Mira Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from Mira, Gaming Video Creator, Mohanpur, Rajshahi.

বিয়ে বাড়িতে এসেছি ৷ আরাম করে চেয়ারে বসে আছি ৷ হঠাৎ কিউট একটা বাচ্চা এসে উচ্চস্বরে বলল,“আব্বু, আমাকে টাকা দাও!"বাচ্চাট...
21/09/2023

বিয়ে বাড়িতে এসেছি ৷ আরাম করে চেয়ারে বসে আছি ৷ হঠাৎ কিউট একটা বাচ্চা এসে উচ্চস্বরে বলল,
“আব্বু, আমাকে টাকা দাও!"
বাচ্চাটার কথা শুনে আঁতকে উঠলাম ৷ চোখ কপালে তুলে বাচ্চা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে রইলাম ৷ পেটের নাড়িভুঁড়ি কেমন কেমন করে যেন নড়ছিল?৷ হতবুদ্ধি আমি এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখতে লাগলাম ৷ আর মনে মনে বললাম, “বাচ্চাটা কার হতে পারে? সত্যি সত্যি আমাকেই কি আব্বু বলে ডাকছে সে? বিয়েই করতে পারলাম না, এর আগে বাবা হলাম কেমনে?"
টাকা দিচ্ছিনা দেখে ছেলেটা আমার গায়ে মৃদ্যুভাবে আঘাত করছিল ৷ আর উ উ উ করে কান্না করছিল ৷ ছেলেটার কান্না দেখে একটা লোক আমার নিকট এসে বলল,
“ভাই, টাকা দিয়ে দেন, বিয়ে বাড়িতে এমনিতে গ্যাঞ্জাম তার উপর বাচ্চা ছেলের কান্না, সহ্য করা যায়না ভাই ৷ টাকাটা দিয়ে দেন!"
লোকটাকে কি জবাব দিব বুঝতেছিলাম না! এরমধ্যে একটা রুপবতী মেয়ে এলো ৷ তাকে কেন যেন চেনা চেনা লাগছিল? বাকা চোখে তাকিয়ে উত্তেজিত গলায় আমাকে বলল,
“এই তুমি এখনো বাবুকে টাকাটা দাওইনি! কেমন মানুষ তুমি? শুধু শুধু আমার ছেলেটাকে কাঁদাচ্ছ!
মাথার উপর বাজ পড়লো বলে মনে হলো ৷ নিজেকে মানসিক রোগী মনে হলো ৷ ভাবলাম কবে পাবনা থেকে ছাড়া পেয়েছি? কবেই বা পাগল হয়েছিলাম? নাকি মেয়েটা আর ছেলেটা সহ পাগল?
মেয়েটাকে কিছু না বলে চেয়ার ছেড়ে বন্ধুর রুমে গেলাম ৷ কিন্তু একটু পরই দেখি সেই মেয়েটা এসে হাজির ৷ এসেই ক্ষ্যাপা বাঘিনীর মত রুপ নিয়ে চেঁচিয়ে বলতে লাগল,
“কিপ্টামী কবে দূর হবে তোমার? সব জায়গায় কিপ্টামা কিন্তু চলেনা বললাম ৷ তাড়াতাড়ি টাকা বের করতে বলছি বের করো!"
আমার হয়ে বন্ধু বলে উঠল,
“আপু কি শুরু করছিস এগুলা?"
বন্ধুকে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিল মেয়েটি ৷ এরপর বলল,
“তুই চুপ থাক! আমার স্বামীকে যা ইচ্ছা তাই বলব, তোর কি তাতে?
আমি বন্ধুর দিকে ভূত দেখার মত করে তাকিয়ে রইলাম, বন্ধুও আমার দিকে!
বাধ্য হয়ে পকেট থেকে ১০ টাকা বের করে দিলাম ৷ টাকা দেখে মেয়েটি যেভাবে চোখ বানিয়ে তাকিয়ে রইলো, দেখে মনে হলো এখনই আমাকে কাঁচা গিলে খাবে ৷ মানিব্যাগ থাবড়ি দিয়ে ১হাজার টাকার কচকচা নোট নিয়ে নিলো! এরপর ভেংচি কেটে চলে গেল!
বিকেলে খেতে দেওয়া হলো বন্ধুর ঘরে ৷ বন্ধুকে নিয়ে খাচ্ছিলাম ৷ তখন সেই মেয়েটা রুমে এসে আমাকে নরম স্বরে বলল,
“এই তোমার না গরুর গোশত খাওয়া মানা? দাওতো গোশতগুলো দাও, তুমি মাছ দিয়ে খাও!"
এটা বলেই সে প্লেট থেকে সবগুলো গোশত তার প্লেটে নিয়ে নিলো ৷ আর আমার প্লেটে মাছের দুটা টুকরো দিলো!
মেয়েটার আচরণ দেখে আমার বন্ধু হা হয়ে গেল ৷ আর আমি হতভম্ব ও নির্বাক হয়ে প্লেটের মাছের দিকে তাকিয়ে রইলাম ৷ ভাবলাম বিয়ে খেতে তো আসিনি, ফেক বউয়ের জ্বালাতন সহ্য করতে আসছি ৷ এটা যে কোন গন্ডারের বউ? আল্লাহই ভাল জানেন! সেই ব্যক্তি এই পিসকে সহ্য করে কেমনে?
সন্ধ্যা পর মেয়েটা আমার হাত ধরে বরপক্ষের মেয়েদের আত্মীয়দের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল ৷ বলল, “এটা আমার স্বামী, ৬ মাস হলো বিয়ে করেছি ৷ সে আমেরিকাতে ইঞ্জিনিয়ারিং কাজে ব্যস্ত থাকে ৷ আমার খালাত বোনের বিয়ে খেতে আসছে ছুটি নিয়ে!"
মেয়েটার চাপাবাজি শুনে মাথা ভনভন করছিল ৷ চরকির মত করে ঘুরছিল ৷ মনে হচ্ছিল আকাশে উড়ছি পাখা ছাড়া ৷ কখন যে আকাশ থেকে ঠাস করে পড়বো কে জানে?
পড়লাম, যখন মেয়েটি বলল,
“জানেন, তাকে ভালবেসে পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম ৷ কিন্তু বাবা, মা শুরুতে মেনে নিতে চাইনি ৷ যখন তারা জানলো সে ইঞ্জিনিয়ার তখন আমাদের দুজনকে মেনে নিলো ৷ আমরা হানিমুন করেছিলাম সুইজারল্যান্ডে গিয়ে!"
এটা শোনা মাত্র বিষম খেলাম ৷ মেয়েটি আমার হাত ধরে নিয়ে গেল বন্ধুর রুমে ৷ পানি খেয়ে শান্ত হবার চেষ্টা করলাম ৷ এরপর গলা ঝেড়ে মেয়েটাকে ক্ষিপ্ত স্বরে বললাম,
“এই মেয়ে তোমাকে বিয়ে করেছি কবে? সেই যে আবল তাবল বকছো থামার খবর নেই! কি শুরু করছো হুম?
তখনই একটা লোক এসে মেয়েটাকে বলল,
“মায়া, তোর কাছে ৫হাজার টাকা হবে? মলির জামাইকে একটা ফোন গিফটি করব কিন্তু আমার কাছে তো টাকা নেই!"
মেয়েটা হাসি মুখে বলল
“বাবা, চিন্তা করোনা ৷ তোমার মেয়ের জামাই থাকতে কিসের টাকার চিন্তা?"
লোকটা ভরকে গেল মেয়েটার কথা শুনে ৷ কপালে ভাঁজ ফেলে লোকটা তাকিয়ে রইলো তার মেয়ের দিকে!
এবার মেয়েটা আমাকে বলল,
“ওগো, দাও! ৫ হাজার টাকা দাও তো?"
আমি ক্ষ্যাপা স্বরে জবাব দিলাম,
“আমি কেন এতগুলো টাকা দিব আপনাকে?
এবার সে আদুরে গলায় বলল,
“দাও বৱছি!"
আমি বললাম,
“কক্ষনো না!"
সে চেঁচিয়ে উঠে বলল,
“বলছি দাও"'
কেঁপে উঠলাম তার হুংকারে!
মেয়েটিই আমার পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে গুনে গুনে ৫ হাজার টাকা নিয়ে তার বাবার হাতে ধরিয়ে দিলো!
আমি কাঁদবো নাকি হাসবো বুঝতেছিলাম না ৷ বুঝলাম মেয়েটা আমার থেকে টাকা খসাতেই এই নাটক করছে!
মেয়েটার বাবা নরম গলায় বিস্ময়বোধ নিয়ে বলল,
“কিন্তু মায়া, সে কবে তোর স্বামী হলো? তুই কবে তাকে বিয়ে করলি?"
মায়া বলল,
“আর বলোনা বাবা, সেদিন ফেসবুকে লগিং করে দেখি অনিকের আইডিতে ট্যাগ করে এই লোকটি আমার একটা ফটো আপলোড করে পোস্ট করছে, ওতে লিখেছে “এটা আমার বউ, কেমন লাগছে বন্ধুরা?" তার স্ট্যাটাস দেখে শপথ করেছিলাম লোকটাকে উচিত শিক্ষা দিব ৷ অপরিচিত কাউকে বউ বলার স্বাদ মিটাব".
মেয়েটার কথা শুনে মনে পড়লো অনিকের দুষ্টুমির কথা ৷ ও তার খালাত বোনের ফটো দিয়ে বলেছিল ওর সাথে প্রেম করতে চাইলে নম্বর দিব ৷ ফটোটা দেখে ওর বোনকে পছন্দ হয়েছিল ৷ এজন্য দুষ্টুমি করে পোস্টটা করেছিলাম ৷ কিন্তু এতকিছু হবে কখনো ভাবিনি!
মেয়েটাকে বললাম,
“দুঃখিত, আমি বুঝতে পারিনি, সেদিনের কাজটার জন্য লজ্জিত আমি!"
মায়া ঝাঁড়ি মেরে বলল,
“রাখ তোর সরি, সাতদিনের মধ্যে তোর বাবা, মা কে আমাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসতে বলবি! নাহলে তোর খবর করে দিব! তোকে আমারও ভাললেগে গেছে ৷ একবার যেহেতু বউ বলেছিস, সেহেতু সেটা বাস্তবে পরিণত করতেই হবে তোকে!"
মায়াকে ছেলের বউ করতে বাবা, মা প্রস্তাব পাঠালো মায়ার বাবা, মায়ের নিকট ৷ তারা বিয়েতে রাজিও হলো ৷ বিয়ের দিন তারিখ ধার্য্য হলো!
আজ বিয়ে করতে যাচ্ছি! যেই মায়াদের বাসার নিকট পৌঁছ..
চলবে

