JTH Jana Ojana

JTH Jana Ojana আমি আল্লাহর গুনাহ গার বান্দা����

চক্ষু ক্যাম্প রাধাকৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়
18/05/2024

চক্ষু ক্যাম্প রাধাকৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়

07/04/2024

হুফফাজের ট্রেনিং প্রাপ্ত একজন হাফেজ আবশ্যক আগ্রহী গান নিম্নোক্ত নাম্বারে যোগাযোগ করুন
01324004844

06/04/2024

ফতোয়া/খতমে তারাবীর হাদিয়া, শরয়ী দৃষ্টিকোণ

খতমে তারাবীর হাদিয়া, শরয়ী দৃষ্টিকোণ

তারাবীর নামাজের উজরত নিয়ে আমাদের এলাকায় খুব সমস্যা হচ্ছে । কেউ বলছে উজরত নেয়া জায়েয, আবার কেউ বলে নাজায়েয। কেউ কেউ এমন ও বলে: আমারা উজরত প্রদান করিনা, বরং হাফেজ সাহেবকে হাদিয়া প্রদান করি।
এখন আমার জানার বিষয় হল: তারাবীর উজরত প্রদান জায়েয কিনা? এবং হাদিয়ার বিষয়টা কতটুকু শরীয়ত সম্মত? দলীল সহ বিস্তারিতভাবে জানালে খুশি হব।

بسم الله الرحمن الرحيم

তারাবীর নামাজের গুরুত্বঃ
তারাবীর নামাজ জামাতের সাথে আদায় করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। কেননা হযরত উমর (রা:) এর খেলাফতকাল থেকে শুরু করে ধারাবাহিকভাবে এর উপর আমল চলে আসছে। আল্লামা আলাউদ্দীন হাসকাফী (রহ:) বলেন:
التراويح سنة مؤكدة لمواظبة الخلفاء الراشدين للرجال والنساء إجماعا
অর্থাৎ: তারাবীর নামাজ পরুষ এবং মহিলার জন্য ঐক্যমতের ভিত্তিতে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। খোলাফায়ে রাশেদীনের ধারাবাহিক আমলের কারণে।

(আদ্দুররুল মুখতার, ২/৫৯৬, মাকতাবাতুল আজহার)
এখানে খোলাফায়ে রাশেদীন দ্বারা উদ্দেশ্য হল হযরত উমর, উসমান এবং আলী (রাঃ)। কেননা নিয়মতান্ত্রিক ভাবে তারাবীর জামাত শুরু হয়েছিল হযরত উমর (রাঃ) এর খেলাফতকালে।

কোরআন শরীফ খতম করার হুকুম
তারাবীর নামাজে অন্তত একবার কোরআন খতম করা সুন্নত। এক্ষেত্রে ফুকাহায়ে কেরাম সকলেই একমত। দেখুন: “ফাতাওয়া কাযীখান” ১/১৪৭, “ফাতহুল কাদীর” ১/৪৮৭, “ফতওয়া আলমগীরী” ১/১৭৭, “আদ্দুররুল মুখতার” ২/৬০১,

তারাবীর নামাজ পড়িয়ে হাদীয়া অথবা বিনিময় নেয়া প্রসঙ্গ
হাদীস শাস্ত্রের একজন প্রসিদ্ব এবং সর্বজন বিদিত ইমাম হলেন, ইমাম আবু বকর ইবনে আবী শায়বা রহ: (মৃত্যু: ২৩৫হিঃ) যিনি ইমাম বুখারী এবং মুসলিমের উস্তাদ। এবং তিনি “আল-মুসান্নাফ” নামে হাদীস শাস্ত্রে সর্বযুগে স্বীকৃত এবং গ্রহণযোগ্য একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। উক্ত কিতাবের ৬৯০ নং পরিচ্ছেদের নামকরণ করেছেন এভাবে:
” في الرجل يقوم باالناس في رمضان فيعطى ”
অর্থাৎ: ঐ ব্যক্তি সম্পকে যে রমজানে মানুষদেরকে তারাবীর নামাজ পড়াল, অতপর তাকে কিছু দেওয়া হল।
এখানে লক্ষণীয় বিষয় হল, অনেকেই বলে থাকেন, তারাবীর নামাজের হাফেজ সাহেবদেরকে যে টাকা প্রদান করা হয়,সেটা কোরআনের বিনিময় নয়,বরং হাদিয়া স্বরুপ দেওয়া হয়। এজন্য এটা হারাম হবেনা।কিন্তু ইবনে আবী শায়বা রহ: এখানে হাদিয়া বা বিনিময় কোনটিকে নির্দিষ্ট করেননি।বরং মুতলাক রেখেছেন। এরদ্বারা বুঝা গেল, তারাবীর নামাজের পর হাফেজ সাহেবদের যা কিছু দেওয়া হয়,চাই সেটা হাদিয়া হোক,অথবা বিনিময় হোক,সেটার হুকুম বর্ণনা করা উদ্দেশ্য।
উক্ত পরিচ্ছেদের হাদীসগুলো নিম্নে উল্লেখ করছি:
” حدثنا وكيع قال حدثني أبي عن أبي إسحاق عن عبد الله بن مغفل أنه صلى بالناس في شهر رمضان فلما كان يوم الفطر بعث إليه عبيد الله بن زياد بحلة وبخمسمائة درهم فردها وقال إنا لا نأخذ على القرآن أجرا ”
অর্থাৎ: ওকী (রহ:) তার পিতার সুত্রে আবু ইসহাক থেকে বর্ণনা করেন, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে মুগা’ফফাল থেকে বর্ণনা করেন, আব্দুল্লাহ ইবনে মা’ক্কাল রমযানে মানুষদের তারাবীর নামাজ পড়িয়েছিলেন। অতপর ঈদুল ফিতরের দিন উবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদ তার নিকট পোষাকের সেট এবং পাঁচশত দিরহাম পাঠালেন। তিনি সেগুলো ফিরিয়ে দিলেন এবং বললেন: আমরা কোরআনের বিনিময়ে কোন কিছু গ্রহণ করি না। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং:৭৮২১, শায়খ মুহাম্মদ আওয়ামা (দা:বা:) তাহকীককৃত)

” أخرجه عن محمد بن بشر قال حدثنا عبد الله بن الوليد قال أخبرني عمر بن أيوب قال أخبرني أبو إياس معاوية بن قرة قال كنت نازلا على عمرو بن النعمان بن مقرن فلما حضر رمضان جاءه رجل بألفي درهم من قبل مصعب بن الزبير فقال أن الأمير يقرئك السلام ويقول إنا لن ندع قارئا شريفا إلا وقد وصل إليه منا معروف فاستعن بهذين على نفقة شهرك هذا فقال عمرو اقرأ على الأمير السلام وقل له والله ما قرأنا القرآن نريد به الدنيا ورد عليه
অর্থাৎ: আবু ইয়াস মুয়াবিয়া বিন কুররা বলেন: আমি আমর বিন নু’মান বিন মুকাররিনের নিকট অবস্থান করছিলাম। এতপর যখন রমযান মাস উপস্থিত হল, তখন মুসআব বিন যুবায়েরের পক্ষ থেকে এক লোক তার নিকট দুই হাজার দিরহাম নিয়ে উপস্থিত হয়ে বললেন: আমীর আপনাকে সালাম জানিয়েছেন এবং বলেছেন: কোরআনের প্রত্যেক কারীর নিকট আমাদের পক্ষ থেকে কিছু হাদীয়া তুহফা পৌছে যাবে। আপনি এ দুহাজার দিরহাম দ্বারা রমযান মাসের খরচ চালান। তখন আমর বললেন: আমীর সাহেবকে আমার সালাম জানাবেন এবং বলবেন: আমরা দুনিয়ার উদ্দেশ্যে কোরআন তিলায়াত করিনা। এবং দু হাজার দিরহাম ফিরিয়ে দিলেন।
(মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, হাদীস নং: ৭৮২০, শুয়াবুল ঈমান, বায়হাকী: হাদীস নং: ২৬৩৩,২৩৯২)

আব্দুল্লাহ বিন মা’ক্কালের প্রথম বর্ণনাটি দেখুন। উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদ তার নিকট দিরহাম এবং কাপড়ের সেট পাঠান ঈদুল ফিত্রের দিনে। লোক চক্ষুর অন্তরালে । তারপরেও তিনি গ্রহণ করেননি। ২য় হাদীসটি লক্ষ করুন। আবু ইয়াসের নিকট দু’হাজার দিরহাম পাঠানো হয়েছিল রমযান চলাকালীন অবস্থায়। তারাবীর নামাজ তখনো শেষ হয়নি। এরপরও তিনি গ্রহণ করেননি।

