল -এর উপরই নাযিল হয়েছে, অন্য কারো উপর নয়। আর শরীয়তে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য এবং আমরা তা মানতে বাধ্য কি না?

উত্তর:
যেভাবে স্বামীর দেয়া ক্ষমতাবলে স্ত্রী তালাক দিতে পারে, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ক্ষমতাবলে মন্ত্রীরা চুক্তি করতে পারে, তেমনিভাবে রাসূল -এর দেয়া ক্ষমতাবলে চার খলীফা তা করতে পারেন। আর শরীয়তে তা শুধু গ্রহণযোগ্য নয়, বরং সবার জন্য তা মানাও অপরিহার্য। এ প্রসঙ্গে সহীহ হাদীসে রাসূল ইরশাদ করেন,
مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِي فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيرًا، فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ، تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ، وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ؛ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ، وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ.
যে ব্যক্তি আমার পরে জীবিত থাকবে, সে অনেক মতভেদ দেখতে পাবে। তখন আমার সুন্নত ও আমার হেদায়াতপ্রাপ্ত (চার) খলীফার সুন্নতের অনুসরণ করা তোমাদের জন্য অপরিহার্য। তোমরা একেই মজবুত করে আকড়ে ধরবে এবং (ধর্মীয় বিষয়ে) নিত্য-নতুন কাজ থেকে দূরে থাকবে। কেননা প্রতিটি নতুন কাজ বিদআত। আর প্রতিটি বিদআত হল গোমরাহী। (তিরমিযী ২৬৭৬, হাদীসটি সহীহ।)

এ হাদীসে রাসূল নিজ সুন্নতের পাশাপাশি চার খলীফার সুন্নতকে অনুসরণ করা এবং তা মজবুত করে আকড়ে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং কোন একটি বিষয় যখন চার খলীফার কোন একজনের সুন্নত হিসেবে প্রমাণ হবে, তখন তা অনুসরণের জন্য রাসূল -এর এ নির্দেশই যথেষ্ট এবং মুসলিম উম্মাহর জন্য তা আমল করা অপরিহার্য। এটাই সুনির্ধারিত।

এ কারণেই আমাদের অনেক আমল রয়েছে, যা চার খলীফার কোন একজনের সুন্নত হিসেবে প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত। যেমন জুমার দ্বিতীয় আযান হযরত উসমান রা.-এর জারি করা সুন্নত। তাঁর যুগের পূর্বে জুমার মাত্র একটি আযান হত। উপরন্তু এটি তিনজন খলীফা থেকে প্রমাণিত।
ইবনে তাইমিয়া রাহ. বলেন,
ثَبَتَ مِنْ سُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ وَعَمَلِ الْمُسْلِمِينَ .
বিশ রাকাআত তারাবীহ খলীফাগণের সুন্নত এবং মুসলিম জাতির আমল দ্বারা প্রমাণিত। (মাজমূআতুল ফাতাওয়া ২৩/১১৩)

আরেকটি দলীল
রাসূল ইরশাদ করেন, اقْتَدُوْا بِاللَّذَيْنِ مِنْ بَعْدِي أَبِي بَكْرٍ، وَعُمَرَ
আমার পরে তোমরা আবু বকর ও উমর রা.-এর অনুসরণ করবে। (তিরমিযী ৩৬৬২, তিনি হাদীসটি গ্রহণযোগ্য বলেছেন।)
আরেকটি দীর্ঘ হাদীসে এসেছে, إِنْ يُطِيعُوا أَبَا بَكْرٍ وَعُمَرَ يَرْشُدُوا তারা যদি আবু বকর ও উমর রা.-এর অনুসরণ করে, তাহলে হেদায়াত প্রাপ্ত হবে। (মুসলিম ৬৮১)

কাজেই তারাবীহর বিষয়ে হযরত উমর রা.-এর অনুসরণ করে আমরা জামাআতের সাথে বিশ রাকাআত তারাবীহ পড়লে হেদায়াতপ্রাপ্ত হব।

সন্দেহ নিরসন
_____________

আহলে হাদীস বন্ধুরা বিভ্রান্তি ছড়ান যে, উমর রা. থেকে তারাবীহ বিশ রাকাআত নয়, বরং আট রাকাআতই প্রমাণিত। আর তারাবীহ বিশ রাকাআত পড়া, সহীহ বুখারীতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ -এর আট রাকাআত তারাবীহর আমলের বিরোধিতা করা। এছাড়া তারাবীহর রাকাআত সম্পর্কে ৩৪, ৩৬, ৩৮ ও ৪১ সহ ইমামগণের বিভিন্ন অভিমত ও আমল পাওয়া যায়।

