Rumi korim

Rumi korim গল্প শুধু গল্পেই হইনা। গল্পেই একসময় সঠিক পথে চলার মনোবল হয়ে দারায়।ফ্যাক্ট, গল্প পড়ার একটা নেশা।

 #স্বপ্নে_দেখা_রাজকন্যা ্বছুটির দিনে দীপশিখা ঘুমিয়ে কাটায়। আজ ঘর থেকে শুধু খাওয়ার সময় বের হবে সে। বাকিটা সময় হয় ঘুমোবে, ...
30/12/2024

#স্বপ্নে_দেখা_রাজকন্যা
্ব

ছুটির দিনে দীপশিখা ঘুমিয়ে কাটায়। আজ ঘর থেকে শুধু খাওয়ার সময় বের হবে সে। বাকিটা সময় হয় ঘুমোবে, নয় ঘুম আনার জন্য বই পড়বে। আজও তাই হলো, ঘুম আনার জন্য সে বই পড়ছে। অনুরাগ বইটির মধ্যভাগে সে। আজ ঘুম আসছে না। তার ভীষণ আগ্রহ বইটি নিয়ে। পাতা উল্টাচ্ছিলো তখন বাবার স্বর কানে এলো,
“চিংকি মা, এখানে আসো তো”
“বাবা আমি ঘুমাচ্ছি, এখন আসতে পারবো না”
“তাহলে ঘুম থেকে একটু উঠো মা, জাওয়াদ এসেছে”

জাওয়াদের নাম শুনতেই ঘুম চটকে গেলো দীপশিখার। একপ্রকার লাফিয়ে উঠলো সে শোয়া থেকে। ভ্রান্ত দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো। মস্তিষ্ক কাজ করছে না। জাওয়াদ নামক মানুষটি বিগত সাতদিন যাবৎ তার চারপাশে পেন্ডোলামের মতো ঘুরছে। যেখানেই যাচ্ছে লোকটিকে সে দেখছে। দীপশিখার জন্য ব্যাপারটি খুব বিস্ময়ের, সেই সাথে লোকটির এই কাজকর্ম তার জন্য ক্ষতিকারক। লোকটির মুখশ্রী প্রতিদিন দেখা তার স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। দীপশিখার কাবু হৃদয়ের জন্য পীড়াদায়ক লোকটির হাসি সহ্য করা। তার সামনে নির্লিপ্ত মুখে দাঁড়িয়ে থাকা খুব কঠিন কার্য।

দীপশিখা ভেবেছিলো তার হৃদয়ে জাওয়াদ নামক ব্যক্তির জন্য অনুভূতিগুলো জমে গেছে, হয়তো ফুরিয়ে গেছে হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো। প্রথম যখন আপু তাকে জাওয়াদের ছবিটা দেখিয়েছিলো তখনও হৃদয়ের এককোনে আটকে রাখা অনুভূতিগুলো নড়ে চড়ে বসে নি। ফলে গুরুত্ব দেয় নি দীপশিখা। অনুভূতিগুলো খুব আড়াল করে রেখেছিলো নিজেদের। কিন্তু জাওয়াদের সাথের প্রথম সাক্ষাতে হুট করেই অভিমানী হয়ে উঠলো হৃদয়। ছয় বছর পূর্বের কিশোরীর হৃদয়ে অকারণে আঘাত হানার জন্য ভীষণ অভিমান জমলো জাওয়াদের প্রতি। উপরন্তু মানুষটির খেয়াল অবধি নেই তার কথা! অবিবেচক। ফলে প্রথমদিন যখন লোকটি জনসম্মুখে তাকে ডেকে বসলো দীপশিখা ইচ্ছে করেই তাকে অপমানিত করতে চাইলো। ভেবেছিলো, আত্মমর্যাদাহীন মানুষটি আর মুখ দেখাবে না। হৃদয়ের ভার করবে, এতো চাপ নিতে হবে না। কিন্তু লোকটি তার আত্মসম্মান জ্বলাঞ্জলি দিয়ে প্রতিদিন তার সাথে দেখা করতে আসছে। দীপশিখার অন্তস্থলের কিশোরী মনটা দুম করেই নির্লজ্জ হয়ে উঠতে চাইলো। সে অবশ্য মনকে কড়া শাসন করে রেখেছে। তাই তো কথা না বলে পাশ কাটিয়ে চলে এসেছে এই সাতদিন। নির্লিপ্ততা এখনো আগের মতোই রেখেছে সে। কিন্তু এখন তো মানুষটি ঘরে উঠে এসেছে। এবার কি করে এড়াবে? মানুষটির উদ্দেশ্য ঠাহর করতে পারছে না দীপশিখা। চায় কি সে? সে কি পছন্দ করে দীপশিখাকে? সাথে সাথেই মাথা ঝাঁকালো। অলীক চিন্তা করার মানে নেই।

ওড়নাটা পেঁচিয়ে নিয়ে বসার ঘরে গেলো দীপশিখা। বসার ঘরের সোফায় বসে আছে জাওয়াদ। একটা কালো ইনফর্মাল শার্ট পরণে, সেই সাথে একটি নীল জিন্স। হাতা গুঁটিয়ে রেখে কনুই অবধি। ফলে লোমশ হাত দেখা যাচ্ছে। শুভ্র হাতের মাসল ভেইনগুলো নিজেকে নির্লজ্জভাবে উন্মোচিত করে আছে। জাওয়াদের সামনে মোস্তফা সাহেব। তিনি অদ্ভুত একটা বিষয় নিয়ে কথা বলছেন,
“শুনেছি চিনারা নাকি তেলাপোকা, ইঁদুর খেয়ে দিন দিন জোয়ান হয়ে যাচ্ছে। ব্যাপারটি স্ট্রেঞ্জ তাই না? আমি দেখলাম ওদের একটা সত্তর বছরের বৃদ্ধ তরতর করে সিড়ি বেয়ে উঠে যাচ্ছে। এদিকে আমার পয়ষট্টি বছর আমি তিন তালা উঠতে পারি না। হার্টের ব্যামো। আমার ডাক্তার গাধা খালি ঔষধ দিচ্ছে। একটা মানুষ তিনবেলায় মোট পনেরোটা ঔষধ খাচ্ছি। আচ্ছা, তেলাপোকা ভাঁজি করে খাওয়া শুরু করবো নাকি?”

জাওয়াদের শুনেই নাড়ি পেঁচিয়ে এলো। তবুও প্লাস্টিকের হাসি ঠোঁটে আটিয়ে বললো,
“তেলাপোকা তো এখন পাওয়া যায় না তেমন? আর ওরা নোংরা পোকামাকড়। পেট খারাপ হবে আংকেল”
“সেদ্ধ করে নিলে? চিনারা খাচ্ছে তো। সেদিন দেখলাম রক্ত সসেজ খাচ্ছে। তুমি তো কিছু খাচ্ছো না। পুলিপিঠাটা নীরু নিজ হাতে বানিয়েছে, নেও নেও। আমার নীরু রান্নায় পটু হাত। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী বলেই তার মাঝে শৈল্পিক ব্যাপার আছে”

জাওয়াদের তেলাপোকা ভাঁজির কথায় রুচি উবে গেলো। তার মুখখানা দেখে দীপশিখার হাসি পেলো। বাবা এমন-ই। উদ্ভট কথা বলেন। তার কথাকে গুরুত্ব দেওয়া বিপজ্জনক। তবুও দীপশিখা তার বাবাকে খুব ভালোবাসে, তার ধারণা বাবা এগুলো ইচ্ছে করে করেন যেনো সামনের মানুষটি অপ্রস্তুত হন। দীপশিখার মনে আছে তার নানা যেবার হার্ট এট্যাক করলেন, বাবা হরলিক্স ছেড়ে এঁটেল মাটি নিয়ে গেলেন। মাটিতে নাকি অনেক নাট্রিক এসিড আছে। নানা সেটা দেখে জুতো ছুড়ে মারলেন। দীপশিখা বাবার পাশে এসে দাঁড়ালো। নীরুপমা তখনই ধমকের সুরে বললেন,
“এ কি তুমি তৈরি হও নি দীপশিখা?”