এ সম্পর্কিত আরো কিছু হাদীস
“عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ شِبْلٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : اقَرَؤُوا الْقُرْآنَ ، وَلاَ تَأْكُلُوا بِهِ ، وَلاَ تَسْتَكْثِرُوا بِهِ ، وَلاَ تَجْفُوا عَنْهُ ، وَلاَ تَغْلُوا فِيهِ.”
অর্থাৎ: রাসূল (সাঃ) বলেছেন: তোমরা কোরআন পড়, এর বিনিময়ে কিছু খেওনা ………………….। এবং কোরআন নিয়ে কঠোরতা এবং বাড়াবড়ি করোনা।
(মুসনাদে আহমাদ: হাদীস নং: ১৫৫৩৫, মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা: হাদীস নং: ৭৮২৫, মুসান্নেফে আব্দুর রাজ্জাক হাদীস নং: ১৯৪৪৪)
হাদীসের মান সম্পর্কে হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ (মৃত্যু: ৮৫২ হিঃ) বলেন “سنده قوي” অর্থ্যাৎ হাদীসটি সনদের দিক দিয়ে শক্তিশালী। ( ফাতহুল বারী: ৯/১১৫, দারুল হাদীস)

হাদীসে যদিও সরাসরি তারাবীর কথা উল্লেখ নেই। কিন্তু ইমাম আবু বকর ইবনে আবী শায়বা (রহঃ) হাদীসটি “তারাবীর নামাজ পড়িয়ে কোন কিছু নেওয়ার অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। তিনি এ হাদীস দ্বারা কোন কিছু গ্রহণ করাকে নাজায়েয প্রমানিত করেছেন।
” حَدَّثَنَا وَكِيعٌ ، قَالَ : حدَّثَنَا سُفْيَانُ ، عَنْ وَاقِدٍ ، عَنْ زَاذَانَ ، قَالَ سَمِعْتُهُ يَقُولُ : مَنْ قَرَأَ الْقُرْآنَ يَأْكُلُ بِهِ جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَوَجْهُهُ عَظْمٌ لَيْسَ عَلَيْهِ لَحْمٌ. ”
অর্থাৎ: যাজান (রহঃ) বলেন: আমি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, রাসূল (সাঃ) বলেছেন: যে কোরআন পড়ল, এর মাধ্যমে কিছু খেল, সে কিয়ামদের দিন এমন অবস্থায় আসবে যে, তার চেহারায় শুধু হাড্ডি থাকবে। গোাশত থাকবেনা।
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ৭৮২৪ শুয়বুল ইমান, হাদীস নং ২৬২৫)

” عن أبي سعيد وصححه الحاكم رفعه تعلموا القرآن واسألوا الله به قبل أن يتعلمه قوم يسألون به الدنيا فإن القرآن يتعلمه ثلاثة نفر رجل يباهي به ورجل يستأكل به ورجل يقرؤه لله ”
অর্থঃ আবু সাইদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত : রাসূল (সাঃ) বলেছেন: তোমরা কোরআন শিক্ষা কর, এবং এর বিনিময় আল্লাহর কাছে চাও। এমন সম্প্রদায়ের আগে, যারা কোরআন শিক্ষা করবে এবং এর বিনিময় দুনিয়া চাইবে ।
কেননা কোরআন শিক্ষা করে তিন শ্রেণির মানুষ। এক শ্রেণি এর দ্বরা অন্যকে অপবাদ দেয়, এক শ্রেণি এর দ্বারা খাবার খায়, এবং আরেক শ্রেণি আল্লাহর জন্য পড়ে। (ফাতহুল বারী ৯/১১৫, দারুল হাদীস ক্বাহেরা )

ইমাম আবু বকর ইবনে আবী শায়বা (রহঃ) পূর্বেল্লোখিত অধ্যায়ে মোট সাতটি হাদীস উল্লেখ করেছেন। তম্মধ্যে ছয়টি হাদীস এমন, যা তারাবীর নামাজ পড়িয়ে কোন কিছু গ্রহণ করাকে নাজায়েয প্রমান করে। শুধুমাত্র সায়ীদ ইবনে জুবায়ের (রহঃ) এর একটি আছার পেশ করেছেন, যা তারাবীর নামাজ পড়িয়ে কোন কিছু গ্রহণ করা জায়েয প্রমাণিত হয়। আছারটি হল :
” حَدَّثَنَا جَرِيرٌ ، عَنْ رَجُلٍ : أَنَّ سَعِيدَ بْنَ جُبَيْرٍ قَامَ بِالنَّاسِ فِي رَمَضَانَ فَأَرْسَلَ إلَيْهِ الْحَجَّاجُ بِبُرْنُسٍ فَقَبِلَهُ. ”
অর্থাৎ: জারির জনৈক ব্যক্তি থেকে বর্ণনা করেন: সাইদ ইবনে জুবায়ের রমযানে তারাবীর নামাজ পড়িয়েছিলেন। এজন্য হাজ্জাজ তার নিকট “বুরনুস” নামীয় এক ধরণের টুপি পাঠিয়ে ছিলেন, তিনি গ্রহণ করলেন ” (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা হাদীস নং ৭৮৩২)

এখানে জারির থেকে বর্ণনাকারী “মাজহুল ” তথা অজ্ঞাত।অর্থাৎ তার পরিচয় জানা যায়না, মাজহুল রাবি থেকে রেওয়াত করা হাদীস জমহুর মুহাদ্দীস গনের নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। (মুকাদ্দিমা ইবনুস সালাহ পৃষ্ঠা ১১১শায়েখ নুরুদ্দীন ইতর তাহকীক কৃত)
সুতরাং যতক্ষণ পর্যন্ত তার পরিচয় জানা না যাবে, ততক্ষণ পযন্ত তার বর্ণনা গ্রহন করা হবেনা। এজন্য ইবনে জুবায়েরের “আছার” দ্বারা জায়েযের পক্ষে দলীল দেয়া আদৌ ঠিক হবেনা।

ইমামদের মতামত
ইবাদতের ক্ষেত্রে মূলনীতি হল: কোন ইবাদতের বিনিময় গ্রহণ জায়েয নেই। হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য পাঠ্য কিতাব “আল-হিদায়া” তে আছে:
” ولا الاستئجار علي الأذان والحج وكذا الإمامة و تعليم القران والأصل أن كل طاعة يختص بها المسلم لايجوز الإستئجار عليه عند نا ”
অর্থ: আজান, হজ্ব, ইমামতি এবং কোরআন শিক্ষার বিনিময় নেওয়া জায়েয নেই। এক্ষেত্রে মূলনীতি হল: এমন ইবাদাত, যা মুসলমান পরিচায়ক, (অর্থাৎ দ্বীনের এমন বিষয় যা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করতে হয়, অন্য কোন উদ্দেশ্যে করা বৈধ নয়) এর বিনিময় নেয়া বৈধ নয়। (ফাতহুল ক্বাদীর: ৯/৯৮, মাকতাবা যাকারিয়া)

আল্লামা আকমাল উদ্দীন আল বাবারতি (রহঃ) বলেন: ঐক্যমতের ভিত্তিতে তার জন্য বিনিময় নেয়া জায়েয নয়। (আল ইনায়া, ফতহুল কাদীরের সাথে মুদ্রিত ৯/৯৭)

আল্লামা ইবনে কুদামা হাম্বলী (রহঃ) বলেন:
” ما لا تجوز إجارته أقسام : القسم الرابع: القرب اللتي يختص فاعلها بكونه من أهل القربة . يعني أنّه يشترط كونه مسلما كالإمامة والاذان والحج والقران نصّ عليه أحمد وبه قال عطاء والضحّاك بن قيس وأبوحنيفة والزهري.”
অর্থ: যে সমস্ত জিনিসের বিনিময় নেয়া জায়েয নেই এর চতুর্থটি হল: এমন ইবাদত যা শুদ্ধ হওয়ার জন্য মুসলমান হওয়া শর্ত, যেমন ইমামতি, আজান, হজ এবং কোরআন শিক্ষা। ইমাম আহমদ, আতা, যাহ্হাক বিন কায়েস, আবু হানিফা এবং যুহরী থেকে বর্ণীত । (আল-মুগনী : ৭/৪৩৬, দারুল হাদীস ক্বাহেরা )

সুতরাং মুতাকাদ্দীমীনের নিকট কোন ইবাদতের বিনিময় গ্রহণ জায়েয নয়। ইবাদত দ্বারা এমন ইবাদত উদ্দেশ্য যা মুসলমানদের সাথে খাস। কিন্ত ইবাদত যদি এমন হয়, যা মুসলমানের সাথে খাস নয়, তাহলে বিনিময় নেয়া জায়েয। ইমাম রাফেয়ী (রহঃ) বলেন:
” بخلاف ما لايختص به المسلم كتعليم التوراة . فإنه يجوزكفاية ”
অর্থ: ইবাদত যদি এমন হয়, যা মমুসলমানের সাথে খাস নয়, তাহলে বিনিময় নেয়া জায়েয আছে। যেমন তাওরাত শিক্ষাদান।
(তাক্বরীরাতে রাফেয়ী, টিকা ফাতওয়ায়ে শামী ৯/৯৩, মাকতাবাতল আজহার)

