03/06/2023
তিন তলা থেকে আমাকে যখন ধাক্কা মে'রে ফেলে দেয়া হয় তখন স্পষ্ট দেখতে পেয়েছিলাম আমার স্বামী আবিরের মুখটা। আমাকে ফেলে দিয়ে মনে হলো আনন্দ পেয়েছে। পৈশাচিক আনন্দ। আমার নিজের জন্য খারাপ লাগলো না। খারাপ লাগলো আমার ভেতরে থাকা আরো একটি অস্তিত্বের জন্য। বাচ্চাটা এখনো বেঁচে আছে, একটু পরেই হয়তো আমার সাথে সাথে বাচ্চাটাও মা'রা যাবে।
আমি নিচে পড়ার আগেই চোখ থেকে দু’ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো নিচে। আবিরকে ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলাম। আবিরের জন্য ২০ বছরের বাবা-মায়ের পবিত্র সম্পর্ক ছিন্ন করে এসেছিলাম। শাশুড়ী মা নেহাৎ ভালো ছিল বলেই আমাদের সম্পর্কটা মেনে নিয়েছিল। তবে তার সুপুত্র যখন জানতে পারলো সে বাবা হতে চলেছে বিষয়টা ঠিক হজম করতে পারলো না। কয়েকবার বাচ্চাটা ন'ষ্ট করার কথাও বলেছিল আমাকে। রাজি হইনি, বরং অবাক হয়েছিলাম তার এই পরিবর্তন দেখে।
শেষে আজ সারপ্রাইজ দেওয়ার নাম করে নিয়ে এলো ছাঁদে। "তোমাকে আমার ভালো লাগতো। এই আবেগের বশেই হয়তো বিয়েটা করেছিলাম। তবে এখন বুঝতে পারছি সেটা ভালোবাসা ছিল না। আমি এতো তাড়াতাড়ি বাচ্চা-কাচ্চার বাবা হয়ে বুড়ো হয়ে যেতে পারবো না। কি করবো বলো? তোমাকে ম'রতে হবে।"-বলেই ধাক্কা দিলো।
ঠিক রাত ১২ টার পরে আমি নিচে পড়লাম। ধপ করে আওয়াজ হলো। প্রথমেই পেটে চাপ লাগার কারনে চিৎকার দিয়ে উঠলাম। তবে চিৎকারটা শেষ না হতেই মাথায় আঘাত লাগলো। তারপর.. তারপর নিস্তব্ধ চারদিক। ঠান্ডা বাতাস বইছে, বাতাসে তাজা রক্তগুলো জমাট বাঁধতে আরম্ভ করেছে। রাতের পোকা গুলো জানান দিচ্ছে আমার মৃ'ত্যুবানী। শেষ একবার আবিরকে দেখার বড্ড সাধ জাগলো। মাথা ঘুরিয়ে উপরে তাকালাম। আবির তাকিয়ে আছে নিচের দিকে। চোখ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করছে আমি বেঁচে আছি কিনা। আমি বেঁচে আছি, বেঁচে ছিলাম। তাও বাঁচতে দেয়নি ওরা।
সকাল অব্দি আমি ঠিকই বেঁচে ছিলাম। সকালে লোক জানিয়ে পুলিশ আসলো। তদন্ত করলো, তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নিলো আমি আ'ত্মহ'ত্যা করেছি। আবির স্যারদের কাছে রিকুয়েষ্ট করলো আমার যেন পোস্টম'র্টেম না হয়। এতে করে অবশ্য আবিরের প্রতি পুলিশের সন্দেহ একেবারেই হয়নি৷ প্রচন্ড র'ক্তক্ষরন হওয়ায় এবং সারারাত বাইরে থাকার কারনে আমার শরীর ঠান্ডা হতে শুরু করলো। তাই এক মুহুর্তে সবাই ভেবেই নিয়েছিল আমি মা'রা গেছি।
দুপুর নাগাদ পুলিশ চলে যায়। সারিতে সারিতে লোকজন আসতে থাকে লা'শ দেখতে। প্রেগন্যান্ট অবস্থায় আ'ত্মহ'ত্যা কেন করেছি সেটা নিয়ে কিছু কিছু মহিলারা হায় আফসোস করছে। বাড়ির কাজের লোক বিনী খালা যে কখনো আমাকে দেখতেই পারেনি সেও এসে ম'রা কান্না জুড়ে দিলো।
