07/04/2023
*প্রতিদিন কুরআন পড়তে পারা বিরাট নিয়ামত এবং সৌভাগ্যের বিষয়। আজকের লেখাটি কুরআন অধ্যায়নে সবাইকে অত্যন্ত অনুপ্রাণিত করবে ইনশাআল্লাহ।* 🔰💗🔰💗🔰💗
(১) কুরআনওয়ালারা আল্লাহর বিশেষ লোক!
আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মানুষের মধ্য হতে আল্লাহর কিছু বিশেষ লোক রয়েছে।’’ তাঁকে বলা হলো, ‘আল্লাহর সেই বিশেষ লোকগুলো কারা?’ উত্তরে তিনি বলেন, কুরআনওয়ালারাই (কুরআন বুঝে পাঠকারী ও সে অনুযায়ী আমলকারী) হলো আল্লাহর বিশেষ লোক।” [ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ: ১২২৭৯; সহিহুল জামে’: ২১৬৫; হাদিসটি সহিহ]
(২) কুরআনের ছাত্র-শিক্ষক হওয়া:
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি, যে কুরআন শিখে এবং অন্যকে তা শিক্ষা দেয়।” [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৫০২৭]
(৩) কুরআন সুপারিশকারী হবে।
আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “তোমরা কুরআন তিলাওয়াত করো, কারণ কুরআন কিয়ামতের দিন তার সাথীর (তিলাওয়াতকারীর) জন্য সুপারিশ করবে।” [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ১৭৫৯]
(৪) কুরআন মুমিনদের অন্তর দৃঢ় করে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, ‘‘বলুন, এটিকে (কুরআনকে) পবিত্র আত্মা (জিবরিল) আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে নিশ্চিত সত্যসহ অবতীর্ণ করেছেন, যাতে তিনি মুমিনদেরকে দৃঢ়-অবিচল রাখেন আর এটি মুসলমানদের জন্য হিদায়াত (সঠিক পথ-নির্দেশ) ও সুসংবাদ।’’ [সুরা নাহল, আয়াত: ১০২]
(৫) কুরআন শিফা (আরোগ্য) এবং রহমত।
আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজিদে বলেন, ‘‘আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি, যা মুমিনদের জন্য শিফা (আরোগ্য) এবং রহমত, কিন্তু এটি কেবল জালিমদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে।’’ [সুরা ইসরা, আয়াত: ৮২]
(৬) কুরআনি মজলিসের মহান মর্যাদা:
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন কোনো সম্প্রদায় আল্লাহর কোনো ঘরে সমবেত হয়ে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে এবং পরস্পর তা নিয়ে আলোচনা করে, তখন তাদের উপর শান্তি বর্ষিত হয়, (আল্লাহর) রহমত তাদের ঢেকে নেয়, ফেরেশতাগণ তাদের ঘিরে রাখে এবং আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী ফেরেশতাদের কাছে তাদের প্রশংসা করেন।’’ [ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৪৫৫; হাদিসটি সহিহ]
(৭) প্রতিটি হরফ পাঠ করলেই ১০ নেকি!
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করবে, তার জন্য রয়েছে একটি নেকি। প্রতিটি নেকি দশটি নেকির সমান। আমি বলি না যে, ‘আলিফ-লাম-মিম’ একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মিম একটি হরফ।” [ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ২৯১০; হাদিসটি সহিহ]
(৮) কুরআন পড়তে কষ্ট হলে ডাবল নেকি!