এই মূলনীতির ভিত্তিতে তারাবীহ্ মুসলমানদের সাথে নির্দিষ্ট আমল,এবং তা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পড়া হয়, এজন্য মুতাকাদ্দীমীনদের নিকট এর বিনিময় গ্রহণ জায়েয নয়।

পরবর্তী যুগের ইমামগণ উপরোল্লিখিত মূলনীতি থেকে কিছু ইবাদাত পৃথক করেছেন এবং বিনিময় গ্রহণ জায়েয হওয়ার ফতওয়া দিয়েছেন। “আল-হেদায়া” তে আছে :
” وبعص مشايخنا استحسنوا الاستئجار على تعليم القران اليوم لأنه ظهر التواني في الأمور الدينيّة ففي الامتناع بضييع حفظ القران وعليه الفتاوى”
আর্থ: কোন কোন ইমাম কোরআন শিখানোর বিনিময় গ্রহন বৈধ হওয়ার ফাতওয়া দেন। কেননা বর্তমানে দ্বীনের বিষয়ে মানুষের মধ্যে অলসতা প্রকাশ পায়। এজন্য বিনিময় গ্রহণ নাজায়েয হলে কোরআন হিফজের বিষয়টি বন্ধ হয়ে যেতে পরে। বর্তমানে এটার উপর ফতোয়া।
(ফাতহুল কাদীর ৯/৯৮, মাকতাব যাকারিয়্যা)

“আল বাহ্রুর রায়েক্বে” আছে:
” والأجرة علي الأذان والحج والإمامة وتعليم القران والفقه والفتواي اليوم على جواز استئجارلتعليم القران و الأذان والحفاّظ والمعلمين كان لهم عطايا في بيت المال واقتقادت منه المتعلمين في مجازات التعليم من غيرشرط وهذا الزمان قلّ ذلك واشتغل الحفّاظ بمعائشهم فلو لم يفتح لهم باب التعليم وبالأجر لذهب القران فأفتوا بالجواز والأحكام تختلف بإختلاف الزمان .” اه
অর্থ: আজান, হজ, ইমামতি, কোরআন শিক্ষা এবং ফিকহের বিনিময় গ্রহণ করা জায়েয নয়। কিন্তু বর্তমানে কোরআন শিক্ষার বিনিময় জায়েযের ফতোয়া দেওয়া হবে। কেননা পূর্বে হাফেজ এবং শিক্ষকদের ভাতা বায়তুল মাল থেকে দেওয়া হত। এবং ছাত্রদের একটি পরিমিত জামাত ইলম শিক্ষায় লিপ্ত থাকত। বর্তমানে এদের সংখা কমে গেছে এবং হাফেজরা তাদের নিজস্ব কাজে ব্যস্ত। এখন যদি বিনিময়ের মাধ্যমে শিক্ষার দরজা খোলা না হয়, তাহলে কোরআন মুছে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য বিনিময় জায়েয ফতোয়া দেওয়া হবে, কেননা জামানার পরিবর্তনে হুকুম পরিবর্তন হয়। (আল-বাহরুর রায়েক: ৯/৩৩-৩৪)

আল্লামা হাসকাফি (রহঃ) কোরআন শিক্ষার সাথে সাথে ফিক্বহ, ইমামতি এবং মুয়াজ্জিনির বিনিময় নেয়া বৈধ বলেছেন। তিনি বলেন:
” ويفتي اليوم بصحتها لتعليم القران والفقه والإمامة والأذان”
অর্থ: বর্তমানে কোরআন শিক্ষা, ফিক্বহ, ইমামতি এবং আজানের বিনিময় নেয়া সহীহ হওয়ার ফতোয়া দেওয়া হবে।
(আদ্ দুররুল মুখতার: ৯/৯৪, মাকতাবাতুল আজহার )

এখন প্রশ্ন হল, এগুলোর উপর ক্বিয়াস করে তারাবীর নামাজের বিনিময় গ্রহণ বৈধ ফতোয়া দেওয়া হবে কি?
আল্লামা ইবনে আবীদিন শামী (রহঃ) এ ব্যাপারে তত্ত্ববহুল আলাচনা করে এ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, জায়েয হওয়ার হুকুমটি শধু উপরোল্লিখিত ইবাদতের সাথে নির্দিষ্ট। এগুলোর উপর ক্বিয়াস করে অন্যান্য ইবাদতের বিনিময় গ্রহণ জায়েয হওয়ার ফতোয়া দেওয়া যাবেনা। তিনি বলেন:
” فهذا دليل قاطع وبرهان ساطع على أن المفتى به ليس هو جواز الاستئجار على كل طاعة بل على ما ذكروه فقط مما فيه ضرورة ظاهرة تبيح الخروج عن أصل المذهب من طرو المنع ”
অর্থাৎ: গ্রহণযোগ্য এবং স্বীকৃত মত হল: প্রত্যেক ইবাদতের বিনিময় গ্রহণ বৈধ নয়। বরং বৈধ হবে শুধু পূর্বেল্লোখিত ইবাদাতগুলোতে যেগুলোর মধ্যে স্পষ্ট প্রয়োজন রয়েছে, যা নিষেধের সীমানা থেকে বের হওয়া বৈধ করে । (রদ্দুল মুহতার : ৯/৯৪, মাকতাবতুল আজহার )

আর আমরা জানি যে, তারাবীতে কোরআন খতম জরুরিয়াতে দ্বীনের অন্তরভুক্ত নয়। বরং একটি সুন্নাত আমল। যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
সুতরাং কোরআন শিক্ষা, ফিক্কহ, ইমামতি, এবং মুয়াজ্জিনের উপর ক্বিয়াস করে তারাবীর বিনিময় জায়েয হওয়ার ফতোয়া দেওয়া আদৌ ঠিক নয়।

বিনিময় না দিয়ে হাদিয়া দেওয়া
আমাদের দেশে অনেকে বলে থাকেন: আমরা হাফেজ সাহেব কে তারাবীর বিনিময় প্রদান করিনা, বরং হাদিয়া দেই। আর হাদিয়া দিতেতো কোন আপত্তি নেই। তাই এটা হারাম হবে না।
কিন্তু এখানে কথা হল : আমাদের দেশে প্রচলিত রেওয়াজকে শরীয়তের দৃষ্টিতে হাদিয়া বলা যাবে কি না ? সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে। শরীয়তের দৃষ্টিতে হাদিয়া বলা হয়: “تمليك عين بلاعوض”
(ফাতওয়া আলমগীরী : ৪/৩৯৫,মাকতাবাতুল ইত্তেহাদ, ফাতাওয়া শামী:৫/৬৮৭, এইচ, এম, সায়ীদ)

এ সংজ্ঞার আলোকে আমদের দেশে প্রচলিত রেওয়াজ কে কোন ভাবেই হাদিয়া বলা যাবেনা।কেননা এখানে মূলত টাকা প্রদান করা হয় তারাবী পড়ানোর কারণে।যদি হাফেজ সাহেব তারাবীহ না পড়াতেন, তাহলে তাকে উক্ত মোটা অংকের টাকা প্রদান করা হতোনা। এজন্য শরিয়তের দৃিষ্টতে তারাবীর পর হাফেজ সাহেরকে প্রদত্ত টাকাকে হাদিয়া বলা পরিস্কার ভুল।
অধিকাংশ মসজিদে এমন হয় যে, প্রত্যেক মুসল্লীর উপর নির্দিষ্ট এাটি অংক নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। একটি নির্দিষ্ট সময় বেধে দেয়া হয়, যার মধ্যে মুতাওয়াল্লীর নিকট টাকা জমা দিয়ে দিবে। বিলম্ব হলে কমিটির পক্ষ থেকে চাপ প্রয়োগ করা হয় । কেউ না দিলে মসজিদে জবাবদিহি করতে হয়। অনেক মসজিদে কালেকশন ও করা হয়। এখন প্রশ্ন হল উল্লেখিত পদ্ধতিকে কি “হাদিয়া” বলা হবে? এছাড়া যদি হাফেজ সাহেব এ মসজিদে তারাবীহ না পড়তেন, তাহলে তাকে কি এভাবে আয়োজন করে হাদিয়া দেওয়া হত? কখনো না । তাই উক্ত টাকাকে হাদিয়া বলা পরিস্কার ভুল। প্রকৃত অর্থে তা হল তারাবীর বিনিময়। যা প্রদান করা জায়েজ নয়। এজন্য শায়খুল ইসলাম আল্লামা তাকী উসমানী (দাঃ বাঃ) বলেছেন: আজকের প্রচলিত “হাদিয়া ” আসলে উজরত তথা বিনিময় হয়ে যায়। (ফাতওয়া উসমানী: ১/৪৬০ মাকতাবাতু মাআ’রিফুল কোরআন, করাচি)
তবে হ্যাঁ, বাস্তবে যদি কেউ হাফেজ সাহেব কে হাদিয়া দিতে চায়, তাহলে একাকী হাদিয়া স্বরুপ দিয়ে দিবে। এতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। (ফাতওয়া উসমানী ১/৪৬০)

