মমিসিংগা Momishinga

মমিসিংগা Momishinga মমিসিংগা পেইজে আপনাকে স্বাগতম

লাইক, কমেন্ট, শেয়ার & ফলো করে পাশেই থাকুন।
(3)

14/10/2023

রুমের মধ্যে বাতি বন্ধ করে শুয়ে আছি। একটু পরে বড় ভাইয়া আমার রুমে এসে বললো,

- কি করিস মিরাজ?

- কিছু করি না ভাইয়া, কিছু বলবা?

- তোর চাকরির কি অবস্থা? যেখানে ইন্টারভিউ দিলি সেখান থেকে কিছু জানায়নি?

- না ভাইয়া।

- তোকে একটা কথা বলার জন্য এসেছি।

- বলো।

- আমার শাশুড়ী গ্রাম থেকে শহরে আসবেন কিছু দিনের জন্য বেড়াতে। সঙ্গে হয়তো আমার শশুড় ও আসতে পারে।

- আচ্ছা।

- তুই জানিস আমাদের এই একটা মাত্র ফ্ল্যাট। থাকার যে কি ব্যবস্থা করবো সেটা নিয়ে গতকাল রাত থেকে টেনশনে আছি।

- হুম, টেনশন করারই কথা।

- আমি একটা উপায় বের করতে পেরেছি।

- কি?

- তোর তো চাকরি হচ্ছে না। তাই বলছিলাম যে তুই যদি মাকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে কিছুদিন ঘুরে আসিস তাহলে দুটো রুম ফাঁকা হয়ে যাবে।

আমি ভাইয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। সে হয়তো পুরোপুরি চাইছে মাকে নিয়ে আমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাই। এর আগে ভাবির সঙ্গে এসব নিয়ে অনেক ঝগড়া করতে শুনেছি।

আমি বললাম,
- মা যদি রাজি হয় তাহলে আমার আপত্তি নেই।

- সেখানে তো সমস্যা, মা তো রাজি হচ্ছে না। সে গ্রামের বাড়িতে যেতে চায় না, বলে তার শরীর নাকি খুব অসুস্থ।

- হ্যাঁ এটা ঠিক, আমাকেও প্রতিদিন বলে তার শরীর ভালো নেই। বাবাকে নাকি প্রতি রাতে স্বপ্নে দেখেন, বারবার মৃত্যুর কথা বলে।

- অসুস্থ হলে এরকম সবারই হয়। মৃত্যু যদি আসে সেটা তো শহর গ্রাম সবজায়গা আসবে তাই না? তাছাড়া শহরের দূষিত খাদ্য আর আবহাওয়ার চেয়ে গ্রামে গেলে শরীর ভালো হতে পারে।

আমি কিছু বললাম না। কারণ আমি বুঝতে পারছি ভাইয়া যেভাবেই হোক মাকে বাসা থেকে গ্রামের বাড়িতে পাঠাবেই। আর সেই কাজটা সে আমাকে দিয়ে করতে চাইছে। কিন্তু মায়ের কথা মনে পড়লে আমারই খারাপ লাগে। দিন দিন মা বেশ অসুস্থ হয়ে গেছে, বিছানা থেকে এখন শুধু নামাজ পড়তে আর বাথরুমে যাবার জন্য ওঠে।

- বললাম, তুমি চিন্তা করো না। মাকে বুঝিয়ে বলে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাবার দায়িত্ব আমার।

- ধন্যবাদ ভাই, টাকাপয়সা যা লাগে আমার কাছ থেকে নিয়ে যাবি সমস্যা নেই। আর সেখানে গিয়ে টাকার দরকার হলে কল দিলেই হবে। মাত্র তো কয়েকটা দিন, তারপর আবার ফিরে আসবি।

- ঠিক আছে সমস্যা নেই।

ভাইয়া উঠে দরজা পর্যন্ত গেল। আমি পিছন থেকে ডাক দিয়ে বললাম,

- আমার কি মনে হয় জানো?

- ভাইয়া পিছনে ফিরে তাকিয়ে বললো, কি?

- আমার মনে হয় মাকে আর কোনদিন তোমাকে এই বাসাতে আসতে হবে না। এটাই হয়তো শহর থেকে তার শেষ বিদায়।

- তুই ও মায়ের মতো কথা বলিস কেন?

- আচ্ছা যাও তুমি।

|
|

মা বিছানায় শুয়ে আছে। আমি তার কাছে গিয়ে বিছানার পাশে বসলাম। মা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মা বললো,

- কিরে মন খারাপ নাকি?

- না মা, একটা কথা বলতে এসেছি।

- কি কথা?

- ভাইয়া তোমাকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যেতে বলেছে জানো?

- হ্যাঁ আমাকেও বলেছিল। কিন্তু আজকাল শুধু মনে হয় যেকোনো সময় মারা যাবো। তাই মৃত্যুর সময় নিজের বড় সন্তান বৌমা নাতি নাতনী কেউ কাছে থাকবে না এটা হয় নাকি? সেজন্য আমি রাজি হইনি।

- কিন্তু ভাইয়া তো আমাকে গিয়ে অনুরোধ করেছে তোমাকে নিয়ে যাবার জন্য।

- তুই বলিসনি কিছু?

- হ্যাঁ বলেছি যে আমি তোমাকে নিয়ে আজই গ্রামের বাড়িতে চলে যাবো।

- কেন বলেছিস?

- মা তুমি বোঝার চেষ্টা করো, ভাইয়া তোমাকে কিছুতেই রাখতে চাইছে না। হয়তো ভাবির সঙ্গে এ নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে তার। তোমার জন্য তোমার সন্তানের পরিবারে ঝামেলা হচ্ছে। তারা তোমাকে তাদের সংসারে বোঝা মনে করে।

- একটা কথা বলি মিরাজ?

- বলো মা।

- তোর ভাইয়া যখন বিয়ে করে তখন তো বললো বৌমা নাকি খুব ভালো মেয়ে। কিন্তু এখন সেই মেয়ে আমাকে সহ্য করতে পারে না কেন? আমার ছেলের বাসায় থাকি তাহলে সেখান থেকে আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছে কেন?

- এসব নিয়ে কষ্ট পেও না মা। তুমি যদি এখানে থাকো তাহলে এদের ঝামেলা দিন দিন বাড়বে। ভাবি তার উদ্দেশ্যে সফল হতে না পেরে আরও ঝামেলা বাড়াবে৷ তখন তুমিও কষ্ট পাবে। তারচেয়ে বরং তুমি আমার সঙ্গে চলো, আমি তো আছি মা। গ্রামের বাড়িতে বাবার কতো স্মৃতি। সেখানে গেলে তোমার মন ভালো হয়ে যাবে। বাবা একা একা আমাদের গ্রামের বাড়িতে কবরে ঘুমিয়ে আছে। তার কবরটা দেখতে পাবো।

- আমাকে কবে নিয়ে যাবি মিরাজ?

- আজকে বিকেলেই রওনা দেবো।

- ঠিক আছে তুই ব্যবস্থা কর।

|
|

গ্রামের বাড়িতে এসেছি বেশ কিছুদিন হলো। কিন্তু মায়ের অসুস্থতা দিন দিন বাড়ছে। প্রথম প্রথম সপ্তাহ খানিক ভালো ছিল কিন্তু তারপর হঠাৎ করে একদিন জ্বর হলো। সেই থেকে মা বিছানা ছেড়ে উঠতে পারে না।
আজকে সকালে আমাকে ডেকে বললেন,

- আমি মনে হয় খুব শীঘ্রই মারা যাবো বাবা।

- চুপ করো তো মা, সবসময় এরকম করো কেন?