আমাকে গোসল করানো হলো, তবে জ্ঞান ফিরলো না। মনে মনে বাচ্চার জন্য খুব কষ্ট হলো। আমি যে জীবিত সেটা কাউকে বুঝাতে পারছি না। দাফন-কাফন সব হলো, শুধু মাত্র আমি যে বেঁচে আছি সেটা জানা হলোনা কারো। আসর বাদে কবরও দেয়া হলো। তখনও জ্ঞান ফিরলো না আমার। মাটি চা'পা দিয়ে যখন যে যার বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে গেলো তখন কবরের পাশে দাঁড়িয়ে একটা বড় দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো আবির। হয়তো এতোদিনের অভ্যাস একসাথে থাকা। আর আজ আমি কবরে আর আবির তার আরাম আয়েশের জীবনে এই জন্যই দীর্ঘশ্বাস ছাড়া।
আবির চলে যায় বাড়িতে। সেদিন রাত ঠিক ১২ টায় আমার জ্ঞান ফেরে। মাথা এবং পেটে প্রচন্ড ব্যথার উপস্থিতি টের পেলাম। হাত পায়ের কিছু অংশেও ব্যথায় টনটন করছে। হয়তো হাড় ভে'ঙেছে। পেটে ব্যথার সামনে মাথা ব্যথাটা হার মানলো। পেটে হাত দিতে গিয়ে দেখি আপাদমস্তক সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে আছি আমি। এমন ভাবে মোড়ানো হয়েছে যে হাত এদিক ওদিক করতে পারছি না। বুঝতে পারছি না কোথায় আছি। গতরাতের দূ'র্ঘটনার কথা মনে পড়তেই আত্মা কেঁপে উঠলো। দূ'র্ঘটনা বললে ভুল হবে, ইচ্ছেকৃত ভাবে ঘটানো ঘটনা। সোজা কথায় বলতে গেলে মা'র্ডার। যদিও এখনো মা'রা যাইনি৷
চিৎকার দিয়ে শাশুড়ী মাকে ডাকলাম। সাড়া পেলাম না, হয়তো ডাক বাইরে পৌঁছায়নি। পরবর্তীতে দেখলাম আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। প্রচন্ড কষ্ট। সবটা দেখে বুঝতে পারলাম আমি স্বাভাবিক কোনো স্থানে নেই। আমি আছি কবরে। মাটির স্যাঁতস্যাঁতে গন্ধ এসে ঠেকলো নাকে। মনে মনে প্রার্থনা করেছিলাম এখান থেকে বের হওয়ার। তবে প্রার্থনা কবুল হলো না। আমার সাথেই কেন আল্লাহ এই অবিচার করলো সেটাও বুঝতে পারছি না। পেটের বাচ্চাটার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলাম। এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে না আসার জন্য খুশিও হলাম। আবিরের বেঈমানীর কথা মনে পড়লেই বুক ভে'ঙে কান্না এলো।
কবরের জীবনটাও দীর্ঘস্থায়ী হলো না। ৪৫ মিনিটের মাথায় প্রচন্ড অক্সিজেনের অভাবে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছি আমি। গলা কা'টা মুরগির মতো ছটফট করেছিলাম একটু অক্সিজেন পাওয়ার আশায়। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম আমি আসবো। নিশ্চয়ই আসবো, প্রত্যেককে নিজের হাতে আত্মহ'ত্যা করাতে।
---------------------------------
