Akash Das

হরে কৃষ্ণ জয় রাধে 🙏
04/11/2023

হরে কৃষ্ণ জয় রাধে 🙏

I've just reached 100 followers! Thank you for continuing support. I could never have made it without each one of you. 🙏...
03/10/2023

I've just reached 100 followers! Thank you for continuing support. I could never have made it without each one of you. 🙏🤗🎉

I've received 500 reactions to my posts in the past 30 days. Thanks for your support. 🙏🤗🎉
30/09/2023

I've received 500 reactions to my posts in the past 30 days. Thanks for your support. 🙏🤗🎉

29/07/2023

এরকম বোন ঘরে ঘরে দরকার 😁

05/05/2023

বুঝলে বুঝপাতা না বুঝলে তেজ পাতা😁😁

12/02/2023

💔🥀

25/12/2022

23/12/2022

হরে কৃষ্ণ

যে কারণে মুখ অগ্নি করা হয়। মুখাগ্নি বা অন্ত্যোষ্টি হল জীবনের শেষ যজ্ঞ। অন্ত+ ইষ্টি = অন্ত্যোষ্টি। অন্ত মানে শেষ আর ইষ্টি...
29/11/2022

যে কারণে মুখ অগ্নি করা হয়।

মুখাগ্নি বা অন্ত্যোষ্টি হল জীবনের শেষ যজ্ঞ। অন্ত+ ইষ্টি = অন্ত্যোষ্টি। অন্ত মানে শেষ আর ইষ্টি মানে হল যজ্ঞ। আমরা জানি আমাদের সুপ্রাচীন পূর্বপুরুষেদের বৈদিক সমাজ ছিল যজ্ঞপ্রধান।

জীবনের শুরু থেকে শেষ অবধি সবই হত যজ্ঞের মাধ্যমে ঈশ্বর কে উদ্দেশ্য করে। অশ্বমেধ যজ্ঞ, অগ্নিহোত্র যজ্ঞ ইত্যাদি যজ্ঞে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য হবি উতসর্গ করা হত।

এ হল ঈশ্বরের দেয়া জীবন ও দেহ দ্বারা ঈশ্বরের সৃষ্ট প্রকৃতির উপাদান সম্যুহ ভোগ করার প্রেক্ষিতে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য কৃতজ্ঞতাস্বরুপ তার উপাসনা করা।

তাই অন্ত্যোষ্টি তথা জীবনের শেষ যজ্ঞে ঈশ্বর প্রদত্ত দেহ ঈশ্বরের উদ্দেশ্যেই হবি (হোমের দ্রব্য) রুপে উতসর্গ করা। এটা সত্যিই চমত্কার ব্যাপার।

“জন্মিলেই মরিতে হবে” এ ধ্রুব সত্য। আমরা অস্বীকার করতে পারি না। এ পৃথিবীতে যে কয়টি ধ্রুব সত্য আছে তার মধ্যে অন্যতম হল প্রানীর মৃত্যু। যে প্রানী জন্মগ্রহণ করবে প্রকৃতির নিয়মানুযায়ী তাকে একসময় না একসময় দেহ ত্যাগ করতে হয়।

এ দেহ ত্যাগের জন্য সনাতন ধর্মের অনুসারিরা বিশ্বাস করে যে, মানুষ মৃত্যুর পর স্বর্গবাসী হয় অথ্যাৎ দেবলোকে যায়। কিন্তু, তিনি স্বর্গে বা দেবলোকে যাবেন কিভাবে?

বৈদিক নিয়ম অনুসারে দেবলোকে বা স্বর্গলোকে পাঠাতে হলে দেবতাদের পুরোহিত অগ্নিতে আহুতি দিতে হয়। অগ্নিদেবই সে অর্চনা বা আহুতি দেবলোকে নিয়ে যান।

তাই যিনি মৃত্যুবরণ করেছেন তার প্রাণবায়ু অগ্নিদেবকে আহুতি না দিলে তিনি কি করে স্বর্গবাসী হবেন? প্রানবায়ু মুখ দিয়ে বের হয় বলে মুখে অগ্নি সংযোগ করে মন্ত্র পাঠ করতে হয়-

“ওঁ কৃত্বা তু দুষ্কৃতং কর্মং জানতা বাপ্য জানতা ।
মৃত্যুকাল বশং প্রাপ্য নরং পঞ্চত্বমাগতম্
ধর্মাধর্ম সমাযুক্তং লোভ মোহ সমাবৃতম্
দহেয়ং সর্বগাত্রানি দিব্যান্ লোকান্ স গচ্ছতু” (ক্রিয়াকান্ড বারিধি)

অনুবাদঃ তিনি জেনে বা না জেনে অনেক দুষ্কর্ম করে থাকতে পারেন। কালবশে মানুষ মৃত্যুবরণ করে থাকে। এ দেহ ধর্ম, অধর্ম, লোভ, মোহ প্রভৃতি দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। হে অগ্নিদেব, আপনি তার সকল দেহ দগ্ধ করে দিব্যলোকে নিয়ে যান।

চলুন দেখে নিই মুখাগ্নির কারণ গুলোঃ

আধ্যাত্মিক কারণঃ আমরা সনাতন ধর্মের অনুসারিরা পুনর্জন্মে বিশ্বাসী। এই ত্রিতাপদগ্ধ সংসারে পুনরায় জন্মগ্রহন করে মানুষ দুঃখজ্বালা ভোগ করুক এটা কেউ চাই না।

যে দেহে তিনি এতদিন বাস করেছেন, তাকে সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছেন, পৃথিবীর যাবতীয় সুখের স্বাদ তাকে দিয়েছেন সে দেহের প্রতি আকর্ষণ ও মায়া থাকা স্বাভাবিক।

দেহের প্রতি আকর্ষণে পুনঃ দেহ ধারনে তার আকাঙ্ক্ষা জাগতে পারে, ঐ আকাঙ্ক্ষা দূর করার উদ্দেশেই আকর্ষণের বস্তু দেহটিকে পোড়ানো হয়।

বৈজ্ঞানিক কারণঃ মানুষ বিভিন্ন কারনে মৃত্যুবরণ করে। এর মধ্য রোগে মৃত্যুই সর্বাধিক। এই সকল মৃতদেহে পচন ধরলে পরিবেশে বিভিন্ন রোগ জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। এসব চিন্তা থেকেই আর্য ঋষিগণ শব পোড়াবার বিধি দিয়েছেন।

সামাজিক কারণঃ আর্য ঋষিদের ভবিষ্যৎ চিন্তা এতে প্রতিফলিত হয়েছে। মানুষ সৃষ্টি হবে এবং এমন একদিন আসতে পারে যখন স্থানাভাব দেখা দেবে। মানুষের দেহ না পুড়িয়ে মাটিতে পুঁতে রেখে দিলে ক্রমশ মাটিতে রাখার জায়গার অভাব দেখা দিতে পারে। এই কারনেই দেহ পোড়াবার বাবস্থা।

জেনে রাখা ভালো:

28/11/2022

রাধে তোমায় বাড়ে বাড়ে করছি যে মানা যমুনাতে জল আনিতে একলা যেও না।

আজ পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ কখন, কোথায় ও কতক্ষণ থাকবে এবং দর্শন শুভ-অশুভ জেনে নিন বছর অনেকটা শেষের দিকে। পূর্ণিমার দিনে পূ...
08/11/2022

আজ পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ কখন, কোথায় ও কতক্ষণ থাকবে এবং দর্শন শুভ-অশুভ জেনে নিন


বছর অনেকটা শেষের দিকে। পূর্ণিমার দিনে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। দেখা যাবে টানা তিন ঘণ্টা ৪০ মিনিট । চলুন দেখে নি এই গ্রহণ কখন শুরু হবে এবং কোন সময় কোন পর্যায় থাকবে।

গ্রহণের সময়কাল
গ্রহণ সময় ভারত
পৃথিবীতে গ্রহণ আরম্ভ প্রভৃতি-গ্রহণ স্পর্শ (আরম্ভ) দিবা ২ টা ৩৯ মিনিট

পূর্ণগ্রাস আরম্ভ দিবা ৩ টা ৪৬ মিনিট

গ্রহণ মধ্য দিবা ৪ টা ২৯ মিনিট

পূর্ণগ্রাস সমাপ্তি অপরাহ্ণ ৫ টা ১২ মিনিট

গ্রহণ মোক্ষ (সমাপ্তি) দিবা ৬ টা ১৯ মিনিট

গ্রহণের স্থিতিকাল ৩ ঘণ্টা ৪০ মিনিট

গ্রাসমান ১.৩৬৩

উপচ্ছায়া স্পর্শ (প্রবেশ) দিবা ১.৩০ টা

উপচ্ছায়া মোক্ষ (ত্যাগ) রাত্রি ৭ টা ২৮ মিনিট



গ্রহণ সময় বাংলাদেশঃ
পৃথিবীতে গ্রহণ আরম্ভ প্রভৃতি-গ্রহণ স্পর্শ (আরম্ভ) দিবা ৩ টা ০৯ মিনিট

পূর্ণগ্রাস আরম্ভ দিবা ৪ টা ১৬ মিনিট

গ্রহণ মধ্য দিবা ৪ টা ৫৯ মিনিট

পূর্ণগ্রাস সমাপ্তি অপরাহ্ণ ৫ টা ৪২ মিনিট

গ্রহণ মোক্ষ (সমাপ্তি) দিবা ৬ টা ৪৯ মিনিট

গ্রহণের স্থিতিকাল ৩ ঘণ্টা ৪০ মিনিট

গ্রাসমান ১.৩৬৩

উপচ্ছায়া স্পর্শ (প্রবেশ) দিবা ২ টা

উপচ্ছায়া মোক্ষ (ত্যাগ) রাত্রি ৭ টা ৫৮ মিনিট



কোথায় দেখা যাবে এই গ্রহণ?
গ্রহণ দৃশ্যঃ

এই গ্রহণ দক্ষিণ আমেরিকা, উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, এশিয়া, আটলান্টিক মহাসাগরের উত্তর ভাগে এবং প্রশান্ত মহাসাগরে দৃশ্য হবে।



গ্রহণ আরম্ভ দৃশ্যঃ

চন্দ্রাস্তের সময়ে আর্জেন্টিনার পশ্চিমাঞ্চল্‌ চিলি, বলিভিয়া, ব্রাজিলের পশ্চিমাঞ্চলে এবং আটলান্টিক মহাসাগরের উত্তর ভাগে।



গ্রহণ সমাপ্তি দৃশ্যঃ

চন্দ্রোদয়ের সময়ে ভারত মহাসাগর, ভারতবর্ষ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, কাজাখাস্তান, উজবেকিস্তান এবং রাশিয়ার পূর্বাংশে।



কিভাবে দেখবেন?

