JUMAR BOYAN

JUMAR BOYAN Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from JUMAR BOYAN, Newspaper, Pakerhat.

08/10/2022

কোরআন সুন্নাহর দর্পণে রবিউল আউওয়াল ও ঈদে মীলাদুন্নাবী [লিফলেট]
——————————————
রবিউল আউওয়াল হিজরী সনের তৃতীয় মাস। এ মাসের বিশেষ কোন মর্যাদা ও ‘ঈদে মীলাদুন্নাবী’র অস্তিত্ব কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা যথার্থভাবে প্রমাণিত নয়।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন :
إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِنْدَ اللَّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللَّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ
“নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে (বছরে) মাসের সংখ্যা ১২ মাস, আর এ সংখ্যা আল্লাহ যে দিন আকাশসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন সে দিনই আল্লাহর কিতাবে (চূড়ান্ত হয়ে আছে) এর মধ্যে ৪টি মাস পবিত্র ও মর্যাদা সম্পন্ন।” (সূরাহ্ আত্ তাওবাহ্, ৩৬)

এ আয়াতে ৪টি মাসকে حُرُم (পবিত্র ও মর্যাদা সম্পন্ন) বলা হয়েছে। এ মাসগুলোর নাম কুরআনে উল্লেখ করা হয়নি, হাদীসে মাসগুলোর নাম এসেছে। মাসগুলো হলো রজব, জুলকা’দা, জুলহিজ্জা ও মুহার্রম। কুরআনে একটিমাত্র মাসের নাম উল্লেখ করা হয়েছে আর সেটি হল রমাযান। আল্লাহ এই মাসে কুরআন নাযিল করেছেন এবং পূর্ণ মাসের ছিয়াম (রোজা)কে ফরজ করে দিয়েছেন। (সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্, ১৮৫)

রসূলুল্লাহ (সাঃ)-ও এ মাসের মর্যাদা বর্ণনা করেছেন। বাড়তি কিছু নফল ইবাদতের (নফল সিয়ামের) দিক থেকে শাওয়াল ও শা’বান মাসদ্বয়ও হাদীসে বেশ গুরুত্বের সাথে উল্লেখিত হয়েছে।
কুরআন ও সহীহ হাদীসে উল্লেখিত সাতটি মাস ছাড়া অন্য কোন মাসের বিশেষ কোন মর্যাদা ও তার ভিতর ইবাদত বন্দেগীর কথা উল্লেখ নেই।

সুতরাং রবিউল আউওয়ালসহ অন্য কোন (পাঁচটি) মাসকে পবিত্র মাস বলা বা এর কোন বিশেষ মর্যাদা ও আমল-ইবাদত আছে বলে ধারণা পোষণ করার পক্ষে কুরআন-সুন্নাহর কোন নির্দেশনা পাওয় যায় না। আল্লাহ ও তাঁর ওয়াহীর ভিত্তিতে রসূল (সাঃ) যে সময়, দিন, মাস, স্থানকে মর্যাদা দিয়েছেন তার মর্যাদা স্বীকৃত। এর বাইরে নিছক আবেগ বা কারো মতের ভিত্তিতে কোন সময়, দিন, মাস, স্থানকে পবিত্র ও মর্যাদা সম্পন্ন বলে বিশ্বাস করা তো দূরের কথা ধারণা পোষণ করারও কোন সুযোগ নেই।