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল কুরআনে অভিজ্ঞ ব্যক্তি সম্মানিত পুণ্যবান ফেরেশতাদের সাথে থাকবে। যে ব্যক্তি তিলাওয়াত করতে গিয়ে আটকে যায় এবং এটি (তিলাওয়াত করা) তার উপর কষ্টকর হয়ে পড়ে, তার জন্য দু’টি প্রতিদান রয়েছে (প্রথমটি তিলাওয়াতের, দ্বিতীয়টি কষ্টের)।” [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ১৭৪৭]
(৯) কুরআন পাঠককে জান্নাতে নিয়ে যাবে।
নবিজি বলেন, ‘‘(কুরআন) সত্যায়নকারী প্রতিবাদী। যে ব্যক্তি তাকে সামনে রাখবে, সেই ব্যক্তিকে সে পথ দেখিয়ে জান্নাতে নিয়ে যাবে।’’ [ইমাম ইবনু হিব্বান, আস-সহিহ: ১২৪; সহিহুত তারগিব: ১৪২৩; হাদিসটি সহিহ]
(১০) কুরআনওয়ালাকে ঈর্ষা করা যায়:
নবি সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘দুই ব্যক্তি ব্যতীত আর কাউকে ঈর্ষা করা যায় না। (এক সেই ব্যক্তি) যাকে আল্লাহ কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন এবং সে তা দিনে ও রাতে তিলাওয়াত করে। আর তা শুনে তার প্রতিবেশী বলে, ‘হায়! আমাকে যদি এমন (কুরআনি ইলম) দেওয়া হতো, যেভাবে অমুককে দেওয়া হয়েছে, তাহলে আমিও তার মত আমল করতাম!’ (আরেক ব্যক্তি হলো সে) যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন এবং সে সম্পদ সত্যপথে খরচ করে। তাই, (প্রতিবেশী) ব্যক্তি বলে, ‘হায়! আমাকে যদি অমুক ব্যক্তির মতো (সম্পদ) দেওয়া হতো, তাহলে সে যা করছে, আমিও তাই করতাম’।’’ [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৫০২৬]
(১১) কুরআন পড়া বিরাট লাভের কাজ:
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘কেউ কি চাও যে, যখন বাড়ি ফিরবে, তখন বাড়িতে গিয়ে ৩ টি বড় বড় মোটাতাজা গর্ভবতী উটনী দেখতে পাবে?’’ আমরা বললাম, ‘হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘‘তোমরা কেউ নামাজে ৩ টি আয়াত পড়লে, তা তার জন্য ৩ টি মোটাতাজা গর্ভবতী উটনীর চেয়ে উত্তম।’’ [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ১৭৫৭]
(১২) কুরআনওয়ালাকে সম্মানিত করা হবে।
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কুরআন কিয়ামতের দিন হাজির হয়ে বলবে, হে আমার রব! একে (কুরআনওয়ালাকে) পোশাক পরিয়ে দিন। তারপর তাকে সম্মানের মুকুট পরানো হবে। সে আবার বলবে, হে আমার রব! তাকে আরো বাড়িয়ে দিন। সুতরাং তাকে মর্যাদার পোশাক পরানো হবে। সে আবার বলবে, হে আমার রব! তার প্রতি সন্তুষ্ট হোন। তখন তিনি তার উপর সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন। তারপর তাকে বলা হবে, ‘‘তুমি এক এক করে আয়াত পাঠ করতে থাকো এবং উপরে ওঠতে থাকো।’’ এভাবে প্রতি আয়াতের বিনিময়ে তার একটি করে সাওয়াব (মর্যাদা) বাড়ানো হবে।’’ [ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ২৯১৫; হাদিসটি হাসান]
(১৩) কুরআনে বিজ্ঞ ব্যক্তিরা অগ্রগামী:
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদ যুদ্ধে শাহাদাতবরণ করা শহিদগণের ২ জন জন করে একই কাপড়ে (কবরে) একত্র করতেন। এরপর জিজ্ঞাসা করতেন, তাঁদের উভয়ের মধ্যে কে কুরআন সম্পর্কে অধিক জানতো? দুইজনের মধ্যে একজনের দিকে ইঙ্গিত করা হলে, তাঁকে কবরে আগে রাখতেন। তখন তিনি বলেন, ‘‘আমি কিয়ামতের দিন এদের ব্যাপারে সাক্ষী হবো।’’ [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ১৩৪৩]