সূর্যগ্রহণের মতো চন্দ্রগ্রহণ দেখতে কোনও আলাদা সতর্কতার প্রয়োজন নেই। খালি চোখেই এই গ্রহণ দেখা যেতে পারে। তাতে চোখের ক্ষতির কোনও আশঙ্কা নেই। তবে টেলিস্কোপের সাহায্যে এই গ্রহণ দেখলে নিঃসন্দেহে গ্রহণের সৌন্দর্য আরও তীব্র ভাবে ধরা পড়বে।

কারা দেখতে পারবে?

এই গ্রহণ মিথুন্‌ ধনু, কুম্ভ মীনরাশির দর্শনে শুভ এবং এই রাশিগুলো ছাড়া বাকি রাশির জাতকদের দর্শন অশুভ।

উত্থান একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য। কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর মাহাত্ম্য স্কন্দপুরাণে ব্রহ্মা-নারদ সংবাদে বর্ণিত আছে। ম...
04/11/2022

উত্থান একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য।

কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর মাহাত্ম্য স্কন্দপুরাণে ব্রহ্মা-নারদ সংবাদে বর্ণিত আছে। মহারাজ যুধিষ্ঠির বললেন- হে পুরুষোত্তম! দামোদর বা কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম আমার কাছে কৃপা করে বর্ণনা করুন।

শ্রীকৃষ্ণ বললেন- হে রাজন! কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী ‘উত্থান’ বা ‘প্রবোধিনী’ নামে খ্যাত। প্রজাপতি ব্রহ্মা পূর্বে নারদের কাছে এই একাদশীর মহিমা কীর্তন করেছিলেন।

এখন তুমি আমার কাছে সেকথা শ্রবণ কর। দেবর্ষি নারদ প্রজাপতি ব্রহ্মাকে বললেন- হে মহাত্মা! যে একাদশীতে ভগবান শ্রীগোবিন্দ শয়ন থেকে জেগে ওঠেন, সেই প্রবোধিনী বা উত্থান একাদশীর মহিমা আমার কাছে সবিস্তারে কীর্ত্তন করুন।

ব্রহ্মা বললেন- হে নারদ! উত্থান একাদশী যথার্থই পাপনাশিনী, পূণ্যবর্ধিনী ও মুক্তিপ্রদায়ী! এই একাদশী ব্রত নিষ্ঠার সাথে পালন করলে এক হাজার অশ্বমেধ যজ্ঞ ও শত শত রাজসূয় যজ্ঞের ফল অনায়াসে লাভ হয়। জগতের দুর্লভ বস্তুর প্রাপ্তির কথা আর কি বলব! এই একাদশী ভক্তিপরায়ণ ব্যক্তিকে ঐশ্বর্য্য, প্রজ্ঞা, রাজ্য ও সুখ প্রদান করে।

এ ব্রতের প্রভাবে পর্বত প্রমাণ পাপরাশি বিনষ্ট হয়ে যায়। যারা একাদশীতে রাত্রি জাগরণ করেন, তাদের সমস্ত পাপ ভস্মীভূত হয়। শ্রেষ্ঠ মুনিগণ তপস্যার দ্বারা যে ফল করেন, এই ব্রতের উপবাসে তা পাওয়া যায়। যথাযথভাবে এই ব্রত পালন করলে আশাতীত ফল লাভ হয়। কিন্তু অবিধিতে উপবাস করলে স্বল্পমাত্র ফল প্রাপ্তি হয়। যারা এই একাদশীর ধ্যান করেন, তাদের পূর্বপুরুষেরা স্বর্গে আনন্দে বাস করেন।

এই একাদশী উপবাস ফলে ব্রহ্মহত্যা জনিত ভয়ঙ্কর নরকযন্ত্রণা থেকে নিস্তার পেয়ে বৈকুন্ঠগতি লাভ হয়। অশ্বমেধ যজ্ঞ দ্বারাও যা সহজে লাভ হয় না, তীর্থে স্বর্ণ প্রবৃতি দান করলে যে পুণ্য অর্জিত হয়, এই উপবাসের রাত্রি জাগরণে সেই সকল অনায়াসে লাভ হয়ে যায়। যিনি সঠিকভাবে উত্থান একাদশীর ব্রত অনুষ্ঠান করেন, তার গৃহে ত্রিভুবনে সমস্ত তীর্থ এসে উপস্থিত হয়।

হে নারদ! বিষ্ণুর প্রিয়তমা এই প্রবোধিনী একাদশীর উপবাস করলে সর্বশাস্ত্রে জ্ঞান ও তপস্যায় সিদ্ধিলাভ করে চরমে মুক্তি লাভ হয়। যিনি সমস্ত লৌকিক ধর্ম পরিত্যাগ করে ভক্তিভরে এই ব্রত উপবাস করেন, তকে আর পুনর্জন্ম গ্রহণ করতে হয় না। এমনকি মন ও বাক্য দ্বারা অর্জিত পাপরাশিও শ্রীগোবিন্দের অর্চনে বিনষ্ট হয়ে যায়।

হে বৎস! এই ব্রতে শ্রদ্ধা সহকারে শ্রীজনার্দনের উদ্দেশ্যে স্নান, দান, জপ, কীর্তন ও হোমাদি করলে অক্ষয় লাভ হয়। যারা উপবাস দিনে শ্রীহরির প্রতি ভক্তিভাবে দিনযাপন করেন, তাদের পক্ষে জগতে দুর্লভ বলে আর কিছু নেই। চন্দ্র ও সূযগ্রহণে স্নান করলে যে পুণ্য হয় এই উপবাসে রাত্রি জাগরণে তার সহস্রগুণ সুকৃতি লাভ হয়। তীর্থে স্নান, দান, জপ, হোম ধ্যান আদির ফলে যে পুণ্য সঞ্চিত হয়, উত্থান একাদশী না করলে সে সমস্ত নিষ্ফল হয়ে যায়।

হে নারদ! শ্রীহরিবাসরে শ্রীজনার্দনের পূজা বিশেষ ভক্তিসহকারে করবে। তা না হলে শতজন্মার্জিত পুণ্যও বিফল হয়। হে বৎস! যিনি কার্তিক মাসে সর্বদা ভাগবত শাস্ত্রাদি অধ্যয়ন করেন, তিনি সর্বপাপ মুক্ত হয়ে সমস্ত যজ্ঞের ফল লাভ করেন। ভগবান হরিভক্তিমূলক শাস্ত্রপাঠে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হন। কিন্তু দান, জপ, যজ্ঞাদি দ্বারা তেমন প্রীত হন না।

এই মাসে শ্রীবিষ্ণুর নাম, গুণ, রূপ, লীলাদি শ্রবণ-কীর্তন অথবা শ্রীমদ্ভাগবত আদি শাস্ত্রগ্রন্থ পাঠের ফলে শত শত গোদানের ফল অচিরেই পাওয়া যায়। অতএব হে মুনিবর! কার্তিক মাসে সমস্ত গৌণধর্ম বর্জন করে শ্রীকেশবের সামনে হরিকথা শ্রবণ কীর্তন করা কর্তব্য। কোন ব্যক্তি যদি ভক্তিসহকারে এই মাসে ভক্তসঙ্গে হরিকথা শ্রবণ ও কীর্তন করেন, তবে তাঁর শতকুল উদ্বার প্রাপ্ত হন এবং হাজার হাজার দুগ্ধবতী গাভী দানের ফল অনায়াসে লাভ করেন।

এই মাসে পবিত্রভাবে শ্রীকৃষ্ণের রূপ, গুণাদির শ্রবণ- কীর্তনে দিনযাপন করলে তার আর পুণর্জন্ম হবে না। এই মাসে বহু ফলমূল, ফুল, অগুরু, কর্পূর, ও চন্দন দিয়ে শ্রীহরির পুজা করা কর্তব্য। সমস্ত তীর্থ ভ্রমণ করলে যে পুণ্য সঞ্চয় হয়, উত্থান একাদশীতে শ্রীকৃষ্ণ পাদপদ্মে অর্ঘ্য প্রদানে তার কোটিগুণ সুকৃতি অর্জিত হয়।

শ্রবণ- কীর্তন, স্মরণ, বন্দনাদি নববিধা ভক্তির সাথে তুলসীর সেবার জন্য যারা বীজ রোপন, জলসেচন ইত্যাদি করেন, তারা মুক্তিলাভ করে বৈকুন্ঠবাসী হন। হে নারদ! সহস্র সুগন্ধী পুষ্পে দেবতার অর্চনে বা সহস্র সহস্র যজ্ঞ ও দানে যে ফল লাভ হয়, এই মাসে শ্রীহরিবাসরে একটি মাত্র তুলসী পাতা শ্রীভগবানের চরণকমলে অর্পণ করলে তার অনন্তকোটিগুণ ফল লাভ হয়।

শ্রী শ্রী গিরি গোবর্ধন পূজা,অন্নকূট মহা উৎসব এর ব্যাক্ষ্যা।বৈদিক পঞ্জিকা অনুযায়ী, একটি চান্দ্র দিনকে তিথি বলে। চাঁদ ও স...
26/10/2022

শ্রী শ্রী গিরি গোবর্ধন পূজা,অন্নকূট মহা উৎসব এর ব্যাক্ষ্যা।

বৈদিক পঞ্জিকা অনুযায়ী, একটি চান্দ্র দিনকে তিথি বলে। চাঁদ ও সূর্যের মধ্যে ১২ ডিগ্রি দ্রাঘিমাকোণ বৃদ্ধির সময়কে একটি তিথির সময়কাল ধরা হয়। তিথির সূচনার সময় দিন অনুযায়ী বদল হয় এবং তিথির মোট সময়কাল অনেকক্ষণ ধরে ব্যাপ্ত থাকে। প্রতিপদ বা প্রথমা হল পক্ষের প্রথম তিথি। শুক্লপক্ষের প্রতিপদ শুক্লা প্রতিপদ এবং কৃষ্ণপক্ষের প্রতিপদ কৃষ্ণা প্রতিপদ নামে পরিচিত। কার্তিক মাসের শুক্লা প্রতিপদ তিথিতে উত্তর গোবর্ধন পূজা ও অন্নকূট উৎসব হয়। অন্ন+কূট শব্দের অর্থ অন্নকূট অর্থাৎ অন্নের পাহাড়।

যা আসল পুরাণ শ্রীমদ্ভগবতে বিধৃত লীলাদির প্রভূত রস আস্বাদন করেছেন বৈষ্ণব আচার্যগণ। লীলাপুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভৌম লীলায় অনেক চমকপ্রদ লীলা প্রদর্শন করেন। শ্রীল জীব গোস্বামী তার গোপাল চম্পু গ্রন্থে নন্দ মহারাজের বক্তব্য হচ্ছে, ‘বৈশ্য গোপ জাতি। কৃষি এবং গো-পালন আমাদের জীবিকা। গো-পালনের জন্য আমাদের ঘাসের প্রয়োজন। চাষের জন্য বৃষ্টি চাই।