রবিউল আউওয়াল মাসকে কেন মর্যাদা দেয়া হয়?
------------------
রসূল (সাঃ) রবিউল আউওয়াল মাসে জন্মগ্রহণ করেছেন বলে এ মাসকে অনেকে মর্যাদা সম্পন্ন বলে থাকে। রসূল (সাঃ)-এর জন্মের কারণে রবিউল আউওয়াল মাস পবিত্র ও মর্যাদা সম্পন্ন এ ধারণা এবং বিশ্বাসের পেছনে শর‘ঈ কোন দলীল নেই। কুরআন ও সুন্নাহর কোন পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ ইঙ্গিত নেই। এমনকি রবিউল আউওয়াল উদযাপন ঐতিহাসিকভাবেও ভ্রান্ত আমল। কেননা নবী (সাঃ)-এর জন্ম কোন মাসে, কোন তারিখে ও কোন সময় হয়েছে সেই বিষয়টি অত্যন্ত মতভেদপূর্ণ:
(১) সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মত হল রমযান।
(২) বহুল প্রচারিত অথচ অনির্ভরযোগ্য মত হল রবিউল আউয়াল।
(৩) কেউ কেউ বলেছেন রবিউছ ছানী
(৪) কেউ কেউ বলেছেন মুহাররম
(৫) কেউ কেউ বলেছেন সফর।

যারা রবিউল আউয়াল মাসে নবীর জন্মের কথা বলেছেন তারাও তারিখ নিয়ে মতভেদ করেছেন। এ নিয়ে প্রায় ৮টি উক্তি পাওয়া যায়। যথা: রবিউল আউয়ালের ২, ৩, ৮, ৯, ১০, ১২, ১৭, ২২।
এগুলোর মধ্যে কিছুটা প্রাধান্যযোগ্য মত হল ৯ রবিউল আউয়াল। আবার অনেকেই ১২ই রবিউল আউয়াল মৃত্যু দিন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। শুধুমাত্র মৃত্যু সাল ও দিনের ক্ষেত্রে ঐক্যমত্য রয়েছে আর তা হলো ১১ হিজরী, সোমবার।

যেহেতু কুরআন ও সহীহ হাদীসের সুস্পষ্ট কোন দলীল দ্বারা রবিউল আউওয়াল মাসের বিশেষ কোন মর্যাদা প্রমাণিত নয় এবং ঐতিহাসিকভাবে ভ্রান্তিপূর্ণ, তাই এ মাসকে পবিত্র মাহে রবিউল আউওয়াল বলা, মিছিল করে বা খোলা ট্রাকে করে নাত গেয়ে এ মাসকে স্বাগত জানানো, মাসব্যাপী কর্মসূচী ঘোষণা করা ও উদযাপন করা, জশনে জুলুস বা বর্ণাঢ্য মিছিল করা, রবিউল আউওয়াল উপলক্ষে সেমিনার বা আলোচনা সভার আয়োজন করা বিদ্‘আত। যারা এ কাজ করে তারা এসবকে ভাল কাজ মনে করে সাওয়াবের উদ্দেশেই করে থাবে। যে ‘আমাল (কাজ) এর ব্যাপারে কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর সমর্থন নেই, নেক কাজ মনে করে সাওয়াবের আশায় সে কাজ করাই বিদ্‘আত। রসূল (সাঃ)-এর ঘোষণা অনুযায়ী সকল বিদ্‘আতই গুমরাহী ও ভ্রষ্টতা আর তার পরিণাম হল জাহান্নাম।
ফলে উল্লেখিত কাজগুলোকে বিদ্‘আত হাসানা বা ভাল বিদ্‘আত বলার কোন সুযোগ নেই।

রসূল (সাঃ), সহাবায়ি কিরাম, তাবি‘ঈগন রবিউল আউওয়াল মাসের আলাদা কোন মর্যাদার ধারণা পোষণ করতেন না। এ মাসকে তাঁরা বিশেষভাবে উদযাপনও করতেন না ।
নিম্নোক্ত হাদীসের আলোকে রসূল (সাঃ) ও খুলাফায়ে রাশিদীনের আদর্শ অনুসরণ করে আমরাও এ মাস উপলক্ষে বিশেষ কোন আমল ও কর্মসূচী উদযাপন করব না। রসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন :
عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ، تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ، وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ، فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ، وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ وَكُلَّ ضَلاَلَةٍ فِي النَّارِ.
‘তোমরা আমার ও খুলাফায়ি রাশিদীনের আদর্শকে গ্রহণ কর এবং মাড়ির দাঁত দিয়ে তা কামড়িয়ে ধর। দ্বীনের মধ্যে নতুন উদ্ভাবিত সকল বিষয়ে সতর্ক থাক। কেননা দ্বীনের মধ্যে নতুন উদ্ভাবিত সকল বিষয়ই বিদ্‘আত। আর সকল বিদ্‘আতই গুমরাহী ও পথভ্রষ্টতা।’ (আবূ দাঊদ হাঃ ৪৬০৭, নাসাঈ হাঃ ১৫৭৮)

