14/10/2023
গল্প- #ভিখারি_জ্বীন ( ০৬)
লেখক- #রিয়াজ_রাজ
---------------------------------------
অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে,রাস্তায় কোনো কুকুর নেই। রিয়াজের বাবা ধারণা করে নেন,এইটা কুকুর ছিলো না। উনারা আবার দৌড়ে গাড়িতে উঠে যান। ইকবাল সাহেব তখনি খেয়াল করেন,উনার গাড়ির স্টান্ডে রক্ত লেগে আছে। ভয়ে ইকবাল সাহেব এইবার কাপতে শুরু করে। রিয়াজের বাবা সাথে সাথে দোয়া পড়া শুরু করলেন,এবং মনে মনে বললেন," আল্লাহ। আমরা যাতে কবিরাজের বাড়ি অব্দি যেতে পারি। তুমি আমাদের সহায়ক হও"।
গাড়ি আবার স্টার্ট করা হয়।রক্তের উপর হাত দিয়েই,ইকবাল সাহেব গাড়ি রানিং করতে শুরু করলেন। বরাবরের মতো আবার তাদের সিএনজি এগিয়ে যেতে থাকে কবিরাজের ঠিকানায়। কিন্তু বাধা যে একবারেই শেষ,তা নয়। তারা তখনো কল্পনাও করতে পারেনি।তাদের সামনে কি অপেক্ষা করছে।
শীতের সকালটায় এমনিতেও ঠান্ডা। তার উপর আপনারা যারা শীতের সকালে সিএনজিতে উঠেছেন,তারা জানেন কতটা ঠান্ডা লাগে। এদিকে রিয়াজের গায়ে প্রচুর জ্বর। বুঝুন কতটা শীতে সে কেপে যাচ্ছিলো। রিয়াজের দাঁত খিচুনি উঠে যায়। বার বার রিয়াজের মনে হচ্ছিলো,এ বুঝি শীতে মা*রা যাবে সে। তবুও সব বাধা পেরিয়ে তাদের গন্তব্যে তারা এগিয়ে যাচ্ছে। আরো কিছুদূর যেতেই ইকবাল সাহেব খেয়াল করলেন,রাস্তার পাশে একটা মহিলা সিগন্যাল দিচ্ছে। যদিও গাড়িতে জায়গা নেই,তার উপর ঘটে যাচ্ছে অলৌকিক ঘটনা। রিয়াজের বাবা ইকবাল সাহেবকে বললেন," গাড়ি থামাবেন না। আপনি সোজা এগিয়ে যেতে থাকুন"। ইকবাল সাহেবও রিয়াজের বাবার কথায় সম্মতি দেয়। এদিকে মহিলা খেয়াল করছেন গাড়ি অনেক গতিতে এগিয়ে আসছে। তবুও তিনি বার বার হাত নাড়িয়ে গাড়ি থামানোর সিগন্যাল দিচ্ছে। যেহেতু মেইন রোড, তাই সোজা রোডে মহিলাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ইকবাল সাহেব এইবার, গাড়ি পুরো হাই স্পিডে চালাতে থাকে। এদিকে মহিলা যখন বুঝতে পারে গাড়ি থামবেনা। তাই তিনি ধীরে ধীরে রাস্তার উপরে চলে আসছে, এবং সিগন্যাল দিয়েই যাচ্ছে। রিয়াজের বাবা আবার বলে," গাড়ি কোনোভাবে থামানো যাবেনা ইকবাল। তুমি চালাতে থাকো"। ইকবাল সাহেব নিজেই এসব ঘটনায় অভ্যস্ত। যেহেতু তিনি গাড়ি চালান,রোডের ব্যাপারে তিনিও বেশি জ্ঞান রাখে। কিন্তু,দিনে দুপুরে কখনো এমন ঘটনার শিকার তিনি হননি। এই অভিজ্ঞতা তার প্রথম।
এদিকে গাড়ি ধীরে ধীরে মহিলার কাছাকাছি চলে আসে। তখনি সবাইকে অবাক করে দিয়ে মহিলা রাস্তার মাঝে চলে আসে। এবং দুই হাত লম্বা করে দাঁড়ায়। ইকবাল সাহেবও কিছু না ভেবে মহিলার গা*য়ের উপর দিয়ে গা*ড়ি তুলে দেয়। তৎক্ষণাৎ গাড়িটা একটা ঝাকি মেরে উঠে। অর্থাৎ এক্সি*ডেন্ট হয়ে গেছে।