আবিরের বিয়ে আজ। খুব ঘটা করেই বিয়ের আয়োজন চলছে। আমার বিয়েটা এতো ঘটা করে পালন করা হয়নি। শাশুড়ী মা'কে দেখে বোঝা যাচ্ছে সে খুব খুশি। ছিপছিপে গড়নের মহিলার সাজগোজের ইচ্ছেটা ছিল বরাবরই বেশি। আজও তার হেরফের হলো না। একদম কনের মতোই সেজেছেন। অথচ তার আদরের বউমা কয়েকদিন আগেই পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন সেটা নিয়ে একদমই মাথা ব্যথা নেই।
আমি খুব আয়েশ করে চেয়ারে বসে আছি। গরুর মাংসের ঘ্রান ভেসে আসছে বাতাসে৷ বেঁচে থাকতে খুব প্রিয় ছিল। খেতে মন চাইলো, তবে খাওয়ার জোঁ নেই। আমি বসে আছি সব মেহমানদেের সামনে। তবে কেউ আমাকে দেখতে পাচ্ছে না। বিয়েটা কিভাবে ভাঙা যায় সেটাই ভাবছি বসে বসে৷ এখন আপাতত আয়েশ করছি, কিছুক্ষন পরেই খেল দেখানো শুরু হবে। একটা মোটা মহিলা এসে আমি যেই চেয়ারে বসে আছি সেখানে বসে পড়লো। মাগোমা, কি শরীর রে বাবা। কষ্ট করে তার শরীরের নিচ থেকে বের হয়ে পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। শত হলেও আমার বাড়ির অতিথি কিনা।
আবির বর সাজছে, পাগড়ি মাথায় দিয়ে দেখছে তাকে কেমন লাগছে। আমি আবিরের মাথার পাগড়িটা ফেলে দিলাম। মজা করতে ইচ্ছে করলো কিছু টা। তবে ওর প্রতি যে রাগ জমে আছে তাতে এখনি জীবন ও'ষ্ঠাগত করে দিতে মন চাইলো। কিন্তু তা করলাম না। ওকে মা'রবো তিলে তিলে। প্রতিটি কষ্টের জবাব আবিরকে দিতে হবে। আমার বাচ্চাটাকে পৃথিবীর আলো দেখতে না দেওয়ার য'ন্ত্রণা ভুগতে হবে ওকে।
আমি আয়নায় বড় বড় করে র'ক্ত দিয়ে লিখে দিলাম "বিয়ে করতে যাচ্ছো? গিয়ে অন্তত হাসির পাত্র হইয়ো না। আমি ফিরে এসেছি।" লেখাটা দেখে ভরকে গেলো আবির। এদিক ওদিক তাকিয়ে জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট মুছে লেখাটা ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা করলো। ততক্ষণে লেখাটা মুছে গেছে। নিতান্তই মনের ভুল ভেবে খুশি মনে বিয়ে করতে বেরিয়ে গেলো। মনে মনে ভাবলাম "নিজেই যখন খাল কে'টে কুমির নিয়ে আসে!"
আমি গেলাম যেই মেয়েকে বিয়ে করছে সেই মেয়ের কাছে। মেয়েটা বড্ড সুন্দরী। যে কোনো মেয়ে এই মেয়ের কাছে হার মেনে যাবে সেটা হলফ করে বলতে পারি। মেয়েটাকে আগে কোথাও দেখেছি। তবে মনে করতে পারছি না। বিয়েটা ভাঙতেও খারাপ লাগছে। কিন্তু কিছু করার নেই। আত্মা হয়েও মনমানসিকতা এতো ভালো করার মানে হয়না কোনো। আমাকে আরো কঠিন হতে হবে।
মেয়েটার ডায়েরির পাতাগুলো অস্বাভাবিক ভাবে উল্টিয়ে লিখে দিলাম "বিয়েটা করো না, পস্তাবে। ছাঁদে এসো তোমার সাথে কথা আছে। তোমাকে কিছু বলতে চাই বিয়ে সম্পর্কে।"
চলবে?...
#গল্প_ভুতুড়ে_আত্মহ_ত্যা
গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক, আশা করি ভয়ানক ভাবে উপস্থাপন করতে পারবো। কেমন হলো সেটা জানানো আপনাদের দায়িত্ব। হ্যাপি রিডিং!