নীরুপমা একজন শৃঙ্খলাবদ্ধ মহিলা। তিনি খুবই পার্টিকুলার সব বিষয়ে। বাহিরের মানুষের সামনে অগোছালো থাকা তার পছন্দ নয়। এদিকে দীপশিখার পরণে একটা রঙ জ্বলা টিশার্ট আর ঢোলা প্লাজো। গায়ে একটা কমলা ওড়না জড়ানো। যার সাথে টিশার্ট বা প্লাজোর কোনো মিল নেই। মার মতে এভাবে মানুষের সামনে যাওয়া ঠিক নয়। কিন্তু দীপশিখা তার কথা অমান্য করেছে। কারণ জাওয়াদের জন্য সে সাজগোজ করতে পারবে না। ফলে নির্লিপ্ত স্বরে বললো,
“আমি তো বিয়েবাড়ি যাচ্ছি না মা। তৈরি কেনো হব?”
“তোমাকে নিয়ে জাওয়াদ ঘুরতে বের হবে”

নীরুপমার কথা শুনতেই দীপশিখার ভ্রু কুচকে গেলো। জাওয়াদ ঠোঁট বিস্তৃত করলো। দীপশিখা জানে মাকে বলে লাভ হবে না। তাই আদুরে স্বরে বাবাকেই বললো,
“বাবা, আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। আজ আমি বাহিরে যাবো না”

মেয়ের আহ্লাদী কথায় মোস্তফা খানিকটা গলে গেলেন। কিন্তু স্ত্রীর ধাঁরালো দৃষ্টি উপেক্ষা করার উপায় নেই। তাই রয়ে সয়ে বললেন,
“মা, একঘন্টা ঘুরে আসো। ভালো লাগবে”
“আংকেল একঘন্টা না, একটু সময় বাড়াতে হবে”

জাওয়াদ মাঝথেকে কথা বললো। নীরুপমা সাথে সাথেই বললো,
“সমস্যা নেই, তুমি ওকে নিয়ে যাও”

ঘরে মায়ের উপর বাবাও কথা বলেন না। অসহায় দৃষ্টিতে দীপশিখা। মোস্তফা অপরাধী স্বরে বললো,
“মা, দেখা না হলে চিনবে কি করে? কিছুদিন পর বিয়ে হবে তোমাদের”

সাথে সাথেই বিষম খেলো জাওয়াদ। দীপশিখা বিদ্রুপ টেনে বললো,
“এখনই বিয়ে হচ্ছে না। পানি খান”

******

ইস্ত্রী করা একটি কালো জামা পড়লো দীপশিখা। মা জামাকাপড়ের ব্যাপারে খুবই কড়া। রঙ চাপা বিধায় গাঢ় রঙ্গ পড়তে দেন না। কিন্তু দীপশিখার গাঢ় রঙ ভালো লাগে। তার পছন্দের রঙ গাঢ় লাল। কিন্তু মা তাকে লাল পড়তে দেন না। লাল পড়লে নাকি তাকে কালো দেখায়। কালো তো তার চক্ষুশূল। দীপশিখা ইচ্ছে করে কালো পড়েছে। তরঙ্গিনী বললো,
“আয় সাজিয়ে দেই”
“আমার সাজতে ভালো লাগে না”
“সে বলদটাকে মুগ্ধ করতে চাস না তাহলে?”
“মুগ্ধ হলে এমনেই হবে, জোর করে কারোর মুগ্ধতা হতে চাই না”

তরঙ্গিনী হাসলো। দীপশিখা গেট থেকে বের হতেই দেখলো জাওয়াদ বাইকের উপর বসা। সে অবাক কণ্ঠে বললো,
“এই খটখটিতে যাবো?”
“আমার বাইক তোমার কাছে খটখটি?”

জাওয়াদ ক্ষিপ্ত স্বরে শুধালো। কিন্তু দীপশিখা গায়ে মাখালো না। দায়সারা স্বরে বললো,
“আমার বাইকে উঠতে ভালো লাগে না”
“ভয় পাও নাকি?”
“মোটেই না”

কোনো মতে বললো দীপশিখা। হ্যা, সে বাইক ভয় পায়। ছোটবেলায় ছোট চাচুর বাইকে উঠেছিলো। চাচু মোড় ঘুরাতে গিয়ে বাইক সামলাতে পাড়লেন না। ধুপ করে পড়ে গেলেন ছোট দীপশিখাকে নিয়েই। সেই থেকে দীপশিখার তীব্র ভয়। জাওয়াদ বললো,
“তাহলে বস, আমার গাড়ি নেই। যা আছে এটাই। আমার সম্পত্তি”

উপায় না পেয়ে বসলো দীপশিখা। জাওয়াদ হেলমেট পড়তে পড়তে বলল,
“আমার কাঁধ ধরে বস। পড়ে যাবে নয়তো”
“লাগবে না”

কিন্তু বাইক স্টার্ট দিতেই টাল সামলাতে পারলো না দীপশিখা। খপ করে দুহাত দিয়ে কোমড় ধরলো জাওয়াদের। হাতের বাধন এতোটাই শক্ত যে ছেড়ে দিলেই সে উড়ে যাবে। জাওয়াদের অচেনা মানুষের স্পর্শ ভালো লাগে না। ওসিডির জন্য ছুঁত ছুঁত একটা স্বভাব আছে তার। ফলে তীব্র অস্বস্তি হলো যখন তার কোমড়ে নরম হাতজোড়া ভিড়লো। সরিয়ে দিতে চাইলো। কিন্তু ফ্রন্ট মিররে চোখ খিঁচে থাকার চিংকির মুখশ্রী দেখে পারলো না। মেয়েটি ভয় পাচ্ছে। কিন্তু স্বীকার করতে চাচ্ছে না। মনে মনে হাসলো জাওয়াদ। নিজের স্বভাবের ভিন্ন একটি কাজ করলো। বা হাত দিয়ে চিংকির হাতজোড়া আকড়ে ধরলো। মেয়েটির হাত ঘামছে। হাত ঘামা নিতান্ত অপছন্দনীয় ব্যাপার জাওয়াদের কাছে। ঘেন্না লাগে। অথচ সে ঘর্মাক্ত হাত ধরে আছে চিংকির। মনে মনে সান্ত্বনা দিলো। স্বপ্নের প্রকোপের কাছে এই ঘর্মাক্ত হাত কিছুই নয়।

****

পৌষের শীতল বাতাসে উড়ছে দীপশিখার চুল। পাশে চরপড়া নদী। সূর্যের সোনালী কিরণ জমাট বাধছে সেই নদীর স্রোতহীন পানিতে। লোকারণ্য নেই। যতদূর চোখ যায় সবুজ মাঠ। দীপশিখা শুধালো,
“কোথায় যাচ্ছি?”
“একটু হারাতে”

বলেই বাইকের বেগ বাড়ালো জাওয়াদ। দীপশিখা ভেবেছিলো লোকটি কোনো মানুষ ঘেরা দামী রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাবে। কিন্তু এমন লোকারণ্যহীন, নিস্তব্ধ প্রকৃতির মায়ায় নিয়ে আসবে কল্পনাতীত ছিলো। মোটা জারুল গাছের সামনে বাইক থামলো। জাওয়াদ নরম গলায় বললো,
“নামো”
“এটা কোথায়?”
“শহরের বাহিরে”
“মানুষ নেই তো”
“এজন্যই তো আসা। আমার মানুষের ভীড় ভালো লাগে না। সেখানে নদীর ধারে বসে গল্প করবো। চা-টা পাওয়া যেতে পারে”

দীপশিখা বাইক থেকে নামলো। সত্যি-ই সুন্দর জায়গা। নয়নাভিরাম সূর্যাস্ত, নদীর মন্থর সমীরণ, ঘাসের স্নিগ্ধতা, পাখির কলোরব। এমন জায়গায় প্রকৃতিতে মিলে যেতে ইচ্ছে হয়। নদীর পাড় থেকে একটু দূরেই মোটা মোটা গাছে পাখিদের ঝাক বসা। দীপশিখা মুগ্ধ নয়নে তা দেখছে। জাওয়াদ বিদ্রুপ টেনে বললো,
“তোমার ভালো লাগছে?”
“হ্যা”
“যাক জ্যোতি পয়সা বাঁচিয়ে দিলো। ভেবেছিলাম ক্রিমসন কাপে নিয়ে যাব”
“তিনশ টাকা পানি খেতে ভালো না আমার”

জাওয়াদ অবাক হলো। এর আগে এমন ধুলোতে বসে বান্ধবীর মুখের দিকে চেয়ে থাকার অভিজ্ঞতা হয় নি জাওয়াদের। ফলে হেসে বলল,
“যাক প্রতিদিনের দামী রেস্তোরার খরচ বাঁচিয়ে দিলে”
“আপনি প্রতিদিন আমার সাথে দেখা করার পরিকল্পনা করেছেন নাকি?”