ঈদে মীলাদুন্নবী বিদ’আতী ঈদ কেন?
-----------------------------
ঈদে মীলাদুন্নবী বর্তমানে বহুল প্রচলিত ও পরিচিত একটি পরিভাষা। পরিভাষাটি তিনটি শব্দের সমষ্টি। আর তিনটি শব্দই আরবী- ঈদ, মীলাদ ও নবী।
ঈদের শাব্দিক অর্থ খুশি ও আনন্দ। পরিভাষায় ঈদ হচ্ছে দ্বীনি উৎসব। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রা.) বলেন, ঈদ হচ্ছে এমন সাধারণ সমাবেশ যা নির্দিষ্ট সময়ে বারবার ফিরে আসে। বছরে ঘুরে আসে, সপ্তাহে আসে অথবা মাসে আসে। (তাইসীরুল আজীজিল হামীদঃ ৩৫১)

মীলাদ মানে জন্ম। যেমন يوم الميلاد অর্থ জন্ম দিন, تاريخ الميلاد মানে জন্ম তারিখ। নবী বলতে এখানে মুহাম্মদ (সাঃ)-কে বুঝানো হয়েছে। তাই ঈদে মিলানুন্নবী পরিভাষাটির বাংলা অর্থ হচ্ছে নবীর জন্মের খুশি বা নবীর জন্মের উৎসব। মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জন্ম উপলক্ষে যে উৎসব করা হয় তাকে ‘ঈদে মীলাদুন্নবী’ বলা হয়।

‘ঈদে মীলাদুন্নবী’ যারা উদযাপন করে তারা এটিকে একটি নেক আমল মনে করে সওয়াবের নিয়াতেই করে থাকে। যেহেতু এ কাজটিকে সওয়াবের কাজ মনে করে করা হয় সেহেতু কাজটির ব্যাপারে কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর সমর্থন ও স্পষ্ট দলীল থাকা প্রয়োজন। কিন্তু এ বিষয়ে দলীল তালাশ করতে গেলে বাৎসরিক দুটি ঈদ ‘ঈদুল ফিতর’ ও ‘ঈদুল আযহা’ এবং সাপ্তাহিক ঈদ ঈদুল জুম’আহ্ পাওয়া যায়। কোরআন ও সুন্নাহর কোনো স্পষ্ট দলিল থেকে ‘ঈদে মীলাদুন্নবী’র অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। বিদআতীরা শুধুমাত্র দলীলের গোজামিল ও অপব্যাখ্যার মাধ্যমে ‘ঈদে মীলাদুন্নবী’ সাব্যস্ত করে থাকে এবং জনগণকে ধোঁকা দিয়ে থাকে।

‘ইবাদত’ ও ‘বিদ’আত’ যাঁচায় করার নিয়মনীতি:
------------------------------------
ইবাদতের সংজ্ঞা: এটি একটি ইসলামী পরিভাষা। এটি আরবী হলেও সকল ভাষাভাষী মুসলমানদের কাছে পরিচিতি ও বোধগম্য। ইবাদত শব্দটি বিভিন্ন ফর্মে কুরআন শরীফে মোট ২৭৬ বার এসেছে।
(ইবাদত) عِبَادَة শব্দটি عَبَدَ (আবাদা) শব্দের ক্রিয়া মূল, এর অর্থ উপাসনা করা, দাসত্ব করা। পরিভাষায় ইবাদত এর অর্থ আল্লাহর অনুগত হওয়া ও তাঁর বিধান মেনে চলা। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন :
العبادة هي طاعة الله بامتثال ما أمر به على ألسنة الرسل.
ইবাদত হচ্ছে রাসূলগণের কন্ঠে উচ্চারিত আদেশ পালনের মাধ্যমে আল্লাহর আনুগত্য করা।
তিনি আরো বলেন :
العبادة اسم جامع لكل مايحبه الله ويرضاه من الأقوال والأعمال الباطنة والظاهرة.
আল্লাহ ভালোবাসেন ও পছন্দ করেন এমন সকল প্রকাশ্য ও গোপনীয় কাজ ও কথার নাম ইবাদত। (তাইসীরুল আজীজিল হামীদ)

ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন :
العبادة عبارة عن توحيده والتزام شرائع دينه. وأصل العبادة الخضوع والتذلل
‘ইবাদাত মানে তাঁর (আল্লাহর) একাত্বতা এবং তাঁর দ্বীনের বিধানসমূহের অনুসরণ করা। আর ‘ইবাদাতের মূল হলো বিনয় ও নিজকে তুচ্ছ করে প্রকাশ করা।

কুরআন ও সুন্নাহতে ‘ইবাদাতের যে ধারণা পাওয়া যায় তাতে ‘ইবাদাত বলতে বুঝায় এমন কাজ যার বিধান আল্লাহ ও তাঁর রসূল (সাঃ) দিয়েছেন। আর সে কাজটি তখনই ‘ইবাদাত বলে গণ্য হবে যখন তা রসূল (সাঃ)-এর দেখানো ও শিখানো পন্থায় হয় এবং একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে করা হয়। আর এদিকে ইঙ্গিত করেই আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন :
(فَمَنْ كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا)

“যে তার রবের সাথে সাক্ষাৎ করতে চায় সে যেনো ‘আমালে সলিহ (নেক কাজ) করে আর তার রবের ‘ইবাদাতে তাঁর সাথে কাউকে শরীক না বানায়।” (সূরাহ্ আল কাহ্ফ, ১১০)
এ আয়াতের তাফসীরে ইমাম ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন :

﴿فَمَنْ كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ رَبِّهِ﴾أَيْ: ثَوَابَهُ وَجَزَاءَهُ الصَّالِحَ، ﴿فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا﴾ مَا كَانَ مُوَافِقًا لِشَرْعِ اللَّهِ ﴿وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا﴾ وَهُوَ الَّذِي يُرَادُ بِهِ وَجْهُ اللَّهِ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَهَذَانَ رُكْنَا الْعَمَلِ الْمُتَقَبَّلِ. لَا بُدَّ أَنْ يَكُونَ خَالِصًا لِلَّهِ، صوابا عَلَى شَرِيعَةِ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ.

‘যে তার রবের সাথে সাক্ষাৎ করতে চায় মানে তার কাছে সাওয়াব ও প্রতিদান চায় সে যেন নেক ‘আমাল করে মানে এমন কাজ করে যা আল্লাহর শারী‘আত সমর্থিত। আর তার রবের সাথে কাউকে শরীক না বানায়, মানে নেক কাজের মাধ্যমে ঐ আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে যিনি একক যাঁর কোন শরীক নেই। আর এ দু’টি হচ্ছে আল্লাহর দরবারে গৃহীত ‘আমালের ভিত্তি’ বা রুক্ন। কাজটি অবশ্যই শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য হতে হবে আর রসূল (সাঃ)-এর শারী‘আত অনুযায়ী বিশুদ্ধ হতে হবে। (তাফসীর ইবনু কাসীর, সূরাহ আল কাহ্ফ)
‘আল্লামাহ্ শাওকানী (রহঃ) বলেন :
﴿فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا﴾ وَهُوَ مَا دَلَّ الشَّرْعُ عَلَى أَنَّهُ عَمَلُ خَيْرٍ يُثَابُ عَلَيْهِ فَاعِلُهُ وَلا يُشْرِكْ بِعِبادَةِ رَبِّهِ أَحَداً مِنْ خَلْقِهِ سَوَاءٌ كَانَ صَالِحًا، أَوْ طَالِحًا، حَيَوَانًا أَوْ جَمَادًا
‘নেক আমাল’ বলতে এমন কাজকে বুঝায় যার পক্ষে শারী‘আতে এ মর্মে কোন দলীল আছে যে, কাজটি ভাল। কাজটি যে করবে সে সাওয়াব পাবে। আর ‘তার রবের ইবাদাতে কাউকে শরীক না বানায়’ মানে তার সৃষ্টির মধ্য থেকে ভাল হোক বা মন্দ, প্রাণী হোক বা জড় পদার্থ। কাউকে সে আল্লাহর ‘ইবাদাতে শরীক করে না। (ফাতহুল কাদীর, সূরাহ আল কাহ্ফ)

