26/06/2023
🤧 জগতের সমস্ত বিরক্তি নিয়ে এরা জাহাজে জয়েন করে ৬ বা ৮ মাসের জন্য। জয়েন করার প্রথম পনেরো দিন কিছু নতুন মুখের সাথে পরিচয় হয়। নতুন মুখ সুন্দর হোক বিশ্রী সবাইকেই এদের থাপ্রাইতে মনে চায়। ক্যাপ্টেন থেকে শুরু করে চীফ কুক সবাইরেই। কিন্তু ইচ্ছার বিরূদ্ধে গিয়ে এদেরকে সবার সাথে হাসিমুখে পরিচিত হতে হয়।
পনেরো দিনের পর থেকে শুরু করে ৪ বা ৫ মাস পর্যন্ত এদের জাহাজের সব কিছুই ভাল লাগে। সাগর ভাল লাগে, ঢেউ ভাল লাগে, ঝর তুফান ভাল লাগে, জাহাজের দোলানি ভাল লাগে, দেশে দেশে ঘুরতে ভাল লাগে, এমনকি এঙ্করেজে বসে বসে মশা মারতেও ভাল লাগে (যদিও সাগরে মশা থাকে না😷) জাহাজের থাপ্রাইতে চাওয়া মুখগুলো হয়ে উঠে প্রিয় মুখ, নতুন পরিবার 🙂
সাইন অফের শেষ দুই এক মাসে আবার সব কিছুই বিরক্ত লাগে। জাহাজ বিরক্ত লাগে, সাগর বিরক্ত লাগে, দেশ বিদেশে ঘুরতে বিরক্ত লাগে, এঙ্করেজ বিরক্ত লাগে, ডিউটি দিতে বিরক্ত লাগে, প্রিয় মুখগুলোকে বিরক্ত লাগে। কেবল দেশে কখন যাবো সে চিন্তাই মাথায় ঘুরে 😥
দেশে আসার প্রথম পনেরো দিন এরা কোন গ্রহে আসলো সেটা বুঝতে একটু সময় লাগে। ৬ মাস আগে পরিবারের লোকদের সাথে কিভাবে কথা বলতো বন্ধুদের সাথে কিভাবে আড্ডা দিত, ওই লোকটারে মামা বলতো নাকি চাচা বলতো সেটা মনে করতে একটু সময় লাগে। সবকিছুতে এডজাস্ট করতেও একটু সময় লাগে।
এডজাস্ট করতে না পেরে পরের এক মাস এদের আবার সব কিছুই বিরক্ত লাগে। দেশ বিরক্ত লাগে, দেশের রাজনীতি বিরক্ত লাগে, সমাজ বিরক্ত লাগে, বাজারে যাইতে বিরক্ত লাগে, ঘুমাইতে বিরক্ত লাগে, না ঘুমাইতেও বিরক্ত লাগে, বন্ধু বান্ধব আত্মীয় পরিবার সবই বিরক্ত লাগে। 'ধূর বাল শিপই ভাল' 'I need vitamin sea' টাইপের মনোভাব জেগে উঠে।
এই এক মাস পর আবার সব কিছু ভাল লাগতে শুরু করে,দেশ ভাল লাগে, সমাজ ভাল লাগে, আড্ডা ভাল লাগে, চিৎকার চেচামেচি কোলাহল ভাল লাগে, ট্রাফিক জ্যাম ভাল লাগে, ধূলাবালি খাইতে ভাল লাগে, আর এই ভাল লাগা সর্বোচ্চ হয় ঠিক পরবর্তী জয়নিং এর আগের রাতে টং দোকানে বসে শেষ চা টা খাওয়ার সময়। ঢাকা বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পাস হলেই আবার জগতের সমস্ত বিরক্তি এসে ভর করে এদের উপর.............................................
এদেরকে তাই "কোথায় বেশি ভাল লাগে? দেশে না শিপে?" "সীলাইফ কেমন লাগে?" "ওখানে বোরিং লাগে না?" এই টাইপের ক্রিটিকাল প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকুন 🙏
কারন এরা Seamen
এদের সাগরে গেলে দেশ ভাল লাগে আর দেশে গেলে সাগর ভাল লাগে 🙂