অবাক হলো দীপশিখা। জাওয়াদ স্বাভাবিক গলায় বললো,
“হ্যা, তুমি তো বলেছো এক দেখাতে মানুষ চেনা যায় না। আমি তো তোমাকে চিনতে চাই, নিজেকেও জানাতে চাই”
“অসম্ভব। ওটা কথার কথা ছিলো”
"আমি তো দেখতে খারাপ নই। অন্তত আমার সুন্দর চেহারা দেখার জন্য হলেও তোমার প্রতিদিন আমার সাথে দেখা করা উচিত"

দীপশিখা সাথে সাথেই বললো,
"আপনি অন্যের কাছে সুন্দর হতে পারেন, কিন্তু আমার কেনো যেনো আপনাকে ধলা গ'রুর মতো লাগে"

ধলা গরু? দীপশিখা উত্তাপহীন উক্তিতে ভাষা হারিয়ে ফেললো জাওয়াদ। মেয়েদের হৃদয় নাড়িয়ে দেওয়া পুরুষকে মেয়েটি ধলা গরু বলছে। এ অপমান। না আর নেওয়া যাচ্ছে না। ফলে ক্ষিপ্র স্বরে বললো,
“তুমি পণ করেছো আমাকে অপমান করবে?”

দীপশিখা একটু বিব্রত হলো। সে অপমান করতে চায় নি। সে মিথ্যে বলতে পারে না। মন জুগিয়ে চলা তার অপছন্দ। মানুষের ধিক্কার যখন না চাইতেই তাকে আঘাত করেছে তখন সেই মানুষদের মুগ্ধ করা বা লাই দেবার মানে নেই--- এই ধ্যান ধারণাই তার চিরটাকাল। কিন্তু জাওয়াদকে অপমান করার মনোবৃত্তি তার নেই। মৃদু স্বরে বললো,
“আমি আপনাকে অপমান করতে বলি নি। সত্যি বলেছি”
“সবসময় সত্যি বলো তুমি?”
“হ্যা”
“তাহলে বলছো, আমার উপর তুমি ক্রাশ খাও নি?”
“না”
“আবার অপমান করছো আমাকে”
“বেশ, তাহলে ক্রাশ খেয়েছি”

জাওয়াদের বিশ্বাস হচ্ছে না। মেয়েটি হেয়ালী করছে। সে হেয়ালী করে আনন্দ পাচ্ছে। জাওয়াদ হতাশ গলায় বললো,
“তুমি মিথ্যে বলছো”
“সত্যিটাও তো পছন্দ হচ্ছে না আপনার। কি করবো বলুন?”
“কিছু করা লাগবে না, শুধু প্রতিদিন আমার সাথে দেখা করবে। তাইলেই হবে”
“আচ্ছা, আপনি এমন উদগ্রীব হয়ে আছেন কেনো আমার সাথে দেখা করতে? মতলব কি বলুন তো!”

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি

 #বৃষ্টিভেজা_সন্ধ্যায়_তুমি_এসেছিলেআফসানা_মিমি #পর্ব_৬মেয়েটির কোলে তখনও ধ্রুব শুইয়ে আছে। তাদের ঘিরে চারপাশে ভীড় জমেছে। লো...
30/12/2024

#বৃষ্টিভেজা_সন্ধ্যায়_তুমি_এসেছিলে
আফসানা_মিমি
#পর্ব_৬

মেয়েটির কোলে তখনও ধ্রুব শুইয়ে আছে। তাদের ঘিরে চারপাশে ভীড় জমেছে। লোকজন বলাবলি করছে, ছেলেটা হয়তো ম'রে'ই গেছে।"
মেয়েটা কি করবে ভেবে পেলো না। ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখা যাবে, ধ্রুবর পাশে বসে থাকা মেয়েটি কাঁদতে শুরু করেছে। রাস্তার পাশে ভীড় দেখে কৌতূহল মেটাতে লাবণ্যও তখন চলে আসলো। লাবণ্যর পাশের মানুষটার নাম, অন্তর। লাবণ্যর প্রাইভেটের শিক্ষক। লাইব্রেরীতে বই কিনতে এসেছিল।

ধ্রুবকে পরনারীর কোলে দেখে লাবণ্যর মনের ছন্দ থেমে গেলো। ধ্রুবর চোখ বন্ধ। লাবণ্য ভাবছে, কী হচ্ছে এখানে? কিছুই বুঝে আসছে না। লাবণ্যর মাথার উপর থেকে ছাতা সরে গেল। রিমঝিম বৃষ্টি এবার তাকেও ভিজিয়ে দিল। সে ভীরু মনে ধ্রুবর পাশে বসলো। হাত বাড়িয়ে ধ্রুবকে ধাক্কা দিয়ে বলল, ধ্রুব ভাইয়া, কি হয়েছে?"

ধ্রুব উত্তর দিল না। ধ্রুবর হয়ে কেউই উত্তর দিতে এগিয়ে আসলো না। মেয়েটি কীভাবে যেনো ধ্রুবকে আগলে রাখতে চাচ্ছে। লাবণ্য মেয়েটির দিকে তাকালো। ধ্রুবর সমবয়সী হবে। মেয়েটির চোখে পানি। এই পানিতে মুক্ত ঝরছে না। লাবণ্যর চোখের পানির মতো বেদনা ঝরছে। লাবণ্য, ধ্রুবকে ডেকে বলল," আমার সাথে কথা বলবে না, ধ্রুব ভাইয়া?"

চার জোড়া হাত এসে ধ্রুবকে কোলে তুলে নিয়ে চলল। লাবণ্য উত্তর পেল না। নির্জীব শরীর নিয়ে বসে রইলো ফুটপাতে। তার আপাদমস্তক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। কী হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না। অন্তর যখন লাবণ্যকে ডাকলো তখন তার ধ্যান ভাঙলো। ঠোঁট উল্টিয়ে বলল," আমাকে ধ্রুব ভাইয়ার কাছে নিয়ে চলুন, স্যার!"

অন্তর বুঝলো, অসুস্থ ভদ্রলোক লাবণ্য পূর্বপরিচিত কেউ। লাবণ্যকে নিয়ে গাড়ি পিছু নিল।

সাদিফ বিশ মিনিটের মধ্যে হাসপাতালে পৌঁছালো। সাদিফকে মূলত সেই মেয়ে সংবাদ দিয়েছে। মেয়েটা ধ্রুবর কলিগ। একসাথে কাজ করে তারা। ধ্রুবর ফোন দিয়ে সংবাদ দিয়েছে সাদিফকে।

ইমারজেন্সীতে ধ্রুবকে ভর্তি করানো হয়েছে। মেয়েটাই সমস্ত খরচ বহন করছে। ধ্রুবর প্রেসক্রিপশন নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে মেয়েটা।

সাদিফ হাসপাতালের বারান্দায় বোনকে দেখতে পেয়ে অবাক হলো। বোনের কাছে এসে চোখ দুটো সংকুচিত করে বলল," এখানে কি করছিস?"

ভাইকে দেখে লাবণ্যর আটকে রাখা কান্না প্রকাশ পেল। সে বিচলিত হয়ে বলতে থাকল," ভাইয়া, ধ্রুব ভাইয়ার কি হয়েছে? আমার সাথে কথা বলেনি। আমি কতো ডাকলাম, শুনেনি।"

সাদিফ দেখল লাবণ্যর সাথে অন্তরও এসেছে। বিষয়টা সাদিফের পছন্দ হয়নি।বোনের দিকে রাগ মিশ্রিত চোখে চেয়ে ধ্রুবর খোঁজ নিতে চলে গেল সে।

এদিকে অন্তরের হাতে সময় কম। সন্ধ্যা হতে চলল, প্রাইভেট পড়াতে যেতে হবে। সে লাবণ্যর কাছে এসে বলতে শুরু করল," চলো, তোমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসি। এখানে থেকে আর কী করবে?"