___আচ্ছা বাবা, মা আর রাকিব আঙ্কেল দরজা আটকিয়ে কী করে?পাঁচ বছরের মেয়ের মুখে এই কথা শুনে মুহুর্তেই আমার অন্তরাত্মাটা কেঁপে...
21/09/2023

___আচ্ছা বাবা, মা আর রাকিব আঙ্কেল দরজা আটকিয়ে কী করে?
পাঁচ বছরের মেয়ের মুখে এই কথা শুনে মুহুর্তেই আমার অন্তরাত্মাটা কেঁপে উঠলো। কী বলবো বুঝতে পারছিনা আমার এতোটুকু মেয়েকে। আমি জিজ্ঞেস করলাম,,,
_কখন দেখেছো মা?
_তুমি যখন অফিসে থাকো তখন রাকিব আঙ্কেল আর মা ঐ রুমে দরজা আটকিয়ে কী যেনো করে। তখন আমার এই রুমে একা থাকতে খুব ভয় করে, জানো?

আমার এতোটুকু মেয়ের কথা শুনে শরীরের সমস্ত লোম দাড়িয়ে গেল। ঘামে ভিজে শরীর চুপচুপ করছে। মনে হচ্ছে কোন পঁচা ডোবা থেকে এই মাত্র একটা ডুব দিয়ে আসলাম। টেবিলে থাকা গ্লাসটা থেকে ডগডগ করে পুরো গ্লাসের পানি পান করলাম। তবুও কপাল থেকে চুইয়ে চুইয়ে ঘাম বেয়ে পরছে। আমার পাঁচ বছরের মেয়ে মুক্তা হঠাৎই আমার এ অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে গেল,,,
_বাবা কী হয়েছে? আম্মুকে ডাকবো?
_না মা তোমার আম্মু ব্যস্ত। আমার কিছু হয়নি। তুমি যাও টিভিতে কার্টুন দেখো।
আমার কথা মতো মুক্তা কার্টুন দেখতে চলে গেল। আমি এখনো এতোটুকু মেয়ের কথা শুনে ঠিক হতে পারছিনা। ভাবছি ওর মতো নিষ্পাপ বাচ্চা চারিপাশে যা দেখবে তাইতো বলবে। আর তাছারা ছোটবেলা থেকে ওকে কখনো মিথ্যা শিক্ষা দেইওনি আর বলেওনি।আমার স্ত্রী শারমিনকে বাবা মায়ের পছন্দেই বিয়ে করেছি। বিয়ের সাত বছরে আজ পর্যন্ত অন্যান্য মেয়েদের মতো কোন খারাপ অভ্যাস বা খারাপ চরিত্র পরিলক্ষিত হয়নি আমার নিকট। কিন্তু ইদানিং আমার সাথে কীরকম যেনো এড়িয়ে চলা ভাব দেখছি। আমি এতে তেমন কিছু মনে করিনা ভাবি হয়তো সংসারের কাজের চাপে এরকম করে। কিন্তু আজ আমার মেয়ে মুক্তার কথা শুনে আমার মাথা কীরকম যেন ভন ভন করছে। শারমিনের প্রতি আমার সন্দেহের তীর ক্রমেই ছুটে চলছে।
রাকিব আমার বাল্যকালের বন্ধু এককথায় বেস্ট ফ্রেন্ড বলা চলে। সরকারি চাকরির সুবাধে আমার এখানে পোস্টিং হয়। হঠাৎই একদিন বাল্যবন্ধু রাকিবের সাথে আমার দেখা হয়। বন্ধুত্বের জন্য মাঝে মাঝেই বাসায় আসে। আমি ভেবেছিলাম শারমিন এতে রাগান্বিত হয়। কিন্তু শারমিনের সেরকম কোন ভাবভঙ্গি আজ পর্যন্ত দেখিনি। বরং রাকিব বাসায় আসলে কীভাবে আপ্যায়ন করবে তার জন্য ব্যস্ত হয়ে যায়। একারণে শারমিনকে নিয়ে আমি এতোদিন গর্ববোধ করতাম যে সে অন্যান্য মেয়েদের মতো না।
কিন্তু আজ আমার মেয়ে মুক্তার কথা শুনে আর কিছু ভাবতে পারছিনা। রান্নাঘরে উকি দিয়ে দেখি শারমিন কী যেন রান্না করছে। ঘামে কাপর শরীরের সাথে লেপ্টে রয়েছে।অন্যান্য দিন হলে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরতাম কিন্তু এখন কীরকম যেনো ওর দিকে তাকাতেই ঘৃণা লাগছে।
নাহ এভাবে কোন কিছু তদন্ত না করে শারমিনকে কিছু জিজ্ঞেস করা যাবেনা। যা করার ঠান্ডা মাথায় করতে হবে এসব ভাবতে ভাবতে গোসল করতে চলে গেলাম। গোসল থেকে ফিরেই দেখলাম টেবিলে আমার প্রিয় গরুর মাংস। আগের চিন্তা বাদ দিয়ে খেতে বসলাম। ছুটির দিন সাধারণত আমার মেয়ে আমি হাত দিয়ে না খাইয়ে দিলে খায়না। তাই ওকে কোলে করে খাইয়ে দিলাম। খাবার পর্ব শেষেই দুপুরে আমি আবার ভাত ঘুম দেই। আমার মেয়ে এতক্ষনে ঘুমিয়ে গেছে। শারমিন থালা বাসন পরিষ্কার করে আমার পাশে এসে শুতেই আমি জড়িয়ে ধরলাম। শারমিন আস্তে করে আমার হাতটা সরিয়ে দিলো,,,
_কী হলো বাবু? এরকম করো কেন?
_আহ সরোতো এসব ন্যাকামি আর ভালো লাগেনা।
_এগুলো তোমার নিকট ন্যাকামি মনে হয়? কতদিন তোমাকে আদর করিনা সে হিসেব রাখো?
_শোনো মারুফ, এখন আমার ভালোলাগছে না। সারাদিন সংসারে কত কাজ করি সে দিকে তোমার খেয়াল আছে? তুমিতো অফিস থেকে এসেই খাবারের জন্য বসে পরো। খাবার তৈরি করতে কত কস্ট সেটাতো ভাবোনা।

