23/01/2023
গল্পঃ প্রিয়া।
লেখা- আজিজুল হক
--তোর যখন এক পুরুষে হয়না, তাহলে কেন আমার সাথে সম্পর্ক গড়তে আসলি?
'রানা ভাষা সুন্দর করো প্লিজ। এখানে অনেক লোকজন আছে। আশাকরি নোংরা মনোভাব এদের সামনে ফুটিয়ে তুলবে না। '
-তোর মতো নিম্নমানের মেয়ের সাথে, সম্পর্কে জড়ানো ছিলো বড় ভুল।
' যাও নতুন করে খুঁজে নাও কাউকে। তার সাথে রিলেশেন শুরু করো। মুক্তি দাও আমাকে, আর নিতে পারলাম না মানসিক যন্ত্রণা।'
-এত সহজে কি তোকে ছেড়ে দেবে! তোকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খার করে দিবো এর পর তোর মুক্তি।
'যাও তো রানা আমার সামনে থেকে । কোন ঝামেলা করো না। তোমার এলাকায় এসেছি, আজ কোথায় একটু খাতির যত্ন করবা, তা না অপমান করতেছো উল্টো।কোন দিন ও কি তুমি ভালো হবেনা রানা?'
- ভালো ব্যবহার পাওয়ার যোগ্য বলে মনে হয় না তোকে।
তুই এমন মেয়ে ভালোবাসার মানেই বুঝস না ।যে সব সময় নিজের স্বার্থ নিয়ে থাকে, তাকে আমার আর কিছুই বলার নেই।
'প্লিজ রানা চুপ করো। বিয়েতে এসেছি।আজ অন্তত তোমার এই ভাবে আমার সাথে কথা বলা ঠিক হয়নি।'
-শোন প্রিয়া একটা কথা কি জানো ভালোবাসার জন্য একটা মন লাগে, যা তোমার কখনো ছিলো না।হ্যাঁ তোমার রুপ আছে। আর আমি তোমার রুপের প্রেমেই পড়েছিলাম কিন্তু সত্যি আমি ভুল করেছি। প্রিয়া আমার সুন্দর একটা মন দরকার ছিলো।
যা তোমার ভিতর নেই,কিন্তু ভুল আমার ও আছে। আমি মন খুঁজিনি, কারন ভেবেছি সৌন্দর্যই সব। কিন্তু এখন আমি ভুল, আসলে রুপ তো বিলীন হবে সময়ের টানে। কিন্তু মন তো বিলীন হবার নয়, এই সহজ কথাটা আমি বুঝিনাই।
'রানা অনেক অপমান করলা আজ! সত্যি কষ্ট লাগলো। খুব এই যদি হয় ভালোবাসা রানা, তাহলে আমি ঘৃনা করি তোমার এই ভালোবাসাকে।'
--প্রিয়া জীবন কখনোই সুন্দর হয়না। জীবন রঙিন হয়। কখনো কালো, সাদা, লাল।
আর হ্যাঁ তুমি চাইলে আজ থেকে মুক্ত তুমি তোমাকে আর ফেরাতে কখনো চাইবো না। যদি থাকার হয়ে থেকে যেও৷
'অনেক হয়েছে রানা আর না। অনেক কষ্ট দিলা আজ ,এই কষ্ট সীমাহীন।
তবে আমি তোমাকে বলছি রানা। আমি ও তোমাকে ছাড়াতেছিনা। এই জন্য তোমার ভুল এর অবসান হবে। আর তখন আমার কাছে ফিরতে হবে। আর যদি তখন আমাকে না পাও, তুমি হয়তো নষ্ট হয়ে যাবে। জীবনটা অন্য রকম হয়ে যাবে তোমার। কিন্তু এই কঠিন বিপদে আমি তোমাকে ফেলে রেখে সুখী কেমন হবো।
কারন নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি তোমাকে।
তাই তোমার জন্য আমার সব অপেক্ষায়। তোমার ফেরার অপেক্ষায়। কাছে পাওয়ার অপেক্ষা। '
--প্লিজ নাটক বন্দ করো, আমি মরলে ও তোমার কী? মন চায়....