লাবণ্যর প্রস্তাবটা পছন্দ হলো না। সে তার ধ্রুব ভাইয়াকে ছেড়ে চলে যাওয়ার কল্পনাও করতে পারছে না। অন্তর বারংবার জোর করাতে লাবণ্য চটে গিয়ে বলল," আপনি দেখছেন না, আমার ধ্রুব ভাইয়া অসুস্থ। আপনি কী বুঝতে পারছেন,আমার এখানে থাকা কতোটা জরুরী! আপনার ইচ্ছে হলে চল যান। আমি ধ্রুব ভাইয়াকে ছেড়ে কোথাও যাব না।"

কয়েকটা দিন, এই কয়েকদিনে কী একজনের মন থেকে ভালোবাসার মানুষটিকে মুছে ফেলা সম্ভব? লাবণ্য চেষ্টা করছিল কিন্তু আদৌও সরাতে পেরেছে? ধ্রুব নামক প্রাণপাখি সর্বদাই লাবণ্যর মনে বিচরণ করেছে।

অবাক করার বিষয় হলো, অন্তর সত্যি সত্যিই চলে গেল। লাবণ্য তাচ্ছিল্য হাসলো। তেঁতো হলেও সত্য, ছেলেরা বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রতি আকর্ষিত হয়। মেয়েদের অভ্যন্তরে মনটাকে কেউ খুঁজেও দেখে না। লাবণ্য ধ্রুবকে ভুলে থাকার প্রয়াস করেছিল মাত্র।

লাবণ্য বারান্দায় বসে চোখের পানি ফেলছে। ধ্রুবকে নিয়ে আসা মেয়েটি কখন এসে লাবণ্যর পাশে বসলো; টের পেল না। মেয়েটি নিজ থেকেই কথা বলা শুরু করল," তুমি তোমার কথা রাখোনি, লাবণ্য।"

লাবণ্য মেয়েটার দিকে তাকালো। মনে পড়লো সেদিনের ঘটনা। যেদিন কফিশপে ধ্রুবর সাথে অন্য মেয়েকে দেখে লাবণ্য চলে আসছিল। তখনই এই মেয়েটার সাথে দেখা হয়েছিল লাবণ্যর। মেয়েটার নাম নীরা। ধ্রুবর বস। খুবই সাধারণ পোশাকে চলাফেরা মেয়েটার। এতো বড়ো পদে অবস্থান তার, বুঝা মুশকিল। নীরা, লাবণ্যকে দেখে বুঝে গিয়েছিল মেয়েটা ধ্রুবকে ভালোবাসে। সে লাবণ্যর সাথে কথা বলল। তাদের কথোপকথন এমন ছিল,

" তুমি খুবই ছোট। ধ্রুবর মন মানসিকতার সাথে তোমার খাপখাওয়াতে হিমশিম খাবে।"
" আমাকে আর চেষ্টা করতে হবে না। উনি অন্য কাউকে পছন্দ করে।"
নীরা হাসলো। আলগোছে মাথার চুলগুলো গুছিয়ে বলল," ধ্রুবর প্রকৃত ভালোবাসা হলাম আমি। ঐ মেয়েটা ধ্রুবর বন্ধুমাত্র।"

লাবণ্য অবাক হয়েছিল। ভাঙা মন জোড়া লাগার পরিবর্তে পুনরায় ভেঙে গেল। লাবণ্য উত্তর দিল, " ধ্রুব ভাইয়া যদি আপনাকে ভালেবেসে থাকে। তাহলে আমি কখনো আপনাদের মাঝে আসবো না।

" ভেবে বলছো তো?
" লাবণ্য, ভেবেই প্রেমে পড়েছিল। এবার ভেবেই দূরে সরে যাবে।"
নীরা হেসে সেদিন বলেছিল, " তুমি ছোট হলেও খুবই চতুর একজন মেয়ে।"

লাবণ্য মলিন হেসে চলে এসেছিল।

বর্তমানে লাবণ্যর মুখে রা নেই। মেয়েরা নিজেদের স্বার্থের জন্য কোন পর্যায়ে যেতে পারে তা ভাবনার বাহিরে। লাবণ্য আজ নিজের ও ধ্রুবর কথা ভেবে এখানে পড়ে রয়েছে। ধ্রুব যদি লাবণ্যকে চলে যেতে বলে তবেই সে যাবে। নয়তো এখানেই পড়ে থাকবে।

নীরা বিরক্ত হলো। লাবণ্যকে জানে মে'রে ফেললে হয়তো শান্তি পেতো। সে কিছুই করল না। ধ্রুবকে পেতে হলে ছলচাতুরীর সাহায্য নিতেই হবে।

লাবণ্য উদাসীন হয়ে বলল," আমি হয়তো ধ্রুব ভাইয়াকে ছাড়া বাঁচব না।"

নীরা দাঁতে দাঁত চেপে প্রত্ত্যুত্তরে বলল," ধ্রুব আমাকে ভালবাসবে।"

লাবণ্য শান্তসুরে বলল," ধ্রুব ভাইয়া শুধু আমাকেই ভালোবাসে, সারাজীবন বাসবে।"

" এতোটা আত্নবিশ্বাসী হয়ো না, লাবণ্য। তোমার কথায় বাচ্চামো স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।"

লাবণ্য উত্তর দিল না। তার দৃষ্টি অদূরে নিমজ্জিত।

ধ্রুবর জ্ঞান ফিরে এসেছে। অতিরিক্ত চাপ নেওয়ার কারণে রক্তচাপ কমে গিয়েছিল। আকস্মিক ধাক্কা খেয়ে জ্ঞান হারিয়েছিল। ডাক্তার তিন ঘণ্টার সেলাইন দিয়েছে। সাদিফ বন্ধুর পাশে বসে আছে। ধ্রুব কথা বলছে না। চোখের সামনে লাবণ্যর সাথে ছেলেটার চিত্র ভেসে উঠছে। ধ্রুব সাদিফকেও প্রশ্ন করল না। চোখ বন্ধ করে রাখলো। সে এবার তাই করবে,যা লাবণ্য চায়। লাবণ্যর ইচ্ছে অপূর্ণ রাখার মতো লাভারবয় ধ্রুব নয়।

লাবণ্য ধীরপায়ে কেবিনে প্রবেশ করল। ধ্রুবর বন্ধ চোখজোড়া দেখে থমকে রইলো। সাদিফের মনে হলো, ধ্রুবর সাথে এবার ভালো কিছু ঘটবে। আজ লাবণ্যর চোখজোড়াও ভিন্ন কথা বলছে। সে লাবণ্যকে জায়গা করে দিয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে গেল।
লাবণ্য ধ্রুবর সেলাইন লাগানো হাতটার উপর হাত বুলিয়ে দিল। ধ্রুবর চোখজোড়া তৎক্ষনাৎ খুলে গেল। সে ভবাতেও পারেনি, লাবণ্যকে দেখতে পাবে। লাবণ্যর ফ্যাচফ্যাচ কান্নার শব্দ সহ্য করতে পারল না ধ্রুব। মুখে বিরক্ত ভাব এনে বলল," কি শুরু করলি, লাবন্য? মৃত্যুর দুয়ারে প্রবেশ করা মানুষকেও ঠিকঠাকমতো ম'র'তে দিবি না নাকি?"

লাবণ্য কান্নামাখা কণ্ঠস্বরে উত্তর দিল," মৃত্যুর কথা বলবে না, ধ্রুব ভাইয়া।"

" কেনো, আমি ম'রে গেলে কী তুইও ম'রে যাবি?"
" হ্যাঁ বললে কী, একসাথে বেঁচে ফিরবে?"

ধ্রুব অবাক হলো। লাবণ্যর মুখনিঃসৃত বাক্য বিশ্বাস হলো না। সে পুনরায় শুনতে চাইলো, " কি বললি?"

