02/08/2021
“একগুঁয়ে বেয়াদব ছেলেদের ভালোবাসতে নেই”
যে ছেলে গুলো খুব কেয়ার করে, হাতের চুড়ির, কানের দুলের রং মনে রাখে, কলা পাতার শাড়ির নাকি মেরুন কালার ব্লাউজ তার প্রশংসা করতে ভুলে না, ফোন দিতে দেরী হলে রেগে যায়, আবার নিজেই রাগ ভাঙ্গায়। এইসব ছেলেদের সহজে ভালোবাসা যায়, প্রেমে পড়া যায়, মনে দ্রুত জায়গা করে দেওয়া যায়। হাত টা সহজে ধরা যায়, এদের সাথে খুব দ্রুত মন ছাড়িয়ে শরীর ছোঁয়া যাই। এরা ছুঁয়ে যায়।
এদের দেওয়া কষ্ট গুলো খুব লাগে। ভেঙ্গে চুরমার করে। কিন্তু আবার কাটিয়ে উঠে পা বাাড়ানো যাই।
কখনো এক রোগা, ঘাড় ত্যাড়া, বেয়াদব ছেলে গুলো কে ভালোবেসে দেখেছো?
এরা মোট কথায় তোমাকে দেখবেই না। ঘন্টার পর ঘন্টা তাকিয়ে থাকার প্রশ্নই আসে না। কিন্তু তোমার চুড়ি আর দুল কেন এরা হাটতে হাটতে একটু শাড়ি উচু হয়ে দেখা যাওয়া পেটিকোট ও মনে রাখবে।
তুমি হয় একবার ব্যাগ খুলেছিলে তখন সে ফোনে মগ্ন ছিলে। কিন্তু বলতে পারবে কয়টা খুচরো আছে, যাওয়ার রিকশা ভাড়াটা আছে কিনা।
এদের সাথে রাগ করা মানে তার দায়ভার আবার নিজের গায়েই চাপানো। কারণ একরোগা ছেলেরা রাগ ভাঙ্গায় না, তেমনি সহজে রাগ ও করে না। তুমিই বিরক্ত হয়ে যাবে, রাগ কেন করে না? ঝগড়া কেন লাগায় না? আমার মান কেন ভাঙ্গায় না?
ঘাড় ত্যাড়া ছেলে গুলো লুতুপুতু প্রেমের গল্প বলে না। রাগ জেগে কথা বলবে তবে রাত বাড়লে তা শীররে পৌছায় না। যদি এদের বলা হয় তুমি আমায় একটু ভালোবাসো না, সে বুঝাতে আসবে না কতটা ভালোবাসে,
সে বলবে -তাইলে ঘুমাও।
এরা তোমার মা বাবা চৌদ্দগুষ্টি কেমন আছে কেমন নেই কি করে জিজ্ঞেস করবে না। কিন্তু কখনো কারো বাসায় গিয়ে ছোট মাসি শাশুড়ীর মোবাইল থেকে কখনো ফোন দিলেও তার নাম্বার রেখে দিবে।
এই ছেলে গুলো ভীষণ নাছোড়বান্দা হয়। তবে কখনো তোমাকে বিরক্ত করবে না। এরা কখনোই বলে না, পাসওর্য়াড দাও, এর সাথে কথা বলো না, ওকে ব্লক দাও, এই ড্রেস টা পড়বে না। বেড়াতে যাবে না। কাল দেখা করতেই হবে। এইভাবে কখনোই জ্বালাবে না।
এরা বলে চুল কেটো না, নক রেখো না, লাল লিপস্টিক টা একদম দিবে না। এরা হয়ত বায়না ধরে একবার শাড়ি পড়ে দেখা কর। এর বেশি তেমন কিছুই না।
এদের এই জ্বালা গুলো বুঝতে হলে তোমাকে তাকে ভালোবাসতে হবে। ভীষণ রকম ভালোবাসতে হবে। এদেরও রাগ হয়, কিন্তু তার প্রকাশ টা ধরতে গেলে তোমাকে তাকে তার চেয়েও বেশি চিনতে হবে।
এরা রেগে গেলে চিল্লায় না, কিংবা কথা বন্ধ করে না। এমন ঠান্ডা গলায় ভালোবাসি বলবে যেন তোমায় এখন কোন গিরিখাত টেনে নিলো নিচে। এই রাগ গুলো ভয়াবহ হয়, কিছু না বলে কিছু না করেই তোমার সারা শরীর জ্বালিয়ে মারবে। ভীষণ কষ্ট হবে।
এই ছেলে গুলোর ভালোবাসায় না কোন পিঞ্জর থাকে, না আকাশে বিস্তৃত থাকে। শুধু এদের চিন্তাভাবনার চারিপাশ জুড়ে থাকে। সে থাক না থাক ভালোবাসার রেশ রয়ে যায় আজীবন।
এদের কে তুমি ছেড়ে যেতে পারবে না। তুমি ভয় পাবে এই না ছেড়ে যায় তোমার। ব্যাপারটা অদ্ভুত রকম সত্য যে এরা কখনোই তোমায় ছেড়ে যাবে না। তোমার ভয় টাও আবার দূর করবে না। ওটা তোমার বিশ্বাসেই তোমাকে দূর করতে হবে। এদের জীবন তোমার অস্তিত্ব নিয়ে বার বার তুমি প্রশ্ন তুলবে। এরা বুঝাবে না।