তারাবীর নামাজ পড়িয়ে বিনিময নেওয়া বৈধ হওয়া প্রসঙ্গ
আমাদের দেশের কিছু কিছু আলেম তারাবীর নামাজ পড়িয়ে বিনিময় গ্রহণ জায়েয বলে ফতোয়া দেন। কেহ কেহ এর পক্ষে বই পুস্তকও রচনা বরেছেন। বৈধ হওয়ার পক্ষে তাদের মূল দলীল দুটি:
* বুখারীতে আছে: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ” إن أحق ما أخذتم عليه أجرا كتاب الله ” অর্থ: তোমার যেগুলোর বিনিময় গ্রহণ কর, এর মধ্যে বিনিময় গ্রহণের সবচেয়ে উপযুক্ত হল আল্লাহর কিতাব, ( বুখারী: হাদীস নং ৪৭৩৭)

উক্ত হাদীসে কিতাবুল্লাহর বিনিময় গ্রহণ জায়েজ বলা হয়েছে। আর তারাবীর নামাজে কোরআন তিলাওয়াতের বিনিময় গ্রহণ করা হয়।
* প্রথম যুগে সবধরণের ইবাদতের বিনিময় গ্রহণ নাজায়েয ছিল। পরবর্তীতে আজান, ইমামত, কোরআন শিক্ষার বিনিময় গ্রহণ প্রয়োজনের কারণে জায়েয ফতোয়া দেওয়া হয়েছে। তারাবীর নমাজও একটি প্রয়োজন, এজন্য এর বিনিময় গ্রহণ জায়েয হবে। ২য় বিষয় নিয়ে পূর্বে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে যে, আজান, ইমামত এবং কোরআন শিক্ষার উপর কিয়াস করে অন্যান্য ইবাদতের বিনিময় গ্রহণ জায়েয ফতোয়া দেওয়া যাবেনা।

এখন আমরা হাদীসটি নিয়ে আলোকপাত করব। ইবনে আব্বাস রা. বর্ণনা করেন,
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ نَفَرًا مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرُّوا بِمَاءٍ فِيهِمْ لَدِيغٌ أَوْ سَلِيمٌ فَعَرَضَ لَهُمْ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْمَاءِ فَقَالَ هَلْ فِيكُمْ مِنْ رَاقٍ إِنَّ فِي الْمَاءِ رَجُلًا لَدِيغًا أَوْ سَلِيمًا فَانْطَلَقَ رَجُلٌ مِنْهُمْ فَقَرَأَ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ عَلَى شَاءٍ فَبَرَأَ فَجَاءَ بِالشَّاءِ إِلَى أَصْحَابِهِ فَكَرِهُوا ذَلِكَ وَقَالُوا أَخَذْتَ عَلَى كِتَابِ اللَّهِ أَجْرًا حَتَّى قَدِمُوا الْمَدِينَةَ فَقَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ أَخَذَ عَلَى كِتَابِ اللَّهِ أَجْرًا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ أَحَقَّ مَا أَخَذْتُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا كِتَابُ اللَّهِ
অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরামের একটি জামাত সফরে গিয়েছিলেন, তখন সেই এলাকার একজন লোককে বিচ্ছু ধংশন করেছিল, তখন জনৈক ব্যক্তি সাহাবায়ে কেরামের নিকট এসে বলল: তোমাদের মধ্যে কোন ঝাড় ফুঁককারী আছ কি না? তখন একজন সাহাবী তার সাথে গিয়ে সূরায়ে ফাতেহা পড়ে ফুঁক দিলেন। আল্লাহর রহমতে সে ভালো হয় গেল। তখন ঐলোক কয়েকটি ছাগল নিয়ে সাহাবায়ে কিরামদের নিকট আসল, তখন কেউ কেউ অপছন্দ করে বললেন: তুমি আল্লাহর কিতাবের বিনিময় গ্রহণ করেছ? এরপর যখন সাহাবায়ে কেরাম মদীনায় ফিরে আসলেন, তখন তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট বললেন: সে আল্লাহর কিতাবের বিনিময় গ্রহণ করেছে। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: বিনিময় গ্রহণের সবচেয়ে উপযোক্ত জিনিস হল আল্লাহর কিতাব।(বুখারী: হাদীস নং: ৫৭৩৭)

এখানে লক্ষণীয় বিষয় হল: সাহাবারা যে ছাগলটি গ্রহণ করেছিলেন, তা গ্রহণ করেছিলেন ঝাড়-ফুঁকের কারণে। আর আমরাও বলি: কেউ যদি কোরআনুল কারীম দিয়ে ঝাড়-ফুঁক করে, তাহলে তার জন্য বিনিময় গ্রহণ জায়েয আছে। এজন্য আল্লামা ইবনে আবীদিন শামী (রহঃ) বলেন :
” وما استدل به بعض المحشين على الجواز بحديث البخاري في اللديغ فهو خطأ ؛ لأن المتقدمين المانعين الاستئجار مطلقا جوزوا الرقية بالأجرة ولو بالقرآن كما ذكره الطحاوي ؛ لأنها ليست عبادة محضة بل من التداوي .”
অর্থ: ইবাদতের বিনিময় গ্রহণ বৈধ হওয়ার ক্ষেত্রে অনেকে বুখারীর ধংশনের হাদীস দ্বারা দলীল দিয়ে থাকেন। এটা ভুল। কেননা পূর্ববর্তী যুগের যারা যারা ইবাদতের বিনিময় গ্রহণ নাজায়েয বলেছেন, তারা সকলে ঝাড়-ফুঁকের বিনিময় গ্রহণ জায়েয বলেছেন। যদিও সেটা কোরআন দ্বারা হোক, যেমনটা উল্লেখ করেছেন ইমাম তাহাবী। কেননা এটা নিরেট ইবাদত নয়, বরং ঔষধের অন্তরভুক্ত।
(রদ্দুল মুহতার : ৯/৯৬, মাকতাবাতুল আজহার)

ইবনে কুদামা মাকদেসী (রহঃ) ওক্ত হাদীস দ্বরা ইবাদতের বিনিময় গ্রহণ জায়েয হওয়ার দলীল দেওয়া ঠিক নয় বলেছেন: দেখুন:( আল-মুগনী: ৭/৪৩৮)

হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ফকিহ আল্লামা যফর আহমাদ উসমানী রঃ (মৃত্যু: ১৩৯৪ হিঃ) বলেন
واحتج المجوزون للأجرة علي تعليم القرأن بقوله : “أحق ما اتخذتم عليه أجرا كتاب الله ” ولادليل لهم فيه. بل هو يدل علي خلافه. لأنه يعلم منه الصحابة كانو عارفين بأن أخذ الأجرة علي كتاب الله حرام . وكانوا مصيبين في ذلك. إلا أنهم أخطئوا في تعميمه الرقية بغيرها . فقوله : “أحق ما اتخذتم عليه أجرا كتاب الله ” مخصوص بالرقية . ولايشتمل التعليم والقراءة .
অর্থ: যারা কোরআন শিক্ষা দিয়ে বিনিময় গ্রহণ বৈধ বলেন, তারা”أحق ما اتخذتم عليه أجرا كتاب الله ” উক্ত বাক্য দ্বারা দলীল পেশ করেন। অথচ এটা তাদের পক্ষে দলীল নয়। বরং তাদের মতের বিপক্ষে দলীল। কেননা সাহাবায়ে কেরাম আল্লাহর কালাম পড়ে বিনিময় নেয়া হারাম মনে করতেন। আর এতে তারা সঠিকও ছিলেন। তবে উল্লেখিত বাক্যের ব্যাপকতার কারণে তারা তাবিজের বিষয়ে ভুল করেছেন। অতপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের ভুল শুধরিয়ে দিয়ে বলেন; তাবিজ আল্লাহর কালাম পড়ে বিনিময় গ্রহণ করার মত নয়। বরং অন্য কিছু দিয়ে তাবিজ লিখে বিনিময় গ্রহণ করার চেয়ে আল্লাহর কালাম দিয়ে তাবিজ লিখে বিনিময় গ্রহণ করা অধিক হক রাখে। অতএব “أحق ما اتخذتم عليه أجرا كتاب الله ” উক্ত বাক্য শুধু তাবিজের সাথে খাস। কোরআন শিক্ষা দেয়া এবং কোরআন পড়া ঈত্যাদী কে শামিল করেনা। ( ই’লাউস সুনান ১১/১৭৮, আল-মাকতাবাতুল আশরাফিয়া)