ইকবাল সাহেব সাথে সাথে গাড়ি ব্রেক করে ফেললেন। এবং রিয়াজের বাবাকে বললেন," আমরা উত্তেজিত হয়ে একটা মানুষকে এক্সি*ডেন্ট করে দিয়েছি। সব দোষ আপনার। আমাকে দিয়ে খু*ন করাইলেন। মহিলা এখনো বে*চে আছে কিনা আল্লাহ জানে"। কথাটা বলেই ইকবাল সাহেব গাড়ি থেকে নামে। এবং দেখে,রোডে কোনো মানুষ নেই। রিয়াজের বাবাও ইকবাল সাহেবের সাথে নেমে গিয়েছিলো। তিনি এইবার ইকবাল সাহেবের উপর রেগে গিয়ে বললেন," আপনাকে বলেছি এসব কিছুই না।যদি সে মানুষ হতো,তবে রোডের মাঝখানে এসে দাঁড়াতো না। এইটুকুও কি বুঝেন না আপনি?"। ইকবাল সাহেব এইবার মাত্রাধিক ভয় পান। উনি আবার তড়িঘড়ি করে গাড়িতে উঠে বসে। রিয়াজের বাবাও গাড়িতে উঠলে,ইকবাল সাহেব আবার গাড়ি চালাতে শুরু করেন।
কিন্তু, এইবার কুয়াশার চাপ অনেক বেশি বেড়ে গেছে। কুয়াশা এমনভাবে রাস্তা ঝাপসা করে নিয়েছে যে,১০ হাত সামনে কিছু দেখা যাচ্ছিলো না।ইকবাল সাহেব তবুও মনে সাহস এনে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। কিছুদূর এইভাবে যেতেই,হটাৎ ইকবাল সাহেব সিএনজি ব্রেক করলেন। আচমকা ব্রেক করায়,রিয়াজ সহ রিয়াজের মা-বাবা সিএনজির মাঝে যে জাল থাকে। সেটির সঙ্গে ধাক্কা খায়। রিয়াজের বাবা জিজ্ঞেস করে," কি হলো ইকবাল। ব্রেক করলে কেন"। ইকবাল সাহেব সবাইকে সামনে তাকাতে বলে। এবং তারা দেখে,রাস্তার পাশের অনেক বড় একটি গাছ ভেঙ্গে রোডে পড়ে আছে। যদি ইকবাল সাহেব ব্রেক না করতেন,তবে গাছের উপর গাড়ি উঠে পুরো গাড়ি তছনছ হয়ে যেতো। এতো মোটা গাছ সরানোর মতো শক্তিও তাদের নেই। মাত্র দুজন লোক,কখনো পারবেনা এই গাছ সরাতে। সবচেয়ে বড় কথা,শীতে সবার হাত পা বরফ হয়ে আছে। শক্তি খাটিয়ে কাজ করার কোনো উপায়ন্তর নেই। ইকবাল সাহেব রিয়াজের বাবাকে প্রশ্ন করলেন," এখন কি করবেন। যাবার পথ তো পুরো বন্ধ"। ইকবালের কথা শুনে রিয়াজের বাবা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন," আপনার গাড়িতে কোনো বাটম আছে?"। তখনি ইকবাল সাহেব গাড়ি থেকে নামেন।এবং সিএনজির পিছন থেকে একটা লোহা বের করলেন। এরপর বললেন," ভাগ্যিস আমি লোহাটা ঘরে রাখিনি। আসরাফ ভাই নিয়েছিলো। সন্ধায় বাজারে আমাকে ফেরৎ দিলে,আমি তা পিছনে রেখে দিয়েছি। ঘরে রাখতে ভুলে গিয়েছিলাম তাই ভালোই হয়েছে। নয়তো এখন অনেক বড় বিপদে আটকে যেতাম। চলুন গাছ সরানো যাক"। কথাটা বলে ইকবাল সাহেব লোহা নিয়ে এগিয়ে যায়। রিয়াজের মা রিয়াজকে জড়িয়ে ধরে দোয়া কালাম পড়তে থাকে। ইকবাল এবং রিয়াজের বাবা লোহা নিয়ে,কোনোভাবে গাছের এক পাশ সরানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। যাতে কোনোভাবে গাড়িটা এগিয়ে যেতে পারে। কয়েক মিনিট এইভাবে চেষ্টা করার পর সবাই শুনতে পায়,গাড়ির পিছন থেকে একটা গর্জন ভেসে এসেছে। সাথে সাথে রিয়াজ এবং বাকিরা ভয়ে আঁৎকে উঠে। ইকবাল এবং রিয়াজের বাবা গাড়ির সামনে থাকলেও,গাড়ির ভিতরে রিয়াজ এবং রিয়াজের মা। আওয়াজটা ঠিক গাড়ির পিছন থেকে এসেছে। রিয়াজের বাবা তখনি জোরে জোরে সূরা পড়তে শুরু করলেন। ফলে গাড়ির ভিতরে রিয়াজ এবং তার মা খেয়াল না করলেও।ইকবাল এবং রিয়াজের বাবা দেখেন, গাড়ির পিছন থেকে একটা বিশাল দেহের মানব কুকুর রাস্তার পাশের ঝোপে ঢুকে গেলো। অর্থাৎ কুকুরটার মাথা ছিলো মানুষের মতো,এবং বাকি শরীর কুকুরের মতো। তা স্পষ্ট দেখলেন ইকবাল সাহেব এবং রিয়াজের বাবা। রিয়াজের বাবা এটি দেখে ভয়ে আরো জোরে দোয়া পড়তে থাকে। এদিকে ইকবাল সাহেব একা একা গাছটিকে সাইড করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তখনি তারা খেয়াল করে,রাস্তার পাশের ঝোপঝাড়ে কারো ধস্তাধস্তির শব্দ।যেনো ঝোপের ভিতর কেও মারামারি করে যাচ্ছে। একটার পর একটা ভয়ানক ঘটনা ঘটেই চলছে। রিয়াজের বাবার মুখ থেকে আল্লাহর বাণী থামছেই না। তিনি তার মতো যত সূরা পারেন,একে একে সব পড়ে যাচ্ছে। এইভাবে আরো কয়েক মিনিট যাবার পর ইকবাল সাহেব বললেন," যেটুকু খালি হয়েছে,তাতে গাড়িটা চলে যাবে। আসুন"। এইটা বলেই ইকবাল সাহেব গাড়ির দিকে এগিয়ে যান। পিছন পিছন রিয়াজের বাবাও আসেন। এবং কোনো ঝামেলা ছাড়া এইবার গাড়ি স্টার্ট দিয়ে তারা আবার রওনা করেন কবিরাজের ঠিকানায়।
অবশেষে প্রায় দেড় ঘন্টা পর তারা কবিরাজের বাড়ির সামনে এসেছে।রিয়াজের বাবা গাড়ি থেকে নেমেই খেয়াল করলেন,চাপ দাড়ি সহ একজন মুরুব্বি দাঁড়িয়ে আছেন। যেনো তিনি রিয়াজদের জন্যেই অপেক্ষা করেছেন। রিয়াজের বাবা কিছু বলার আগেই উনি বললেন," গাড়ির পিছন থেকে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়া মানব কুকুরটি বদ-জ্বীন ছিলো। সাথে সাথে আমি আমার জ্বীনদের পাঠিয়ে তাকে আটকিয়েছি। ঝোপের মাঝে যে ধস্তাধস্তির শব্দ শুনেছেন। সেটি আমার জ্বীন এবং সেই বদ-জ্বীনের ধস্তাধস্তি ছিলো। পরবর্তীতে বদ-জ্বীন আর আপনাদের বাধা দিতে পারেনি। কারণ আমার জ্বীনরা তাকে ধরে রেখেছিলো।