শিশু কৃষ্ণ ও গিরিরাজ গোবর্ধনঃ
শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতে বলা হয়েছে যে, দৃঢ বিশ্বাসের সঙ্গে কৃষ্ণভক্ত জানেন যে, ভক্তিসহকারে শ্রীকৃষ্ণের সেবা করা হলে আর কোন কিছুই করণীয় থাকে না। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুদ্ধ ভক্তকে কোন রকম বৈদিক শাস্ত্র নির্দেশ অনুসারে কোন আচার-অনুষ্ঠান করতে হয় না। অথবা কোন দেব-দেবীর পূজা করতে হয় না। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত হওয়ার ফলে তিনি সব রকমের বৈদিক আচার-অনুষ্ঠান ইতিমধ্যেই সম্পন্ন করেছেন এবং তাঁর সমস্ত দেব-দেবীর পূজা করা হয়ে গেছে। বৈদিক শাস্ত্রনির্দেশ অনুসারে বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান করে অথবা দেব-দেবীর পূজা করে শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভক্তিলাভ হয় না, কিন্তু কেউ যখন সম্পূর্ণভাবে শ্রীকৃষ্ণের সেবায় যুক্ত হন, তখন সমস্ত বৈদিক আচার-অনুষ্ঠান আপনা থেকেই সম্পাদিত হয়ে যায়।

এ কথার আলোকে শরতের ঠিক মাঝামাঝি কার্তিক মাস, এ সময় ব্রজবাসীরা এক বিশেষ অনুষ্ঠানের অয়োজন করে। যা গোবর্দ্ধন পূজা ও অন্নকূট মহোৎসব নামে খ্যাত। আজ গোবর্দ্ধন পূজা অন্নকুট মহোৎসব। অন্নকূট প্রধানত বৈষ্ণবদের উৎসব হলেও অনেক শাক্ত পরিবারে ও মন্দিরে এর চল আছে। শ্রীমদ্ভগবত গীতার দশম স্কন্ধের নবম ও দশম অধ্যায়ে লীলা পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত বশ্যতা স্বীকার স্বরূপ দাস বন্ধন লীলা বর্ণিত হয়েছে। এ পুজোর পিছনে রয়েছে এক পৌরাণিক কাহিনি।

বৃন্দাবনবাসীরা ৫৬ রকম পদের ভোগ দিয়ে বৃষ্টির দেবতা ইন্দ্রের পুজো করত। বৈদিক যজ্ঞ অনুষ্ঠান-পরায়ণ ব্রাহ্মণপত্নীদের কৃপা করার পর, কৃষ্ণ ও বলরাম একদিন দেখলেন যে, গোপেরা দেবরাজ ইন্দ্রের সন্তুষ্টিবিধানের জন্য সেই রকমই এক যজ্ঞের আয়োজন করছেন। শ্রীকৃষ্ণ তাঁর ভক্তদের এই ধরনের সমস্ত কার্যকলাপ বন্ধ করতে আদেশ দিলেন, কেননা তিনি বৃন্দাবনে প্রকটকালে অত্যন্ত দৃঢতার সঙ্গে তাঁর প্রতি অনন্য ভক্তি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। গোপেরা যে ইন্দ্রযজ্ঞের আয়োজন করেছিল, তা শ্রীকৃষ্ণ তা জানতে পেরেছিলেন, কেননা তিনি হচ্ছেন সর্বদ্রষ্টা। কিন্তু সৌজন্যতার বশে তিনি শ্রদ্ধা সহকারে এবং বিনম্রভাবে মহারাজ নন্দ এবং অন্যান্য বয়স্ক গোপদের জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন যে, কিসের আয়োজন করা হচ্ছে।

শ্রীকৃষ্ণ তাঁর পিতাকে জিজ্ঞসা করেন, “হে পিতঃ, এটা কোন্ যজ্ঞের আয়োজন করা হচ্ছে? এই যজ্ঞের ফলে কি হয় এবং কার উদ্দেশ্যে এই যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হবে ? কিভাবে এই যজ্ঞ করা হবে ? আপনি কি দয়া করে তা আমাকে বলবেন ? তা জানতে আমি অত্যন্ত উৎসুক, তাই দয়া করে এই যজ্ঞের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে আমাকে বলুন।” কৃষ্ণ তাঁকে এইভাবে জিজ্ঞাসা করলে তাঁর পিতা নন্দ মহারাজ চুপ করে রইলেন, কেননা তিনি মনে করলেন যে, তাঁর শিশুপুত্রটি এই যজ্ঞ অনুষ্ঠানের জটিলতা বুঝতে পারেব না। কৃষ্ণ তখন নাছোড়বান্দার মতো তাঁকে বারবার জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন,” হে পিতঃ, যাঁরা উদারচেতা এবং সৎ প্রকৃতির মানুষ, তাঁরা কোন কিছুই গোপন করেন না। তাঁরা সকলের প্রতিই উদারভাবাপন্ন। আর যাঁরা ততটা উদার নন, তাঁরা ও আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধুবান্ধবের কাছে কোন কিছু গোপন করেন না, যদিও শত্রুভাবাপন্ন মানুষদের কাছে তাঁরা কোন কিছু গোপন রাখতে পারেন। তাই আমার কাছে কিছু গোপন করা আপনার উচিত নয়। সমস্ত মানুষই তাদের কর্ম অনুসারে ফল ভোগ করছে। তাদের কেউ তাদের কৃতকর্ম এবং তার ফল সম্বন্ধে অবগত, আর কেউ তাদের কর্মের উদ্দেশ্য অথবা ফল সম্বন্ধে কিছু না জেনেই কর্ম করে যাচ্ছে। যে মানুষ পূর্ন জ্ঞান সহকারে কর্ম করেন, তিনি পূর্ণ ফল প্রাপ্ত হন; কিন্তু যাঁরা না জেনে কর্ম করছেন, তাঁরা পূর্ণ ফল ভোগ করতে পারেন না। তাই দয়া করে আমাকে বলুন আপনারা যে যজ্ঞ অনুষ্ঠান করতে চলেছেন তার উদ্দেশ্য কি ? তা কি বৈদিক নির্দেশ অনুসারে সম্পদিত হচ্ছে। না কি, এটা কেবল একটা জনপ্রিয় উৎসব ? দয়া করে আমাকে সবিস্তারে এই যজ্ঞ সম্বন্ধে বলুন” কৃষ্ণ এইভাবে প্রশ্ন করতে থাকেলে

নন্দ মহারাজ উত্তর দিলেন, ” কৃষ্ণ , এই যে অনুষ্ঠান করা হচ্ছে , তা একটা প্রচলিত প্রথা। যেহেতু মেঘেরা হচ্ছে ইন্দ্রের প্রতিনিধি, তাই ইন্দ্রের কৃপার ফলেই বৃষ্টি হয় আর আমাদের জীবন ধারণের জন্য জল এত প্রয়োজনীয় যে বৃষ্টির নিয়ন্তা ইন্দ্রের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করা কর্তব্য। তাই আমরা দেবরাজ ইন্দ্রের সন্তুষ্টি বিধানের জন্য এই যজ্ঞের আয়োজন করেছি, কেননা তিনি কৃপা করে আমাদের যথেষ্ট বৃষ্টিদান করেন, যার ফলে আমরা ফসল উৎপাদান করতে সক্ষম হই। আমাদের জীবনে জল অত্যন্ত প্রয়োজনীয়; জল ছাড়া আমরা কৃষিকার্য করতে পারি না অথবা শস্য উৎপাদন করতে পারি না। যদি বৃষ্টি না হয় তা হলে আমরা জীবনধারণ করতে পারি না তাই যথাযথভাবে ধর্ম-অনুষ্ঠান করা জন্য, অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করার জন্য এবং অবশেষে মোক্ষলাভের জন্য জল অপরিহার্য। তাই চিরাচরিত প্রথায় এই যে অনুষ্ঠান চলে আসেছে তা বন্ধ করা উচিত নয়; আমরা যদি কাম, লোভ বা ভয়ের বশবর্তী হয়ে তা বন্ধ করে দিই, তা হলে তা ভাল দেখাবে না।

“সেই কথা শুনে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর পিতা এবং বৃন্দাবনের সমস্ত গোপদের এমন কতকগুলো কথা বললেন, যাতে দেবরাজ ইন্দ্র অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হলেন। তিনি বললেন, এই যজ্ঞ অনুষ্ঠান করার কোনো প্রয়োজন নেই। ইন্দ্রের প্রীতি সাধনের জন্য এই যজ্ঞ না করার তিনি দুটি কারণ দেখালেন। প্রথম কারণ, যা ভগবদ্গীতাতেও বলা হয়েছে, পার্থিব উন্নতি সাধনের জন্য কোন দেব-দেবীর পূজা করার প্রয়োজন নেই, দেব-দেবীদের পূজা করে যে ফল হয়, তা ক্ষণস্থায়ী, এবং অল্পবুদ্ধিসম্পন্ন লোকেরাই কেবল এই ধরনের ক্ষণস্থায়ী ফল লাভে উৎসাহী দ্বিতীয়ত, যে সমস্ত অনিত্য ফল এই সমস্ত দেব-দেবীদের পূজা করে লাভ হয়, তা পরমেশ্বর ভগবানের আদেশ অনুসারেই তারা মঞ্জুর করে থাকেন। ভগবদগীতায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘ময়ৈব বিহিতান্ হি তান্’- দেবতাদের কাছ থেকে যে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা লাভ হয়ে থাকে, তা প্রকৃতপক্ষে পরমেশ্বর ভগবানই প্রদান করেন। পরমেশ্বর ভগবানের আদেশ ছাড়া কেউই কোন কিছু দিতে পারেন না। কিন্তু মাঝে মাঝে জড়া প্রকৃতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে দেবতারা নিজেদের সর্বেসর্বা বলে মনে করে গর্বান্বিত হয়ে পড়েন এবং পরমেশ্বর ভগবানের পরম ঈশ্বরত্বের কথা ভুলে যান। শ্রীমদ্ভাগবতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, এখনে শ্রীকৃষ্ণ ইচ্ছা করে ইন্দ্রের ক্রোধ উৎপাদন করেতে চেয়েছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ এই জগতে অবতরণ করেন অসুরের বিনাশ করবার জন্য এবং ভক্তদের পরিত্রাণ করবার জন্য। দেবরাজ ইন্দ্র অবশ্যই অসুর ছিলেন না, তিনি ছিলেন ভক্ত, কিন্তু তিনি গর্বান্বিত হয়ে পড়েছিলেন বলে শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে একটু শিক্ষা দেওয়ার আয়োজন করেছিলেন। তিনি প্রথমে বৃন্দাবনের গোপেদের আয়োজিত ইন্দ্রপূজা বন্ধ করে তাঁকে খুব রাগিয়ে দিয়েছিলেন।