দেখুন: পরবর্তি যুগের ইমাম দের নিকট কোরআন শিক্ষা, আজান এবং ইকামতের বিনিময় নেয়া জায়েয, যা পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। তারপরেও তারা এর পক্ষে এই হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেননি। কারণ সকলেই জানেন যে, এ হাদীসের সম্পর্ক কোরআনের বিনিময় নেয়ার সাথে নয়। বরং ঝাড়-ফুঁকের সাথে। আর কোরআন পড়ে ঝাড়-ফুঁক করে বিনিময় নেয়া সর্বসম্মতিক্রমে জায়েয। এজন্য উক্ত হাদীস দ্বারা তারাীর বিনিময় গ্রহণ জায়েয হওয়ার ফতোয়া দেওয়া পরিস্কার ভুল।

আমরা পূর্বে দেখেছি যে, ইমাম আবু বকর ইবনে আবি শাইবা রহঃ তারাবীর নামাজ পড়িয়ে কোন কিছু দেওয়া নেওয়ার ব্যপারে স¦ীয় গ্রন্থে স্বতন্ত্র অধ্যায় এনেছেন। সেখানে তিনি উক্ত হাদীস উল্লেখ করেননি। এর দ্বারা বুঝা গেল যে, তার নিকট উক্ত হাদীসটি তারাবীর সাথে সম্পর্কিত নয়। অন্যথায় তিনি উক্ত অধ্যায়ে এ হাদীসটি অবশ্যই উল্লেখ করতেন।

আকাবীরে দেওবন্দের ফতোয়া

হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ (মৃত্যু: ১৩৬৪ হিঃ)

হাকীমুল উম্মাত আল্লামা আশরাফ আলী থানভী (রহঃ) তারাবীর নামাজ পড়িয়ে বিনিময় নেয়া হারাম হওয়া সম্পর্কে নাতিদীর্ঘ আলোচনা করেছেন। শেষে তিনি এ কথাও বলেছেন যে: কোরআন শিক্ষার উপর তারাবীর বিনিময় কে কিয়াস করা বৈধ নয়। কেননা কোরআন খতম দ্বীনের অত্যাবশ্যকীয় বিষয়ের অন্তরভুক্ত নয়। কেননা ফুকাহায়ে কেরাম পরিস্কার লিখেছেন: তাবারীর নমাজে কোরআন খতম সুন্নাত। এমনটাও বলে দিয়েছেন যে, যদি কোন সম্প্রাদয়ের উপর খতম কষ্টকর হয়ে যায়, তাহলে তার জন্য খতম ছেড়ে দেয়া উত্তম। এরপর তিনি এ সংশ্লিষ্ট “ফতোয়া শামী ” এর পূর্বেল্লোখিত ইবারত উল্লেখ করে বলেন: ফতোয়া শামীর এই ইবারত থেকে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, তারাবীর নামাজে কোরআন খতম দ্বীনে আত্যাবশ্যকীয় বিষয় নয়। এজন্য দ্বীনের যে সমস্ত বিষয়ের বিনিময় গ্রহণ জরুরতের কারণে বৈধ হয়েছে। সেগুলো দ্বারা এটার বৈধতা কিভাবে প্রমাণিত হয়? (ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৪৭৮)

