27/08/2024
শতাব্দী সোম ম্যাডাম কতটা কষ্ট পেয়ে এ লেখাটি লিখেছেনঃ
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
এই অনুর্বর ভূ-খণ্ডেও 'শিক্ষকতা' যখন আমার মতো অধমের পেশা ও নেশা...
বেশ ক'দিন ধরে ভূপেন হাজারিকার বিখ্যাত গান 'বিস্তীর্ণ দু'পারে' মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে...
"নৈতিকতার স্খলন দেখেও
মানবতার পতন দেখেও
নির্লজ্জ অলসভাবে বইছো কেন?"
শিক্ষকদের বিরুদ্ধে চলমান নির্লজ্জ অপমান এবং 'ডাক্তার আসিবার পূর্বে রোগী মারা গেল' টাইপ তথাকথিত সুশীল অভিভাবকদের নির্লিপ্ততা নিয়ে লিখবো না লিখবো না করেও কেমন যেন হাত নিশপিশ করছে, তাই লিখছি, কারণ আমি এই দুর্ভাগা দেশের একজন অভাগা 'শিক্ষক'। আজকের লেখাটা শুধুমাত্র জেন জি'র উদ্দেশ্যেই।
মাতৃকুলের সূত্রে শিক্ষকতা আমার রন্ধ্রে, আমার মায়েরা সাত বোনের মধ্যে পাঁচ বোনই শিক্ষকতা পেশার সাথে যুক্ত ছিল। আমার বরাবরই ইচ্ছে ছিল পড়াশোনা শেষে শিক্ষকতার সাথে যুক্ত হবো, মনে হতো এটাই আমার কম্ফোর্ট জোন। মাস্টার্স শেষে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই চাকরি পেয়েও গেলাম নিজের যোগ্যতায়, কোনোপ্রকার মামা-চাচার মাধ্যম ছাড়া। দেখতে দেখতে ১৭ টা বছর কাটিয়ে দিলাম একই প্রতিষ্ঠানে, অংকুর সোসাইটি স্কুলে। "নুন খাই যার, গুণ গাই তার" সূত্রে আজ পর্যন্ত স্বজ্ঞানে প্রতিষ্ঠান বিরোধী কোনো কাজ করিনি, চেষ্টা করেছি স্টুডেন্টদের নিজের সর্বোচ্চটা দেয়ার।
কিন্তু এই প্রাণের স্কুলে এখন প্রতিদিন যাই রীতিমতো আতংক নিয়ে! দেশের বর্তমান অস্থির অবস্থায় ভয় পেতে যেন একপ্রকার বাধ্যই হচ্ছি!
মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছে, তথাকথিত জেন জি'র শিক্ষার্থীদের দ্বারা শিক্ষকদের নির্লজ্জভাবে অপমানিত হওয়া... এটাই কি শিক্ষকদের প্রাপ্য ছিল? সারা জীবন শুনে এসেছিলাম শিক্ষকরা হলেন দেশ ও জাতি গড়ার কারিগর, মা-বাবার পরেই শিক্ষকের অবস্থান। কিন্তু এখনকার বাস্তবতা তো তা বলছে না!
৬ আগস্ট স্কুল খোলার পর থেকে প্রতিটি ক্লাসে শিক্ষার্থীদের যথাসাধ্য বুঝিয়েছি 'জেন জি'র কর্মকান্ড কী হওয়া উচিৎ, জানতে চেয়েছি তাদের মনোভাবও, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে, দেশের বিষয়ে। একটা কথা জোর গলায় পরিষ্কারভাবে শিক্ষার্থীদের বলেছি... তোমরা আমাকে মারো, কাটো, যা ইচ্ছে করো, দালাল বলে ডাকো... হ্যাঁ, আমি অবশ্যই 'দালাল', আমি মুক্তিযুদ্ধের 'দালাল'!
এসব কথা বলার পর এখন কিন্তু আমি সত্যিই আতংকগ্রস্ত, কখন যেন আমার গলায় জুতার মালা ঝুলে! কখন যেন আমি শিক্ষার্থীদের দ্বারা শারীরিক ও মানসিকভাবে নিগৃহীত হই!
'জেন জি' শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে শেষ কথা এটাই... অপরাধ করলে মা-বাবা যেমন কোনো সন্তানকে মন থেকে অভিশাপ দেয় না, কিন্তু প্রকৃতি সেই কুসন্তানকে কোনো না কোনোভাবে ঠিকই শাস্তি দেয়। তেমনি একইভাবে যেসব শিক্ষার্থী পিতৃ-মাতৃসম শিক্ষকদের অপমান করছে তাদের হয়তো শিক্ষকরা মন থেকে অভিশাপ দিবেন না, কিন্তু প্রকৃতির অভিশাপে তোমরা আর যাই হও না কেন অন্তত 'মানুষ' হবে না!
বি.দ্র: নির্যাতিত শিক্ষকের ছবি যদিও দেয়া উচিত হয়নি আমার, তবুও এই কারণেই দিলাম... যেন 'জেন জি' শিক্ষার্থীদের আত্মা একটু হলেও কেঁপে ওঠে! শুধু একবার ভাবো, এঁরা তোমাদেরই বাবা-মা হতে পারতো!
লেখকঃ শতাব্দী সোম, সহকারি শিক্ষক, অংকুর সোসাইটি বালিকা উ/ বি।