20/01/2023
অমরাবতী সারাহ্, তোমার জন্যে ভালবাসার দুফোটা অশ্রু—
মানুষ তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনে কতো কিছুই না করতে চায়। কতোই না কীর্তি গড়তে চায়। কেউ চায় সাহিত্য রচনা করে নাম করবে, কেউবা চায় আবিস্কার করে চমকে দেবে সবাইকে, কেউবা চায় টাকার পাহাড় গড়বে। সারাহ ইসলাম কী চেয়েছিল জানি না, তবে তাঁর জীবন থেমে গেছে মাত্র বিশ-এ। বিশ বছর সুন্দর একটি বয়েস। এই সুন্দর বয়েস থেকেই সে ঝড়ে গেছে। সে আর বড় হবে না। তাঁর আর বয়েস বাড়বে না। তবে এই এতটুকুন ছোট্ট জীবনে সারাহ সত্যিকার অর্থেই বিরাট কীর্তি গড়ে দিয়ে গেল। যেমনটা সুকান্ত তাঁর ছোট্ট জীবনেই গড়ে গিয়েছিলেন বিরাট সাহিত্যকীর্তি।
এ দেশে মরণোত্তর চক্ষুদানের কথা জেনেছি এতদিন। এবার মরনোত্তর কিডনি দানের বিষয়টিও সামনে এল। তরুণী সারাহ ইসলামের দান করে যাওয়া দুটি কিডনি এরইমধ্যে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে দুজন রোগীর দেহে। শুধু তাই নয়, সারাহর দুটি কর্নিয়া দুজন ব্যক্তির চোখের আলোও ফিরিয়ে দিয়েছে। মানুষকে কিডনি দানে উৎসাহিত করতে প্রথম পথটি সারাহই দেখিয়ে গেল। এই কীর্তি তাঁর জন্মকে সার্থক করেছে। সে বহুকাল এ দেশের মানুষের মনে থাকবে।
এখন থেকে এ দেশে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের প্রসঙ্গ উঠলেই সারাহ ইসলামের নাম মানুষের মনে পড়বে। ২০ বছর বয়সী সারাহ রোগশয্যায় থেকে নিজের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অন্যকে দান করার ইচ্ছা মাকে জানিয়েছিলেন। সে-ই ইচ্ছাই পূরণ করেছে তাঁর পরিবার।
সারাহর মা শবনম সুলতানা বলেছেন, সারাহ সত্যি সত্যি এক স্বর্গীয় সন্তান ছিল। সে যেখানে যেত, সে তাঁর ব্যবহার দিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করে রাখত।
মাত্র বিশ বছর বয়সে জীবনপথের যাত্রা থেমে গেছে সারাহ ইসলামের। সদ্য কিশোরী থেকে তরুণী হয়ে ওঠা মেয়েটি, কতোই না স্বপ্ন ছিল তাঁর। কিন্তু সেসব স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে গেছে। কিন্তু সে হয়তো জেনে গেল না যে, সে এমন একটি কীর্তি রচনা করে গেল, যা রয়ে যাবে যুগ যুগ ধরে। সে থাকবে সবার অন্তরে, সে থাকবে তাঁর না-থাকা জুড়ে।
এমন অর্জন সবার কপালে জোটে না। মানব হয়ে জন্ম নিয়ে মানবতার কল্যাণ সাধন সবার দ্বারা সম্ভব হয় না। কিন্তু সারাহ সেই গৌরব অর্জন করেছে। এই অর্জন অন্য সকল অর্জন থেকে অনেক অনেক বেশি বড় অর্জন।
সারাহর দ্বিতীয় জীবনের সর্বোচ্চ প্রশান্তি কামনা করছি। সৃষ্টিকর্তা তাঁর সর্বোচ্চ পুরুস্কার নিশ্চিত করুন। আমিন।
Lutfor Rahman Himel