আমার গালে চড় বসিয়ে দিলো। পাশের লোকজন সব আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে! রাগ এবং লজ্জা দুটো আমাকে যেন শেষ করে দিচ্ছে।
আমি কিছু না বলে, মাথা নিচু করে চলে আসি ওখান থেকে।পরিচিত লোকজন সবাই তাকিয়ে রইলো।
যাইহোক এইবার শোনেন কে এই প্রিয়া।
প্রিয়া হলো আমার দূর সম্পর্কের এক আত্মীয় আর আমাদের বিয়ে পারিবারিক ভাবেই ঠিক। তাইতো সে জোর দিয়েই বললো, যে তার কাছে আমার ফিরতেই হবে।
আসলে সমস্যার শুরু হয়েছে বেশ কয়েকে দিন ধরে, প্রিয়াকে প্রায়ই ওয়েটিং পাওয়া যায়। আর কিছু বললেই বলে যে, আরে আমার বন্ধবীর ফোন আর না হলে বলবে, বান্ধবীর বয়ফ্রেন্ডয়ের ফোন।এই সব নিয়েই যত সমস্যা।
আর আজকে আমার খালাতো বোনের বিয়ে। আর এখানে এসেও সে সবার সাথে আড্ডা দিচ্ছে। আমাকে কোন খবর নিচ্ছেনা।
একা একা বসে আছি। মনটাই খারাপ হয়ে গেছে, এত গুলো মানুষের অপমানে লজ্জায় কান্না আসতেছে।
প্রিয়া আবার কাছে এসে, 'রানা কথা বলো প্লিজ। তাকাও আমার দিকে!
আমার ভুল হয়ে গেছে ক্ষমা করে দাও। এত গুলো মানুষের সামনে তোমার গায়ে হাত তুলেছি অসলেই বড় অন্যায় করে ফেলেছি আমি। আসলে তোমার কথায় রাগ চলে আসলো। '
--না ঠিক আছে । সমস্যা নেই, এটাই প্রাপ্য ছিলো আমার।
'চুপ করো । মানুষের কথা শুনতে শুনতে আমি এখন ক্লান্ত তুমি চলে আসার পর হাজার প্রশ্ন। কেন আমি তোমাকে চড় মেরেছি?
আমি চুপ করে থেকে এক সময় চলে আসলাম। আমাকে তুমি বাড়ি দিয়ে আসো।
আমি আর নিতে পারছিনা মানুষের এত কথা। অনেকে তো তোমাকে নিয়ে খারাপ ধারনাও করে ফেলছে। আমার ভুলের জন্য তোমাকে এত কথা বলছে যে আমি নিতে পারছি না। সবাই ভাবছে তুমি চরিত্রহীন। মেয়েদের ইভটিজিং করায় চড় দিয়েছে। '
আমি তবুও চুপ করে আছি।
প্রিয়া আবার বলছে, 'আমার কষ্ট হচ্ছে। খুব আর পারছিনা, তোমার নীরবতাকে মেনে নিতে।আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো। আমিও তোমাকে ভালোবাসি। আমাকে নিতে টেনশন করার কিছু নেই। এ জীবনে তোমার না হলে, অন্য কারো হবো না। আমার ব্যাস্ততাও থাকতে পারে। তাই বলে এগুলো নিয়ে এভাবে কথা বলায় রাগ হয়েছিলো।""
--তোমার ইচ্ছায় সব হবে? করার আগে মনে থাকে না যে, এই কাজ কেমনে করি?
"তুমি যা বলবা তাই করবো. তবুও ক্ষমা করে দাও। আমি আর নিতে পারছিনা খুব কষ্ট হচ্ছে। আজ থেকে সব সময় তোমাকেই দিবো। আমার জীবনের সবটাই তুমি। আমার ভুলটা ক্ষমা করে দেও। রাগ করে হাত তুলে ফেলছি। "
হঠাৎ আম্মা এসে বলে,
"রানা আর প্রিয়া দু'জনেই মান সন্মান আর রাখলিনা। তোদের এইসব আচরণ কী এগুলো? এভাবে জীবন পার করবি একসাথে? তোদের একে অপরকে ভালো না লাগলে জানিয়ে দে। কী করছিস এগুলো?
---আসলে আম্মু একটু......
"চুপ কর বেয়াদব, একটা কথাও বলবিনা। আগামীকাল ওই বিয়ে শেষ হলেই পরের দিন তোদের বিয়ে ভেবেছিলাম। যে বড় আয়োজন করে তোদের বিয়েটা দিবো। কিন্তু না তা হবে না সে পথ তোরা রাখিস নি।"
---তোমার যা করার করো, আমার কিছু বলার নেই।
"হুম তোদের আবার কি থাকবে বলার? আমাদের স্বীদ্ধান্ত শেষ... "
--- আচ্ছা আম্মু....
আম্মু প্রিয়ার হাতটা ধরে এখান থেকে চলে যাচ্ছে।
প্রিয়া পেছনে ফিরে একটা ভেংচি কেটে চলে গেলো।আমি দাঁড়িয়ে তাদের চলে যাওয়া দেখছি।
নিজেকে পাগল পাগল মনে হচ্ছে। এজন্য বলে পুরুষ পাগল হলেই বিয়ে করে। ভালো মানুষ কখনো বিয়ে করতে চায় না।
সমাপ্ত.......