লাবণ্য ভয় পেলো। ভাবলো, পুনরায় বললে যদি গালে থাপ্পড় পড়ে? সে মিনমিন সুরে বলল," আর বলব না, ধ্রুব ভাইয়া। আমি বাড়ি যাব।"

ধ্রুব বিড়বিড় করল," আমাকে একা ফেলে যাস না, লাবণ্য।"

লাবণ্য শুনলো না। নীরা দরজা ঠেলে আসলো তখন। কান্না মিশ্রিত কণ্ঠস্বরে বলল," আপনার বুদ্ধি কবে হবে,মিস্টার ধ্রুব? আমার জন্য আপনাকে কে এতো বড়ো রিক্স নিতে বলেছিল, বলুন?"

ধ্রুব লাবণ্যর দিকে তাকালো। লাবণ্যর চোখের ভাষা পড়ার শিক্ষা সে ভুলে বসেছে। সেই ঘটনা পুনরাবৃত্তি ঘটলো ধ্রুবর চোখের পাতায়। ধ্রুবর উচ্ছ্বসিত মন থমকে গেল তৎক্ষনাৎ উঁকি দিল আগুনের ঝঙ্কার। সে রিনরিনে সুরে লাবণ্যর উদ্দেশে বলল," মিস নীরার সাথে আমার কিছু কথা আছে, লাবণ্য। তুই কী....?

লাবণ্য অবিশ্বাসের চোখে তাকালো। নীরার দিকেও চোখ পড়লো। নীরা মুচকি হাসছে। ভ্রু নাচিয়ে বলতে শুরু করল," বড়োদের কথার মাঝে থাকতে নেই, মেয়ে! তুমি বাহিরে অপেক্ষা করো। আমাদের কথা শেষ হলে ডেকে দিব।"

লাবণ্য, ধ্রুব ও নীরকে একা রেখে কেবিন ত্যাগ করলো। তার গলা মরুভূমির মতো শুকিয়ে গেল। তৃষ্ণায় ঢোক গিলল কয়েকবার। ভেতরের পারিবেশের কথা ভেবে হাত কচলাতে লাগলো। নীরা যদি সবটা বলে দেয়? ধ্রুব তো তাকে ভুল বুঝবে। এমনিতেও দূরত্ব কম হয়নি। তাদের বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় ভিজতে অনেক দেরী।

চলবে...........

 #উষ্ণ_প্রেমের_আলিঙ্গন_২  #পর্ব১৯আফিয়া_আফরোজ_আহি টেস্ট পরীক্ষা শুরু হয়েছে সপ্তাহ খানেক হবে। বইয়ের মাঝে ডুবে আছি এক প্রকা...
30/12/2024

#উষ্ণ_প্রেমের_আলিঙ্গন_২
#পর্ব১৯
আফিয়া_আফরোজ_আহি

টেস্ট পরীক্ষা শুরু হয়েছে সপ্তাহ খানেক হবে। বইয়ের মাঝে ডুবে আছি এক প্রকার। মোবাইলের সাথে ব্রেকাপ করে বই, খাতা, টেবিলের সাথে ভাব জমাচ্ছি। নাওয়া খাওয়া ভুলে সারাদিন বই নিয়ে বসে আছি। এই বাহানায় যদি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করা যায় আরকি। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হচ্ছে না। একদিক দিয়ে পড়ছি তো অরেক দিক দিয়ে ভুলে খেয়ে ফেলছি। কি এক অদ্ভুত জ্বালা! কিছু পড়ে মনেই রাখতে পারছি না। ইচ্ছে করছে হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে কান্না করি। নিজের মাথায় নিজেই বারি দেই। বিগত এক ঘন্টা যাবত জীব বিজ্ঞান বই নিয়ে বসে আছি কিন্তু মাথায় কিছুই ঢুকছে না। কাল বাদে পরশু জীব বিজ্ঞান পরীক্ষা। এই পড়াশোনা দিয়ে নাকি আমি ডাক্তার হবো! রুদ্র ভাইয়া ঠিকই বলে আমার পড়াশোনা যেই শ্রী এই পড়াশোনা দিয়ে ডাক্তার তো থাক দূর কম্পান্ডারও হতে পারবো না। মাথায় হাত দিয়ে বসে আছি। এর মাঝে পাশে থাকা ফোনটা নিজ শব্দে বেজে উঠলো। এমনি মেজাজ খারাপ তার ওপর আবার কে কল দিলো? ফোন স্ক্রিনের সামনে নিতেই চোখের সামনে জ্বল জ্বল করে ভেসে উঠলো "আদ্র ভাই" নামটা। মনের অজান্তে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো। ফোন রিসিভ করে কানে ধরলাম। সালাম দিয়ে চুপ করে রইলাম। ওপাশের মানুষটাও চুপ। খানিক বাদের কণ্ঠস্বর ভেসে এলো,
"মন খারাপ?"

ছোট দুটি শব্দ তবে আমার কাছে অনেক বড় মনে হলো। আমার মন খারাপ, খারাপ লাগা, ভালো লাগা, উৎফুল্লতা সবই যেন ওপাশের মানুষটার অনুভব করতে পারে। আমার সকল এক্সপ্রেশন তার মুখস্ত হয়ে গেছে। এই যে এখন আমার মন খারাপ সেই বিষয়টাও মানুষটা কি রকম এক লহমায় বুঝে গেছে। আমার সকল দিকে তার খেয়াল সর্বদা থাকবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমি তার চোখের আড়াল হলেও কোথাও না কোথাও কোনো না কোনো ভাবে উনি আমার দিকে খেয়াল অবশ্যই রাখবে।
"কি হলো কিছু বলছিস না যে?"

"মন খারাপ না কিন্তু..."

"কিন্তু কি? কি হয়েছে আমার বল"

"পড়া মাথায় ঢুকছে না। যাই পড়ছি সবই কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে। একদিক দিয়ে পড়ছি আরেক দিক দিয়ে ভুলে যাচ্ছি। আমি নিঃঘাত এবার পরীক্ষায় ফেল করবো"

বলতে বলতে কেঁদে ফেললাম। নিজের এভাবে কান্নায় আমি নিজেই অবাক হলাম। এই সামান্য বিষয়ে এভাবে ঝড় ঝড় করে কেঁদে ফেলার মেয়ে আমি নই। অপর পাশের মানুষটার আদর মাখা কথায় নিজেকে সামলাতে না পেরে কেঁদে ফেলেছি। ফোনের ওপাশে আদ্র ভাই উদগ্রীব হলো। উৎকণ্ঠা হয়ে বলল,
"বোকা মেয়ে কান্না করছিস কেন? জীব বিজ্ঞান মুখস্ত পড়া এতে এমন হবে এটাই স্বাভাবিক। মাথা ঠান্ডা করে পর দেখবি মনে থাকবে"

"তাও হচ্ছে না তো। সেই ভুলেই যাচ্ছি"

"তাহলে এক কাজ কর পড়াটাকে পড়া হিসেবে না নিয়ে এনজয় কর। বুঝে বুঝে পর মুখস্ত করা লাগবে না। শুধু পয়েন্ট গুলো নোট করে পড় তাহলেই হবে। এরপরও যদি সমস্যা হয় তাহলে শুভ ভাইকে বল ভাইয়া বুঝিয়ে দিবে। আর আমি রাতে আসছি, কি কি বুঝিস না সেটা নোট করে রাখ"

আদ্র ভাই মানুষটা এমনই সব বিষয়ে শান্ত মাথায় সিদ্ধান্ত নিবে। কোনো হড়বড় নয়। সব কিছু সাজানো গোছানো। উনি মানুষটা একদম পারফেক্ট। আরো কিছুক্ষন আদ্র ভাইয়ের সাথে কথা বলে পড়তে বসলাম। এখন মনটা ফুরফুরে লাগছে। আদ্র ভাই মানুষটা আমার কাছে আস্ত এক ম্যাজিক। যার আশেপাশে থাকলে মন খারাপেরা এক ঝটকায় হাওয়া হয়ে যায়। এতক্ষন যতোটা খারাপ লাগছিলো এখন ততোটাই ভালো লাগছে। মনোযোগ দিয়ে পড়ছি আর কোথাও আটকে গেলে সেটা নোট করে রাখছি। শুভ ভাই বাড়িতে নেই মেডিকেলে গেছে। তাই সমস্যা গুলো জমিয়ে রাখছি। ভাইয়া এলে দেখাবো।