- তোর ভাইকে একটু খবর দে না। মৃত্যুর আগে সবাইকে একসঙ্গে দেখতাম, ওরা সবাই যেন গ্রামে আসে। বলে দেখ না।

মায়ের বলার আগেই আমি গতকাল ভাইয়ার কাছে কল দিয়েছিলাম। কারণ মায়ের শরীর সত্যি খুব খারাপ। কিন্তু ভাইয়া বললেন তার অফিসে কাজ আছে অনেক। তাছাড়া সামনের সপ্তাহে নাকি তাদের বিবাহবার্ষিকী। তাই এরকম সময় ভাবি নাকি কিছুতেই রাজী হবে না।
কিন্তু এসব কথা মায়ের কাছে বলার কোনো মানে হয় না। অসুস্থ মানুষ মন খারাপ করে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে যাবে।

- বললাম, ঠিক আছে মা আমি ভাইয়ার কাছে আজই কল দিয়ে জানাবো।

- ঠিক আছে, আর আমার সঙ্গে একটু মোবাইলে কথা বলিয়ে দিস তো।

আমি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম। ভাইয়ার কাছে আবারও কল দিলাম। বারবার রিং বাজার পরও রিসিভ করছে না। আমি আবারও কল দিলাম,

- রিসিভ করে বিরক্ত গলায় বললো, বারবার কল দিচ্ছিস কেন? ব্যস্ত আছি তো।।

- ভাইয়া মায়ের অবস্থা ভালো না।

- হাসপাতালে নিয়ে যা, টাকা লাগলে সন্ধ্যা বেলা কল করিস৷

- মা হাসপাতালে যাবে না। তিনি তোমাকে সবাই কে বাড়িতে আসতে বলছেন।

- আমি গিয়ে কি করবো? আমি কি ডাক্তার?

- তুমি বড় সন্তান ভাইয়া, তোমার প্রতি মায়ের অনেক ভালোবাসা আছে। তোমাকে দেখে একটু শান্তি পেতে চায়।

- ঠিক আছে সময় নিয়ে আসবো, এখন রাখি।

আমি কল কেটে দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। ভাইয়া আর আসবে বলে মনে হয় না। আমিও সিদ্ধান্ত নিলাম যে আর কোনদিন ভাইয়াকে কল দিয়ে বিরক্ত করবো না।

|
|

১৫ দিন পর।
ভাইয়া কাজ করেছে, আমি তার অফিসে এসে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলাম। আমাকে দেখে তিনি বললেন,

- গ্রাম থেকে কবে আসলি?

- আজই এসেছি।

- মা কোথায়?

- গ্রামের বাড়িতে।

- অসুস্থ মাকে রেখে চলে এলি? তোর তো দায়িত্ব বলতে কিছু নেই মনে হচ্ছে।

- হাহাহা, তুমি আমাকে মায়ের দায়িত্বের কথা বলছো ভাইয়া? তুমি কতটুকু পালন করছো?

- তো কি? আমি পালন করিনি? তার খাবার টাকা কাপড়ের টাকা সব আমি দেইনি?

- এগুলো দিলেই দায়িত্ব শেষ?

- একটু পরে আমার একটা মিটিং আছে। তোর সাথে বাসায় গিয়ে কথা বলবো।

- আমি থাকতে আসিনি, একটু পরেই ট্রেনে করে চলে যাবো গ্রামের বাড়িতে।

- ওহ্ আচ্ছা।

আমি আমার পকেট থেকে দুটো সোনার চুড়ি বের করে বললাম,

- মৃত্যুর সময় মা এগুলো তোমার জন্য দিয়ে গেছে ভাইয়া। তোমার মেয়ের জন্য মায়ের উপহার।

ভাইয়া আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। মা মারা গেছে এই কথাটা বিশ্বাস করতে পারছে না।

- কি বললি? মা মারা গেছে?

- হ্যাঁ মারা গেছে, তোমাকে শেষ যেদিন আমি কল দিলাম তার চারদিন পরে মা মারা গেছে। কিন্তু তুমি এমনই দায়িত্বশীল সন্তান, মায়ের অসুস্থতার কথা শুনেও আর খবর নিলে না।

- আসলে এতো ব্যস্ততা যাচ্ছে যে।

- মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মানুষের ব্যস্ততা থাকে ভাই। আমরা দুনিয়ার পিছনে ছুটতে ছুটতে মৃত্যুর দার প্রান্তে গিয়ে উপস্থিত হই। তবুও আমাদের ব্যস্ততা কমে না, কিন্তু জীবন ফুরিয়ে যায়।

ভাইয়া মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি বললাম,

- গ্রামের বাড়িতে পাশের গ্রামের একটা স্কুলে ছোট্ট একটা চাকরি পেয়েছি। বাড়িতেই থাকবো আর সেখানে চাকরিটা করবো। অন্তত প্রতিদিন সকালে ফজরের নামাজ পড়ে মা-বাবার কবর জিয়ারত করতে পারবো।

ভাইয়া বসে আছে, আমি বের হবার জন্য পা বাড়ালাম। তারপর আব পিছনে ফিরে বললাম,

- তুমি কোনদিন গ্রামের বাড়িতে যেও না ভাই। গ্রামের বাড়িতে তোমার ভাগের যতটুকু জমি আছে সেই জমির দাম অনুযায়ী টাকা আমি তোমাকে দিয়ে দেবো। তবুও কোনদিন আমার মা-বাবার বাড়িতে যাবে না। কারণ তোমাকে যদি ওই গ্রামের মধ্যে দেখি তাহলে সেদিন হয় তুমি মরবে নাহয় আমি মরবো।

এ কথা বলে আমি বেরিয়ে গেলাম। রাস্তায় নেমে হাঁটতে লাগলাম। আমাকে এখনই গ্রামের বাড়িতে ফিরতে হবে। মা-বাবার কাছে।
পৃথিবীতে আল্লাহ রাসূলের পরে মা-বাবার স্থান। ছোট্ট জীবনে আমরা নিজেদের সম্মানিত করতে গিয়ে মা-বাবাকে লাঞ্ছিত করি। অথচ একবারও চিন্তা করি না যে এই মা-বাবা একদিন আমাকে সম্মানিত করার জন্য নিজেদের সকল সুখ নষ্ট করেছেন।

----- সমাপ্ত -----

গল্পঃ- ের_কথা।
কলমেঃ মোঃ আবীদ আবরার।

(কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।ধন্যবাদ)

#সংগৃহীত #মমিসিংগা

তুর্কি বংশোদ্ভূত জার্মান ফুটবলার করিম দেমিরবেকে মহিলা রেফারি লাল কার্ড দেখান। মাঠ থেকে বের হওয়ার সময় তিনি রাগের মাথায় বল...
11/10/2023

তুর্কি বংশোদ্ভূত জার্মান ফুটবলার করিম দেমিরবেকে মহিলা রেফারি লাল কার্ড দেখান। মাঠ থেকে বের হওয়ার সময় তিনি রাগের মাথায় বলেন, “মহিলাদের জায়গা আসলে রান্নাঘর।🤣🤣🤣
এক কান দুই কান করে খবরটা চলে যায় কর্তৃপক্ষের কানে। এবার তারা খেলা বাদ দিয়ে তাকে মহিলাদের ম্যাচে রেফারির দায়িত্ব পালন করতে বলে। তিনিও বাধ্য হলেন। ম্যাচ শেষে দেখা গেল আটজন লাল কার্ড খেয়ে বসে আছে। সবাই যখন এর কৈফিয়ত তলব করল, তিনি বললেন, “মহিলাদের জায়গা আসলে রান্নাঘর🤣🤣