আমি ওর এসব কথা শুনে আর কথা বাড়ালাম না। কস্ট আর রাগ দুটোই কাজ করছে এখন, ঝগড়ার ভয়ে আর কিছু বললাম না।এসব ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে গেলাম টের পেলামনা। আসরের আজান কানে আসার সাথে সাথেই উঠে পরলাম। শারমিন আর মুক্তা এখনো ঘুমাচ্ছে। আমি আর ওদের না জাগিয়ে বাহিরে একটু হাটতে বের হলাম। চায়ের দোকানে বসতেই পেপারটা হাতে নিলাম, হঠাৎই মাঝের দিকে একটা শিরোনামে চোখ আটকে গেল ""স্ত্রী আর স্ত্রীর প্রেমিক মিলে স্বামীকে গলা কেটে হত্যা""। শিরোনামটা পড়ার সাথে সাথেই শারমিন আর রাকিবের বিষয়টা আমার মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। নাহ আর সন্দেহ পুষে রাখা ঠিক হবেনা কালকের মধ্যেই সবকিছু তদন্ত করে মূল রহস্য উদঘাটন করতে হবে।
কিন্তু কীভাবে আসল ঘটনা বের করবো? ভাবতে ভাবতে হঠাৎই মাথায় একটা বুদ্ধি চলে আসলো। সিসি ক্যামেরাই পারে আমার সকল সন্দেহ দুর করে দিতে। যেই বলা সেই কাজ। দুটো সিসি ক্যামেরা কিনে ব্যাগের ভিতর লুকিয়ে বাড়িতে চলে আসলাম। এর মাঝেই অফিস থেকে কালকের জন্য ছুটি নিলাম।
পরদিন সকাল বেলা....
_এই ওঠো! কতো ঘুমাবে? অফিসে যাবেনা?
_আরে যাওতো একটু ঘুমোতে দাও।
_আরে অফিসের টাইমতো শেষ হয়ে গেল।
_আজকে অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি। এতোদিন অফিসে অনেক চাপ ছিল তাই আজকে সারাদিন বিশ্রাম নেবো।
ছুটি নেওয়ার কথা শুনে শারমিন মনে হয় খুশি হয়নি। চেহারাটা কেমন কালো হয়ে গেল।
_আচ্ছা তাহলে মুক্তাকে স্কুলে দিয়ে আসো।
_প্লিজ শারমিন। আজকে আমি একটু বিশ্রাম নেবো। তুমি যাও ওকে নিয়ে।

শারমিন মনে ক্ষোভ নিয়ে মুক্তাকে স্কুলে দিতে চলে গেল। এই সুযোগে সিসি ক্যামেরা দুটো বের করে একটি মেইন দরজার অপর পাশে আরেকটি বেডরুমে সেট করে দিলাম। এমনভাবে সেট করলাম যাতে কেউ বুঝতে না পারে।পরবর্তী পর্ব সবার আগে পড়তে ভিজিট করুন "কথা কাব্য" পেজ। এগুলো ওয়েব ক্যাম হওয়ায় অফিসে থেকেও আমি সবকিছু দেখতে পাবো।
পরদিন অফিসে বসে আছি। হঠাৎ ক্যামেরা গুলোর কথা মনে পরলো। কৌতুহলবসত কম্পিউটার থেকে ক্যামেরা অন করলাম। এই সময়ে মুক্তা স্কুলে থাকে। দেখলাম বেডরুমে বসে শারমিন কার সাথে যেনো ফোনে কথা বলছে খুব উৎফুল্লভাবে। ধুর তার মানে শারমিনের উপর শুধু শুধুই সন্দেহ করলাম? হঠাৎ বেডরুম থেকে উঠে শারমিন মেইন গেট টা খুলে দিলো। কৌতুহলবসত ভালোভাবে তাকাতেই দেখি রাকিব। শারমিনকে দেখার সাথে সাথেই ওকে কোলে তুলে নিয়ে ঘুরাচ্ছে। অতঃপর বেডরুমের ভিতর ঢুকেই শারমিনকে খাটে ফেলে দিলো অতঃপর শারমিনের উপর উঠে বসলো।

এটা দেখার সাথে সাথেই আমি কম্পিউটার অফ করে দিলাম। সারা শরীর ঘেমে একাকার। আমি বুঝতে পারছিনা কী করবো। মনে হচ্ছে জানালার গ্লিলগুলোকে চিবিয়ে খাই.....

গল্পঃ_সন্দেহ
পর্ব ০১

সাড়া পেলে নেক্স দিবো।

ফিজিক্যাল রিলেশন ?????আকাশ  : হ্যা , আমাদের রিলেশন তো অনেক দিন এর হলো এবার তাহলে ফিজিক্যাল রিলেশনে যাওয়া যাক ?নিলা  :  ক...
21/09/2023

ফিজিক্যাল রিলেশন ?????
আকাশ : হ্যা , আমাদের রিলেশন তো অনেক দিন এর হলো এবার তাহলে ফিজিক্যাল রিলেশনে যাওয়া যাক ?
নিলা : কি বলছো এসব ? ( আশ্চর্য হয়ে )
আকাশ : মনে হয়না এমন কিছু বলেছি যা তুমি বুঝতে পারছোনা ।
নিলা : তোমার কি শরির খারাপ করলো নাকি ? এমন বাজে কথা কেনো বলছো তুমি ? ( মুখে যথেষ্ট বিরক্তির ছাপ নিয়ে )
আকাশ : বাজে কথা ? আমার কথা এখন তোমার কাছে বাজে মনে হচ্ছে ? আমার জন্য তোমার মনে একটুও ভালবাসা থাকলে আজ আমার কথা বাজে মনে হতোনা ।
নিলা : ছি আকাশ !!! তোমার থেকে এসব শুনব কখনোই আশা করিনি ।
আকাশ : এখানে ছি বলার আর আমার থেকে এসব আসা না করার কি আছে ? ছেলেরা মেয়েদের কাছে এরকম কিছু আশা করবে এটাই স্বভাবিক । আমার ফ্রেন্ডরা তো কিছুদিন পর পরই নতুন নতুন মেয়ের সাথে রুম ডেট করে । সেখানে আমি তো শুধু তোমার সাথেই রুম ডেট করতে চাচ্ছি । এখানে ভুলের কি আছে ?
নিলা : আকাশ ? আমি তো তোমায় সব ছেলের মতো ভাবতাম না । সবার থেকে আলাদা চিন্তাভাবনার একজন মানুষ ভাবতাম । (চোখের কোনায় আশ্রু জমলো নিলার)
আকাশ : (করুন চাহুনিতে) আচ্ছা বাদ দাও ওসব কথা । চলোনা, প্লিজ..........এটা তেমন কিছুই তো না ।
নিলা : চুপ.....বেহায়া....
আকাশ : আমায় বেহায়া বললা ? আজ তোমার মনে আমার জন্য বিন্দুমাত্র ভালবাসা থাকলে আমাকে ফিরিয়ে দিতে না ।
নিলা : যা মন চায় বলো .......
আকাশ : আরে আরে , দারাও......কোথায় যাচ্ছ ???