আদ্র ভাই বাড়ি চলে গেছে দিন পনেরো আগে। ফুপ্পির শরীর খারাপ করেছে। আরু একা একা তার দেখাশোনা করতে পারছে না। আমি একবার যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আদ্র ভাই দেয়নি। গম্ভীর কণ্ঠে বলেছিলো,
"ততোর সেবা করার জন্য মানুষ লাগে দুজন তু্ই আবার কি সেবা করবি? সপ্তাহ খানেক পর পরীক্ষা মন দিয়ে পড়। আম্মুর দেখা শোনা করার জন্য আমি আছি"

আদ্র ভাই ছেলে হিসেবে বেস্ট। ঘরের সব কাজই প্রায় পারেন। এমন কি রান্না বান্নাও পারে কিছুটা। অফিস, ফুপ্পির সেবা যত্ন সব করেও আমায় সময় দিতে এক দিনের জন্যও ভোলেনি মানুষটা। ওনার কাছে সব সম্পর্ক মূল্যবান। সব সম্পর্কের মূল্য দিতে জানেন উনি। এই জন্যই মানুষটাকে আমার এতো ভালো লাগে।
——————

টেবিলে বসে বসে পড়ছি। রাত দশটার মতো বেজে গেছে। খানিক্ষন আগে আম্মু এক দফা চিল্লা চিল্লি করে গেছে খাবার খাওয়ার জন্য। আমার সেই এক কথা পড়া শেষ না হওয়া অবধি আমি টেবিল থেকে উঠে কোথাও যাচ্ছি না। আগে পড়া তারপর অন্য কিছু। পরীক্ষায় খারাপ করলে শুভ ভাই যে আস্ত রাখবে না এতে বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই। আমার আর ইভার অবস্থা সেম চোখের জলে নাকের জলে এক হচ্ছে। এতদিন ঘুরে ফিরে আড্ডা দিয়ে কাটিয়ে এখন নাকে মুখে বই পড়ছি। চোখে সরষে ফুলের বদলে বই আর বই দেখছি।

মনে হচ্ছে কেউ রুমে ঢুকেছে। কিন্তু সেদিকে তাকানোর সময় আমার নেই। যেভাবেই হোক সব পড়া কমপ্লিট করে উঠতে হবে। ট্রি-টেবিলের ওপর কিছু রাখার শব্দ পেলাম। মানুষটা ওয়াশরুমে গেছে। খট করে ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দে না তাকিয়ে আর পারলাম না। আম্মু এলে এতক্ষনে এক দফা ডাকাডাকি হয়ে যেত। তাহলে কে এসেছে? আদ্র ভাই ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছে। টাওয়াল দিয়ে হাত মুখ মুচ্ছে। তাও আবার আমার টাওয়াল দিয়ে! উনি সত্যি সত্যি চলে এসেছেন? আমি তো ভেবেছিলাম মজা করছে। চোখ ছোট ছোট করে আদ্র ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছি। আমি আমার জিনিস কাউকে ধরতে দেই না। এটা আমার পছন্দ না। সেখানে উনি কি সুন্দর সাচ্ছন্দে আমার টাওয়াল দিয়ে মুখ হাত মুছে যাচ্ছে। আদ্র ভাই আমায় তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলো,
"কি দেখছিস?"

"তোমার সাহস তো কম না! তুমি আমার টাওয়াল নিয়েছো"

"বরটা কার?"

আচমকা এমন প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেলাম। এ আবার কেমন প্রশ্ন? খানিকটা তোতলানো স্বরে বললাম,
"আমার"

"টাওয়াল কার?"

"আমার?"

"দুটোই তো তোর। তাহলে সমস্যা কি? নিজের টাওয়াল নিয়ে যতোটা বড়াই করিস বর টাকে নিয়ে ততোটা করতে পারিস না? নাকি তাকে তোর চোখেই পরে না। কোনটা?"

কথা ঘুরানোর জন্য বললাম,
"হয়েছে বাদ দেও। এখন এটা রাখো"

আদ্র ভাই এক ভ্রু উচু করে জিজ্ঞেস করলো,
"আমার বউয়ের টা আমি নিয়েছি এতে তোর কি?"

"তোমার সাথে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। সেই দেখা যাবে আমি হেরে যাবো। তার চেয়ে ভালো আমি চুপই থাকি"

আদ্র ভাই শার্টের হাত গোটাতে গোটাতে জিজ্ঞেস করলো,
"খাবার খাসনি কেন?"

"পড়া শেষ হলে খাবো তাই"

"রাত কয়টা বাজে খেয়াল আছে? এখনো না খেয়ে বসে আছিস"

বলতে বলতে প্লেট হাতে নিয়ে খাবার মাখাতে শুরু করলো। কিছু বলবো তার আগেই আদ্র ভাই মুখে খাবার পুড়ে দিলো। খেতে খেতে জিজ্ঞেস করলাম,
"তুমি খেয়েছো?"

"ব্যাস্ত ছিলাম তাই খাওয়া হয়নি"

"তাহলে এখান থাকে খাও। এমনিও আমি এতো গুলো খাবো না"

"তু্ই তো বলিস আমি তোর খাবারে ভাগ বসাই। তাই আজ খাবো না। তু্ই আগে খা"

"তুমি বাড়ি যাওনি?"

"অফিস শেষ করে সোজা এখানে এসেছি"

"না এলেও তো পারতে। সারাদিন খাটা খাটনির পড় রেস্ট প্রয়োজন তোমার"

"তোকে এতো কিছু নিয়ে ভাবতে হবে না। তু্ই চুপচাপ খা। খাবার সময় এতো কিসের কথা?"

ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিলো। এটাই হচ্ছে তার স্বভাব। নিজের দিকে খেয়াল নেই সে সারাদিন অন্যদের খেয়াল রাখতে ব্যাস্ত। মুখটা শুকিয়ে গেছে। কাজের চাপে ঠিক মতো খায় ও নি মনে হচ্ছে। খাওয়া শেষে আদ্র ভাই আমার হাতে অন্য প্লেট ধরিয়ে দিয়ে বলল,
"কি ভেবেছিস আমি নিজের হাতে তোকে খাইয়ে দিবো সাথে নিজেও খাবো? মোটেও না। তু্ই খাইয়ে দিবি আমায়। তুমি শুধু সেবা নিয়েই যাবে তা তো হবে না। সেবা দিতেও হবে। তাই এখন বরের সেবা কর"

তাহলে এই ছিলো বজ্জাত লোকটার মনে? এই জন্যই তো বলি আজ কেন আমার খাবারে ভাগ বসেচ্ছে না। তবে আগে থেকে এই মতলব এটে আশা হয়েছে! অগত্যা আর কি বজ্জাত লোকটা কে গালে তুলে খাইয়ে দিতে হচ্ছে। খাওয়া শেষে একটু বিশ্রাম নিয়ে ফের পড়তে বসলাম। আদ্র ভাই এক এক করে সব গুলো টপিক বুঝিয়ে দিচ্ছে যেগুলোতে সমস্যা ছিলো। রাত একটা বেজে গেল পড়া শেষ করতে করতে। চেয়ার থেকে উঠে ধপাস করে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। ক্লান্ত লাগছে। পিঠ ধরে গেছে এক নাগাড়ে বসে থাকায়। আদ্র ভাইও আমার দেখা দেখি শুয়ে পড়লো।
"ছাদে যাবে?"

"এতো রাতে ছাদে?"

"চন্দ্র বিলাস করতে"

"যাওয়াই যায়। কিন্তু ছাদে না"

"তাহলে কোথায়?"