আপনিও অনেক সূরা পড়েছেন,তাই বদ-জ্বীন কিছুটা দুর্বল হয়েছে। নয়তো রাস্তাতেই আজ আপনাদের মে*রে ফেলতো সে"। মুরুব্বির কথা শুনে রিয়াজের বাবা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। উনি তো সব কিছুই জানেন। এতোদিন পর একজন ভালো কবিরাজ পেয়েছেন দেখে, রিয়াজের বাবা কবিরাজের কাছে আকুতি -মিনতি করে বলতে থাকে," হুজুর। আল্লাহ আপনাকে উছিলা হিসেবে হয়তো পাঠিয়েছেন। আমি জানি আল্লাহর বাণী ব্যাতিত কারো শক্তি নেই এই অলৌকিক শক্তিকে আটকানোর। হয়তো অনেকের কৌশল জানা আছে আবার অনেকের নেই। আপনি দয়া করে আমার ছেলেটিকে সুস্থ করে দিন হুজুর। অনেক কষ্ট পাচ্ছে আমার ছেলেটা"। হুজুর মুচকি হেসে বললেন," ইনশাআল্লাহ। আমি অবশ্যই চেষ্টা করবো। কিন্তু আপনাদের কারো মধ্যে আমি সেই বদ জ্বীনকে হাজির করবো। তুলা রাশি কার"। হুজুরেরর কথায় রিয়াজের বাবা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন," রিয়াজের তুলা রাশি"। হুজুর আবার মুচকি হেসে বললেন," চিন্তার কিছু নেই। ওর কিছু হবেনা। আমি শুধু ওর দেহে জ্বীন হাজির করবো। জ্বীনের সমস্যা কি,তা জানতে হবে আমার। আপনারা ঘরে আসুন। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকবেন নাকি"।
এরপর কবিরাজের সাথে সবাই কবিরাজের বাসায় প্রবেশ করলেন। হুজুরের বাসার ভিতরটা একটু অদ্ভুত। যে রুমে তিনি কাজ করেন, সেই রুমটার চারপাশে লাল কাপড় দিয়ে পর্দা টাঙ্গানো। মেঝেতে একটা গোল বৃত্তের মতো কিছু আছে। যেখানে আরবি কিছু অক্ষর লেখা। হুজুর বললেন," রিয়াজকে এই বৃত্তের মাঝে বসান। এই বৃত্তের বাহিরে বদ-জ্বীন আসতে পারবেনা"। হুজুরের কথামতো রিয়াজকে গোল বৃত্তের মাঝে বসানো হয়। তখনি হুজুর আবার বললেন," আপনারা সবাই একটু দূরে দাঁড়ান। যত কিছুই হয়ে যাক, ভুলেও বৃত্তের মাঝে প্রবেশ করবেন না"। হুজুরের কথা অনুযায়ী ইকবাল সাহেব এবং রিয়াজের মা বাবা বৃত্ত থেকে ৭-৮ হাত দূরে গিয়ে দাড়ান। এরপর হুজুর ৪ টা মোমবাতি হাতে নেন। এবং পর পর সারিবদ্ধভাবে মোমবাতি গুলো জ্বালিয়ে দিলেন।তারপর হুজুর রিয়াজের বাবাকে বললেন," আপনার পিছনে বাতির সুইচ আছে। ওটা বন্ধ করে দিন"। হুজুরের কথায় রিয়াজের বাবা লাইট অফ করে দেয়। পুরো রুমে ৪টি মোমবাতির আলো ব্যাতিত আর কোনো আলো নেই। এরপর হুজুর মনে মনে কি যেনো পড়তে লাগলেন। এবং কিছুক্ষণ পর চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে কিছু উচ্চারণ করতে শুরু করলেন। বৃত্তের মাঝে তখনো রিয়াজ শীতে কাঁপছিলো,এবং ভয় পাচ্ছিলো। হুজুর ৩-৪ মিনিট কিছু মন্ত্র পড়ার পর আচমকা রিয়াজ বৃত্তের মাঝে শুয়ে যায়। এরপর হুজুর সাথে সাথে চোখ খোললেন। রিয়াজের মা বাবা এবং ইকবাল সাহেব শুধু দেখে যাচ্ছিলেন।