ততোক্ষনে নিলা পার্ক এর বেঞ্চ থেকে উঠে সেখান থেকে চোলে আসার উদ্দেশ্যে হাটা শুরু করেছে । আকাশ পেছন থেকে ডাকছে , কিন্তু নিলা আর পেছনে ফিরতে চায়না । দ্রুত পায়ে হেটে নিলা পার্ক থেকে হেটে বাহিরে চলে আসলো । দুইপাশের গাছগুলো আর নিলা ব্যাতিত রাস্তায় আর কেউ নেই । সূর্যের আলো সন্ধার আঁধারে বিলিন হয়ে যাচ্ছে । এই দৃশ্যটা এতোটাও খারাপ না। অন্যদিন হলে নিলা এই দৃশ্যটা আবশ্যই উপভোগ করতো । কিন্তু আজ সে এসব কিছুই খেয়াল করছেনা । তার মনে এখন অন্য চিন্তা বিরাজ করছে । নিলা ভাবছে....
কি হলো হঠাৎ আকাশের ? আকাশ কি নিলার সাথে মজা করছে ? আকাশ তো প্রায় নিলার সাথে মজা করে । একদিন বড় রকমের মজাও করেছিলো । ওইদিন সকালে নিলাকে ফোন করে বললো ওর নাকি অনেক শরীর খারাপ কিন্তু ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কেউ নেই । নিলা ভালো করেই জানতো আকাশের বাবা ব্যবসার কাজে বেশির ভাগ সময় বাহিরে থাকতো আর আকাশের মা না থাকায় কয়েকজন কাজের লোক ছাড়া আকাশের দেখাশোনার জন্য কেও নেই । নিলা আকাশের অসুস্থতার কথা শুনে অনেক চিন্তিত হয়ে পরে । সেইদিন সারাদিন হাল্কা হাল্কা বৃষ্টি হচ্ছিলো । তবুও নিলা তার প্রিয়জনের কথা চিন্তা করে বৃষ্টির ভেতরেই আকাশদের বাসায় চলে যায় । কিন্তু আকাশের দরজার সামনে গিয়ে নিলা ভয় পাচ্ছিলো অনেক । হাজার হোক, নিলা তো একজন মেয়ে তাও আবার একা । দরজায় নক করতেই দরজা খুলে যায় । নিলা ভয়ে ভয়ে বাসায় প্রবেশ করে । বাসায় কেমন জানি পোড়া পোড়া গন্ধ । ভালো করে খেয়াল করে দেখে গন্ধটা রান্নাঘর থেকে আসছে । নিলা রান্না ঘরে উকি মারতেই আকাশ রান্নাঘর থেকে বের হয়..
আকাশ : এসেছো ? ওয়েট দরজা লাগিয়ে আসি ।
(দরজা লাগাতেই নিলা ভয়ে কেপে উঠলো)
নিলা : তুতুমি না অঅসুস্থ ?? (তোতলাতে তোতলাতে)
আকাশ : আরে, এটা না বললে তুমি কি আসতে এখানে ?
নিলা : কেন আসতে বলেছিলে তাহলে ?
আকাশ : আসলে আজ তো বৃষ্টি , তাই সকাল থেকে খিচুরি রান্না করার চেস্টা করছিলাম । ভেবেছিলাম তোমায় আমি নিজে রান্না করে সারপ্রাইজ দেবো ।
নিলা : তুমি রান্না করবে দেখে আমায় ডেখেছো ? (স্বস্তির হাসির সাথে)
আকাশ : হ্যা , কেনো ? তুমি কি ভেবেছিলা ?
নিলা : না , কিছুনা । কই রান্না করেছো দেখি ?
আকাশ : চলো, রান্না ঘরেই আছে । পাতিলের নিচের দিকের খিচুরি একটু পুরে গেছে কিন্তু উপরে ভালো আছে ।
তারপর দুজন মিলে খাবার টেবিলে বসে নিলা মুখে খাবার তুলতেই নিলার মুখটা কেমণ জেন তিতা তিতা দেখাচ্ছে । আকাশ নিলাকে জিজ্ঞেস করলো..
আকাশ : কি হলো ? অনেক স্বাধ হয়েছে না ?
নিলা : (যথেষ্ট রাগের সাথে) দেখ আকাশ আমার মনে হয়না তোমার রান্না করা উচিত ?
আকাশ : কেন ?
নিলা : এটা কিছু হলো ? না ঝাল বা লবন ? আর তিতা তিতা হয়ে গেছে পুড়ে !!!!!!!
ওইদিন আকাশের হাতের খিছুরির কথা মনে করলেও মুখ তেতো হয়ে যায় ।
কিন্তু আজকে আকাশের কি হলো হঠাৎ ?
রাতে যখন ফোন দিয়ে বল্লো পার্কে সন্ধার আগে দেখা করতে । বলেই ফোন টা কেটে দিয়েছিলো । সারাদিন আকাশের বন্ধ ছিলো বলে বিকেলই বলা পার্কে আসলো । নিলা এসে বেশ কিচ্ছুক্ষণ অপেক্ষার পর আকাশ এসেই নিলার কাছে এমন অপ্রত্যাশিত কিছু বললো ।
কিন্তু নিলা এখন দ্বিধায় পরে গেছে । সেদিন বাসায় একা পেয়েও যে ছেলে নিলার কনো ক্ষতি করলো না আজ কিভাবে সে নিলাকে এমন কুপ্রস্তাব দেবে ?
না, নিলা আর কিছুই ভাবতে পারছেনা । রাত নাম্বে নাম্বে ভাব তাই নিলা হাটার গতি বাড়িয়ে দিল হোস্টেলের উদ্দেশ্যে । হঠাৎ একটা কালো গাড়ি এসে নিলার পথ আটকে দিলো । নিলা কিছু বুঝে ওঠার আগেই গাড়ির পেছনের দরজা খুলে আকাশ বের হয়ে নিলার হাত ধরলো । নিলা বললো...
নিলা : হাত ছাড়ো বলছি !!!!!!
আকাশ : ওরে আসছে আমার "হাত ছাড়ো" । অনেক দেখসি তোর ন্যাকামু , আর না । তোর মতো গেয়ো ভুতের পেছনে অলরেডি অনেক বেশি সময় নষ্ট করে ফেলেছি ।
নিলা কিছু বলার আগেই আকাশ নিলার মুখ বেধে ফেললো আর হাত ধরে টেনে হিচরে গাড়িতে তুল্লো ।
নিলা হাত দিতে আকাশকে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে বেড় হতে চাইলে আকাশ তার হাত বেধে গাড়ির দরজা লাগিয়ে দেয় । সামনের সিটে বসে থাকা একটি ছেলে পিছের দিকে হয়ে আকাশকে বললো
"দোস্ত, অনেক দিন পর মজা হচ্ছে আজকে "
তারপর আকাশ বললো..
আকাশ : আরে মজার তো কিছুই হয় নাই এখনো, আসল মজা তো বাকিই আছে । হা হা হা...........
(সামনে ড্রাইভারকে বলে)
ড্রাইভার চলো......
নিলার সামনের দিকে তাকিয়ে ড্রাইভারকে দেখলো । ড্রাইভার একটু মিচকি হাসি দিয়ে গড়ি স্টার্ট করলো । এই লোকটাকে সে আগে দেখে নি । লোকটার বয়স অনেক । নিলা ভাবছে এই লোকটা মানুষরুপি জানোয়ার কারণ, তার মেয়ের বয়োসি একটা মেয়ের এত্ত বড়ো একটা ক্ষতি হতে যাচ্ছে আর সে এই কাজে বাধা না দিয়ে সাহায্য করছে । এই লোককে আর কি বলবে ?
যাকে সে এত্তো ভালোবাসতো এত্তো ভরসা করতো সেই আজকে এত্তো বড়ো ক্ষতিটা করবে আর কাকেই বা কি বলবে ।
গাড়ি চালু হওয়ার সাথে সাথে আকাশ নিলার চোখে কাপর বেধে দিলো । নিলার পৃথিবীতে অন্ধকার নেমে আসলো । নিলার রাগ আস্তে আস্তে ভয়ে পরিনত হতে লাগলো । সেই ভয় যেই ভয়ে সে সবসমায় পালিয়ে এসেছে ।
নিলা আগে গ্রামে থাকতো । মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে নিলা । লিখাপড়ার অনেক ইচ্ছে তার । কিন্তু চেয়ারম্যানের ছেলের জন্য ওর চলাফেরায় বেশ সমস্যা হচ্ছিলো । নিলা দেখতে সুন্দর হওয়ায় চেয়ারম্যানের ছেলের কুনজর নিলার উপর পরে । সেই ভয়ে নিলাকে নিলার বাবা মা খালার বাসায় পাঠায় দেয় । নিলা খালার বাসা থেকেই SSC আর HSC পাস করে । কিন্তু তবুও সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকতো নিলা । নিলা ক্লাস নাইনে পড়তে তাদের গ্রামের এক মেয়েকে তুলে নিয়ে গেছিলো চেয়ারম্যানের ছেলে আর তার বন্ধুরা । নির্মমভাবে মানুষরুপী জানোয়ারগুলো ছিড়ে খেয়েছিলো মেয়েটির শরীর । তুলে নিয়ে যাওয়ার পড়ের দিন সকালে বাড়ির সামনে অর্ধ উলঙ্গ রক্তাক্ত দেহটিকে তারা গাড়ি থেকে ফেলে দিয়ে গেছিলো । মেয়েটি সবার সামনেই গলাকাটা মুরগির মতো ছটফট করেছিলো কিছুক্ষণ । তারপর শেষ নিশ্বাস ছেড়েছিলো মেয়েটি । এখন ছোটবেলায় দেখা ওই দৃশ্যটাই ভেসে উঠছে চোখের সামনে । নিজের সাথে কি হতে চলেছে এটা ভাবতেই কেপে কেপে উঠছে নিলা...............

(এত্তক্ষন সময় নিয়ে গল্পটা পড়ার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ । আমার এই গল্প আপনাদের একটুও ভালো লেগে থাকে তাহলে এই গল্পের ২য় পাবেন )

'রাতের কান্না২য়_পর্বমেহেরুন বললো,' আমি ততোটুকুই বলতে পারবো যতোটুকু বলার সাহস আমার আছে। কিন্তু তুমি এইটুকু জেনে রাখো যে,...
21/09/2023