উত্তর:
প্রথমত: এ বিষয়ে বেশ কিছু বর্ণনা উপরে উল্লিখিত হয়েছে। নিম্নে তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য কয়েকজন বিদ্যানের বক্তব্য তুলে ধরছি।
ইমাম শাফেয়ী রাহ. (মৃত্যু ২০৪ হি.) বলেন, আমার নিকট তারাবীহ বিশ রাকাআত পড়াটা পছন্দনীয়। কেননা তা হযরত উমর রা. থেকে বর্ণিত। এভাবে মক্কা শরীফেও বিশ রাকাআত তারাবীহ ও তিন রাকাআত বিতর পড়া হয়। কিতাবুল উম্ম ১/৪৩৩।

ইমাম তিরমিযী রাহ. বলেন, তারাবীহ বিশ রাকাআত পড়ার পক্ষে অধিকাংশ আলেমের অভিমত। কেননা উমর রা., আলী রা. ও অন্যান্য সাহাবী থেকে এ সংখ্যা বর্ণিত। (তিরমিযী ১/১৬৬)

ইবনে আব্দুল বার রাহ. বলেন,
وَهُوَ الصَّحِيحُ عَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ مِنْ غَيْرِ خِلَافٍ مِنَ الصَّحَابَةِ.
হযরত উবাই ইবনে কা’ব রা. যে তারাবীহ বিশ রাকাআত পড়াতেন, তা বিশুদ্ধরূপে প্রমাণিত এবং এতে সাহাবীগণের কোন ভিন্নমত নেই। (আল-ইসতিযকার ২/৭০)
এভাবে মুহাদ্দিস ইবনুল কত্তান রাহ.ও (মৃত্যু ৬২৮ হি.) একই কথা বলেছেন। (আল-ইকনা’ ফী মাসায়িলিল ইজমা ১/১৭৪)

* ইমাম ইবনে কুদামাহ হাম্বলী রাহ. (মৃ. ৬২০ হি.) ‘আল-মুগনী’ গ্রন্থে বিশ রাকাআতকে সুস্পষ্টভাবে দলীল দ্বারা প্রমাণিত করে বলেন,
مَا فَعَلَهُ عُمَرُ، وَأَجْمَعَ عَلَيْهِ الصَّحَابَةُ فِي عَصْرِهِ أَوْلَى بِالِاتِّبَاعِ.
উমর রা. যা করেছেন এবং তাঁর যুগে সাহাবায়ে কেরাম যে বিষয়ে একমত হয়েছেন, সেটাই অনুসরণের অধিক উপযুক্ত। (আল-মুগনী ১/৭৯৯)

* আল্লামা ইবনে হাজার হায়তামী শাফেয়ী রাহ. (মৃ. ৯৭৪ হি.) বলেন,
أجمع الصحابة على ان التراويح عشرون ركعة.
তারাবীহ বিশ রাকাআত হওয়ার উপর সাহাবীগণ একমত হয়েছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ, মোল্লা আলী কারী ৩/৯৭৩; শরহে মেশকাত, ইবনে হাজার- সূত্রে মাজমূয়ায়ে রাসায়েলে লখনভী ৪/২৯৩; আল-মিনহাজুল কাওয়ীম, ইবনে হাজার পৃ. ১৩৮)

আহলে হাদীস বন্ধুদের প্রিয় ও অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (মৃ. ৭২৮ হি.) রাহ বলেন,
إِنَّهُ قَدْ ثَبَتَ: أَنَّ أبي بْنَ كَعْبٍ كَانَ يَقُومُ بِالنَّاسِ عِشْرِينَ رَكْعَةً فِي قِيَامِ رَمَضَانَ، وَيُوتِرُ بِثَلَاثِ. فَرَأَى كَثِيرٌ مِنْ الْعُلَمَاءِ: أَنَّ ذَلِكَ هُوَ السُّنَّةُ؛ لِأَنَّهُ أَقَامَهُ بَيْن الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ، وَلَمْ يُنْكِرْهُ مُنْكِرٌ.
এটা নিশ্চিত প্রমাণিত যে, উবাই ইবনে কা’ব রা. রমযানে লোকদের নিয়ে বিশ রাকাআত তারাবীহ ও তিন রাকাআত বিতর পড়তেন। তাই অনেক আলেমের সিদ্ধান্ত, এটাই সুন্নাত। কেননা তিনি মুহাজির ও আনসার সাহাবায়ে কেরামের উপস্থিতিতেই বিশ রাকাআত পড়িয়েছেন এবং কেউ তাতে আপত্তি করেননি। (মাজমূআতুল ফাতাওয়া ২৩/৬৮)