হুজুর তখনি আওয়াজ করে বললেন," কিরে,শুয়ে শুয়ে ঘুমাচ্ছিস নাকি। উঠ,আর ঢং করতে হবেনা তোর"। হুজুরের কথা শেষ হতেই রিয়াজ শোয়া অবস্থায় হাসতে শুরু করে। হাসিটা নরমাল কোনো হাসি নয়। ২ সেকেন্ড হাসছে,আবার ৩ সেকেন্ড চুপ। আবার ২ সেকেন্ড হাসছে,পর পর ৩ সেকেন্ড চুপ। হুজুর এইবার ধমক দিয়ে বললেন," কিরে তুই উঠবি নাকি আটা ছুড়ে মারবো। গা জ্বালিয়ে দিবো এখন"। কথাটা শুনেই আচমকা রিয়াজ শোয়া থেকে লাফ মেরে উঠে দাঁড়ায়। এবং হুজুরকে মা*রার জন্য এগিয়ে এলে বৃত্তের দাগে পা দিয়ে দেয়। দাগে পা দেওয়ার সাথে সাথে আবার রিয়াজ উল্টো লাফ দিয়ে বৃত্তের ভিতর ঢুকে যায়। এরপর কোনো কিছু না বলে আবার শুয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। এরপর,আবার আগের মতো ২ সেকেন্ড হাসে,৩ সেকেন্ড চুপ থাকে। হুজুর এইবার উনার সামনে থাকা একটা পাত্র থেকে আটা বের করে ছুড়ে মারলেন রিয়াজের গায়ে। রিয়াজের দেহে আটা স্পর্শ হতেই রিয়াজ শোয়া থেকে উঠে বসে যায়। এবং কান্না করতে শুরু করলেন। হুজুর তখন আবার বললেন," অভিনয় বন্ধ করে বল কেনো ওর পিছু নিয়েছিস। কি দোষ করেছে সে"। হুজুরের প্রশ্নে রিয়াজ এইবার কান্না থেকে হুট করে হাসতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ হাসাহাসি করে রিয়াজ গম্ভীর স্বরে বলল," আমার মেয়ে রিয়াজকে পছন্দ করে। রিয়াজকে আমি আমার মেয়ের জামাই বানাবো। তাকে নিয়ে যাবো আমি। যদি নিতে না পারি,তবে রিয়াজের পরিবারের সাথে তোকেও মে*রে ফেলবো"। কথাটা বলে রিয়াজ আবার বসা অবস্থায় ২ সেকেন্ড হাসে,৩ সেকেন্ড চুপ থাকে। হুজুর তখনি বলল," তোরা জ্বীন জাতি। মানুষের সাথে তোদের বিয়ে হয়না। ভালো করেই জানিস। আমি ভালোর ভালো বলছি রিয়াজের পিছু ছেড়ে দে। নয়তো তোকে বোতল বন্ধি করবো"। হুজুরের কথা শুনে হাসি থামিয়ে আবার রিয়াজ বলল," কিরে।তুই কেমন কবিরাজ। তুই তো জানিস ঐদিন রিয়াজকে আমরা নিয়ে গিয়ে আমার মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে ফেলেছি। বেচারা ৪ ঘন্টায় কিভাবে ৪ দিন পার করেছে নিজেও জানেনা। হা হা হা। আমি তো তাকে নিয়ে যাবোই। তুই আমাকে আটকাতে পারবিনা"। হুজুর এইবার রেগে গিয়ে বললেন," ওটা বিয়ে ছিলো না। রিয়াজের সম্মতি ছাড়া তুই কিভাবে তোর মেয়ের সাথে তাকে বিয়ে দিবি। বিয়ে পবিত্র জিনিষ। কারো ইচ্ছের বিরুদ্ধে কখনো বিয়ে হয়না"। হুজুরের কথা শুনে রিয়াজ বলতে লাগলো আবার," তাহলে তুই রিয়াজকে রাজি করা কবিরাজ। আমি সারাজীবন তোর গোলামি করবো"। হুজুর এইবার ধমক দিয়ে বলল," বুঝেছি। তোকে বোতল বন্দি করতেই হবে"। কথাটা বলেই হুজুর মন্ত্র পড়তে শুরু করলেন। এদিকে রিয়াজ চিৎকার দিয়ে বলতে শুরু করে," এই কবিরাজ এই।থাম তুই।