23/01/2024
কবুতরের শীতের বার্তা এবং আমাদের করনীয়
আমাদের অনেক ভাল লাগার শীত, ভাল বাসার শীত ! হারাবার ও শীত।
শীত আসন্ন,অনেকেই আতংকিত কি হবে?
শীত আসার দুই মাস আগেই কবুতরের আলাদা যত্ন নেওয়া দরকার, কারন শীতে কবুতরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। সহজেই দুর্বল হয়,ছোটো খাটো অসুখে মারা যায়।
হা এইটা বাধ্যতামূলক নয়, আপনি ভাল লাগ্লে করবেন না হলে নয়।
কেন প্রয়োজন?
অনেক সময় অনেক রোগের জীবানু শরীরে সুপ্ত অবস্থায় থাকে, এবং কবুতরকে ভিটামিন এর অভাব জনিত রোগ, ক্রিমি মুক্ত ও সঠিক দৈহিক বৃদ্ধি নিশ্চিত রাখতে মাসিক কোর্সের গুরুত্ব অনেক। নতুবা হটাৎ রোগের আক্রমনে অনেক বড় ক্ষতি হতে পারে আপনার ভালবাসার কবুতরের।
আমরা যারা কবুতর পালি তাদের কাছে শীত আনন্দের এবং কষ্টের।
গিরিবাজ ও উড়ানোর কবুতর এর করণীয়ঃ
১) যারা গিরিবাজ পালি তারা অপেক্ষায় থাকি কবে শীত আসবে। অনেক কষ্ট করে কবুতর পালি সারা বছর । যা যারা না পালে তারা বূঝবে না।
কেউ উড়ানোর জন্য, কেউ টস করে,কেউ রেস করে। শিতে মজাই আলাদা।
আমাদের উড়ানোর কবুতর বেশীর ভাগ সময় ই আটকা থাকে, অনেকেই বা ২/১ জন সব সময় ছেড়ে রাখে।
অনেক বড় বড় কবুতর পালক আছেন এক একজন এর এক এক পদ্ধতি।
তারা তাদের সিস্টেম এ পালে যা অনেক গোপোণ।
তারা অনেকে শীত আসার ৩ মাস আগেই কবুতর বৃষ্টি তে ভিজিয়ে কবুতর আটকে দেয়,আর কবুতরের খাবার পাণিতে অল্প খাবার লবণ যেমন ১ লিটার এ ২ গ্রাম দিয়ে দেয় ।
তখন কবুতর তার শরীরের পালক পরে যায় বা পালটায় নতুন পালক গজায়।
অনেকে রাজ পর বা মূল পালক ১০ টি করে তূলে দেয় তাতে একই সময় সব পালক ঊঠে (যদিও এটা করা ঠিক না অনেক সময় কবুতরের ডানা থেকে রক্ত আসে)। সব কবুতর একই রকম অবস্থায় থাকে, তাতে উড়তে সুবিধা হয়।
না হয় অনেক সময় ভালো কবুতর পালক সমস্যার জন্য বাজীতে দেওয়া যায় না।
বা ঊড়ার সময় পরে যায় বা হারিয়ে যায় বা কাচা পাখ থাকলে পাখ ফেটে রক্ত বের হয়।
একটা শীত সে আর উড়তেই পারে না।
যাদের কবুতর আটকা থাকে বা আছে তারা এখন থেকেই বাহিরে ছেড়ে রোদ এ রাখছেন। কবুতর হাল্কা করার জন্য।
১০/১৫ দিন নর্মাল ছারা থাকলে ওরা আস্তে আস্তে হাল্কা হবে। নিজেরাই অল্প করে ঊড়ে ফ্রি হবে।
তার পর অল্প করে নারা দিয়ে দিয়ে ওদের ওড়াণো শুরু করে।
শীত চলে আসলে খেয়াল রাখতে হবে, শীতে কবুতরের জন্য উত্তরের বাতাস ক্ষতিকর।
অনেকেই অবহেলা করে বা কবুতর ধরার জন্য বিকাল বা সন্ধ্যা পর্যন্ত কবুতর বাহিরে রাখে তখন বিকালের উত্তরের বাতাস কবুতরের গায়ে লেগে ঝীমায় অসুস্থ হয় ,শীতে কবুতর অবশ্যই ১-৩ টার মধ্যে আটকাতে হবে।
তাই হাল্কা পর্দা, সুতী কাপড়ের বা ছালার চট দিতে হবে যাতে হাল্কা বাতাস চলাচল করে ।
