01/04/2023
১৯৮৫ ইং, আমি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড অধিনস্ত আশুগঞ্জ কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ডেপুটি ম্যানেজার অর্থাৎ ২য় বৃহৎ কর্মকর্তা। ম্যানেজার ছিলেন শ্রদ্ধেয় ইন্জিঃ নেপাল চন্দ্র চৌধুরী, যিনি আমার কার্যক্রমে খুবই সন্তুষ্ট ছিলেন। বিদ্যুৎ উৎপাদনে সমস্যা হলে, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বন্ধ থাকলে, সমস্যা সমাধানে কখনো দিন-রাত নির্ঘুম কাজ করতে হতো, যা আজও হয়। কিন্তু নেপাল বাবুকে কখনোই রাতে প্লান্টে থাকতে না দিয়ে বলতাম, স্যার আপনি ঘুমান-বিশ্বাস করুন, আমি তো আছি। ইতোমধ্যে ১৯৮৩-৮৪ সলে আমি সিম্পল সাইকেল গ্যাস টারবাইন এবং কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনায় ইংল্যান্ড হতে সাফল্যের সাথে নিবিঢ় প্রশিক্ষন গ্রহন করি।
১৯৮৫ এর শেষাংশে পারিবারিক জরুরী প্রয়োজনে ৭ দিনের ছুটি নিয়ে ঢাকায় যাই। ছুটির ৫ম দিনে ঢাকাস্থ হেড অফিস, মতিঝিল ওয়াপদা ভবনে গেলে শুনি বিদ্যুৎ বোর্ড আমাকে খুঁজছে। সৌজন্য সাক্ষাতে এসে বিব্রতকর অবস্থায় পড়লাম। অগত্যা-চীফ ইঞ্জিনিয়ার, জেনারেশন প্রয়াত এ,বি, এল রহমানের সামনে হাজির হলাম। আমাকে পেয়ে স্যার খুশী হয়ে বললেন-নেসার তোমার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি ৪/৫ দিন বন্ধ থাকায় বিদুৎ পরিস্থিতি নাজুক, তাই অবিলম্বে সেখানে যেতে হবে। ঢাকার কাজ অসমাপ্ত রেখেই পরদিন সকালেই আশুগঞ্জ পৌঁছলাম। দেখি-জার্মান, ব্রিটিশ, কোরিয়ান, চাইনিজ এবং স্থানীয় বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞগন গলদ-ধর্ম বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের সমস্যা খুঁজছেন, যা বিগত ৪/৫ দিনেও দুঃখ-জনকভাবে খুঁজে না পেয়ে তখনও সকলে মহাব্যস্ত।
বলা বাহুল্য যে ঐ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ২য় কর্মকর্তা হলেও উহা ঠিকমত চালু রাখার গুরু দায়িত্ব মূলত: আমাকেই পালন করতে হতো। অগত্যা সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারদের কাছ হতে বারংবার জিজ্ঞাসায় জানতে পারি কখন, কিভাবে গ্যাস-টারবাইনটি বন্ধ হয়েছিল এবং বিশেষজ্ঞগণের চেষ্টায় অগ্রগতি কি? সঠিক জানলাম যে গ্যাস টারবাইনটি কিছুতেই সেল্ফ-সাসটেইনিং স্পীড পাচ্ছেনা-অর্থাৎ প্রাইম-মুভার তার সেল্ফ সাসটেইনিং স্পীড পর্যন্ত যেতে পারছেনা। প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে গ্যাস টারবাইনটির প্রাইম মুভার ১টি ডিজেল ইঞ্জিন।