বুঝা গেল, যে কোন ভাল কাজই নেক ‘আমাল বা ‘ইবাদাত নয়। নেক ‘আমাল বা ‘ইবাদাত হচ্ছে যা শারী‘আত সম্মত হবে এবং তা আল্লাহর উদ্দেশ্যে করা হবে। কোন ‘আমালের পক্ষে যদি কুরআন ও হাদীসের দলীল না থাকে তা যতই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা হোক না কেন এবং যতই সুন্দর (হাসানা) হোক না কেন তা ‘ইবাদাত বলে গণ্য হবে না, বরং বিদ’আত বলে গণ্য হবে। অপরদিকে শারী‘আত সমর্থিত কোন কাজে যদি শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য না থাকে তাহলে তাও ‘ইবাদাত বলে আল্লাহর কাছে গৃহীত হবে না, বরং শিরক বলে গণ্য হবে।

বিদ্‘আতের সংজ্ঞা: ইবাদাতের মতো ‘বিদ্‘আত’ও একটি ‘আরবী শব্দ। ‘আরবী শব্দ হওয়া সত্ত্বেও পৃথিবীর সকল মুসলিমদের কাছেই শব্দটি পরিচিত। শব্দটি সুন্নাতের বিপরীত অর্থে ব্যবহার হয়।
(বিদ্‘আত) بدعة মূল শব্দ بِدْع, এ শব্দটি কুরআন মাজীদে মাত্র একবার এসেছে-
﴿قُلْ مَا كُنْتُ بِدْعًا مِنَ الرُّسُلِ وَمَا أَدْرِي مَا يُفْعَلُ بِي وَلَا بِكُمْ إِنْ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَى إِلَيَّ وَمَا أَنَا إِلَّا نَذِيرٌ مُبِينٌ﴾
“বল আমি তো কোন নতুন রসূল নই। আমি জানি না আমার ও তোমাদের সাথে কি ব্যবহার করা হবে। আমি কেবল তারই অনুসরণ করি যা আমার প্রতি ওয়াহী করা হয়। আমি তো শুধু স্পষ্ট সতর্ককারী।” (সূরাহ্ আহকাফ, ৯)
অনেকে এই আয়াতটিকে মানসুখ ধারনা করে থাকে। এখানে নবী (সাঃ) এর বিনয়ভাব ও নামনীয়তার প্রকাশ ঘটেছে।

বিদ্‘আত শব্দের আভিধানিক অর্থ :
كُلُّ مَا أُحْدِثَ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَكُوْنَ لَهُ مِثَال
‘এমন সকল নতুন উদ্ভাবিত (কাজ বা বিষয়) যার অনুরূপ কিছু পূর্বে নেই।’ (আল রায়িদ ১ম খণ্ড, ৩১০ পৃষ্ঠা)

