19/03/2023
তামাকের ভয়াবহতা জেনেও রংপুর অঞ্চলের কৃষকদের তামাক আবাদ থেকে মুখ ফেরানো যাচ্ছে না। অন্য ফসলে লোকসান হওয়ায় কৃষকরা ঝুঁকছেন তামাক চাষে। দিনে দিনে বাড়ছে এ অঞ্চলে তামাক আবাদের জমি। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করতে মাঝে মধ্যে সভা, সেমিনার হয়। কিন্তু বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই হয় না।রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে এবার রংপুরের ৮ উপজেলায় তামাক চাষ দেখানো হয়েছে মাত্র ২ হাজার ৫ শত ২২ হেক্টর জমিতে।কিন্তু এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে এবার তামাক আবাদের ব্যাপকতা দেখে। ধারণা করা হচ্ছে, রংপুরে তামাক চাষ হয়েছে কমপক্ষে ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে। রংপুর সদর উপজেলার মমিনপুর,হরিদেবপুর,চন্দনপাট ইউনিয়নে।সরেজমিনে দেখা যায়,বাড়ি বাড়ি তামাকের আবাদ। বেশি লাভের আশায় কৃষকরা তামাক চাষ করছে।তামাকের ভয়াবহতা আছে জেনেও বেশি লাভের আশায় দিন দিন বাড়ছে তামাক চাষের জমি।রংপুর সদর উপজেলার মমিনপুর ইউনিয়নের কৃষক মনতাজ আলী এবার প্রায় ১৫০ শতক জমিতে তামাক চাষ করেছেন। তিনি বলেন, তামাকের তেমন রোগ-বালাই হয় না। কায়ো হামাক তামাক আবাদ কইরবার নিষেদ করে না।নগদ টাকার জন্যে হামরা তামাক চাষ করুচি। আলু আবাদ করিয়া খালি লোকসান।দুই টাকা কেজি আলু তাও বিক্রি নাই।আর তামাক চাষ করলে হামাক তেল নাগায়। কম্পানির লোক বাড়ি থাকি তামাক কিনি নিয়া যায়।ওই এলাকার ছোট মটুকপুর গ্রামে কৃষক এমদাদুল হক বলেন, মনে হয় তামাকোত বিষ আছে। ওই কারণে শরীরের টেম্পার জিনিসটা থাকে না। ক্লান্ত মনে হয়। মাঝে মধ্যে দম বন্ধ হয়া আইসে। কষ্ট বেশি হইলেও লাভের জন্যে হামরা তামাক আবাদ করুচি। একই ধরনের কথা বলেন, কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ ইউনিয়নের চরাঞ্চলের কৃষক মোস্তফা ও আমিনুল ইসলামসহ অনেকেই।জানা যায়,রংপুরে ব্যাপকহারে তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণসহ তামাক নির্ভর কারখানা গড়ে ওঠায় জনজীবন বিপন্ন হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে।এছাড়া বিভিন্ন বিড়ি কারখানায় শিশু ও নারী শ্রমিকরা শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের জটিল চর্ম রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের এক পরিসংখ্যানে জানা যায়,রংপুরে তামাক কারখানা থেকে বিষাক্ত ধুলি কনা ও খালি পেটে থেকে অধিকহারে ধূমপানের কারণে বার্জাস নামে এক ভয়াবহ রোগে প্রতিনিয়তই লোকজন আক্রান্ত হচ্ছে।তামাক চাষ থেকে দূরে থাকতে শহর ভিত্তিক প্রচার প্রচারনা থাকলেও প্রত্যন্ত গ্রামে সাধারণ মানুষের কাছে এসব বার্তা পৌঁছে না। আর পৌঁছালেও তামাক চাষীদের কাছে আর্থিক বিষয়টিই বেশি গুরুত্ব পায়। তামাক আবাদে আর্থিকভাবে কৃষকরা যে হারে লাভবান হয়, অন্য কোন ফসলে তা হয় না।তামাক মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে গত কয়েক বছর ধরে তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করে আসছে বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, তামাকের পরিবর্তে আলু,গম,ভুট্টা,সরিষাসহ অন্যান্য ফসল আবাদের পরামর্শ দেওয়া হলেও কৃষকরা এসব শুনছে না।