কাজেই আমরাও তাঁদের অনুসরণ করে বিশ রাকাআতের উপর আপত্তি না করে নিম্নোক্ত আয়াতের ঘোষণা অনুযায়ী আল্লাহ পাকের রেযামন্দী ও জান্নাত হাসিলের চেষ্টা করি।

ইরশাদ হয়েছে,
অর্থ: অগ্রগামী মুহাজির ও আনসার সাহাবাগণ এবং যে সকল মুসলমান নিষ্ঠার সাথে তাঁদের অনুসরণ করে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন কাননকুঞ্জ, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হয় প্রস্রবণসমূহ। সেখানে তারা থাকবে চিরকাল। এটাই হল মহান কৃতকার্যতা। (সূরা তাওবা ১০০)

দ্বিতীয়ত:
বুখারীতে আম্মাজান আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রমযান ও অন্যান্য মাসের রাতে চার রাকাআত করে রাসূল -এর আট (বিতরসহ এগার) রাকাআত পড়ার আমলটি তারাবীহ নয়, বরং তাহাজ্জুদ। কেননা বুখারীতে খোদ আয়েশা রা. থেকেই বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি রাতে দশ (বিতরসহ তের) রাকাআত পড়তেন এবং ফজরের আযান হলে সুন্নত পড়তেন। (বুখারী ১১৭০)

এছাড়া অন্যান্য সহীহ হাদীস থেকে জানা যায়, রাসূল -এর রাতের নফল নামায কখনো চৌদ্দ রাকাআত, কখনো ষোল রাকাআত, কখনো আঠারো রাকাআত হত। (আত-তারাবীহ আকসার“ মিন আলফি আম ফীল মসজিদিন নববী, আতিয়্যা মুহাম্মদ সালেম পৃ. ১৪) আর এ সবই হচ্ছে তাহাজ্জুদ। কেননা তাহাজ্জুদের রাকাআত সংখ্যা নির্ধারিত নয়। দুই রাকাআত করে যত ইচ্ছা পড়া যায়। কাজেই প্রথম বর্ণনা থেকে যদি তারাবীহ আট রাকাআত প্রমাণিত হয়, তাহলে অন্যান্য বর্ণনা থেকে তো আঠারো রাকাআত প্রমাণিত হয়।

আহলে হাদীস বন্ধুদের প্রতি প্রশ্ন রইল, আট রাকাআতের আমলটি যদি তারাবীহ-ই হয়ে থাকে, তাহলে ১৪ হিজরী থেকে তিন খলীফার যুগে আয়েশা রা.-এর হুজরা সংলগ্ন মসজিদে নববীতে বিশ রাকাআত তারাবীহ হয়েছে। তিনি এর প্রতিবাদ করলেন না কেন?

তাছাড়া ইমাম বুখারী রাহ. নিজেও প্রথম রাতে তারাবীহ পড়তেন এবং শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়তেন। তিনি তারাবীহর প্রতি রাকাআতে বিশ আয়াত পড়তেন এবং পুরো কুরআন খতম করতেন। (তারীখে বাগদাদ ২/১২, দার“ল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ; হাদয়ুস সারী পৃ. ৬৪৫, দার“ল হাদীস)

সুতরাং তাহাজ্জুদ সংক্রান্ত হাদীসকে তারাবীহ দ্বারা ব্যাখ্যা করা- এটা তাদের একান্ত নিজস্ব গবেষণা ও ইজতিহাদ, যা ইমাম বুখারীর ইজতিহাদ থেকেও আলাদা। কেননা ইমাম বুখারী রাহ. প্রথম রাতে তারাবীহ পড়তেন এবং শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়তেন।

তৃতীয়ত: ৩৪-৪১ বিভিন্ন মত থাকলেও সবই বিশ সংখ্যার উর্ধ্বে। আর চার মাযহাবের সম্মানিত ইমামগণের মধ্যে ইমাম মালেক রহ.-এর একটি মতসহ (আরেকটি মত ৩৯ রাকাআত) সবার পছন্দনীয় অভিমত হচ্ছে বিশ রাকাআত। এমনকি আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রাহ. বলেছেন,
فَالْقِيَامُ بِعِشْرِينَ هُوَ الْأَفْضَلُ وَهُوَ الَّذِي يَعْمَلُ بِهِ أَكْثَرُ الْمُسْلِمِينَ.
যদি দীর্ঘ কেয়ামের সাথে তারাবীহ দশ রাকাআত পড়া না যায়, তবে বিশ রাকাআত পড়াই উত্তম। আর এটাই অধিকাংশ মুসলমানের আমল। (আল-মুদাওওনাতুল কুবরা ১/২২২; বেদায়াতুল মুজতাহিদ ১/২১৯; আল-মুগনী ১/৭৯৮; মাজমূআতুল ফাতাওয়া ২২/১৬৪)

আট রাকাআত আদায়কারীদের প্রতি অনুরোধ
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬

১. ভালভাবে জেনে রাখুন, চার মাযহাবের মতভেদ সুন্নাহর বিভিন্নতার মতভেদ। কিন্তু বিশ রাকাআত আর আট রাকাআতের মতভেদ সুন্নাহর বিভিন্নতার মতভেদ নয়। এ কারণে চার মাযহাবের ইমামসহ অন্যরা তারাবীহ কমপক্ষে বিশ রাকাআত হওয়ার বিষয়ে একমত। কাজেই তারাবীহকে আট রাকাআতে সীমাবদ্ধ মনে করা এবং বিশ রাকাআত পড়তে আপত্তি করা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নতা ও ইজমা পরিপন্থী।

আহলে হাদীস ভাইদের তারাবিহ বিষয়ে আল্লামা কাশ্মীরির বক্তব্য প্রচার করতে দেখা যায। তারা কি কাশ্মীরী রাহ.এর নিম্নোক্ত কথাটি মানতে পারবেন? তিনি ‘ফয়যুল বারী’তে বলেছেন,
ومَن ادَّعى العملَ بالحديث، فأَوْلَى له أن يُصَلِّيها حتى يخشى فوت الفلاح، فإن هذه صلاة النبيِّ صلى الله عليه وسلم في اليوم الآخر. وأمَّا من اكتفى بالركعات الثمانية، وشذَّ عن السواد الأعظم، وجعل يَرْمِيهم بالبدعة، فَلْيَرَ عاقبته، والله تعالى أعلم.
আহলে হাদীস নামধারীদের উচিত সেহরী খাওয়া ছুটে যাওয়ার আশংকা হয়- এমন সময় পর্যন্ত (অর্থাৎ সারারাত) তারাবীহ পড়া। কেননা এটাই নবীজীর সর্বশেষ আমল ছিল। কিন্তু যারা আট রাকাআত পড়ে উম্মতের ‘সাওয়াদে আজম’ বা সংখ্যাগরিষ্ঠ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়, এমনকি তাদের উপর বিদআতের দোষ আরোপ করে, তাদের উচিত নিজেদের পরিণাম সম্পর্কে চিন্তা করা। (ফয়যুল বারী শরহে বুখারী ৩/১৮১, মাকতাবায়ে আশরাফিয়্যাহ- দেওবন্দ।)

২. শায়খ ইবনে তাইমিয়া রাহ. (মৃত্যু ৭২৮ হি.) বলেছেন,
وَإِنْ كَانُوا لَا يَحْتَمِلُونَهُ فَالْقِيَامُ بِعِشْرِينَ هُوَ الْأَفْضَلُ وَهُوَ الَّذِي يَعْمَلُ بِهِ أَكْثَرُ الْمُسْلِمِينَ؛ فَإِنَّهُ وَسَطٌ بَيْنَ الْعَشْرِ وَبَيْنَ الْأَرْبَعِينَ، وَإِنْ قَامَ بِأَرْبَعِينَ وَغَيْرِهَا جَازَ ذَلِكَ وَلَا يُكْرَهُ شَيْءٌ مِنْ ذَلِكَ.
যদি দীর্ঘ কেয়াম ও কেরাআতের সাথে তারাবীহ দশ রাকাআত পড়া না যায়, তবে বিশ রাকাআত পড়াই উত্তম। আর বিশ রাকাআতের উপরই অধিকাংশ মুসলমান আমল করে। কারণ এটা ১০ ও ৪০ রাকাআতের মাঝামাঝি। যদি কেউ ৪০ রাকাআত বা তার কমবেশি পড়তে চায়, তবে সেটাও জায়েয। এর কোনটাই মাকরূহ নয়। (মাজমূআতুল ফাতাওয়া, ইবনে তাইমিয়া ২২/১৬৪)