অনেকেই ট্রিপাল বা প্লাস্টিক এর ভারি পর্দা দেন যা ক্ষতিকর অনেক সময় এতে গ্যাস জমে (কবুতরের টয়লেটে এমোনিয়া গ্যাস সৃষ্টি হয়) কবুতর অসুস্থ হয় বা মারা যায় ।
২) যারা শখ করে ফেন্সি বা শৌখিন কবুতর পালেন তারা ও সারা বছর যা ই আনন্দে থাকে, শীতে পরে যায় সবাই দুশ্চিন্তায়।
প্রতি শিতের আগমনের আগে ( শীত এবং গরমের মাঝা মাঝি সময় ) এবং শীত আসার পরে যে কবুতরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে সেইগুলা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় ।
অনেকেরই আমরা শূনতে পাই আহাজারি আমার সব শেষ।
যেগুলো আমরা শুধুমাত্র এই শীতে খাওয়াতে পারিঃ
১) ভিটামিন বি-
বিকোজিন আই সিরাপ - Bicozin I Syrup
উপাদান :
আয়রণ,থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, পাইরিডক্সিন, নিকোটিনামাইড, জিংক -B1,B2,B6।
নির্দেশনা :
আয়রণ, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স এবং জিংক সমৃদ্ধ।
খাওয়ানোর নিয়মঃ
হাফ লিটার বিশুদ্ধ পানির সাথে 2ml সিরাপ মিশিয়ে কবুতর সাধারণ পানির মত পরিবেশন করবেন অবশিষ্ট দ্রবণ 4 ঘন্টা পর ফেলে দিবেন।
3 বেলা।
5-7 দিন।
২) ক্যাভিক-সি ক্লাস
Cavic-C PLUS
মাল্টি ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ।
এফারভেসেন্ট ট্যাবলেট।
উপাদান :
ক্যালসিয়াম ল্যাকটেট গ্লুকোনেট, ক্যালসিয়াম কার্বনেট, এসকরবিক এসিড ভিটামিন সি, ভিটামিন-ডি, ভিটামিন-ডি৩।
নির্দেশনা:
অস্টিওপরোসিস এর সহযোগী চিকিৎসায় ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-সি এবং ভিটামিন-ডি এর বর্ধিত চাহিদায়, যেমন-কবুতরের পেটে ডিম কবুতরের বুকে ক্রপ মিল্ক, কবুতরের বাচ্চা দ্রুত বর্ধনকালে এবং কবুতর বৃদ্ধকালে অস্টিওমেলাসিয়ায় ভিটামিন-ডি এবং ক্যালসিয়ামের ঘাটতিজনিত অবস্থায় বিশেষ করে কবুতর খাঁচা বা ধাপ্রিতে অবস্থানরত বয়োবৃদ্ধ অসুস্থ ক্ষেত্রে, ঠাণ্ডা ও ইনফ্লুয়েঞ্জায় সহযোগী চিকিৎসা হিসেবে।
খাওয়ানোর নিয়মঃ
একটি ট্যাবলেট কেচি দিয়ে সমান 7 টুকরা করে এক টুকরা হাফ লিটার বিশুদ্ধ পানির সাথে মিশিয়ে কবুতরকে সাধারণ পানির মত পরিবেশন করবেন অবশিষ্ট দ্রবণ 4 ঘন্টা পর ফেলে দিবেন।
3 বেলা।
7 দিন।
এই শীতে কবুতরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য
৩) Priovit Tablet
কেচি দিয়ে সমান 2-3 টুকরা করে সকালে ও রাতে এক টুকরা করে খাইয়ে দিবেন হা করে।
7-10 দিন।
৬০-৯০ দিন পর পর নিয়ম শিখে কৃমির ঔষধ খাওয়াবেন।
৪) লেবু, দেশি চিনি, বিট লবণ মিশ্রনঃ
এই মিশ্রণ কবুতর এর রোগ প্রতি রোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
১ লিটার বিশুদ্ধ পাণিতে
১ চা চামচ লেবুর রস,
২ চামচ দেশি চিনি,
এক চিমটি বিট লবণ মিশিয়ে কবুতরকে সাধারণ পানির মত পরিবেশন করবেন।
অবশিষ্ট দ্রবণ 5 ঘন্টা পর ফেলে দিবেন।
২ বেলা।