©️ #মমিডিংগা

10/10/2023

যে নবী যে পেশায় ছিলেন
নবিদেরকে (আলাইহিমুস সালাম) তো আল্লাহ তাআলা দ্বীনের দাওয়াতের জিম্মাদারি দিয়ে পাঠিয়েছেন। কিন্তু তাঁদেরও জীবিকা ছিল। যেমন:
— আদম আ.-এর পেশা ছিল কৃষিকাজ

— নুহ, জাকারিয়া আ. ছিলেন কাঠমিস্ত্রী

— ইদরিস আ. ছিলেন দরজি

— ইবরাহিম আ. বস্ত্র ব্যবসায়ী

— দাউদ আ.-এর পেশা ছিল বর্ম তৈরি

— সুলাঈমান আ.-এর পেশা ছিল তালপাতার ঝুড়ি তৈরি

— ঈসা আ.-এর ছিল চরকায় সুতা কাটা
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমরা যা খাও তার মাঝে সর্বোত্তম হলো ওই খাবার, যা তোমরা নিজের হাতে উপার্জন করো। আমার ভাই দাউদ নিজের হাতে উপার্জন করে খেতেন।” (বুখারী, ৪/৩০৩)
দাউদ আলাইহিস সালামের কাজ ছিল, বর্ম তৈরি করা। কুরআনের মধ্যে কিন্তু এই আয়াতটা আছে, আল্লাহ তাআলা বলেছেন যে, দাউদের জন্য আমি লোহাকে নরম করে দিয়েছি। মানে, দাউদ আলাইহিস সালাম লোহায় হাত দিলেই তা আটার খামিরের মতো নরম হয়ে যেত। এক তো তিনি নবি ছিলেন, রাসুল ছিলেন আবার ইসরাইলের বাদশাহও ছিলেন, এবং তিনি লোহার বর্মও তৈরি করতেন। সেই পোশাক তৈরি করে তিনি নিজের জীবিকা নির্বাহ করতেন।
ঈসা আলাইহিস সালামের জীবিকা ছিল, চরকায় সুতা কাটা। ঈসা আলাইহিস সালামের মা, মারইয়াম আলাইহিস সালামের একটা চরকা ছিল, সুতা কাটার জন্য। পশুর লোম থেকে পশমি সুতা তৈরি করা। তো, এটাই ছিল তার জীবিকা উপার্জনের মাধ্যম। (কিতাবুল কাসব, ৭৫-৭৯)
তার মানে বোঝা গেল, নবিদেরকে—যারা আল্লাহর কাছে হাত পাতলেই পেয়ে যান; এই সমস্ত শ্রেষ্ঠ মানুষদেরকেও আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতে নিজের জীবিকা নিজে অর্জন করতে শিখিয়েছেন। এবং তারা তাদের যে মূল দায়িত্ব, অর্থাৎ, দাওয়াতের কাজের পাশাপাশি নিজের জীবিকা নিজেই উপার্জন করতেন।
ডা. শামসুল আরেফীন রচিত 'মুমিনের ক্যারিয়ার ভাবনা' বই থেকে
©️

10/10/2023

বাড়ি ভর্তি লোকের সামনে আমার স্বামী আমাকে থাপ্পড় মারলো।থাপ্পড় খেয়ে আমি যেনো থ হয়ে গেলাম।আমার অপরাধটা কোথায়?আমার শ্বশুর,শাশুড়ি আর স্বামী কথা বলছে আমি শুধু সেখানে গিয়ে দাঁড়িয়েছি।তখন ই শাশুড়ি চেঁচিয়ে বললো কী গো তোমার সব কাজকর্ম রেখে এইখানে দাঁড়িয়ে আছো কোন আক্কেলে?তোমাকে না কতবার বলেছি বাড়ির বউরা এইভাবে দাঁড়িয়ে কথা শোনতে নেই।
শাশুড়ির কথা শোনে আমি বললাম আম্মা আমার তো সব কাজ শেষ।ঘরে একা।তাই আপনাদের কাছে আসলাম।
আমার কথা শেষ হওয়ার আগে তিনি চিৎকার করে বললেন রেজওয়ান(আমার স্বামীর নাম)তোর বউয়ের সাহস দেখছিস।আমার মুখের ওপর কথা বলছে।
তখন আমি বললাম আম্মা আমি কী এমন বললাম যেই কারণে এত জোরে চেঁচাচ্ছেন।আমার কথা বলা শেষ হওয়ার আগে রেজওয়ান আমাকে থাপ্পড় মারে।রেজওয়ানের থাপ্পড় খেয়ে আমি অবাক।রেজওয়ান এই তুচ্ছ কারণে আমার গায়ে হাত তুলতে পারলো।যেখানে আমার কোনো দোষ ই নেই।

ইন্টার পাস করার পর বাবা-মা ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দেয়।কিন্তু আমার একটাই সিদ্ধান্ত আমি পড়বো।আর চাকরি করবো।আমি এইচএসসি তে ভালো রেজাল্ট করার পরও রেজওয়ানের পরিবার আমাকে অনার্সে ভর্তি হতে দেয় নি।অবশ্য রেজওয়ান ও চায় না আমি লেখাপড়া করি।রেজওয়ান আমাকে ডিগ্রি তে ভর্তি করিয়ে দেয়।আমি তাও কিছু বলি নাই।আমি জানি এখন আর কিছুতে ই কাজ হবে না।কিন্তু আমাকে ভালো করে পড়তে হবে।রং বদল করতেই হবে।তাই পড়াশোনায় মনযোগী ছিলাম।

-----একদিনের কথা আমি রেজওয়ানের সাথে বাহিরে যেতে চাইলাম।কিছু কেনাকাটা করার জন্য।কিন্তু শাশুড়ি এসে বললো বাড়ির বউয়েরা বাহিরে কেনো যাবে?আর তোমার শ্বশুরের সাথে কী কোনোদিন আমি বাহিরে গিয়েছিলাম?আমাদের কী দিন কাটে নি?এখনকার বউয়েরা ও পারে বটে।
সেইদিন শাশুড়ির কথা শোনে আমার বাহিরে যাওয়ার স্বাদ মিটে গেলো।সেইদিন খুব কেঁদেছি।কিন্তু মনকে শক্ত করে নিয়েছি।

ছয় বছর পর,,,,,,,
আজ আমি কলেজের প্রভাষক।আমাদের কলেজের অধ্যক্ষ মহোদয়-ই আমাকে চাকুরীটা দিয়েছেন।যদিও আমি ডিগ্রিতে পড়াশোনা করছি।কিন্তু আমার রেজাল্ট ছিলো কলেজের মধ্যে সেরা।তাই স্যার আমাকে চাকরীটা দিয়েছেন।শ্বশুর বাড়ির কেউ-ই আমাকে বাহিরে চাকরী করতে দিবেন নাহ এমনটা-ই ভেবেছিলো।কিন্তু আমার আব্বু আর আমার ভাইয়েরা আমাকে পুরোপুরি সাপোর্ট করেছিলো।আমার আব্বু সেদিন একটা কথা বলেছিলো "নিজের মান-সম্মান রক্ষার জন্যে মাঝে-মধ্যে নিজের পরিবারের বিপক্ষেও যেতে হয়।কিন্তু তুমি যখন সফল হবে সব ঠিক হয়ে যাবে।"
এখন শ্বশুর বাড়িতে আমার কত সুনাম,কত সম্মান।যেই শাশুড়ি এক সময় আমাকে কোনো কথা বলতে দিতো না।আজ তিনিই প্রত্যেকটা পরামর্শ করেন আমার সাথে।যিনি আমাকে বাড়ি থেকে বের হতে দিতেন না আজ তিনিই আমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন।
যেই স্বামী আমাকে পড়তে দিতে চাইতো না আজ সেই স্বামী তার বন্ধু-বান্ধবের কাছে আমার কথা কত ই না প্রশংসা করে।আর দিন শেষে আমাকে বলে তোমার কারণে আজকে আমাকে সকলে কত সম্মান করে।সত্যি তোমার কোনো তুলনা নেই।
আমি শুধু হাসি আর বলি দুনিয়াটা ভারি অদ্ভুত।তাই না!!