আমাদের সমাজে তারাবীহ সংক্রান্ত প্রচলিত আরো কিছু বিষয় সম্পর্কে তার কাছে ফতোয়া চাওয়া হয়েছিল। প্রথমে প্রশ্নগুলো দেখুন:
* তারাবীর হাফেজ সাহেব কে কিছু দেওয়া জায়েয আছে? না দেওয়া নেওয়া উভয়টাই নাজায়েজ?
* যদি বিনিময় বিহিন কোন হাফেজ সাহেব পাওয়া না যায়, তাহলে বিনিময়ের মাধ্যমে হাফেয সাহেব নির্ধ্যারণ করবে? না সুরা তারাবীহ পড়বে?
* যখন ইামামতির বিনিময় বৈধ, তাহলে তারাবীর নামাজে কোরআন খতমতো সুন্নতে মুয়াক্কাদা,এর জন্য বিনিময় গ্রহণ বৈধ নয় কেন?
উত্তরে থানভী (রহঃ) লিখেন:
* আমিতো দেওয়া নেওয়া উভয়টাকে নাজায়েয মনে করি।
* আমি তো সূরা তারাবীহ পড়ার কথা বলব।
* ফুক্বাহায়ে কিরাম কোরআন খতম কে সুন্নাত বলেছেন। এরদ্বারা উদ্দশ্যে হল সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। কিন্তু তারা সাথে সাথে একথাও লিখেছেন যে, যেখানে লোকদের জন্য খতম তারাবীহ্ কষ্টকর হবে, সেখানে সূরায়ে ফীল এবং অন্যান্য সূরা দ্বারা সূরা তারাবীহ পড়া হবে।সুতরাং যখন জামাতে অল্প লোক হবে এই ভয়ে সুন্নাত কে ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি রয়েছে, আর যে সমস্ত ইবাদতের বিনিময় গ্রহণ বৈধ, সেগুলোর প্রয়োজনীতা এর চেয়ে অনেক বেশি। এজন্য বিনিময় বিহীন হাফেজ না পাওয়া গেলে সূরা তারাবীর নির্দেশ দেওয়া হবে। যেমন ভাবে পূর্বের উত্তরে বলা হয়েছে। (ইমদাদুল ফাতওয়া :১/৪৮৪)
আমাদের দেশে অনেকে একটি হীলা অর্থাৎ বাহানা গ্রহণ করেন। ইমামতির যেহেতু বিনিময় নেওয়া বৈধ, এজন্য হাফেজ সাহেব কে রমযানের পুরো মাসের ইমাম বানিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তাকে মোটা অংকের বিনিময় প্রদান করা হয়। এ বিষয়ে থানভী (রহঃ) এর কাছে ফতোয়া যানতে চাওয়া হয়েছিল? তার উত্তর দেখুন:
উক্ত সুরত জায়েয হওয়ার ফতোয়া তখন প্রদান করা হবে, যখন ইমামতি উদ্দেশ্য হবে। অথচ এখানে উদ্দেশ্য হল খতম তারাবীহ, নামাজের ইমামতি শুধুমাত্র একটি বাহানা। এখানে বিষয়টি যেহেতু আলাøাহ এবং বান্দার মধ্যকার বিষয়ে, এজন্য এখানে হীলা বা বাহানা গ্রহণযোগ্য হবেনা। এজন্য উক্ত সূরতও জায়েয নয়। (ইমদাদুল ফাতওয়া:১/৪৮৫, যাকারিয়া বুক ডিপো )
আল্লামা যাফর আহমদ উসমানী (মৃত্যু:১৩৯৪ ইং)
প্রশ্ন:
আমাদের মহল্লায় তিনজন হাফেজ সাহেব রয়েছেন, যারা মসজিদে নামাজ পাড়ান। একজন বয়সের দুর্বলতার কারণে তারাবীর নামাজ পড়াতে অক্ষমতা প্রকাশ করেছেন। আরেকজনের কন্ঠ খারাপ হওয়ার কারনে তিনিও অনীহা প্রকাশ করেছেন। অন্যজন এখনো প্রাপ্ত বয়স্ক হয়নি। তবে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার নিকটবর্তী। অর্থাৎ তার বয়স বার বা তের হবে। সে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আর সে ছাড়া শহরে অন্য কোন হাফেজ সাহেব নেই। এখন আমাদের জানার বিষয় হল: উক্ত সুরতে আমরা উজরত তথা বিনিময়ে অন্য শহর থেকে হাফেজ আনব? নাকি নাবালেগের পিছনে নামাজ পড়ব?
উত্তর:
উক্ত সুরতে হয়ত যার সুর সুন্দর নয় তার পিছনে সকলে ঐক্যমতের ভিত্তিতে তারাবীর নামাজ পড়বে, অথবা বয়সের ভারে দুর্বল হাফেজ সাহেবের পিছনে সুরা তারাবীহ পড়বে। বিনিময় দিয়ে এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির পিছনে তারাবীহ পড়া যাবেনা। (ইমদাদুল আহকাম:২/২৬৯, যাকারিয়্যা বুক ডিপো)
আল্লামা খলীল আহমদ সাহারানপুরী (রহঃ)
প্রশ্ন:
মসজিদের ইমাম সাহেব যদি হাফেজ না হোন, আর মুসল্লীরা কোরআন শোনার ব্যাপারে আগ্রহী হোন, তখন কোন হাফেজ সাহেব কে চাঁদা তুলে, অথবা মসজিদের আমদানী থেকে টাকা দিয়ে তারবীহ্ পড়ানো, এ ধরনের আদান প্রদান জায়েয কি না? অথবা ইমাম সাহের হাফেজ, কিন্তু কোন ওযরের কারনে তারাবীর নামাজ পড়াতে আগ্রহী নয়, এমতাবস্থায় তাকে উজরত তথা বিনিময় দিয়ে কোরআন শুনার হুকুম কি? শ্রোতা এবং কারীর হুকুম অভিন্ন? না আলাদা?
উত্তর:
উজরত তথা বিনিময় দিয়ে কোরআন শুনা শরীয়তে বৈধ নয়। আদান প্রদানকারী উভয়ে গোনাহগার হবে। যদি বিনিময় নির্দিষ্ট না কারা হয়, এবং কোরান খতমের পর খুশি মনে কিছু দেওয়াও হয় তাও বিশুদ্ধমতে জায়েয নয়।
(ফাতাওয়া খলীলীয়্যাহ: পৃষ্ঠা:১২২,মাতাবাতুশ শায়খ)
মুফতী মুহাম্মদ শফী রহঃ (মৃত্যু: ১৩৯৭ হিঃ)
প্রশ্নঃ
রমযানে হাফেজ সাহেবরা টাকা নির্ধারণ করে ফেলল, যেমন: আপনারা যদি আমাকে ষাট বা সত্তুর রুপী প্রদার করেন, তাহলে নামাজ পড়াব, অন্যথায় নয়। এভাবে নির্দিষ্ট করা ঠিক কি না?
উত্তরঃ
তারাবীর নামাজে কোরআন খতমের বিনিময় নির্দিষ্ট করা, চাই সেটা প্রকাশ্যে হোক, যেমনভাবে কিছু লোক করে থাকে, অথবা সমাজের প্রচলীত নিয়ম অনুযয়ী হোক, যেমনটা আজ কাল প্রচলিত। উভয় পদ্ধতি নাজায়েয। এ ব্যপারে মূলকথা হল: কোন ধরণের ইবাদতের বিনিময় গ্রহণ বৈধ নয়।কিন্তু পরর্বতী যুগের উলামায়ে কেরাম প্রয়োজনের তাগিদে এ মূলনীতি থেকে কিছু জিনিস পৃথক করেছেন। সাথে সাথে এ কথাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ভিন্ন হুকুম এ সমস্ত বিষয়ের সাথে নির্দিষ্ট, অন্যান্য ইবাদত সমুহ তার মূল হুকুমের উপর বাকী থাকবে। অর্থ্যাৎ এগুলোর বিনিময় গ্রহণ বৈধ নয়। প্রয়োজনের তাগিদে যে সমস্ত ইবাদতকে পৃথক করা হয়েছে, তারাবীর নামাজ এবং খতম তারাবীহ কে কেউ সেগুলোর মধ্যে শামিল করেননি। এজন্য তারাবীর বিনিময় গ্রহণ বৈধ নয়। (ফতোয়া দারুল উলূম দেওবন্দ: ২/৩১৩)
মুফতী শফী (রহঃ) এরপর পুর্বোক্ত “ফতোয়া শামীর ”ইবারত উল্লেখ করে এ হুকুমের ব্যপারে দালিলীক আলোচনা করেছেন। আগ্রহী পাঠকরা সেটা দেখে নিতে পারেন।
মুফতী মাহমুদুল হাসান গাংগুহী (রহঃ)
প্রশ্নঃ
তারাবীর হাফেজ সাহেবের জন্য গ্রাম থেকে যে চাঁদা তোলা হয়, উক্ত চাঁদা হাফেজ সাহেব কে দেওয়া এবং হাফেজ সাহেবের জন্য গ্রহণ করা জায়েয কিনা? আর এমন হাফেজের পিছনে তারাবীহ্ পড়ার হুকুম কি?
উত্তরঃ
এই চাঁদা দেওয়া এবং গ্রহণ করা বৈধ নয়। এমন হাফেজ সাহেবের পিছনে তারাবীহ্ পড়া উচিৎ, যে তারাবীর বিনিময় কোন কিছু গ্রহণ করেনা। (ফতোয়া মাহমুদিয়া : ২/৩৬০, কুতুবখানা মাজহারী)
মুফতী সায়্যিদ আব্দুর রহীম লাজপুরী (রহঃ)
প্রশ্নঃ
হাফেজ সাহেব আল্লাহর জন্য বিনিময় ব্যতিত তারাবীহ পড়ান, এখন মুসল্লিরা যদি খুশি হয়ে কিছু প্রদান করে, তাহলে এর হুকুম কি? আর যদি বিনিময় পূর্ব থেকে নির্ধারণ থাকে, তাহলে তার হুকুম কি?
উত্তরঃ
হাফেজ সাহেব যতি আল্লাহর জন্য তারাবীর নামাজ পড়ান, এর পর মুসল্লীরা খুশি হয়ে তাকে কিছু হাদীয়া দেয়, তাহলে তা জায়েয আছে। কিন্তু বর্তমানে আদান প্রদান প্রচলিত হয়ে গেছে। এজন্য হাফেজ সাহেবদের অন্তরে আগ্রহ পয়দা হয় এবং মুসল্লীরাও কিছু দেওয়ার চিন্তা ফিকির করতে থাকে, এজন্য খুশি হয়ে কিছু প্রদান করাও বিমিয়ের পর্যায়ে হয়ে যায়। এজন্য এমনটা করা মাকরুহ, গুনাহর কারণ হবে। হাফেজ সাহেবরা কেন নিজেদের কে বড় বিনিময় থেকে মাহরুম করবেন?
(ফাতোয়া রহিমিয়্যা: ৬/২৪৫, দারুল ইশায়াহ)
আরো দেখুন: ফতোয়া রহিমিয়্যা(৬/২৩৪)
শায়খুল ইসলাম জাস্টিস মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী (দা: বা:)
প্রশ্নঃ
রমজানে মানুষরা হাফেজ সাহেবের জন্য চাঁদা তুলে। তাকে কাপড় সহ বিভিন্ন জিনিস প্রদান করে, অথবা প্রথম থেকে টাকা নির্ধারণ করে হাফেজ সাহেবকে নিয়ে আসে, এগুলো জায়েয কি না?
উত্তরঃ
বিনিময় নির্ধারণ করে তারাবীর নামাজ পড়া সম্পুর্ণ হারাম। যদি বিনিময় ছাড়া হাফেজ না পওয়া যায়, তাহলে সুরা তারাবীহ পড়বে। হ্যাঁ, যদি কোন হাফেজ সাহেব বিনিময় ছাড়া তারাবীহ পড়ান, এবং কোন মুসল্লী সন্তুষ্টচিত্তে হাদীয়া স্বরুপ তাকে কিছু প্রদান করে, তাহলে জায়েয। কিন্তু আজ কাল এমন ভাবে প্রদান করা হয় যে, এটাও একপ্রকার বিনিময় হয়ে যায়। এজন্য এমনটা করা থেকেও বিরত থাকা চাই। এছাড়া এ উদ্দেশ্যে চাঁদা তোলার মধ্যে অনেক খারাপ দিক রয়েছে। এজন্য এটা পরিহার করা চাই। (ফতোয়া উসমানী: ১/৪৬০)

