TESTY FOOD

TESTY FOOD Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from TESTY FOOD, Digital creator, Shariakandi.

15/10/2023

গল্প- #ভিখারি_জ্বীন ( ০৮)

লেখক- #রিয়াজ_রাজ
--------------------------------------
সেখানে গিয়ে উনারা যা দেখে,তা দেখে যে কেও কেদে দিবে। রিয়াজদের গোয়ালে সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী যে গরুটা ছিলো। সে নিচে পড়ে আছে। তবে শুধু গরুর দেহটা ছিলো। মাথাটা সে খেয়ে চলে গেছে।

এমন দৃশ্য দেখে রিয়াজের বাবা সেখানেই বসে কান্না করে দেয়। গরুটার জন্য মায়া হবারি কথা। মুদি দোকানের পাশাপাশি উনি গরু পালন করতেন। যদিও রিয়াজের বাবা এলাকায় ভদ্রের দিকে একজন উচ্চস্তর ব্যাক্তি। মুরুব্বি হিসেবে এলাকার সবাই উনাকে যথেষ্ট সম্মান করেন। এলাকার নালিশ বিচারেও উনাকে বেশিরভাগ ডাকা হয়। এতো শক্ত এবং কঠোর একজন ব্যাক্তির চোখে পানি আসাটা স্বাভাবিক বিষয় নয়। ৩ বছর ধরে যে গরুকে উনি যত্নসহকারে এতো বড় করেছে। সেই গরুটার অস্বাভাবিক মৃ*ত্যু সহ্য করা যন্ত্রণাদায়ক। এই ভোর সকালে উনার কান্নাকাটি শুনে বাড়ির বাকিরা দৌড়ে আসেন। গত ৩ মাসে জাহাঙ্গীর সাহেব এবং রোকেয়া বেগমও সুস্থ হয়ে যান। গরুটার এমন অস্বাভাবিক মৃ*ত্যু দেখে উনাদেরও মায়া লেগে যায়। তবে মূল বিষয় হচ্ছে ভয়। ভয়ের ব্যাপারটা সবার মাঝে আবার জাগ্রত হয়ে যায়। গরুর যদি এমন খারাপ অবস্থা করে দেয়,তবে সেই অশরীরী কতটা ভয়ানক হবে? তা ভাবতেও সবার শরীর শিউরে উঠে।

যাক,এই গরুর মাং*স তো আর খাওয়ার উপযুক্ত রয়নি। গরুটাকে ঐভাবেই, বাড়ির পিছনে কবর দিয়ে দেন রিয়াজের বাবা। ম*রা বাড়ির মতো সবাই রিয়াজদের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। সবার চোখে-মুখে আতঙ্গ। নিরবতার মাঝে রিয়াজের বাবা বললেন," আবার সেই কবিরাজের কাছে যেতে হবে। কেনো এই জ্বীন আবার ফিরে এলো। তা জানতে হবে"। রিয়াজের বাবার কথায় রিয়াজ এগিয়ে এসে বলল," আমার কাছে কবিরাজের নাম্বার আছে তো। কল দিলেই হয়"। রিয়াজের বাবা হতাশার চাহনিতে রিয়াজের দিকে তাকিয়ে বলল," দিয়েছি আমি কল। উনার ফোন বন্ধ। খোজ-খবর নেওয়ার জন্য গত ২ সাপ্তাহ থেকে কল দিচ্ছি। উনি ফোন অফ করে রেখেছেন"। রিয়াজের বাবার এমন উত্তরে রিয়াজ আবার বললেন," তাহলে আর কি করার। আমরা উনার বাড়িতে যাই"। রিয়াজ কথাটা বলতেই,রিয়াজদের ঘরের ভিতর থেকে একটা শব্দ ভেসে আসে। যেনো ঘরে থাকা টেবিল কেও উপচে ফেলে দিয়েছে। রিয়াজ সহ সবাই বারন্দায়। হটাৎ ঘরে এমন শব্দ শুনে সবাই দরজার ফাঁক দিয়ে ঘরে তাকায়। আর দেখে,সত্যি সত্যি প্রথম রুমের টেবিল মাটিতে পড়ে আছে। এতে কারো বুঝতে বাকি রয়নি যে জ্বীনটা এখানেই উপস্থিত আছে। রিয়াজের বাবা রিয়াজকে চোখের ইশারায় চুপ থাকতে বললেন। রিয়াজও চুপ হয়ে যায়। কিন্তু তাদের মনে মনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেছে,তারা কবিরাজের বাড়িতে যাবে।

রিয়াজের ছোট ভাইয়ের সাথে এ অব্দি কিছু ঘটেনি। এই ব্যাপারটা অদ্ভুত লাগে সবার কাছে। আবার,জ্বীন তো রিয়াজের পিছু নিয়েছে।তবে রিয়াজের বাবাকে কেনো গতরাতে টর্চার করেছে।তাও একটি রহস্য। সবার ধারণা,রিয়াজের বাবা সহ সেই জ্বীনকে বোতল বন্দি করেছে।তাই রিয়াজের বাবাকেও আক্রমণ করে যাচ্ছে।
এদিকে একই বাড়ির রুজিনা বেগম কয়েকটা রুটি এবং এক বাটি ডাল হাতে নিয়ে এসে বলল," আপনাদের এখন দিন খারাপ যাচ্ছে। কিছু তো রান্না করেন নি হয়তো। এগুলো খেয়ে নিন। এরপর যা করার করবেন"। রুজিনা বেগম কথাটা বলে রুটি এবং ডালের বাটি এগিয়ে দেন। তাজকিয়া এগিয়ে এসে ডালের বাটি হাতে নেয়। এরপর সেই বাটি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করতেই,আবার একটা বিকট শব্দ ভেসে আসে। বারান্দা থেকে সবাই দৌড়ে ঘরে প্রবেশ করে দেখে,তাজকিয়ার হাত থেকে রুটি এবং ডালের বাটি পড়ে গেছে। তাজকিয়াও মাটিতে ডালের উপর শুয়ে আছে। রিয়াজ দৌড়ে গিয়ে তাজকিয়াকে মাটি থেকে তোলার চেষ্টা করে।আর তখনি ঘটে একটি অদ্ভুত ঘটনা।
রিয়াজ তাজকিয়াকে কোলে নেওয়ার জন্য সোজা করতেই,তাজকিয়া রিয়াজের দিকে তাকিয়ে, চোখ বড় বড় করে একটা হাসি দেয়। তবে আওয়াজ ছাড়া। মুখ দিয়ে শব্দ বের হচ্ছেনা,কিন্তু চেহারা দেখে মনে হচ্ছে সে অনেক জোরে জোরে হাসছে। সবাই তাজকিয়ার এমন অবস্থা দেখে ভয়ে পিছু চলে যায়। কিন্তু রিয়াজ সেই মুহুর্তে দোয়া পড়তে শুরু করলে,তাজকিয়া মাটি থেকে ডালের বাটি নিয়ে সোজা রিয়াজের মাথায় আঘাত করে দেয়।

[ সময়ের অভাবে বড় করে লিখতে পারিনি। তবে মজার বিষয়, এইটুকু লেখার জন্য আমি আজ গোসলও করতে পারিনি। গোসলের সময়টায় লিখেছি আপনাদের জন্য]

চলবে....?

