07/12/2023
মুগ্ধতা
ঘুম থেকে উঠে দেখি ঘড়ির কাঁটা তার আপন গতিতে এগারোটার ঘর পাড়ি দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবে বৃষ্টির ফোঁটা যখন টিনের চালে পরে তখন তা কানের মধ্যে সুমধুর কম্পন সৃষ্টির মাধ্যমে ঘুম টাকে যেন আরো গভীর করে দেয় । সেখানে তো মধ্যরাত থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে !
বৃষ্টি থেমে গেলে অনেক কষ্টে বিছানা ত্যাগ করে ফ্রেশ হয়ে নিলাম । বন্ধু সাগরের ভাইয়ের আজ বিয়ে । আমার যাওয়ার কথা ছিল সেই কাক ডাকা ভোরে । কিন্তু এই যে! পৃথিবীর সব অলসতা যেন ভোরের বিছানার চাদরের মধ্যেই বদ্ধ । তার উপর বৃষ্টি !
সাগর আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। তার ভাইয়ের বিয়ে আর আমি থাকবো না সে কি কখনো হয় ? তাড়াহুড়া করে রেডি হয়ে বাস স্ট্যান্ডে গেলাম। ওর বাসা প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে । বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছে দেখলাম মিনিট পাঁচেক আগে বাসটি ছেড়ে দিয়েছে । পরের বাসটি আরো আধা ঘন্টা পরে । বই পড়ার অভ্যাস ছিল আমার । কিন্তু বৃষ্টি ভেজা দিনে হাতে বই ছিল না তাই ভেবেই রেখেছিলাম সময়টা নিতান্তই বিরক্তিকর হবে ।
হঠাৎ স্ট্যান্ডের পূর্ব দিকে চোখ পরে । নীল শাড়ি পড়ে এক মেয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসতেছে ।
" পরের বাসটি কখন বলতে পারেন ? "
"হ্যাঁ কি বললেন? " ততক্ষণ কোন স্বপ্নে বিভোর ছিলাম বলতে পারছিনা ।
"বললাম পরের বাসটি কখন "
তার দিকে লাজুক চোখে তাকিয়ে বললাম "আধাঘন্টা পরে "
আমার মেয়ের মানুষের সাথে সরাসরি কথা বলার তেমন অভ্যাস নেই। তাদের চোখের দিকে তাকাতেই যেন ভয় লাগে । তবুও কেন জানি তার দিকে হাবলার মত চেয়ে থাকি ।
" আপনার নাম কি? " হাসি ভরা মায়াবী মুখে তাকিয়ে আমায় জিজ্ঞেস করে মেয়েটি ।
আমার নাম সঞ্জয়। আপনার ?
"মুগ্ধতা "
সে তার নামের চেয়েও মুগ্ধ ছিল। তার মায়াবী চেহারায় তাকিয়ে কয়েক আলোকবর্ষ যেন কেটে দেওয়া যায় ।
মেয়েটি তার ব্যাগ থেকে একটা বাটি বের করে আমায় বললো,"খাবেন? আমার নিজের হাতের রান্না করা। "
অপরিচিত কারো কাছ থেকে খাওয়া ঠিক নয় তাই বললাম,"না, আপনি খান "
"আমায় দেখে কি আপনার কিডনাপার বলে মনে হয়?" অনেকটা হেসে কথাটা বললো মেয়েটি।
তার সেই সুমিষ্ট হাসি দেখে না বলার মত পুরুষ হয়তো হবে না। আর হ্যাঁ, পায়েস আমার প্রিয় খাবার ।
"আপনি এভাবে মুখ গোমড়া করে বসে আছেন কেন? হাসতে পারেন না ? "
মেয়েটির এমন মিশুক স্বভাব দেখে অনেকটা মুচকি হেসে ফেললাম।
এভাবে অনেকক্ষণ চলে গেল। কখন যে বাস এসে স্ট্যান্ডে দাঁড়ালো বুঝে উঠতে পারলাম না।
বাসে উঠলাম। মেয়েটি আমার পাশের সিটে জানালার পাশে। মেয়েটি তার মাথা বাইরে বের করে দিয়ে বৃষ্টি পরবর্তী আকাশ উপভোগ করতে থাকলো । আর আপন মনে গুনগুন করে গান করতে শুরু করলো । বাতাসে তার মেঘ কালো মলিন কেশ যেন কাশফুলের উপর বয়ে যাওয়া বাতাসে স্রোতের মতো দোলা দেয় ।
হঠাৎ আবার বৃষ্টি শুরু হলো। মেয়েটি তার হাত বের করে দিয়ে কোমল হাতে বৃষ্টির ছোঁয়া মাখতে থাকে ।
আর বলতে থাকে....
"জানেন, বৃষ্টি আমার ভারী প্রিয় । বুক ভরা কষ্ট নিয়ে কান্না করার পর যেমন বুকের উপরে ওঠানো পাথরের বোঝা খানিকটা নেমে যায় সেভাবে আকাশের বুকে কালো মেঘের বোঝা বৃষ্টির মাধ্যমে নেমে যায়। তারপর কতই না সুন্দর দেখায় আকাশকে! "
তার কথাতেও যেন আলাদা রকম মায়া মাখানো। অনেকটা কবি-সাহিত্যিকের মতো।
পরের স্ট্যান্ডে মেয়েটি নেমে গেল। যাওয়ার সময় তার হাসি মাখানো মুখে এতটাই বিভোর ছিলাম যে তার বাকি পরিচয়টুকুও নেওয়া হলো না ।
দেখা হবে, আবারও আমাদের দেখা হবে । আবার কোন এক বৃষ্টি ভেজা সকালে, বৃষ্টির ঝন ঝন আওয়াজ কানে মেখে ছাতা নিয়ে হাজির হবো তোমার তরে । গোধূলি বিকেলে রক্তিম সূর্য সামনে রেখে দেখা হবে আমাদের। শরতের বাতাসে দোল খাওয়া কাশফুলের মধ্যে খুঁজে পাবো তোমাকে কিংবা শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে, কুয়াশা কেটে সূর্য ওঠার মতো করে দেখা হবে আমাদের । নদী বা সাগরের তীরে অন্তিম সূর্য দেখে আবারও তোমার হাসি মুখে চেয়ে থাকবো ।
তোমার মুগ্ধতায় মুগ্ধ হতে আবারো আমাদের দেখা হবে ....।
লেখকঃ মোর্শেদ