24/06/2023
বিদ্যমান সঙ্কট নিরসনে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিকল্প নেই সর্বদলীয় মতবিনিময় সভায় পীর সাহেব চরমোনাই
জাতীয় সরকার গঠনে ৯ দফা প্রস্তাব
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ- এর আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, বিদ্যামান সঙ্কট নিরসনে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিকল্প নেই। আর জাতীয় সরকার ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে রাজনৈতিক সংকট ঘনিভূত হচ্ছে। যা দেশের জনগণের জন্য অমঙ্গল বয়ে আনতে পারে এবং দেশে আরও একবার সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
শনিবার সকাল ১০টায় ঢাকার গুলিস্থানস্থ ইম্পেরিয়াল কনভেনশন সেন্টারে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং দেশের শীর্ষ ওলামা মাশায়েখ, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করবে না। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি নিয়েও আপত্তি করেছেন তিনি। পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে আয়োজনের পাঁয়তারা চলছে। মানুষকে ধোকা দিয়ে বোকা বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর দলীয় সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচনই সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ হয় নাই। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বিরোধী দলের ওপর দমনপীড়ন চালিয়ে এক তরফা নির্বাচন করে ক্ষমতা দখল করাই দলীয় সরকারের মূল উদ্দেশ্য থাকে। ভবিষ্যতেও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার আশা করা যায় না। ১৯৭৩, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন তার প্রমাণ।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিরোধিতা করে চরমোনাই পীর বলেন, ‘রাজনৈতিক একটি বিশেষ প্রেক্ষাপটে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে প্রথম নির্বাচন হয় ১৯৯১ সালে। ওই নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তৎকালীন বিরোধীদল বলেছিল নির্বাচনে সূক্ষ্ম কারচুপি হয়েছে। এ অজুহাতে বিরোধী দল অনেকদিন পার্লামেন্ট বর্জন করেছিল। আবার দ্বিতীয়বার ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে ওই সময়ের বিরোধী দল বলেছিল ভোটে স্থূল কারচুপি হয়েছে এবং তারাও লাগাতার সংসদ বর্জন করেছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় নাই।’
জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব করে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, ‘সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দেখতে পাই দলীয় সরকার, সামরিক সরকার, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সেনা সমর্থিত সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচনই নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয় নাই। বর্তমানে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এবং বিগত পদ্ধতিগুলোর ত্রুটির কারণে নিবন্ধিত সব দলের পরামর্শক্রমে ও অংশগ্রহণে জাতীয় সরকার গঠন করে তার অধীনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে বলে ইসলামী আন্দোলন মনে করে।’
জাতীয় সরকারের রূপরেখা প্রসঙ্গে চরমোনাই পীর বলেন, ‘আপিল বিভাগের একজন বিজ্ঞ, সৎ যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য বিচারপতিকে প্রধান করে নিবন্ধিত দলগুলোর প্রতিনিধি নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন হবে। যারা জাতীয় সরকারে থাকবেন তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। জাতীয় সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বর্তমান জাতীয় সংসদ ভেঙে দিতে হবে। সংসদ ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করবেন। কোনও কারণে তা সম্ভব না হলে পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। বর্তমান মন্ত্রিসভার কেউ নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারে থাকতে পারবেন না।’
সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল অব. সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহীম বীর প্রতিক, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক ড. আহমদ আব্দুল কাদের, মসজিদ মিশনের মহাসচিব ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, প্রফেসর ড. আব্দুল লতিফ মাসুম, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম মসীহ, জাতীয় ইনসাফ কায়েম পার্টির সদস্য সচিব শওকত মাহমুদ, এবি পার্টির সদস্য সচিব মুজিবুর রহমান মঞ্জু, বাংলাদেশ জমিয়তুল মুছলেহীনের আমির মাওলানা খলিলুর রহমান নেছারাবাদী,ফরায়েযী জামাতের সভাপতি মাওলানা আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ হাসান, মুসলিম লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুল ইসলাম, এনডিএম এর সভাপতি ববি হাজ্জাজ, বাংলাদেশ ন্যাপ-এর মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, খেলাফতে রব্বানীর চেয়ারম্যান মুফতী ফয়জুল হক জালালাবাদী, মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফেরদৌস পীর সাহেব মোকামিয়া। উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস হাফিজ ইব্রাহিম, ইসলামী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে প্রেসিডিয়াম সদস্য আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী, আলহাজ্ব খন্দকার গোলাম মাওলা, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, কেএম আতিকুর রহমান, আহমদ অবাদুল কাইয়ূম, মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরীসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু ইসলামী আন্দোলনের ৯ দফা প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন করে বলেন, এই রূপরেখা বিএনপি রূপরেখার সাথে অনেকাংশেই মিল আছে। তবে তিনি (পি.আর) পদ্ধতির সাথে ভিন্নমত প্রকাশ করেন। তিনি বরিশালে সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ফয়জুল করীমের উপর আওয়ামী বর্বরতার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ইসলামী আন্দোলন ইচ্ছা করলে পুরোদেশ অচল করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু সেটা তারা করেনি। এটা অত্যন্ত দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছে। তিনি ইসলামপন্থিদের অনৈক্যের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, জালিম সরকার হটানোর আন্দোলনে যাদের অবদান থাকবে, বিএনপি তাদের সাথে নিয়ে সরকার গঠন করবে।