4-5 দিন।
৫) বনাজি ওষুধঃ
বহেরা,
হরতোকি,
আমলকি,
চিরতা
এই ৪ টা ভেষজ উপাদান শুকনা পাওয়া যায় বাজারে।
উপাদানগুলো ১ লিটার পানিতে ৪/৫ পিছ দিয়ে ১ দিন আগে ভিজাবেণ এবং ঐ পানি কবুতর কে খাওয়ান।
এগুলো কবুতর এর কৃমি, হজম এর সমস্যা, কবুতর কে সতেজ রাখার কাজ করবে, হরমোন বৃদ্ধি করে।
3 বেলা।
4-5 দিন।
শীতে ঊড়াণো কবুতরের খাবারঃ
খাবারে কিছু বাড়তি আয়োজন থাকা দরকার যারা এমনি পালি, বা উরাই বা রেস করি।
সাধারণত নীচের খাবার দিতে পারেন উড়ানোর কবুতর কে ।
ধান ৫০%
মাছিগম ১০%
ডাবলী ২০-৩০/%
ছোলা বূট ১০/%
শীতের জন্য বাড়তি আয়োজন অন্তত ১-২ % প্রয়োজন মণে করলে দিতে পারেন নীচের যেকোণ ১-২ আইটেম। তবে তেল জাতীয় খাবার দিলে কবুতর দৌড়ায় বা মোচড়ায় কিন্তু উপড়ে ভাগে কম।
(অনেকে ১৫-২০ আইটেম ও খাওয়ায়)
তিষি
সরিষা (মানুষের খাবার উপযোগী লাল সরিষা)
কূষূম ফুলের বীজ
সূর্য মূখী বীজ
তেল জাতিও খাবার শরিরে চর্বি তৈরি করে যা শরির গরম রাখতে সাহায্য করে, প্রচণ্ড শীতের তীব্রতা থেকে রক্ষায় সাহায্য করে।
শীতে ঊড়াণো ছারা বা শৌখিন কবুতরের
প্রোটিন জাতীয় খাবারঃ
খোসাসহ মুগডাল,
খোসাসহ মাসকলাই ডাল,
হেলেন ডাল,
খোসাসহ মুসুরির ডাল,
খোসাসহ এংকর ডাল,
খোসাসহ ছোলা বুট,
খোসাসহ সয়াবিন।
কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারঃ
খোসাসহ ডাব্লি,
বিভিন্ন ধরনের বাজরা।
মাছিগম
কাল মোটর
চার ধরনের মিলেট, ক্যানারিসিড।
তৈলবীজ জাতীয় খাবারঃ
কবুতরের শরিরে চর্বি তৈরি করে যা শরির গরম রাখতে সাহায্য করে। প্রচণ্ড শীতের তীব্রতা থেকে রক্ষায় সাহায্য করে।
যেমন-
কুসুম ফুলের বীচ,
ভালো মানের সূর্যমুখী ফুলের বীচ,
মানুষের খাবার উপযোগী লাল সরিষা।
শীতের জন্য সুষম অনুপাতঃ প্রোটিন+কার্বোহাইড্রেট+
তেলবীজ
৬০%+৩০%+১০%
ঔষধি গুণাগুণ সমৃদ্ধ কিছু খাবারঃ
কালোজিরা,
মেথি, জাউন,
তিসি।
৫% পার্সেন্ট মিশিয়ে দিবেন
এতে করে কবুতর অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত রোগবালাই থেকে মুক্তি পাবে।
বাজারের মিকচার খাবার খাওয়াবেন না।
আলাদা আলাদা সংগ্রহ করে একসাথে মিশিয়ে কবুতরকে পরিবেশন করবেন।
খাবারের পর
প্রতিদিন এক থেকে দুই বেলা ভালো মানের গ্রিট দিবেন।
গ্রিট এর সাথে (ভিটা ব্লক) সাদা মিনারেল মিশিয়ে দিবেন।
পাওয়া যাবে পশুপাখির খাবারের দোকানে
অথবা কবুতরের খাবারের দোকানে।
একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, ভালোর শেষ ণেই। অনেকেই ঘি,মাখন, ফলের রসও খাওয়ায়। কিন্তু আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী এবং সাধারণ খাবারই দেওয়া ভালো।
শীত ব্যতীত সারা বছরই অনেকে তেল জাতীয় বা মিকচার খাবার দেন যা কবুতরের সুস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি কর।
Akash Pigeon Loft