মনে মনে সেই উদ্দেশ্য নিয়ে কৃষ্ণ গোপেদের সঙ্গে এমনভাবে কথা বলতে লাগলেন যেন তিনি কর্মমীমাংসা সমর্থনকারী একজন নাস্তিক । এই ধরনের দার্শনিকেরা পরমেশ্বর ভগবানের পরম আধিপত্য স্বীকার করেন না। তারা যুক্তি প্রদান করেন যে, কেউ যখন ভালভাবে কর্ম করে তখন অবশ্যই তারা তার ফল লাভ করে। তাদের মত হচ্ছে যে, যদি ভগবান বলে কেউ থেকে থাকেন, যিনি মানুষের কর্ম অনুসারে ফল প্রদান করেন, তা হলে তাঁকে পূজা করার কোন কারণ নেই। কেননা মানুষ যদি কর্ম না করে তা হলে তিনি কোন শুভ ফল প্রদান করতে পারেন না। তারা বলেন, মানুষের কতর্ব্য হচ্ছে দেবতা অথবা ভগবানের পূজা না করে নিষ্ঠা সহকারে কর্তব্যকর্ম করা এবং তা হলে তার শুভ ফল অবশ্যই লাভ হবে। শ্রীকৃষ্ণ এই কর্মমীমাংসা দর্শনের তত্ত্ব অনুসারে তাঁর পিতার সংগে কথা বলতে লাগলেন। তিনি বললেন, ” হে পিতঃ, আপনার কৃষিকার্যের সাফল্যের জন্য কোন দেবদেবতার পূজা করার প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না। প্রতিটি জীবই তার পূর্বকৃত কর্ম অনুসারে জন্মগ্রহণ করে এবং বর্তমান কর্মের ফল নিয়ে এই দেহ ত্যাগ করে। প্রতিটি জীবই তার পূর্বকৃত কর্ম অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন শরীর প্রাপ্ত হয় এবং এই জন্মের কর্ম অনুসারে তার পরবর্তী জন্ম লাভ করে। বিভিন্ন ধরনের জাগতিক সুখ এবং দুঃখ , স্বাচ্ছন্দ্য এবং দুর্দশা, পূর্ব জীবনের অথবা বর্তমান জীবনের বিভিন্ন রকমের কর্মের ফল। ”

মহারাজ নন্দ এবং অন্যান্য গোপবৃদ্ধরা যুক্তি দেখালেন যে, আমরা বৈশ্য গোপ জাতি। কৃষি এবং গো-পালন আমাদের জীবিকা। গো-পালনের জন্য আমাদের ঘাসের প্রয়োজন। চাষের জন্য বৃষ্টি চাই। দেবতাদের সন্তুষ্ট না করে কেবলমাত্র কর্ম করা মাধ্যমে শুভ-ফল লাভ করা যায় না। প্রকৃতপক্ষে সেই কথাটি ঠিকই যেমন, অনেক সময় দেখা যায় যে, খুব ভাল ডাক্তারের দ্বারা চিকিৎসা করা সত্ত্বেও এবং খুব ভাল ওষুধ খাওয়ানো সত্ব্বেও রোগীর মৃত্যু হয়। এর থেকে বোঝা যায় যো, খুব ভাল ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা করানো এবং ভাল ওষুধ খাওয়ানোটাই রোগমুক্ত হওয়ার কারণ নয়; পরম নিয়ন্তা পরমেশ্বর ভগবানের ইচ্ছাই হচ্ছে মূল কারন । তেমনই, সন্তানের প্রতি মা-বাবার যত্ন নেওয়াটাই সন্তানের সুখ-স্বচ্ছন্দ্যের কারণ নয়। অনেক সময় দেখা গেছে যে, পিতা-মাতাদের যথেষ্ট তত্ত্বাবধান সত্ত্বে ও সন্তানেরা বিপথগামী হয়ে গেছে অথবা মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে। তাই জড় কারণগুলিই ফললাভের পক্ষে যথেষ্ট নয়। পরমেশ্বর ভগবানের অনুমোদন না থাকলে কোন কিছুই সফল হয় না। মহারাজ নন্দ তাই সেই নীতি সমর্থন করে বললেন যে, কৃষিকার্যে সুফল লাভ করতে হলে অবশ্যই বৃষ্টির নিয়ন্ত্রণকারী দেবতা ইন্দ্রকে সন্তুষ্ট করতে হবে। এই যুক্তি খন্ডন করে শ্রীকৃষ্ণ বললেন যে, দেবতারা মানুষকে তার কর্ম অনুসারে ফল দান করে থাকেন। কেউ যদি যথাযথভাবে তার কতর্ব্যকর্ম না করে, তা হলে দেবতারা তাকে কোন রকম সুফল দান করতে পারেন না; তাই দেবতারা মানুষের কতর্ব্যকর্মের অধীন। যে কোন মানুষকে তাদের ইচ্ছমতো ফলদান করতে দেবতারা পারেন না।

শ্রীকৃষ্ণ বললেন, ” হি পিতঃ, ইন্দ্রদেবতার পূজা করার কোন প্রয়োজন নেই। প্রত্যেককেই তার কর্ম অনুসারে ফল লাভ করতে হয়। আমরা দেখতে পাই যে, প্রকৃতপক্ষে সকলেই তাদের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি অনুসারে কর্মে লিপ্ত হয়; এবং সেই স্বাভাবিক প্রবৃত্তি অনুসারে মানুষই হোক্ বা দেবতাই হোক্, প্রত্যেকে যথাযথ ফল ভোগ করে থাকেন। প্রতিটি জীবই উচ্চতর বা নিম্মতর দেহ প্রাপ্ত হয় এবং তাদের বিভিন্ন কর্ম অনুসারে, শত্রু, মিত্র বা নিরপেক্ষ ভাব অর্জন করে। তাই খুব সাবধানতার সঙ্গে স্বাভাবিক প্রবৃত্তি অনুসারে কর্তব্যকর্ম করে যাওয়া উচিত এবং বিভিন্ন দেব-দেবীদের পূজা করে চিত্তকে বিক্ষিপ্ত করা উচিত নয়। যথাযথভাবে কর্তব্যকর্ম সম্পদন করা হলে দেব-দেবীরা আপনা থেকেই সন্তুষ্ট হবেন। তাই তাঁদের আলাদা করে পূজা করার কোন প্রয়োজন নেই। তাই, আমাদের কর্তব্য হচ্ছে খুব ভালভাবে আমাদের কর্তব্যকর্ম সম্পাদন করা। প্রকৃতপক্ষে, যথাযথভাবে কর্তব্যকর্ম সম্পাদন না করে কেউই সুখী হতে পারে না, তাই যে যথাযথভাবে তা কতর্ব্য করে না, তাকে অসতী স্ত্রীলোকের সঙ্গে তূলনা করা হয়। ব্রাহ্মনদের কর্তব্যকর্ম হচ্ছে বেদ পাঠ করা, ক্ষত্রিয়ের কর্তব্যকর্ম হচ্ছে প্রজাপালন করা, বৈশ্যের কতর্ব্যকর্ম হচ্ছে কৃষি, গোরক্ষা, বাণিজ্য, এবঙ শুদ্রের কর্তব্যকর্ম হচ্ছে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্যের সেবা করা। আমরা বৈশ্য, তাই আমাদের কর্তব্য হচ্ছে কৃষিকার্য করা অথবা সেই কৃষিজাত দ্রব্য নিয়ে বাণিজ্য করা, গোরক্ষা কর, এবং টাকা ধার দেওয়া ।”

কৃষ্ণ বৈশ্য সম্প্রদায়ভুক্ত বলে নিজের পরিচয় দিলেন, কেননা নন্দ মহারাজ গো-পালন করতেন এবং কৃষ্ণ তাঁদের পরিচর্যা করতেন। বৈশ্যদের জন্য তিনি চার রকমের বৃত্তি প্রদর্শন করলেন যথা, কৃষি, বাণিজ্য, গোরক্ষা এবং টাকা ধার দেওয়া। যদি ও বৈশ্যরা এর যে কোন ও একটি বৃত্তি গ্রহণ করেত পারেন, কিন্তু ব্রজবাসীরা গোরক্ষা কার্যেই যুক্ত ছিলেন।

কৃষ্ণ তাঁর পিতাকে আরো বোঝালেন, “এইজড় জগৎ সত্ত্ব, রজ এবং তম, প্রকৃতির এই তিনটি গুণের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। এই তিনটি গুণ হচ্ছে সৃষ্টি, স্থিতি এবং প্রলয়ের কারন। রজোগুণের প্রভাবে মেঘ উৎপন্ন হয় ; তাই বৃষ্টির কারণ হচ্ছে রজোগুণ। এই বৃষ্টি হওয়ার ফলে মানুষ তার কৃষিকার্যে সাফল্য লাভ করে। সমুদ্রের মাঝেও বৃষ্টি হয়। সেখানে কেউ ইন্দ্র পূজা করেন না। তা হলে এই ব্যাপারে ইন্দ্রের কি করণীয় আছে ? আপনি যদি ইন্দ্রের সন্তুষ্টি বিধান নাও করেন, তা হলে তিনি কি করতে পারেন ? আমরা ইন্দ্রের কাছ থেকে বিশেষ ফল পাচ্ছি না। তিনি যদি বৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ করতেন, তা হলে সমুদ্রের বুকে কেন বৃষ্টি হয় যেখানে জলের কোন প্রয়োজন নেই । সমুদ্রে এবং জমিতে সব জায়গাতেই বৃষ্টি হচ্ছে; তা ইন্দ্রকে পূজা করার উপর নির্ভর করে না। আমাদের অন্য কোন শহর বা গ্রামে বা বিদেশে যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। শহরে অনেক রাজকীয় প্রাসাদ আছে, কিন্তু আমরা এই বৃন্দাবনের বনে বাস করেই সুখী। গোবর্ধন পর্বত এবং বৃন্দাবনের বনের সংগে আমাদের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের জীবিকা যে গো-পালন, গাভী বর্ধনের জন্য আমরা গোবর্ধনের কাছে ঋণী। ইন্দ্রের কাছে নয়। চলো আমরা গোবর্ধনের পূজা করি। তাই আমি আপনাদের অনুরোধ করব, আপনারা এমন এক যজ্ঞ অনুষ্ঠান করুন যাতে স্থানীয় ব্রাহ্মণেরা এবং গোবর্ধন পর্বত সন্তুষ্ট হন। ইন্দ্রের উদ্দেশ্যে করণীয় আর আমাদের কিছুই নেই।

শ্রীকৃষ্ণের কথা শুনে নন্দ মহারাজ বললেন, “কৃষ্ণ, তুমি যখন বলছ তখন আমি নিশ্চয়ই স্থানীয় ব্রাহ্মণ এবং গোবর্ধন পর্বতের উদ্দেশ্য আলাদা একটা যজ্ঞের আয়োজন করব। কিন্তু এখন আমরা ইন্দ্রযজ্ঞ সম্পাদন করি”কৃষ্ণ বললেন, ” হে পিতঃ, দেরি করার আর প্রয়োজন নেই। গোবর্ধন পর্বত এবং স্থানীয় ব্রাহ্মনদের উদ্দেশ্যে যজ্ঞ অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে অনেক সময় লাগবে। তাই ইন্দ্রযজ্ঞের জন্য যে আয়োজন করা হয়েছে তা দিয়ে এখনই গোবর্ধন পর্বত এবং স্থানীয় ব্রাহ্মনদের সন্তুষ্টি বিধানের জন্য যজ্ঞ করলে ভাল হবে।”