'রাতের কান্না
২য়_পর্ব
মেহেরুন বললো,' আমি ততোটুকুই বলতে পারবো যতোটুকু বলার সাহস আমার আছে। কিন্তু তুমি এইটুকু জেনে রাখো যে, আমি এখানে একটা দাসীর চেয়েও খা*রাপ অবস্থায় আছি। তাছাড়া কোন একটা কারণে আমি নিজ থেকেই চুপ থাকবো। তুমি কিংবা অন্য কেউ কোনদিন আমার গোপন কথাগুলো জানতে পারবে না। কোনদিন না।'
এই যে কথাগুলো বললো মেহেরুন, বলতে গিয়ে তার নাকের পাটা কাঁপলো।চোখের পাতা তিরতির করে উঠলো।আমি তো জানি, সে সব কিছুই আমায় বলতে চাইছে কিন্তু কোন এক কারণে বলতে পারছে না। এই যে বলতে পারছে না এই জন্য ওর এরকম কষ্ট হচ্ছে।
উপরের কথাগুলো বলে সে তার পিঠ দেখালো। শাড়ি সরিয়ে তলপেট দেখালো। বুকের উপরিভাগ যতোটুকু সম্ভব দেখালো।
ওর শরীরের এই অংশ গুলো দেখে আমি আঁতকে উঠলাম। একটা ফুটফুটে সুন্দর মেয়েকে কি করে এরকম করে ক্ষত -বিক্ষত করে মানুষ? ইশ্!
ওর বুকের উপরটা পোড়ানো। ছোট ছোট ক্ষত।কালচে হয়ে আছে।পেটেও ওরকম।পিঠেও।
অসংখ্য দাগ।গোল গোল দাগ।
আমি ওর হাত ধরে জিজ্ঞেস করলাম,' এসব কি করে হলো মেহু?'
সে কিছু বলতে যাবে এরিমধ্যে জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললো,' তুমি এখান থেকে চলে যাও। এক্ষুনি যাও বলছি।'
আমি বললাম,' কেন? কি সমস্যা?'
মেহু আমার পা ধরে ফেললো। কাঁদতে কাঁদতে বললো,' যাও না প্লিজ! দোহাই লাগে!'
রাগে আমার শরীর কাঁপছে।কার প্রতি এই রাগ? কেন এই রাগ? মেহেরুনের কষ্ট দেখে? ওর কষ্ট দেখে আমার এরকম হবে কেন? ও তো আমার বোন না।রক্তের কেউ না। তবুও ওর এসব দেখে আমার ভেতর জ্বলবে কেন?
তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে এলাম আমি।
আমি বেরিয়ে আসার খানিক পরেই টের পাই মেহেরুন কেন আমায় বের হয়ে আসতে বললো এভাবে! রাতুলের মা এসে গেছে। আমি টের না পেলেও সে টের পেয়েছে আগে ভাগেই। কতোটুকু ভয় ভেতরে থাকলে মানুষ এভাবে কান পেতে রাখে।চোখ খুলে রাখে সব সময়।
কিচেনে এসে দেখি ভাতের অবস্থা খারাপ। দীর্ঘ সময় ধরে চুলোর উপর থাকায় জল শুকিয়ে হাঁড়ির তলানির কিছু ভাত পোড়েও গেছে।পোড়া গন্ধ বেরিয়েছে।
'
আমার শাশুড়ি কিচেনে এলেন গন্ধ শুঁকে শুঁকে। এসে বললেন,' জেসি, ভাত পোড়ে গেছে নাকি?'
আমি আস্তে করে বললাম,' জ্বি।'
কিছুটা ভয় আমার কাজ করছে।এ বাড়িতে নতুন আমি। এখানে আমার আপন কেউ নেই। ইচ্ছে করলেই তো এখন আমি গলা বড় করতে পারবো না। তাছাড়া ভাত যে পোড়েছে তাও আমার দোষেই।খেয়াল রাখিনি ভাত বসিয়ে।
আমি ভাবলাম, শাশুড়ি খুব বকাঝকা করবে।কথা শোনাবে।
কিন্তু আমায় অবাক করে দিয়ে তিনি কিচ্ছু বললেন না। শুধু এটুকুই বললেন,' ডেকচির ভালো ভাত গুলো অন্য একটা ডেকচিতে তুলে রাখো।আর বাকিগুলোতে পানি দিয়ে রেখে দেও।নরম হলে আমি ঘষেমেজে ধুয়ে নিবো।'
আমি বললাম,' ঠিক আছে মা।'
রাতুলের মা এবার বললেন,' তোমাকে একটা ভালো উপদেশ দেই মা? আমি তো তোমার মায়ের মতোই।মা ছেড়ে এখানে এসেছো যখন।সারা জীবন তো এখানেই তো থাকবে। এখন তোমার ভালো মন্দ তো আমিই দেখবো তাই না! '
আমি ভালো থাকা ভাত গুলো অন্য ডেকচিতে রাখতে রাখতে বললাম,' জ্বি মা। এখন আপনিই তো আমার মা।মা তো মেয়ের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে উপদেশ দেয় না।নিজ থেকেই দেয়।'
আমার শাশুড়ি আমার কাছে এগিয়ে এলেন। এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,' তুমি এই বাড়ির বউ তাই না মা?'
আমি বললাম,' জ্বি মা।'
তিনি মৃদু হাসলেন। হেসে বললেন,' তোমার কাজ নিজের সংসার ঠিক ভাবে করা। স্বামীর সেবা করা। সন্তানের দেখভাল করা ,শাশুড়ির উপদেশ মানা ।বুঝছো?'
আমি বললাম,' জ্বি মা।'
তিনি চকির উপর বসতে বসতে আবার বললেন,' এক গ্লাস ঠান্ডা পানি এনে দাও তো মা। আমার শরীরটা খারাপ লাগছে!'
আমি তাড়াহুড়ো করে গ্লাস ধুয়ে ঠান্ডা পানি এনে দিলাম। তিনি ঢকঢক করে পানি গিলছেন। এই সময় তার দিকে লক্ষ্য করলাম। দেখলাম, তার কপাল ঘামছে।কেউ যদি কখনো দুশ্চিন্তা করে তখন এরকম হয়। এবং এরচেয়ে বড় কথা, তিনি যখন আমার সঙ্গে এই কথাগুলো বলছিলেন তখন তার শ্বাস প্রশ্বাস খুব দ্রুতগামী হয়ে উঠছিলো ।
পানি খেয়ে শেষ করে গ্লাসটা আমার হাতে দিলেন তিনি। তারপর ঠোঁটে লেগে থাকা পানি হাতের পিঠ দিয়ে মুছতে মুছতে আমায় বললেন,' একটা কাজ ভুলেও করবা না মা। কখনোই না।'
কথাটায় কিছুটা ধার ছিল।
আমি বললাম,' কি মা।'
তিনি বসা থেকে উঠতে উঠতে বললেন,' সবকিছু জানার চেষ্টা করবা না। অতি কৌতুহল দেখাইবা না ‌। সাংবাদিকগিরি বিপদ ডেকে আনে।ঘরের বউদের কাজ সাংবাদিকগিরি করা না। সংসার করা।বুঝলা?'
আমি কোন কথা বললাম না।চুপ হয়ে রইলাম।
তিনি এখান থেকে চলে গেলেন।চলে যাবার পর আমি বুঝতে পারলাম, তিনি সব বুঝে ফেলেছেন। অর্থাৎ আমি যে মেহেরুনের ঘরে গিয়েছিলাম তা তিনি বুঝেছেন।ভুলটা আমারই।ওর ঘরে যখন গেলাম তখন বাইরে থেকে ওর ঘরের দরজার শেকল আটকানো ছিল।আমি তা খুলে ঢুকেছিলাম। কিন্তু তাড়াহুড়ো করে ওখান থেকে বেড়িয়ে আসার সময় দরজা ভেজিয়ে আসলেও শেকল আটকাবার কথা মনে ছিল না!
আমি কিছুই ভেবে পাচ্ছি না।এ কোন বাড়িতে এসে পড়লাম আমি? এ কেমন ভাগ্য আমার?
'
রাতুল ফিরলো মাঝ দুপুরে। তার মুখ হাসি হাসি। মিষ্টি লাগছে দেখতে।কি কোমল চেহারা তার।যে একবার দেখবে আপ্লুত হবে। ভাববে দেবদূত।সাক্ষাত ফেরেশতাহ। আসলেই কি সে ফেরেশতা? নাকি মুখোশের আড়ালে আজাজিল শয়তান? কে জানে!
রাতুলের একটা হাত পেছনে ছিল। আমার কাছ অব্দি একটা হাত পেছনে রেখেই এসেছে। তারপর কাছে এসে পেছনের হাতটা সামনে এনে মিষ্টি মিষ্টি হাসির রেণু ছড়িয়ে দিয়ে বললো,' আই লাভ ইউ জেসি।'
আমার দিকে তার বাড়ানো ডান হাতটায় লাল টকটকে একটা গোলাপ।আমি কি করবো বুঝতে পারছি না।রাতে আমার সঙ্গে ভীষণ বাজে ব্যবহার করেছে সে। এখন এসে বলছে 'আই লাভ ইউ'। ভালোবাসার প্রতীক গোলাপও উপহার দিচ্ছে।আমি কি তা নিবো? নেয়া উচিৎ আমার?
যা হবার পরে হবে। অনেক কিছুই দেখার বা করার বাকি এখনও। আমি অতোটা নরম মেয়ে না যে সে আমায় কাঁদামাটি করে তার যখন যা ইচ্ছে করে সেভাবে আমায় গড়বে। অসম্ভব।আমি আমার মতোই।সব ঝড় সামলে নিবো। তারপর নতুন শক্তি হয়ে আঁচড়ে পড়বো তার উপর। তাদের উপর।যদি ভুল হয় ওরা, তবেই কেবল।
আমি হাত বাড়িয়ে গোলাপ গ্রহণ করলাম। মিষ্টি করে হাসলাম।ওর বাহু আঁকড়ে ধরে বললাম,' কোথায় চলে গিয়েছিলে? আমার খুব ভয় করছিলো!'
রাতুল আমায় জাপটে ধরলো।আদর করে চু*মু খেয়ে বললো,' আর যাবো না। হঠাৎ রাগ পেয়েছিলো খুব। তুমি রাতে অমন করেছিলে কেন? ছুঁতেই দাওনি।বউয়েরা তাদের বরদের সঙ্গে এরকম করে কখনো? আমার সহ্য হয়নি। মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছিল।মন খারাপও হয়েছিল।তাই চলে গিয়েছিলাম।'
রাতুল আমায় শক্ত করে বুকের সঙ্গে মিশিয়ে ধরলো।ওর এই আদর, চু*মু, ছোঁয়া, বুকের উত্তাপ এসবের কোনো কিছুই আমি ভালো ভাবে নিচ্ছি না। খারাপ ভাবেও নিচ্ছি না।আমি শুধু দেখতে চাই।যা আমার মনের ভেতর বাজছে।যা আমার সন্দেহ হচ্ছে।
রাতুলকেও আমি আঁকড়ে ধরলাম। রাতুল আমায় জাপটে ধরে দরজার উল্টো দিকে তাকিয়ে আছে। ঘরের ভেতরের দেয়ালের দিকে ওর মুখ।আর আমি দরজার সামনের দিকে তাকিয়ে আছি। তখনই আমার নজরে এলো দৃশ্যটা। মেহেরুন তার ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখে আঁচল চেপে ধরা। সে কাঁদছে। কাঁপছে থরথর করে। কিন্তু তার এই কান্নার কোন আওয়াজ হচ্ছে না। আচ্ছা সে কি দেখতে পেয়েছে রাতুল যে আমায় গোলাপ দিয়েছে? ভালোবাসি বলেছে? এই যে আদর করছে, এসব কিছু?
যদি দেখতে পায় তবে তার দুঃখ পাওয়ার কি আছে এতে? সে না রাতুলের বোন? ওর সমস্যা কি তাহলে? হঠাৎই আমার মনে একটা সন্দেহ উঁকি দিলো। আচ্ছা, এরকম কি হতে পারে যে, রাতুল কোন কারণে মেহেরুনের স্বামীকে মে*রে ফেলেছে? মা*রার কারণও তো থাকতে পারে।
এরকম একটা ঘটনা আমাদের এলাকায় ঘটেছিল।মেয়েটি অন্য ধর্মের একটি ছেলেকে নিয়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছিল। দীর্ঘদিন ওরা লুকিয়ে ছিল। তারপর কিভাবে কিভাবে যেন এদের খোঁজ মিলে।মেয়ের বাবা ততোদিনে মারা গিয়েছে।ভাইয়েরা বোনকে মৃত্যুর সংবাদ দিলো।বললো, স্বামী নিয়ে এসে বাবাকে শেষ দেখা দেখে যেতে। জীবিত থাকতে তো পারেনি। এবার এসে বাবার লাশের পা ধরে হলেও যেন ক্ষমা নিয়ে যায়। বাবা মরেছে বলে কথা। নিজের জন্মদাতা পিতা।যে আদর করে কোলে করে স্কুলে নিয়ে যেতো। মেলায় নিয়ে ঘুরতো। সুন্দর জামা জুতো কিনে দিতো।নিজে ভালো না খেয়ে তাকে খাওয়াতো। সেই বাবার মৃত্যুতে কি সে না এসে পারে? সে পাগল হয়ে গেল বাবাকে শেষ দেখা দেখে যেতে এসে। তার অন্য ধর্মের স্বামী বুঝালো তাকে।বললো, ওরা প্রতিশোধ নিতে পারে। মেয়ে শুনলো না।বললো, তুমি না গেলেও আমি যাবো। ছেলে নিরূপায়। মেয়েকে সে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসে।শেষে, সেও সঙ্গে গেল। কিন্তু কপালে তার মৃত্যু লিখা ছিল। মেয়ের ভাইয়েরা বাবার লাশ দাফনের আগে আরেকটা লা*শ ফে*লে দিলো।খু*ন করলো মেয়েটির অন্য ধর্মের স্বামীকে।
আচ্ছা এরকম কিছুও তো হতে পারে মেহেরুনের সাথে? হতে পারে না?
নাকি আমি যা ভাবছি বিষয়টি ঠিক এর বিপরীত? হতে পারে না এরকম যে, মেহেরুন আসলে রাতুলের বোনই না?
'
চলবে