"লং ড্রাইবভে যাবি? খোলা মাঠে বসে বিশাল আকাশ দেখার অনুভূতিই আলাদা"

এক লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালাম। আদ্র ভাইয়ের হাত টেনে উঠাতে উঠাতে বললাম,
"এখনো তুমি শুয়ে আছো? তাড়াতাড়ি চলো"

আদ্র ভাই হাত বাড়িয়ে আমার সামনের চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলল,
"পা*গলী"

ব্যাস্ত শহরের অলি গলি পেরিয়ে কিছুটা গ্রাম্য এলাকার ভিতর দিয়ে গাড়ি শো শো করে চলছে। সানরুফ দিয়ে বের হয়ে মুক্ত বাতাস উপভোগ করছি। আদ্র ভাই এক মনে ড্রাইভ করছে। কিছুক্ষন পর গাড়ি থামলো সুন্দর একটা নদীর পাড়ে। আশ পাশটা একদম শুনশান। মানুষের ছিটা ফোঁটাও নেই। আদ্র ভাইয়ের হাতের মাঝে হাত রেখে সামনের দিকে এগিয়ে চলছি। নদীর ওপরে কাঠের ব্রিজ। ব্রিজের ওপরে দাঁড়িয়ে প্রকৃতি বিলাস করছি। নদীর পানিতে প্রতিফলিত হচ্ছে চাঁদের প্রতিচ্ছবি। দেখতে ভীষণ সুন্দর লাগছে। ইচ্ছে করছে নদীর পানিতে পা ডুবিয়ে বসে থাকি। কিন্তু এই শীতের মধ্যে পানি ছোঁয়া তো দূর ধারে কাছেও যেতে ইচ্ছে করছে না। খানিক সময় পর পর শীতল হাওয়া এসে ছুঁয়ে দিচ্ছে। আর এদিকে আমি চন্দ্র বিলাস করতে এসে শীত বিলাস করছি। শরীরে সোয়েটার থাকার পড়ও ঠান্ডায় কাঁপছি। আদ্র ভাই আমার এই অবস্থা দেখে কাছে এগিয়ে এলো। আচমকা পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আমায় তার সাথে জড়িয়ে নিলো। বাড়ি থেকে আনা চাদরে জড়িয়ে নিলো দুজনার দেহ। এখন শীত লাগছে না। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আকাশ দেখছি। পুরো আকাশ জুড়ে থালার ন্যায় জ্বল জ্বল করছে চন্দ্র। যার আলোয় আলোকিত হয়ে রয়েছে পুরো ধরণী। আদ্র ভাইকে দেখিয়ে বললাম,
❝দেখো চাঁদের আলো কতোটা স্নিগ্ধ❞

আদ্র ভাই কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলল,
❝চাঁদের আলোর চেয়ে বেশি স্নিগ্ধ আমার রৌদ্রময়ীর মুখ খানা। চাঁদের কলঙ্ক আছে। আমার রৌদ্রময়ীর কোনো কলঙ্ক নেই। সে স্নিগ্ধ ফুলের ন্যায়❞

ফিসফিস কণ্ঠে শিহরণ বয়ে গেল কানের পাশটা জুড়ে। মুগ্ধতা চেয়ে গেল হৃদয় জুড়ে। একটা মানুষ কতোটা সুন্দর করে কাউকে চাঁদের সাথে তুলনা দিতে পারে আদ্র ভাইকে না দেখলে জানতামই না। নিঃসন্দেহে আদ্র ভাই নামক মানুষটাকে পেয়ে আমি ভাগ্যবতী।

সুন্দর সময় কাটিয়ে বাড়ি ফিরছি দুজন। মুখে লেগে আছে তৃপ্তির হাসি। মনটা এখন ফুরফুরে। হেসে হেসে গল্প করতে করতে বাড়ির ভিতরে ঢুকছি। সেই সাথে আছে দুজনের মাঝে কিছুটা খুনসুটি।

ছাদে এক খানা ছায়া দেখা যাচ্ছে। মানুষটা নিকোটিনের ধোয়া উড়িয়ে দিচ্ছে ওপরের দিকে। বুকে তার এক আকাশ সম পরিমান যন্ত্রনা। যন্ত্রণার বেড়াজালে আষ্টে পিষ্টে পিষে যাচ্ছে। তবুও মুখ ফুটে কাউকে কিছু বলতে পারছে না। বুক ফেটে যাচ্ছে কিন্তু ওপরে ওপরে নিজেকে যথাসাধ্য স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে। তবুও তাকে ব্যার্থ হতে হলো। বেঈমান আঁখি বেইমানি করে চোখের কোন থেকে গড়িয়ে পড়লো এক ফোঁটা অশ্রু। ধীরে ধীরে আঁধারের সাথে মিলিয়ে গেল মানবের অস্তিত্ব।

#চলবে?

 #ধরিয়া_রাখিও_সোহাগে_আদরেলেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী  #পর্ব_চৌদ্দমাঝ রাতে দরজার সামনে বছর খানেকের বাচ্চা মেয়ে আনায়াকে হাত পা ছ...
30/12/2024

#ধরিয়া_রাখিও_সোহাগে_আদরে
লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_চৌদ্দ

