09/05/2016
তাহিয়্যাতুল মসজিদ বা দুখুলুল মসজিদ সালাতটি এত গুরুত্বপূর্ণ একটি সালাত অথচ অধিকাংশ মুসলিম-ই এই সালাত থেকে একেবারে গাফেল।
_______________________
তাহিয়্যাহ অর্থ হচ্ছে = উপঢৌকন বা তোহফা।
দুখুলু বা দাখিল অর্থ হচ্ছে = প্রবেশ করা।
_______________________
অর্থাৎ মসজিদে প্রবেশ করলেই মসজিদের আদব স্বরূপ ২ রাকআত সালাত আদায় করতে হবে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মসজিদ আল্লাহ্র ঘর। তাই আল্লাহ্র ঘরে প্রবেশ করেই সরাসরি বসা যাবে না। এটি বেআদবি। আল্লাহ্র ঘরে প্রবেশ করেই উপঢৌকন স্বরূপ আল্লাহ্র নিকট ২ রাকআত সালাত পেশ করতে হবে।
দলীল গুলো মিলিয়ে নিতে পারেন :
--------------------------------------
আবু কাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণীত, আল্লাহ্র রাসুল (সাঃ) বলেছেন- তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করে তখন সে যেন বসার আগে দু’রাকআত সালাত আদায় করে নেয়। (তিরমিযি, ১ম খন্ড, রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর সালাতের সময়সূচি অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১২৩, হাদিস নং ৩১৬)
_______________________
আবু কাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণীত, আল্লাহ্র রাসুল (সাঃ) বলেছেন- তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করে তখন সে যেন বসার আগে দু’রাকআত সালাত আদায় করে নেয়। দু’রাকআত সালাত আদায় করার পর বসবে নতুবা প্রয়োজন সেরে বের হয়ে যাবে। (আবু দাউদ, ১ম খন্ড, সালাত অধ্যায়, হাদিস নং ৪৬৭)
_______________________
এই হাদিসটি প্রমান করে- কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে সে বসার পূর্বেই আল্লাহ্র ঘরের সম্মানার্থে দু’রাকআত সালাত আদায় করবে।
_______________________
আব্দুল্লাহ ইবনু আবু সালামাহ (রঃ) সুত্রে বর্ণীত, আবু কাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণীত, আল্লাহ্র রাসুল (সাঃ) বলেছেন- তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করে তখন সে যেন বসার আগে দু’রাকআত সালাত আদায় করে নেয়। (সহিহ মুসলিম, ২য় খন্ড, মুসাফিরের সালাত ও ক্বসর অধ্যায়, হাদিস নং ১৫৩৯)
_______________________
আবু বকর ইবনু আবু শাইবাহ (রঃ) সুত্রে বর্ণীত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সাহাবী আবু কাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- একদিন আমি মসজিদে প্রবেশ করে দেখতে পেলাম রাসুলুল্লাহ (সাঃ) লোকজনের মাঝে বসে আছেন। সুতরাং আমিও গিয়ে সেখানে বসে পড়লাম, এটা দেখে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন- সর্বপ্রথম দু’রাকআত সালাত আদায় করতে তোমার কি অসুবিধা ছিল? আমি বললাম- হে আল্লাহ্র রাসুল (সাঃ)! আমি দেখলাম আপনি বসে আছেন (আলোচনা করছেন)। লোকজনও বসে আছে।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নির্দেশ দিলেন- তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে দু’রাকআত সালাত আদায় না করে বসবে না।
(সহিহ মুসলিম, ২য় খন্ড, মুসাফিরের সালাত ও ক্বসর অধ্যায়, হাদিস নং ১৫৪০)
_______________________
এই হাদিস থেকে বুঝা যায় যে, মসজিদে গিয়ে আগে ২ রাকআত সালাত আদায় করতে হবে পরে বসতে হবে। কিন্তু অনেককে দেখা যায় মসজিদে প্রবেশ করে আগে একটু বসে তারপর ২ রাকআত সালাত আদায় করে। এটি ঠিক নয়। এই হাদিসে নবী (সাঃ) নির্দেশ দিয়েছেন মসজিদে প্রবেশ করেই সর্বপ্রথম দু’রাকআত সালাত আদায় করতে।
_______________________
আবু কাতাদাহ সালামী (রাঃ) হতে বর্ণীত, আল্লাহ্র রাসুল (সাঃ) বলেছেন- তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করে তখন সে যেন বসার পূর্বে দু’রাকআত সালাত আদায় করে নেয়। (সহিহ বুখারী, ১ম খন্ড, কিতাবুস স্বালাত, হাদিস নং ৪৪৪)
_______________________
এই হাদিসটি চিন্তা করে দেখুন, তাহিয়্যাতুল মসজিদ সালাতটি কত গুরুত্বপূর্ণ !!