গল্প- #ভিখারি_জ্বীন ( ০৮)

লেখক- #রিয়াজ_রাজ

[নাইস আর নেক্সট না লিখে, আপনার কেমন অনুভূতি হচ্ছে,তা কমেন্টে লিখুন।আমি আপনাদের করা বেষ্ট কমেন্টগুলোর স্ক্রিনশট ডে তে দিবো। পাশে থাকুন,পাশে রাখুন ]

14/10/2023

গল্প- #ভিখারি_জ্বীন ( ০৭)

লেখক- #রিয়াজ_রাজ
--------------------------------------
প্রায় ১ মাস কেটে যাবার পর একদিন রাতে হটাৎ রিয়াজের ঘুম ভেঙ্গে যায়। রুমে পুরো অন্ধকার। রিয়াজ তাকিয়ে দেখে,তাজকিয়া জানালা খুলে বাহিরে তাকিয়ে আছে। রিয়াজ মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে,রাত ০২:১৮ মিনিট। এতো রাতে তাজকিয়া জানালায় কি করছে ভেবে রিয়াজ উঠে বসে। তখনি সেই অদ্ভুত ঘ্রাণ রিয়াজের নাকে আবার ঢুকে যায়। এদিকে তাজকিয়া জানালার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কি যেনো বলে যাচ্ছে।

রিয়াজ বিছানা থেকে নেমে তাজকিয়ার কাছে যায়। তাজকিয়া তখনো জানালার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কিছু বলে যাচ্ছে।রিয়াজ ধীর পায়ে গিয়ে তাজকিয়ার কাধে হাত রাখতেই,তাজকিয়া বিড়বিড় করা বন্ধ করে দেয়। রিয়াজ কিছুটা বুঝতে পারে। যেহেতু কদিন আগেই সে এসব থেকে বেরিয়ে এসেছে। তাই এখন এসব ব্যাপারে রিয়াজের অনেকটা অভিজ্ঞতা বেড়ে গেছে। রিয়াজ কাঁপা স্বরে বলল," কি দেখছো তুমি বাহিরে।আর এতো রাতে কি সব বলে যাচ্ছো"। রিয়াজের কথা শুনে তাজকিয়া কেমন একটা আচরণ করতে শুরু করে। যেনো সে অনেক রেগে যাচ্ছে। জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্চে,এবং এক দৃষ্টিতে জানালার বাহিরে তাকিয়ে আছে। রিয়াজ আবার কিছু জিজ্ঞেস করতেই যাবে,সেই মুহুর্তে তাজকিয়া মাথা ঘুরিয়ে,সেখানেই জ্ঞান হারায়। রিয়াজের চোখের সামনে তাজকিয়া মাটিতে শুয়ে পড়ে। রিয়াজ এইবার ব্যাপারটা পুরোপুরি আঁচ করতে পারে। মাটিতে হাটু ফেলে রিয়াজ তাজকিয়াকে কোলে নেয়। এরপর বিছানায় এনে শুইয়ে দেয়। শুইয়ে দেওয়ার পর,রিয়াজ এ বিষয়ে চিন্তিত হয়ে যায়। জ্বীনের প্রভাব কোনোভাবে তাজকিয়ার দেহে এসেছে কিনা,তা নিয়ে ভাবতে থাকে। কিন্তু আসবে কেনো,হুজুর তো নিজের হাতে সেই জ্বীনকে বন্দি করেছে। রিয়াজের এইবার সন্দেহ হয় জ্বীনের মেয়েটাকে নিয়ে। কোনোভাবে সে ফিরে আসেনি তো? ভাবনার মাঝে রিয়াজ খেয়াল করে,জানালা এখনো খোলা। আবার উল্টো ঘুরে রিয়াজ জানালার কাছে যায়। এবং জানালা বন্ধ করার জন্য যখন কাঠের ঢাকনা ধরে টান দেয়,তখনি তাজকিয়া রিয়াজের রুমে প্রবেশ করে বলল," কি ব্যাপার। এতো রাতে জানালা খুলে কি করছেন?"।

রিয়াজ হতভম্ব হয়ে যায়। সাথে সাথে মাথা ঘুরিয়ে বিছানায় তাকিয়ে দেখে,কেও নেই। রিয়াজ ভয়ার্ত স্বরে তাজকিয়াকে বলল," কোথায় ছিলে তুমি"। রিয়াজের প্রশ্ন শুনে তাজকিয়া স্বাভাবিক ভাবে বলল," বাথরুমে গিয়েছিলাম। তুমি ঘুমাচ্ছিলে,তাই ডাকিনি"। রিয়াজ স্তব্ধ হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে জানালা বন্ধ করে রিয়াজ তাজকিয়ার কাছে আসে। এরপর আয়তুল কুরসি পড়ে তাজকিয়ার গায়ে ফু দেয় তিনবার। কিন্তু তাজকিয়ার কোনো রিয়েকশন নেই। রিয়াজ বুঝতে পারে,এইটাই আসল তাজকিয়া। তবে কিছুক্ষণ আগে যে ছিলো,সে কে ছিলো? রিয়াজ যাকে কোলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়েছে। সে কে?
এদিকে তাজকিয়া কিছু বুঝতে না পেরে বলল," এইভাবে অদ্ভুত আচরণ করছেন কেনো। কি হয়েছে আপনার"। রিয়াজ এইবার ব্যাপারটা লুকানোর চেষ্টা করে। তাজকিয়া ভয় পাবে তাই কথা ঘুরিয়ে বলল," এইভাবে গভীর রাতে হুটহাট বের হইয়ো না। আমাকে ডাকবা। যদি খারাপ কিছুর নজর পড়ে,তবে কি করবা"। কথাটা শুনে তাজকিয়া এইবার একটু ভয় উপলব্ধি করে। এরপর একটু এগিয়ে এসে তাজকিয়া রিয়াজকে জড়িয়ে ধরে বলে," আপনি থাকতে আমার কোনো চিন্তা নেই"। রিয়াজ কিছুটা শান্ত হয়ে বলল," ঠিক আছে। শুয়ে পড়ো"।

দুজনে আবার শুয়ে পড়ে। রিয়াজ উপরের দিকে তাকিয়ে শুয়ে আছে। তাজকিয়া ডান পাশ থেকে রিয়াজকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। তাজকিয়ার পিঠে হাত বুলিয়ে রিয়াজ তাজকিয়াকে ঘুম পাড়াচ্ছিলো। কিন্তু, সেই রাতে আরো অনেক কিছু অপেক্ষা করছিলো ওদের জন্য।

রিয়াজের বুকে মাথা রেখে তাজকিয়া প্রায় ঘুমিয়ে যায়। রিয়াজ তাজকিয়াকে বুকে নিয়ে,নিজেও মোটামুটি অর্ধঘুমন্তে পা দেয়। রিয়াজের চোখেও ঘুমের রেশ বাড়ে। তবে পুরোপুরি ঘুমায়নি রিয়াজ। চোখ বন্ধ অবস্থায় রিয়াজ উপলব্ধি করে,তাজকিয়ার হাতটা অনেক ঠান্ডা। এতোই ঠান্ডা যে,রিয়াজের মনে হচ্ছে তার বুকে একটা বরফের হাত রাখা হয়েছে। সেই মুহুর্তে রিয়াজ আবারো উপলব্ধি করে,তাজকিয়া রিয়াজের ঘাড়ের কাছে এসে বিড়বিড় করে কিছু বলছে। চোখ বন্ধ হলেও,রিয়াজ সবি বুঝতে পারছে। এরপর তাজকিয়া রিয়াজের ঠিক কানের কাছে এসে,অন্য কোনো ভাষায় ফিসফিস করে কথা বলছিলো। তাজকিয়ার মুখের গরম উত্তাপ স্পষ্ট রিয়াজের ঘাড়ে লাগছে। রিয়াজ এইবার চোখ খুলবে খুলবে ভাব,তখনি তাজকিয়া রিয়াজের গলা চেপে ধরে। আর সাথে সাথে রিয়াজ লাফ মেরে উঠে বসে যায়। বসার পর রিয়াজ তাজকিয়ার দিকে তাকালে দেখে,তাজকিয়ার সাদা ধবধবে চেহারাটা কুচকুচে কালো হয়ে গেছে। নাকের স্থানে নাক নেই। একটা কঙ্কালের মতো নাক তাজকিয়ার। চোখগুলো স্বাভাবিক মানুষের মতোই। পুরো একটা ডাইনির মতো দেখাচ্ছিলো তাজকিয়াকে। এমন বিভৎস্য চেহারা দেখে রিয়াজ ভয়ে জোরে এক চিৎকার দেয়। সাথে সাথে ঘুম ভেঙ্গে যায় রিয়াজের।