#অনুগল্প
#রং_বদল
©️
@ফলোয়ার #মমিসিংগা

10/10/2023

দশ বছর আগে বান্ধবীকে বলেছিলাম।

“ তোকে আমি বিয়ে করব। ”

বান্ধবী জবাবে বলেছিলো।
“ আয়নায় নিজের চেহারাটা দেখছিস কোনদিন? আমার মতো এত সুন্দরী একটা মেয়ে তোর মতো পাতিল কয়লা ছেলের সাথে সংসার করবে ভাবলি কীভাবে? ”

আজকে দশ বছর পর।
সুন্দরীটার বিয়ে হয়ে গেছে। দুটো মেয়েও আছে তাঁর। সেদিন ট্রেনে দেখা হয়েছিলো। তাঁদের দেখে বড়ই চমকে গিয়েছিলাম! কারণ তাঁর স্বামীসহ দুটো মেয়ে একেবারে আলকাতরার মতো কালো!
মেয়েদের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিলো। আমি নেমে যাওয়ার আগে তাঁকে বলে এসেছিলাম।

“ তোর একটা মেয়েকে আমি পুত্রবধূ করব। ”

বান্ধবী জবাবে বললো।
“ অপমান করছিস? কালো কী আল্লাহ্ বানায়নি? ”

“ না। বুঝাতে চেয়েছি কোনো মা'ই তাঁর গর্ভে ইচ্ছে করে কালো শিশু ধারণ করে না! ”

বান্ধবীর স্বামীর মহিমাকীর্তন করতে আমি ভুলিনি!
“ মেয়েদের বাবাটা অনেক সুন্দর রে। সত্যিই দারুণ একটা বর পেয়েছিস। ”
বান্ধবীর চোখমুখ লাল হয়ে গেলো। অপমানিত হলো মনে হয়। তবে আমি মন থেকেই বলেছিলাম। লোকটা খুবই সরল মনের। কত সুন্দর করে মেয়ে দুটোর সাথে মজা করছে। আগলে রাখছে। জবাব দিলো।
“ হ্যাঁ, সুন্দর। অনেক সুন্দর। তুই বিয়ে করিসনি? ”

আমি মুচকি হাসলাম। সে বুঝে গেলো আমি বিয়ে করে ফেলেছি। কলেজে থাকতে সে খুব বুদ্ধিমতীই ছিলো।
দাওয়াত দিলি না যে! নাকি পালিয়ে বিয়ে করছিস?
তার চোখে চোখ রেখে বললাম।

পালিয়ে না। আর আমি তোর জ্বলেপুড়ে মরে যাওয়া দেখতে চাইনি।সে এত অপরূপা।দেখে তুই একদম মরে যেতিস। মাথা ঘুরে পড়ে গেলে সেখানে একটা হৈহুল্যই পড়ে যেত না?

বান্ধবী বৌয়ের ছবি দেখতে চাইলো। আমি স্টেশনের কাছে এসে বললাম।
তোর রাতের ঘুমটা নষ্ট হয়ে যাক আমি চাই না! ”
বান্ধবী হাসলো। বয়স বেড়েছে। হাসির ঝলক কমেনি।

আমি যেমন তেমন মেয়েকে দেখে জ্বলব না। আচ্ছা দেখ ঐ মেয়েটার মতো তোর বৌ? সামনের সিটে শাড়ি পড়ে যে বসে আছে মেয়েটা? এত লম্বা লম্বা চুল আমি কমই দেখেছি! এমন হলে আমি ঠিকই জ্বলতাম!
এবার আমিও হাসলাম। কথার উত্তর দিলাম না।

সেই লম্বা চুলের মেয়েটার হাত ধরে ট্রেন থেকে নেমে গেলাম। বান্ধবী ট্রেনের জানালা দিয়ে আমার দিকে চেয়ে বললো।

অসভ্যগিরি ছাড়লি না। সুন্দরী মেয়ে দেখলেই হাত ধরতে মন চায়? আর এইযে আপু আপনিও কিছু বলছেন না যে?
মেয়েটা লজ্জা পেয়ে গেলো। গালগোল লাল হয়ে গেছে। চোখদুটো নিচু করে বললো।

“ বর হাত ধরবে না তো কে ধরবে আপু? ”
বান্ধবী জানালাটা টেনে দিলো কেন বুঝলাম না"
সমাপ্ত

#অণুগল্প

©️ #মমিসিংগা

09/10/2023

জহির মনমরা হয়ে বসে আছে। আমার সন্দেহ হলো তার মারাত্মক কিছু হয়েছে। কিছুদিন ধরে খেয়াল করছি সে একা একা থাকতে চায়, মাঝে মধ্যে মুচকি মুচকি হাসে। আগে আমার সাথে আঠার মতো লেগে থাকতো। কিন্তু সপ্তাহখানেক ধরে সে প্রায় অদৃশ্য, কদাচিৎ তার দেখা পাওয়া যায়। রবীন্দ্রনাথ বোধহয় জহিরের মতো কারো জন্যই লিখেছিলেন, " মাঝে মাঝে তব দেখা পাই চিরদিন কেন পাই না?"
আমি জহিরকে জিজ্ঞেস করলাম, " হে বন্ধু , কিতা হইয়াছে? বলো, আমাকে বলো। শুনিয়া তোমার হৃদয়ের ব্যাথা দূর করিতে দাও আমায়!"

জহির চোখ গরম করে বললো, " দেখ ভাই, আমি ফাইজলামির মুডে নাই। এইসব ফাইজলামি বন্ধ কর।"

আমি বললাম, "তাইলে কি হইছে আমারে বল!"
জহির অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল, "বলা যাবে না।"

আমি হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নই। বহুক্ষণ পীড়াপীড়ি করার পর জহির বললো, "একটা মেয়ের সাথে কথা হইতো ফেসবুকে। ঐটা নিয়াই মন খারাপ!"

আমি জিজ্ঞেস করলাম, "কথা বলা নিয়ে মন খারাপ কেন? কি হইছে? ঝগড়া?"
জহির অশ্রুসিক্ত নয়নে বললো, "নারে ভাই। কথা বললাম এতো দিন এনজেল ফারিহার সাথে। আজকে সকালে উঠে দেখি আইডির নাম হয়ে গেছে এমডি আবুল সরকার, সাথে এক চ্যাংড়া ছেলের ছবি দেয়া!"

আমি জহিরকে সান্তনা দেয়ার মতো ভাষা খুঁজে পেলাম না। এরকম হৃদয় বিদারক ঘটনা শুনে আমারও চোখে পানি এসে গেল!

রম্য: বিবর্তন!
লেখক: শেখ জায়েদ হোসেন!
©️ #মমিসিংগা

09/10/2023

আব্বা আমার উপর ক্ষ্যাপা। পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হয়েছে। অনেক সময় বকাঝকার পর আব্বা ফিনিশিং দিলেন," শোন , তোর মতো গাধা আমি আমার জীবনে দেখি নাই। যদি বুদ্ধি কিনতে পাওয়া যাইতো, তাহলে হয়তো একটু বুদ্ধি কিনে তোর বুদ্ধি বাড়ানো যাইতো আর পরীক্ষার ফলাফল ভালো করতি।"

আমি তখন আব্বাকে জিজ্ঞেস করলাম, " আব্বা, চাকরিজীবী কাকে বলে?"
" যে চাকরির টাকায় জীবন চালায়!"
" কৃষিজীবী কাকে বলে?"
" যে কৃষি কাজ করে টাকা উপার্জন করে জীবন চালায়!"
" ঠিক বলছ আব্বা। তাইলে যে বুদ্ধিজীবী, সে বুদ্ধি বিক্রি করে ঐ টাকায় জীবন চালায়। এখন কোনো একজন বুদ্ধিজীবীর কাছ থেকে আমাকে একটু বুদ্ধি কিনে দিলেই তো হয়!"

আমার বুদ্ধি শুনে আব্বা আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন। এখন আমি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছি আর বুদ্ধিজীবী খুজতেছি। আচ্ছা, আমার বুদ্ধিটা কি খারাপ ছিল? আপনারাই বলেন!

রম্য: বুদ্ধিজীবীর সন্ধানে।
লেখা: ভাই সাহেব। [শেখ জায়েদ হোসেন ]
©️ #মমিসিংগা

09/10/2023

এক ভিক্ষুককে সেইদিন দেখলাম রাস্তার পাশে একটা বাটি নিয়ে বসেছিল। আজকে দেখি বাটি দুইটা। জিজ্ঞেস করলাম, "চাচা মিয়া, সেইদিন দেখলাম বাটি একটা। আজকে দুইটা কেন?"

চাচা মিয়া বললেন, " বাবা, আপনেগো দোয়ায় ব্যাবসা বানিজ্য ভালোই চলতেছে, তাই আরেকটা ব্রাঞ্চ খুললাম!"

©️
#মমিসিংগা @ফলোয়ার

09/10/2023

মা আমার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখছেন। মেয়ে শিক্ষিত হওয়া চলবে না কারণ শিক্ষিত মেয়েদের পেটে অনেক প্যাচ থাকে যার ফলে সংসারে অশান্তি হয়। তাই মেয়ে এসএসসি ফেল হলেও চলবে কিন্তু ইন্টার পাশ হওয়া চলবে না।
বড়লোক পরিবারের মেয়ে হলে চলবে না কারণ বড় লোকের মেয়েরা সংসারের কোন কাজকর্ম করে না। তাছাড়া বিয়ের পর এইসব বড়লোকের মেয়েরা শ্বাশুড়ির কাঁধে পা তুলে খায় তাই মেয়ে হতে হবে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের।
মেয়ে খুব বেশি সুন্দরী হওয়া চলবে না কারণ সুন্দরী মেয়েরা স্বামীকে রূপের জাদুতে বশ করে ফেলে। যার ফলে ছেলে শুধু বউয়ের কথায় উঠে-বসে আর মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয়।

এইসব থিওরি মা আমাকে ২ঘন্টা ধরে বুঝালেন। মা'র এইসব কথা শুনে প্রচন্ডরকম মাথা ব্যথা শুরু হয়ে গেলো। আমি নিজের মাথার চুল নিজে টানতে টানতে বললাম,
--মা, তুমি যে মেয়েকে বিয়ে করতে বলবে আমি চোখ বন্ধ করে সেই মেয়েকেই বিয়ে করবো। এখন মা আমি ঘুমাতে গেলাম সকালে আমার অফিস আছে
মা মুচিকে হেসে আমায় বললো,
-আচ্ছা যা তাহলে

ঘুমে যখন চোখটা লেগে আসছে তখনি আমার ফোনের স্ক্রিনের আলোটা জ্বলে উঠলো। ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখি রফিক ভাইয়ের নাম ভাসছে। আমি ঘুম ঘুম চোখে ফোনটা রিসিভ করে কথা বলতে লাগলাম...
|
|

পরদিন সকালে আমি একমনে খবরের কাগজ পড়ছি আর নাস্তা করছি। হঠাৎ আমি একটা খবর দেখে চিৎকার করে বললাম, সর্বনাশ!
আমার চিৎকার শুনে মা রান্নাঘর থেকে দৌড়ে এসে বললো,
- কি হয়েছে?
আমি মাকে বললাম,
-- পুত্রবধূর ভুল-ভাল ঔষধ খাওয়ানোর ফলে শ্বাশুড়ির মৃত্যু
মা পাশের চেয়ারে বসতে বসতে অবাক হয়ে বললো,
- মানে!
আমি তখন নিউজটা পড়তে শুরু করলাম,
-- নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কান্দিউড়া গ্রামের সালমা বেগম তার একমাত্র ছেলেকে পাশের গ্রামের হাসেম বেপারির মেজো কন্যার সাথে বিয়ে করান। গতকাল দুপুরে সালমা বেগম হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেলে ছেলের বউ উনাকে নিয়ে হাসপাতালে যান। হাসপাতালে চিকিৎসারত ডাক্তার কিছু ঔষধ দিয়ে সালমার পুত্রবধূকে বললেন, সঠিক ভাবে নিয়মিত ঔষধ গুলো খাওয়াতে। পুত্রবধূ কম শিক্ষিত থাকার কারণে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনের লেখা বুঝতে না পেরে শ্বাশুড়িকে ভূল-ভাল ঔষধ খাওয়ান। যার ফলে শ্বাশুড়ির মৃত্যু হয়

মা অবাক হয়ে বললো,
- ছেলে কোথায় ছিলো?
আমি তখন বললাম,
-- হয়তো বাহিরে ছিলো। পুরুষ মানুষতো আর সারাক্ষণ বাসায় থাকে না
আমার কথা শুনে মা কপালে হাত দিয়ে কি যেন ভাবতে লাগলেন। আমি তখন বললাম,
-- মা আমি আসি। আমার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে। আর পত্রিকাটা নিয়ে যায়। আমার অফিসের কলিগ রফিক ভাইকে খবরটা দেখাতে হবে...

সন্ধ্যায় অফিস থেকে বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে বিশ্রাম নিচ্ছি। এমন সময় মা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
- মেয়ে শিক্ষিত হলে সমস্যা নেই। সব শিক্ষিত মেয়েতো আর খারাপ না। তাছাড়া মা শিক্ষিত নাহলে ছেলে মেয়ে মানুষ করতে পারবে না। আমি তোর জন্য শিক্ষিত নিন্ম-মধ্যবিত্ত শ্যামলা একটা মেয়ে খুঁজে বের করবো।
আমি মুচকি হেসে বললাম,
-- ঠিক আছে মা। আমি তোমার পছন্দের মেয়েকেই বিয়ে করবো
তখন মা বিড়বিড় করে বললো,
- মেয়ে ইংলিশে অনার্স করলে ভালো হয়। তাহলে ডাক্তারের লেখা সহজে বুঝতে পারবে
আমি তখন বললাম,
-- বিড়বিড় করে কি বলছো মা?
মা বললো,
- না কিছু না..
|
|

পরদিন সকালে নাস্তা করার সময় পত্রিকা দেখে আবার চিৎকার করে বললাম,
-- সর্বনাশ!
হাত থেকে চায়ের কাপটা ফেলে দিয়ে মা বললো,
- কি হয়ছে?
আমি বললাম,
-- টাকার অভাবে মার চোখের সামনে একমাত্র ছেলের মৃত্যু
মা অবাক হয়ে বললো
- মানে!
আমি পত্রিকা পড়া শুরু করলাম,
-- ময়মনসিংহ সদরের বাসিন্দা রোকসানা আক্তার স্বামী মারা যাবার পর ব্যাংকের সমস্ত টাকা খরচ করে ছেলেকে মানুষ করেন। ছেলে চাকরি পাবার কয়েকমাস পর একটা নিম্ন পরিবারে ছেলেকে বিয়ে করান। বিয়ের কিছুদিন পর রোকসানা আক্তার জানতে পারেন ছেলের ব্রেইন টিউমার হয়েছে। আর চিকিৎসার জন্য ১৪লাখ টাকা লাগবে। রোকসানা আক্তারের কাছে শুধু ২ লাখ টাকা ছিলো। আর ছেলের শ্বশুরবাড়ির লোক গরীব ছিলো তাই মাত্র ৫০ হাজার টাকা দিতে পেরেছিলো। সময় মত রোকসানা আক্তার টাকা জোগাড় করতে না পারায় চোখের সামনে ছেলের মৃত্যু হলো
মা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। আর আমি ঠান্ডা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললাম,
-- মা আমি আসি। অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে। আর খবরের কাগজটা নিয়ে গেলাম। রফিক ভাইকে এই সাংঘাতিক খবরটা দেখাতে হবে...

রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছি। এমন সময় মা পাশে বসে বললো,
-তোকে আমি উচ্চ বংশীয় পরিবারে বিয়ে করাবো। আমার একমাত্র ছেলেকে কোনো ফকিন্নি পরিবারে বিয়ে করাতে পারবো না
আমি অবাক হয়ে মাকে বললাম,
-- তুমি না বললে বড়লোকের মেয়েরা কোনো কাজ করে না তাছাড়া কোনো রান্না-বান্নাও পারে না
মা কিছুটা রেগে বললো,
- কাজ না করলে কাজের মেয়ে কাজ করবে আর রান্না না পারলে আমি শিখিয়ে দিবো
তারপর মা বিড়বিড় করে বললো,
- কোন বিপদ আপন হলে হাতের তুড়িতে যেন ১০-১২ লাখ টাকা দিতে পারে এমন পরিবারে তোকে বিয়ে করাবো

আমি মার কাঁধে হাত দিয়ে বললাম,
-- বিড়বিড় করে কি বলছো মা?
মা কিছু না বলে আনমনে চুপচাপ চলে গেলো...
|
|
পরদিন সকালে আবার খবরে কাগজ দেখে চিৎকার করে উঠলাম। মা চমকে গিয়ে পাশে থাকা গ্লাসের সবটুকু পানি খেয়ে আমায় বললো,
- আজকের খবরে আবার কি লিখেছে?
আমি নিউজটা একদমে পড়তে লাগলাম,
-- ঢাকার উত্তরাতে বসবাস করা শাহানাজ পারভিন তার একমাত্র ছেলেকে বিয়ে করান অসুন্দরী এক মেয়েকে। বিয়ের পর থেকেই ছেলে তার বউকে সহ্য করতে পারতো না। আস্তে আস্তে সেই ছেলে পাশের ফ্ল্যাটের সুন্দরী ভাবী নাবিলার সাথে পরকীয়া শুরু করে দেয়। পরে যখন বিষয়টা নাবিলার স্বামী রাশেদ জানতে পারে তখন রাশেদ নাবিলা আর শাহানাজ পারভিনের ছেলে রায়হানকে জবাই করে মেরে ফেলে

এমন সময় মা আমার হাত ধরে বললো,
- থাক বাবা, আর পড়তে হবে না। তোকে আমি পাশের ফ্ল্যাটের সজিবের বউয়ের চেয়েও সুন্দরী মেয়ের সাথে বিয়ে করাবো
আমি অবাক হয়ে বললাম,
-- কিন্তু মা!
মা রাগী চোখে বললো,
- কোন কিন্তু না। আমি এমন একটা বউ চাই যার রূপের আলোতে আমার ঘর আলো হয়ে থাকবে
আমি পত্রিকাটা ব্যাগে ঢুকিয়ে মাকে বললাম,
-- মা আমি যায়। আমার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে। আর এই গুরুত্বপূর্ণ সংবাদটা রফিক ভাইকে দেখাতে হবে...
---
-----

রিকশায় বসে থেকে রফিক ভাইকে ডেকে বললাম,
-- ভার্সিটিতে যাবেন বুঝি? আসেন আপনাকে ভার্সিটি নামিয়ে দেই। তা আপনার বাবার কালো মুড়ির টিনটা হাসপাতালে ভর্তি নাকি?
রিকশায় বসে শ্রাবণী রাগে লাল হয়ে বললো,
- আরেক বার রফিক ভাই বলে ডাকলে ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে দিবো। আর শুনো আর যদি কখনো আমাদের গাড়িটাকে মুড়ির টিন বলেছো তাহলে তোমার খবর আছে। আমার বাবা চাইলে এই মুহুর্তে তিনটা গাড়ি কিনতে পারে কিন্তু এই গাড়িটা দাদার স্মৃতি বলে বাবা গাড়িটা পাল্টায় না
আমি মুচকি হেসে বললাম,
-- কচু কিনবে নতুন গাড়ি। কিপটা বলে কথা
শ্রাবণী আরো রেগে গিয়ে বললো,
- একদম আমার বাবাকে কিপটা বলবে না। তুমি কি? তুমি একনাম্বারের মিথ্যাবাদী। প্রতিদিন সকালে নিজের মাকে উল্টো পাল্টা খবর শুনাও। আর ৪ বছর ধরে প্রেম করো অথচ এখনো মায়ের ভয়ে নিজের প্রমিকার নাম রফিক ভাই লিখে সেইভ করে রাখো

শ্রাবণীর কথা শুনে আমি মন খারাপ করে বললাম,
-- একেই বলে, যার জন্য চুরি করি সেই বলে চোর..

শ্রাবণী আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
- কালকের খবরের কাগজে কি লিখা থাকবে?
আমি ওর হাতটা শক্ত করে ধরে বললাম,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংলিশে অনার্স করছে তৃতীয় বর্ষের ছাত্রীর জন্য সুযোগ্য পাত্র চাই

আজকের_খবর
©

#মমিসিংগা

09/10/2023

বাসায় ঢুকেই দেখি ছোটো ভাইয়ের দুই চোখ লাল। দিলাম এক থাপ্পড়। এত ছোটো বয়সে চোখ লাল কেন!! কাদের সাথে মিশে আজকাল সে। রাগে দুঃখে দিলাম আরেক থাপ্পড়। বে'য়া'দব কোথাকার। ছিঃ তোমার লজ্জা করে না। এই বয়সে তুমি চোখ লাল করে বাসায় আসছ। এই বাসায় কি মাথা মুরুব্বি কেউ নাই!!!

আমাকে দেখো, দুই দুইটা গার্লফ্রেন্ড বিয়ের কথা বলে ধোঁকা দিয়ে তারা আমেরিকা আর ইংল্যান্ড প্রবাসী। কই আমি কি চোখ লাল করে বাসায় আসছি কখনো! আজকাল মেয়েরাও ফেসবুকে মেসেজ দিলে মেসেজ সীন করেনা। কই আমিতো চোখ লাল করিনাই কখনো। আর তুমি এই বয়সে। ছিঃ আমার লজ্জা লাগতেছে।

আমার চিল্লাচিল্লিতে আব্বা তার রুম থেকে এসে বললেন, এত চিল্লাচিল্লি কিসের? আব্বাকে বলতে যাবো এমন সময় দেখি আব্বারও চোখ লাল। আব্বা আপনিও!!! এই বয়সে আপনি এইটা করতে পারলেন আব্বা! আপনিও বাসায় চোখ লাল করে আসছেন। কোথায় আপনি ছোটো ছেলেকে শাসন করবেন। উল্টা আপনিও!! বড়দের দেখেই তো ছোটোরা শিখে। ঠাস করে একটা থাপ্পড় খাইলাম গালে।

আব্বা বললেন, তিনি চোখ লাল করে আসেন নাই। তার নাকি চোখ উঠছে। ছোটো ভাইয়ের ও সেম অবস্থা। ছোটো ভাইরে আরেকটা থাপ্পড় দিতে ইচ্ছে করতেছিল। বেয়াদব তুই আগে বলবিনা তোর চোখ উঠছে। 😒

গাল ডলতে ডলতে রুমে ঢুকলাম। নতুন একটা মেয়েকে 'আসসালামু আলাইকুম" লিখে মেসেজ দিয়েছিলাম বাসে। এখনো সীন করেনি মেয়েটা। দেশটা ইহুদি বিধর্মী দিয়ে ভরে যাচ্ছে। সালাম দিলে উত্তর দেয়না।


#অনুগল্প
কথায়- শামীম আহমেদ
#©️ #মমিসিংগা

09/10/2023

- হ্যালো!
- হ্যাঁ বলো। বলছি, তোমার কি আসতে দেরী হবে?
- না, গিন্নী! এই তো রাস্তায়! কেন? মিস করছ?
- ঢ'ঙ্! বলছি, আসার সময় বিরিয়ানি এনো দু'প্যাকেট।

- গিন্নী, তুমি তো জানো মাসের শেষে কতটা টানাটানি থাকে! এইসময় বিরিয়ানি?!

- না মানে, শাশুড়িমা আসলে শ্বশুরমশাইকে বলছিলেন ওনার একটু বিরিয়ানি খেতে ইচ্ছে হয়েছে। আমায় কিছু বলেন নি, আমি সন্ধ্যেবাতি দিতে গিয়ে শুনে ফেলেছি। সত্যিই তো মানুষ দুটো কোনোদিন মুখ ফুটে কিচ্ছু বলে না। তুমি নিয়ে এসো বিরিয়ানি, প্লিজ!

- সবাই তো বুঝলাম। কিন্তু…

- কোনো কিন্তু নয়, তুমি নিয়ে এসো। মাসের বাকি কটা দিন আমি সামলে নেব। আমাদের জন্য এনো না। আমাদের জন্য রুটি আর আলুমরিচ বানাচ্ছি।

- বাবা মা টের পাবে না তো যে আমরা রুটি খাচ্ছি?! টের পেলে ওদের বিরিয়ানি খাওয়ার আনন্দটাই বিস্বাদ হয়ে যাবে গো।

- না গো, বাবা মা তো সাড়ে ন'টার মধ্যে খেয়ে শুয়ে পড়ে। আমরা তো দশটায় খাই। অসুবিধা হবে না। একবার ভাবো তো, তোমার ছোটবেলায় মাসের শেষে যখন এমন টানাটানি হত, তখন তুমি কিছু চাইলে মা, বাবা হাজার ক*ষ্ট করেও, নিজেরা না খেয়ে হলেও সেই শখপূরণের চেষ্টা করত। আজ সেই দায়িত্ব আমাদের!

- এটা বেশ বললে! সত্যিই তো। এমনটা তো ভাবি নি। শোনো, তুমি তোমার মা'কে মানে আমার শাশুড়িকে ফোন করে দাও তো! ও বাড়িতে দুটো পার্সেল যাবে। যেন রিসিভ করে নেয়। পেমেন্ট করা থাকবে।

- ও বাড়িতে? কিসের পার্সেল?

- বিরিয়ানির। দুটো বিরিয়ানি নিচ্ছি আমার বাবা মায়ের জন্য, আর দুটো বিরিয়ানি অনলাইনে অর্ডার করে দিচ্ছি তোমার বাবা মায়ের জন্য!

- এই না না। মানে ও বাড়ির জন্য…. আসলে…

- শোনো গিন্নী, তুমি আমার বাবা মা'কে যেমন করে আগলে রেখেছ, ভালোবেসেছ, আমিও ঠিক তেমনি করেই তোমার বাবা মা'কে আগলে রাখার চেষ্টা করব। বুঝেছ?

- বুঝেছি!

- আলু মরিচটা বেশ জমিয়ে বানাও, গিন্নী। আসছি।

- এসো, তাড়াতাড়ি।

ায়িত্ব

#অনুগল্প #সংগৃহীত #মমিসিংগা

09/10/2023

"কী হয়েছে রবিন?"

আজ সুইটির বাবার সাথে দেখা। একটা দশ বছরের মেয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমি ভেবেছিলাম সুইটির ছোটো বোন হবে।

আমি সামনে গিয়ে সালাম দিলাম, "আংকেল কেমন আছেন? "

উনি আমাকে চিনতে পারল না। চেনার কথাও না! আমি বললাম, "আমি সুইটির ক্লাসমেট। "

"আমাকে আংকেল ডাকছেন কেন!"

"আপনি সুইটির বাবা না?"

বিরক্ত হয়ে বললেন, "সুইটি আমার স্ত্রী। এটা সুইটির মেয়ে!"

ভাই আমি দ্রুত পালিয়ে এসেছি। পরে খবর নিয়ে জানলাম উনি সুইটির দ্বিতীয় হাসবেন্ড!

😲😲😵

#সংগৃহীত #মমিসিংগা

08/10/2023

ঘটক বলেছিলো আমার বড় বোনকে দেখতে ছেলে আর ছেলের বাবা মা আসবে শুধু। আমরা সেই হিসাবেই আয়োজন করেছিলাম। পরে দেখি ছেলের সাথে ছেলের চৌদ্দগুষ্ঠিও হাজির। লোক আসার কথা ছিলো ৩ জন অথচ আসলো ১৫জন। সাথে তো বাচ্চারা আছেই। বাবা আমায় আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে ১২ হাজার টাকা হাতে দিয়ে বললো,
- “পিয়াস, তাড়াতাড়ি বাজারে যা। গরুর মাংস, মুরগীর মাংস, যা যা লাগে সব কিনে নিয়ে আয়।

আমি আমার এক বন্ধুকে সাথে নিয়ে তাড়াতাড়ি বাজারে গেলাম। সবকিছু কিনলাম শুধু গরুর মাংসটা কিনা হলো না। একে তো বৃষ্টি তার উপর গ্রামের ছোট একটা বাজার। গরুর মাংস সব সময় পাওয়া যায় না। বাবাকে যখন ফোনে বললাম, বাজারে কোথাও গরুর মাংস পেলাম না তখন বাবা বললো, “যেভাবে পারিস গরুর মাংসের ব্যবস্থা কর। তা নাহলে আমার ইজ্জত থাকবে না”

বাইক ভাড়া করে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে গেলাম থানার বড় বাজারে গরুর মাংস কিনতে। গরুর মাংস কিনে বাসায় আসতে আসতে একটু দেরি হয়ে গেলো। বাবা আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-“ দেরি করলি কেন? এতো অল্প সময়ে এই গুলো রান্না করবে কিভাবে?”
এই বৃষ্টির দিনেও বাবা ঘামছেন। চোখে মুখে বাবার ভয়ের ছাপ স্পট বুঝা যাচ্ছে। আমার মাস্টার বাবাকে এতোটা আসহায় আগে দেখি নি
আমি বললাম,
-আপনি চিন্তা করবেন না। সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে। আপনি উনাদের সাথে গিয়ে বসে কথা বলুন।

মাকে রান্নার কাজে সাহায্য করার জন্য আমার বড় বোন যখন রান্নাঘরে ঢুকলো তখন আমার মা বড় বোনকে বাঁধা দিয়ে বললো,
- “তুই কেন রান্নাঘরে আসলি? যা যা তুই রুমে যা। রুমে গিয়ে তৈরি হ”
বড় আপু বললো,
- “মা তুমি পারবে না একা হাতে এতোকিছু সামাল দিতে। আমি একটু সাহায্য করি?”
মা বললো,
- “আমি পারবো একা সামাল দিতে। তুই তৈরি হয়ে থাক। ওরা কখন না কখন মেয়ে দেখতে চাইবে”

আমি ছেলে মানুষ রান্নার এতো কিছু বুঝি না। তবে এটা ওটা কেটে দিয়ে মাকে যতটুকু পারি সাহায্য করার চেষ্টা করছিলাম। কেউ চায়ে চিনি খায় না, কারো বা চায়ে চিনি কম হয়ে গেছে। কেউ সিগারেট খাবে তাকে সাথে নিয়ে সেইভ জায়গায় যাওয়া। সাথে আসা বাচ্চাদের দেখা শুনা করা এইসব করে করে আমার ছোটভাইটাও দেখি ক্লান্ত হয়ে গেছে।

৫মিনিট পর পর বাবা রান্নাঘরে এসে মাকে বলে, “কি গো রান্না কত দূর হলো?”
কপালে জমে থাকা ঘামটা মা আঁচল দিয়ে মুছতে মুছতে বলে, “এইতো হয়ে গেছে আরেকটু”

রান্না হয়ে গেলে খাওয়ার পর্ব শুধু। আমি আর বাবা নিজ হাতে সবাইকে খাওয়াচ্ছিলাম। বাবা বারবার বিনয়ের সহিত বলছিলো, “ জানি না রান্না কেমন হয়েছে। কোন ভুল ক্রটি হলে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন?”

উনাদের খাবার খাওয়ার স্টাইল দেখে মনে হচ্ছিলো উনারা তিন বেলায় ফাইভ স্টার হোটেলে কাটা চামচ দিয়ে খাবার খান। এইখানে হাত দিয়ে খাবার খেতে হচ্ছে বলে উনারা কিছুটা বিরক্ত। উনারা যত খাবার খেয়েছে তার চেয়ে বেশি নষ্ট করেছে।
বাচ্চা খাচ্ছে না বলে বাচ্চার মা ধমক দিয়ে বলে, “ এই তুমি খাচ্ছো না কেন? এই নাও মাংস”
বাচ্চা বলে, “আমি খাবো না”
বাচ্চার মা বলে, “ তোমাকে খেতেই হবে এই নাও মাংস” এইবলে বাচ্চার প্লেটে পুরো বাটিই ঢেলে দেয়।

খাওয়ার পর্ব শেষে মেয়ে দেখানোর পর্ব শুধু। আমার অনার্স পাস করা বোনকে দিয়ে সুরা ফাতিহা বলানো থেকে শুধু করে হাতের লেখা দেখানো সব কিছু শেষ হলে পাত্রের মা আমার বাবাকে বললো,
“আসলে মেয়ে আমাদের পছন্দ হয় নি। আমরা আমাদের ছেলের জন্য একটা সুন্দরী মেয়ে খুজছিলাম।”
পাত্রের বড় বোন বললো, “ মেয়ে দেখছি কিছুটা খাটো তাছাড়া মেয়ের বয়সটাও একটু বেশি”

কথাগুলো শুনে আমার বড়বোন মাথা নিচু করে নিরবে চোখের জল ফেলছিলো। কেন জানি আমার আর সহ্য হচ্ছিলো না। আমি তাদের বললাম,
-কেন, আপনারা কি জনতেন না আমার বোন শ্যামলা। আমি তো ঘটককে আমার বোনের ইডিট ছাড়া ছবি দিয়েছিলাম। তাছাড়া আপনারা কি জানতেন না আমার বোনের উচ্চতা ৫ফুট ২ ইঞ্চি আর আমার বোন অনার্স পাশ করেছে? আমি তো সবি ঘটককে বলেছি আগে থেকেই

পাত্রের দুলাভাই আমতা আমতা করে বললো,
- “হ্যাঁ সবি জানতাম। তারপরেও এসেছিলাম সামনাসামনি একবার মেয়েকে দেখতে”

দাঁতের সাথে দাঁত চেপে রেখে নিজের রাগটা কন্ট্রোল করে আমি বললাম,
-সামনা-সামনি দেখলে কি হতো? আমার বোন তো আর শ্যামলা থেকে ফর্সা হয়ে যেতো না। তার উচ্চতাও বেড়ে যেতো না কিংবা তার বয়সও কমে যেতো না। তাহলে শুধু শুধু আপনারা এতো কষ্ট করে আসতে গেলেন কেন?

পাত্রের বড় বোন কিছুটা রেগে বললো,
“ আমরা মেয়ে দেখতে এসেছি বলে দোষ করে ফেলেছি নাকি?”
আমি বললাম,
-না আপনারা কোন দোষ করেন নি। ৩জনের জায়গায় ১৫জন এসেছেন এতে আপনাদের দোষ হয় নি, খাবার খাওয়ার চেয়ে নষ্ট করেছেন বেশি এতেও আপনাদের দোষ হয় নি। আপনারা ছেলের জন্য ফর্সা, লম্বা, কম বয়সী মেয়ে খুজছেন। যার কোনটাই আমার বোনের মাঝে নাই। সেটা জানার পরেও আপনারা এইখানে চলে এসেছেন এতে আপনাদের দোষ হয় নি। দোষ তো করেছে আমার বাপ মা। উনারা কেন মেয়ে জন্ম দিলো। দোষ করেছে আমার বোন। কেন সে আপনাদের অপমান নিরবে সহ্য করলো। দোষ তো করেছি আমি। কেন এখনো পায়ের জুতা গুলো হাতে তুলে নেই নাই…

আমার কথা শুনে বাবা আমার গালে থাপ্পড় মেরে আমাকে থামিয়ে দিয়ে উনাদের কাছে মাফ চাইলো। সবাই চলে গেলে বাবা আমার কাছে এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, “ যেদিন নিজে মেয়ের বাবা হবি সেদিন বুঝবি মেয়ের বাবাদের কত কি সহ্য করে নিরব থাকতে হয়”

রাতে আপুর রুমে গিয়ে দেখি আপু এখনো কান্না করছে।১৫ মানুষের সামনে যখন রিজেক্ট শব্দটা শুনতে হয় তখন অপমানে চোখে জল আসবেই। ছোট ভাইটা ক্লান্ত শরীর নিয়ে শুধু ডাল মেখে ভাত খাচ্ছে অথচ কিছুক্ষণ আগেও রোস্ট, গরুর মাংস, মাছ ভাজা সব এইবাসায় রান্না হয়েছে। নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি বৃষ্টিতে ভেজা টিশার্টটা শরীরেই শুকিয়ে গেছে।

আমাদের সমাজে কিছু কিছু মানুষ এখনো দববল নিয়ে মেয়ে দেখতে যায়। তারপর কব্জি ডুবিয়ে খেয়ে, মেয়ে পছন্দ হয় নি বলে, বুক ফুলিয়ে চলে আসে। অথচ একটা বার ভেবে দেখে না ১০জনের সামনে যে মেয়েটাকে রিজেক্ট করা হলো সে মেয়েটা কতটা কষ্ট পেতে পারে। ২জনের কথা বলে ১০জন গিয়ে যখন হাজির হলো তখন মেয়ের পরিবারের মানুষজন কতটা বিব্রতকর পরিস্থিতে পড়তে পারে।

বিয়ের কথাবার্তা চলাকালীন মেয়েকে আলাতাভাবে আপনি নিজে একবার দেখুন। যদি মেয়েকে দেখে আপনার পছন্দ হয় তাহলে বাবা-মা আর সাথে দুই একজন মুরব্বি নিয়ে মেয়ের বাসায় যান। মেয়ের বাড়িতে আ গু ন লাগে নাই যে আপনি দমকল বাহিনী নিয়ে ছোট লোকের মত মেয়ের বাড়িতে হাজির হবেন…

মেয়ে দেখা
আবুল_বাশার_পিয়াস

#সংগৃহীত #মমিসিংগা

Address

Mymensingh

Telephone

+8801924787174

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when মমিসিংগা Momishinga posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to মমিসিংগা Momishinga:

Videos

Share

Category