প্রাথমিকভাবে ডিজেল ইঞ্জিনটি ১৬০০ আর, পি, এম গতি পেলে, গ্যাস টারবাইন তার নিজ গতি লাভ করে। অতপর সে নিজেই নির্দিষ্ট ৫০০০ আর,পি,এম গতিতে পৌঁছে চলতে থাকে। সকল এক্সপার্টগন তখনও নকশা-আলোচনায় মহা ব্যস্ত। আমি মেইনটেনেন্স ম্যানুয়েল পরীক্ষা করে নিশ্চিত সে প্রাইম মুভারেই সমস্যা, কারন বারংবার চেষ্টায় সেতো গ্যাস টারবাইনকে তার সেল্ফ-সাসটেইনিং স্পীডেই নিতে পারছেনা। অর্থাৎ প্রাইম মুভারের নিজ গতিই বাড়ছেনা- সুতরাং সমস্যা প্রাইম মুভারটিতেই। দুপুরে বিশেষজ্ঞগন লাঞ্চে গেলে, সে ফাঁকে ১ জন এসজিই, ফোরম্যান ও ২ জন ফিটারসহ প্লান্টে যাই। প্রাইম মুভারের ফুয়েল সোর্স, ফুয়েল ট্যাংক হতে ইঞ্জিন পর্যন্ত চেক করে সবই ঠিক্ পেলাম। অতঃপর ফুয়েল ফিল্টার খুলে দেখি প্রতিটি সিলিন্ডারের ফিল্টারই প্রায় ডিজেল-শূন্য! তাই ফুয়েল লাইন বাতাসে-পূর্ণ। যে কারণে পর্যাপ্ত ফুয়েল না পেয়ে, প্রাইম মুভার নিজেই স্পীড-আপ হতে পারছেনা। সে ক্ষেত্রে গ্যাস টারবাইনের গতি বাড়ানো অসম্ভব। তক্ষনাৎ ফিল্টার গুলিতে ডিজেল ভর্তি করে, মেশিন স্টার্ট দিলে, গ্যাস টারবাইন চলতে শুরু করেছে দেখে মেশিন বন্ধ করে দেই। কারন টেস্ট রান বলে ফিল্টার গুলি ভালভাবে টাইট দেওয়া হয়নি। মূহুর্তে বিলেতি গ্যারান্টি ইঞ্জিনিয়ার মিঃ স্টীভ ছুটে এসে অবাক দৃষ্টিতে জিজ্ঞেস করলো- হেই মি: চৌধুরী, হোয়াট ইউ হ্যাভ ডান, দা মেশিন ওয়াজ কামিং আপ কারেন্টলি এন্ড হোয়াট ইউ আর ডুইং? মেশিনের প্রকৃত সমস্যা ধরতে এবং দূর করতে সমর্থ হওয়ায়, খুশীতে বললাম, ওয়েট অন মি: স্টিভ, আই হোপ উইদিন ওয়ান আওয়ার ইউ উইল গেট ইউর মেশিন রেডি।
প্রায় ৪০ মিনিট পর ডিজেল ইঞ্জিনের ফুয়েল ফিল্টার গুলি পূর্ণ ডিজেল ভর্তি করে ভালও মত ফিট করে, একটু গর্বিত কন্ঠস্বরে বললাম মি: স্টিভ, নাও ইউ ক্যান স্টার্ট দ্য মেশিন, বাট বিফোর পুশিং দ্য সুইচ প্লিজ টেল বিসমিল্লাহ। ইংরেজ গ্যারান্টি ইঞ্জিনিয়ার যেন মন্ত্রমুগ্ধের মতই বিসমিল্লাহ বলে সুইচ অন করলে আল্লাহর রহমতে অবিলম্বে ৯০ মে:ও: কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু হয়ে গেল। ছুটে এলেন আমার ম্যানেজার এবং বিশেষজ্ঞগণ। সবাই হাঁ করে আমায় দেখছে আর প্রশ্ন করছে-মি: চৌধুরী হোয়াট হ্যাভ ইউ ডান রিএলি! সেদিন হতে বিদেশী ও স্থানীয় বিশেষজ্ঞগন সর্বদাই সমীহ করে চলতো। তাছাড়া জিইসি গ্যাস টারবাইন কোম্পানীও ইংলন্ডে থেকে চাকুরীর অফার দিয়েছিল। যা-হোক আমার মনে একটা প্রশ্নই অবাক-বিস্ময়ে ঘুরছিল যে দীর্ঘ প্রশিক্ষণ নিয়ে বিশেষজ্ঞ সেজে এবং কতগুলি ব্রিটিশ, জার্মানী, কোরিয়ান ও চাইনিজ ইঞ্জিনিয়ার মিলে-দীর্ঘ প্রায় পাঁচ-দিন চেষ্টা করে একটা গ্যাস টারবাইন প্রাইম মুভারের সহজ ঐ রোগটা তারা কেউ ধরতে পারলোনা কেন?
