16/08/2022
ইউনিভার্সিটির হলের ছেলেগুলোকে কখনো বাবা কি করে জিজ্ঞেস করতে নেই, সবচেয়ে কাছের বন্ধুটাকেও না।
শেষবার আমি যখন একজন কে জিজ্ঞেস করেছিলাম সে অনেকক্ষন মাথা নিচু করে চুপ করে ছিলো,
তারপর বলল, “বাবা কিছু করে না”।পরে জানতে পেরেছিলাম তার বাবা অন্যের জমিতে কাজ করে, মানে একজন কৃষক।
সে সম্ভবত এটা স্বীকার করতে লজ্জা পাচ্ছিলো।
কিছুদিন আগে হলের সামনের মাঠে খালি জায়গাটাতে দাড়িয়ে, আকাশের দিকে তাকিয়ে,
যখন একটু আনমনে হয়ে যাই, ঠিক তখন বাতাসে কোন এক বালকের কাঁদো কাঁদো গলা ভেসে আসে,
"ফরম ফিল-আপ এর জন্য ১৭০০টা টাকা লাগবে বাবা, এ মাসে বাড়িতে টাকা পাঠাতে পারবো না..
ওপাশ থেকে কি বলা হয় শোনা যায়না, তবে বোঝা যায়, বাবা আর ছেলের মাঝে এব্যাপারে অনেকক্ষণ তর্ক হয়।
সেদিন পিকনিক এর প্ল্যান করার সময় কাছের এক বন্ধু কন্ঠস্বর খাদে নামিয়ে বলে,
“দোস্ত আমার বাবা রিক্সা চালায়, আমি পারবোনা তোদের সাথে যেতে।”
এ বলে সে উঠে যায়, হাঁটা শুরু করে, তার যাওয়ার পথে তাকিয়ে থাকি আমি, দূর থেকে বুঝতে পারি, শার্টের হাতা টা দিয়ে সে চোখ মুছছে, আজ সারারাত কাঁদবে।
বুকের মাঝে কেমন জানি হাহাকার করে উঠে।না থাক! আমিও যাবোনা।
‘একবেলা ভাত, একবেলা পানি’ খেয়েও এদের মাস চলে না, ওদিকে রিক্সাওয়ালা বাবা ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলেটার কাছে সংসারের হাল ধরার আশা করে।
ক্ষুধার্ত মা, ছোট-ভাইবোন গুলোকে বুঝ দেয়, “ভাইয়া টাকা পাঠালে..”
।
ছোটবোনটার বিয়ের খরচ মেটানোর দায়িত্ব এসে পরে তখন, যখন তার tsc তে গলা ছেড়ে গান গাওয়ার কথা
ছেলেটা তার স্বপ্ন বাদ দিয়ে অন্যেদের স্বপ্ন পূরণে লেগে যায়। এত কিছুর পরও ছেলেগুলো চা-দোকানে চা শেষ করে সবার আগে বিল দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসে,
আড্ডাশেষে কাছের বন্ধুটাকে বিদায় দেয়ার জন্য শেষপর্যন্ত অপেক্ষা করে, জীবনের প্রথম আয়ের টাকা দিয়ে মা’র জন্য শাড়ী কিনে আনে, অসুস্থ বাবা-টার জন্য টিউশনের টাকা থেকে ওষুধ কিনে পাঠায়!
গার্লফ্রেন্ড নামক অভিশপ্ত বিশেষ্যের আবরণ, তাদেরকে বিচ্যুত করতে পারেনা কক্ষপথ থেকে!
ছোটবোনটার বিয়ের জন্য টাকা জমায়, আবার ডিপার্টমেন্টে ফার্স্ট হয়, বিসিএস দিয়ে প্রশাসনে যায়-
দেশটাকে চালায়, কেমিস্ট্রি তে পড়ে,, দেশসেরা সাহিত্যিক হয়, রাষ্ট্রপতি হয়,নোবেল পুরষ্কার পায়,
হ্যা, এই ছেলেগুলোই!
দুই বেলা ঠিকভাবে না খেতে পারা ছেলেগুলোই...!
জয় হোক সব দুঃখী সন্তানদের!!!