চোখ মেলে দেখে,রিয়াজ এখন শুয়ে আছে। তাজকিয়া রিয়াজের বুকে মাথা রেখেই ঘুমাচ্ছে। রিয়াজের চিৎকারে তাজকিয়া জেগে যায়,আর ঘুমন্ত স্বরে বলল," কি হলো আপনার। চিৎকার দিলে কেন"। রিয়াজ বুঝতে পারে,একটা বাজে স্বপ্ন দেখছিলো এতক্ষণ। রিয়াজ আবার তাজকিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে," কিছু না। বাজে স্বপ্ন ছিলো।ঘুমাও তুমি"। কথাটা বলে আবার তাজকিয়াকে বুকে টেনে নেয়। রিয়াজের ঘুমটা যেনো এইবার চিরতরে পালিয়েছে। চোখে আর ঘুম ধরছেনা। চোখ বন্ধ করতেও ভয় পাচ্ছে,যদি আবার এমন কিছু দেখে। চোখ বলের মতো করে,রিয়াজ ছালের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু,সেখানেও রেহায় পাওয়া যায়নি।

রিয়াজ উপরের দিকে তাকিয়ে থাকা অবস্থায় খেয়াল করে, একেবারে উপরে ছাল ( সিলিং) এর সাথে একটা কালো অবয়ব বসে আছে। তাও উল্টো হয়ে। রিয়াজ চোখের ভুল ভেবে ভালোভাবে তাকায়।এবং এইবার স্পষ্ট দেখে,একেবারে ছালের সাথে গা লাগিয়ে,শূন্যে একটা ধোয়ার মতো মানুষ বসে আছে। তার চোখগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিলো। হুবহু মানুষের মতো। রিয়াজ এমন ভয়ানক দৃশ্য দেখে সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেলে। এই দৃশ্য যেনো দেখার মতো নয়। চোখ বন্ধ করার সাথে সাথে রিয়াজ সেই অদ্ভুত গন্ধটি পেতে শুরু করলো। এটি যেনো অবয়বটার দেহের ঘ্রাণ। মনে মনে রিয়াজ দোয়া-দুরুদ পড়তে শুরু করে। এবং সকাল হলেই সেই কবিরাজের কাছে যাবার চিন্তা করে রিয়াজ। কিছু সূরা পাঠ করার পর রিয়াজ সেই গন্ধটি আর পায় না। সাহস করে আরেকবার চোখ খোলার সাথে সাথে রিয়াজ দেখতে পায়,সেই কালো অবয়বটা ঠিক রিয়াজের মুখের সামনে। মাত্র এক হাত দুরুত্ব।
ভয়ে রিয়াজ আবার চোখ বন্ধ করে দোয়া পড়তে শুরু করে। ঐ গন্ধটি যেনো এইবার তীব্রভাবে রিয়াজের নাকে ঢুকছে। রিয়াজের ভিতরে ভয়ে সব চুরমার হয়ে যাচ্ছিলো।

কয়েকবার দোয়া-দুরুদ পড়ার পর রিয়াজ শুনতে পায় গরুর ডাক। রিয়াজদের ঘরের,পূর্ব পাশে একটা গোয়াল ঘর আছে। যেখানে রিয়াজের বাবা, ৩ টা গরু পালন করে।গোয়াল ঘর থেকে গরুর ডাক আসতেই রিয়াজ চোখ খোলে। প্রচন্ড জোরে জোরে গরু ডাক দিয়ে যাচ্ছিলো। রিয়াজ তাজকিয়াকে বুকে জড়িয়ে শুধু শব্দগুলো শুনে যাচ্ছে। আর আল্লাহকে স্বরণ করে যাচ্ছিলো। কিছুক্ষণ পর শুধু গরুর ডাক নয়,গোয়াল ঘর থেকে অনেক ধস্তাধস্তির শব্দ ভেসে আসে। যেনো কেও জোর করে গরুর সাথে মারামারি করছে। রিয়াজ ভয়ে শুধু দোয়া পড়েই যাচ্ছিলো। এদিকে গোয়াল ঘর থেকে ভেসে আসা ধস্তাধস্তির শব্দ ক্রমাগত বেড়েই যাচ্ছে। ওমন ধস্তাধস্তির শব্দের মাঝেই,ফজরের আযান হয়ে যায়।

ফজরের আযান শুনে রিয়াজ সাথে সাথে বিছানা থেকে উঠে। আচমকা রিয়াজের লাফ মেরে উঠার কারণে,তাজকিয়ারও ঘুম ভেঙ্গে যায়। রিয়াজ লাফ দিয়ে বিছানা থেকে উঠে লাইট জ্বালিয়ে দেয়। সেই মুহুর্তে রিয়াজের বাবা রিয়াজের রুমে দৌড়ে এসে বলল," সারা রাত আমাকে জ্বালিয়েছে। গোয়াল ধর থেকে অনেক ধস্তাধস্তির শব্দ শুনলাম। গরু মনে হয় একটাও বেচে নেই"। রিয়াজ বুঝে যায়,অস্বাভাবিক ঘটনা শুধু রিয়াজের সাথে নয়,রিয়াজের বাবার সাথেও হয়েছে। রিয়াজ লুঙ্গির বাধ শক্ত করে বেধে,লাইট হাতে নেয়। এরপর রিয়াজ আর তার বাবা,দৌড়ে যায় গোয়াল ঘরে।
সেখানে গিয়ে উনারা যা দেখে,তা দেখে যে কেও কেদে দিবে। রিয়াজদের গোয়ালে সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী যে গরুটা ছিলো। সে নিচে পড়ে আছে। তবে শুধু গরুর দেহটা ছিলো। মাথাটা সে খেয়ে চলে গেছে।

চলবে....?

গল্প- #ভিখারি_জ্বীন ( ০৭)

লেখক- #রিয়াজ_রাজ

[নাইস আর নেক্সট না লিখে, আপনার কেমন অনুভূতি হচ্ছে,তা কমেন্টে লিখুন।

14/10/2023

গল্প- #ভিখারি_জ্বীন ( ০৬)

লেখক- #রিয়াজ_রাজ
---------------------------------------
অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে,রাস্তায় কোনো কুকুর নেই। রিয়াজের বাবা ধারণা করে নেন,এইটা কুকুর ছিলো না। উনারা আবার দৌড়ে গাড়িতে উঠে যান। ইকবাল সাহেব তখনি খেয়াল করেন,উনার গাড়ির স্টান্ডে রক্ত লেগে আছে। ভয়ে ইকবাল সাহেব এইবার কাপতে শুরু করে। রিয়াজের বাবা সাথে সাথে দোয়া পড়া শুরু করলেন,এবং মনে মনে বললেন," আল্লাহ। আমরা যাতে কবিরাজের বাড়ি অব্দি যেতে পারি। তুমি আমাদের সহায়ক হও"।