প্রসঙ্গতঃ ১৯৮৬ সনে আশুগঞ্জ হতে সিলেট-ম্যানেজার পদে বদলী হলে ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার নেপাল চন্দ্র চৌধুরী মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। অবশেষে এলো আমাকে বিদায় দেবার পালা। অনেক বক্তার শেষে শ্রদ্ধেয় নেপাল বাবু আমাকে আদর-ভালবাসায় বহু-বিশেষণে ভূষিত করে অবিশ্বাস্যভাবে কেঁদেছিলেন। যে মমতা-ভালবাসার কান্না-স্মৃতি আজও ভোলা গেলনা। হৃদয়ে গভীরে গভীর ক্ষত হয়েই রইল।
আলহাজ্ব ইঞ্জিনিয়ার চৌধুরী নেসারুল হক
মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৯৬৪ সিরিজ
[আলহাজ্ব ইঞ্জিনিয়ার চৌধুরী নেসারুল হক কনক তাঁর জীবনে অসংখ্য সাফল্য এবং পদক পেয়েছেন। ছাত্রজীবনে তিনি বিভিন্ন খেলাধুলায় সফলভাবে অংশগ্রহণ করেছেন এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পদক পেয়েছেন। Humans of RUET তাঁর উত্তরোত্তর সাফল্য এবং সুস্থতা সম্বলিত দীর্ঘায়ু কামনা করে।]
In 1985, I served as the Deputy Manager of the Ashuganj Combined Cycle Power Plant under the Power Development Board, making me the 2nd senior official. The Hon'ble Eng. Nepal Chandra Chowdhury was the manager at the time and was pleased with my performance. Whenever there was a problem with power generation or if the plant had to be shut down, we worked tirelessly day and night to resolve the issue, which still happens today. However, I never allowed Nepal Babu to stay overnight and would tell him to rest, saying, "Sir, you should sleep - believe me, I am there." In 1983-84, I received intensive training from England on the operation of simple cycle gas turbines and combined cycle power plants, which was a success.
Towards the end of 1985, I went to Dhaka for a 7-day leave due to a family emergency. On the 5th day of my vacation, I heard that the electricity board was looking for me when I went to the Motijheel Wapda Bhavan head office in Dhaka. I was embarrassed to meet them, but the Chief Engineer of Generation, late AB, L Rahman, was happy to see me. He said, "Your power generation plant in Nesar has been closed for 4/5 days, and the power situation is critical, so I need you to go there immediately." I left my unfinished work in Dhaka and reached Ashuganj the following morning. I saw that German, British, Korean, Chinese, and local power experts were still working hard to find the problem with the Golad-Dharma power plant, which had unfortunately eluded them for the last 4/5 days.
Despite being the 2nd officer of the power plant, I had the significant responsibility of keeping it running properly. I repeatedly asked the relevant engineers when and how the gas turbine was stopped and what progress the experts had made. I discovered that the gas turbine never reached its self-sustaining speed, meaning the prime mover could not reach its self-sustaining speed either. Note that the prime mover of the gas turbine is a diesel engine.
The diesel engine must first reach a speed of 1600 rpm before the gas turbine can reach its own speed and continue at the specified speed of 5000 rpm. All the experts were still engrossed in design discussions, but I checked the maintenance manual and confirmed that the prime mover was the problem. The prime mover was unable to get the gas turbine up to its self-sustaining speed even after repeated attempts. This indicated that the problem was in the prime mover itself, as its own speed was not increasing. At noon, when the experts went to lunch, I went to the plant with one SGE, a foreman, and two fitters. I checked the prime mover's fuel source, fuel tank to the engine, and everything seemed fine. However, upon opening the fuel filter, I discovered that each cylinder's filter was almost diesel-free, meaning the fuel line was air-filled. Without enough fuel, the prime mover could not speed up itself, and it was impossible to increase the gas turbine's speed. I immediately filled the filters with diesel, started the machine, and stopped it after confirming that the gas turbine started running. The test run revealed that the filters were not properly tightened. Suddenly, Mr. Steve, the ticket guarantee engineer, came running and asked with a surprised look, "Hey, Chowdhury, what have you done? The machine was coming up, and what are you doing now?" I was overjoyed that I had found and fixed the actual problem with the machine and said, "Wait on me, Steve, I hope you'll get your machine ready within an hour."
After approximately 40 minutes, the fuel filters of the diesel engine were completely filled with diesel and installed successfully. In a slightly proud tone, I said to myself, "Steve, now you can start the machine, but before pushing the switch, please recite Bismillah." The English Guarantee Engineer, as if under a spell, said Bismillah on the switch, and by God's grace, the 90 MW Combined Cycle Power Plant immediately started up. My manager and experts rushed over, all looking at me and asking questions: "Chowdhury, what have you done?" From that day on, foreign and local experts worked together closely. Additionally, GEC Gas Turbine Company offered job opportunities from England. However, one question was lingering in my mind: why did experts with long training and many British, German, Korean, and Chinese engineers try to diagnose a simple problem with the gas turbine prime mover for five days?
In 1986, when the manager engineer Nepal Chandra Chowdhury was transferred from Ashuganj to the post of Sylhet manager, it felt like the sky had fallen on his head. Finally, it was my turn to bid farewell. After many speeches, the venerable Nepalese Babu showered me with epithets of affection and wept uncontrollably. The tears of compassion and love are still vividly remembered. A deep wound was left in the heart.