পর পর দুটো মেয়ে হয়ে গেল আমার। এবার আবার কনসিভ করেছি আমি।কনসিভ করেছি শুনেই আমার শাশুড়ি মা সকাল বেলা তার কাছে ডেকে নিলে...
21/09/2023

পর পর দুটো মেয়ে হয়ে গেল আমার। এবার আবার কনসিভ করেছি আমি।কনসিভ করেছি শুনেই আমার শাশুড়ি মা সকাল বেলা তার কাছে ডেকে নিলেন আমায়। তারপর মুখ কুঁচকে বললেন,

--- 'বউমা,শুনছি আবার নাকি পেট বাঁধাইছো?'

শাশুড়ি তো মায়ের মতই।মার মুখ থেকে এমন ধরনের কথা শুনতে মোটেও ভালো লাগে না। তিনি ইচ্ছে করলেই তো কথাটা সুন্দর করে বলতে পারতেন! তবুও আমি কোমল গলায় বললাম,

--- 'জ্বি মা কনসিভ করেছি।'

এবার শাশুড়ি মা উদাস গলায় বললেন,

--- 'এইবারও কী মেয়ে সন্তান জন্ম দিবা?'

আমি চোখ নীচের দিকে নামিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,

--- 'মা, সন্তান দানের মালিক তো আল্লাহ।আমি তো জানি না আমার কী সন্তান হবে!'

মা রেগে গেলেন।আর রাগত স্বরে বললেন,

--- 'শুনো বউমা, আমি হইলাম এক কথার মানুষ। এইবার যদি তোমার মেয়ে সন্তান হয় তাইলে কিন্তু তোমার লাইগা এই বাড়ির দরজা চিরতরে বন্ধ। আমার ছেলে সন্তান চাই। বংশের উত্তারাধিকার চাই।উত্তারাধিকারী না পাইলে সোজা তালাক।এক দুই তালাক না। তিন তালাক!'

মার মুখ থেকে এমন কথা শুনে আমার সারা শরীর জমে উঠলো ভয়ে। যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম ওখান থেকে কোন ভাবেই আর নড়তে পারছি না।যেন মাটির সাথে চিরতরে আমার পা আটকে গেছে!মা তখন ধমক দিয়ে বললেন,

--- 'কী হইলো এইখানে খাম্বার মতন দাঁড়াইয়া আছো কেনো?'

আমি চোখ ভরা জল নিয়ে মার সামনে থেকে দ্রুত পায়ে চলে গেলাম।আর রাতে আমার স্বামী মিতুলকে বললাম,

--- 'মিতুল,মা বলেছেন এবার যদি আমার মেয়ে সন্তান হয় তবে তিনি নাকি আর আমায় তোমার বউ করে রাখবেন না।ডিভোর্স দিয়ে দিবেন।'

মিতুল আমার কথার ধারে কাছেও গেল না।সে বললো,
--- 'রাত কত হয়েছে দেখ তো ঘড়িতে?'

আমি সময় না দেখে বললাম,

--- 'মিতুল,আমি তোমায় কিছু বলেছি!'
মিতুল এবার রেগে গেল। রেগে গিয়ে বললো,

--- 'আমার কাছে পৃথিবীর সবকিছুই বলতে পারবে কিন্তু আমার মায়ের নেয়া ডিসিশনের বিরুদ্ধে কোনো কিছুই বলতে পারবে না।বুঝেছো?'