গাড়ি আবার স্টার্ট করা হয়।রক্তের উপর হাত দিয়েই,ইকবাল সাহেব গাড়ি রানিং করতে শুরু করলেন। বরাবরের মতো আবার তাদের সিএনজি এগিয়ে যেতে থাকে কবিরাজের ঠিকানায়। কিন্তু বাধা যে একবারেই শেষ,তা নয়। তারা তখনো কল্পনাও করতে পারেনি।তাদের সামনে কি অপেক্ষা করছে।
শীতের সকালটায় এমনিতেও ঠান্ডা। তার উপর আপনারা যারা শীতের সকালে সিএনজিতে উঠেছেন,তারা জানেন কতটা ঠান্ডা লাগে। এদিকে রিয়াজের গায়ে প্রচুর জ্বর। বুঝুন কতটা শীতে সে কেপে যাচ্ছিলো। রিয়াজের দাঁত খিচুনি উঠে যায়। বার বার রিয়াজের মনে হচ্ছিলো,এ বুঝি শীতে মা*রা যাবে সে। তবুও সব বাধা পেরিয়ে তাদের গন্তব্যে তারা এগিয়ে যাচ্ছে। আরো কিছুদূর যেতেই ইকবাল সাহেব খেয়াল করলেন,রাস্তার পাশে একটা মহিলা সিগন্যাল দিচ্ছে। যদিও গাড়িতে জায়গা নেই,তার উপর ঘটে যাচ্ছে অলৌকিক ঘটনা। রিয়াজের বাবা ইকবাল সাহেবকে বললেন," গাড়ি থামাবেন না। আপনি সোজা এগিয়ে যেতে থাকুন"। ইকবাল সাহেবও রিয়াজের বাবার কথায় সম্মতি দেয়। এদিকে মহিলা খেয়াল করছেন গাড়ি অনেক গতিতে এগিয়ে আসছে। তবুও তিনি বার বার হাত নাড়িয়ে গাড়ি থামানোর সিগন্যাল দিচ্ছে। যেহেতু মেইন রোড, তাই সোজা রোডে মহিলাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ইকবাল সাহেব এইবার, গাড়ি পুরো হাই স্পিডে চালাতে থাকে। এদিকে মহিলা যখন বুঝতে পারে গাড়ি থামবেনা। তাই তিনি ধীরে ধীরে রাস্তার উপরে চলে আসছে, এবং সিগন্যাল দিয়েই যাচ্ছে। রিয়াজের বাবা আবার বলে," গাড়ি কোনোভাবে থামানো যাবেনা ইকবাল। তুমি চালাতে থাকো"। ইকবাল সাহেব নিজেই এসব ঘটনায় অভ্যস্ত। যেহেতু তিনি গাড়ি চালান,রোডের ব্যাপারে তিনিও বেশি জ্ঞান রাখে। কিন্তু,দিনে দুপুরে কখনো এমন ঘটনার শিকার তিনি হননি। এই অভিজ্ঞতা তার প্রথম।
এদিকে গাড়ি ধীরে ধীরে মহিলার কাছাকাছি চলে আসে। তখনি সবাইকে অবাক করে দিয়ে মহিলা রাস্তার মাঝে চলে আসে। এবং দুই হাত লম্বা করে দাঁড়ায়। ইকবাল সাহেবও কিছু না ভেবে মহিলার গা*য়ের উপর দিয়ে গা*ড়ি তুলে দেয়। তৎক্ষণাৎ গাড়িটা একটা ঝাকি মেরে উঠে। অর্থাৎ এক্সি*ডেন্ট হয়ে গেছে।

ইকবাল সাহেব সাথে সাথে গাড়ি ব্রেক করে ফেললেন। এবং রিয়াজের বাবাকে বললেন," আমরা উত্তেজিত হয়ে একটা মানুষকে এক্সি*ডেন্ট করে দিয়েছি। সব দোষ আপনার। আমাকে দিয়ে খু*ন করাইলেন। মহিলা এখনো বে*চে আছে কিনা আল্লাহ জানে"। কথাটা বলেই ইকবাল সাহেব গাড়ি থেকে নামে। এবং দেখে,রোডে কোনো মানুষ নেই। রিয়াজের বাবাও ইকবাল সাহেবের সাথে নেমে গিয়েছিলো। তিনি এইবার ইকবাল সাহেবের উপর রেগে গিয়ে বললেন," আপনাকে বলেছি এসব কিছুই না।যদি সে মানুষ হতো,তবে রোডের মাঝখানে এসে দাঁড়াতো না। এইটুকুও কি বুঝেন না আপনি?"। ইকবাল সাহেব এইবার মাত্রাধিক ভয় পান। উনি আবার তড়িঘড়ি করে গাড়িতে উঠে বসে। রিয়াজের বাবাও গাড়িতে উঠলে,ইকবাল সাহেব আবার গাড়ি চালাতে শুরু করেন।

কিন্তু, এইবার কুয়াশার চাপ অনেক বেশি বেড়ে গেছে। কুয়াশা এমনভাবে রাস্তা ঝাপসা করে নিয়েছে যে,১০ হাত সামনে কিছু দেখা যাচ্ছিলো না।ইকবাল সাহেব তবুও মনে সাহস এনে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। কিছুদূর এইভাবে যেতেই,হটাৎ ইকবাল সাহেব সিএনজি ব্রেক করলেন। আচমকা ব্রেক করায়,রিয়াজ সহ রিয়াজের মা-বাবা সিএনজির মাঝে যে জাল থাকে। সেটির সঙ্গে ধাক্কা খায়। রিয়াজের বাবা জিজ্ঞেস করে," কি হলো ইকবাল। ব্রেক করলে কেন"। ইকবাল সাহেব সবাইকে সামনে তাকাতে বলে। এবং তারা দেখে,রাস্তার পাশের অনেক বড় একটি গাছ ভেঙ্গে রোডে পড়ে আছে। যদি ইকবাল সাহেব ব্রেক না করতেন,তবে গাছের উপর গাড়ি উঠে পুরো গাড়ি তছনছ হয়ে যেতো। এতো মোটা গাছ সরানোর মতো শক্তিও তাদের নেই। মাত্র দুজন লোক,কখনো পারবেনা এই গাছ সরাতে। সবচেয়ে বড় কথা,শীতে সবার হাত পা বরফ হয়ে আছে। শক্তি খাটিয়ে কাজ করার কোনো উপায়ন্তর নেই। ইকবাল সাহেব রিয়াজের বাবাকে প্রশ্ন করলেন," এখন কি করবেন। যাবার পথ তো পুরো বন্ধ"। ইকবালের কথা শুনে রিয়াজের বাবা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন," আপনার গাড়িতে কোনো বাটম আছে?"। তখনি ইকবাল সাহেব গাড়ি থেকে নামেন।এবং সিএনজির পিছন থেকে একটা লোহা বের করলেন। এরপর বললেন," ভাগ্যিস আমি লোহাটা ঘরে রাখিনি। আসরাফ ভাই নিয়েছিলো। সন্ধায় বাজারে আমাকে ফেরৎ দিলে,আমি তা পিছনে রেখে দিয়েছি। ঘরে রাখতে ভুলে গিয়েছিলাম তাই ভালোই হয়েছে। নয়তো এখন অনেক বড় বিপদে আটকে যেতাম। চলুন গাছ সরানো যাক"। কথাটা বলে ইকবাল সাহেব লোহা নিয়ে এগিয়ে যায়। রিয়াজের মা রিয়াজকে জড়িয়ে ধরে দোয়া কালাম পড়তে থাকে। ইকবাল এবং রিয়াজের বাবা লোহা নিয়ে,কোনোভাবে গাছের এক পাশ সরানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। যাতে কোনোভাবে গাড়িটা এগিয়ে যেতে পারে। কয়েক মিনিট এইভাবে চেষ্টা করার পর সবাই শুনতে পায়,গাড়ির পিছন থেকে একটা গর্জন ভেসে এসেছে। সাথে সাথে রিয়াজ এবং বাকিরা ভয়ে আঁৎকে উঠে। ইকবাল এবং রিয়াজের বাবা গাড়ির সামনে থাকলেও,গাড়ির ভিতরে রিয়াজ এবং রিয়াজের মা। আওয়াজটা ঠিক গাড়ির পিছন থেকে এসেছে। রিয়াজের বাবা তখনি জোরে জোরে সূরা পড়তে শুরু করলেন। ফলে গাড়ির ভিতরে রিয়াজ এবং তার মা খেয়াল না করলেও।ইকবাল এবং রিয়াজের বাবা দেখেন, গাড়ির পিছন থেকে একটা বিশাল দেহের মানব কুকুর রাস্তার পাশের ঝোপে ঢুকে গেলো। অর্থাৎ কুকুরটার মাথা ছিলো মানুষের মতো,এবং বাকি শরীর কুকুরের মতো। তা স্পষ্ট দেখলেন ইকবাল সাহেব এবং রিয়াজের বাবা। রিয়াজের বাবা এটি দেখে ভয়ে আরো জোরে দোয়া পড়তে থাকে। এদিকে ইকবাল সাহেব একা একা গাছটিকে সাইড করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তখনি তারা খেয়াল করে,রাস্তার পাশের ঝোপঝাড়ে কারো ধস্তাধস্তির শব্দ।যেনো ঝোপের ভিতর কেও মারামারি করে যাচ্ছে। একটার পর একটা ভয়ানক ঘটনা ঘটেই চলছে। রিয়াজের বাবার মুখ থেকে আল্লাহর বাণী থামছেই না। তিনি তার মতো যত সূরা পারেন,একে একে সব পড়ে যাচ্ছে। এইভাবে আরো কয়েক মিনিট যাবার পর ইকবাল সাহেব বললেন," যেটুকু খালি হয়েছে,তাতে গাড়িটা চলে যাবে। আসুন"। এইটা বলেই ইকবাল সাহেব গাড়ির দিকে এগিয়ে যান। পিছন পিছন রিয়াজের বাবাও আসেন। এবং কোনো ঝামেলা ছাড়া এইবার গাড়ি স্টার্ট দিয়ে তারা আবার রওনা করেন কবিরাজের ঠিকানায়।