02/04/2024

যাকাতের কিছু জরুরী মাসায়েলঃ
১. যদি কোন সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন বালেগ মুসলমানের কাছে নিজের প্রয়োজনীয় আসবাব সামগ্রী, ব্যবহার্য দ্রব্যাদি ও বাসগৃহ ইত্যাদি ব্যতীত ঋণমুক্তভাবে যাকাতের নেসাব পরিমান সম্পদ থাকে অর্থাৎ সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ (৮৭.৪৮ গ্রাম) বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য (৬১২.৩৬ গ্রাম) কিংবা সমপরিমাণ টাকা বা ব্যবসার মাল থাকে এবং তার উপর বছর অতিক্রান্ত হয় তাহলে উক্ত সম্পদের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ শতকরা আড়াই পার্সেন্ট হারে যাকাত আদায় করা তার উপর ফরয। (আলমগীরী ১/১৭০-১৭৬, শামী ৩/১৭৩-১৭৯)
২. যদি কিছু স্বর্ণ, কিছু রূপা ও কিছু নগদ টাকা থাকে কিন্তু পৃথক পৃথকভাবে কোনটার নেসাবই পূর্ণ হয় না, তবে সবগুলোর মূল্য একত্রে যোগ করলে যে কোন একটির নেসাব পুরা হয়ে যায়, তাহলে তার উপর যাকাত ফরয হবে। - তাতারখানিয়া ২/১৭৪, আলমগীরী ১/১৭৯, শামী ৩/২৩৪
৩. যদি কারো কাছে বছরের শুরু ও শেষে নেসাব পরিমাণ মাল থাকে কিন্তু বছরের মাঝে ১/২ মাস নেসাব থেকে কম থাকে তাহলে তার উপর যাকাত দেয়া ফরয। হ্যাঁ, যদি বছরের মাঝে সম্পদ সম্পূর্ণরূপে নিঃশেষ হয়ে যায়, তাহলে পূর্বের হিসাব বাদ যাবে। পুনরায় যখন নেসাবের মালিক হবে তখন থেকে নতুন হিসাব ধরা হবে। এবং তখন থেকে এক বছর অতিবাহিত হলে যাকাত ফরয হবে।- আলমগীরী ১/১৭৫, শামী ৩/১৮৩ ও ২৩৩
৪. অর্থ-সম্পদের প্রত্যেকটা অংশের উপর পূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হওয়া শর্ত নয়। কাজেই কারো কাছে যদি বছরের শুরুতে ৪০,০০০/- টাকা থাকে আর তা বাড়তে বাড়তে বছরের শেষে এক লক্ষ টাকা হয়ে যায় তাহলে বছরের শেষে তাকে এক লক্ষ টাকার যাকাত দিতে হবে।- তাতারখানিয়া ২/১৯৩, আলমগীরী ১/১৭৫
৫. ব্যবসার উপকরণের উপর যাকাত আসে না। যেমনঃ মিল, কারখানা, দোকান, উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, মেশিন, ভাড়ায় খাটানো হয় এমন বাড়ি-গাড়ি, রিক্সা, সিএনজি, বাস, ট্রাক, লঞ্চ, স্টিমার ইত্যাদি। তবে এগুলো দ্বারা উৎপাদিত পণ্য ও উপার্জিত টাকা নেসাব পরিমাণ হলে তার যাকাত দিতে হবে।- শামী ৩/১৮৩, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া ৩/৫৩
৬. ব্যবসার মাল যার যাকাত আদায় করা শরীয়ত ফরয করেছে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে ঐ মাল যা মানুষ ব্যবসার উদ্দেশ্যে ক্রয় করেছে। যেমনঃ কেউ প্লট-ফ্ল্যাট, গাড়ি ইত্যাদি ভবিষ্যতে বিক্রি করে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে ক্রয় করল, এ সমস্ত মালের যাকাত আদায় করা ফরয। পক্ষান্তরে কারো যদি ক্রয় করার সময় দোদুল্যমানতা থাকে যে নিজের প্রয়োজনে ব্যবহারও করতে পারে, আর লাভ পাইলে বিক্রিও করতে পারে; তাহলে তা ব্যবসার মাল হিসাবে গণ্য হবে না এবং এর যাকাতও ওয়াজিব হবে না। হ্যাঁ, পরবর্তীতে তা বিক্রি করলে বিক্রয়লব্ধ টাকার যাকাত দিতে হবে। যদি সে পূর্ব থেকেই নেসাবের মালিক হয়ে থাকে তাহলে ঐ নেসাবের সাথে এ টাকারও যাকাত আদায় করবে। অন্যথায় এই টাকা নেসাব পরিমাণ হলে বছর অতিবাহিত হওয়ার পর এর যাকাত ওয়াজিব হবে।- আদদুররুল মুখতার ৩/১৯৪-৯৫, খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/২৪০, ফাতাওয়ায়ে বাযযাজিয়া ৪/৮৪, বাদায়েউস সানায়ে ২/৯২, আহসানুল ফাতাওয়া ৪/২৬৭, ফিকহী মাকালাত ৩/১৫১
৭. দোকান ও ব্যবসার মালের হিসাব তিন প্রকারে করা যায়। (১) খুচরা মূল্য (২) পাইকারী মূল্য (৩) সমস্ত মাল একত্রে বিক্রি করলে যে দাম হয়। যাকাতের হিসাবের সময় তৃতীয় প্রকারের মূল্যের হিসাবে যাকাত দিলেও চলবে। তবে সতর্কতামূলক দ্বিতীয় প্রকার অর্থাৎ পাইকারী মূল্যের হিসাবে যাকাত দেয়া উত্তম। -ফিকহী মাকালাত ৩/১৫০, ফাতাওয়ায়ে ওসমানী ২/৬৭
৮. বিক্রিত পণ্যের বকেয়া টাকা হস্তগত হওয়ার পর পেছনের বছর গুলোর যাকাতও একত্রে আদায় করতে হবে। আর যদি বকেয়া টাকা বা ঋণ ফেরত পাওয়ার আশা না থাকে, তাহলে যাকাত দিতে হবে না। তবে পেলে বিগত সকল বছরের যাকাত দিতে হবে।- আলমগীরী ১/১৭৫, শামী ৩/২৩৬-২৩৭
৯. স্বর্ণ ও রূপার উপর সর্বাবস্থায় যাকাত আসে, চাই তা অলংকার আকারে থাকুক কিংবা কাঁচা টুকরা আকারে। ব্যবহৃত হোক কিংবা বাক্সে সংরক্ষিত থাকুক বা কাপড়ে, টুপিতে চশমা ও ঘড়িতে কারূকার্যরূপে থাকুক সর্বাবস্থায় যাকাত আদায় করা ফরয।- আল-বাহরুর রায়ক ২/৩৯৪, শামী ৩/২২৭
১০. মহিলাদের মালিকানায় যে স্বর্ণ বা রূপার অলংকার থাকে এগুলো নেসাব পরিমাণ হলে এগুলোর যাকাত দেয়া তাদের উপর ফরয। নগদ টাকা না থাকলে এগুলো বিক্রি করে হলেও যাকাত আদায় করতে হবে। আর স্বামী যদি স্ত্রীর অনুমতি নিয়ে যাকাত আদায় করে দেয় তাহলেও যাকাত আদায় হয়ে যাবে। উল্লেখ্য, অলংকার যদি স্বামীর মালিকানায় থাকে আর স্ত্রীকে ব্যবহারের জন্য দেয় তাহলে সে অলংকারের যাকাত স্বামীকে আদায় করতে হবে।- আহকামুল কুরআন ৩/১৩৯, শামী ৩/২২৭, ফাতাওয়ায়ে মাহমূদিয়া ৩/১০৮
১১. স্বর্ণের সাথে যে পরিমাণ খাদ থাকে, খাদের অংশ বাদ দিয়ে শুধু স্বর্ণের অংশের যাকাত আদায় করাই যথেষ্ট। শামী ৩/২৩০, আহসানুল ফাতাওয়া ৪/২৭০
১২. প্রভিডেন্ড ফান্ডের টাকা হাতে আসার পর বছর অতিবাহিত হলে যাকাত ফরয হবে। কিন্তু যে টাকাটা চাকরীজীবীর হাতে আসার পর স্বেচ্ছায় ঐ ফান্ডে বা অন্য কোন কোম্পানীর নিকট হস্তান্তর করে, তার যাকাত প্রতি বছর আদায় করতে হবে।- শামী ৩/২৩৬, আহসানুল ফাতওয়া ৪/২৬০, মাহমূদিয়া ১৭/১১১
১৩. বিভিন্ন ব্যাংক ও কোম্পানীর শেয়ার যদি দাম বাড়লে বিক্রি করে দিবে এ উদ্দেশ্যে ক্রয় করা হয় তাহলে তার পূর্ণ বাজার দরের উপর যাকাত আসবে। আর যদি কোম্পানী হতে বাৎসরিক লাভ কামানোর উদ্দেশ্যে ক্রয় করা হয়, তাহলে কোম্পানীর যে পরিমাণ সম্পদ যাকাত যোগ্য (যা ব্যালেন্সশীটের সাহায্যে বেরা করা যাবে।) শেয়ার প্রতি তার আনুপাতিক হার যা হয় শুধুমাত্র রমাণের যাকাত দিতে হবে। তবে যদি যাকাতযোগ্য সম্পদের পরিমাণ জানা সম্ভব না হয় তাহলে সতর্কতামূলক শেয়ারের পূর্ণ বাজার মূল্যের যাকাত দেয়া চাই।- আল-বাহরুর রায়েক ২/৪০০, আহসানুল ফাতাওয়া ৪/২৮৭, ইসলাম আওর জাদীদ মায়িশাত ওয়া তিজারত, পৃ. ৯২-৯৪, ফাতাওয়ায়ে উসমানি ২/৭১