মিতুলের মতো উচ্চ শিক্ষিত এক ছেলের কাছ থেকে এমন মেরুদন্ডহীন মানুষের মতো কথাটা শুনে আমি থ হয়ে গেলাম।ভাবতেও পারছি না মিতুল এই কথাটা এমন ভাবে নিবে!
'
আমার বিপদ ঘনিয়ে এলো আরো পরে।যখন চেকআপ করানোর পর জানতে পারলাম আমি এবারও মেয়ে সন্তানের মা হতে যাচ্ছি।ডাক্তারের চেম্বারে গিয়েছিলাম মার সাথে।ডাক্তার রিপোর্ট দেখে হাসি মুখে বললেন,

--- 'খুশির সংবাদ আছে। বলুন আলহামদুলিল্লাহ।'

আমি আলহামদুলিল্লাহ বললেও মা আলহামদুলিল্লাহ বললেন না।মা শুধু জানতে চাইলেন কী সন্তান হবে।ডাক্তার মিষ্টি করে হেসে বললেন,

--- 'মেয়ে সন্তান।'

মেয়ে সন্তান হবে এই কথা শুনে আমার শাশুড়ি ঝটপট ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে এসে আমায় বললেন,

--- 'মাগো, সন্তান দানের মালিক আল্লাহ। তিনি ইচ্ছা করছেন এইবার তোমার মেয়ে সন্তান হইবো। এবং এই খবর শুইনা তোমার শাশুড়ি তোমারে তালাক দিবে!তালাক দেয়াটাও মালিকের ইচ্ছা।তার ইচ্ছা ছাড়া গাছের পাতাও নড়াচড়া করার বল পায় না।'

মার কথা শুনে আমি ভয়ে থরথর করে কাঁপছি।কী করবো না করবো বুঝতে পারছি না। চোখ দিয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে।মা বললেন,

--- 'সব আল্লাহর ইচ্ছা। কান্নাকাটি কইরো না মা। তোমার দুঃখ দেখে তোমার প্রতি আমি সামান্য দয়া করতে পারি।আমি তোমারে আমার ছেলের জন্যই রাখতে পারি কিন্তু শর্ত আছে একটা।শর্ত হইলো আমার ছেলের অন্য বিয়েতে তোমার অনুমতি দিতে হইবো। অনুমতি না দিলে তোমায় আমি রাখবো না। আমার বংশের বাতি জ্বালাবার জন্য ছেলে সন্তানের প্রয়োজন। তুমি কোনদিন ছেলে সন্তান জন্ম দিতে পারবা না।ছেলে সন্তানের জন্য আমার ছেলেরে আরেক বিয়া করাইতে হইবো।বুঝছো?'

আমি ভয়ে অনবরত কাঁপছি আর হাত দিয়ে চোখের জল মুছেই যাচ্ছি।মার কথার কী জবাব দেয়া উচিৎ তা আমি খুঁজে পাচ্ছি না।আমার স্বামী মিতুল মা ভক্ত ছেলে।মা যদি বলে, এখন তোর বউরে তালাক দে, সঙ্গে সঙ্গে সে তালাক দিয়ে দিবে।তার মা যদি বলে তুই আরেকটা বিয়ে কর, সঙ্গে সঙ্গে সে আরেক বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাবে।

আমি কী করবো এখন বুঝতে পারছি না।এই প্রচন্ড শীতের সন্ধ্যায়ও আমার সমস্ত শরীর ঘামছে।আমি একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চাই।এক হলো আমার স্বামী থেকে সেপারেট হয়ে যাওয়া আর দুই হলো ওর দ্বিতীয় বিয়ে মেনে নেয়া। কোনটা করবো আমি?আসলে কোনটা করা উচিৎ আমার?
'
#চলবে
'
গল্পঃ জননী কেঁদে যায় রাতভর
্ব

বিয়ের পাঁচদিন পর বিকেল বেলা আমি আমার শাশুড়ির সঙ্গে কিচেনে বসে তরকারি কোটছি।তার সঙ্গে এখনও অতোটা সম্পর্ক হয়ে উঠেনি।একট...
21/09/2023