পরিভাষায়- বিদ্‘আত হচ্ছে শারী‘আতে যার কোন ভিত্তি নেই এমন ইবাদত ও আমল দ্বীনের মধ্যে উদ্ভাবন করা।
ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ্ (রহঃ) বিদ্‘আতের সংজ্ঞায় বলেন :
البِدْعَةُ فِيْ الدِّيْنِ هِيَ مَا لَمْ يَشْرَعْهُ اللهُ ورَسُولُهُ، وَهُوَ مَا لَمْ يَأمُرْ بِهِ أمْرُ إِيْجَاب وَلَا اسْتِحْبَاب
‘দ্বীনের মধ্যে বিদ্‘আত হচ্ছে এমন জিনিস যার বিধান আল্লাহ এবং তাঁর রসূল দেননি, যে ব্যাপারে অবশ্যই করতে হবে বা করাটা পছন্দনীয় (মুস্তাহাব) এমন কোন আদেশ বা বিধান নেই।’ (মাজমাউল ফাতাওয়া, ৪/১০৭)

ধমীর্য় ক্ষেত্রে বিদ’আত কখনো হাসানা হয় না:
--------------------------------------
অনেকে ধারণা করে যে বিদ্‘আত দু’ প্রকার: بدعة حسنة (বিদ্‘আতে হাসানা) মানে ভাল বিদ্‘আত আর بدعة سيئة (বিদ্‘আতে সাইয়্যিয়া) মানে মন্দ বিদ্‘আত। তাদের এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল, কারণ রসূল (সাঃ) নিজেই বলেছেন-
مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ
‘যে আমাদের দ্বীনে নেই এমন কিছু তাতে উদ্ভাবন করল তা প্রত্যাখ্যাত।’ (বুখারী ও মুসলিম)
আর তিনি এ ধরনের সকল কাজকেই বিদ্‘আত বলেছেন, আর সকল বিদ্‘আতই ‘দালালাহ’ মানে গুমরাহী ও পথভ্রষ্টতা।
فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ، وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ
‘সকল ধরনের নতুন উদ্ভাবিত বিষয়ই বিদ্‘আত আর সকল বিদ্‘আতই গুমরাহী ও পথভ্রষ্টতা।’ (নাসাঈ হা: ১৫৭৮)

একটি সংশয় ও তার নিরসন:
-----------------------
এখানে একটি কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন যে অনেকে বলে থাকে যে, তাহলে আধুনিক সরঞ্জামাদি ব্যবহারও তো বিদ্‘আত, কেননা এগুলো তো নবীর যুগে ছিল না। আসলে যারা এ কথা বলে তাদের দ্বীনের সঠিক জ্ঞান নেই বলেই তা বলে। রসূল যে নতুন উদ্ভাবিত বিষয়কে বিদ্‘আত বলেছেন তা হচ্ছে দ্বীনের সাথে সংশ্লিষ্ট। আমরা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে যেসব আধুনিক উপকরণ ব্যবহার করছি, এগুলো দ্বীনের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়, দুনিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট। মীলাদ যে করে সে দ্বীনের কাজ হিসেবে সাওয়াবের নিয়্যাতে করে। যে উড়োজাহাজে চলে সে সাওয়াবের নিয়্যাতে উড়োজাহাজে চলে না। যে পাখা ব্যবহার না করে এসি ব্যবহার করে, সে মনে করে না যে এতে তার সাওয়াব হবে। কিন্তু যে মীলাদের আয়োজন করে, সে মনে করে যে এতে সাওয়াব হবে।

বিদ্‘আত যে ভাল হতে পারে না এ ব্যাপারে ইমাম মালিক (রহঃ) অত্যন্ত বলিষ্ঠতার সাথে বলেছেন :
من ابتدع فِي الْإِسْلَام بِدعَة يَرَاهَا حَسَنَة فقد زعم أَن مُحَمَّدًا خَان الرسَالَة، لِأَن الله يَقُول: {الْيَوْم أكملت لكم دينكُمْ} فَمَا لم يكن يَوْمئِذٍ دينا لَا يكون الْيَوْم دينا
যে ইসলামের মধ্যে কোন বিদ্‘আত সৃষ্টি করে তাকে উত্তম (হাসানা) মনে করে সে এ ধারণা পোষণ করে যে, মুহাম্মাদ (সাঃ) রিসালাতের (দায়িত্ব পালনে) খিয়ানাত করেছেন (মানে রিসালাতের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেননি) অথচ আল্লাহ বলছেন “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম” সুতরাং সেই দিন (নাবীর যুগে) যা দ্বীন হিসেবে পরিগণিত ছিল না, আজও তা দ্বীন বলে গণ্য হবে না। (আল ই’তিসাম, ১/৪৯)