এদের জীবন তোমার অস্তিত্ব যে কত টা জুড়ে তা তোমাকে তোমার বিশ্বাসে খুঁজে নিতে হবে। যেদিন পেয়ে যাবে সেদিন তার জীবনে সে অস্তিত্বের পরিধিতে নিজেকেই ক্ষুদ্র মনে হবে তোমার।
তোমার ভুল গুলো এরা হেসে উড়িয়ে দিবে, তোমার অপরাধ এরা সহজে ক্ষমা করে দিবে, তোমার প্রতরণায় এরা একটুও ভেঙ্গে যাবে না।
বলবেও না প্লিজ আর করো না।
শুধু বলবে, আচ্ছা ঠিক আছে।
তুমি ভাববে তোমার কিছুতেই তার কিছু এসে যায় না। কিন্তু যদি তুমি সে নিস্পৃহতা বুঝতে পারো তুমি কল্পনাও করতে পারবে না কি তপ্ত আগ্নেয়গিরি তারা বুকে পুষে রেখেছে। তার এক কণা ও যদি তোমার নিশ্বাস ছুয়ে যায় তুমি আজীবন জ্বলতে থাকবে।
কিন্তু তুমি বুঝবে না। এদের সবাই বুঝে না। এদের রাগ অভিমানের মতো এদের ভালোবাসা বুঝতে গেলে তোমাকে তাকে তার চেয়েও বেশি রকম ভালোবাসতে হবে। তোমায় জানতে হবে তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে তোমার অস্তিত্ব।
এইসব ছেলে গুলো ভীষণ রকম একগুয়ে হয়। তাদের ভালোবাসা গুলো বেপরোয়া হয়, তাদের পাগলামি লাগাম ছাড়া হয়। তোমাকে হারতে হবে বার বার।
এরা কখনো তোমার পথ আটকায় না, এরা কি রকম নিষ্ঠুর উদাস শূন্য চোখে তোমার চলে যাওয়া দেখবে তুমি আৎকে উঠবে।
এরা কখনো জানাতে আসবে না কতটা এখনো মিস করে তোমায়, কি যন্ত্রনায় বিশাল কোলাহলে তোমায় একামনে ভাবতে পারে, ঢেউয়ের বাতাসে কি পরিমাণ হু হু করে উঠে কামড়ে ধরে এদের।
তোমাকে ভালোবাসার জন্য এদের তোমাকে লাগে না। ভালোবেসে যেতে পারে বাসের ভীড়ে একটু জায়গা পেয়ে জানলার সিটে বসে বাইরে একটু লাগা বাতাসের সাথে। ভালোবেসে যেতে পারে তোমাকে দেখে পাশ কাটিয়ে গিয়েও।
এরা কোন কষ্ট করে না একটা সর্ম্পক বাঁচিয়ে রাখতে, কিন্তু কি অদ্ভুত কষ্ট জমিয়ে রাখে তা শুধু যখন পূর্ণতা পাবে সে সুখের বৃষ্টিতে খুঁজে নিতে পারবে।
এরা অদ্ভুত রকম ভালোবাসতে পারার ক্ষমতা রাখলেও এদের ভালোবাসার পূর্ণ হওয়ার কৌটা বরাবর শূন্য থাকে৷
এরা কখনো দোহায় দেয় না, কোন প্রমাণ দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে না, এরা কখনো আটকে দাঁড়িয়ে রবে না। তুমিই বিরক্ত হবে, ভাববে তার কাছে তোমার চলে যাওয়া কোন কিছুই না।
কিন্তু যদি সে পাশে সরে দাঁড়ানো বুঝতে চাও তাহলে পাশে দাঁড়িয়ে হাতটা ধরতে হবে। কি মায়া আছে তাতে।
যদি তাও চলে যাও। এরা ফিরেও তাকায় না। এদের দেওয়া কষ্ট গুলো খুব বেশি লাগে না। শুধু পাথর চাপা পড়ে সব।
এদের ভুলা যাবে না। এগিয়ে যাবে হয়ত কিন্তু ওখানেই ঘুড়পাক খাবে আজীবন।
এদের ভালোবাসলে খুব প্যারা। মন জুড়ে এমন অস্তিত্ব করে নেবে তুমি নৈমত্তিক কাজের ব্যস্ততায় ধুলো ফেলতে পারবে, মুছবে পারবে না।
এদের ভালোবাসে আটকে রাখা খুব কঠিন মনে হয়। মনে হয় কি কুক্ষনেই না ভালোবেসেছি।
কিন্তু এদের ভালোবাসা পাওয়া টা ভাগ্যের ব্যাপার। খুব কম ভাগ্যবতী মেয়ে এইরকম একগুঁয়ে, ঘাড় ত্যাড়া, বেয়াদব ছেলেটার ভালোবাসা হতে পারে।
কলমেঃদোলনা বড়ুয়া তৃষা