ভুল করছিস কিন্তু। তোর পরিবারের কেও বাচ*বে না। রিয়াজকেও ম*রতে হবে "। কথাটা বলে রিয়াজ নিজের মুখে নিজে খামচাতে থাকে। নিজের নখ দিয়ে নিজের মুখের চা*মড়া র*ক্তাক্ত করে ফেলে। এইসব দেখে রিয়াজের মা প্রায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ততক্ষণে হুজুর একটা কাচের বোতল বৃত্তের সামনে রেখে রিয়াজের গায়ে আটা ছুড়ে মারেন। অদ্ভুতভাবে,সবার সামনে রিয়াজের শরীর থেকে একটা সাদা আলো বেরিয়ে এসে বোতলের ভিতর ঢুকে যায়। হুজুর সাথে সাথে বোতলের মুখ বন্ধ করে ফেলে। এদিকে বৃত্তের মাঝে রিয়াজ জ্ঞান হারিয়ে শুয়ে পড়ে। হুজুর জ্বীন বন্দি করা সেই বোতলের উপর লাল সুতা দিয়ে বেধে দেয়। সুতাগুলো সাধারণ সুতা নয়। মন্ত্রপাঠ করা সুতা। এরপর হুজুর বললেন,
- রিয়াজ এখন পুরোপুরি সুস্থ। শয়তান জ্বীন রক্ষা না পেয়ে রিয়াজের মুখে আ*ঘাত করেছে। ডাক্তারের কাছ থেকে কিছু ওষুধ নিয়ে খাওয়ালে ঠিক হয়ে যাবে। আর আমি এই বদ-জ্বীনকে মাটির নিচে পুতে আসবো। চিন্তার কিছু নেই।
রিয়াজের মা দৌড়ে গিয়ে রিয়াজকে জড়িয়ে ধরে। এবং কান্না শুরু করলেন। রিয়াজের বাবার চোখেও পানি টলমল করছিলো। হুজুরকে হাদিয়া হিসেবে টাকা দিতে চাইলে হুজুর টাকা নেয়না। উল্টো তিনি বললেন," আপনি আমাকে না দিয়ে,একটা গরু জবাই করে আল্লাহর নামে এলাকায় গরীবদের খাইয়ে দিন। আমার ভালো জ্বীনরাও আপনার সেই দাওয়াতে যাবে। তবে মনে রাখবেন,গরুর হাড্ডি এবং তাজা র*ক্তগুলো পরিস্কার একটি স্থানে রাখবেন। আমার জ্বীনরা ওটা খেয়ে নিবে"।
কি ভাবছেন। ঘটনা এখানে শেষ? হয়তো এখানে শেষ হলেই ভালো হতো। সেদিন কবিরাজকে বিদায় দিয়ে রিয়াজের বাবা বাসায় চলে আসেন।রিয়াজ সুস্থ হওয়ায়,রিয়াজের স্ত্রী তাজকিয়াও শশুর বাড়িতে আসে। যদিও পরে সব জেনে যায় তাজকিয়া। অন্যদিকে কবিরাজের কথা অনুযায়ী,রিয়াজের বাবা একটা গরু জ*বাই করে গরীবদের দাওয়াত খাইয়ে দেন।এবং হাড্ডির সাথে তাজা র*ক্ত একটি পরিস্কার প্লাস্টিকের উপর রেখে দিয়েছেন। সারা রাত ওগুলো ওখানে ছিলো। সকালে সবাই খেয়াল করেন,পুরো প্লাস্টিক একেবারে পরিস্কার। অর্থাৎ প্লাস্টিকের উপরে এক ফোটা র*ক্তের দাগও নেই। সবাই বুঝে যায় জ্বীনরা এসে খেয়ে গেছে। এইভাবে প্রায় ১ মাস কেটে যাবার পর একদিন রাতে হটাৎ রিয়াজের ঘুম ভেঙ্গে যায়। রুমে পুরো অন্ধকার। রিয়াজ তাকিয়ে দেখে,তাজকিয়া জানালা খুলে বাহিরে তাকিয়ে আছে। রিয়াজ মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে,রাত ০২:১৮ মিনিট। এতো রাতে তাজকিয়া জানালায় কি করছে ভেবে রিয়াজ উঠে বসে। তখনি সেই অদ্ভুত ঘ্রাণ রিয়াজের নাকে আবার ঢুকে যায়। এদিকে তাজকিয়া জানালার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কি যেনো বলে যাচ্ছে।
চলবে....?
গল্প- #ভিখারি_জ্বীন ( ০৬)
লেখক- #রিয়াজ_রাজ
Cp