অবশেষে প্রায় দেড় ঘন্টা পর তারা কবিরাজের বাড়ির সামনে এসেছে।রিয়াজের বাবা গাড়ি থেকে নেমেই খেয়াল করলেন,চাপ দাড়ি সহ একজন মুরুব্বি দাঁড়িয়ে আছেন। যেনো তিনি রিয়াজদের জন্যেই অপেক্ষা করেছেন। রিয়াজের বাবা কিছু বলার আগেই উনি বললেন," গাড়ির পিছন থেকে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়া মানব কুকুরটি বদ-জ্বীন ছিলো। সাথে সাথে আমি আমার জ্বীনদের পাঠিয়ে তাকে আটকিয়েছি। ঝোপের মাঝে যে ধস্তাধস্তির শব্দ শুনেছেন। সেটি আমার জ্বীন এবং সেই বদ-জ্বীনের ধস্তাধস্তি ছিলো। পরবর্তীতে বদ-জ্বীন আর আপনাদের বাধা দিতে পারেনি। কারণ আমার জ্বীনরা তাকে ধরে রেখেছিলো।আপনিও অনেক সূরা পড়েছেন,তাই বদ-জ্বীন কিছুটা দুর্বল হয়েছে। নয়তো রাস্তাতেই আজ আপনাদের মে*রে ফেলতো সে"। মুরুব্বির কথা শুনে রিয়াজের বাবা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। উনি তো সব কিছুই জানেন। এতোদিন পর একজন ভালো কবিরাজ পেয়েছেন দেখে, রিয়াজের বাবা কবিরাজের কাছে আকুতি -মিনতি করে বলতে থাকে," হুজুর। আল্লাহ আপনাকে উছিলা হিসেবে হয়তো পাঠিয়েছেন। আমি জানি আল্লাহর বাণী ব্যাতিত কারো শক্তি নেই এই অলৌকিক শক্তিকে আটকানোর। হয়তো অনেকের কৌশল জানা আছে আবার অনেকের নেই। আপনি দয়া করে আমার ছেলেটিকে সুস্থ করে দিন হুজুর। অনেক কষ্ট পাচ্ছে আমার ছেলেটা"। হুজুর মুচকি হেসে বললেন," ইনশাআল্লাহ। আমি অবশ্যই চেষ্টা করবো। কিন্তু আপনাদের কারো মধ্যে আমি সেই বদ জ্বীনকে হাজির করবো। তুলা রাশি কার"। হুজুরেরর কথায় রিয়াজের বাবা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন," রিয়াজের তুলা রাশি"। হুজুর আবার মুচকি হেসে বললেন," চিন্তার কিছু নেই। ওর কিছু হবেনা। আমি শুধু ওর দেহে জ্বীন হাজির করবো। জ্বীনের সমস্যা কি,তা জানতে হবে আমার। আপনারা ঘরে আসুন। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকবেন নাকি"।

এরপর কবিরাজের সাথে সবাই কবিরাজের বাসায় প্রবেশ করলেন। হুজুরের বাসার ভিতরটা একটু অদ্ভুত। যে রুমে তিনি কাজ করেন, সেই রুমটার চারপাশে লাল কাপড় দিয়ে পর্দা টাঙ্গানো। মেঝেতে একটা গোল বৃত্তের মতো কিছু আছে। যেখানে আরবি কিছু অক্ষর লেখা। হুজুর বললেন," রিয়াজকে এই বৃত্তের মাঝে বসান। এই বৃত্তের বাহিরে বদ-জ্বীন আসতে পারবেনা"। হুজুরের কথামতো রিয়াজকে গোল বৃত্তের মাঝে বসানো হয়। তখনি হুজুর আবার বললেন," আপনারা সবাই একটু দূরে দাঁড়ান। যত কিছুই হয়ে যাক, ভুলেও বৃত্তের মাঝে প্রবেশ করবেন না"। হুজুরের কথা অনুযায়ী ইকবাল সাহেব এবং রিয়াজের মা বাবা বৃত্ত থেকে ৭-৮ হাত দূরে গিয়ে দাড়ান। এরপর হুজুর ৪ টা মোমবাতি হাতে নেন। এবং পর পর সারিবদ্ধভাবে মোমবাতি গুলো জ্বালিয়ে দিলেন।তারপর হুজুর রিয়াজের বাবাকে বললেন," আপনার পিছনে বাতির সুইচ আছে। ওটা বন্ধ করে দিন"। হুজুরের কথায় রিয়াজের বাবা লাইট অফ করে দেয়। পুরো রুমে ৪টি মোমবাতির আলো ব্যাতিত আর কোনো আলো নেই। এরপর হুজুর মনে মনে কি যেনো পড়তে লাগলেন। এবং কিছুক্ষণ পর চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে কিছু উচ্চারণ করতে শুরু করলেন। বৃত্তের মাঝে তখনো রিয়াজ শীতে কাঁপছিলো,এবং ভয় পাচ্ছিলো। হুজুর ৩-৪ মিনিট কিছু মন্ত্র পড়ার পর আচমকা রিয়াজ বৃত্তের মাঝে শুয়ে যায়। এরপর হুজুর সাথে সাথে চোখ খোললেন। রিয়াজের মা বাবা এবং ইকবাল সাহেব শুধু দেখে যাচ্ছিলেন।

