
05/11/2024
নোমোফোবিয়া কী? এ থেকে উত্তরণের কোন পথ আছে কী?
নোমোফোবিয়া শব্দটি এসেছে No Mobile Phobia থেকে। অর্থাৎ, মোবাইল ফোনের অনুপস্থিতিতে মানুষ যে ভীতি অনুভব করে তাকে নোমোফোবিয়া বলে।
মোবাইল ফোন সব সময় ঠিক জায়গায় আছে কিনা তা নিয়ে মন সব সময় সতর্ক থাকে। মোবাইল হারানো ভয় থেকে মনের মধ্যে জন্ম নেয় এক সমস্যা। গবেষকেরা মোবাইল ফোনের সঙ্গে যোগাযোগ হারানোর এই ভয়জনিত সমস্যার নাম দিয়েছেন ‘নোমোফোবিয়া’; যার পুরো নাম ‘নো মোবাইল-ফোন ফোবিয়া’। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের ৫৩ শতাংশ এবং ২৯ শতাংশ ভারতীয় তরুণেরা এ রোগের শিকার। ৫ বছর আগেও যে রোগের অস্তিত্ব কল্পিত ছিল না, আধুনিকতার সে রোগ নিয়ে দেশে-বিদেশে চিন্তিত মনোবিজ্ঞানী-মহল।
আসুন নোমোফোবিয়া বা ফোন হাতছাড়া হওয়ার ভীতি এর ক্ষতিকর প্রভাব এবং তা মোকাবিলা করার উপায়গুলো জেনে নিন।
আপনি নোমোফোবিয়ায় আক্রান্ত যদি আপনি:
১. রাতে প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর আপনার ফোন চেক করার জন্য জেগে ওঠেন।
২. দুপুরের খাবার বা রাতেও খাবার খাওয়ার সময়ও যদি আপনি ফোন চেক করেন।
৩. ফোনের ব্যাটারির চার্জ শেষ হয়ে গেলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং পুনরায় চার্জ না দেওয়া পর্যন্ত শান্ত হতে পারেন না।
৪. ফোনে কোনো সিগনাল না থাকলে আপনার এমন অনুভূতি হয় যে আপনার জীবনটাই বুঝি বৃথা।
৫. আপনি যত ব্যস্তই থাকেন না কেন ফোনে কল আসলে আপনি তা রিসিভ করার জন্য মুখিয়ে থাকেন।
৬. আপনি এমনকি ওয়াশরুমেও ফোন নিয়ে যান।
৭. এই লেখাটি পড়ার সময়ও আপনি অন্তত দুইবার আপনার ফোন চেক করেছেন।
এটি ধ্বংসাত্মক কারণ:
১. এটি উদ্বেগ তৈরি করে। ফোন থেকে দূরে থাকলে এই রোগে আক্রান্তরা উদ্বেগে ভোগেন। যার ফলে উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া এর ফলে মনোযোগও নষ্ট হয়। যার ফলে কর্মস্থলে উৎপাদনশীলতাও কমে আসে।
২. সময়ের অপচয় করে। সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে মাল্টিটাস্কিং বা একই সময়ে একাধিক কাজ করা ক্ষতিকর। কারণ এভাবে তথ্য ধারণ ও প্রসেস করা যায় না। অনবরত ফোন চেক করলে সময়ের অপচয় হয় প্রচুর।
৩. ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। ফোন থেকে যে নীল আলো নিঃসরণ হয় তা মস্তিষ্কে এই সঙ্কেত দেয় যে এখন ঘুম থেকে জেগে ওঠার সময়। যা ঘুমের জন্য সহায়ক মেলাটোনিন হরমোনকে দমণ করে।
৪. নোমোফোবিয়ায় আক্রান্ত লোকেরা ত্বকের সমস্যায়ও আক্রান্ত হন। অনবরত ফোনের সংস্পর্শে থাকার ফলে ব্রণ, অ্যালার্জি এবং ডার্ক স্পট পড়তে পারে।
৫. পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ককেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে কথা বলার সময় ফোন চেক করাটা নিষ্ঠুর আচরণ বলে গণ্য করা হয়। কর্মক্ষেত্রেও এই ধরনের কাজ করলে আপনাকে উদাসীন ভাবা হতে পারে।
এ থেকে মুক্তির উপায় কী:
১. ঘুমানোর আগেড় ফোন বন্ধ করে রাখুন এবং বিরামহীনভাবে ঘুমান।
২. নোটিফিকেশন রিসিভ কমিয়ে রাখুন। নানা অ্যাপ থেকে প্রতিনিয়ত নোটিফিকেশন আসলে তা আপনার মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটাবে।
৩. অপ্রয়োজনীয় অ্যাপগুলো বন্ধ করে রাখুন। কারণ সেগুলোও মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটায়।
৪. ফোনে সময় চেক করার বদলে হাতঘড়ি পরুন।
৫. নিজের একটি ফোন ফ্রি জোন তৈরি করুন। এবং কাজের সময় ফোন ব্রেক নিন।
৬. ফোনের চেয়ে বরং পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে বেশি সময় কাটান। আর যখন ফোন সঙ্গে থাকবে তার ব্যবহার সীমিত করুন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যারা নোমোফোবিয়ায় আক্রান্ত হন তারা মুখোমুখি কীভাবে একজন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলতে হয় তা ভুলে যান।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস