01/06/2024
একটা মেয়েকে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে তুলবে। যেই সংসার মূলত নিজের থাকে না, থাকে শাশুড়ির। সেখানে শাশুড়ির হুকুমমাফিক সংসারের সব কাজ করতে হবে। আর যদি জা, ননদ থাকে তাহলে তাদেরও ফরমায়েশি করতে হবে। তারউপর এদের যদি বাচ্চাকাচ্চা থাকে তাহলে বউয়ের ঘুম বিশ্রাম সব শেষ। তেড়ে আইসেন না! দুনিয়াতে ভদ্র বাচ্চাকাচ্চা যেমন আছে তেমনই কুটিবেলা থেকেই হওয়া চরম বেয়াদব বাচ্চাও আছে। আর বাচ্চাকাচ্চা যদি নাবালক হয় তাহলে দুষ্টামি সবগুলোই করবে, কারণ এতো ছোটগুলোর মধ্যে ভদ্রতা অভদ্রতা বোধ এখনো আসে নি। এখন বালেগই হোক বা নাবালেগ, শখ করে কিছুক্ষণ থাকা-রাখা যায়ই। কিন্তু, বারবার এসে যখন এটা ওটা ভাঙবে, ধরবে, অগোছালো করবে তখন মেজাজ ঠিকই গরম হবে। অথচ মেজাজ যতই গরম হোক না কেন নিজের বাচ্চা এমন করলে লাইনে আনার জন্য যেভাবে দুইটা থাপ্পড় মেরে বসিয়ে রাখা যায়, অন্যের বাচ্চাকে সেই তুলনায় চোখ গরমটুকুও করা যায় না। এটা শুধুমাত্র তারাই বুঝবে যারা সারাদিন ঘরের কাজে খেটেখুটে এসে বিছানায় বসবে একটু জিরিয়ে নেওয়ার জন্য কিন্তু তখনও আরেকজনের বাচ্চার অকাজের ডিউটি করা লাগবে। দরজা লাগিয়ে শুয়ে থাকবেন? উহুম! নো সুযোগ! আরও একটা দারুণ টুইস্ট হচ্ছে, কোনো জা-ননদের যদি ছোট বাচ্চাকাচ্চা থাকে তাহলে ওই বাচ্চা নিয়েই এমন মাতামাতির খেলা দেখাবে যে মানুষও বলতে শুরু করবে, 'বেচারির বাচ্চা সামলিয়ে কুল পায় না, বাচ্চা পেলে কত কষ্ট করতেছে, কাজ কীভাবে করবে?' অতএব, কাজের সব ভার আসবে বাচ্চা না থাকা সদ্য বউয়ের উপর। আবার সব কাজ করেও কাজের মধ্যে সামান্য ভুল হলেও কথার কোনো মাফ নেই।
মায়ের মুখের উপর সবসময় তর্ক করা মেয়েগুলোও এখানে এসে দাঁত খিঁচিয়ে চুপ মেরে সব হজম করতে থাকে শুধুমাত্র সংসার বাঁচানোর দায়ে।
কোনোকিছু খেতে যাবেন? ওখানেও থাকবে হিসেব। কোনোকিছু শখ করে রাঁধতে যাবেন, করতে যাবেন? ওখানেও লাগবে পারমিশন, খরচের হিসেব তো আছেই। অথচ রান্নার পর সবাই-ই তা গিলবে। বান্ধবী বা বাপেরবড়ির কারোর সঙ্গে ফোনে কথা বলবেন? তখন হারেহারে দেখা যাবে মানুষের চেহারা কুঁচকানো কালো রঙ কী সুন্দর হয়!
এতোকিছুর পরেও দিনশেষে শ্বশুর-শাশুড়ি ছেলের কামাইও খাবে, বউয়ের কাম করাও খাবে। সারামাস কাজ করে চাহিদা মিটিয়ে ছেলের নিজের হাতেও টাকা থাকবে, সব চাহিদা মেটানোর পরও শ্বশুর-শাশুড়ির হাতেও এক্সট্রা টাকা থাকবে। মাঝখানে সারামাস কাজ করে খাইয়েও, যাবতীয় কথা, অশান্তি হজম করেও বউয়ের হাত থাকবে ফাউ। ওদিকে বউয়ের উপর যে নিজের বাবা-মায়ের দায়িত্ব ফরজ, তা আদায়ের হিসেব সুনিপুণভাবে মাটিচাপা পড়ে যায়। এরা না পারে কাজ করে নিজের মায়ের জানেন আসান দিতে আর না পারে কাজের বদলে দূর থেকে অন্তত মাসে কিছু টাকা দিয়ে অথবা খাদেম রেখে তাদের শান্তি দিতে। মেয়ের বাবা-মা'রা মেয়ে লালনপালন করে না ভোগ করে মেয়ের কাজ করে খাওয়ানো; আর না ভোগ করে কোনো ইনকাম। উল্টো মেয়ে বিয়ে দেওয়ার পরও জামাইকে কী দিলো না দিলো তা নিয়ে বিশাল বিশাল কাহিনী রচিত হয়। ওদিকে পরের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার পর দিনের পর দিন যায় অথচ নিজেদের মেয়েটাকে একটু ছুঁয়ে দেখতেও পারে না।
তাহলে আপনিই বলুন, 'এই সমাজ কেন ছেলে হলে খুশি হবে না? কেন মেয়ে সন্তান জন্ম হলে কষ্ট পাবে না? যেখানে হাজারটা কষ্টের তারকাটা বিছিয়ে রাখাই হয়েছে কষ্ট দেওয়ার জন্য?'
একজন পুরুষের যেমন তার বাবা-মায়ের প্রতি দায়িত্ব ও ভালোবাসা আছে, একজন মেয়ের তা নেই? বাবা-মায়ের শরীরে কষ্ট আছে, বউয়ের শরীরে নেই? নাকি সে রোবট? তাহলে এতো বঞ্চনার পর একটা মেয়ে কেন জব করতে চাইবে না? তাকে জব করতে কারা বাধ্য করে? টাকা ইনকামের চিন্তা কারা তার মাথায় ইন্ডাইরেক্টলি পুশ করে? আপনি কাজও করাবেন, নিজের বাপ-মায়ের ফার-ফরমায়েশও খাটাবেন, কথাও হজম করাবেন, অথচ হাতখরচ দিবেন না, জব করার অনুমতিও দিবেন না, মনোমালিন্য হলে ডিভোর্সের হুমকিও দিবেন। আর যদি গালি-মাইরের হাত থাকে জামাইয়ের তাহলে তো ষোলআনা পূর্ণ। দিনশেষে এসবের জেরে ডিভোর্স হলে ওই মেয়ে তাহলে কই গিয়ে দাঁড়াবে? দিনের পর দিন আপনার সংসারে খেটে সে কী পাবে? সমাজের চোখে একপেশে কলঙ্ক বহন করে সে-ই কেন চলবে?
উত্তর আছে? আপনার কাছে হয়তো নেই কিন্তু অনেকের কাছেই আছে!
এই সমাজে এমন চিত্রের অহরহ বোন আছে, যাদের কাছে এর উত্তর জানতে চাইলে নির্দ্বিধায় হয়তো বলে উঠবে,
❝জাহেলিয়াতের যুগে মেয়ে সন্তানদের জন্ম নেওয়ার পরপরই জীবিত পুঁতে ফেলা হতো। বাঁচিয়ে রেখে সারাজীবন তিলে তিলে মারার চেয়ে ওভাবে জন্মের পর একেবারে মেরে ফেলাই ভালো ছিলো।❞
(সংগৃহীত)