হুজুর তখনি আওয়াজ করে বললেন," কিরে,শুয়ে শুয়ে ঘুমাচ্ছিস নাকি। উঠ,আর ঢং করতে হবেনা তোর"। হুজুরের কথা শেষ হতেই রিয়াজ শোয়া অবস্থায় হাসতে শুরু করে। হাসিটা নরমাল কোনো হাসি নয়। ২ সেকেন্ড হাসছে,আবার ৩ সেকেন্ড চুপ। আবার ২ সেকেন্ড হাসছে,পর পর ৩ সেকেন্ড চুপ। হুজুর এইবার ধমক দিয়ে বললেন," কিরে তুই উঠবি নাকি আটা ছুড়ে মারবো। গা জ্বালিয়ে দিবো এখন"। কথাটা শুনেই আচমকা রিয়াজ শোয়া থেকে লাফ মেরে উঠে দাঁড়ায়। এবং হুজুরকে মা*রার জন্য এগিয়ে এলে বৃত্তের দাগে পা দিয়ে দেয়। দাগে পা দেওয়ার সাথে সাথে আবার রিয়াজ উল্টো লাফ দিয়ে বৃত্তের ভিতর ঢুকে যায়। এরপর কোনো কিছু না বলে আবার শুয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। এরপর,আবার আগের মতো ২ সেকেন্ড হাসে,৩ সেকেন্ড চুপ থাকে। হুজুর এইবার উনার সামনে থাকা একটা পাত্র থেকে আটা বের করে ছুড়ে মারলেন রিয়াজের গায়ে। রিয়াজের দেহে আটা স্পর্শ হতেই রিয়াজ শোয়া থেকে উঠে বসে যায়। এবং কান্না করতে শুরু করলেন। হুজুর তখন আবার বললেন," অভিনয় বন্ধ করে বল কেনো ওর পিছু নিয়েছিস। কি দোষ করেছে সে"। হুজুরের প্রশ্নে রিয়াজ এইবার কান্না থেকে হুট করে হাসতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ হাসাহাসি করে রিয়াজ গম্ভীর স্বরে বলল," আমার মেয়ে রিয়াজকে পছন্দ করে। রিয়াজকে আমি আমার মেয়ের জামাই বানাবো। তাকে নিয়ে যাবো আমি। যদি নিতে না পারি,তবে রিয়াজের পরিবারের সাথে তোকেও মে*রে ফেলবো"। কথাটা বলে রিয়াজ আবার বসা অবস্থায় ২ সেকেন্ড হাসে,৩ সেকেন্ড চুপ থাকে। হুজুর তখনি বলল," তোরা জ্বীন জাতি। মানুষের সাথে তোদের বিয়ে হয়না। ভালো করেই জানিস। আমি ভালোর ভালো বলছি রিয়াজের পিছু ছেড়ে দে। নয়তো তোকে বোতল বন্ধি করবো"। হুজুরের কথা শুনে হাসি থামিয়ে আবার রিয়াজ বলল," কিরে।তুই কেমন কবিরাজ। তুই তো জানিস ঐদিন রিয়াজকে আমরা নিয়ে গিয়ে আমার মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে ফেলেছি। বেচারা ৪ ঘন্টায় কিভাবে ৪ দিন পার করেছে নিজেও জানেনা। হা হা হা। আমি তো তাকে নিয়ে যাবোই। তুই আমাকে আটকাতে পারবিনা"। হুজুর এইবার রেগে গিয়ে বললেন," ওটা বিয়ে ছিলো না। রিয়াজের সম্মতি ছাড়া তুই কিভাবে তোর মেয়ের সাথে তাকে বিয়ে দিবি। বিয়ে পবিত্র জিনিষ। কারো ইচ্ছের বিরুদ্ধে কখনো বিয়ে হয়না"। হুজুরের কথা শুনে রিয়াজ বলতে লাগলো আবার," তাহলে তুই রিয়াজকে রাজি করা কবিরাজ। আমি সারাজীবন তোর গোলামি করবো"। হুজুর এইবার ধমক দিয়ে বলল," বুঝেছি। তোকে বোতল বন্দি করতেই হবে"। কথাটা বলেই হুজুর মন্ত্র পড়তে শুরু করলেন। এদিকে রিয়াজ চিৎকার দিয়ে বলতে শুরু করে," এই কবিরাজ এই।থাম তুই।ভুল করছিস কিন্তু। তোর পরিবারের কেও বাচ*বে না। রিয়াজকেও ম*রতে হবে "। কথাটা বলে রিয়াজ নিজের মুখে নিজে খামচাতে থাকে। নিজের নখ দিয়ে নিজের মুখের চা*মড়া র*ক্তাক্ত করে ফেলে। এইসব দেখে রিয়াজের মা প্রায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ততক্ষণে হুজুর একটা কাচের বোতল বৃত্তের সামনে রেখে রিয়াজের গায়ে আটা ছুড়ে মারেন। অদ্ভুতভাবে,সবার সামনে রিয়াজের শরীর থেকে একটা সাদা আলো বেরিয়ে এসে বোতলের ভিতর ঢুকে যায়। হুজুর সাথে সাথে বোতলের মুখ বন্ধ করে ফেলে। এদিকে বৃত্তের মাঝে রিয়াজ জ্ঞান হারিয়ে শুয়ে পড়ে। হুজুর জ্বীন বন্দি করা সেই বোতলের উপর লাল সুতা দিয়ে বেধে দেয়। সুতাগুলো সাধারণ সুতা নয়। মন্ত্রপাঠ করা সুতা। এরপর হুজুর বললেন,
- রিয়াজ এখন পুরোপুরি সুস্থ। শয়তান জ্বীন রক্ষা না পেয়ে রিয়াজের মুখে আ*ঘাত করেছে। ডাক্তারের কাছ থেকে কিছু ওষুধ নিয়ে খাওয়ালে ঠিক হয়ে যাবে। আর আমি এই বদ-জ্বীনকে মাটির নিচে পুতে আসবো। চিন্তার কিছু নেই।

রিয়াজের মা দৌড়ে গিয়ে রিয়াজকে জড়িয়ে ধরে। এবং কান্না শুরু করলেন। রিয়াজের বাবার চোখেও পানি টলমল করছিলো। হুজুরকে হাদিয়া হিসেবে টাকা দিতে চাইলে হুজুর টাকা নেয়না। উল্টো তিনি বললেন," আপনি আমাকে না দিয়ে,একটা গরু জবাই করে আল্লাহর নামে এলাকায় গরীবদের খাইয়ে দিন। আমার ভালো জ্বীনরাও আপনার সেই দাওয়াতে যাবে। তবে মনে রাখবেন,গরুর হাড্ডি এবং তাজা র*ক্তগুলো পরিস্কার একটি স্থানে রাখবেন। আমার জ্বীনরা ওটা খেয়ে নিবে"।

কি ভাবছেন। ঘটনা এখানে শেষ? হয়তো এখানে শেষ হলেই ভালো হতো। সেদিন কবিরাজকে বিদায় দিয়ে রিয়াজের বাবা বাসায় চলে আসেন।রিয়াজ সুস্থ হওয়ায়,রিয়াজের স্ত্রী তাজকিয়াও শশুর বাড়িতে আসে। যদিও পরে সব জেনে যায় তাজকিয়া। অন্যদিকে কবিরাজের কথা অনুযায়ী,রিয়াজের বাবা একটা গরু জ*বাই করে গরীবদের দাওয়াত খাইয়ে দেন।এবং হাড্ডির সাথে তাজা র*ক্ত একটি পরিস্কার প্লাস্টিকের উপর রেখে দিয়েছেন। সারা রাত ওগুলো ওখানে ছিলো। সকালে সবাই খেয়াল করেন,পুরো প্লাস্টিক একেবারে পরিস্কার। অর্থাৎ প্লাস্টিকের উপরে এক ফোটা র*ক্তের দাগও নেই। সবাই বুঝে যায় জ্বীনরা এসে খেয়ে গেছে। এইভাবে প্রায় ১ মাস কেটে যাবার পর একদিন রাতে হটাৎ রিয়াজের ঘুম ভেঙ্গে যায়। রুমে পুরো অন্ধকার। রিয়াজ তাকিয়ে দেখে,তাজকিয়া জানালা খুলে বাহিরে তাকিয়ে আছে। রিয়াজ মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে,রাত ০২:১৮ মিনিট। এতো রাতে তাজকিয়া জানালায় কি করছে ভেবে রিয়াজ উঠে বসে। তখনি সেই অদ্ভুত ঘ্রাণ রিয়াজের নাকে আবার ঢুকে যায়। এদিকে তাজকিয়া জানালার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কি যেনো বলে যাচ্ছে।

চলবে....?