বলাবাহুল্য, বর্তমানে সাধারণ মুসল্লীরা দীর্ঘ কেয়াম করতে আগ্রহী নয়। তাই ইবনে তাইমিয়ার মতেও বর্তমানে বিশ রাকাআত পড়াই উত্তম। আরেকটি কথাও তিনি স্পষ্ট করেছেন, ৪০ বা অন্য যে কোন সংখ্যায় তারাবীহ পড়া হোক না কেন- তা মাকরূহ হবে না, বরং জায়েযই হবে।

৩. আপনারা যদি বিশ রাকাআত পড়া হয়- এমন মসজিদে যদি নামায পড়েন, তাহলে দয়া করে নামাযের শেষ পর্যন্ত ইমামের সাথে নামায আদায় করতে থাকবেন। সহীহ হাদীসের ভাষ্যনুযায়ী ইনশাআল্লাহ সারা রাত ইবাদতের সওয়াব পাবেন। এ প্রসঙ্গে আমি আপনাদের অনুসরণীয় সউদী আরবের মহান দু’জন ব্যক্তির ফতোয়া নকল করছি।

সউদী আরবের সাবেক প্রধান মুফতী আব্দুল আযীয বিন বায রাহ. (মৃত্যু ১৪২০ হি.) এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন,
قال مَنْ قَامَ مَعَ الإِمَامِ حَتَّى يَنْصَرِفَ كُتِبَ لَهُ قِيَامُ لَيْلَةٍ. السنة الإتمام مع الإمام، ولو صلى ثلاثا وعشرين لأن الرسول
সুন্নত হচ্ছে ইমামের সাথে শেষ পর্যন্ত থাকা। যদিও ইমাম তেইশ রাকাআত (বিতরসহ) আদায় করেন। কেননা রাসূল ইরশাদ করেছেন, ইমামের নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত যে ব্যক্তি ইমামের সাথে নামায আদায় করে, সে সারা রাত (নামাযে) দাঁড়িয়ে থাকার সওয়াব পাবে। (মাজমূয়ে ফাতাওয়া বিন বায ১১/৩২৫)

এভাবে বিন বায রাহ.-এর ছাত্র শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ উসায়মীন রাহ.ও (মৃত্যু ১৪২১ হি.) একই কথা বলেছেন। তিনি বলেন,
إنما قال: "من قام... السنة أن يوافق الإمام؛ لأنه إذا انصرف قبل تمام الإمام لم يحصل له أجر قيام الليل والرسول
সুন্নত হচ্ছে ইমামের অনুসরণ করা। কেননা ইমাম তারাবীহ সম্পূর্ণ করার পূর্বে চলে গেলে, সারা রাত (নামাযে) দাঁড়িয়ে থাকার সওয়াব পাবে না।

তিনি যারা আট রাকাআত পড়ে ইমামকে রেখে চলে যায়, তাদের প্রতি হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন,
نشاهد بعض الناس في المسجد الحرام ينصرفون قبل الإمام بحجة أن المشروع إحدى عشرة ركعة؟! نقول إن متابعة الإمام أوجب في الشرع، والخلاف شر.
আমরা মক্কা শরীফে দেখতে পায়, কিছু লোক তারাবীহকে আট রাকাআতে (বিতরসহ ১১ রাকাআত) সীমাবদ্ধ মনে করে (বিশ রাকাআত সমাপ্ত হওয়ার আগেই) ইমামকে রেখে চলে যায়। অথচ শরীয়তে ইমামের অনুসরণ করা বড় ওয়াজিব এবং মতানৈক্য করা খারাপ। (মাজমূয়ে ফাতাওয়া ও রাসায়েলে ইবনে উসায়মীন ১৪/২০০-১)

আশা করি, সারা রাত নামাযে দাঁড়িয়ে থাকার সওয়াবের আশায় ইমামের সাথে শেষ পর্যন্ত থাকবেন।

আল্লাহ তাআলা সহীহ বুঝ দান করুন।

বান্দার “বিকৃতি ও বিভ্রান্তির কবলে তারাবিহর নামায” বই থেকে।

11/01/2023

Address

Sirajganj
6771

Telephone

+8801797831530

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Pushpo Tv posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Pushpo Tv:

Share

Category


Other TV Channels in Sirajganj

Show All