উল্লিখিত সংক্ষিপ্ত আলোচনায় এ কথা প্রমাণিত হলো যে কাজের পক্ষে শারী‘আতে কোন দলীল নেই তা-ই বিদ্‘আত, আর সকল বিদ্‘আতই গুমরাহী ও পথভ্রষ্টতা। এ ধরনের যে কোন কাজ প্রত্যাখ্যাত ও পরিহারযোগ্য।
কোন মু’মিন কোন ধরনের বিদ্‘আতী কাজ করবে না, এ ধরনের কোন কাজে অংশগ্রহণ করবে না এবং এ ধরনের কাজকে আশ্রয় ও প্রশ্রয়ও দিবে না। যারা বিদ্‘আতী কাজকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় রাসূল (সাঃ) তাদের জন্য এ ভাষায় বদ দোয়া করেছেন।
لَعَنَ اللهُ مَنْ آوَى مُحْدِثًا.
‘যে নতুন উদ্ভাবিত কাজ (বিদআত) করে, আল্লাহ তাকে অভিশাপ দিন।' (মুসলিম)
আর রাসূল (সাঃ)-এর দেয়া অভিশাপের বদ দু’আ আল্লাহ অবশ্যই কবুল করেন। কারণ তাঁর দু’আ আল্লাহর কাছে গৃহীত।

ঈদে মীলাদুন্নবী কি ইবাদত না বিদআত?
-------------------------------
উপরে ইবাদত ও বিদআতের সংক্ষেপে যে আলাচেনা করা হয়েছে তাতে আমরা জানলাম ইবাদত হচ্ছে এমন কাজ যা কুরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা সমর্থিত এবং তা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় করা হয়। আর বিদআত হচ্ছে এমন কাজ যার পক্ষে কুরআন ও সহীহ হাদীসের সমর্থন নেই অথচ তা সওয়াবের আশায় করা হয়।
ইবাদত ও বিদআতের এ ধারণা পাওয়ার পর ঈদে মীলাদুন্নবী’ কি? ইবাদত না বিদআত?
এ প্রশ্নের উত্তর দেয়া আমাদের জন্য আর মোটেও কঠিন নয়। যেহেতু ঈদে মীলাদুন্নবী’র পক্ষে কুরআন ও সহীহ হাদীসে কোন ধরনের দলীল নেই এবং সালাফে সালেহীন থেকে কোন নযীর নেই অথচ সওয়াবের আশায় সৎ কাজ মনে করে করা হয়। অতএব এটি নিঃসন্দেহে বিদআত।

মীলাদুন্নবী বা মীলাদ মাহফিল কি নাবী (সাঃ)-এর প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ? : না, কখনোই নয়। নবী (সাঃ)-কে ভালোবাসতে হবে আল্লাহ যেভাবে ভালোবাসতে বলেছেন, নবী (সাঃ) নিজে যেভাবে তাকে ভালোবাসতে বলেছেন এবং সাহাবায়ে কেরাম ও সালফে সালেহীনগণ যেভাবে ভালোবাসতেন সেভাবে ও সেই পদ্ধতিতে। ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন ও মিলাদ মাহফিল আয়োজন করার মাধ্যমে ভালোবাসা প্রদর্শন করা কখনোই আল্লাহ ও নবীর দেয়া পদ্ধতি এবং সাহাবী ও সালফে-সালেহীনের পদ্ধতি নয়। আল্লাহ তা'আলা বলেন:

﴿قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ﴾

বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসেন এবং তোমাদের পাপ মার্জনা করে দিবেন। আর আল্লাহ হলেন অতিব ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (সূরা আলে ইমরান: ৩১)

﴿لَّقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا﴾

যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে। (সূরা আহযাব: ২১)
নবী (সাঃ)-কে ভালবাসতে হবে সকল ব্যক্তি ও বস্তু, এমনকি নিজের জীবনের চেয়েও বেশি:

عَنْ أَنَسٍ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ، حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ

হযরত আনাস বলেন যে রাসূল (সাঃ) বলেছেন : ‘তামোদের কেউ মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা, সন্তান এবং সকল মানুষের থেকে অধিক প্রিয় হই।' (বুখারী ও মুসলিম)।
এ হাদীস থেকে সুস্পষ্ট যে, পিতামাতা, সন্তান, আত্মীয়—স্বজনসহ পৃথিবীর সকল মানুষের চেয়ে রাসূলের ভালবাসা থাকতে হবে শীর্ষে নতুবা কেউ ঈমানদার হতে পারবে না। এমনকি নিজের জীবণের চেয়েও বেশী না ভালোবাসলে ঈমান থাকবেনা।
অপর হাদীসে এসেছে,
مَنْ أَحْيَا سُنَّتِي فَقَدْ أَحَبَّنِي، وَمَنْ أَحَبَّنِي كَانَ مَعِي فِي الْجَنَّةِ
যে ব্যক্তি আমার সুন্নাতকে জীবিত করল সেই (প্রকৃত অর্থে) আমাকে ভালোবাসল, আর যে আমাকে ভালোবাসল সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে। (তিরমিযি)
রবিউল আউয়ালে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন এবং যেকোনো সময় ও উপলক্ষে মিলাদ মাহফিল আয়োজন করার পক্ষে কোরআন ও সুন্নাহ থেকে যথাযথ ও সঠিক কোন দলীল ও সালাফে সালেহীন থেকে নজির না থাকলেও দলীলের নামে অনেক গোঁজামিল দেয়া হয়। অর্থাৎ কোরআন ও সহীহ হাদীসের হাস্যকর ও উদ্ভট অপব্যাখ্যা করা হয় এবং জাল জয়ীফ দলীল দেয়া হয়। অপব্যাখ্যা কৃত কতিপয় দলীল: সূরা আলে ইমরান: ৮১, ১৬৪ সূরা আহযাব: ৫৬, সূরা ইউনুস: ৫৮।

এছাড়াও নিম্নোক্ত হাদীসটির অপব্যাখ্যা করে প্রচলিত মীলাদের পক্ষে দলীল দেয়া হয়।
عَنْ أَبِي قَتَادَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ الِاثْنَيْنِ، قَالَ هُوَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيهِ وَيَوْمٌ أُنْزِلَ عَلَيَّ فِيهِ
হযরত কাতাদাহ (রা) থেকে বর্ণিত যে রাসূল (সাঃ)-কে সোমবারের রোযা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে জবাবে তিনি বললেন, এটি এমন দিন যাতে আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এমন দিন যাতে আমি রেসালাত পেয়েছি বা আমার উপর (কুরআন) নাযিল করা হয়েছে।' (মুসলিম)

এখানে সোমবার মানে সকল মাস ও সপ্তাহের সোমবার। শুধুমাত্র রবিউল আউয়াল মাসের সোমবার নয়। এখন কেউ যদি শরীয়তসম্মত উপায়ে রাসূল (সাঃ)-এর জন্ম দিন পালন করতে চায়, তাহলে সে প্রতি সোমবার রোযা রাখবে।
আল্লাহ আমাদের সকলকে কুরআন ও সুন্নাহর যথাযথ অনুসরণ এবং সকল প্রকার বিদআত থেকে বাঁচার তাওফীক দান করুন। আমীন।
___________________________
রিলিজিয়াস এট্যাশেই অফিস, বাংলাদেশ (সৌদী আরব)
সম্পাদনা ও পরিমার্জনায়
শায়খ আকরামুজ্জামান বিন আব্দুস সালাম
পরিবেশনায়ঃ ইহ্ইয়া-উস্ সুন্নাহ ফাউন্ডেশন

Address

Pakerhat
34223422

Telephone

+8801773154239

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when JUMAR BOYAN posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share

Category