গল্প- #ভিখারি_জ্বীন ( ০৬)

লেখক- #রিয়াজ_রাজ

Cp

14/10/2023
13/10/2023

গল্প- #ভিখারি_জ্বীন ( ০৫)

লেখক- #রিয়াজ_রাজ
------------------------------------
মোয়াজ্জিন এর কথায় সবাই বাহিরে অপেক্ষা করতে থাকে। আমি সবার পিছনে একটা কোনায় অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে এসব দেখে যাচ্ছিলাম। বুক ফেটে আমার কান্না বের হচ্ছিলো। কি হচ্ছে আমার সাথে এসব। ৪ ঘন্টার পথে আমি ৪ দিন কিভাবে পার করেছি।ওটা নিয়ে আমার মাঝে বেশি উত্তেজনা সৃষ্টি হচ্ছিলো। হয়তো ঐ ৪ দিন আমাকে কেও কোথাও নিয়ে গিয়েছিলো। জানিনা। কিন্তু আমার মনে ঐ ৪ দিন আর ভিখারিকে নিয়ে নানানপ্রকার প্রশ্ন জেগে যাচ্ছে।কেনো হচ্ছে আমার সাথে এসব। এই সব কিছুর রহস্য কি। আমি জানিনা। কিছু জানিনা।

এসব ভাবনা করে যাচ্ছে রিয়াজ। সেই মুহুর্তে বাড়ির উপর দিয়ে একটি দমকা বাতাস বয়ে যায়। মনে হচ্ছিল বাতাসটি শুধু রিয়াজদের বাড়ির উপর দিয়ে গেছে। অন্য কোথাও সে বাতাসের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।কারণ, বাড়ির বাহিরে থাকা গাছগুলো,এখনো সোজা হয়েই দাঁড়িয়ে রয়েছে। সবাই বাতাসের ভাব দেখে বুঝে গেছে, জ্বীন উপস্থিত হয়েছে।বাতাসটি যেনো,সোজা জাহাঙ্গীর সাহেবের বাসার ভিতরেই ঢুকে গেলো। কিছুক্ষণ সবাই বাহিরে অপেক্ষা করে। এবং এরপর কিছু না ভেবে সবাই তাড়াহুড়ো করে, দৌড়ে যায় জাহাঙ্গীর সাহেবের রুমের দিকে। জাহাঙ্গীর সাহেবের রুমে গিয়ে সবাই খেয়াল করলেন, জাহাঙ্গীর সাহেব বিছানায় সোজা হয়ে শুয়ে আছেন। কারো বুঝতে বাকি রইল না, জ্বীন জাহাঙ্গীর সাহেবকে ঠিক করে গেছেন। এখন সবাই মোটামুটি আইডিয়া করে নিচ্ছে, এইটা কোন ভালো জ্বীন ছিল। আবার অনেকে সন্দেহ করে যাচ্ছে, সেই খারাপ জ্বীনটাই জাহাঙ্গীর সাহেবকে ঠিক করেছেন। হয়তো সে শুধু রিয়াজের ক্ষতি চায়, এজন্য বারবার রিয়াজকে ক্ষতিগ্রস্ত করে যাচ্ছে। কিন্তু রিয়াজকে কেউ হেল্প করতে আসলে অথবা ক্ষতি করতে আসলে, সেই জ্বীন,সাথে সাথে রেগে যায়। জিনের উদ্দেশ্য হয়তো অন্য কোন কিছু। যা কারো ধারণার বাইরে। সবাই জাহাঙ্গীর সাহেবের সাথে, রুমে বসে কথাবার্তা বলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু জাহাঙ্গীর সাহেবের মুখ দিয়ে কোন আওয়াজ বের হচ্ছিল না। তিনিও রোকেয়া বেগমের মত চুপচাপ শুয়ে রইলেন।

( পুরো গল্পটি শেষ করার আগে, কেও এই গল্প কপি করে অন্য গ্রুপে আপলোড দিবেন না। যদি কেও করেন,তার আইডির ক্ষতি হতে পারে।)

সবার মাঝে দাঁড়ানো অবস্থায়, হঠাৎ রিয়াজ সেই অদ্ভুত গন্ধটি পেতে শুরু করল। রিয়াজের নাকে সেই গন্ধটি আসতে'ই, তার মাথাটা চক্কর দিয়ে ওঠে। যেন রিয়াজ এই মুহূর্তে ঘুরে পড়ে যাবে সেখানেই। যেই ভাবনা সেই কাজ, সাথে সাথে রিয়াজ সবার সামনে সেখানে মাথা ঘুরে মাটিতে পড়ে যায়। এরপর রিয়াজের বাবা সহ কয়েকজন ধরাধরি করে রিয়াজকে তার ঘরে নিয়ে গেলো। রিয়াজকে বিছানায় শুয়ে দেওয়ার পর, রিয়াজের মা হাত পাখা দিয়ে বাতাস করতে লাগলেন । যেহেতু বাড়িতে কারেন্ট নেই, তাই ফ্যান বন্ধ।

এই শীতের দিনেও রিয়াজকে বাতাস করার কারণ হয়তো আপনি বুঝতে পারলেন না। কারণ হচ্ছে, সবাই শীতে কাঁপাকাঁপি করলেও, রিয়াজের শরীর থেকে অঝোর ধারায় ঘাম বের হচ্ছিল। ভর দুপুরে ফুটবল খেললে, একটা মানুষ যেরকম ঘামিয়ে যায়। ঠিক তেমনভাবেই রিয়াজ ঘামাচ্ছে। এসব দেখে রিয়াজের মা রিয়াজকে বাতাস করতে লাগলেন। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে,ঘটনা ধীরে ধীরে শান্ত হয়নি।চারদিক যেনো আরো ভয়ানক হতে চলছে।
কিছুক্ষণ পর আবার ঘরের টিনে কেউ জোরে একটা লাথি মারে। আচমকা টিনের শব্দে, রিয়াজের মা এবং বাবা দুজনেই ভয় পেয়ে যায়। যেহেতু রিয়াজের বাবা বলেছিল, রিয়াজের ব্যাপারে কারো নাক না গলাতে। সেইজন্য রিয়াজকে বাড়িতে রেখে, সবাই বের হয়ে চলে গিয়েছিল। এখন শুধু ঘরের মধ্যে রিয়াজ, রিয়াজের ছোট ভাই এবং তার মা - বাবা। হঠাৎ ওই শব্দটা শুনে রিয়াজের বাবা দোয়া কালাম পড়তে শুরু করলেন। কিন্তু রিয়াজের বাবার মুখ থেকে যত কোরআনের আয়াত উচ্চারণ হচ্ছে, তত বেশি বাহিরে কেমন যেন খটখট শব্দ আওয়াজ শুরু হয়। এবং সেটি ধীরে ধীরে জোরে হতে লাগলো। প্রথম প্রথম মনে হয়েছিল ঘরের বাইরে কে যেন হাটাহাটি করছে।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, কয়েকজন লোক মিলে ঘরের বাইরে দৌড়াদৌড়ি করছে। রিয়াজের বাবা এবং মা খুবই ভয় পেয়ে যায় এইবার।

যদি এই ভাবে সব কিছু চলতো, তাহলেও হয়তো সব ঠিক থাকতো। কিছুক্ষণ পর সেই জ্বীন ঘরের ভেতরে আক্রমণ করতে শুরু করে দেয়। হঠাৎ টেবিলের উপর রাখা গ্লাসটা মাটিতে পড়ে যায় । আবার আলনায় রাখা কাপড়চোপড় কে যেন আলনা থেকে টেনে মাটিতে ফেলে দেয়। চোখের সামনে এমন অদ্ভুত ঘটনা দেখে রিয়াজের মা এবং বাবা প্রচন্ড রকমের ভয় পেয়ে যাচ্ছে । তাদের শিরদ্বারা দিয়ে ভয়ের মাত্রা বাড়তেই থাকে। কিন্তু ঘটনা তখনও কমেনি। রুমের মধ্যে এমন অস্বাভাবিক ঘটনা দেখে রিয়াজের বাবা আরো জোরে জোরে দোয়া কালাম পড়তে শুরু করে দিলেন। এবং তৎক্ষণাৎ টেবিলে থাকা একটি বোতল নিজে উড়ে এসে রিয়াজের বাবার কপালে আঘাত করে। যেন মনে হচ্ছিল টেবিলের পাশে কেউ দাঁড়িয়ে, বোতলটা হাতে নিয়ে রিয়াজের বাবার কপাল বরাবর নিক্ষেপ করেছে। বোতলের আঘাত খেয়ে রিয়াজের বাবা সাথে সাথেই দোয়া কালাম পড়া বন্ধ করে দেয়। যেহেতু কপালে আঘাত পেয়েছে, তাও এমন অলৌকিকভাবে। ভয়ে উনার মুখ থেকে আর কোন শব্দ বের হচ্ছিলনা। উনি শেষমেশ ভয়ে নিজেই কাঁপাকাঁপি করছিল। এইসব দেখে রিয়াজের মা জোরে এক চিৎকার দেয়।এরপর আল্লাহর নাম নিয়ে বললেন, " আল্লাহ তোকে ছাড়বেনা। শয়তান, কেন আমাদের জীবনে এসেছিস। আমরা কি ক্ষতি করেছি তোর"।