১৪. ইসলামী ব্যাংকগুলোতে যদি কেউ ১০/১৫ বছরের জন্য F.D.R করে এককালীন বা মাসে মাসে টাকা জমা করতে থাকে এগুলোর যাকাত হিসাব করার নিয়ম হলো যাকাতের বছর শেষে ঐ একাউন্ট ক্লোজড করলে মূল টাকাসহ যত টাকা লাভ পাওয়া যাবে পুরা টাকার যাকাত আদায় করতে হবে। উল্লেখ্য, সুদী ব্যাংকে F.D.R করলে প্রতি বছর মূল জমাকৃত টাকার যাকাত আদায় করতে হবে। যদি প্রতি বছর যাকাত আদায় না করে তাহলে মেয়াদ শেষে টাকা উত্তোলন করলে একসাথে পিছনের সকল বছরের মূল টাকার যাকাত আদায় করতে হবে। আর সূদের অংশ পুরাটাই সাদাকা করে দিবে।- জাদীদ ফিকহী মাসায়েল ১/২১৬
১৫. জীবন বীমা কোম্পানীর নিকট জমাকৃত প্রিমিয়ামের যাকাত আদায় করতে হবে।- ফাতাওয়ায়ে উসমানী ২/৭১
১৬. ব্যাংকে ব্যক্তি মালিকানাধীন সকল প্রকার একাউন্টে গচ্ছিত টাকার যাকাত আদায় করা জরুরী। তদ্রুপ বিভিন্ন সমিতি, সমবায় ও সোসাইটির মধ্যে সদস্যগণ মুযারাবা হিসাবে যে টাকা বিনিয়োগ করে থাকে, সেগুলো নেসাব পরিমাণ হলে বা অন্য মালের সাথে মিলে নেসাব পরিমাণ হলে যাকাত আদায় করা জরুরী।- ফাতাওয়া রহীমীয়া ২/১৪, আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল ৩/৩৭৫
১৭. ব্যাংকের একাউন্টে বা অন্য কোথাও গচ্ছিত টাকা তেমনিভাবে যেকোন যাকাতযোগ্য সম্পদ যদি বন্ধক রাখা হয় তাহলে তার যাকাত আদায় করা লাগবে না।- বাদায়েউস সানায়ে ২/৮৮, আল-বাহরুর রায়েক ২/৩৫৫
১৮. সিকিউরিটি মানি হিসাবে যে টাকা দোকান ও বাড়ির মালিকগণ গ্রহণ করে থাকে; যদি চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে তা ভাড়া বাবদ কর্তন করা হয়, তাহলে মালিকদেরকে ঐ টাকার যাকাত দিতে হবে। আর যদি তা ফেরতযোগ্য হয় অর্থাৎ দোকান বা বাড়ি ছেড়ে দিলে তা ফেরত দেয়া হয় ও মালিকগণ ঐ টাকা খরচ না করে আমানত হিসাবে রাখেন তাহলে ভাড়াটিয়াকে ঐ টাকার যাকাত দিতে হবে।- ফাতহুল কাদীর ২/১২১, জাদীদ ফিকহী মাসায়েল ১/২১৭-১৯
১৯. জমি, প্ল্যাট বা অন্য কিছু কিনে প্রাথমিক যে টাকা দিয়ে বায়না করা হয় সে টাকার মালিক বিক্রেতা। অতএব বিক্রেতাকে এর যাকাত দিতে হবে।- ফাতাওয়ায়ে উসমানী ২/৭২
২০. ঋণ দুই প্রকার (১) ব্যক্তিগত ও সাংসারিক প্রয়োজনে মানুষ যে ঋণ নেয়। যাকাতের নেসাব থেকে এ ধরনের ঋণের টাকা বিয়োগ করে বাকী মালের যাকাত দিতে হবে। (২) বাণিজ্যিক ঋণ যা বাণিজ্যিক স্বার্থে যেমন মিল-কারখানা করা, কাঁচা মাল ক্রয় করা ইত্যাদি এগুলোর জন্য যে ঋণ নেয়া হয় যদি তা দ্বারা যাকাতযোগ্য সম্পদ যেমন কাঁচা মাল ইত্যাদি ক্রয় করে, তাহলে এই ঋণও যাকাতের নেসাব থেকে বিয়োগ করা যাবে। আর যদি এর দ্বারা এমন সম্পদ ক্রয় করা হয় যা যাকাতযোগ্য নয় যেমন মেশিনারী জিনিস ইত্যাদি। তাহলে এ ঋণ যাকাতের মূল নেসাব থেকে বিয়োগ করা যাবে না। উল্লেখ্য, বাণিজ্যিক ঋণ দ্বারা যদি যাকাতযোগ্য মাল ক্রয় করা হয় তাহলে যাকাতের হিসাবের সময় আগামী এক বছরে পরিশোধযোগ্য পরিমাণ ঋণই শুধু বিয়োগ করা যাবে। এর অতিরিক্তটা এই বছরে বিয়োগ করা যাবে না। যে বছর পরিশোধ করবে ঐ বছর বিয়োগ করতে পারবে।- ফাতাওয়ায়ে ওসমানী ২/৮৩, ফিকহী মাকালাত ৩/১৫৫-৫৬, জাদীদ ফিকহী মাসায়েল ২/৬৭, ইসলাম আওর জাদীদ মাঈশাত ওয়া তিজারত, ৯৪
২১. কাউকে ঋণ দেয়ার পর আদায়ে গড়িমসি করলে তা যাকাত হিসাবে কর্তন করা যাবে না। হঁ্যা, যাকাতের টাকা তার হাতে দিয়ে পূর্বের পাওনা বাবদ তা উসূল করে নিতে পারবে। তাতারখানিয়া ২/১৯৯, তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ৭১৫
২২. যাকাত ওয়াজিব হওয়ার পর যদি যাকাত অনাদায়ী থাকে আর ইত্যবসরে সমস্ত মাল বরবারদ হয়ে যায় তাহলে আর যাকাত আদায় করা লাগবে না। আর যদি কিছু মাল বরবাদ হয় তাহলে ঐ অংশের যাকাত দেয়া লাগবে না। তবে যদি ইচ্ছাকৃতভাবে নষ্ট করে তাহলে যাকাত আদায় করা আবশ্যক।- আদদুররুল মুখতার ও শামী ৩/২০৭-২০৮
২৩. স্ত্রীর মহর অনাদায়ী থাকলে যদি তা পরিশোধ করার ইচ্ছা থাকে তাহলে যাকাতের নেসাব থেকে এই ঋণ বিয়োগ করে বাকী অংশের যাকাত দিলে চলবে। আর যদি পরিশোধ করার ইচ্ছা না থাকে তাহলে এটাকে এই বছরের নেসাব থেকে বিয়োগ করা যাবে না।- আলমগীরী ১/১৭৩
২৪. কেউ যদি হজের জন্য টাকা জমা করে তাহলে ঐ টাকার যাকাত আদায় করাও ফরয। হজের কাজে টাকা খরচ হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতি বছর ঐ টাকার যাকাত আদায় করতে হবে। আলমগীরী ১/১৭৩
২৫. কেউ যদি বাড়ি করার উদ্দেশ্যে টাকা জমা করে তাহলে বাড়ির কাজে ঐ টাকা খরচ হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতি বছর ঐ টাকার যাকাত আদায় করতে হবে। -নায়াদিদুরুল ফিকহ ১/৩৭৮-৩৮৪
২৬. যে মাল ক্রয় করার পর এখনো হস্তগত হয়নি তার যাকাত দেয়া লাগবে না। হ্যাঁ, হস্তগত হওয়ার পর যাকাত আদায় করা জরুরী।- আল বাহরুর রায়েক ২/৩৫৫ জাদীদ ফিকহী মাসায়েল ১/২১৯
২৭. হালাল ও হারাম মাল একত্রে মিশ্রিত হলে যদি হারাম মালের পরিমাণ ও মালিক জানা থাকে তাহলে তা মালিককে ফেরত দেয়া জরুরী। আর যদি পরিমাণ জানা থাকে; কিন্তু মালিক জানা নেই বা তাকে পৌছানো সম্ভব নয়; তাহলে এক্ষেত্রে ঐ টাকাগুলো মালিকের পক্ষ থেকে সাদাকা করে দিবে। পক্ষান্তরে যদি হারাম মালের পরিমান ও মালিক জানা না থাকে; আর হালাল মালের পরিমাণ হারামের চেয়ে বেশি হয় ও হারাম মাল চিহ্নিত করা না যায় এ ক্ষেত্রে সকল মাল একত্রে হিসাব করে পুরাটার যাকাত আদায় করা জরুরী।- শামী ৩/২১৭-২১৮, েইমদাদুল ফাতাওয়া ২/১৪, জাদীদ ফিকহী মাসায়েল ১/২১৬-২১৭
২৮. স্বর্ণ-অলংকার ছাড়া অন্য কোন ধাতুর অলংকার বা মুক্ত কিংবা অন্য কোন মূল্যবান পাথরের অলংকার ব্যবসার উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত না হলে এগুলোর যাকাত দেয়া লাগবে না।- আরুরুল মুখতা-১৯৪

Address

Rangpur
5400

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when JTH Jana Ojana posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Videos

Share