মহারাজ নন্দ অবশেষে রাজী হলেন। গোপেরা তখন কৃষ্ণকে জিজ্ঞাসা করলেন কিভাবে তিনি যজ্ঞ অনুষ্ঠান করতে চান, এবং কৃষ্ণ তাঁদের বললেন, ” যজ্ঞের জন্য সংগৃহীত সমস্ত শস্য এবং ঘি দিয়ে খুব ভাল ভাল নানা রকমের খাবার তৈরি করা হোক। পুষ্পান্ন, ডাল, হালুয়া, পকোরা, পুরী, মিষ্টান্ন, রসগোল্লা, সন্দেশ, লাড্ডু, ইত্যাদি তৈরি করা হোক, এবং সমস্ত বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণদের নিমন্ত্রণ করা হোক্ । যাঁরা বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণে এবং অগ্নিতে আহুতি প্রদানে সুদক্ষ। সেই সমস্ত ব্রাহ্মণদের নানা করম শস্য দান করা হোক। গাভীদের খুব সুন্দর সজ্জায় ভূষিত করা হোক। এবং তাদের খুব ভাল করে খাওয়ানো হোক। তার পর ব্রাহ্মণদের অর্থদান করা হোক্। সমাজের নিম্মস্তরের চন্ডাল আদি মানুষদের , যাদের সাধারণ লোক অস্পৃশ্য বলে মনে করে, তাদের ও প্রচুর পরিমাণে প্রসাদ দেওয়া হোক্। গাভীদের তৃণ প্রদান করে গোবর্ধন পর্বতের পূজা উপহার প্রদান করা হোক্। এই পূজা হলে আমি অত্যন্ত তৃপ্ত হব।”

এখানে শ্রীকৃষ্ণ সমস্ত বৈশ্য সম্প্রদায়ের অর্থনৈতিক ভিত্তি বর্ণনা করেছেন। মাবন-সমাজের প্রতিটি সম্প্রদায়ে এবং গাভী, কুকুর, ছাগল ইত্যাদি পশু সম্প্রদায়ে ও সকলেরই একটা বিশেষ স্থান রয়েছে। সকলেরই কতর্ব্য হচ্ছে যৌথ ভাবে সমস্ত সমাজের মঙ্গলসাধনের জন্য কাজ করা। এই কথা কেবল সচেতন প্রাণীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়; বন পর্বত আদি অচেতন পদার্থকেও বিবেচনা করে। ফসল উৎপাদন করে গো-পালন করে প্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ করে, বাণিজ্য করে, এবং ঋণদান করে সমাজের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করার দায়িত্বভার বিশেষ করে বৈশ্য সম্প্রদায়ের উপর অর্পিত হয়েছে।

এর থেকে আমরা এটাও বুঝতে পারি যে, কুকুর, বেড়াল ইত্যাদি পশুদের যদিও খুব একটা প্রয়োজনীয়তা নেই, তবুও তাদের অবহেলা করা উচিত নয়। তাদের রক্ষা করাও মানুষের কতর্ব্য। তবে অবশ্য কুকুর, বেড়াল রক্ষা করার থেকে গাভীদের রক্ষা করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ; এবং এখানে আমরা আরেকটা ইঙ্গিত দেখতে পাই যে, চন্ডাল বা সমাজের যারা অস্পৃশ্য, তাদের ও অবহেলা করা উচিত নয়। সকলেরই যথাযথ প্রয়োজনীয়তা আছে, তবে কেউ সরাসরিভাবে মানব-সমাজের উন্নতিসাধনের জন্য যুক্ত, আর কেউ পরোক্ষভাবে যুক্ত। কিন্তু সমাজ যখন কৃষ্ণভাবনাময় হয়ে ওঠে ,তখন সকলেই সুখ-স্বচ্ছন্দ্যের সঙ্গে বসবাস করতে পারে।

আমাদের কৃষ্ণভাবনাময় সমাজে গোবর্ধন পূজার অনুষ্ঠান করা হয়। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু নির্দেশ দিয়ে গেছেন যে, শ্রীকৃষ্ণ যেমন আরাধ্য তেমন তাঁর ধাম বৃন্দাবন এবং গোবর্ধন পর্বত ও আরাধ্য। এই উক্তির সত্যতা প্রতিপন্ন করে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন যে, গোবর্ধন পূজা তাঁকে পূজা করারই মতো। সেই দিন থেকে এখনো অন্নকুট নামক এই গোবর্ধন পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বৃন্দাবনে এবং বৃন্দবানের বাইরে মন্দিরগুলিতে এই উপলক্ষ্যে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যসামগ্রী প্রস্তুত করা হয় এবং গিরিরাজ গোবর্ধনকে উৎসর্গ করার পর তা জনসাধারণের মধ্যে বিতরণ করা হয়। মাঝে মাঝে এই প্রসাদ ছুঁডে দেওয়া হয় এবং উপস্থিত ভক্তরা মাটি থেকে কুডিয়ে সেই প্রসাদ উপভোগ করেন। এর থেকে বোঝা যায় যে, শ্রীকৃষ্ণকে নিবেদিত প্রসাদ কখনো দুষিত বা কলুষিত হয় না, এমন কি মাটিতে ছুঁডে দিলে ও নয়। তাই মানুষ মাটি থেকে তা কুড়িয়ে নিয়ে গভীর তৃপ্তি সহকারে তা সেবন করেন।

পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাই বৃন্দাবনের গোপেদের উপদেশ দিলেন ইন্দ্রযজ্ঞ বন্ধ করে গোর্বধন পূজা শুরু করতে। নন্দ মহারাজের নেতৃত্বে সরলচিত্ত গোপেরা কৃষ্ণের এই প্রস্তাব মেনে নিলেন এবং তাঁরা গিরি গোবর্ধন পূজা করলেন এবং তাঁকে প্রদক্ষিণ করলেন। গোবর্ধন পূজার সময়ে বৃন্দাবনবাসীরা এখনো খুব সুন্দরভাবে সজ্জিত হয়ে গোবর্ধন পর্বতের সামনে সমবেত হয়ে গিরিরাজের পূজা করেন এবং তারপর গাভীসহ তাঁকে প্রদক্ষিণ করেন। শ্রীকৃষ্ণের নির্দেশ অনুসারে নন্দ মহারাজ এবং গোপেরা বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণদের নিমন্ত্রণ করে এনেছিলেন এবং বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ করে এবং নানা রকমের ভোগ নিবেদন করে গোবর্ধন পূজা করেছিলেন। সেই পূজার ভোগের উপাচার অন্নের পাহাড়ের রূপ ধারণ করে। অন্নের পাহাড়টি গোবর্দ্ধনকে নিবেদন করা হয়। উপস্থিত সবাই দেখলো এক দিকে সাত বছর বয়সী ছোট কৃষ্ণ দাঁড়িয়ে, অপরদিকে এক বিশাল শ্রীকৃষ্ণ অন্ন ভোজন করছেন। সমস্ত ব্রজবাসীরা তখন সমবেত হয়ে তাদের গাভীদের নানা অলঙ্কারে ভূষিত করে তৃণ দান করেছিলেন। তারপর গাভীদের সামনে রেখে তাঁরা গোবর্ধন পর্বত পরিক্রমা করেছিলেন। ব্রজগোপিকারা মূল্যবান রত্ন অলঙ্কারে ভূষিতা হয়ে গরুর গাড়িতে বসে শ্রীকৃষ্ণের মহিমা কীর্তন করেছিলেন। সমবেত ব্রাহ্মণেরা গোবর্ধন পূজা করে সমস্ত ব্রজবাসীদের আর্শীর্বাদ করেছিলেন। সমস্ত অনুষ্ঠান যথাযথভাবে সম্পন্ন হলে, শ্রীকৃষ্ণ এক বিরাট দিব্য রূপ ধারণ করে বৃন্দাবনের অধিবাসীদের কাছে ঘোষণা করলেন যে, তিনিই হচ্ছেন গোবর্ধন পর্বত, যাতে তাঁর ভক্তদের চিত্তে কোন সংশয় না থাকে যে, গোবর্ধন পর্বত এবং তিনি অভিন্ন। তারপর কৃষ্ণ সমস্ত নৈবেদ্য ভোজন করতে লাগলেন। কৃষ্ণ ও গোবর্ধন পর্বতের অভিজ্ঞতা ভক্তরা শ্রদ্ধা সহকারে এখনো মেনে আসছেন। আজো কৃষ্ণভক্তরা গোবর্ধন শিলাকে অভিন্ন কৃষ্ণজ্ঞানে মন্দিরে পূজা করে আসছেন। ভক্তরা তাই গোবর্ধন পর্বত থেকে ক্ষুদ্র শিলা নিয়ে এসে তাঁদের গৃহে পূজা করেন, কেননা এই পূজা শ্রীকৃষ্ণের শ্রীবিগ্রহের পূজারই মতো। যে রূপ পরিগ্রহ করে শ্রীকৃষ্ণ নৈবেদ্য ভোজন করছিলেন, সেই রূপ ছিল ভিন্ন, এবং কৃষ্ণ নিজে অন্য সমস্ত ব্রজবাসীদের সংগে সেই বিগ্রহকে এবং গোবর্ধন পর্বতকে প্রণাম করতে লাগলেন। তাঁর সেই বিরাট রূপকে এবং গোবর্ধন পর্বতকে প্রণাম জানিয়ে কৃষ্ণ ঘোষণা করলেন, ” দেখ, গোবর্ধন পর্বত কেমন এই বিরাট রূপ ধারণ করেছেন এবং সমস্ত নৈবেদ্য গ্রহণ করে আমাদের কৃপা করছেন ” সেই সভায় কৃষ্ণ আরো ঘোষণা করলেন, ” যে এই গোবর্ধন পূজার অবহেলা করবে, যা আমি নিজে অনুষ্ঠান করছি, সে কখনো সুখী হবে না। এই গোবর্ধন পর্বতে অনেক বিষধর সর্প আছে এবং যারা এই গোবর্ধন পূজার অবহেলা করবে তারা সেই সর্প দংশনে প্রাণত্যাগ করবে। তাদের গাভী এবং তাদের নিজেদের সৌভাগ্যের জন্য গোবর্ধন পর্বতের সন্নিকটস্থ সমস্ত বৃন্দাবনবাসীরা যেন অবশ্যই এই গোবর্ধন পূজা করে, যা আমি প্রচলন করলাম।”

পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন বৃন্দাবনের গোপেদের উপদেশ দিলেন ইন্দ্রযজ্ঞ বন্ধ করে গোর্বধন পূজা শুরু করতে তখন স্বর্গের রাজা দেবতা ইন্দ্র রেগে গেলেন। এবং বৃন্দাবনের উপরে মুষলধারে বর্ষণ করেন। তখন সবাই শ্রীকৃষ্ণ কে দোষারোপ করা শুরু করলেন। কেন যে এই ছোট বয়সের এক ছেলের কথা তাঁরা শুনলেন এবং দেবরাজ ইন্দ্রের ক্ষোভের সম্মুখীন হলেন!!! শ্রীকৃষ্ণের বয়স ছিল ন্যুনধিক তিন বছর চার মাস। প্রবল বর্ষণের ফলে সম্পূর্ণ বৃন্দাবন পানির নিচে তলিয়ে যায়। তখন শ্রী কৃষ্ণ গিরিরাজ গোবর্ধন কে প্রণাম করে সহায়তা চাইলেন। এবং বৃন্দাবনবাসীদের ওই বিপদ থেকে রক্ষার জন্য কৃষ্ণ গোবর্ধন পর্বতকে বৃন্দাবনের উপরে ছাতার মতো করে ধরে থাকেন।

তখন ইন্দ্র ও শ্রী কৃষ্ণের মধ্যে যুদ্ধারম্ভ হল। যুদ্ধে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নিকট দেবরাজ ইন্দ্র পরাজিত হন। অহংকারী ইন্দ্ররাজ লজ্জিত হয়ে শ্রীকৃষ্ণ পদে আত্মনিবেদন করলেন। তার পর থেকে কৃষ্ণের নির্দেশে বৃন্দাবনবাসী কার্তিক মাসে অমাবস্যার পরদিন ‘গিরি গোবর্ধন’-এর পুজো আরম্ভ করে। সেই পুজোই অন্নকূট উৎসব।

কলকাতার অনেক মন্দির ও পরিবারে অন্নকূট উৎসব হয়। সেগুলির মধ্যে সব থেকে বড় উৎসব হয় বাগবাজারের মদনমোহন মন্দিরে। বাগবাজার-কুমোরটুলি এলাকার মদনমোহনতলা অঞ্চলে মদনমোহন ঠাকুরবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা গোকুলচন্দ্র মিত্র। ১৭৬১তে গোকুলচন্দ্র তাঁর এক বিঘারও বেশি জায়গা নিয়ে তৈরি বাড়ির দোতলায় কুলদেবতা ‘মদনমোহন’-এর জন্য ‘দরবার কক্ষ’ (মন্দির) তৈরি করলেন। একতলায় তৈরি হল ঠাকুরদালান ও নাটমন্দির। কার্তিক মাসের শুক্লা-প্রতিপদ তিথিতে নাটমন্দিরে অনুষ্ঠিত হয় অন্নকূট উৎসব। প্রায় ৪০০ কিলোগ্রাম চালের ভাত-সহ ১৫৭ রকম পদ তৈরি হয়। পুজো শেষে ভক্তদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া হয় ওই অন্নভোগ।

সোনারপুর খড়িগাছি অঞ্চলের ঊনপঞ্চাশ বছরের প্রাচীন কালী শিবগুরু মঠেও অনুষ্ঠিত হয় অন্নকূট উৎসব। উৎসবের দিন পিতলের পরাতে প্রায় আড়াই মণ চালের ভাত দেওয়া হয় ভোগ হিসেবে। চুড়ো করে সাজানো ভাতের গায়ে সব্জি দিয়ে কালীর মুখ আঁকা হয়। সঙ্গে থাকে ১৫৫ রকম নিরামিষ পদ। প্রায় পঁচিশ বছর আগে শ্যামপুকুরের বলরাম ঘোষ স্ট্রিটের বাড়িতে অন্নপূর্ণা মূর্তি ও শ্রীধর (শালগ্রাম শিলা) স্থাপন করেন ভূপতি ভট্টাচার্য। অন্নকূট উৎসবে ১১৫ রকম রান্না করা পদ ও ১২০ রকম মিষ্টান্ন দেওয়া হয়। এখানে মোচা, থোড়, কুমড়ো ইত্যাদি সব্জি দিয়ে তৈরি বিভিন্ন পদের পাশাপাশি ভোগ হিসেবে ফুচকা, আইসক্রিম, কোল্ড-ড্রিংকসও দেওয়া হয়। ভট্টাচার্যবাড়ির অন্নকূটে জাতিভেদ মানা হয় না, যে কোনও বর্ণের মানুষ এসে রান্না করতে পারেন। রানি রাসমণির কন্যা জগদম্বাদেবী ১৮৭৫-এ ব্যারাকপুর তালপুকুরের অন্নপূর্ণা মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। ওই মন্দিরে অন্নকূট উৎসব হয় অন্নপূর্ণাপুজোর দিনে। ওই দিন সকালে মূল পুজো, কুমারীপুজো ও হোমের পরে হয় অন্নকূট। একুশ কিলোগ্রাম চালের ভাত-সহ ৫১ রকম পদ দেওয়া হয় ভোগ হিসেবে।

ত্রেতাযুগের গিরিগোবর্ধনঃ
শ্রীকৃষ্ণের গিরি গোবর্ধন কে এক আঙ্গুলীতে তুলে নেওয়ার আরো একটি কারণ পাওয়া যায় পৌরাণিক কাহিনিতে। ত্রেতা যুগে মর্যাদা পুরুষোত্তম ভগবান রাম, সীতা ও লক্ষ্মণ সহ ১৪ বছরের বনবাসে গেলেন। তখন দুষ্টু রাবণ সীতাকে অপহরণ করে লংকাতে নিয়ে যায়। অপহৃত হওয়ার পর হনুমান যখন সীতার খোঁজ নিয়ে আসলেন তারপর সীতাকে উদ্ধারের জন্য রাম; লক্ষ্মণ, হনুমান ও অন্যান্য অনেক বানর সেনা নিয়ে লংকা অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। সমুদ্র অতিক্রম করার জন্য বিশ্বকর্মা পূত্র নল সমুদ্রের উপরে পাথর দিয়ে সেতু নির্মান করতেছিলেন। তখন পাথর কম পড়বে মনে করে হনুমান অনেক পাহাড় কে একত্রিত করে এই রামসেতু তৈরীতে ভূমিকা রাখেন।

এরপর যখন রামসেতু তৈরী করার জন্য এরকম ভাবে গোবর্ধন পর্বত কে হনুমান উত্তোলিত করতেছিলেন তখন গোবর্ধন পর্বত একটা শর্ত দিয়েছিলেন; “যেন তাঁকে ভগবানের সেবা সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সুযোগ দেয়া হয়।” হনুমান তখন হঠাৎ করে খোঁজ পেলেন যে রামসেতু তৈরী করা হয়েগেছে। তখন হনুমান গোবর্ধন পর্বত কে বর্তমান স্থানে স্থাপিত করে দেন। পথিমধ্যে হনুমান গোবর্ধন পর্বত কে নামিয়ে রাখায় গোবর্ধন পর্বত ভগবান রামচন্দ্রের সন্তুষ্টি অর্জনের সুযোগ না পাওয়ায় হনুমান কে দোষারোপ করতে শুরু করেন। তখন হনুমান গোবর্ধন পর্বত এর কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন যে তাঁকে যেন ভগবান সেই সুযোগ করে দেন এর ব্যবস্থা তিনি করবেন। তখন হনুমান ভগবান রামচন্দ্রকে পুরো ঘটনা টা খুলে বললেন। রামচন্দ্র তখন হনুমান কে আশ্বস্থ করলেন যে তিনি হন্নুমানের কথা বাস্তবায়ন করবেন। এবং দ্বাপর যুগে যখন জন্মনিবেন তখন গোবর্ধন পর্বত সেই শর্ত পূরণ করবেন। দ্বাপর যুগে ভগবান রামকৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করার পর গিরিগোবর্ধন কে এক আংগুলীতে তুলে ধররেন। এবং গিরিগোবর্ধনের ইচ্ছাটাও পূরণ হলো।

সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণকে ঘিরে বহুকাল থেকেই অনেক পৌরাণিক কাহিনি প্রচলিত রয়েছে। শুধু ভারত নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে গ্রহণ ...
25/10/2022

সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণকে ঘিরে বহুকাল থেকেই অনেক পৌরাণিক কাহিনি প্রচলিত রয়েছে। শুধু ভারত নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে গ্রহণ ঘিরে রয়েছে একাধিক ধর্মীয় ও সংস্কৃতিগত ‘বিশ্বাস’। আমেরিকা থেকে শুরু করে আফ্রিকা বিশ্বের সর্বত্রই সূর্যগ্রহণ নিয়ে রয়েছে নানা পৌরানিক কাহিনি।প্রসঙ্গত, চাঁদ যখন পরিভ্রমণরত অবস্থায় কিছু সময়ের জন্য পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে, তখন পৃথিবীর কোন দর্শকের কাছে সূর্য আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যায় কিছু সময়ের জন্য। এই ঘটনাকে সূর্যগ্রহণ বলা হয়। অন্যদিকে, যখন সূর্য ও পৃথিবীর মাঝখানে চাঁদ অবস্থান নেয়, তখন পৃথিবীপৃষ্ঠের পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে সূর্য চাঁদের পেছনে আড়ালে চলে যায় এবং সূর্যের গ্রহণ ঘটে। আবার পৃথিবী যখন চাঁদ ও সূর্যের মধ্যে আসে তখন পৃথিবীর আড়ালে চাঁদ ঢাকা পড়ে এবং চন্দ্রগ্রহণ হয়। সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণকে ঘিরে বহুকাল থেকেই অনেক পৌরাণিক কাহিনি প্রচলিত রয়েছে। শুধু ভারত নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে গ্রহণ ঘিরে রয়েছে একাধিক ধর্মীয় ও সংস্কৃতিগত ‘বিশ্বাস’। আমেরিকা থেকে শুরু করে আফ্রিকা বিশ্বের সর্বত্রই সূর্যগ্রহণ নিয়ে রয়েছে নানা পৌরানিক কাহিনি। দেখে নেওয়া যাক, সেই সব কাহিনিকে। কোরিয়ানরা মনে করেন যে সূর্যকে চুরি করে নিয়েছে কোনও রাক্ষুসে কুকুর। কোরিয়ান লোক সঙ্গীতে এই নিয়ে বহু সুরও বাঁধা হয়েছে। পশ্চিম আফ্রিকার বেনিন ও টোগে উপজাতির মানুষরা বিশ্বাস করেন যে ‘গ্রহণ’ মানে সূর্য ও চন্দ্রের মধ্যে ক্রমাগত যুদ্ধ। তাঁদের আরও ধারণা যে একমাত্র পৃথিবীই এই যুদ্ধ মেটাতে সক্ষম। প্রাচীন গ্রিসের পৌরনিক কাহিনিতে মনে করা হত সূর্যগ্রহণের ঘটনা মানেই কোনও না কোনও দেবদেবী রুষ্ট হয়েছেন। যার ফলে কোনও দুর্যোগের আশঙ্কা করা হত। মূলত এই মহাজগতিক ঘটনাকে নেতিবাচক চোখে দেখা হত এখানে। অন্যদিকে,জ্যোতিষ মতে মনে করা হয় অনেকেরই কোষ্ঠীতেই গ্রহণ দোষ থাকে। কালসর্প,পিতৃদোষ, মাঙ্গলিকের মতো গ্রহণ দোষও একটি দোষ।

বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ কী?
পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যে এক সরলরেখায় চাঁদ এসে গেলে সেই ছাড়ায় পৃথিবী পৃষ্ঠে পড়ে। এই মহাজাগতিক ঘটনার নাম সূর্যগ্রহণ। যদিও এই মুহূর্তে চাঁদ পৃথিবী থেকে কিছুটা দূরে থাকার কারণে চাঁদের প্রচ্ছায়া পৃথিবীর উপরে পড়বে। এর ফলে সূর্যকে একটি বলয়ের মতো দেখাবে।

কখন হয় গ্রহণ?
প্রসঙ্গত, চাঁদ যখন পরিভ্রমণরত অবস্থায় কিছু সময়ের জন্য পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে, তখন পৃথিবীর কোন দর্শকের কাছে সূর্য আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যায় কিছু সময়ের জন্য। এই ঘটনাকে সূর্যগ্রহণ বলা হয়। অন্যদিকে, যখন সূর্য ও পৃথিবীর মাঝখানে চাঁদ অবস্থান নেয়, তখন পৃথিবীপৃষ্ঠের পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে সূর্য চাঁদের পেছনে আড়ালে চলে যায় এবং সূর্যের গ্রহণ ঘটে। আবার পৃথিবী যখন চাঁদ ও সূর্যের মধ্যে আসে তখন পৃথিবীর আড়ালে চাঁদ ঢাকা পড়ে এবং চন্দ্রগ্রহণ হয়।

বছরে কতবার হতে পারে সূর্যগ্রহণ?
একটি বছরে দুই থেকে ৫ টি সূর্যগ্রহণ সংগঠিত হতে পারে। তবে একটিই বছরে ৫ টি পর পর সূর্যগ্রহণ অত্যন্ত বিরল। এমনই জানাচ্ছে মার্কিন মহাকাশ বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র নাসা। শেষবার ১৯৩৫ সালে একই বছরে পর পর ৫ টি সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। এরপর ২২০৬ সালে একই বছরে ৫ টি সূর্যগ্রহণ হবে বলে দাবি ‘টাইম অ্যান্ড ডেট ডট কম’ এর।

অনলাইনে সূর্যগ্রহণ দেখবেন কীভাবে?
Slooh.com ওয়েবসাইট থেকে এই সূর্যগ্রহণ লাইভ স্ট্রিম করা হবে। এছাড়াও YouTube থেকে গ্রহণের দিন ভারতীয় সময় সকাল 8 টায় গ্রহণের অনলাইন স্ট্রিম শুরু হবে।

সুরক্ষিত উপায়ে সূর্যগ্রহণ দেখবেন কীভাবে?
নিজে চোখে সূর্যগ্রহণ দেখার আগে চোখের সঠিক সুরক্ষা অবশ্যই নিতে হবে। খালি চোখে সূর্যগ্রহণ দেখলে চিরতরে চোখের ক্ষতি হতে পারে।

গ্রহণ এবং গর্ভাবস্থা – এটা কি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ক্ষতিকর?
চন্দ্রগ্রহণের সময় গর্ভবতী মহিলাদের জন্য পরামর্শ
বিশ্বাস করা হয় যে গর্ভবতী মহিলারা চাঁদের গ্রহনকালে সেট করা কিছু বিধিনিষেধ মেনে চললে তাদের এবং তাদের বাচ্চাদের ক্ষতি হয় না। চাঁদের গ্রহনকালে গর্ভবতী মহিলাদের পরামর্শ দেওয়া হয় এমন কিছু সাধারণ সতর্কতা হল:

● গ্রহণের সময় উপবাস।
● চন্দ্রগ্রহণের দিনে কিছু বুনন বা সেলাই না করা।
● আগের দিন রান্না করা হয়েছে এমন কিছু জিনিস রান্নাঘরে না রাখা।
● কাঁচি এবং ছুরির মত ধারালো বস্তু ব্যবহার করবেন না।
● দিনের বেলা সূর্যের আলোর রশ্মিতে উন্মুক্ত হবেন না। সূর্যালোক এড়াতে; ভারী পর্দা টানা উচিত, এবং জানালা খবরের কাগজ দিয়ে আচ্ছাদিত করা উচিত।
● গ্রহণের সময় ঘরের বাইরে যাবেন না।

সতর্কতা অনুসরণ করার সময় মনে রাখার জিনিস
এটা খুব সম্ভব যে আপনাকে গ্রহণের সময় খাওয়া বা পান করা এড়াতে বলা হবে। এটি আপনার এবং আপনার শিশুর উপর প্রতিকূল প্রভাব ফেলতে পারে। এটা ডিহাইড্রেশনের কারণ হতে পারে। গ্রহণের সময় এবং আপনার প্রবীণদের বিভিন্ন বিধিগুলি মানার সময় অপ্রয়োজনীয় নিয়মগুলি আপনাকে উদ্বিগ্ন এবং ভীত করে তুলতে পারে। এতে রক্তচাপ বৃদ্ধি হতে পারে যা আপনার শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ হতে পারে।

গ্রহণের সময় সতর্কতা অবলম্বন করার সময় আপনি নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখছেন কিনা তা নিশ্চিত করুন:

● মাথা ঘোরা
● গুরুতর মাথাব্যাথা
● অচেতন হওয়ার মত অনুভূতি
● অম্বল বা বদহজম
আপনি যদি এই উপসর্গগুলি লক্ষ্য করেন, অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। একটি চন্দ্রগ্রহণের ঘটনা ঘটলে এবং আপনি সতর্কতাগুলি অনুসরণ করে থাকেন তবে অগ্রিম ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিন।

গর্ভাবস্থায় সূর্যগ্রহণের প্রভাব
এটা বিশ্বাস করা হয় যে প্রত্যাশিত মহিলাদের সরাসরি গ্রহণের দিকে তাকানো উচিত না। এতে গর্ভাবস্থায় গর্ভপাত হতে পারে বা সন্তান বিকৃতির সঙ্গে জন্ম নিতে পারে।

সূর্যগ্রহণকালে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য সতর্কতা
সমস্ত গর্ভবতী মহিলারা এই প্রশ্নটি মনে রাখেন, “গ্রহণ কি গর্ভধারণকে প্রভাবিত করে?” বিজ্ঞান কিছু বিশ্বাসকে ফিরিয়ে আনতে পারে, যদিও কিছুর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। কিন্তু এখানে সূর্যগ্রহণের সময় গর্ভবতী মহিলাদের জন্য কিছু সতর্কতা রয়েছে যা অবলম্বন করতে হয়:

● বাইরে যাবেন না, সরাসরি সূর্যের দিকে তাকাবেন না।
● একটি গ্রহণকালে ঘুমানো এড়িয়ে চলুন। ‘দূর্বা ঘাস’ পেতে চেষ্টা করুন এবং মেঝেতে ছড়িয়ে দিন ও ‘দূর্বা ঘাস’-এ বসুন।
● একটি গ্রহণকালে পিন, ছুরি, বা সূঁচের মত ধারালো বস্তু ব্যবহার করবেন না।
● গ্রহণকালে খাবেন না, পান করবেন না বা রান্না করবেন না।
● গ্রহণের সময় ‘মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র’ বা ‘শান্তনা গোপাল মন্ত্র’ উচ্চারণ করুন।
● গ্রহণ শেষ হওয়ার পরে স্নান করা পরামর্শ দেওয়া হয়।
● আপনার বাড়ির বয়ষ্কদের সঙ্গে সম্মান সহকারে আচরণ করুন এবং স্নানের পর তাদের আশীর্বাদ নিন।

কল্পকথা না সত্য
আমাদের বয়ষ্করা মানেন এমন কিছু বিশ্বাস আছে। চলুন দেখি সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ এবং গর্ভাবস্থায় প্রভাবগুলি কল্পকথা কিনা।

১) ঘরের মধ্যে থাকুন এবং সূর্যের দিকে তাকাবেন না
এটি সত্য যে একটি গর্ভবতী মহিলাকে গ্রহণের সময় বাইরে যাওয়া উচিত না এবং নিম্নলিখিত কারণগুলির জন্য খালি চোখে সূর্যের দিকে দেখবেন না:

● সরাসরি সূর্যের বিকিরণের দিকে তাকানো ক্ষতিকারক।
● গ্রহণের দিকে সরাসরি তাকালে আপনার রেটিনা সূর্যের তীব্র দৃশ্যমান আলোতে থাকা এক্সপোজার প্রভাবিত করতে পারে।
● এটি রেটিনা পুড়ে যাওয়ার কারণ হয় আলো সংবেদনশীল রড এবং শঙ্কু কোষে ক্ষতি করে।
● এটি সাধারণ সত্য। আপনি গর্ভবতী হোন বা না হোন, আপনি সরাসরি একটি গ্রহণের দিকে তাকানো উচিত নয়।

২) একটি গ্রহণের সময় রান্না করা, খাওয়া বা পান করবেন না

এটি একটি প্রমাণিত সত্য। এর পিছনে কারণ হল সূর্যের রশ্মি একটি গ্রহণের সময় আরালে আটকে যায় বলে তাপমাত্রা হ্রাস হয়। তাপমাত্রার হ্রাস এবং সূর্যের রশ্মির অনুপস্থিতির কারণে ব্যাকটেরিয়া, জীবাণু এবং ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াগুলি ছড়িয়ে পড়তে পারে। অতএব, গ্রহণের সময় রান্না, পান করা বা খাওয়া বাঞ্ছনীয় নয়।

দাবি পরিত্যাগী
গ্রহণ সম্পর্কিত কুসংস্কার বিশ্বাস করা এবং সেই অনুযায়ী কাজ করা আপনার পছন্দ। আপনি হয়তো আপনার বাবা-মার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করার জন্য বা কিছু প্রকৃত গর্ভাবস্থার জটিলতার ক্ষেত্রে দোষ এড়ানোর জন্য তাদের অনুসরণ করতে চাইতে পারেন। গ্রহণ একটি প্রাকৃতিক ঘটনা। সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ আপনার গর্ভাবস্থায় কোন প্রভাব ফেলে না। গ্রহণ সম্পর্কিত বিশ্বাস এবং নিয়মনীতি অনুসরণ করা ব্যক্তিগত পছন্দ। আপনাকে যা করতে হবে তা হল শিথিল থাকা এবং ঘটনাটি শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করা।

