01/11/2025
আচ্ছা, আপনি যখন হাই স্কুলে পড়তেন, তখন ক্লাসে রোল ডাকা হতো নিশ্চিতভাবে।
রোল ডাকার সময় আমরা বা আপনি সবাই দাড়িয়ে উপস্থিত স্যার/ম্যাডাম কিংবা প্রেজেন্ট স্যার বা ম্যাডাম বলতাম।
এবার, আপনাদের কে আমি একটু সেই স্কুলের রোল ডাকার সময়টাতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাই অল্প সময়ের জন্য এবং অবশ্যই একটি রহস্যময় বিষয়ের মাধ্যমে।
আপনি হয়তো ভাবছেন, ক্লাসে স্যার রোল ডাকতো এর মধ্যে রহস্যের কি আছে!
আছে বলেই বলছি, আপনি শুনলেও অবাক হবেন খুবই।
১০০ জন ছাত্র ছাত্রী হলে রোল ডাকা হতো এক, দুই , তিন……সবশেষে একশো।
খুব স্বাভাবিক একটি বিষয়। কিন্তু স্যার যদি রোল ডাকার সময় ৪৯ রোল নম্বর না ডাকে, কিংবা ৪৯ রোল নম্বরে কোন ছাত্র বা ছাত্রী না থাকে, তাহলে কি বলবেন!
বলবেন যে, স্যার ভুলে হয়তো ডাকেন নি।
না, ভুলে নয়, আসলেই স্যার ৪৯ রোল নম্বর ডাকেন নি, এমনকি ছাত্র ছাত্রীদের রোল নম্বরের তালিকাতেও ৪৯ রোল নম্বর নেই। এ ঘটনা শুধু একটি ক্লাসে নয়, ওই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত কোন ক্লাসেই ৪৯ রোল নম্বর নেই, ৪৯ রোল নম্বরে কোন ছাত্র ছাত্রীর নাম নেই!
আজব এ ঘটনা, আমাদের দেশেরই। প্রতিষ্ঠানটির নাম রোটারী বেতাগী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়।
প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বেতাগী ইউনিয়নের বেতাগী গ্রামের চম্পাতলীতে অবস্থিত।
১৯৬৮ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়।
এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের যৌথ উদ্যোগে এবং বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক জনাব আবুল হায়াত চৌধুরীর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় বেতাগী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় নামে এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়।
১৯৬৯ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড কুমিল্লা থেকে স্বীকৃতি লাভ করে এবং ১৯৭০ সালে সর্বপ্রথম এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।
পরবর্তীতে বিশিষ্ট জাপানী রোটারিয়ানদের একান্ত প্রচেষ্টায় ১৯৮৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রোটারী ইন্টারন্যাশনাল জিলা ২৭৭০ থেকে এক শক্তিশালী প্রতিনিধি দল ডাঃ হিরোমু আকিয়্যামার নেতৃত্বে সর্বপ্রথম বেতাগী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় সফর করেন এবং বিদ্যালয়টির বিভিন্ন দিক সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী সম্যকভাবে অবহিত হন।
তখন থেকেই তারা সহযোগিতা অব্যাহত রেখে চলেছেন এবং তখন থেকেই বিদ্যালয়ের নামকরণ হয় “রোটারী বেতাগী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়”।
এবার আসল ঘটনায় আসি, তবে সত্যিকার অর্থেই কেউ বলতে পারে না, ৪৯ রোল নম্বর না থাকার এ রহস্যের কারণ কি!
এটা নাকি পূর্ব পুরুষেরা করে গিয়েছে, যুগের পর যুগ ধরে এমনি চলছে।
প্রবীণ শিক্ষক, কর্তৃপক্ষ আর গ্রামবাসীদের কাছ থেকে যতটুকু জানা যায়, প্রথমদিকে এটি ছিলো একটি ছোট্ট শিক্ষা প্রতিষ্টান। অল্প ক’জন ছাত্র ছাত্রী পড়াশুনা করতো এখানে। ধীরে ধীরে স্কুলের খ্যাতি বাড়তে থাকে। নতুন রোল নম্বর যুক্ত হতে থাকে এবং সেখানেই শুরু হয় অদ্ভূত এক ধাঁধার জন্ম।
প্রথম প্রথম সবই ঠিক ছিলো কিন্তু হঠাৎ ঘটে কিছু আশ্চর্যজনক ঘটনা। কোন এক সনে দেখা গেলো, যার রোল নম্বর ছিলো ৪৯, সে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লো। শুধু তাই নয়, একইভাবে আরো কয়েকটি শ্রেণিতে ৪৯ রোলধারী সবাই একসাথে অসুস্থ হয়ে পড়লো।
প্রথমে মনে করা হয়েছে, এটি সামান্য জ্বর। কিন্তু কারো কারো ক্ষেত্রে শরীর এতটাই দূর্বল হয়ে পড়েছে যে শেষে স্কুল পর্যন্ত ছাড়তে হলো।প্রথমদিকে এ ঘটনাটিকে কেউ গুরুত্ব দেয়নি। যা মনে হওয়াই স্বাভাবিক।
সবাই ভেবেছিলো, এটি একটি সাধারণ ব্যাপার। হয়তো কিছুটা কাকতালীয়।
কিন্তু কিছুদিন পর যখন নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হলো, তখন ৪৯ রোল নম্বর পেলো আরো একজন ছাত্র। এবং তার ভাগ্যেও নেমে আসলো অভিশপ্ত ছায়া।
কোন একদিন স্কুলের পাঠ সমাপনী শেষে বাড়ি ফেরার পর পুকুর পাড়ে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লো ৪৯ রোলধারী ছাত্রটি।
তার ভাগ্যে ঘটলো মর্মান্তিক এক ব্যাপার।
জনশ্রুতি অনুয়ায়ী, পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয় ৪৯ রোলধারী ছাত্রটিকে।
তারপর বছরের পর বছর ধরে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটার কারনে স্কুল কর্তৃপক্ষ ঘচনাটিকে গুরুত্ব সহকারে নেয়। এটি নিছক কাকতালীয়, নাকি অতি প্রাকৃত কোন শক্তির প্রভাব- এ প্রশ্নটি ঘুরপাক খেতে থাকে শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী আর অভিভাবকদের মাঝে।
তাই স্কুল কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয়, ৪৯ রোল নম্বর আর কোন শিক্ষার্থীকে দেয়া হবে না, ৪৮ এর পর সরাসরি ৫০ রোল নম্বর দেয়া হয়। যাতে আর কোন শিক্ষার্থী এই অভিশপ্ত ৪৯ সংখ্যার শিকার না হয়।
সেই থেকে আজ অবধি এমনি চলছে রোটারী বেতাগী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সব ক্লাসেই ৪৯ রোল নম্বর নেই।
যদিও বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এটি শুধুই কুসংস্কার, তবুও মানুষের মনোজগতের ভয় ও বিশ্বাসের জায়গাটি এখানে প্রকটভাবে প্রকাশ পেয়েছে। স্কুলের শিক্ষকরা বলেন, এতে শিক্ষার পরিবেশে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না, বরং এটি একধরনের ঐতিহ্য বা গল্পে পরিণত হয়েছে যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে যাচ্ছে।
বি.দ্র.: দেখে নিতে পারেন, একটি ক্লাসের রোল নম্বরের তালিকার একটি ছবি, যেখানে ৪৯ রোল নম্বর নেই, ৪৮ এর পর সরাসরি ৫০
(সংগৃহীত ছবি)