_______________________
জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, কোন এক জুম্মার দিনে নাবী (সাঃ) লোকদের সামনে খুৎবাহ দিচ্ছিলেন, এমন সময় এক ব্যক্তি এসে (খুৎবাহ শোনার জন্য বসলেন)। তিনি জিজ্ঞাস করলেন হে অমুক! তুমি কি স্বালাত আদায় করেছো? সে বলল- না! আল্লাহ্র রাসুল (সাঃ) বললেন- উঠ! দু’রাকআত সালাত আদায় করে নাও। (সহিহ বুখারী, ২য় খন্ড, কিতাবুল জু’মুয়াহ, হাদিস নং ৯৩০)
_______________________
আল্লাহ্র রাসুল (সাঃ) খুৎবাহ থামিয়ে ঐ ব্যক্তিকে নির্দেশ প্রদান করলেন যে আগে দু’রাকআত সালাত আদায় করে নিতে। কিন্তু আমাদের দেশের লোকেরা খোঁড়া যুক্তি দেখায় যে, খুৎবাহ শোনা ওয়াজিব তাই খুৎবাহ চলাকালীন সময় সালাত আদায় করা যাবে না। অনেক মসজিদে দেখা যায় খুৎবাহ চলাকালীন সময়ে লালবাতি জ্বালিয়ে রাখে।
_______________________
মসজিদে লালবাতি জ্বালানোর অধিকার কারো নেই।
মানুষকে সালাত থেকে বাঁধা দেয়ার জন্য লালবাতি জ্বালায় যারা তাদের কবরে লালবাতি জ্বলবে ইনশাআল্লাহ!!!
_______________________
মসজিদের তাহিয়্যাহ/উপঢৌকন স্বরূপ তাহিয়্যাতুল মসজিদ ২ রাকআত সালাত সর্বাবস্থায় পড়তে হবে। অর্থাৎ এই সালাতের মূল কথা মসজিদে ঢুকেই সরাসরি বসা যাবে না, এটি মসজিদের আদবের খেলাফ। যদি মসজিদে ঢুকে দেখেন জামাআত দাড়িয়ে গেছে তবে জামাআত শরীক হলেই মসজিদের তাহিয়্যাহ হয়ে গেল। কোন প্রকার সালাত আদায় না করে বসা হল না। যে কোন সালাত আদায় করলেই তাহিয়্যাহ হয়ে যায়, কিন্তু মসজিদে প্রবেশ করেই বসা যাবে না।
_______________________
আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন- আমার উম্মতের সবাই জান্নাতে যাবে, কিন্তু সে নয় যে অস্বীকার করবে।
জিজ্ঞাসা করা হল- হে আল্লাহ্র রাসুল (সাঃ) ! (জান্নাতে যেতে আবার) কে অস্বীকার করবে?
_______________________
তিনি বললেন- যে আমার অনুসরণ করবে সে জান্নাতে যাবে এবং যে আমার অবাধ্যতা করবে সে জান্নাতে যেতে অস্বীকার করবে। (সহিহ বুখারীঃ ৭২৮০, মুসলিমঃ ১৮৩৫)