মাঝ রাতে দরজার সামনে বছর খানেকের বাচ্চা মেয়ে আনায়াকে হাত পা ছুঁড়ে কাঁদতে দেখে উপস্থিত সবাই অবাকের শেষ সীমানায়। সায়র হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এটা কি করে সম্ভব! মেহনূর আর নিলুফা বেগমও দৌড়ে এসেছে কান্নার শব্দে। তাদের পিছু পিছু দৌড়ে আসলেন আবির সাহেব। ছোট্ট আনায়াকে এখানে দেখে চমকে উঠলেন। বিস্ময়ে চোখের পাতা পড়ছে না। মেহরিশ আর অপেক্ষা করতে পারলো না। ছুটে গিয়ে আনায়াকে কোলে তুলে নিল। বুকের মধ্যে চেপে ধরে কান্না করে উঠল। অজস্র চুমুতে আনায়ার মুখশ্রী ভরিয়ে দিল। আশ্চর্যজনক ভাবে আনায়ার কান্না থেমে গেল। আনায়া এখন হাসছে। মায়ের কোল বুঝি সন্তান খুব ভালোভাবে চিনে। সায়র এই সুন্দর দৃশ্যটা দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। ক্লান্ত ভঙ্গিতে দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়াল। মেহরিশের খুশির কান্না দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। এই দৃশ্যটা দেখার জন্যই তো এতগুলো খারাপ মোমেন্টের সাথে যুদ্ধ করল। নিলুফা বেগম আর মেহনূরও এবার ছুটে গিয়ে মেঝেতে বসে পড়ল। আনায়াকে নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে গেল মুহূর্তেই। সায়র একবার আবির সাহেবের দিকে তাকাল। তিনি শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। কোনোরকম রিয়েক্ট করছেন না। চোখে-মুখে কোনো ভয়, খুশি বা দুঃখের ছাপ নেই। একদম স্বাভাবিক সবকিছু। মেহরিশ আনায়াকে নিয়ে এবার সায়রের দিকে ছুটে আসল। খুশিতে আত্মহারা হয়ে বলে উঠল,
“সায়র! সায়র! দেখুন আমার আনায়া! আমার আনায়াকে আমি ফিরে পেয়েছি।”
সায়র কোনোরকম কথা বলল না। শুধু ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটল। হাত বাড়াতেই আনায়াকে হামাগুড়ি দিয়ে সায়রের কোলে চলে আসল। একদম বুকের সাথে লেপ্টে রইল। সায়রের মনে হচ্ছে ওর দেহ আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে। আবার কতদিন পর বুকটা ভরপুর লাগছে। এই মুহূর্তটার জন্য সায়র সারাজীবন লড়াই করে যেতে পারবে।।রক্তের টান না থাকা সত্ত্বেও কারোর জন্য আত্মার এতটা টান থাকতে পারে সায়র আগে কখনো উপলব্ধি করতে পারেনি। আবির সাহেব এবার মুখ খুললেন। আনায়ার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে কান্নারত বাক্যে বলে উঠলেন,
“আমার নানুমনি! আমার নানুমনি কই দেখি?”
সায়রের কেমন আশ্চর্য লাগল। তার কণ্ঠে একটুও মায়া, মমতা, স্নেহ খুঁজে পেলো না। তবুও আনায়াকে তার কোলে দিয়ে একটু সরে আসল। ফোন বের করে মুন্নাকে একটা টেক্সট পাঠিয়ে দিল। সারা বাড়িতে ইতোমধ্যে লাইট জ্বলজ্বল করছে। সবাই আনায়াকে ঘিরে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। মেহনূর নিশ্চুপে এসে দাঁড়াল সায়রের পাশে। আলতো বাক্যে জিজ্ঞেস করল,
“সায়র ভাই! কী বুঝলেন?”
সায়র ভাবুক স্বরে জবাব দিল,
“বুঝতে পারছিনা ঠিক। তবে আড়ালে কিছুটা একটা খেলা চলছে। কিন্তু সেই খেলাটা কি এটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।”
মেহনূর বলল,
“ভাইয়া, যত দ্রুত সম্ভব আপুকে নিয়ে নিউইয়র্ক ফিরে যাব। আপু অনেক কিছু সহ্য করেছে। আর কোনো দুঃখ আমার বোনকে ছুঁতে না পারুক।”
সায়র একা একা কিছুক্ষণ ভাবল। অতঃপর মেহরিশের উদ্দেশ্যে বলল,
“মেহরিশ আনায়াকে নিয়ে আপনি ঘরে যান। খেতে দিন দ্রুত।”
মেহরিশ শুনল। দ্রুত পায়ে চলে গেল ঘরে। মেহরিশের পিছু পিছু মেহনূর আর নিলুফা বেগমও চলল৷ সায়র নিজের রুমের দিকে পা বাড়াল। কয়েকপা গিয়ে আড়ালে সরে গেল। নজর দিল আবির সাহেবের দিকে। আবির সাহেব ফোন বের করে বাইরের ছুটে গেলেন। সায়রও অপেক্ষা করলেন না৷ ধীর পায়ে আবির সাহেবের পিছু নিল। আবির সাহেব বাড়ির এক কোনে এসে কাউকে ফোন করল। আবির সাহেবের থেকে কয়েক হাত দূরে আড়ালে দাঁড়াল সায়র। কয়েক সেকেন্ডের মাথায় কেউ ফোন রিসিভ করতেই আবির সাহেব গর্জে উঠে বললেন,
“বাস্টার্ডের বাচ্চা! বাচ্চাটা কোথায়?”
ওপাশ থেকে কি উত্তর আসল সায়র ঠিক শুনল না। আবির সাহেব পুনরায় দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলেন,
“কু*ত্তার বাচ্চা! বাচ্চাটা যদি তোদের কাছে হয় তাহলে মেহরিশের কোলে কে? আমাকে কি তোদের ছাগল মনে হয়? একটা সামান্য বাচ্চাকে তোরা সামলে রাখতে পারস না৷ তোদের সব কয়টার সময় ঘনিয়ে এসেছে।”
বলেই তিনি ফোন কাটতে না কাটতেই পেছন থেকে কানে ভেসে আসল,
“কিন্তু আমি তো দেখতে পারছি আপনার সময় ঘনিয়ে আসছে, মিস্টার আবির সিকদার।”
আবির সাহেব হকচকিয়ে উঠলেন। ভয় পেয়ে দুইপা পিছিয়ে গেলেন। ভয়ার্ত বাক্যে জিজ্ঞেস করলেন,
“সা.সা.সা. সায়র! তুমি!”
সায়র কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলল। কিছু বলতে পারল না। সায়রের পেছন থেকে এবার মেয়েলী স্বরে একজন অসহায় বাক্যে উচ্চারণ করল,
“বাবা! তুমি! আমি ঠিক দেখছি?”
সায়রও এবার চমকাল। পেছন ঘুরে দেখল মেহনূর দাঁড়িয়ে আছে। চোখে মুখে সে কি করুন অবস্থা! অশ্রু ঝরছে দু নয়নে। আবির সাহেবের এবার কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেল। চোখ দুটো মারবেল আকার ধারণ করল। গলা শুকিয়ে আসতে লাগল। কণ্ঠস্বর দিয়ে এবার শব্দ বের হচ্ছে না। সায়র মেহনূরের উদ্দেশ্যে বলল,
“তুমি! এখানে?”
মেহনূর কান্না চেপে রাখতে পারল না। নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারল না। ছুটে এসে ঝাপটে ধরল আবির সাহেবকে। কান্নারত বাক্যে বলতে লাগল,
“বাবা! ও বাবা! আমি স্বপ্ন দেখছি? বলো? বাবা, তুমি একটু আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরো তো। প্লিজ, বাবা। আমার খুব ভয় করছে। আমাদের সাজানো গুছানো পরিবারটা ভেঙে পড়েছে, বাবা। প্লিজ আমাকে একটু আঁকড়ে ধরো। আমার ঘুম ভাঙিয়ে দাও। আমি এসব সহ্য করতে পারছি না। আমি তোমার ফেরেশতার রুপ দেখেছি, সেই আমি তোমার ফেরাউনের মতো রুপ সহ্য করতে পারব না, বাবা।”
বলেই হাঁউমাঁউ করে কেঁদে উঠল। আবির সাহেব স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন শুধু। সায়রও নিশ্চুপে দাঁড়ানো। এই মুহূর্তে কি বলা উচিত খুঁজে পাচ্ছে না। মেহরিশ আর আনায়াকে বাঁচানোর উপায় খুঁজছে। পুরো পরিবারটাকে আবার জোড়া লাগানোর পথ খুঁজছে। মেহনূর হঠাৎ কান্না থামিয়ে দিল। এক ঝটকায় সরে আসল আবির সাহেবের কাছ থেকে। চোখের পানিগুলো মুছে নিয়ে আবির সাহেবের দিকে অগ্নীশ্বর চাহনী নিক্ষেপ করল। কাঠকাঠ গলায় বলে উঠল,
“তুমি যা করছ তা খুব ভয়ংকর। আপুর কলিজায় হাত দিয়েছো বাবা বলে তোমাকে ছেড়ে দিবে না এইটুকু জেনে রাখো। শেষটা খুব করুন হবে দেখে নিও।”
বলেই মেহনূর কাঁদতে কাঁদতে ভেতরে চলে গেল। আর কিছু শোনা বা দেখার শক্তি নেই ওর। মেহনূর চলে যেতেই আবির সাহেব রাগে সায়রের উপর হামলে পড়ল। সায়রের কলার চেপে ধরে চেঁচিয়ে বলে উঠল,
“এসব হয়েছে তোর জন্য। তুই আমার সাজানো গুটি সব এলোমেলো করে দিয়েছিস। কি ভেবেছিস সবাই সবটা জেনে গেলে আমি থেমে যাব? একদম না। মেহরিশের ধ্বংস অনিবার্য।”
সায়র হাসল। হেচকা টানে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে উঠল,
“কার ধ্বংস কোথায়, কিভাবে লেখা থাকে এটা একমাত্র উপরওয়ালা ছাড়া কেউ জানে না। তাই একটু অপেক্ষা করেন। খেলা তো সবে মাত্র শুরু। শুরুটা আপনি করেছেন শেষ না হয় আমরা করব।”
বলেই আর এক মিনিট দাঁড়াল না। বড় বড় পা ফেলে চলে গেল।
-
-
“আমাকে এখানে আটকে রাখা হয়েছে কেন? আমাকে ছেড়ে দাও প্লিজ। কতবছর আমি একটু বের হতে পারি না। পৃথিবীটাকে দেখি না। আলো, বাতাসের সংস্পর্শে যেতে পারি না। আমার সন্তান, স্ত্রী, পরিবারের কাউকে দেখি না৷ আমি আর এই বন্দি জীবন নিতে পারছি না। আমাকে ছেড়ে দাও প্লিজ। কোন অপরাধে আমার জীবনের এতগুলো দিন নষ্ট করলে তোমরা? কোন অপরাধে?
বলতে বলতে একটা লোক কেঁদে উঠল। চুল দাঁড়িতে একাকার অবস্থা মুখশ্রী। জানালার ফাঁকফোকর দিয়ে আলো পড়েছে রুমে। হাত -পা শিকলে বন্দি। বলতে গেলে পুরো শরীর শিকলে বন্দি। লোকটা নিজেও জানেনা কোন অপরাধের শাস্তি হিসেবে এতগুলো বছর ধরে তিনি এখানে বন্দি। লোকটা ক্লান্ত হয়ে বিরবির করে বলে উঠল,
“আমি আবির সিকদার। যে কিনা একসময় শত শত মানুষের আহার যোগান দিয়েছে, সময়ের লীলাখেলায় আজ সে নিজেই খাবারের জন্য হাহাকার করে...”

#চলবে

[কি মনে হচ্ছে বলুন তো? গল্পটা কেমন লাগছে? কোন দিকে আগাচ্ছে?”

Address

Panchagarh
Rājshāhi

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Rumi korim posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Rumi korim:

Videos

Share