সূর্যগ্রহণের সময় কী করবেন, কী করবেন না জেনে নিন
১. খালি চোখে কয়েক সেকেন্ডের জন্য সূর্য গ্রহণ দেখলেও তা রেটিনার উপর প্রভাব ফেলে। যার কারণে একটা চোখে দৃষ্টিশক্তিও হারাতে পারে মানুষ। তাই খালি চোখে এই গ্রহণ দেখতে না করেছে নাসা।
২. পেরিস্কোপে, টেলিস্কোপ, সানগ্লাস বা দূরবীন, কোনও কিছুর সাহায্যে গ্রহণ দেখার সময় সূর্যের দিকে সরাসরি তাকাতে বারণ করা হয়েছে। গ্রহণের সময় সূর্য রশ্মি অত্যন্ত সংবেদনশীল থাকে যা চোখে প্রভাব ফেলতে পারে।
৩. সানগ্লাস বা ঘষা কাঁচ দিয়েও এই গ্রহণ দেখতে বারণ করেছে নাসা। কারণ এইগুলো নিরাপদ না।
৪. বিজ্ঞানীরা বলেছেন, বিশেষ গ্রহণ গ্লাস বা সোলার ফিল্টার দিয়েই এই গ্রহণ দেখা উচিত।
৫. বাজারে আইএসও স্বীকৃত বিশেষ সোলার গ্লাস দিয়ে একমাত্র এই গ্রহণ দেখা নিরাপদ।
৬. সে সব গ্লাস ব্যবহারের আগে অবশ্যই ব্যবহার নির্দেশিকা (instructions) পরে নিতে উপদেশ দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। কোনোভাবে সেই গ্লাস ভাঙা বা দাগ থাকলে ব্যবহার করতে না করেছে তাঁরা।
৭. সূর্যগ্রহণ চলাকালীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্র, খাবার খেতে বারণ করেছে। একমাত্র বৃদ্ধ, অসুস্থ ও গর্ভবতী মহিলারা হালকা খাবার নিতে পারবেন বলে বলা আছে। যদিও আধুনিক বিজ্ঞান এই দাবিকে মান্যতা দেয়নি।
৮. প্রাচীন ভারতীয় গাঁথা বলে, রাহুর গ্রাসে সূর্য। তাই গ্রহণ হয়। যা জন-জীবনে প্রভাব ফেলে। রোগ-ব্যাধি ছড়ায়। সে কারণে আগেকার দিনে ভারতীয়রা রান্না বন্ধ রেখে বাইরে বেরিয়ে এসে সূর্য প্রণাম করতেন কিংবা স্নান করে শুদ্ধ হতেন।কিছু কিছু কুসংস্কার আবার এমন আছে, গর্ভবতী মহিলার গর্ভে থাকা বাচ্চার জন্য সূর্য গ্রহণ অত্যন্ত বিপদজনক। তাই সে সব মহিলাদের গ্রহণ চলাকালীন ঘরের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হতো না।

গর্ভবতী মহিলারা কী করবেন?
মনে করা হয়, গর্ভবতী মহিলারা এই গ্রহণের সময় যদি বাইরে বের হন, তাহলে তা নিঃসন্দেহে খারাপ ঘটনা তাঁদর পক্ষে। শাস্ত্র বলছে, গর্ভবতী মহিলারা যেন এমন দিনে থাকেন বাড়ির ভিতরেই। সূর্যগ্রহণ ও স্নান সূর্যগ্রহণ ঘিরে স্নান সূর্যগ্রহণ ঘিরে করণীয়ের মধ্যে থাকছে স্নান। শাস্ত্রজ্ঞদের মতে , গ্রহণের সময় স্নান করে কাপড় বদলে ফেলে শুদ্ধবস্ত্র পরা , অত্যন্ত শুভ কাজ। তবে এই সময়ের মধ্যে কোনও মতেই খাবার খাওয়া বা রান্না করা উচিত নয় বলে দাবি শাস্ত্রজ্ঞদের।

গ্রহণ কাটতেই কী কী করণীয়?
শাস্ত্রজ্ঞরা বলছেন, গ্রহণ মিটে গেলে , তারপর পূজার সময় ঈশ্বরকে কোনও কিছু অর্পণ করা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। পাশাপাশি, গ্রহণের পর সূর্যদেবতার মন্ত্রপাঠ করা অত্যন্ত শুভফলদায়ক বলে মনে করা হয়।

গ্রহণ ঘিরে কোন কাজ করা উচিত নয়?
শাস্ত্র বলছে, সূর্যগ্রহণের সময় বাইরে থাকা, বা কোনও কারণে বেড়ানো ঠিক কাজ নয়। তাতে জ্যোতিষমতে খানিকটা খথারাপ প্রবাব পড়তে পারে ব্যক্তির উপর। কোনও শুভ কাজ গ্রহণের সময়কালের মধ্যে করতে বারণ করছেন শাস্ত্রজ্ঞরা।

কোষ্ঠীতে গ্রহণ দোষ কী?
বৈদিক জ্যোতিষদের মতে সূর্য ও চন্দ্রের গহণের মাধ্যমে অনেকরই ভাগ্যে গ্রহণ দোষ থাকে। এই অশুভ দোষের জন্য অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয় মানুষের জীবনে। যদি কারোর কোষ্ঠিতে লগ্নের দিক থেকে দ্বাদশভাবে সূর্য ও চন্দ্রের সঙ্গে রাহু বা কেতুর মধ্যে কোনও একটি গ্রহ স্থিত হয়, তাতে তখন তৈরি হয় গ্রহণ দোষ। এর ফলে কর্মক্ষেত্রে অনেক সময় সমস্যা তৈরি হয়। জ্যোতিষবিদদের মতে সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের দিনগুলিতে এই গ্রহণদোষের কথা মাথায় রেখে অনেকেই নিজের পদক্ষেপ নির্ধারণ করে থাকেন।

বাস্তু টিপস সূর্যগ্রহণ ঘিরে
বাস্তুশাস্ত্র বলছে, সূর্যগ্রহণের দিন জলের মধ্যে রেখে দিতে হবে একটি তুলসীর পাতা। আর ততেই যাবতীয় বিপত্তি নাশ হতে পারে এই গ্রহণ ঘিরে।

জল পান নিয়ে বাস্তু টিপস
সূর্যগ্রহণের দিন যে সময় গ্রহণ লাগছে সেই সময় যেন ১৫ মিনিটের জন্য গৃহস্থ কেউ জল পান না করেন। বাস্তুশাস্ত্র মতে এই কাজে সুফল মেলে পরবর্তী পর্যায়ে।

কী কী দান করা যায়?
সূর্যগ্রহণের দিন চিনি, গম, নুন জাতীয় বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য় যেন কাউকে দান করা হয়, এমনই পরামর্শ দিচ্ছেন বাস্তুশাস্ত্রবিদরা। তাঁদের দাবি, এই সময়ে এমন দান করলে তা গৃহস্থের সমস্যা দূর করে।

যে সংস্কারটি মানবেন
সূর্যগ্রহণের সময় সূর্যের দিকে সরাসরি তাকানো বারণ। এই সংস্কার অবশ্যই মানবেন। সত্যি বলতে, যেকোনো সময়েই সূর্যের দিকে সরাসরি তাকাতে নেই। সে হোক গ্রহণের সময়, কিংবা স্বাভাবিক সময়ে। সূর্যগ্রহণ দেখতে কাঁসার পাত্রে জল থেকে শুরু করে ব্যবহার করা হয়েছে ফেলে দেওয়া এক্স-রে প্লেটও। এখন অবশ্য বিশেষ রোদচশমা দিয়ে সূর্যগ্রহণ দেখা যায়।

সূর্যগ্রহণ নিয়ে কোনো কুসংস্কারে পাত্তা দেওয়ার কোনো মানে নেই। আপনি যদি প্রসূতি মা হয়ে থাকেন, নিজের শরীরের যত্ন নিন। অনাগত সন্তানের জন্য শরীরে যথেষ্ট পুষ্টির ব্যবস্থা করুন।

এছাড়াও কিছু প্রচলিত কুসংস্কারগুলি তুলে ধরা হল
১. সূর্যগ্রহণের সময় জন্ম নেওয়া শিশুদের ব্যাপারে দুই ধরনের গল্প শুনতে পাওয়া যায়। এক, শিশুটি অসুস্থ হবে এবং দুই, শিশুটি চালাক হবে। তবে এ দুটি ধারণার কোনোটার ক্ষেত্রেই বিশ্বাস করার মতো যুক্তি বা তথ্য পাওয়া যায় না।প্রাচীন অ্যাজটেক সভ্যতায় বিশ্বাস করা হতো, চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদের এক টুকরো খেয়ে ফেলা হয়। ম্যাক্সিকান সংস্কৃতিতে এটা বিশ্বাসে পরিণত হয়, প্রসূতি মা সূর্যগ্রহণ দেখলে তার অনাগত সন্তানের এক টুকরো খেয়ে নেবে দেবতারা!
২. হিন্দু বিশ্বাসে রাহু গ্রাস করে সূর্য বা চন্দ্রকে। তাই এই সময় গর্ভবতী মহিলাদের ঘরের বাইরে বেরনো বারণ। তাতে সন্তানের মুখ বিকৃত হতে পারে, জন্ম চিহ্ন থেকে যেতে পারে বলে ধারণা। তবে এর কোনও বাস্তব সম্মত ব্যাখ্যা মেলে না। সূর্যগ্রহণ দেখতে গিয়ে সূর্যের দিকে খালি চোখে তাকালে চোখ খারাপ এমনকী, অন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও থাকতে পারে। সে গর্ভবতী মহিলা শুধু নয়, যে কোনও কারও ক্ষেত্রেই এটি হতে পারে। আলাদা করে গর্ভবতী মহিলাদের শারীরিক কোনও ক্ষতি হয় বলে প্রমাণ মেলে নি।
৩. গ্রহণের সময় শাড়িতে পিন বা সাধারণ ভাবে সেফটিপিন, কোনও গয়না পরতে বারণ করা হয়। নিষেধ থাকে ছুরি বা বঁটি দিয়ে ফল-সবজি কাটাতেও। এতে নাকি বিপদ হতে পারে। এর কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি পাওয়া যায় নি।
৪. মেক্সিকানরা মনে করেন আবার উল্টোটা। তাঁদের কুসংস্কার, গ্রহণের সময় গর্ভবতী মহিলারা পেটের কাছে ছুরি ধরে বসে থাকতে পারেন বা লাল অন্তর্বাস পরতে পারেন। এতে নাকি গ্রহণের কু-প্রভাব পড়ে না। রক্ষা পায় গর্ভের সন্তান।
৫. সূর্যগ্রহণে গর্ভবতী মায়েদের শান্তি নেই। সেন্ট লুইসে অবস্থিত মার্সি হাসপাতালের গাইনোকোলজিস্ট শাফিয়া ভুট্টোর মতে, সূর্যগ্রহণের সময় পাকিস্তানে মায়েদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে চিত করে শোয়ানো হতো। নইলে নাকি গর্ভের শিশু বিকলাঙ্গ হয়!

Address

Nazipur
Nazipur

Telephone

+8801647628935

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Akash Das posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Akash Das:

Videos

Share