বিয়ের পাঁচদিন পর বিকেল বেলা আমি আমার শাশুড়ির সঙ্গে কিচেনে বসে তরকারি কোটছি।তার সঙ্গে এখনও অতোটা সম্পর্ক হয়ে উঠেনি।একটু আধটু কথা হয়।এটা ওটা জিজ্ঞেস করেন তিনি,আমি নরম গলায় উত্তর দেই। এইটুকুই।আজ হঠাৎ করেই তিনি আমায় বললেন,' জেসি, তাড়াতাড়ি বাচ্চা নিবা।এই বছরের ভেতরেই। আজকালকার মেয়েরা বাচ্চা কাচ্চা নিতে চায় না তাড়াতাড়ি। তুমি এই রকম করবা না।মনে থাকবে কথাটা?'
কি লজ্জার কথা! এরকম কথার কি উত্তর দিবো আমি? উত্তর দিলাম না।আমি চুপ করে রইলাম। তরকারি কোটছি তাই করতে লাগলাম আপন মনে। এই কথার উত্তর দেয়ার মতো অতোটা সম্পর্ক তো তার সঙ্গে এখনও আমার হয়ে উঠেনি। তাছাড়া ইনি এরকম কেন? এরকম উদ্ভট কথা হুট করে বলবেন কেন আমায়? বিয়ের সপ্তাহও তো হয়নি এখনও। তার কথা শুনে মনে হচ্ছে যেন আমায় বাচ্চা জন্ম দিতেই তার ছেলের জন্য বিয়ে করিয়েছে!
তরকারি কোটা শেষ হলে আমার শাশুড়ি বললেন পেঁয়াজ কুচি করতে। তিনি তখন চকির উপর বসে আয়েশ করে চা খাচ্ছেন।তখন হঠাৎ করেই একটা মোটা মতো মেয়ে এসে উপস্থিত হলো এখানে ‌। তার গায়ে বাহারি সাজ।গলায় সোনার চেইন ঝিকমিক করছে।হাতে কাঁচের আধ ডজন করে রঙিন চুড়ি। কি মিষ্টি চেহারা! মোটা মেয়েরাও যে অসম্ভব রকমের রূপবতী হতে পারে একে দেখে প্রথমবার বুঝলাম। কিন্তু ওর মুখটা খুব মলিন। চোখের নিচে কালি জমে আছে।
এসে মায়ের পায়ে কদমবুসি করলো সে।মা তখন আমায় বললেন,' তোমার ননদ।ওর নাম মেহেরুন। বিয়ের সময় এখানে থাকতে পারেনি। তার শ্বশুরের বেশি অসুখ ছিল। মৃত্যুশয্যায় ছিল শশুর। কিন্তু কি ভাগ্য দেখো, তোমাদের বিয়ে শেষ, তার শশুর দিব্যি সুস্থ এখন। আমার মেয়ের ভাগ্যই খারাপ। নিজের ভাইয়ের বিয়েটা খেতে পারলো না!'
আমি একবার মেহেরুনের দিকে তাকালাম। তাকিয়ে চমকে উঠলাম। তার নাকের ডগা লাল টুকটুকে হয়ে গেছে। চোখের পাপড়ি কাঁপছে তিরতির করে যেভাবে বাতাসে শিরিষ গাছের পাতা কাঁপে।টপ টপ করে পাপড়ি ভিজে চোখ থেকে ফোটা ফোটা জল গালে গড়াচ্ছে। চিকচিক করছে ফর্সা গালের উপর সেই জল।
আমি তাকে কিভাবে সান্তনা দিবো কিংবা কিছু বলবো কি না তাও বুঝতে পারছিলাম না। কিছু বলার আগেই দেখলাম নাকে মুখে আঁচল চেপে ধরে কাঁদতে কাঁদতে ও কিচেন থেকে বেরিয়ে গেল।আমি শাশুড়িকে ভয়ে কিংবা কি এক সংকোচে জিজ্ঞেস করতে পারিনি যে, মেহেরুন এভাবে কাঁদছে কেন?
'
রাতে আমরা সবাই খেতে বসলেও মেহেরুনকে দেখা গেল না টেবিলে।আমি মাকে জিজ্ঞেস করলাম,ও কোথায়? ও খাবে না মা?
আমার শাশুড়ি বললেন,' কার কথা বলছো তুমি?'
আমি বললাম,' মেহেরুন। আমার ননদ মেহেরুনের কথা।'
তিনি বললেন, ' এখন খাবে না।পরে খাবে।'
এরপর সাহস করে জিজ্ঞেস করে ফেললাম,' মা,ওর হাসব্যান্ড আসেনি ওর সঙ্গে?'
আমার শাশুড়ি থমথমে মুখে বললেন,' ওর স্বামী প্রবাসে থাকে। সিঙ্গাপুরে। আসবে কি করে? আর তাড়াতাড়ি খাও তো। খাবার সময়ে কথা বলা ঠিক না। গোনাহ হয়।'
আমি আর কিছু জিজ্ঞেস করলাম না। শাশুড়ি এমনিতেই মুখ ভার করে রেখেছে। শুধু হাসলাম মনে মনে। ভাবলাম, মানুষ এরকমই। নিজের মতামতকে জাহির করার জন্য হলেও তা ধর্মের বাণী বলে চালিয়ে দেয়।
খাবার পর্ব শেষ করে যখন শুতে যাবো তখন আমার স্বামী রাতুলকে বললাম, 'রাতুল, মেহেরুনের কি হয়েছে বলো তো? মা যখন আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন ওকে, তখন তার চোখে জল দেখলাম। মুখে আঁচল চেপে সে ওখান থেকে চলে গেল তাড়াহুড়ো করে। এরপর আর আমার সামনে আসেনি। কেন? কোন সমস্যা?'
রাতুল অনেক্ষণ ধরে চুপ করে রইলো। তারপর ফুঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বললো,' ওর বিষয়ে তুমি কখনোই মাথা ঘামাবা না। অতো আগ্রহ ভালো না।বুঝেছো?'
আমি অবাক হলাম। রাতুল মেহেরুনের নাম শুনে এরকম ক্ষীপ্ত হলো কেন? ওর বোনের সঙ্গে কি ওর সম্পর্ক ভালো না নাকি?
সাত পাঁচ না ভেবেই আমি আবার ওকে জিজ্ঞেস করলাম। বললাম,' তোমার বোনের কথাই তো জিজ্ঞেস করেছি এতে অতো রাগার কি আছে ?'
রাতুল কথা বললো না। সে বরং আমায় কাছে টেনে আদর করতে চায়লো।
আমার এসব ভালো লাগছে না। বললাম, 'আমার মন ভালো নেই।'
রাতুল কথা শুনলো না।
আমাদের দেশের পুরুষ গুলো এরকমই। পুরুষতন্ত্র তো। তাদের ইচ্ছের দাস হতে হয় ঘরের নারীদের । তাদের কথাই শেষ কথা। এরপর কোন কথায় কাজ হবে না।ওরা যা চায়বে ঠিক তাই হবে।তাই করতে হবে নারীদের। না করলে শক্তি খাটিয়ে হলেও আদায় করে নিবে।
'
রাতুলকে সরাতে চেষ্টা করেও সরানো গেলো না।ও তার বাসনা পূর্ণ করছে।আমি নিজেকে হঠাৎ জড় ভাবলাম। শুধু টের পেলাম চোখের কোল বেয়ে নালার মতো জল নামছে। এরিমধ্যে আমার কানে একটা রিনরিনে কান্নার গলা ভেসে এলো।এই গলাটা আর করোর না। মেহেরুনের। মেহেরুন এই এতো রাতে কাঁদছে কেন? ওর কি এমন দুঃখ যে ও কাঁদছে?
আমার ভালো লাগছে না কিছুই। খুব মন খারাপ লাগছে। নিজেকে হঠাৎ অপয়া মনে হচ্ছে।আমি রাতুলকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলাম।
রাতুল রেগেমেগে আগুন হয়ে গেলো। গলায় তেজ নিয়ে বললো,' তোমার সমস্যা কি? '
আমি বললাম,' কিসের সমস্যা? কোন সমস্যা নাই।'
সে রাগে কাঁপতে থাকা গলায় বললো,' তাহলে এরকম করছো কেন? '
আমি বসে যাওয়া গলায় বললাম,' আমার ভালো লাগছে না তাই! তুমি জোর করছো কেন? তোমার কি সমস্যা?'
আমি ভাবলাম রাতুল আমার প্রতিবাদী গলায় চুপসে যাবে। কিন্তু সে চুপসে না গিয়ে রাগে কিড়মিড় করতে করতে আমার গলায় শক্ত করে চেপে ধরে বললো,' তোমার নাগর আছে তাই না? প্রেম ছিল? মা বাবা জোর করে বিয়ে দিয়েছে? এই জন্য এইরকম করতেছো?নাগররে ছাড়া আর কারোর টাচ্ সহ্য হয় না? সত্যটা বলো।'
আমার এতো রাগ পেলো! আমি ওর দু হাত এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিয়ে অনেকটা ধমকের গলায় বললাম,' তুমি এরকম মা*স্তানি দেখাচ্ছো কেন? আর এসব কি বলছো ? মুখে যা আসে তাই বলবা আর আমি সহ্য করবো? আমি তোমার কেনা পুতুল‌ নাকি যে তুমি আমার অনুমতি না নিয়ে, আমার ভালো লাগা খারাপ লাগা না জেনেই যা ইচ্ছে তাই করতে চাইবে আমার সঙ্গে?'
মেজাজ ভীষণ খারাপ হলো আমার। আস্তে করে আবার বললাম,' অবলা পেয়েছে।হুহ্।'
রাতুল বিছানা থেকে নেমে গেলো প্রচন্ড রাগ নিয়ে। অদ্ভুত বিষয় হলো সে এই ঘর থেকে গিয়ে ও ঘরে মেহেরুনকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করতে লাগলো।মেরেছেও হয়তো। মেহেরুন এখন শব্দ করে কাঁদছে। অনেক বেশিই কাঁদছে।
ও ঘর থেকে রাতুলের মায়ের গলা শোনা গেল। তার মা বলছে,' কি করতাছস হা*রামজাদা, মাইয়াটারে মা*ইরা ফেলতেছস! ম*রলে তখন বুঝবি!'
রাতুল মাকে এভাবে জবাব দিলো।বললো,' এরে না মা*রলে আমার শান্তি নাই।তার শরীর জ্বলতেছে।কান্দে।গলা ছাইড়া কান্দে।এরে আমি এখন জনমের কান্দন কান্দাইবো! জ্বালা যন্ত্রণা দূর করবো!'
রাতুলের মা ছি ছি করে বললো,' এইখান থাইকা বের হয়ে যা বলতেছি। নয়তো থা*প্পর দিয়ে সব গুলো দাঁত ফেলাই দিবো তোর।'
রাতুল মার শাসন মানলো না। সে পাল্টা ধমক দিয়ে বললো,' তুমি তোমার ঘরে গিয়ে চুপচাপ শুয়ে ঘুমাও গিয়ে। এখানে এসে তোমার নাক গলাতে হবে না।যাও বলছি!'
রাতুল তার মায়ের সঙ্গে এরকম নোংরা ব্যবহার করছে? ও এরকম দুশ্চরিত্রের লোক? তাছাড়া বোনটিকে এভাবে অকত্য ভাষায় গালাগাল করছে। ভাবতেই আমার গা গুলিয়ে উঠলো।আর তখনই নিজের ভাগ্যকে আমি অভিশাপ দিলাম।আর বুঝতে পারলাম, আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা হয়ে গেছে ইতিমধ্যে!
'
সে রাতে ঘরে এসে আলনা থেকে শার্ট নামিয়ে কাঁধে ফেলে বেরিয়ে যাচ্ছিল রাতুল।আমি পেছন থেকে ওকে জিজ্ঞেস করলাম,' কোথায় যাচ্ছেন অতো রাতে?'
রাতুল বললো,' আরেকটা বিয়ে করতে যাই। তোমার ধারে কাছেও তো ঘেঁষা যায় না। এরকম বউ দিয়ে আমি কি করবো? ঘরে সাজাই রাখবো নাকি? যার ধারে কাছে ঘেঁষা যাইবো ওরকম একটা মেয়ে বিয়ে করে আনবো গিয়ে।তারে এনে তোমার সামনে -----'
অশ্রাব্য কথাগুলো বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
সারা রাত আমার ঘুম হলো না। কেঁদে কেঁদেই কাটলো রাতটা। পরদিন সকাল বেলায়ও রাতুল ফিরেনি। আমার শাশুড়ি আমায় রান্নাবান্না কি করতে হবে বুঝিয়ে বলে প্রতিবেশীর বাড়িতে গেলেন আড্ডা দিতে। এই সুযোগে আমি রান্না চড়িয়ে মেহেরুনের কাছে গেলাম। গিয়ে দেখি সে চুপচাপ খাটের উপর পা গুটিয়ে বসে আছে। তার চোখ লাল টকটকে হয়ে আছে। নাকমুখ ফুলা ফুলা।সারা রাত কেঁদেছে হয়তো।
আমাকে দেখে ও কিছু বললো না। আগে যেমন বসে ছিল এখনও ঠিক ওরকম ভাবেই বসে আছে।
আমি গিয়ে ওর পাশে বসলাম। তারপর বললাম,' মেহেরুন, তোমার সঙ্গে রাতুলের আসলে কি ধরনের সমস্যা বল তো? ও তোমাকে রাতে এভাবে অকত্য ভাষায় গালাগাল করলো কেন? তোমার গায়ে হাত তুললো কেন? '
মেহেরুন প্রথমে কিছুই বলতে চায়লো না। সে ভয়ে আড়ষ্ট হওয়া গলায় বললো,' আমি কিছু বলতে পারবো না বোন। আমাকে দয়া করে কিছু জিজ্ঞেস করবে না তুমি।আল্লার দোহাই লাগে। আমাকে কিছু জিজ্ঞেস না করে আমায় গলা টি*পে মে*রে ফেলো তুমি বরং। তবুও কিছু বলতে বলো না। '
কিন্তু আমি নাছোড়বান্দা।যে করেই হোক এর রহস্য আমাকে জানতেই হবে। অনেক চেষ্টা ফিকির করে, ওকে অভয় দিলে তখন সে যা যা বললো তা শুনে আমার গা শিউরে উঠলো।চোখ অন্ধকার হয়ে এলো। তখন শুধু মনে হলো, মানুষ এরকম নিকৃষ্টও কি হয় কখনো?

মেহেরুন বললো,' ----
'
চলবে
'

রাতের কান্না
১ম_পর্ব

Address

Mohanpur
Rajshahi
6220

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Mira posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Mira:

Videos

Share


Other Gaming Video Creators in Rajshahi

Show All