25/04/2022
কলেজ অভ্যন্তরীণ কিছু কথাঃ
"যাকে নরসিংদীর মানুষ 'দানবীর'/'শিক্ষা বন্ধু' হিসেবে চিনে, তিনি নিশ্চয়ই তার কলেজের/প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের পারিশ্রমিক বুঝিয়ে দেন এমনই ধারণা হয়তো সবার। বিগত করোনাকালীন সময়ে শিক্ষকদের পাওনা নিয়ে একজন ভুক্তভোগী শিক্ষক হিসেবে কিছু অব্যক্ত কথা তুলে ধরছি-
১. আমি আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজে আমি প্রায় দু বছর শিক্ষকতা করে জাপানে পিএইচডি কোর্সে এসেছি। আসার সময় আমাকে আমার পাওনা পারিশ্রমিক বুঝিয়ে দিয়ে স্বসম্মানে বিদায় দেওয়া উচিত ছিলো কিন্তু কোনটাই হয় নি। করোনার ওই সময়টাতে শিক্ষকরা করোনার অজুহাতে সম্পূর্ণ বেতনভাতা পায়নি।
অথচ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে করোনা কালীন দুর্যোগের সময়ে সম্পূর্ণ বেতন নেয়া হয়েছে। আমি চাকুরী ছেড়ে আসার সময় চেয়ারম্যান মহোদয়ের কাছে আমার বকেয়ার কথা উল্লেখ করতে যাই, কিন্তু তিনি আমার প্রায় ৩ লক্ষ বকেয়া টাকা দিতে সরাসরি অস্বীকার করেন এবং উল্টো দাবী করেন যে, করোনার সময় আমরা নাকি কোন কাজই করি নাই। অথচ করোনার সময় যখন সবাই ঘরবন্দী ছিলো তখন আমরা শিক্ষকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভ্রাম্যমান পাঠদানে অংশ নেই। এবং শিক্ষকদের এই করোনা কালিন দায়িত্ব পালনের কারণেই তিনি 'শিক্ষাবন্ধু' অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।
২. যেসব কলেজ ফাউন্ডেশন দ্বারা পরিচালিত হয় তাদের ফান্ডে বিপদকালীন সংকট মোকাবেলা করার জন্য অর্থ থাকে। কিন্তু আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ তার শিক্ষকদের সাথে করোনা কালীন মহামারির সময়ে যথাযথ সৎ ব্যবহার করতে পারেনি। কলেজের চেয়ারম্যান আবদুল কাদির মোল্লা মহোদয় একটি মিটিংয়ে বলেছিলেন যে, এই কলেজের ফান্ডে তিনি হাত দেননা। অর্থ্যাৎ কলেজের অর্থ কলেজের স্বার্থেই ব্যয়ের জন্য রাখা হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের শীর্ষস্থানীয় কোন কলেজ(ফাউন্ডেশন দ্বারা পরিচালিত) শিক্ষকদের বেতন প্রদানে গড়িমসি না করলেও ব্যতিক্রম ছিল আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ।
৩. করোনার সময়জুড়ে শিক্ষকদের ৬০% বেতন প্রদানের সময় বলা হয়েছিল কলেজ খুললেই একসাথে সকল বকেয়া(১৮ মাসের) টাকা দিয়ে দেওয়া হবে। আমি ১২ সেপ্টেম্বর কলেজ খোলার পর আরও দুই মাসাধিক কলেজে ছিলাম, প্রতিশ্রুতির কোন বাস্তবায়ন পাইনি। তিনি সর্বশেষ বলেছিলেন মার্চের(২০২২)মধ্যে সকল বকেয়া বেতন দেওয়া হবে। যতটুকু খোঁজ নিয়েছি, এখন পর্যন্ত শিক্ষকদেরকে অনিয়মিতভাবে মাত্র ৪ মাসের বকেয়া দেয়া হয়েছে। তাহলে উনি যে দানবীর/শিক্ষাবন্ধু তার কথার মূল্য কোথায় রইলো প্রশ্ন রেখে গেলাম।
৪. কলেজ বেতনের নিয়মিত বকেয়া ছাড়াও ২০১৯ সালে পরীক্ষার্থীদের কোচিং বাবদ নেয়া ৩৭ লক্ষ টাকা, পরীক্ষার ডিউটি ফি, মূল্যায়ন ফি থেকে বিনা কারণে শিক্ষকদের এখনো পর্যন্ত বঞ্চিত রাখা হয়েছে। চাকরি হারাবার ভয়ে কোন শিক্ষক উনার সামনে এই বিষয়ে মুখ পর্যন্ত খুলতে নারাজ।
৫. করোনাকালীন ও এর পর ৮ জন শিক্ষক কলেজ থেকে চলে গেছেন। তাদেরকে প্রাপ্য বকেয়া থেকে সম্পুর্ণ বঞ্চিত করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ অন্যায়। উচিত ছিলো একদিনের পারিশ্রমিকও শিক্ষকদের ঠিকমতো বুঝিয়ে দেওয়া। একজন শিক্ষার্থীর টিসি হলে তার কাছ থেকে চলতি মাসের বেতন নেওয়া হলে একজন শিক্ষক বিদায় নিলে তাকে কেন তার প্রাপ্য দেওয়া হবে না?
৬. স্টুডেন্টদেরও নিম্নমানের আবাসন ব্যবস্থাসহ নানা ধরনের সমস্যা পোহাতে হয়। সেগুলোর সমাধান হোক। এজন্য শিক্ষার বাণিজ্যিকিকরণ থামাতে হবে এবং শিক্ষকদের সাথে দেওয়া ওয়াদা রক্ষা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সমস্যার প্রতি দৃষ্টিপাত ও সেগুলোর সমাধান করতে হবে। শুধুই এ প্লাস বানিজ্য ও সুনাম কামানোর ধান্ধা করলে প্রতিষ্ঠান কখনো লাভবান হয় না। শিক্ষার গুনগত মানেরও কোন উন্নয়ন হয় না। এতে হয়তো ব্যক্তি সাময়িকভাবে লাভবান হয় কিন্তু দিনশেষে প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বরং শিক্ষককে তার প্রাপ্য অধিকার বুঝিয়ে দিয়ে তাদের সেরাটা শিক্ষার্থীদের দেয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করলেই কেবল প্রতিষ্ঠান সত্যিকারের লাভবান হবে।"
-মোঃ তাসনীম আলম
সাবেক প্রভাষক (জীববিজ্ঞান বিভাগ)
পিএইচডি গবেষক
কোচি ইউনিভার্সিটি, জাপান
©