রিয়াজের মায়ের মুখে এমন কথা শুনে হঠাৎ রিয়াজ একটা ঝাঁকি দিয়ে উঠলো।এবং ঝাঁকি দেওয়ার সাথে সাথে সবাই রিয়াজের দিকে তাকায়। রিয়াজ শরীর ঝাকাতে ঝাকাতে হঠাৎ মুখ দিয়ে এক অদ্ভুত ভাষা বলতে লাগল। রিয়াজের মুখ থেকে এমন উল্টাপাল্টা কথা শুনে, বাকিরা ভয়ের উপর ভয় পেয়ে যাচ্ছে । সবাই রিয়াজের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। রিয়াজের শরীর অনেক দ্রুত কাপাকাপি করছিল এবং মুখ থেকে অন্য কোনো ভাষায় আওয়াজ বের হচ্ছে। রিয়াজের মা বাবা রিয়াজের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।কিছুক্ষণ পর রিয়াজের হাত-পা বাঁকা হয়ে যাচ্ছিল। ঘাড়টাও কেমন বাকা হয়ে, রিয়াজ বিছানার উপর গড়াগড়ি করতে লাগলো। তৎক্ষণাৎ রুমের মধ্যে এক ধমকা বাতাস বইতে শুরু করে। যেন বাইরের অনেক বড় তুফান হচ্ছে। সেই তুফানের, বাতাসের গতিবেগ ঘরের মধ্যে এসে প্রবেশ করছে। এরকম প্রায় এক মিনিট হওয়ার পর, হঠাৎ সেই বাতাস থেমে যায়। এবং রিয়াজের কাপাকাপিও বন্ধ হয়ে যায়। স্থির হয়ে শুয়ে পড়ে রিয়াজ। এরপর মুখ থেকে ধীরকন্ঠে রিয়াজ বলল," নিয়ে যাব।তোদের ছেলেকে আমি নিয়ে যাবো। কখনো ফিরে পাবিনা"। কথাটা বলে রিয়াজ নিশ্চুপ হয়ে যায়।

এই ঘটনার পর সেদিন রাতে আর কিছু হয়নি। রিয়াজের মা বাবা সারা রাত প্রচন্ড ভয়ে কাটিয়েছে। ভোর রাতে ফজরের আযান দিতেই রিয়াজের জ্ঞান ফিরে। রিয়াজের জ্ঞান ফিরেছে দেখে যখন রিয়াজের বাবা রিয়াজকে ধরতে যায়। তখন তিনি উপলব্ধি করেন রিয়াজের গায়ে প্রচন্ড জ্বর। রিয়াজের বাবা তখনো প্রচুর ভয় পেয়ে যাচ্ছিলেন। এরপর উনি রিয়াজের মা'কে বললেন," আমি নামাজে যাচ্ছি। আসার সময় ইকবাল ড্রাইভারকে নিয়ে আসবো। কিছুক্ষণের মধ্যেই ইমাম সাহেবের দেওয়া সেই কবিরাজের বাসায় যেতে হবে"।

কথাটা বলে তিনি মসজিদে চলে যান। এদিকে রিয়াজের মা রিয়াজের রুমে নামাজ পড়ে নেন।এরপর বোরকা গায়ে দিয়ে প্রস্তুতি নেয়। রিয়াজের বাবা মসজিদ থেকে ইকবাল ড্রাইভারকে নিয়ে আসলে, উনারা ৪জন'ই রওনা করেন ইমাম সাহেবের দেওয়া ঠিকানায়। অর্থাৎ কবিরাজ সাহেবের বাড়ির উদ্দেশ্যে। চারদিকে শীতকালের কুয়াশা, সকাল বেলার শীত এবং ঠাণ্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে। চারজন মিলেই সিএনজিতে ওঠে রওনা করেছেন। কবিরাজ সাহেবের বাড়ির দিকে। এদিকে তাদের অবস্থা খারাপ। চারপাশে অনেক শীতলতার কারণে, ঠান্ডা লেগে যাচ্ছে সবার। এদিকে রিয়াজের গায়েও প্রচন্ড জ্বর ছিল। সেইজন্য রিয়াজ অনেক বেশিই কাপাকাপি করছিল। একদিকে ঘামাচ্ছে, অন্যদিকে শীতে কাঁপাকাঁপি করছে।দেখতে দেখতে ঠিক তখনি, তাদের সামনে ঘটে যায় একটি ভয়ানক ঘটনা।

শীতকাল, সকালবেলা ফাঁকা রাস্তা। আশেপাশে কোন গাড়ি নেই। ফাঁকা রাস্তার মাঝে তাদের গাড়ি যাচ্ছে। হঠাৎ তাদের ঠিক সামনে, একটা কুকুর চলে আসে। এবং সে রাস্তার ঠিক মাঝখানে দাডিয়ে থাকে। ইকবাল সাহেব কুয়াশার জন্য দূর থেকে না দেখলেও,যখন কাছ থেকে কুকুরকে দেখে। তৎক্ষণাৎ তিনি গাড়ির ব্রেক ধরে ফেলে। কিন্তু লাভ হয়নি,গাড়ি এতো বেশি গতিতে ছিলো যে,সেই কুকুরের গায়ে গাড়ি উঠে গেছে।আর কুকুরের দেহে লেগে,গাড়ি একটা ঝাকিও মেরেছে। ইকবাল সাহেব ভয়ে গাড়ি থেকে নামে। কুকুরটি মারা গেছে কিনা,তা দেখার জন্য। উনার সাথে রিয়াজের বাবা'ও নেমে যান। অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে,রাস্তায় কোনো কুকুর নেই। রিয়াজের বাবা ধারণা করে নেন,এইটা কুকুর ছিলো না। উনারা আবার দৌড়ে গাড়িতে উঠে যান। ইকবাল সাহেব তখনি খেয়াল করেন,উনার গাড়ির স্টান্ডে র*ক্ত লেগে আছে। ভয়ে ইকবাল সাহেব এইবার কাপতে শুরু করে। রিয়াজের বাবা সাথে সাথে দোয়া পড়া শুরু করলেন,এবং মনে মনে বললেন," আল্লাহ। আমরা যাতে কবিরাজের বাড়ি অব্দি যেতে পারি। তুমি আমাদের সহায়ক হও"।

চলবে....?

গল্প- #ভিখারি_জ্বীন ( ০৫)

লেখক- #রিয়াজ_রাজ

[ আপনারা সবাই জানেন আমার লেখা একটি বের হতে যাচ্ছে খুব দ্রুত। তাই বইয়ের লেখা আর আপনাদের এই গল্প লেখায় সময় এদিক-সেদিক হয়ে গেছে। তবুও আমি আপনাদের জন্য লিখে যাচ্ছি। আপনারা আছেন বলেই রিয়াজ রাজের অস্তিত্ব আছে।আপনারা ছাড়া আমি শূন্য। এই ঘটনা বইয়ের লেখার জন্য তাড়াহুড়ো করে শেষ করতে চেয়েছি। কিন্তু তাতে আপনারা গল্পের মূল অংশগুলো মিস করে ফেলতেন। তাই সব খুটিয়ে লিখে যাচ্ছি। আর অনেকে প্রশ্ন করেছেন,এটি সত্য কি না। হ্যঁ, এটি সত্য।তবে পুরোপুরি নয়। এই গল্পটির ৮০% বাস্তবে হয়েছে। পাশে থাকুন,পাশে রাখুন আমাকে]

Address

Shariakandi

Telephone

+8801761340886

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when TESTY FOOD posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to TESTY FOOD:

Videos

Share